মধুরেণ – ১৬

১৬

গাড়ি বিক্রি করার ওয়েবসাইটে গিয়ে এসইউভি’র ছবি তুলে আপলোড করেছিল মধুরা। একদিনের মধ্যে হলদিয়া পোর্টের এক অফিসার উপস্থিত। সঙ্গে কার মেকানিক। মেকানিক অনেকক্ষণ ধরে গাড়িটা চেক করল। মাইলোমিটার, টায়ারের কন্ডিশান আর অ্যালাইনমেন্ট, এসি, ইঞ্জিন, ডিকি, ড্যাশবোর্ড, সিট সব খতিয়ে দেখে ইতিবাচক ঘাড় নাড়ল। এবার গাড়িতে হাত দিল অফিসার। কুড়ি কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে বলল, “গাড়ি ঠিক আছে।”

শুরু হল দরাদরির পালা। পঁচিশ লাখ টাকার গাড়ির জন্যে অফার এল পনেরো লাখের। মিস জোনাকি আপত্তি করল। ডুঙ্গার বলল, “এটা ডিসট্রেস সেল হচ্ছে। দিস কার ইজ অ্যাজ গুড অ্যাজ নিউ। তুই পাঁচ লাখ টাকা লস করছিস।”

মধুরা কথা শোনেনি। গাড়ি বেচে দিয়েছে। পনেরো লাখ টাকার চেক নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কোলাঘাট ব্রাঞ্চে হাজির হয়েছিল সে। নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে, চেক জমা করে তবে শান্তি। রাজচন্দ্রপুরের অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করার জন্য একদিন ফিরতে হয়েছিল। কোলাঘাট থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে বালি স্টেশান। সেখান থেকে রিকশায় বাড়ি। যূথিকা-মনোহরের সঙ্গে দেখা করে, রাজচন্দ্রপুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকা কোলাঘাট ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার করে, অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে, সেই দিনই মনসাপোতা ফিরে এসেছিল।

মধুরার এক নম্বর টার্গেট, মাথা গোঁজার জায়গা তৈরি করা। এক বছর লন্ডনবাসের সূত্রে অনেক রকম মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন হল জেমস গুপ্ত। তৃতীয় প্রজন্মের বাঙালি। একবর্ণ বাংলা জানে না। জেমস ইকো ফ্রেন্ডলি আর্কিটেকচার নিয়ে কাজ করছে। মূল আইডিয়া হল, যেখানে বাড়ি তৈরি হবে, তার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যে সমস্ত কাঁচামাল পাওয়া যায়, তাই দিয়ে বাড়ি বানাতে হবে। এবং বিল্ডিং তৈরির সময় স্থানীয় আবহাওয়া মাথায় রাখতে হবে। তা হলে খরচ অনেক কম হবে। বাড়ি টেঁকসই হবে।

জেম্‌সকে সাইট প্ল্যান এবং নিজের অবস্থান জানিয়ে মেল করেছিল মধুরা। ফোনে কথাও বলেছিল। ইন্টারনেট ঘেঁটে, পূর্ব মেদিনীপুরে কী ধরনের মেটিরিয়াল পাওয়া যায় এবং কী ধরনের আবহাওয়া থাকে সেসব জেনে সুন্দর একটা প্ল্যান বানিয়ে মেল করেছে জেম্‌স। প্রফেশনাল ফি, টাকায় কনভার্ট করলে, একলাখ টাকা।

কোলাঘাটের মিস্তিরি দিয়ে বাড়ি বানানোর কাজ হয়ে গেল দেড় মাসের মধ্যে। এই দেড় মাসে এক ধাক্কায় সাতলাখ টাকা খসে গেল।

দোতলা বাড়ির একতলায় একফালি ড্রয়িং রুম, ডুঙ্গার আর মিস জোনাকির বেডরুম, কিচেন, টয়লেট। দোতলায় মধুরার শোওয়ার ঘর আর বাথরুম। আজ থেকে আর ধাবার খাবার খেতে হবে না। মিস জোনাকি রান্না করছে।

শীল ম্যানশনের আসবাব, বাসনপত্র, কাপড়জামা ভৌমিক ভবনের একতলায় ডাম্প করে রাখা ছিল। সেইসব আনার জন্যে মিস জোনাকি রাজচন্দ্রপুর গিয়েছিল। নিয়ে এসেছে মধুরার জিনিসপত্রও। দোতলায় মধুরার ঘরের রং একদম ভৌমিক ভবনের মতো। খাট, আলমারি, টেবিল, চেয়ারও একই ভাবে রাখা। দরজা জানলা বন্ধ করে দিলে এটা রাজচন্দ্রপুর না মনসাপোতা, বোঝা যায় না।

