মধুরা

মধুরা

বনস্পতির তলায় ছায়া ক্ৰমে গাঢ় হচ্ছে। ঠিক পেছন দিকে অস্ত যাচ্ছেন সূর্য। সারাদিন ধরে শবগুলিকে নদীতে ভাসিয়েছে নিমেষ আর তার দল। শস্য-মাঠের চারধারে লোক বসিয়েছে। তারা আহ্লাদিত, এমনকী ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে দেখছে সবুজ। ধান্য! ধান্য! দেখ এই ঘাসের গোড়ায় জল। দেখ কেমন সোজা, সমান হয়ে উঠেছে! বনে যেখানে সেখানে এইগুলিই আমরা দেখতে পেতাম। গো চরাতে চরাতে কৌর একদিন ওপরের ডগা ভেঙে খেয়ে ছুটে গেল না মধুরার কাছে? শক্ত ছিল বলে প্রথমে হালকা আগুনে পোড়াল মধুরা, বেশ কচমচিয়ে খেলাম আমরা। তারপরে মধুরার এমন বুদ্ধি! জলে গরম করল, সিদ্ধ বলে ওকে। তখন? কী ভাল লাগল। খুব বেশি নয়, একমুঠো করে পেয়েছিলাম প্রত্যেকে বরাহ মাংসর সঙ্গে, ঝলসানো মাংসগুলি খেয়ে খেয়ে জিব পচে গেছে। সিদ্ধ ধান্য কী ভাল যে লাগল! এখন মুঠো মুঠো খেতে পারব। শিকারের কম হাঙ্গামা! আমি তো বাবা ধান্যসিদ্ধ আর বন্য ফল খেয়েই দিন কাটাব ঠিক করেছি।

একজন হেসে বলল— মধুরা দিলে তো! তুই দু মুঠো খেলে আর একজনের একমুঠো কমে গিয়ে নেই-মুঠো হয়ে যাবে।

—মধুরা আমাকে করুণা করবে। আমি ওকে বৎস দিয়েছি।

—সে তো শূরও দিয়েছে। বীরও দিয়েছে। অন্তত পনেরোটি বৎস শুধু মধুরারই। কোনটি কার দেওয়া, সব তো জানা যায় না। মধুরা বলবেই না।

একজন বলল— বন্দিগুলোকে একটু জল, মাংস, ফল দিচ্ছিস তো? ক্ষতস্থানের চিকিৎসা হয়েছে? ওরাই কিন্তু আমাদের শেখাবে।

ঠোঁট উলটে আর একজন বলল— আমাদের মধুরা আছে। নিমেষ আছে। বন্দিগুলো যদি দুর্ভাগ্যবশত মরে-ঝরেও যায়, ওরা ঠিক পদ্ধতি বার করে ফেলবে।

একজন উঠে দাঁড়াল, —বন্দিগুলিকে দেখে আসি।

—মারিস না যেন।

—না, না।

—তবে আমি জানি, লোকটি দাঁত বের করে বলল—নারীর খোঁজে যাচ্ছিস। বি-গোষ্ঠীর নারী যখনই চাইবি তখনই পাবি, এ তো স্ব-গোষ্ঠীর নয়! তাঁদের ইচ্ছে হবে, মনে ধরবে, সময় নিয়ে নানা বাহানা! ঠিকঠাক দশা হওয়া চাই।

—যদি যাই-ই নারীর খোঁজে, তো তোদের কী? আমাকে নিমেষ বন্দিদের দেখাশোনার ভারও দিয়েছে, জানিস না?

—অধ্যক্ষ তো ভগ।

—ভগ অধ্যক্ষ হলেও, দলে আমি আছি।

ব্যক্তিটি চলে গেল।

বন্দিদের মোটের ওপর একই জায়গায় জড়ো করে রাখা হয়েছিল। সামান্যই ব্যবধান দুজনের মধ্যে। যাদের হাত-পা গেছে তাদের মেরে নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আঘাত যাদের অপেক্ষাকৃত অল্প তাদেরই চিকিৎসা হচ্ছে। ভগর বিশেষ হাতযশ আছে চিকিৎসায়। সে বনের অন্তত একশো ওষধির গুণাগুণ জানে। যখনই তাকে দেখবে ভগ লতাপাতা দেখছে। ছেঁচছে, আহত জন্তুর ক্ষতে লাগাচ্ছে, নিজেদের স্ফোটকে লাগাচ্ছে। যেদিন বৎস জন্মাবার পর মধুরার রক্তপাত থামছিল না, সেদিন ভগ অলৌকিক দেখাল। কী যে লতাপাতার রস খাওয়াল, যোনিদ্বারের ক্ষততে কী প্রলেপ লাগাল, মধুরা দু-চার দিনের মধ্যেই আবার আগের মতো। বিধা ভেবেছিল মধুরা মারা যাবে। সে মধুরার স্থান নেবার জন্য প্রস্তুত ছিল। হল না। বিধা খুব নিরাশ হয়। কিন্তু নিজেদের সুরক্ষার জন্য সকলেই এখনও মধুরার ওপরই ভরসা করে। বিধা যতই নিজেকে বীর প্রতিপন্ন করবার চেষ্টা করুক।

অস্ফুট কাতর ধ্বনি করছিল আতুর, সুধনু, অৰ্যা, শম, ছন্দ, কর্ম, পুলহ, স্রাবী, নদী… কিন্তু ধীরে ধীরে আরাম আসছিল। চোখ বুজে আসছিল। একে একে ঘুমিয়ে পড়ছিল ওরা। ভগ হৃষ্টচিত্তে দেখছিল তার ওষধির সম্মোহন। কতক্ষণ এরা নিদ্রাঘোরে থাকবে? সে আকাশের দিকে তাকাল। সারাদিন বন্দিগুলি কষ্ট পেয়েছে— জল জল করে কাতর প্রার্থনা করেছে। ভগও সারাদিন ভেবেছে তার ওষধি ঠিক কতখানি দিলে এরা নিদ্রা যাবে, আবার তাদের নিদ্রা ভাঙবে। দিনের বেলা দিলেই হত। সূর্যর আরোহণ যত সহজে লক্ষ করা যায়, চন্দ্রের তত না। যা-ই হোক। এ জন্য তাকে মধুরা বকতে যাচ্ছে না।

একটি বাদামি ঘোড়া ছুটতে ছুটতে অদূরে এসে থামল। মধুরা। এসে গেছে। সে অতি বলিষ্ঠ নারী, যেমন দীর্ঘকায়, তেমনই তার পেশিসমূহ। স্তন দুটি সে তুলনায় আকারে অনেক ছোট। বর্তুল, কঠিন, এতটুকুও নমিত নয়। সে তার হরিণের চামড়ার পরিধানটি ফালা ফালা করে পরতে ভালবাসে। চলাফেরা করতে সুবিধে হয়। লাফিয়ে অশ্ব থেকে নামল মধুরা।

—কী সংবাদ ভগ? মানুষগুলো বাঁচবে না পচে যাবে?

—নিশ্চয়ই বাঁচবে।

—এখনই তো কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।

ভগ রহস্যময় হাসি হাসে— ওরা ঘুমোচ্ছে। ঘুমোক। মধুরা, ওদের বিরক্ত করবার দরকার নেই। ভগর কার্যকলাপ নিয়ে চিন্তা করা ছেড়ে দাও।

—তাই নাকি! মধুরাকে মানো না নাকি?

—ভুল বুঝো না মধুরা। এ ওষধির ব্যাপার, জন্তু-জানোয়ারকে গভীরভাবে দীর্ঘদিন লক্ষ করে, নিজে বিষফল, অমৃতপাতা খেয়ে শিক্ষা করছি, এখানে তোমার নাসিকাটি প্রবেশ না করালেই ভাল।

—বীজকণাগুলি সিদ্ধ করে নতুন খাদ্য কে তৈরি করেছিল? কার বক্ষ থেকে অমৃতধারা বেরোয়? বৎসগুলিকে নিজের শরীর থেকে খাওয়ায় কে?

—মানছি, মানছি, সব মানছি। কিন্তু এখন বিরক্ত কোরো না।

লাফিয়ে অশ্বের ওপর উঠে বসল মধুরা, মুখে তির্যক হাসি। সে সব কিছু পরিদর্শন করছে, না করলে এই মূর্খগুলি একটার সঙ্গে একটা গুলিয়ে ফেলবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধান্য, ধান্য, এবং সেই ধান্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া যারা শেখাবে তারা।

সন্ধ্যাতারা আকাশে জ্বলজ্বল করছে, বিপুল বনস্পতির তলায় এসে দাঁড়াল মধুরা—কী যেন একটা জটলা পাকিয়ে আছে! অদূরে কাঠকুটো দিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছে কে? —নিমেষ? কেন?

আবার নামে অশ্ব থেকে মধুরা। এগিয়ে যায়। বিশালকায় এক নারীর মৃতদেহ, কালো, শক্ত হয়ে গেছে, মৃদু দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। তার ওপরে উপুড় হয়ে পড়ে অল্পবয়স্ক একটি নারী।

—নিমেষ— বজ্রকঠিন স্বরে ডাক দিল মধুরা।

চোখ তুলে তাকায় নিমেষ। তার আগুনটি এতক্ষণে ভালভাবে জ্বলেছে। আরও কিছু কাঠকুটো সারারাতের জন্য সংগ্রহ করে রাখা দরকার।

—এই শবটি এখনও এখানে পড়ে কেন? দূষিত হবে না চারদিক। ভাসাওনি কেন?

—ওই নারীটি কিছুতেই শব ছাড়তে চায় না।

আশ্চর্য হয়ে মধুরা আলাদা আলাদা উচ্চারণ করল— শব ছাড়তে চায় না? বলো কী? কেন?

—জানি না মধুরা। বলছে মা, আমার মা, আর চোখ দিয়ে জল পড়ছে। উঠছে না, খাচ্ছে না, কথা বলছে না, একভাবে উপুড় হয়ে রয়েছে।

—মা? অতি আশ্চর্য! বৎসগুলি স্তন্যদাত্রী মারা গেলে কাঁদে বটে। দুধ পায় না বলে কাঁদে, দ্বিতীয় কেউ স্তন্যপান করালেই চুপ করে যায়। কিছু দিন প্রথমাকে খোঁজে, অতি মধুর ভঙ্গিতে ঠোঁট ফোলায়। কিন্তু বয়স্ক শবের জন্য অল্পবয়সি কাউকে তো কখনও কাঁদতে দেখিনি। ওকে টেনে নিয়ে যাও। শবটি বরং পুড়িয়ে দাও।

—মধুরা, ওকে একটু সময় দিতে হবে। ও শোকাতুর।

শেষ কথাটা নিমেষের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। সে শব্দটি তৈরি করল। এরকম সে প্রায়ই করে থাকে, সকলেই বুঝতে পারে। মধুরা প্রশংসার দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। ভগ ও নিমেষ মধুরার বিশেষ প্রিয়পাত্র। নানা ভাবে তারা গোষ্ঠীকে সাহায্য করে।

—আর সময় দেওয়া যায় না নিমেষ। আমি চলে যাচ্ছি। একটু পরে কাউকে পাঠাব, এই বৃক্ষতলে যেন মৃত্যুর ছোঁয়া না থাকে।

—মধুরা, এই সেই নারী যার সাহায্যে আমি শস্য খুঁজে পেয়েছি।

—কীরকম?

—ও নদীর ধারে বসে বড় পত্ৰাধারে সাদা বীজের মতো কিছু খেত। একদিন চলে যেতে খেয়ে দেখি এ আমাদের সেই শস্য যা থেকে থেকে অরণ্যে পাই, খাই দুর্লভ, লোভনীয়। রাত নেমে আসছিল। মেয়েটিকে অনুসরণ করে আমি চাঁদের আলোয় বিস্তীর্ণ শস্যক্ষেত্র আবিষ্কার করি। তারপরেই তো আমাদের যত পরিকল্পনা।

—এর মধ্যে ওর সাহায্যের কী হল? তুই নিজের বুদ্ধিতে বার করেছিস।

—ও না থাকলে কি পারতাম?

—বেশ। তবে আমার ওই শেষ কথা। কিছু সময় পরে কাউকে পাঠাব, বৃক্ষতল যেন মৃত্যুহীন থাকে। আর ওই মেয়েটাকে ভগর কাছে পাঠিয়ে দে। হাতটা তো বেশ ফুলেছে দেখছি।

মধুরা খটাখট করতে করতে চলে গেল।

সহসা মাতঙ্গীর দেহ থেকে মুখ তুলল রঙ্কা।

—ও কে?

—আমাদের নেত্রী।

—মাতঙ্গীর মতো? উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকাল রঙ্কা। তারপর বলল— ভগ কে?

—ভগ ক্ষত সারায়। খুব আশ্চর্য ক্ষমতা তার।

—মাতঙ্গী তা-ও পারত। মাতঙ্গী অসাধারণ ছিল। ওরকম আর হবে না। আমি মাকে অবহেলা করেছি, তার কথা শুনিনি। নির্দেশ অমান্য করে কত কাজ করেছি। আজ তার শাস্তি দিল অরণ্য, নদী, আকাশের দেবতা। আমাকে ভগর কাছে নিয়ে চলো। আমি সুস্থ হতে চাই। মাতঙ্গীর দেহ পুড়িয়ে দাও হে বিদেশি। নদীতে ভেসে গেলে মাছে খোবলাবে, ক্রমশ বিকৃত কুৎসিত হয়ে উঠবে দেহটি। আমি সইতে পারব না।

নিমেষ আবার তাকে তুলে নিতে যাচ্ছিল। রঙ্কা বলল— আমি চলতে পারব। আমাকে শুধু পথ দেখিয়ে নিয়ে যাও। —বলে সে নিজেই পা বাড়াল। নিমেষ তা সত্ত্বেও এগিয়ে এসে তাকে কোলে তুলে নিয়ে তার গালে ঠোঁট ঘষল। পলকের মধ্যে লাফ দিয়ে নীচে নেমে, আগুনঝরা দৃষ্টিতে তার দিকে চাইল রঙ্কা। বলল —আমার ইচ্ছে নেই, নেই, নেই। —সে হাত দিয়ে গালের ওপর নিমেষের স্পর্শ মুছে দিল। মুখ বিকৃত করে বলল— দুর্গন্ধ, দুর্মতি বিদেশি। শস্যর জন্যে আমাদের আক্রমণ করলে? মাকে মারলে? শস্য কি কারও একার? আমরা ফলাতে শিখেছি। তোমরাও শিখে নিতে পারতে।

—শিখতে চাইলে মাতঙ্গী দিত?

—কেন? তোমাদের মধুরাও তো নেত্রী, যে ভাবে মানুষগুলিকে মারলে তাতে মনে হয় তুমিও বীর্যবান, যে ভাবে আমাকে অনুসরণ করে শস্য আবিষ্কার করলে, তাতে মনে হয় তুমি অতি ধূর্ত। শস্য আর জল, বীজ আর ছোট ঘাসের খেলা দেখে ধান্যর রহস্য জানতে বুদ্ধিতে কুলোল না? আমাদের সবাইকে এমন করে… মাতঙ্গীকে… মাকে… বলতে বলতে তার কণ্ঠরোধ হয়ে গেল। সে দু হাতে নিমেষের বুকে ঘুসি মারতে লাগল। ধূর্ত, দুষ্ট বি-গোষ্ঠী। যাও এখান থেকে চলে যাও… আমাকে ভগর কাছে নিয়ে যাবার দরকার নেই। আমি হরিণদের বন্ধু। গহন থেকে গহনে চলে যাব, আমি ওষুধ বার করে নেব। যাও, যা—ও বলছি।

নিমেষের মাথা খুব ঠান্ডা। সে কোমল স্বরে বলল— আমি পথ দেখাচ্ছি, তুমি সঙ্গে সঙ্গে এসো। ভগ দুই সূর্যের মধ্যেই তোমাকে ভাল করে দেবে।

কিন্তু রঙ্কা পেছন ফিরে তাকাল না। জ্বলন্ত চোখে নিমেষের দিকে চেয়ে সত্যি বনের গহনে হারিয়ে গেল। সেদিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল নিমেষ। নারীটিকে খুব নরম মনে হয়েছিল। নরম নারী তার ভাল লাগে। কিন্তু নারীরা কখনও পুরো নরম হয় না। বৎস ধারণ করে বলে, যুদ্ধ পরিচালনা করে বলে, শিকারের মাংস ভাগ করে বলে তাদের ভীষণ অহংকার। এমনও হয়েছে ঘুরতে ঘুরতে তারা কোথাও জল পায়নি। কণ্ঠ শুষ্ক, একেবারে প্রাণ বেরোনোর অবস্থা, তখন মধুরা তাদের নিজের বুকের দুধ দিয়েছিল। আরও যে কটি নারীর বুকে দুধ ছিল, তাদের নির্দেশ দিয়েছিল প্রত্যেকের পিপাসা মেটাতে। তারপর তারা একে অপরের পিপাসা মেটায়। দেবতারা— এই আকাশ, জল, মাটি, অরণ্যানী যে নারীদের কী শক্তি দিয়েছে, কেন দিয়েছে— ভাবলে অবাক লাগে। সে বুঝেছে রঙ্কাকে অনুসরণ করলে সে তাকে আরও ঘৃণা করবে। ওকে যেতে দেওয়াই ভাল। ক্ষত এমন কিছু নয়। বাতাস, জলই কিছুটা সারিয়ে দিয়েছে, সে নিজে কিছু প্রাথমিক ওষধি লাগিয়েছে, রঙ্কা যদি জানে আরও ওষধি, সত্যিই সে নিজের চেষ্টাতেই সেরে উঠবে। সে বন থেকে প্রচুর শুকনো কাঠ সংগ্রহ করল, মাতঙ্গীর ভারী দেহটি টেনে তার ওপর তুলল, আরও ডালপালা চাপা দিল। তারপর পাথরে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে দিল। মাঝে মাঝেই কাঠকুটো ফেলতে হল। কিন্তু এমনভাবে নিঃশেষ হয়ে গেল দেহটি, দেখে নিমেষ চমৎকৃত হয়ে গেল। তারা মৃতদেহ জলে ভাসিয়ে দেয়। বন্যজন্তুদের বিচরণ স্থানে রেখে আসে। কিন্তু এই পদ্ধতিটি বেশ। অনেক রাতে মধুরা পরিদর্শনে এসে বৃক্ষতল পরিষ্কৃত দেখে খুব খুশি হল। চাঁদ মাঝ গগন ছাড়িয়ে নামতে শুরু করেছে। চরাচর অনাবিল আলোয় পরিপূর্ণ। গাছগুলি মৃদু বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে। দূর থেকে ধন্যার ছলচ্ছল শোনা যাচ্ছে। মধুরা এক লাফে অশ্ব থেকে নামল। তারপর নিমেষকে এক ঝটকায় বুকে টেনে নিল। শবদাহর স্থানটি থেকে একটু দূরে তারা মিলিত হল। মধুরার যতক্ষণ না তৃপ্তি হল, নিমেষকে বারংবার চেষ্টা করতে হল। গালে সপাটে চড় খেতে হল। অবশেষে নারীকণ্ঠের সন্তোষের শিস যখন ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিতে ধন্যার তীর ভরে দিল, তখন নিমেষ ছুটি পেল।

মিলনের সময়ে বাঘিনির মতো তার ঘাড় কামড়ে ধরেছিল মধুরা। নিমেষ নিমেষ, তুই আরও বলবান হয়ে ওঠ, সিংহবিক্রম হোক তোর, তুই যেন আমাকে এক শয়নে তৃপ্ত করতে পারিস, কেননা তোর তুল্য পুরুষ আর গোষ্ঠীতে দেখি না। গলগল কলকল করে আদরের রাগের সোহাগের কত কথাই যে সে বলে যেতে থাকল। কিন্তু নিমেষ সে ভাবে উদ্‌বুদ্ধ হতে পারছিল না। কেন সে বুঝতে পারল না। অন্য সময়ে মধুরার কঠিন স্তনে বক্ষ পিষ্ট হবার সঙ্গে সঙ্গে তার দু পায়ের ফাঁকে অঙ্গটি তলোয়ারের ফলার মতো হয়ে যায়। আজ তার সেই প্রিয় অঙ্গটি যেন কেমন আনমনা হয়ে রয়েছে। কপোতীর মতো ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে তাকে চুম্বন করে ছেড়ে দিল মধুরা। অস্ফুটে বলল—নিমেষ, তুই আমার তুই আমার তুই আমার… যাঃ, ভাগ এবার, বেশ ভাল হয়েছে মিলনটি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *