অধ্যায় চার – বর্তমান সময়
আফতাব নগর, রামপুরা, ঢাকা
যদি প্রাণে বাঁচতে চাস সত্যি কথা বল, তুই না বলেছিলি আগের জায়গাতেই হচ্ছে?’ প্রশ্নটা সামনের দিকে তাকিয়ে করলেও নিজের আর-সেভেন রেসিং হোন্ডা বাইকটা সামলে নিয়ে বাইকের সাইড মিররের পেছনের আরোহীর চোখের দিকে তাকাল শারিয়ার। যদিও পেছনের সিটে বসা আরোহী তার দিকে তাকিয়ে নেই, বরং সে আঁতিপাঁতি করে খোঁজার চেষ্টা করছে একটা জটলা, যাতে নিজের কথার যথাযথ প্রমাণ রাখতে পারে সে শারিয়ারের কাছে। কিন্তু মানুষ তো দূরে থাক আফতাব নগর আর মেরাদিয়ার কোণে অবস্থিত নির্জন মাঠের মতো আধা-অন্ধকার জায়গাটায় একটা কুকুর পর্যন্ত নেই।
‘কী হলো, কথা বলিস না কেন? এখানে তো একটা কুত্তা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না,’ যদিও জায়গাটা বেশ অন্ধকার তবুও ওর রেসিং বাইকের শক্তিশালী আলোয় শারিয়ার মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ব্যাক সিটে বসা আরোহীর প্রকৃত মনোভাবটা আসলে কী।
বাইকের পেছনে বসা আরোহী আশপাশে কিছুই খুঁজে না পেয়ে নিজের লাল রং করা মাথার চুলগুলো চুলকাতে চুলকাতে আনমনে বলে উঠল, ‘কিছুই তো বুঝতে পারছি না…’ সে দ্বিধার সঙ্গে আরো কিছু যোগ করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই বাইকটাকে এক পা স্ট্যান্ডের ওপরে দাঁড় করিয়ে ফেলে ঝটকা দিয়ে নেমে পড়ল শারিয়ার। ওকে এভাবে লাফিয়ে নামতে দেখে আগেই বাইকের পেছন সিট থেকে নেমে পড়া মুম নামের ছেলেটা চট করে দুই পা পিছিয়ে গেল ভয় পেয়ে প্রায় মাফ চাওয়ার মতো করে দুই হাত সামনে জড়ো করে সে কাতর সুরে বলে উঠল, ‘ভাই, বিশ্বাস করো, আমি গেল সপ্তাহেও এইখানেই এক্স মিল্টন আর ওর গ্যাঙরে একদল পোলামাইয়া লইয়া শোডাউন দিতে দেখছি,’ বলে সে ট্যাটু করা হাতটা তুলে রাস্তার পাশের ফাঁকা মাঠের একপাশটা দেখিয়ে বলে উঠল, ‘ওইহানেই ওরা আমারে আর অ্যাঞ্জেলরে বাইক নিয়া ‘কুইকি’ দিতে কইছিল,’ বলেই সে মাথা নিচু করে ফেলল। ‘তারপরে কী হয়ে তা তো তোমারে বলছিই…’
মুমের কথা শেষ হওয়ার আগেই রাগের একটা ঝটকা বয়ে গেল শারিয়ারের শিরদাঁড়া বেয়ে। ‘এত বড়ো সাহস,’ বলেই সে মাটিতে লাথি মারল। শালা ঘোঁয়ো কুত্তার পাছা, মাদারটোস্ট মিল্টন। ওর এত বড়ো সাহস হয় কী করে?’ রাগে শারিয়ারের শরীর চিড়বিড় করছে। রাগ সামলাতে ও নিজের কোমরে আটকানো লেদারের পাউচটা খুলে সিগারেটের কেইস বের করে একটা ডানহিল ঠোঁটে লাগাল। কয়েক দফা ধোঁয়া দমকে দমকে নিজের ভেতরে টেনে নিতেই ভেতরে রাগ আর ধোঁয়ার যুদ্ধে রাগ খানিকটা প্রশমিত হয়ে আসতেই মুমের দিকে তাকিয়ে গ্লাভস পরা হাতের একটা আঙুল তুলে তাকে শাসিয়ে বলে উঠল, ‘মুম, খুব সাবধান। তুই যা কইছস তা যদি সত্যি হয় তবে এক্স মিল্টনের এ টু জেড আমি বাইর করব। কিন্তু,’ বলে ও আবারও সিগারেটে কষে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে যোগ করল, ‘আর যদি তুই বিন্দুমাত্র মিথ্যে বলে থাকোস তবে তরে আমি…’
‘না ভাই না, বিশ্বাস করো আমি একটা কথাও…’
মুম কথা শেষ করার আগেই ধমকে উঠল শারিয়ার। ‘চুপ।’
‘ভাই তুমি…’
‘বললাম না চুপ করতে…শশশ…’ এবার ব্যাপারটা ধরতে পারল মুম। তাকে ধমক দিচ্ছে না শারিয়ার বরং অন্য কোনো কারণে চুপ হতে বলছে। মুখ তুলে সে দেখল চোখের নাইট গ্লাসটা খুলে মুখ তুলে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে শারিয়ার। গ্লাভস পরা হাতের একটা আঙুল ঠোঁটের ওপরে।
‘ভাই তুমি কি…’ মুম কথা শেষ করার আগেই শারিয়ার ঝট করে নড়ে উঠল। প্রায় লাফিয়ে এসে উঠে বসল বাইকের ওপরে। ‘মুম, উঠে বস আমি বুঝতে পেরেছি ওরা কোথায়,’ মুম চট করে এগিয়ে এসে বাইকের পেছনে বসতে বসতেই বাইকটা স্টার্ট দিয়ে ফেলল শারিয়ার। উপযুক্ত চালকের হাতে পড়তেই রীতিমতো গর্জন করে উঠল শক্তিশালী গতিদানব। শারিয়ার বাইক স্টার্ট দিয়ে কয়েক দফা অ্যাক্সেলেটরে চাপ দিতেই বাইকটা এমনভাবে বুমবুম করে উঠল যেন ওদের শরীরের নিচে কোনো চিতাবাঘ ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে প্রস্তুত হচ্ছে লাফ দেওয়ার জন্য। অ্যাক্সেলেটরে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিতেই অনেকটা চিতার মতোই লাফ দিয়ে আগে বাড়ল হোন্ডা কোম্পানির স্পেশাল এডিশন রেসিং বাইক আর-সেভেন।
বাইকটাকে চালু করেই ফাঁকা মাঠ থেকে একটানে মূল রাস্তার ওপরে তুলে নিয়ে এলো শারিয়ার। তীব্র গতির কারণে বাইকটা বলতে গেলে একেবারেই চোখের পলকের ভেতরে পেরিয়ে এলো আধমাইলের মতো জায়গা। জায়গামতো এসেই শারিয়ার বাইকটাকে আবারও নামিয়ে দিল ফাঁকা মাঠের ভেতরে। গতি কমলেও সেটা এই মাঠে বাইক চালানের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।
‘ভাই সাবধানে…’ মুমের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবারও শূন্যে লাফিয়ে উঠল বাইক। প্রায় ফিট তিনেক জায়গা লাফিয়ে পেরিয়ে এলো অন্ধের মতো।
‘শারিয়ার ভাই, করো কী…!’
‘চুপ,’ ধমকে উঠল শারিয়ার। নাইট গ্লাসের ভেতর থেকে ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মাঠের অসমান উপরিতলের ওপরে। এখান থেকে সিকি মাইলের মতো এগোতেই শারিয়ার রাস্তার অন্য পাড় থেকে যে-শব্দটা শোনার চেষ্টা করছিল সেটা এবার স্পষ্ট হয়ে কানে বাজতে লাগল দুজনেরই।
‘শুনতে পাচ্ছিস?’ নিজের অনুমান মিলে যাওয়াতে খুশি হয়ে উঠেছে শারিয়ার। এত দিন পরে হওয়াতে অনুমানটা ঠিক মেলাতে পারছিল না নিজেই। কিন্তু শব্দের উৎস অনুসন্ধানে খানিকটা গড়মিল হলেও শেষ পর্যন্ত মিলে যাওয়াতে খুশি হয়ে উঠেছে ও। ‘বলেছিলাম না,’ বলে ও গতি আরেকটু বাড়িয়ে দিল উঁচু-নিচু মাঠের ওপর দিয়ে।
শব্দ তো শুনতাছি কিন্তু…’ নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত মুম শেষ শব্দ দুটো উচ্চারণ করল মনের ভেতরে। ‘মানুষ কই?’
আরো মিনিট দুয়েক এগোতেই শব্দটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল। একদল মানুষের হইহল্লা করার আওয়াজ, সেই সঙ্গে উচ্চস্বরে মিউজিকের শব্দ। শারিয়ার বাইক টান দিয়ে একটা বিশেষ জায়গাতে এনে দাঁড় করিয়ে দিল।
‘আজিব কাহিনি, শব্দ আছে, আলো আছে। মানুষ কই?’ মুম অবাক হয়ে জানতে চাইল।
ওর প্রশ্ন শুনে হেসে উঠল শারিয়ার। ‘আছে এখানেই। আজ থেকে তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল এলাকায় রেসিংয়ের এই কাহিনি,’ বলে সে সামনের দিকে আঙুল তুলে ইশারা করল। কিন্তু মুম কিছুই দেখতে পেল না। ‘কই?’
‘দেখবি একটু পরেই,’ বলে শারিয়ার আবারও পাউচ থেকে একটা ডানহিল বের করে ঠোঁটে লাগিয়ে জিপ্পো দিয়ে আগুন লাগাল। ওর কাছে মনে হচ্ছে বহুদিন পরে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে। যেই বাড়ি বহু আগেই বেদখল হয়ে গেছে অন্যের হাতে।
আজ থেকে বছর তিনেক আগে আর্মি থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর শারিয়ার সারাদিন বাইক নিয়ে এদিকে-ওদিকে চক্কর মেরে বেড়াত নিজের বখাটে গ্যাঙ নিয়ে। সেই সময়ে ঢাকা শহরে উঠতি বাইকারদের মধ্যে নানা ধরনের রেস হতো। সেটা হতো ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাইওয়েতে। শারিয়ার আর ওর গ্যাঙই প্রথম আফতাব নগরের ভেতরে এই নির্জন জায়গাটা খুঁজে বের করে। আফতাব নগরের ভেতরে একেবারে নির্জন এই জায়গাটা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের প্রজেক্ট পার হয়ে অনেক ভেতরের দিকে একটা খালের মতো আছে। সেটার অন্য পাড়ের আরো বেশ ভেতর থেকে শুরু হয়েছে গ্রামীণ এলাকা। এদিকে দিনের বেলা কন্সট্রাকশনের শ্রমিক, আর রাতের বেলা নেশাখোর আর ভাসমান পতিতা ছাড়া আর তেমন কেউই আসে না। আর এ কারণেই শারিয়াররা এখানে বাইকের রেসিং শুরু করার কিছুদিনের ভেতরেই জায়গাটা রেসারদের জন্য স্বর্গ হয়ে ওঠে রীতিমতো।
তবে এখানে রেসিং করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। কারণ মূল রাস্তাটা বেশি লম্বা না হওয়ায় এখানে শর্ট রেস হতো বেশি। আর তার সঙ্গে চলত বড়ো বড়ো বাজি। তবে ওরা এখানে রেসিং শুরু করার কিছুদিনের ভেতরে শর্ট রেসের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বাইকের স্টান্টবাজি। বাইকের এসব স্টান্টবাজিগুলোর দুর্দান্ত সব নাম রয়েছে। এগুলোর ভেতরে ওদের এখানে উইলি, স্টপি, ক্রশ, রোলিং স্টপি, বার্ন আউট ধরনের স্টান্ট হয়ে ওঠে মারাত্মক জনপ্রিয়। জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল ভূমি থেকে বেশ খানিকটা নিচে শুকনো খালপাড়ের ভেতরে প্রায় হাজার খানেক গজের মতো জায়গা ওরা পাকা করে নেয় স্টান্ট করার জন্যে।
শারিয়ার সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বাইকের হ্যান্ডেল চেপে ধরে শক্ত করল। ‘শক্ত হয়ে বস,’ বলে বাইকের ব্রেক চেপে ধরে অ্যাক্সেলেটর চেপে ধরে বুমবুম করে প্রেসার দেওয়া শুরু করল। সামনের চাকা ব্রেকের কারণে চেপে বসে রইল ঘাসের মাটির ওপরে। আর অন্যদিকে পেছনের চাকা মাটিতে ঘর্ষণ করা শুরু হতেই টায়ার আর মাটির স্পর্শে ধোঁয়া বেরুতে শুরু করল।
‘ভাই সাবধা…’ মুম কথা শেষ করার আগেই শারিয়ার ব্রেক ছেড়ে দিতেই বাইক লাফ দিয়ে আগে বাড়ল। গজ পনেরোর মতো সামনে এগোতেই শূন্যে লাফ দিল আর সেভেনের সামনের চাকা।
‘ভাই, ভাই…’ মুমের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই ফিট বিশেকে শূন্যে লাফ দিয়ে গর্জনরত আর সেভেন লাফিয়ে নামল শুকনো খাল পাড়ের শান বাঁধানো জায়গাটার ওপরে। বুমবুম করে মুহূর্তের জন্য ভয়ংকর গর্জন ছেড়ে এক গাদা ধোঁয়া উড়িয়ে বাইকটা তীব্র বেগে এগিয়ে গেল বেশ খানিকটা সামনে দিকে।
নিচের শানবাঁধানো লম্বা জায়গাটার দুইপ্রান্তে বড়ো বড়ো কয়েকটা লোহার ড্রামের ভেতরে আগুন জ্বালানো হয়েছে। সেগুলোর আলোতে আলোকিত বেশ অনেকটা জায়গা। একপাশে বড়ো বড়ো স্পিকারে উচ্চস্বরে মিউজিক বাজছে। আর ড্রাম দুটাকে দুই পাশে রেখে প্রায় গোলমতো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেমেয়েদের মিশ্রিত একটা ভিড়। উপস্থিত জনতার বেশিরভাগই টিনেজার কিংবা ভার্সিটির ফার্স্ট বা সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া বড়োলোক বাবার বখে যাওয়া পোলাপান। কিন্তু ত্রিশোর্ধ্ব বা মধ্যবয়স্ক লোক সংখ্যায় কম হলেও একেবারে, নেই তা বলা যাবে না। ভিড়ের কেন্দ্রস্থলে দুজন বাইকার পরষ্পরকে কেন্দ্র করে বিশেষ ভঙ্গিতে বৃত্তকারে ঘুরছিল, বাইকারদের ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ক্ৰশ’। প্রতিটি ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি করছে নিজেদের গতি। আর উত্তেজিত জনতা পাগলের মতো উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল নিজেদের প্রিয় বাইকারকে। বিশদভাবে বলা চলে নিজেদের বাজি ধরা বাইকারকে।
খেলাটা এভাবেই চলতে থাকত যতক্ষণ পর্যন্ত না দুই বাইকারদের অন্তত একজন ঘূর্ণনের গতি বৃদ্ধি করতে করতে একপাশে ছিটকে না পড়ত। কিন্তু ব্যাপারটা যেভাবে শেষ হবে বলে সবাই ভেবেছিল শারিয়ারের বিশেষ স্টান্টবাজির কারণে সেভাবে শেষ হলো না। ঘোরা পথে স্বাভাবিকভাবে নিচে না নেমে আর- সেভেন বাইক নিয়ে শারিয়ার পূর্ণ বেগে লাফিয়ে নেমে এলো শানবাঁধানো জায়গাটার একপাশে। শারিয়ারের বাইকটাকে নেমে আসতে দেখে লাফিয়ে সরে গেল ওখানে অবস্থানরত কয়েকজন নারী-পুরুষ। সেটা মাটিতে ল্যান্ড করে দুই দফা গর্জন করে তীব্র বেগে ছুটে গেল ঘূর্ণনরত দুই বাইকারের মধ্যে দিয়ে।
সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য তিন বাইকের মধ্যে সংঘর্ষ হলো না। শারিয়ারের বাইকটা দুই বাইকারের মধ্য দিয়ে সোজা ছুটে গেল রাস্তাটার শেষ প্রান্তে। বাইকের তীব্র গতির কারণে মুহূর্তের জন্য মনে হলো আগুন জ্বলা ড্রামের সঙ্গে নিশ্চিত ধাক্কা লাগতে যাচ্ছে ওটার। কিন্তু তীব্র বেগে এগোতে এগোতে আগুনে ড্রামের কাছাকাছি গিয়ে সামনের চাকা ড্রাম থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই বাইকের পেছনের চাকা বেশ খানিকটা ওপরে উঠে গেল। তীব্র গতির কারণে সামনের ব্রেক চাপতেই বাইকের পেছনটা শূন্যে উঠে অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরে গেল বেশ অনেকটা। বৃত্তের ঘূর্ণনটা অর্ধসমাপ্ত রেখে নিখুঁতভাবে ওটা ল্যান্ড করল আগুনে ড্রাম থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে।
বাইকটা স্থির হতেই শারিয়ারের পেছনে বসা মুম লাফিয়ে নেমে এলো। ভয়ের চোটে একেবারে সাদাটে দেখাচ্ছে তার চেহারা। বাইকটাকে সামলে নিয়ে শারিয়ার আলগোছে একটা হাত ঢুকিয়ে দিল কোমরের সঙ্গে আটকানো পাউচের ভেতরে। যখন সে হাতটা বের করে আনল ওটার সঙ্গে বেরিয়ে এলো একটা রিভলভার হাতটাকে বের করেই সোজা গুলি করল ও দুমদুম করে ড্রাম পিটতে থাকা একটা স্পিকারে।
গুলির শব্দের সঙ্গে চিৎকার করে উঠল অনেকে। উত্তেজিত জনতার কোলাহল আগেই স্থবির হয়ে গিয়েছিল, গুলি করতেই স্পিকারটা চুপ হয়ে যেতেই পিনপতন নিরবতা নেমে এলো জায়গাটাতে। আর-সেভেন থেকে নেমে এলো শারিয়ার পিস্তলটাকে আবারও পাউচে রেখে সোজা হেঁটে এলো ভিড়ের সামনে।
‘এলাকায় নাকি নতুন মাস্তান এসেছে?’ প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল শারিয়ার। ‘মাস্তানের চেহারাটা একটু দেখতে চাই। কার এত সাহস দেখি আমার জায়গা থেকে আমার ছেলেদেরেকে মারধর করে বের করে দেয়!’ কথাগুলো বলতে বলতে শারিয়ার ভিড়ের ভেতরে চোখ বুলাচ্ছিল। ওর দৃষ্টি হন্যে হয়ে ভিড়ের ভেতরে মিল্টনকে খুঁজছে। হঠাৎ লালচুলো একটা ছেলের পেছন থেকে কেউ যেন সরে গেল। লাফ দিয়ে আগে বাড়ল শারিয়ার। লালচুলোকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিতেই দেখল পেছন থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করছে লেদার জ্যাকেট আর ব্যাগি প্যান্ট পরিহিত ন্যাড়া মাথার এক লোক।
যদিও অনেকদিন পর দেখা তবুও মিল্টনকে চিনতে এক সেকেন্ডও লাগল না শারিয়ারের। শারিয়ারের সামনে না পড়ার জন্য পেছন থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করেছিল মিল্টন। কিন্তু একেবারে আচমকা সামনে পড়ে যাওয়াতে সে নিচু থেকে সোজা হয়ে গেল। শারিয়ারকে দেখে যেন খুব অবাক হয়ে গেছে এমন ভঙ্গিতে হেসে উঠল। হাত নেড়ে বলল, আরে বস, কতদিন পর…’ বলে সে হেসে উঠতে যাচ্ছিল তার আগেই শারিয়ার ঝড়ের বেগে এগিয়ে গেল।
মুহূর্তের জন্য নাটক করতে গিয়েও নিজেকে আর সামলাতে পারল না মিল্টন। ‘আরে আরে…’ সরে পড়তে গিয়েও সে পুরোপুরি সফল হলো না। শারিয়ার সামনে এগিয়ে খপ করে ধরে ফেলল তার লেদার জ্যাকেট। পেছন থেকে জ্যাকেটের কলার চেপে ধরে সোজা করে ফেলতে গিয়েও হাত থেকে পিছলে গেল মোটকুটার জ্যাকেট। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও সরে পড়তে যাচ্ছিল তার আগেই মিল্টনের ব্যাগি প্যান্টের কোমরের কাছে ঝালর টেনে ধরল ও। টান খেয়ে মিল্টন ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে আরেকটু হলে তার প্যান্টটাই খুলে যাচ্ছিল।
‘মাদারটোস্ট!…তুই ভাবছিলি…’
‘আরে ভাই ভাই ভাই… আমার কথাটা শুনো, শারিয়ার তার কোমরের কাছটায় ধরে একরকম ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে টেনে নিয়ে গেল ভিড়ের মাঝখানে। রাস্তাটার ওপরে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল একপাশে।
‘শালা টোস্ট, আমি ছয় মাসের লাইগা দেশের বাইরে গেছিলাম আর তুই ভাবছিলি তুই রাজত্ব পায়া গেছস, শারিয়ার রাগের সঙ্গে একটা লাথি মারল মিল্টনের পাছায়।
‘ভাই, আমার কথা তো শুনো…’ পাছায় লাথি খেয়েও মিল্টনের কোনো বিকার নেই। সে মাটিতে আধবসা হয়ে হাত জোর করে অনুরোধ করার চেষ্টা করছে শারিয়ারকে। ‘আমি কিছু…
‘হারামজাদা কুত্তার পাছা, শারিয়ার আবারও পা তুলতেই মিল্টন মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে পাটা ধরে ফেলল। ‘তোরে রাস্তা থাইক্কা তুইলা আনছিলাম আমি আর আকরাম। আমগোর আগে-পিছে ঘুরতি শালা মান্দারের পো। তোরে নিজের টাকায় বাইক কিন্না দিছিল আকরাম। আর তুই দুই বছর না ঘুরতেই আমাগো লগে বেইমানি করার চেষ্টা করছ!’ নিজের পাটা ছাড়িয়ে নিয়ে দুই পা পিছিয়ে এলো শারিয়ার। এত রাগ উঠে গেছে কোনোমতে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে ও। ওর ভয় হচ্ছে রাগের চোটে না কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে।
‘ভাই শুনো…’
‘এই মান্দার পো, তুই আমারে ভাই ডাকবি না। নতুন বাপ পাইয়া ভাবছস সব জয় কইরা ফালাইছোস। তুই আর তোর নতুন বাপের কত্তো বড়ো সাহস, ওরে,’ বলে একটা হাত তুলে কাঁপতে থাকা মুমের দিকে দেখাল ও। ‘মুম আর অ্যাঞ্জেলরে তুই এইখান থাইক্কা মাইরা বাইর কইরা দেস। আমি ছয় মাসের জন্য বিদেশ গেছি আর ভাবসোছ যা মন চায় তাই করবি,’ বলে ও আবারও পা তুলতে যাচ্ছিল। ‘কই, তোর নতুন বাপ কই, ইন্দুরের মতো গর্তে গিয়া লুকাইছে ক্যান। সামনে আইতে ক,’ বলে পাটা নামিয়ে নিয়ে এক ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিল মিল্টনকে।
‘শারিয়ার আমি এইখানে,’ নতুন কণ্ঠস্বর শুনে ফিরে তাকাল শারিয়ার। ‘মিল্টন এখানে কিছুই না। যা বলতে চাও আমাকে বলতে পারো।’
আগুন জ্বলতে থাকা ড্রামটার সামনে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কোমরে হাত দিয়ে। অন্ধকারের ভেতরে জ্বলন্ত ড্রামের সামনে দাঁড়ানো মানুষটার ন্যাড়া মাথায় আগুনের আলো প্রতিফলিত হয়ে চকচক করে উঠল। মিল্টনের দিকে পেছন ফিরে লোকটাকে ভালোভাবে দেখল শারিয়ার। এত শান্ত কণ্ঠস্বর আশা করেনি ও। ঘুরে দাঁড়িয়ে ন্যাড়া মাথা আর স্পোর্টস জ্যাকেট পরা মানুষটাকে ভালোভাবে দেখে একটু চমকে উঠল ও। লোকটাকে চিনতে না পারলেও খানিকটা চেনাচেনা লাগল ওর। ঘুরে দাঁড়িয়ে লোকটার দিকে এগুতে এগুতে সে কথা বলে উঠল।
‘শুনেছিলাম এই এলাকায় নতুন বাপ এসেছে,’ বলে শারিয়ার মিল্টনের দিকে ফিরে মৃদু হেসে বলে উঠল, ‘মিল্টনও নাকি নতুন একটা বাপ পেয়েছে,’ মুমকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় ওর কাঁধে মৃদু চাপড় মারল ও।
‘শারিয়ার ভাই, চলো। এখানে থাকাটা আর নিরাপদ…’
‘আরে চুপ,’ মুমকে চুপ করিয়ে দিয়ে আরো খানিকটা এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। তাহলে তুমিই মিল্টনের সেই নতুন বাপ। যার আশ্রয় পেয়ে মিল্টন আমার ছেলেদের এখান থেকে মেরে…’ কথা বলতে বলতেই লোকটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল শারিয়ার। লোকটাকে কাছ থেকে দেখে খানিকটা চমকে উঠল শারিয়ার। এতক্ষণে মানুষটাকে চিনতে পেরেছে ও। এই দেশে বাইকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিন্তু এই মানুষটাকে চেনে না এমন কেউই নেই। ভিন ডিজেলের ভক্ত এবং তার আদলে মাথা ন্যাড়া করে রাখা বিডি বাইক মাস্টার নামে পরিচিত মানুষটাকে এই দেশের বাইকিং জগতের লেজেন্ড বলে ডাকা হয়ে থাকে। তবে যুবকল্যাণ মন্ত্রীর আপন ছোটো ভাই এই বাইক মাস্টারের নামের সঙ্গে দুর্নামও কম নয়।
‘তুমি দেখি আমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছো,’ বলে লোকটাও এগিয়ে এলো ওর দিকে। ন্যাড়া মাথা মানুষটা সরাসরি শারিয়ারের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে উঠল। শারিয়ার-তাই না? আফতাব নগর সংশ্লিষ্ট বাইক গ্যাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা লিডার। তুমি যে এখানে এসে হম্বিতম্বি করছ…
লোকটার এই অতি শান্ত ভঙ্গি শারিয়ারের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। আবার খানিকটা ভিন্ন অনুভূতিও কাজ করছে। ‘হ্যাঁ, বাইক মাস্টার। তোমাকে চিনেছি আমি। আর চিনেছি বলেই যে ছেড়ে কথা বলব সেটা ভেবো না, শারিয়ার লোকটার দিকে এক আঙুল তুলে কথা বলছে, সেই সঙ্গে অন্য হাতটা আলগোছে রেখে দিয়েছে কোমরে আটকানো পাউচের ওপরে। ওটার ভেতরেই নিজের পিস্তলটা রাখা আছে ওর। ‘তুমি মাস্টার হও আর যাই হও, আমি দেশে নেই এই সুযোগে চোরের মতো আমার এলাকায় প্রবেশ করে আমার লোকদেরকে মেরে বের করে দেবে, আর আমি সেটা সহ্য করব! ভাবলে কী করে? দেখো…’
শারিয়ারকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আনমনে হেসে উঠল লোকটা। ‘তুমি কি ভেবেছ তোমার ওই পাউচের ভেতরে রাখা পিস্তল বের করলেই আমি মিল্টনের মতো ভয় পেয়ে যাব?’ বলেই সে মাটিতে দুই বার বুটের ডগা ঠুকল। সঙ্গে সঙ্গে তার পেছনে অন্ধকারের ভেতর থেকে উদয় হলো দুজন। দুজনেরই হাত কোমরে রাখা। আর কোমরে যে ঝুনঝুনি রাখা নেই সেই ব্যাপারে নিশ্চিত শারিয়ার।
‘বাহ, নাচানেওয়ালা নর্তকী সঙ্গেই নিয়েই এসেছে দেখি, বলে পেছন ফিরে মুমের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল শারিয়ার। মুমের চেহারা কাগজের মতো সাদা হয়ে গেছে। মুমের দিক থেকে শরীরটাকে ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ বেগে নিজের অস্ত্রটা বের করে আনল ও। ঘুরে যেতেই এক হাতে বের করে আনা অস্ত্রটা চেপে ধরল টাকলুর মুখের সামনে। টাকলুর দুই সঙ্গী শারিয়ারকে নড়ে উঠতে দেখেই বের করে এনেছে নিজেদের অস্ত্র। একসঙ্গে তিনটে অস্ত্রের লোড করার শব্দে উপস্থিত জনতার মধ্যে শিহরণ বয়ে গেল। লোকজন অস্থির হয়ে উঠতেই টাকলু নিজের হাতে বের করে আনা পিস্তলটা তুলে আকাশে গুলি ছুড়লো। সেই সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘সব চুপ। কেউ নড়বে না, সাবধানে সে শারিয়ারের অস্ত্র ধরা হাতটা অবজার্ব করছে। শারিয়ারও সতর্ক দৃষ্টিতে নজর রাখছে তিনজনের ওপরে। যদিও ভেতরে ভেতরে জানে, অসম্ভব একটা বাজি হয়ে গেছে। তিনজন অস্ত্রধারীকে সামলানো ওর পক্ষে সম্ভব হবে না। টাকলু ওর থেকে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
‘জামশেদ,’ শারিয়ার টাকলুর নাম ধরে ডেকে উঠল। ওর যতটুক মনে পড়ে এটাই ওর নাম। ‘কী চাও তুমি? আমার এলাকার দখল আমি ছাড়ব না। বিশেষ করে এখানে যদি আমার ছেলেদেরকে অপমান করা হয়।’
‘তোমার এলাকার প্রতি কোনো লোভ আমারও নেই।’
‘তাহলে এত ঝামেলা কীসের?’
‘তুমি কি জানো, যাদের পক্ষ নিয়ে তুমি এখানে ঝামেলা করতে এসেছো তারা আসলে কী করেছে?’ টাকলু জামশেদ অস্ত্র নামিয়ে নিল। সে অস্ত্র নামাতেই তার · পেছনের দুজনও তাই করল। শারিয়ার এখনো অস্ত্র ধরেই আছে। জামশেদ এগিয়ে এসে ওর পিস্তলের নলে একটা টোকা মারল।
‘ওরা,’ টাকলু জামশেদ মুমকে দেখাল। ‘তুমি বিদেশ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তোমার মুম আর অ্যাঞ্জেল আমার গ্যাংয়ের লোকদের কাছ থেকে এক রকম জোর করেই ইয়াবা ধার করে এনে এখানে বিক্রি করতে শুরু করে। আমরা দুবার মানা করেছি। শোনেনি। এরপর আমরা বাধ্য হয়ে মিল্টনকে হাত করে গ্যাংয়ের দখল নিয়ে ওদেরকে মেরে বের করেছি। এখন বলো?’
‘মিথ্যে কথা,’ শারিয়ার অস্ত্র নামিয়ে নিতে নিতে বলে উঠল। মুম আর অ্যাঞ্জেল যা বলেছে তা থেকে এখন একেবারেই ব্যতিক্রম কাহিনি শুনছে শারিয়ার। ‘মোটেও মিথ্যে নয়,’ বলে জামশেদ একটা হাত তুলল মুমের দিকে। ‘ওকে জিজ্ঞেস করো।’
শারিয়ার একবার মুমকে দেখল, ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে জামশেদ ঠিকই বলেছে। ‘এসব কথা…’
‘ধীরে বন্ধু। বন্দুকের গুলি, মুখের কথা আর গ্যাংয়ের রাজত্ব একবার ফসকে গেলে আর ফেরত নেয়া যায় না,’ টাকলু জামশেদ শারিয়ারের মুখের কাছে এসে নিজের ঘোলাটে চোখের দৃষ্টি স্থির করে তাকিয়ে আছে শারিয়ারের দিকে। এখানে আসার আগে নিজের ছেলেদের কথা ভেরিফাই না করে এসে সে যে একটা বেকায়দায় পড়ে গেছে এটা বেশ বুঝতে পারছে সে। নিজের জায়গা ফেরত পেতে তোমাকে লড়াই করতে হবে।’
‘কেন…’ বলেই শারিয়ার বুঝতে পারল কেন করতে হবে। কারণ ওর পেছনে আরো দুজন এসে দাঁড়িয়েছে। ‘কী করতে হবে?’ অনেকটা বাধ্য হয়েই শারিয়ার বিড়বিড় করে বলে উঠল।
‘অনেকে বলে তুমি নাকি অসাধারণ বাইকার। আবার কেউ কেউ বলে আমি নাকি এ-দেশের সেরা,’ কথা বলতে বলতে বাইক মাস্টার জামশেদ উপস্থিত জনতার সামনে চলে গেছে। ‘আজ সেটা প্রমাণ হয়ে যাক, কী বলো?’ শেষ কথাটা সে জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। কেউ কোনো জবাব দিল না। ‘কী হলো?’ সে আবারও ধমকে উঠতেই উপস্থিত জনতা গুঞ্জন করে উঠল। ‘কি, সবাই কি আজ বাইকের খেলা দেখতে চাও?’ এবার হর্ষধ্বনি করে উঠল উপস্থিত জনতা।
‘হাই জাম্প ট্রিপল ক্রশ স্টপি,’ চার অস্ত্রধারীর মাঝখানে দাঁড়ানো শারিয়ারের দিকে ফিরে বলে উঠল বাইক মাস্টার। ‘কী বলো?’ সবাই হর্ষধ্বনি করে উঠল, অনেকে হাততালি দিয়ে উঠল। শারিয়ার মুমের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুলতে ফুলতে ফিরে তাকাল বাইক মাস্টারের দিকে। ‘আমার কি মানা করার কোনো উপায় আছে?’
বাইক মাস্টার হেসে উঠে মাথা নাড়ল। ‘আজ প্রমাণ হয়ে যাবে কে সেরা বাইকার?’ তার কণ্ঠে সুললিত উল্লাস।
বাইক মাস্টারের উচ্চকিত কণ্ঠস্বর শুনে আনমনেই মাথা নাড়ল শারিয়ার, না চাইতেও একটা ভয়াবহ অবস্থার ভেতরে পড়ে গেছে ও।