গত দেড়মাস মধুরা ডিসেন্ট প্যালেসে থাকলেও খেয়েছে ভাইভাই ধাবায়। সকাল ছ’টায় ধাবার কয়লার উনুনে আঁচ দিয়ে চা পর্ব শুরু করে মিতা। গীতা সাড়ে ছ’টায় এসে তেলেভাজা আর শিঙাড়া ভাজতে শুরু করে। অর্জুন বসে মুড়ির বস্তা নিয়ে। সরকারি বাস এসে দাঁড়ায়, গোটা পনেরো কাস্টমার নামে। এক ঠোঙা মুড়ি আর দুটো শিঙাড়ার দাম দশ টাকা। শিঙাড়ার বদলে ফুলুরি, আলুর চপ নিলেও একই দাম। এক ভাঁড় চা তিন টাকা। তেরো টাকায় খাওয়া সেরে যাত্রীরা বাসে ওঠে। বাস চলে যায়। চা-মুড়ি-তেলেভাজার দোকানের অভাব নেই। মনসাপোতার অনেকেই সকালে মুড়ির থলে আর তেলেভাজার থালা নিয়ে রাস্তার ধারে বসে যায়।

সকালের দিকে কাস্টমার হলেও দুপুর থেকে ফাঁকা যায়। অনেক বাস আর প্রাইভেট কার দাঁড়ায় লাঞ্চের জন্যে। দাম বেশি হলেও এদের গন্তব্য ডিসেন্ট প্যালেস।

সন্ধে থেকে শুরু হয় মদ ও চাটের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ। এই সময়ে অর্জুন দোকান সামলায়। মুরগির নাড়িভুঁড়ি ভেজে চাট তৈরি করে। সস্তা ইন্ডিয়ান মেড ফরেন লিকার, সরকারি বাংলু, ভাটিখানার চুল্লুও বিক্রি করে। ধাবার সামনে পেঁচি মাতালের ভিড় লেগেই থাকে। যার ফলে গাড়িতে আসা কাস্টমাররা ডিসেন্ট প্যালেসে চলে যায়। ওখানে বার কাম রেস্তোরাঁ আছে। সেটা ভিড়ে ভিড়াক্কার।

দিনে হাজার টাকা নিট লাভ হয়। মাসে তিরিশ হাজার টাকা। গত দেড় মাস সকাল থেকে রাত অবধি ধাবায় বসে থেকে মধুরা অনেক কিছু শিখেছে।

এক নম্বর শিক্ষা হল, তার মামা মাইমা চোর এবং মিথ্যেবাদী। যূথিকাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বাকিটা গাপ করত। দু’নম্বর শিক্ষা, একটা লাভজনক সংস্থাকে কীভাবে নিজের হাতে একটু একটু করে মেরে ফেলা যায় ভাইভাই ধাবাকে না দেখলে সে বুঝত না।

সেই ঝগড়ার দেড়মাসের মাথায়, গৃহপ্রবেশের সন্ধেবেলা, আজ মধুরা একটা মিটিং ডেকেছে। ঝগড়ার পরে যুদ্ধবিরতি চলছে। মধুরা নিজের মতো ধাবায় বসে থাকে, বাড়ির কাজ দেখে, দুপুরে আর রাতে খায়। কোনও তরফে কোনও আবাহন নেই, বিসর্জনও নেই। কেজো কথা ছাড়া কোনও কথা হয় না।

মধুরার মিটিং-এর আহ্বান এই বরফ ভাঙল। অর্জুন, পিয়াল, গীতা এবং মিতাকে থাকতে হবে। মিস জোনাকি এবং ডুঙ্গারকে মধুরা ডাকেনি। যদিও, গতকাল রাতে ওদের সঙ্গে আজকের মিটিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মিস জোনাকি বলেছে, “কত্তাবাবু সেদিন অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অ্যাক্টিং করেছিল। নার্সিং হোমের ডাক্তার দু’দিন ভরতি রেখে ছুটি দিয়েছে। দেবুদা নার্সিং হোমে গিয়ে খবর নিয়েছে। অর্জুনও খোঁজ করেছে। ওরা জানে, কত্তাবাবার কিছু হয়নি।”

“কে বলল হয়নি?” হুইস্কিতে চুমুক দিয়ে হাঁক পাড়ে ডুঙ্গার, “আমার ব্লাড প্রেশার ফল করেছে। ব্লাড সুগার বেড়ে গেছে। যে-কোনও মুহূর্তে আমি মারা যেতে পারি।”

“এত সিগারেট-মদ-মাংস খেয়ে তুমি যে এখনও বেঁচে আছ, এটাই আশ্চর্যের! বেশি বোকো না। তা হলে সত্যি সত্যিই শরীর খারাপ হবে। ন্যাকামি না করে মধুকে একটু বুঝিয়ে দাও। যাতে কাল সকালে ও লড়তে পারে।”

পরবর্তী একঘন্টা ধরে ডুঙ্গার কথা বলেছে আর মধুরা শুনেছে। এখন মধুরা বলবে, মামা মাইমা শুনবে।

রাত ন’টার সময়ে ধাবার ঝাঁপ পড়ে গেল। টেবিলে বসে ল্যাপটপ খুলল মধুরা। এক্সেল স্প্রেডশিটে বাংলা হরফে লেখা গত এক মাসের আয়ব্যয়ের হিসেব।

প্রথমে এল মিতা। মধুরার পাশে বসে বলল, “কীসের মিটিং ভাই? আমার কিন্তু বুক ধড়ফড় করছে। তুমি ভাল থাকলে ভাল, রেগে গেলে ‘আমার নাম দুষ্টু’ সিরিয়ালের বিষকোবরা হয়ে যাও।”

“বিষকোবরা আবার কী বস্তু?” নিজের স্যানিটি অটুট রেখে প্রশ্ন করে মধুরা।

“বস্তু নয়, তান্ত্রিক! যে দুষ্টুকে বশ করে কাজের মেয়ে বানিয়ে রেখেছে! তুমি দেখো না?”

“না। বড়মাইমা কোথায়?”

“তিনি এখন ফোনে ব্যস্ত।”

অর্জুন নিঃশব্দে চলে এসেছে। চেয়ার টেনে বসে বলল, “কী ব্যাপার? কীসের মিটিং? আমার কাজ আছে।”

মধুরা উত্তর না দিয়ে মিতাকে বলল, “ছোটমামা কোথায় গেল?”

অর্জুন বলল, “সে যাত্রার মহলা নিয়ে ব্যস্ত। যা বলার আমাকে বলো।”

মধুরা আবার কোনও উত্তর দিল না। মিতা হাঁক পাড়ল, “ও দিদি! এসো গো! মধুর দেরি হয়ে যাচ্ছে!”

“ওর আবার কীসের দেরি? দিনরাত তো এখানেই পড়ে থাকে!” ঘর থেকে গীতার ঝংকার শোনা যায়। মধুরা গলা চড়িয়ে বলে, “আমার নয়, দেরি হচ্ছে তোমার। আমি মিটিং ডেকেছি ন’টায়। এখন ন’টা পনেরো বাজে।”

গীতা এবার অ্যাপিয়ার করল। মিটিং উপলক্ষে সে স্পেশাল ড্রেস পরেছে। ক্যাটকেটে হলদে রঙের শাড়ি আর কালো রঙের ব্লাউজ। মুখে পান ঠুসে, চুন লাগানো পানের বোঁটা কুচুত করে দাঁতে কেটে বলল, “এসে গেছি।”

“গত এক মাসে ভাইভাই ধাবা থেকে লাভ হয়েছে তিরিশ হাজার টাকা। আমার কাছে দিনপিছু আয়ব্যয়ের হিসেব আছে। এই যে।” ল্যাপটপ গীতার দিকে ঘুরিয়ে বলে মধুরা।

“আমরা গ্রামের মানুষ। ওই সব বুঝি না।” মিষ্টি হাসে গীতা।

“কাগজেও লেখা আছে। এই যে!” প্রিন্ট আউট বাড়িয়ে দিয়েছে মধুরা।

“ওগো মেয়ে! আমরা গ্রামের মানুষ। ইনজিরি বুঝি না!” আবার বলে গীতা।

“হিসেবনিকেশ বোঝো তো?” গলা চড়িয়েছে মধুরা, “বাংলা বোঝো তো? তা হলেই হবে। এখানে বাংলায় লেখা আছে যে তোমরা আমার মাকে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা কম দিতে।”

অর্জুন কী একটা বলতে যাচ্ছিল। মিতা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ওরকম বোলো না ভাই। আমরা তোমার মাকে বলেছিলাম। আমার বর যাত্রার পিছনে টাকা উড়োয়। আর আমার ভাশুর ঠাকুরের কথা কী আর বলব…”

“আমি কিন্তু এই হিসেবের মধ্যে তোমার ভাশুর ঠাকুরের সন্ধেবেলার ব্যাবসার কথা ধরিনি। সেখান থেকে কত আয় হয় আমি জানি, কিন্তু ওই টাকা নিয়ে আমি বদার্ড নই। বড়মামার মদের খরচ সে মদ বিককিরি করে তুলে নেয়। আমার কথার বটম লাইন হল, তোমরা আমার মাকে এতদিন ঠকাচ্ছিলে।”

“তো?” ফস করে বিড়ি ধরিয়ে এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলে অর্জুন। “এতদিন তুই দেখতে আসিসনি। আমরা টাকা মেরেছি। এখন তুই সব জেনে গেছিস। আর টাকা মারব না। খেল খতম পয়সা হজম।”

“পয়সা হজম হয়ে গেছে, কিন্তু খেল এখনও খতম হয়নি। পুলিশে খবর দিয়ে ভাইভাই ধাবা থেকে বেআইনি মদ বিকিকিরি আমি বন্ধ করে দেব।”

প্রথম বোমাটা ফাটল।

মিতা আঁতকে উঠে বলল, “কেন ভাই? ওখান থেকেই তো আমাদের রোজগার। সকালে মুড়ি-তেলেভাজা বেচে ক’পয়সা হয়?”

গীতা স্থির চোখে মধুরার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অর্জুন বিড়ি ছুড়ে ফেলে চার অক্ষরের খিস্তি দিল।

সবার রিঅ্যাকশান দেখে নিয়ে মধুরা দ্বিতীয় বোমাটা ফাটাল। “বন্ধ করে দেব, তার কারণ হল, লিকার লাইসেন্স জোগাড় করে এখানে একটা বার-কাম-রেস্তোরাঁ খোলা হবে।”

এই কথায় তিনজনের তিন রকমের প্রতিক্রিয়া হল। মিতা অবাক হয়ে বলল, “যাঃ!” গীতা কিছু না বলে মধুরার দিকে তাকিয়ে রইল। অর্জুন ভুরু কুঁচকে বলল, “সে অনেক টাকার ব্যাপার। তা ছাড়া ধরাধরির ব্যাপার আছে।”

তৃতীয় বোমা। মধুরা বলল, “টাকা আমি দেব। জোনাকিদির আবগারি দপ্তরে চেনাশুনো আছে। লিকার লাইসেন্স বার করতে অসুবিধে হবে না।”

অর্জুন আবার বলল, “সে অনেক টাকার ব্যাপার।”

মধুরা বলল, “দু’মাস আগেও কলকাতায় আমার একটা রেস্তোরাঁ ছিল। এখন আর নেই। কিন্তু রেস্তোরাঁ খোলার ব্লু প্রিন্ট আমার কাছে আছে। ইনভেস্ট আমি করব, কানেকশান দেবে জোনাকিদি আর ডুঙ্গার। আমার যা নেই তা হল লোকবল। রেস্তোরাঁ খুলে ফেলা সহজ। চালানো কঠিন। তার জন্য চাই ডেডিকেটেড একটা টিম। তোমরা চারজন আমাকে সাহায্য করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে। এখন এই ধাবায় যা রোজগার হয়, বেড়ে তার দশগুন হয়ে যাবে। শুধু তোমাদের হেল্‌প লাগবে। করবে না, সাহায্য?”

মিতা মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, “দশগুন?”

গীতা এখনও চুপ। অর্জুন বলল, “শুধুই গায়ে গতরে খাটব? না কিছু ইনভেস্ট করতে হবে?”

মধুরা খুব সাবধানে উত্তর দিল। “পার্টনারশিপ ফার্ম খুলে ব্যাবসা করব। সব কিছু খাতায় কলমে হবে। আমি দেব চার লাখ টাকা। জোনাকিদি আর ডুঙ্গার মিলে দেবে একলাখ। তোমরা কী দেবে ভেবে বলো।”

“ওই বুড়োবুড়িকে আবার নেওয়া কেন? ওরা তো ঘাটের মড়া। আজ বাদে কাল টেঁশে যাবে!” এই প্রথম মুখ খুলল গীতা।

গীতা এই প্রজেক্টের বিরোধীতা তো করলই না, উলটে সক্রিয় অংশগ্রহণ করল। মধুরা বুঝল অর্ধেক যুদ্ধ সে জিতে গেছে। বাকি যুদ্ধ জেতার স্ট্র্যাটেজি হিসেবে সে বলল, “মানুষের অভিজ্ঞতার দাম আছে। আমরা হলাম ইয়াং ব্লাড। আমরা লাফঝাঁপ দিয়ে কাজ তুলে দেব। আর ওরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে। আমাদের ভুল ধরিয়ে দেবে। তাকেই টিম ওয়ার্ক বলে।”

“আমি এক লাখের বেশি দিতে পারব না।” আর একটা বিড়ি ধরিয়েছে অর্জুন, “সেটাও এক লপ্তে নয়। মাসে মাসে।”

“টাকা দেওয়ার কথা বলার আগে লাভের ভাগ বাঁটোয়ারা কীভাবে হবে জিজ্ঞেস করে নাও!” স্বামীকে ধমকায় গীতা, “শেষে এমন না হয় যে আমও গেল, ছালাও গেল।”

মধুরা কিছু বলতে যাবে, এমন সময় গান শোনা গেল, “বনমালী তুমি পর জনমে হোয়ো রাধা!” কুমার পিয়াল মহলা শেষে বাড়ি ঢুকছে। মিতা এক লাফে চেয়ার থেকে উঠে বলল, “তোমার কি কোনও দিনও কাণ্ডজ্ঞান হবে না? একদিন বললাম যে টাইমে বাড়ি ফেরো। সেই কথাটাও রাখলে না? এদিকে সব কথা পাকা হয়ে গেল। আমি কিচ্ছুটি করে উঠতে পারলাম না! উঃ মাগো! আমার যে এখন কী হবে?”

কুমার পিয়াল ভীষণ অবাক হয়ে বলল, “প্রম্পটার ছাড়া এত বড় মনোলগ নামালে কী করে? আর একবার বলতে পারবে? একটু অন্য ভাবে? একটু ‘প্যাথোজ’ দিয়ে? আমার নতুন পালা ‘শাজাহানের চোখের পানি’তে তোমাকে তা হলে মুমতাজের রোলটা দিয়ে দেব।”

“নিকুচি করেছে মুমতাজের! তুমি এখেনে বোসো।” কুমার পিয়ালের হাত ধরে টেনে বসায় মিতা। মধুরাকে বলে, “এতক্ষণ যা বললে, আমার বরটাকে আবার বলো। ওরও জানা উচিত।”

“যে কথা হয়ে গেল প্রিয়া, সে কথা জানে মোর হিয়া,” গলা কাঁপিয়ে গান ধরে কুমার পিয়াল। তাকে থামিয়ে অর্জুন মধুরার বলা কথাগুলো আবার বলে। কুমার পিয়াল সব শুনে বলে, “আমি শিল্পী মানুষ। বিষয়আশয়ের মধ্যে আবার আমাকে টানা কেন? আমার সামান্য চাহিদা। সেটুকু পেলেই আমি খুশি। টাকার পিছনে আমি দৌড়োতে পারব না। আমার জীবনের লক্ষ্য অন্য।”

মধুরা মৃদু হেসে বলে, “তোমার সঙ্গে আমি একমত। যার যা ভাল লাগে, তার তাই-ই করা উচিত। তবে তার জন্য অনেক কিছু ছাড়তে হয়। আমাদের ভেঞ্চারে তোমাকে আসতে হবে না। তুমি তোমার যাত্রা নিয়ে থাকো।”

“কিন্তু আমি আমার ভাগের টাকাটা তো পাব?”

“এখন যা পাও, সেটাই পাবে। নতুন ভেঞ্চারে তোমার ইনভেস্টমেন্ট নেই, ইনভল্‌ভমেন্টও নেই। কাজেই তুমিও নেই।”

“তা কী করে হয়? এ বড় অন্যায়। একে চুরি বলে।”

“একে চুরি বলে না, ছোটমামা। একে বলে যেমন কর্ম, তেমন ফল। মাসে তিরিশ হাজার টাকা রোজগার হলে তার ফিফটি পার্সেন্ট হয় পনেরো হাজার টাকা। তার থেকে দশ হাজার টাকা সরিয়ে নিজের বোনকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়াকে চুরি বলে।”

কুমার পিয়াল চুপ করে গেল। মধুরা বলল, “আমার, ডুঙ্গার আর জোনাকিদির নামে কলকাতায় একটা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট আছে। আমি সেটা ওই ব্যাঙ্কের কোলাঘাট ব্রাঞ্চে ট্রান্‌সফার করে নিয়েছি। আগামীকাল ব্যাঙ্কে চলো। টাকা জমা করো। তারপর বাকি কথা হবে।”

কুমার পিয়াল বলল, “আমি কিন্তু এর মধ্যে নেই।”

মিতা বলল, “উফ! আমি যে কী করি!”

গীতা বলল, “পার্টনারশিপ ডিড কে বানাবে?”

মধুরা বুঝল, সে যুদ্ধে জিতে গেছে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *