মগরাজ – ৮

অধ্যায় আট – বর্তমান সময়

স্পেশাল ব্রাঞ্চ, টেম্পোরারি সেল, ঢাকা

শারিয়ারের কাছে মায়ের স্মৃতি মানেই এলোমেলো আর ছিন্নভিন্ন এক অনুভূতি।

‘মা’ শব্দটা শারিয়ারের কাছে খুবই অদ্ভুত একটা শব্দ। এর পেছনে কারণ হলো, প্রতিটি মানুষের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংযোজিত থাকে যে- ব্যাপারটা সেটা হলো, সেই ভাবনার সঙ্গে সংযুক্ত একটি শব্দ। কারণ মানুষকে ভাবতে হলে তাকে সেই ভাবনার সঙ্গে সংযুক্ত শব্দটা চিন্তার সঙ্গে সংযুক্ত করে ভাবতে হয়। একজন মানুষ যে শব্দটার সঙ্গে পরিচিত নয়, সেই শব্দটা নিয়ে চাইলেও সে সহজে ভাবতে পারবে না।

আর ঠিক এ কারণে যখনই মা শব্দটার কথা মনে হয়, শারিয়ারের কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি স্বপ্নের লাগে। কারণ মায়ের সঙ্গে তার সমস্ত যোগাযোগ একমাত্র স্বপ্নেই বিদ্যমান। মায়ের সঙ্গে শারিয়ারের কোনো স্মৃতি নেই। কারণ সে খুব ছোটো থাকতেই তার মা মারা যায়। তার কাছে মা বলতে শুধুই অ্যালবামে থাকা কয়েকটা ছবি। তবে মা মাঝে মাঝে ওর স্মৃতিতে হানা দেয়, ঘুমের মাঝে স্বপ্নের ভেতরে। মাকে সে প্রথম স্বপ্নে দেখতে পায় স্কুলে থাকতে, প্রথম যেদিন মাতাল হয় সে।

শারিয়ারের কাছে মা-বাবা দুজনেই সুদূর পরাহত। আর তার সমস্ত দায়- দায়িত্ব একমাত্র চাচার ওপরে ন্যস্ত। আর শারিয়ারের প্রতি তার চাচার ভালোবাসা কোনো বাঁধ মানে না। কিন্তু ব্যবসায়িক কাজে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকার কারণে ভদ্রলোক কোনোদিনই ঠিকমতো শারিয়ারের স্কুলের প্রোগ্রামে যেতে পারত না। কিন্তু নিজে যেতে না পারলেও সে এক বস্তা করে টাকা পাঠিয়ে দিত শারিয়ারের জন্য। যাতে সে নিজের পছন্দমতো এটা-সেটা কিনতে পারে। বোর্ডিং স্কুলের কঠিন জীবন থেকে যখনই মুক্তি পেত ইচ্ছেমতো সে সদ্ব্যবহার করত সেই টাকার। আর এসব ক্ষেত্রে যা হয় এরকম ছেলেদের সঙ্গে জুটে যায় একদল দুধের মাছি। আর শারিয়ারের সঙ্গেও এরকম একদল দুধের মাছি সবসময় ছোঁক ছোঁক করত।

স্কুলের কোনো এক ছুটিতে এরকমই যখন সে একদল দুধের মাছির সঙ্গে মাতাল হয়ে এক বন্ধুর বাসার ছাদে পড়েছিল এমন সময় হঠাৎ সে দেখতে পায় তার মাথার কাছে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে অসম্ভব মমতাময়ী একজোড়া বাদামি চোখ। ঘুমের মাঝে দেখা মানুষের স্বপ্ন নাকি কখনো রঙিন হয় না। কিন্তু শারিয়ার ঘুমের মাঝে যতদিন নিজের মাকে দেখেছে একজোড়া বাদামি চোখ সে পরিষ্কার দেখতে পেয়েছে। ওইদিনের পর থেকে মাকে সে মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখতে পায়। বেশিরভাগ সময়ই স্বপ্নটা একইরকম হয়; কোনো একটা কুল-কুল

করে বয়ে যাওয়া জলধারার পাশে ঘাসের ওপরে শুয়ে থাকে সে। তার মাথার পাশে বসে পরম মমতায় চুলে হাত বুলিয়ে দেয় মা। আর যখন এই স্বপ্নটা দেখে সে সবসময় মনে হয় কোনো অবস্থাতেই যেন ঘুম না ভাঙে তার। তবে মাঝে মাঝে এই স্বপ্নের ব্যতিক্রমও হয়। কখনো-কখনো মা তাকে ভীষণ কটু কথা বলে শাসনও করে স্বপ্নের মাঝে। ঠিক যেমনটা সে করতে যাচ্ছে আজকে।

যেদিন মা ওকে শাসন করে মায়ের চেহারা দেখেই শারিয়ার বুঝতে পারে আজ মা তার ওপরে অখুশি। আর এমনটা সেদিনই ঘটে যেদিন সে দেখতে পায় মায়ের বাদামি চোখজোড়ায় অশ্রু টলটল করছে। সেদিন দুঃখে কষ্টে শারিয়ারের মরে যেতে ইচ্ছে করে। মনে হয় চিৎকার করে বলে আর কোনো অবস্থাতেই সে দুষ্টুমি করবে না, সবসময় শান্ত-সুবোধ ছেলের মতো ভালো হয়ে চলবে। ভীষণ কষ্ট হয় তখন, মনে হয় তার পৃথিবীটা চারিপাশ থেকে ভেঙে পড়ছে। তীব্র জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে করে তখন।

ঘুমের মাঝেই ভীষণ একটা চিৎকার করে ধর-মর করে উঠে বসল সে। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে মনে হলো, সে বুঝতেই পারছে না কোথায় আছে। তীব্র লাইটের আলোটা হাত দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করল। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে, বুকের ঠিক মাঝখানটায় ভীষণ একটা জ্বালাধরা অনুভূতি। লাইটের তীব্র আলোটা এক হাতে আড়াল করে অন্য হাতে বুক ডলতে ডলতে উঠে বসার চেষ্টা করল শারিয়ার। বেশ অনেকটা সময় লাগল তার চোখের দৃষ্টিটাকে আলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে। আর সেটা করতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই সে অনুধাবন করতে পারল কোথায় আছে এবং কী ঘটেছিল।

এই মুহূর্তে একটা আট বাই দশ সাইজের সেলের ভেতরে আছে সে। ধূসর রঙের সেলটার তিন দিকে দেয়াল, একদিকে লোহার শিক দেওয়া। শিকগুলো ও ধূসর রঙের। ছোট্ট রুমটার একপাশে একটা ছোটো কিউবিকলের মতো। প্রাকৃতিক কর্ম সারার ব্যবস্থা। আর দেয়ালের সঙ্গে জোড়া লাগানো দুটো লোহার কটের মতো. বিছানা। দুটোর একটা থেকে সম্ভবত সে গড়িয়ে পড়ে গেছে নিচে। অন্যটাতে বসে তার দিক অত্যন্ত ক্রূর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছুঁচোর মতো দেখতে এক লোক।

বুক ডলতে ডলতে লোহার কটটাতে উঠে বসল শারিয়ার। আপনাতেই হাত চলে গেল পকেটে। দুই পকেটের কোনটার ভেতরে মোবাইল কিংবা মানিব্যাগ কিছু তো নেই-ই এমনকি জ্যাকেটের পকেটগুলোও ফাঁকা।

বড়ো করে একবার দম নিয়ে সোজা হয়ে বসল শারিয়ার। হঠাৎ মাথার ভেতরটা ফাঁকা লাগছে। কারণ ওর মনে পড়ে গেছে বাইক রেসের ওখান থেকে তাকে ধরে আনা হয়েছে। কথাটা মনে হতে একইসঙ্গে মুখে সামান্য হাসি ফুটে উঠল, আবার মনের ভেতরে খানিকটা দুঃখবোধও হতে লাগল। দুঃখের কারণ হলো, মাত্র ছয়মাস হলো সে দেশের বাইরে ছিল এরইমধ্যে হারামজাদাগুলো তার রেসের ময়দান দখল করে ফেলেছে। ওর নিজের লোকদের মেরে-ধরে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবে দুঃখের ব্যাপার ওর নিজের লোকেরাও ওর অনুপস্থিতির সুযোগে কিছু খারাপ কাজ করেছে। দুঃখ লাগছে ওর নিজের লোকদেরকেই আরেকটু টাইট দেওয়ার দরকার ছিল। সেটা করার আগেই এরা তাকে ধরে আনল। কথাটা ভাবতেই শারিয়ারের মুখে হাসি ফুটে উঠল কারণ কারা তাকে ধরে এনেছে এটা মোটামুটি সে ধরতে পেরেছে।

বুকের যেখানে জ্বলছে আনমনেই সেখানে সামান্য ডলা দিল সে। এ দেশে কাদের কাছে টিজার আছে ভালোভাবেই জানে শারিয়ার। তবে তার হাসার কারণ সেটা নয় বরং এই রেস আর এভাবে ধরা পড়া নিয়ে তাকে যে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে…’

‘ওই, সিগারেট আছে সিগারেট?’ হঠাৎ মুখের কাছে খসখসে একটা কণ্ঠ বলে উঠল।

শারিয়ার তাকিয়ে দেখল ময়লা কাপড়-আর ততোধিক ময়লা চেহারা নিয়ে তার দিকে খুব কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দ্বিতীয় কটে বসা সেই লোকটা। শারিয়ার একবার মুখ তুলে তার দিকে দেখে নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। তাতে লোকটা খানিকটা অপমান বোধ করল কিনা কে জানে। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো শারিয়ারের দিকে।

‘এই ব্যাটা, তরে একটা কথা জিগাইসি না?’ লোকটা বেশ অনেকটাই এগিয়ে এসেছে শারিয়ারের দিকে। ও আবারো মুখ ফিরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখল। নির্দ্বিধায় বলতে পারে, নেশাখোর। সম্ভবত নেশার আখড়া থেকে ধরে এনেছে এটাকে। কিন্তু সেক্ষেত্রে একে স্পেশাল সেলে কেন রেখেছে।

‘সিগারেট আছে তোর কাছে?’ একইরকম খসখসে গলা।

‘হট,’ শারিয়ার ধমকে উঠে ওটাকে দূরে সরার জন্যে ইশারা করল।

কিন্তু লোকটার মধ্যে কোনো বিকার দেখা গেল না। সে শারিয়ারের একেবারে কাছে এসে উঁবু হয়ে তার দিকে তাকিয়ে নোংরা হলুদ দাঁত বের করে হাসতে লাগল।

‘বড়োলোকের পোলা, ধইরা আনছে না?’ সে দাঁত কেলিয়ে বলতে লাগল। ‘কই গেছিলি? মাগি লাগাইতে?’ বলে সে কুৎসিত ভঙ্গিতে হেসে উঠল। ‘তোরে আর তর বাপেরে তো এহন খসাইবো, বলে সে উঁবু অবস্থা থেকেই একটা হাত তুলে আঙুল দিয়ে দেখাল, ‘কমসে কম দশের নিচে ছাড়ব না। আমারে কিছু দিলে ওস্তাদগোর লগে সেটিং কইরা কমে ব্যবস্থা কইরা দিমু। বুচ্ছোস?’

শারিয়ার মুখ তুলে তাকাল তেলাপোকার মতো লোকটার দিকে। ডান হাতটা তুলে সপাটে চড় মারল লোকটার মুখে। ওর শক্ত চড় খেয়ে হালকা শরীর নিয়ে প্রায় ছিটকে গিয়ে পড়ল সেলে শিকের ওপরে, শিকে বাড়ি খেয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল মাটিতে।

শারিয়ার আনমনেই মাথা নাড়ল। সবখানেই দুই নম্বরি। শালার ঘুস খাওয়ার মধ্যেও দুই নম্বরি করে এরা। এই স্পেশাল সেলে থাকা নোংরা লোকটার ভূমিকা ঠিক ধরতে পারছিল না ও। এখন বুঝতে পারছে। এই লোক একদিকে যেমন নেশাখোর, একইসঙ্গে আবার সে পুলিশের ইনফর্মার। তবে এই সেলে লোকটাকে এনে রাখা হয়েছে বিশেষ একটা কারণে। এরা বড়োলোকের পোলাপানদের ইয়াবার আখড়া অথবা সেক্স জয়েন্ট থেকে ধরে এনে বাবা-মায়ের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে। এ-ধরনের বড়োলোকের ছেলেপেলেরা, যারা পরিবারের তৈরি অর্থনৈতিক আর পারিবারিক নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে থেকে নিজেদের খুব কুল মনে করে, এরাই পুলিশ বা স্পেশাল সংস্থার লোকদের হাতে ধরা পড়ার পর একেবারেই মুরগি হয়ে যায়। আর যদি দুটো ডলা দেয় তবে তো কথাই নেই। কেঁদে-কেটে মাম্মি-পাপাকে ডাকতে শুরু করে।

এসব মুরগিদের ধরে নরম করার পর যখন এইসব সেলে রাখা হয় তখন ডাক পড়ে এইসব লোকদের। আইনের লোকজন সওদা করার জন্যে সরাসরি কথা না বলে অনেক সময় এদের ব্যবহার করে মধ্যম মানুষ হিসেবে। আইনের লোকদের হয়ে এরাই নেগোশিয়েশনটা করে দেয়। চমৎকার ব্যবস্থা। কারো কোনো লস নেই, সবাই জয়ী এই ব্যবস্থায়।

শারিয়ার মুখ তুলে তাকাল তেলাপোকাটার দিকে। নেশা করতে করতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই এর ভেতরে। লোকটাকে মেরে একটু খারাপ লাগছে কিন্তু এটুকু না করলে ব্যাটা যন্ত্রণা দিত।

সেলের ফ্লোর থেকে কোনোমতে উঠে বসে শিকের সঙ্গেই হেলান দিয়ে বসে ভয়ের দৃষ্টিতে ওকে দেখছে লোকটা। ঠোঁটের কোণে রক্ত লেগে আছে।

‘আর চাইবি সিগারেট?’ শারিয়ারের একটু খারাপই লাগছে লোকটাকে মারাতে। এসব মানুষ হলো বোধবুদ্ধিবিহীন তৃতীয় শ্রেণির প্রাণির মতো। এদেরকে যারা ব্যবহার করে তারা হলো আসল অপরাধী। কিন্তু যে-সমাজে দুর্নীতি হলো সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ব্যবস্থা, সেই সমাজে এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।

লোকটা ভয়ের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার নোংরা জ্যাকেটের ভেতরের পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে ফ্লোরে রেখে ঠেলে দিল ওর দিকে। শারিয়ার খুব অবাক হয়ে দেখল একেবারে আনকোরা একটা বেনসন লাইটের প্যাকেট, সঙ্গে বিকের একটা সাদা লাইটার। শারিয়ার প্যাকেটটা তুলে নিয়ে খুলতে খুলতে ওর দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ সুলভ একটা হাসি দিল। এই সিগারেটের মালিক এই লোক নয়। সম্ভবত এই লোককে দেওয়া হয়েছে এই সিগারেট যাতে সে মুরগিদেরকে পটানোর সময়ে সিগারেট অফার করে তাদেরকে মানসিকভাবে একটু সাপোর্ট দিয়ে আরেকটু বেশি টাকা আদায় করতে পারে।

শারিয়ারকে সিগারেট ধরিয়ে মৃদু হাসতে দেখে লোকটা খুব খুশি হয়ে উঠতে যাচ্ছিলো কিন্তু ওকে চোখ গরম করে তাকাতে দেখে আবারো বসে পড়ল সে। ‘ওস্তাদ আপনে কেডা?’ গালে হাত বুলাতে বুলাতে জানতে চাইল সে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় সে এটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছে পুলিশ সেলে বসে এভাবে যে চড় মারতে পারে, সে আর যাই হোক সাধারণ কেউ নয়। হয় সে অনেক বড়ো ক্রিমিনাল আর না হয় উলটো।

শারিয়ার সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সুন্দর একটা জবাব দিতে যাচ্ছিল তার আগেই সেলের বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। শারিয়ার মুখ তুলে তাকিয়ে দেখল আফতাব নগরে দেখা তিন কালো কোটের একজন এগিয়ে এসেছে সেলের দিকে। লম্বা-চওড়া লোকটা সেলের বাইরে এসে দাঁড়াতেই শারিয়ারের মুখে ফুটে উঠল মৃদু এক টুকরো হাসি।

‘দুই ভাইয়ে দেখি ভালোই খাতির হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই,’ লোকটা হেসে উঠে একবার ওই লোকটাকে দেখাল, কালো কোটকে দেখে সে শিকের ওখান থেকে আবারো সরে গেছে দেয়ালের দিকে। লোকটাকে দেখে নিয়ে সে ইঙ্গিত করল শারিয়ারের দিকে। ‘অবশ্য, মিল হবারই কথা। দুটোই একই পদের।’

কিন্তু তার কথার জবাবে বিন্দুমাত্র অপমানবোধ না করে শারিয়ার হেসে উঠে ঠোঁট আর জিহ্বা দিয়ে মৃদু চুক-চুক শব্দ করতে লাগল। ‘আহারে বেচারা,’ বলে সে জোরেই হেসে উঠল। ‘কতো শখ ছিল… ছেলে ইংল্যান্ডে যাবে সরকারি ট্রেনিংয়ে, বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। আর বেচারা ইংল্যান্ডে যেতে না পেরে ডিপার্টমেন্টই বদলে ফেললো।’

সঙ্গে সঙ্গে কালো কোটের চেহারার রং বদলে গেল। ‘আর তুই কী করলি বিদেশ থেকে ট্রেনিং করে এসে?’ বলে সে রাগের সঙ্গে সেলের শিকে একটা থাবা মারল। ‘যার যা কাজ। পাশা স্যার একটা গাধা লোক,’ এই পর্যন্ত বলতেই শারিয়ার রাগের সঙ্গে ঝটকা দিয়ে উঠে বসল।

‘স্যারকে নিয়ে উলটো-পালটা কথা বলবি না। খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।’

শারিয়ারের কথার জবাবে জোরে হেসে উঠল কালো কোট। ‘আমি উলটা- পালটা বললে দোষ। আর তুই যে স্যারের নাম ডোবাচ্ছিস। দেশের বাইরে থেকে ট্রেনিং করে এসে এই তোর ঠিকানা?’ বলে সে সেলটা দেখাল। ‘চোদ্দ শিকের ভেতরেই যদি পৌছাবে তাহলে আরেকজনের সিট কেন নষ্ট করলি?’

শারিয়ার খুব শক্ত একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। এক হিসেবে যাবের ভুল বলেনি। ও একটা হাত তুলে যাবেরকে থামতে ইশারা করল। ‘শোন, এসব কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছিস, বল?’

যাবের ওর দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। ‘সেটা তোর বসকেই জিজ্ঞেস করিস, ‘ বলে এবার সে নিজের মুখ দিয়ে চুক-চুক জাতীয় শব্দ করে উঠল। ‘বেচারা যাদের সঙ্গে এত লড়াই করে তোকে আর তানভীরকে বাইরে পাঠাল, সেই তোকে আওতায় আনার জন্যে আবার তাদের কাছেই সাহায্য চাইতে হলো। আহা রে শারিয়ার, তুই এভাবে তোদের প্রিয় পাশা স্যারের মান-ইজ্জত ডোবালি। ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে রে,’ বলেই সে জোরে হেসে উঠল।

শারিয়ারের মুখটা আপনাতেই নিচু হয়ে গেল। যাবেরের কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। সে যা করেছে করেছে কিন্তু এভাবে পাশা স্যারকে নিচু করাটা ওর একেবারেই উচিত হয়নি। এখন মনে হচ্ছে ইংল্যান্ড থেকে ট্রেনিং করে অফিসের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করে মাথা গরম করে রেসের মাঠে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। ‘দেখ যাবে যা হয়েছে হয়েছে, এখন লক-আপ খোল।’

যাবেরের মধ্যে কোনো বিকার দেখা গেল না। সে হাসতে হাসতেই বলতে লাগল। ‘বিশ্বাস কর, শারিয়ার, তোদের অফিস থেকে আমাদের এখানে যখন অনুরোধ এলো আজ রাতে একটা ছোটো ইনবাউন্ড মিশনে আফতাব নগরে যেতে হবে, খুব বিরক্ত লাগছিল। পরে যখন শুনলাম, ওখানে গিয়ে তোকে ধরে আনতে হবে,’ বলে সে মুখ দিয়ে তৃপ্তি-সুলভ শব্দ করল। ‘তোকে ধরার জন্যে যখন টিজারটা মারলাম না-’ সে কথা শেষ করার আগেই শারিয়ার বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তীব্র বেগে এগিয়ে গেল সেলের শিকগুলোর দিকে। যাবের সতর্ক হবার আগেই শিকের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে খপ করে ধরে ফেললো যাবেরের কোটের কলার। জোরে একটা টান মারল যাবেরকে। কাচের বাল্বের গায়ে লাঠি দিয়ে বাড়ি মারলে যেমন শব্দ হয় অনেকটা তেমনি ফট জাতীয় একটা শব্দ করে যাবেরের নকটা ভেঙে গেল শিকের সঙ্গে লেগে, শারিয়ার গায়ের জোরে আরেকটা বাড়ি মেরে হয়তো তার মাথাটাই ভেঙে ফেলতো কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে ভারী একটা গলা ধমকে উঠল তাকে।

‘শারিয়ার ছাড়ো ওকে, বিহেইভ ইওরসেল্ফ।’

জেলে থাক আর যেখানেই থাক একবার যেহেতু শিকার হাতের মুঠোয় এসেছে তাকে ছাড়ার বান্দা শারিয়ার নয়। কিন্তু ধমকটা খাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ছেড়ে দিল শারিয়ার। কারণ দুনিয়ার একমাত্র মানুষ যাকে সে কেয়ার করে এবং বলতে গেলে খানিকটা ভয়ও পায়, ধমকটা উচ্চারিত হয়েছে তার মুখ থেকে।

যাবেরকে ছেড়ে দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেল শারিয়ার। সেলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে দুজন মানুষ। একজনের গায়ে ঠিক যাবেরের মতোই কালো কোট। অপরজনের পরনে সাধারণ লাইট ফরমাল ট্রাউজার, তাতে যত্নের সঙ্গে টাক্ট ইন করা ঘিয়ে রঙের পলো টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ, পায়ে পুমার স্নিকার্স। মানুষটাকে দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র সে গলফ খেলার মাঠ থেকে সোজা চলে এসেছে এখানে। মানুষটা আর কেউই নয়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের স্পেশাল উইংয়ের প্রধান সৈয়দ হাবিব আনোয়ার পাশা।

যদিও যাবেরকে ছেড়ে দিয়েছে শারিয়ার তবুও সেলের সামনে এসে আরেকবার ধমকে উঠল সে, ‘ইউ ইনসেন ব্র্যাট, এভাবে কেউ ফেলো অফিসারের গায়ে হাত তোলে! তাও,’ সে চট করে একেবার দেখে নিল সেলে অপর প্রান্তে প্রায় গুটিশুটি মেরে বসে থাকা লোকটার দিকে। তারপর মুখ ফিরিয়ে যাবেরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘আর উই অলরাইট?’ যাবের কোন কথা না বলে স্রেফ মাথা নেড়ে জবাব দিল, সে ঠিক আছে। যদিও রুমাল চেপে ধরে সে নাকের রক্ত বন্ধ করতে ব্যস্ত।

আনোয়ার পাশা তার সঙ্গে আসা দ্বিতীয় কালো কোটকে নির্দেশ দিতেই সে এগিয়ে এসে সেলের দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে একটা ছোটো টুল রেখে দিল শারিয়ারের কটটার ঠিক বিপরীতে। তারপর সেই লোকটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। যাবার সময় বন্ধ করে দিল সেলের দরজাটা।

ওরা যাওয়া পর্যন্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে শারিয়ারের দিকে। পায়ের শব্দ মিলিয়ে যেতেই রাগের সঙ্গে একবার হাত নেড়ে সে বরে উঠল, ‘শারিয়ার, আর উই ইনসেন?’ তার গলায় রাগ-ক্ষোভ-হতাশা আর বিরক্তি একসঙ্গে যেন ফেঁপে উঠছে।

‘স্যার, যাবের আপনাকে নিয়ে বাজে কথা বলছিল? ও বলছিল—’

‘আমি ফাকিং কেয়ার করি না যাবের কী বলছিল। আই কেয়ার অ্যাবাউট হোয়াট দ্য ফাক ইউ আর ডুয়িং,’ বলে সে ট্রাউজারে পকেট থেকে স্টিল কালারের চকচকে সিগার কেইস বের করল। ‘যাবের যা খুশি তাই বলুক তুমি তার ওপরে চড়াও হয়ে যাবে। আর আমি যাবেরের সঙ্গে তোমার মারামারির কথা বলছি না- বলে সে কেস থেকে সরু একটা সিগার বের করে ঠোঁটে লাগিয়ে কেসের সঙ্গে অ্যাটাচ লাইটার দিয়ে ওটাতে আগুন দিল। ‘ট্রেনিং শেষ করে দেশে এসে তুমি অফিসে রিপোর্ট করোনি কেন?’

অস্বস্তির সঙ্গে মাথা নাড়ল শারিয়ার। এসব অফিসিয়াল প্রসিজারে তার চূড়ান্ত বিরক্তি। স্যার, সময় পাইনি। আসলে আমি যেতাম কিন্তু…’

তুমি ট্রেনিং থেকে ফিরে অফিসে যাবার সময় পাওনি, আর রেসের মাঠে গিয়ে কুকুর-বিড়ালের মতো মারামারি করার সময় সুযোগ ঠিকই হয়ে গেছে তোমার?’

শারিয়ার আবারো অস্বস্তির সঙ্গে মাথা নাড়ল। চূড়ান্ত একটা ঝাড়ি খেতে যাচ্ছে সে। এসব ঝাড়ি-ফারির কেয়ার সে করে না। কিন্তু যে-মানুষটা তাকে ঝাড়ি দিতে যাচ্ছে তাকে সে কেয়ার করে। আর সে জানে পাশা স্যার এমন ধীরে ধীরে এমনভাবে প্যাচিয়ে ধরবে চাইলেও সে ছুটতে পারবে না। আর তাই অস্বস্তিটা সময়ের সঙ্গে আরো বাড়তে লাগল।

‘স্যার…’

‘কোনো কথা বলবে না তুমি। একটাও না,’ শক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে সিগারটা তার দিকে পিস্তলের মতো তাক করে বলে উঠল পাশা স্যার। ‘একটার পর একটা ফাউল করেছো তুমি। স্কটল্যান্ডের ট্রেনিং সর্বোচ্চ মার্কস পেয়েছো তুমি তোমার টিমে। এরপর কী করলে। যেদিন ফাইনাল সিরিমনি সেদিন তোমাকে ড্রাঙ্ক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় লোকাল পাব থেকে, তাও তোমাদের টিমের ম্যানেজার মেয়েটার সঙ্গে। এরপর কী করলে? দেশে এসে তিন দিন হয়ে গেছে। ফাকিং তিনদিন হয়েছে, তুমি অফিসে যাওনি। তোমাকে অন্তত আধ ডজনবার ফোন করেছে মৌসুমি, সেগুলো তো ধরোওনি, এরপর তোমাকে আমার অন্য ডিপার্টমেন্টকে অনুরোধ করে আমার উঠিয়ে আনতে হয়েছে এখানে,’ বলে সে হাতের সিগার নেড়ে সেলটা দেখাল,’ প্রতিটি শব্দের সঙ্গে তার রাগের হালকা বয়ে যাচ্ছে।

‘স্যার, আপনি আমাকে ডাকতেন?’

‘হ্যাঁ, আমি তোমাকে ফোন করতাম, না পেলে তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে অনুরোধ করতাম। স্যার আপনার রেস্ট হয়ে থাকলে এবার অফিসে আসবেন প্লিজ…’ পাশা স্যারের চিকন গলায় টিটকিরি মেরে বলা কথাগুলো শুনে শারিয়ারের চূড়ান্ত হাসি পেতেই সে মাথা নিচু করে ফেলল। এরকম অবস্থায় তাকে হাসতে

দেখলে হেস্তনেস্ত করে ফেলবে পাশা স্যার।

শারিয়ারকে মাথা নিচু করতে দেখে পাশা স্যার ভাবলো সে লজ্জিত তাই গলাটাকে একটু নরম করে সে বলে উঠল। ‘শারিয়ার, তুমি আমার সেরা এবং সবচেয়ে ব্রাইট অফিসারদের একজন। তুমি, তানভীর তোমাদেরকে নিয়ে আমি কতস্বপ্ন দেখছি। আর তুমি কি না—’ পাশা স্যার কথা না বলে সিগারে জোরে জোরে টান দিতে লাগল।

তানভীরের কথা শুনে কোনোমতে হাসি সামলে মুখ তুলল শারিয়ার। ‘স্যার, তানভীরের কী অবস্থা? ও নাকি আহত হয়েছিল?

‘হ্যাঁ, আহত হলেও ও অপারেশটাকে খুব সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। যদিও প্রথমবার মাঠে নামার কারণে কিছু ভুলচুক করেছে কিন্তু ও যা করে দেখিয়েছে তা এক কথায় ফেবুলাস,’ বলে সে একটু থেমে যোগ করল। ‘শোনো, শারিয়ার। আমি নতুন ডিপার্টমেন্ট বানাতে যাচ্ছি। আর সেজন্যই দুনিয়ার সবাইকে বাদ দিয়ে তোমাকে আর তানভীরকে ইউরোপে পাঠিয়েছিলাম। তানভীরকে নিয়ে আমি একটা বিরাট বাজি ধরেছিলাম সিলেটের কেসটাতে এবং সেই বাজি আমি জিতে গেছি। যার কারণে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে খুব দ্রুতই তোমাদের স্পেশাল টিমের প্রস্তাব পাঠাবো আমি। আর এ কারণেই,’ বলে সে আবারও সিগারটাকে সোজা তাক করল শারিয়ারের দিকে। ‘আমি চাই তুমি চট্টগ্রাম যাও। ওখানে একটা ভীষণ ঝামেলার ঘটনা ঘটে গেছে। প্রাথমিকভাবে কেসটা পুলিশের হাতে থাকলেও কেসটা নিয়ে কিছু ঝামেলা বেঁধেছে আর তাতেই আমি চাই তুমি কেসটা হ্যান্ডেল করো। সিবিআই কেসটা প্রায় নিয়েই নিয়েছিল কিন্তু আমি সেটা হতে দিইনি। এর পেছনে কিছু কারণ আছে,’ আনোয়ার পাশা চিন্তিত মুখে বলে উঠল।

‘স্যার, ব্যাপারটা কী?’ শারিয়ার ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা বোধ করতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিনের ট্রেনিংয়ে শরীর আর মাথায় জং ধরে গেছে। আর তাই প্রকৃত কেসের গন্ধে ভেতরটা চনমন করে উঠছে ওর।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা রোডে একজন লোক অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। তাকে নিয়েই তৈরি হয়েছে জটিলতা,’ এইটুকু বলে সে হাত নাড়ল। ‘আমি বিশদ বলব না তোমাকে,’ বলে সে টিটকিরির হাসি হাসল। ‘পুলিশ সেলে অফিসার ব্রিফ করে অভ্যস্ত নই আমি,’ শারিয়ার আবারও মাথা নিচু করে ফেলল।

‘কাল সকালের ট্রেনে তুমি চট্টগ্রাম যাচ্ছ। সকালে মৌসুমি টিকিটসহ ফাস্টপ্যাক নিয়ে তোমাকে বাসা থেক পিক করবে। ও তোমাকে স্টেশনে পৌঁছে দিতে দিতে ব্রিফ করবে ইন ডিটেইল,’ বলেই সে উঠে দাঁড়াল।

শারিয়ার, তানভীরকে নিয়ে আমি একটা বাজি ধরেছিলাম। ও তাতে আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে,’ বলে সে চোখ নাড়ল। ‘তোমার ওপরে আমি আরো বড়ো বাজি ধরছি। এটাতেও আমার সাফল্য চাই। মনে রেখো, কোনো ধরনের ভুলচুক আমাদের জন্য সাংঘাতিক প্রাণঘাতী হতে পারে। বেস্ট অব লাক …’

পেছন থেকে শারিয়ার জানতে চাইল, ‘স্যার, আমি কি…’

‘নাহ তুমি এখানেই থাকবে আরো কয়েক ঘণ্টা, এরপর আমি ফরহাদকে কল করে দেব, ও ড্রাইভার পাঠালে চলে যাবে। তোমার বাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে,’ বলে সে মুখ বাঁকিয়ে সামান্য হাসল। ‘আর এই কয় ঘণ্টা এখানে কাটানোটা হলো তোমার বেয়াদবির শাস্তি,’ বলে ঘুরে দাঁড়াল সে যাওয়ার জন্য। কী মনে করে আবারও ফিরে তাকাল শারিয়ারের দিকে। শারিয়ার, তুমি আমার সবচেয়ে সেরা অফিসার বলে কথাটা বলছি না। বলছি তুমি আমার বন্ধুর ছেলে বলে,’ পাশা স্যার সাধারণত এরকম ইমোশনাল কথা কিংবা ব্যক্তিগত কথা কখনোই বলে না, তাই একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শারিয়ার।

সিগারটাকে শেষ একটা টান দিয়ে পাশা স্যার বলে উঠল, ‘এভাবে নিজেকে অপচয় করো না। সময় খুব খারাপ জিনিস, একবার যা হারাবে তা আর ফিরে পাবে না।’ বলে সে একবারও পেছনে না ফিরে সোজা বেরিয়ে গেল।

একটা বড়ো নিশ্বাস ছেড়ে শারিয়ার মুখ ভেংচে পুনরাবৃত্তি করল পাশা স্যারের শেষ কথাগুলো। হাবিব আনোয়ার পাশা বেরিয়ে যেতেই কটের নিচে হাত ঢুকাল তেলাপোকাটার রেখে যাওয়া সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নেওয়ার জন্য। কিন্তু জিনিস দুটো নেই ওখানে।

শালার তেলাপোকা বের হওয়ার আগে ঠিকই সরিয়ে ফেলেছে ও দুটো। ‘মাদারটোস্ট,’ আফসোসের সঙ্গে গালি বকল শারিয়ার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *