মগরাজ – ৩৩

অধ্যায় তেত্রিশ – বর্তমান সময়

পিবিআই অফিসের সামনে, চট্টগ্রাম

‘কী ব্যাপার, পোদ্দার সাহেব এত দেরি করছে কেন?’ শারিয়ার ঘড়ি দেখতে দেখতে আনমনেই বলে উঠল। আপাদমস্তক গাঢ় রঙের পোশাকে তাকে আর ভুবনকে খানিকটা অদ্ভুতই দেখাচ্ছে। বিশেষ করে ভুবন আবার এখানে-সেখানে নানা ধরনের অস্ত্র-সস্ত্র নেয়াতে তাকে আরেক কাঠি সরেস লাগছে দেখতে।

পিবিআইয়ের রেস্ট হাউস থেকে এসে এই মুহূর্তে ওদের মাইক্রো অবস্থান করছে পিবিআইয়ের জোনাল অফিস থেকে একটু দূরেই। অপারেশনে যাবার আগে এখানে আসার কারণ হলো টমি পোদ্দার অফিসে গেছে তার নাইট ভিশন মিনি ড্রোন ক্যামেরাটা নিয়ে আসার জন্যে। আর বাকিরা অপেক্ষা করছে সুমনের নিয়ে আসা সেই নীল মাইক্রোতে।

‘চলে আসবে, বস,’ ড্রাইভিং সিট থেকে সুমন বলে উঠল। ‘বস, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’ সুমনের গলায় অদ্ভুত এক অস্বস্তি। শারিয়ার আর ভুবন দুজনেই ফিরে তাকাল তার দিকে।

‘একটা ক্যান, দুইটা জিজ্ঞেস করো, শারিয়ার অভয় দেওয়ার ভঙ্গিতে মৃদু হাসির সঙ্গে বলে উঠল

‘বস, যে-কামে যাইতেসি ধরা পড়লে চাকরি থাকবে তো?’ সুমনের গলায় অস্বস্তির পরিমাণ আরেক কাঠি বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘বস, বিয়ে হইছে মাত্র দেড় বছর। এখনি…’

সুমনের কথা শেষ হবার আগেই তার পাশের সিট থেকে ভুবন হেসে উঠল। ভুল প্রশ্ন করলা অফিসার সুমন মিয়া,’ বলে সে আরেকবার হেসে উঠে পেছনের সিটে বসা শারিয়ারের দিকে দেখল। শারিয়ারের মুখেও মৃদু হাসি। ‘সুমন, তোমার প্রশ্ন করা উচিত ছিল যে-অপারেশনে তুমি যাচ্ছো, তা থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে কি না?’ বলে সে বেশ উচ্চ স্বরে হেসে উঠল।

যদিও ভুবনের উচ্চ হাসির সঙ্গে সঙ্গে শারিয়ারও হেসে উঠেছিল কিন্তু ভিউ মিরর থেকে প্রতিফলিত হওয়া সুমনের পাংশু মুখের দিকে তাকিয়ে সে খানিকটা সিরিয়াসনেসের সঙ্গে হাসি থামিয়ে ধমকে উঠল ভুবনকে। ‘এই এমনেই যাচ্ছি একটা কাজে তার উপরে আবার ভয় দেখাচ্ছে আজাইরা,’ যদিও সে কথাটা খানিকটা সিরিয়াস ভঙ্গিতেই বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু বলার সঙ্গে সঙ্গে আবারো হেসে উঠল সে। আর শারিয়ারের হাসি দেখে ভুবন যাও হাসি থামিয়ে ফেলতে যাচ্ছিলো তার আগেই সে আরো উচ্চস্বরে হেসে উঠল। দুজনে মিলে হাসতেই থাকল।

সামনে থেকে রীতিমতো দুঃখী চেহারা করে ওদের দিকে ফিরে তাকাল সুমন তারপর প্রায় ছোটো বাচ্চাদের মতো অভিযোগের সুরে বলে উঠল, ‘বস, আপনিও।’

কোনমতে হাসি থামিয়ে পেছন দিকে দেখিয়ে শারিয়ার বলে উঠল, ‘ওই যে, টমি চলে এসেছে।’

টমি তার আগের ব্যাগটা গাড়িতে রেখে গেছিল এখন নতুন একটা ব্রিফকেসের মতো দেখতে ব্যাগ হাতে নিয়ে ত্রস্ত পায়ে এসে গাড়িতে উঠে পড়ল। চলেন চলেন গাড়ি ছাড়েন,’ দম নিতে নিতে সে বলে উঠল।

‘সুমন, গাড়ি ছাড়ো,’ বলেই সে টমির কাছে জানতে চাইল, ‘কি, জিনিস পাওয়া গেছে?’ শারিয়ার তার হাতে থেকে ব্রিফকেসটা নিয়ে পাশের সিটে রেখে মাইক্রোর দরজা বন্ধ করতে করতে জানতে চাইল।

‘আরে বস আর বইলেন না। বুঝলাম না কাহিনি অফিসে দুনিয়ার লোকজন এই সময়েও। এমনে তো ৫টা বাজার পর একটা মাছিও দেখা যায় না। আরে সবাই ফাঁকি ফুঁকি দিয়া…’

‘টমি,’ মৃদু ধমকের সুরে বলে উঠল শারিয়ার।

‘ওকে ওকে, বস,’ টমি নিজের হাত তুলল আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে। জিনিস পাইছি, নিয়াও আসছি। তোমাদের জায়গামতো নামিয়ে দিয়েই আমি সেট করে ফেলব জিনিসটা। আশা করি, একবার আমরা জায়গামতো পৌঁছে যেতে পারলে ওটার মাধ্যমে ভালো একটা ব্যাকআপ দিতে পারব তোমাদের।’

সন্তুষ্টির সঙ্গে মাথা নাড়ল শারিয়ার তারপর সুমনের দিকে ফিরে বলে উঠল, ‘সুমন, তখন হাসছিলাম দুষ্টামি করে। শোন, আমি তোমাদের অভিযানে নিয়ে যাচ্ছি একরকম বলতে পারো বাধ্য হয়ে।’

‘আরে, বস–’ সামনে থেকে সুমন ক্লারিফিকেশনের জন্যে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই শারিয়ার আবারো কথা বলে উঠল।

‘আমি আগে বলি,’ বলে সে মৃদু হেসে উঠল। ‘কিন্তু তারপরও যেহেতু নিয়ে যাচ্ছি আমি তোমাদের কাজেই তোমাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে এমনকি চাকরি বা এসব বিষয়ের দায়িত্বও আমার। যদি এখানে কিছু একটা ঘটে। আমি দেখবো। আর আমরা ডিপার্টমেন্টের কাছেই যদি ধরা পড়ে যাই বা কোনো সমস্যা হয় তবে সেই দায়ভার আমার। আর যেহেতু আমাদের ভেতরে আমি আর ভুবন দুজনেই এইসব অপারেশনের জন্যে ট্রেইন্ড, এই কারণেই আমি আর ভুবন ওখানে যাব আর তোমরা বাইরেই অপেক্ষা করবে। টমি তুমি আমাদের সবাইকে ইন্টারনাল কমিউনিকেশন ডিভাইস লাগিয়ে দাও।’

‘অবশ্যই বস,’ বলে সে আগের ব্যাগ খুলে মেয়েদের গয়নার বাক্সের মতো দেখতে কালো একটা চেপ্টা বাক্স বের করে এনে ওটা থেকে ছোটো ছোটো ইয়ার পিস বের করে সবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পরে নিতে বলল যার যার কানে। সবাই যার যার মতো পরে নিজেদের ভেতরে ডিভাইস চেক করে নিল।

‘বস, কাছাকাছি চলে এসেছি,’ সুমন বলে উঠল।

‘বাড়িটার কাছাকাছি পৌঁছে গাড়ির লাইট অফ করে আমাদের মূল রাস্তার ওপরে নামিয়ে দেবে,’ বলে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলে উঠল। ‘নাহ থাক এই অন্ধকারে পায়ে হেঁটে পুকুর পাড়ে যেতে সমস্যা হবে। কাজেই গাড়ি নিয়ে একটু ঘুরে সোজা পুকুর পাড়ে চলে যাও।’

সুমন তাই করল। বাড়িটার কাছাকাছি পৌঁছে পথ ঘুরে সেই বাউন্ডারির গেট পার হয়ে গাড়িটাকে নিয়ে সোজা চলে এলো কেয়ারটেকারের লাশ পাওয়া সেই পুকুর পাড়ে।

পুরো এলাকা একেবারে অন্ধকারে ডুবে আছে। একমাত্র ওদের গাড়ির হেডলাইট ছাড়া আর কোনো আলো নেই। শারিয়ার আর ভুবন গাড়ি থেকে নেমে এসে জিনিসপত্র চেক করে নিল। সুমন গাড়ির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে শারিয়ার দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘শোন, আমরা নৌকোটায় ওঠা মাত্রই তোমরা এখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যাবে ওই বাউন্ডারি ঘেরা এলাকাটার মেইন গেটের কাছে,’ বলে শারিয়ার একটা আঙুল তুলল। ‘সুমন এবং টমি দুজনকেই বলছি, যেখানেই অবস্থান করো বিপজ্জনক এলাকা থেকে যথেষ্ঠ পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখবে। কোনো ধরনের ঝুঁকিতে যাবে না, আমি আবারো বলছি কোনো ধরনের ঝুঁকিতে যাবে না।

দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ‘আমি একবার বাউন্ডারির বাইরের গেটের কাছে অবস্থান নিলেই ড্রোনটা ওড়াব।’

‘কোনো সমস্যা নেই,’ বলে শারিয়ার সুমনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে উঠল, ‘সুমন, চাকরি নিয়ে চিন্তা কোরো না। এখান থেকে বেঁচে ফিরলে যদি চাকরি নাও থাকে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এখানে যা বেতন পাও তারচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি আমি তোমাকে দেব। খুশি?’ বলে সে হেসে উঠল। তার সঙ্গে হেসে উঠল বাকিরাও।

‘গুড লাক, বস।’

শারিয়ার একবার মাথা নেড়ে ভুবনকে ইশারা করে দুজনে মিলে এগোতে শুরু করল নৌকা রাখার ঘাটের দিকে। গাড়ির আলোতেই নৌকোটার দড়ি খুলে ওটাতে চড়ে বসল দুজনে। নৌকায় উঠে দাঁড় তুলে নিয়ে গাড়িটার দিকে ইশারা করে শারিয়ার দাঁড় নামাল পানিতে। নৌকাটাকে সামান্য ঘুরিয়ে নিতেই ধীরে ধীরে গাড়িটাও ঘুরতে শুরু করল। মিনিটখানেকের ভেতরেই গাড়িটা মুখ ঘুরিয়ে বেরিয়ে গেল এলাকা ছেড়ে। সঙ্গে সঙ্গে যেন অন্ধকারের একটা ঢাকনা নামিয়ে দেওয়া হলো ওদের ওপরে। সেই সঙ্গে শীতের রাতের কুয়াশা তো আছেই।

‘সর্বনাশ বস, এত দেখি ঝুম অন্ধকার আর ঠান্ডা,’ ভুবন নৌকার পাটাতনে বসে শিউরে উঠল রীতিমতো। শারিয়ার দাঁড় টানাতে অবশ্য খুব বেশি ঠান্ডা এখনো লাগছে ওর কাছে।

‘আসলে আমরা আলোতে ছিলাম তো তাই অন্ধকারটা বেশি লাগছে আর পানির ওপরে থাকাতে ঠান্ডাটাও বেশি লাগছে,’ বলে ও একবার দিঘির পাড়ের কেয়ারটেকারের বাড়িটার দিকে দেখিয়ে জানতে চাইল। ‘কিন্তু একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম না। এখানে একটা ডেড বডি পাওয়া গেল আজ বিকেলে অথচ কোনো পাহারাদার নেই। এমন হবে কেন?’

ভুবন মৃদু হেসে উঠল। আরে বস ভালোই তো হয়েছে আমাদের জন্যে পাহারাদার থাকলে একটা ঝক্কি সামলাতে হতো। তবে মনে হয় পাহারাদার ছিল। হয় রাত হওয়াতে বাড়ি চলে গেছে আর না হয় রাতের খাওয়া সারতে গেছে। হয়তো খেতে গিয়ে আর ফেরেনি।’

‘হমম, হতে পারে,’ বলে শারিয়ার দাঁড় চালানোর গতি খানকিটা বাড়িয়ে দিল। ওরা বাউন্ডারির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। বাউন্ডারির কাছে পৌছে নৌকাটার কোনা ঘুরিয়ে ওটাকে ভিড়িয়ে দিল দেয়ালের সঙ্গে। দাঁড়টাকে পাটাতনে রেখে ভুবন আর ও দুজনেই চলে এলো নৌকোটার মাঝামাঝি।

‘শালার দেয়াল তো দেখি ভালোই উঁচু,’ ভুবন আনমনে বলে উঠল। ‘নৌকা থেকে ওখানে ওঠাটা তো দেখি ভালো প্যারাদায়ক হবে।’

‘সেটা তো হবেই,’ বলে শারিয়ার দেয়ালের ওপরের অংশ দেখাল। ‘আমি ভাবছি অন্য কথা। ওইদিন রাতে ওই লোকগুলো এই বৃষ্টির ভেতরে এই নৌকা থেকে নিজেরাই বা উঠল কীভাবে আর মেয়েটাকেই বা টেনে তুলল কীভাবে?’ কথাটা আনমনে বলেই সে ভুবনের দিকে ইশারা করে বলে উঠল। ‘শোন ভুবন, আমি দুই হাত পাতছি, তুই এই দুই হাতের ওপরে পা রেখে লাফিয়ে দেয়ালের একটাদিক ধরে ফেলতে পারিস কি না দেখ। একটাই সমস্যা নৌকোটা সরে পড়তে পারে।’

‘তুমি বসে হাত দুটো এক করো, তাতে মনে হয় নৌকাটার ওপরে ধাক্কাটা কম লাগবে।’

‘ভালো বুদ্ধি,’ বলে শারিয়ার হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল নৌকার পাটাতনের ওপরে। আর ভুবন পিছিয়ে গেল দুই পা। খানিকটা পিছিয়ে। সে লাফ দিয়ে আগে বাড়ল। শক্ত করে ধরে রাখা শারিয়ারের দুই হাতের ওপরে একটা পা রাখতেই শারিয়ার বুট পরা পাজোড়া ঠেলে দিল ওপরের দিকে। অন্যদিকে শরীরটাকে টান করে ওপরের দিকে যতটা সম্ভব শূন্যে লাফ দিল ভুবন। হাত আর শরীরের সম্মিলিত শক্তিতে ওপরের দিকে লাফিয়ে কোনোমতে দেয়ালের একটা ধার ধরে ফেলতে পারল সে।

একবার ধরে ফেলতেই হাত থেকে দেয়ালের পাশটা ছুটে যাচ্ছিল, কোনোমতে অপর হাতটা চেপে ধরে শরীরটাকে টেনে তুলে ফেলল সে ওপরে। দেয়ালের ওপরে উঠে দম নিয়ে সে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দিল নিচের দিকে। শারিয়ার নৌকাটাকে যতটা সম্ভব দেয়ালের কাছাকাছি এনে ওটার মাঝামাঝি এসে দাঁড়াল, তারপর শরীরটাকে কুঁজো করে লাফ দিল ওপরের দিকে। দেয়ালের ওপরের দিকে হাতটা পৌঁছোতেই খপ করে সেটা ধরে ফেলল দেয়ালের ওপরে থাকা ভুবন।

‘আহ, সাবধানে এবার ধীরে ধীরে উঠে বসো,’ বলে সে টেনে শারিয়ারের একটা পা তুলে ফেলল দেয়ালের ওপরে। শরীরটাকে মুচড়ে দেয়ালের ওপরে নিয়ে এসে দম নিতে লাগল শারিয়ার।

‘উফফ, উঠলাম তো, নামবো কীভাবে?’ সে দেয়ালের ওপাশটা দেখতে দেখতে প্রশ্ন করল। ‘এপাশেও দেখি পানি।’

‘পানি হলে তো ভালোই ছিল। এদিকটা একেবারেই জল-কাদা,’ বলে সে আরো খানিকটা ওপাশে দেখাল। ‘ওই পর্যন্ত দেয়ালের ওপর দিয়ে এগোতে হবে। যদি একবার এগোতে পারি তবে লাফিয়ে নামাটা তেমন কঠিন হবে না।’

‘চল,’ বলে সাবধানে দেয়ালের ওপরে উঠে দাঁড়াল শারিয়ার। ‘সাবধানে এগোতে থাক। আর কেউ না দেখলেই হয়।’ বলে সে পায়ে পায়ে এগোতে শুরু করলে দেয়ালের ওপর দিকে। দেয়ালের অন্যপাশে যেদিকটাতে মোটামুটি পরিষ্কার মাটি সেখানে এসে ইশারায় ভুবনকে দেখাল সে। ভুবনও ইশারায় সম্মতি জানাতেই শরীরটাকে দেয়ালের একপাশে ঝুলিয়ে দিয়ে ঝুপ করে মাটির ওপরে লাফিয়ে নামলো শারিয়ার। ভুবন অবশ্য এত ঝামেলায় গেল না সে সোজা দেয়াল থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল মাটিতে। কিন্তু সে লাফিয়ে নামতেই ধুপ করে শব্দ হলো আর সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে কোথায় কুকুর ডেকে উঠল। ‘সর্বনাশ বস, কুকুরও আছে নাকি এদের এখানে?’

‘পাহারাদার কুকুর বলে তো মনে হলো না,’ নিজেকে সামলে নিয়ে হোলস্টার থেকে অস্ত্র আর ছোটো একটা পেন্সিল টর্চ বের করে আনতে আনতে বলে উঠল শারিয়ার। ‘আবার হতেও পারে। সাবধানে থাকার বিকল্প নেই। অস্ত্র সাবধান। আর তোর টর্চ বের করার দরকার নেই। আমারটা দিয়েই দুজনে এগোতে পারব,’ সে ওদের সামনে উপবিষ্ট বড়ো বড়ো আকৃতিগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল। ‘কিন্তু এই ব্যাটা টমি এখনো পৌঁছায়নি নাকি?

***

শারিয়ারদেরকে দিঘির পাড়ে নামিয়ে গেট দিয়ে ঘুরিয়ে নীল মাইক্রোটাকে নিয়ে সুমন মাইল দুয়েক ঘুরে চলে এলো মেইন রোডের যেখানে বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা এলাকাটার মেইন গেট অবস্থিত সেখানে।

টমি ভাই, কতদূর রাখব গাড়ি?’ সুমন জানতে চাইল টমির কাছে।

টমি খুব ভাব নিয়ে ব্রিফকেস থেকে ড্রোনটাকে বের করে ওটাকে সেট করতে ব্যস্ত হয়েছিল। সুমনের প্রশ্ন শুনে সে ততোধিক ভাব নিয়ে জানতে চাইল। আমাকে বললেন, সুমন ভাই?’

‘জি, তোমাকেই বলেছি,’ টমির ভাবে ভরা জবাব শুনে আপনাতেই একবার মাথা নাড়ল সুমন। মনে মনে সে ভাবল, এই লোক ভাব নেয়ার সুযোগ পেলে এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে রাজি না। সুমন গাড়িটার গতি কমিয়ে এসে ধীরে ধীরে ওটাকে মেইন রোডের পাশে একটা জংলামতো জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল গাড়িটাকে। তারপর ওটাকে খানিকটা ঘুরিয়ে রাস্তার পাশের ঝোপের আড়ালে খোলা জায়গায় এনে দাঁড় করাল। গাড়ি থেকে নেমে বাইরে এসে দেখল এখান থেকে দূরের গেটের আলো দেখাচ্ছে। মনে মনে সে ভাবল আধ মাইলের বেশি হবে একবার রাস্তার দিকে দেখে নিয়ে সে সন্তুষ্টির সঙ্গে মাথা নাড়ল। কারণ এই জায়গাটা মোটামুটি রাস্তা থেকে একটু আড়ালও আছে। আবার একদিকে খোলাও আছে। টমি চাইলে এখান থেকে ড্রোনটাকে ওড়াতে পারবে।

সুমনের পেছন পেছন বেরিয়ে এলো টমি। তার এক হাতে ছোটো একটা খেলনার মতো দেখতে ড্রোন অন্যহাতে ওটাকে নিয়ন্ত্রণের জিনিস।

বাইরে এসে নিজেদের ভেতরে কমিউনিকেশনের লিসেনিং ডিভাইসগুলো অ্যাকটিভ করে টমি আশপাশটা দেখে নিয়ে বলে উঠল, ‘হ্যাঁ, এই জায়গাটা ভালো হয়েছে আমি আবার জায়গা পছন্দ না হলে কাজ করতে পারি না, ইউ নো,’ বলে ড্রোনটাকে ধরিয়ে দিল সুমনের হাতে।

টমির ভাব দেখে সুমন আবারো আনমনে মাথা নাড়ল।

***

‘হ্যালো। হ্যাঁ, টমি, বল,’ শারিয়ার বাঁহাতের মুঠোর ভেতরে পেন্সিল চটটাকে চেপে ধরে ডান হাতে সাইলেন্সার লাগানো কিং কোবরাটাকে চেপে ধরে রেখেছে নিজের সোয়েটারের কোমরের কাছে বেল্টের ভেতরে। ওর ঠিক পাশাপাশি হাঁটছে ভুবন। দুজনেই গল্প করতে করতে এমনভাবে এগোচ্ছে যেন দুজনে এই এলাকারই বাসিন্দা। কোনো একটা কাজে বাইরে বেরিয়েছিল এখন ফিরে যাচ্ছে।

‘বস, তুমি শুনতে পাচ্ছো?’ কানের ভেতরে থাক ছোট্ট ইয়ার পিসের ভেতর থেকে আবারো টমির গলা ভেসে এলো। ‘বস, বস।’

‘আরে যন্ত্রণা,’ টমির আর্ত-চিৎকারে শারিয়ারের মনে হলো কানের ভেতর থেকেই চিৎকার করছে টমি। ‘এত চিৎকার চেঁচামেচির কিছু নেই। আমি তোর কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি,’ বলতে বলতে শারিয়ার মৃদু হেসে উঠল ভুবনের দিকে তাকিয়ে। কারণ কয়েকজন শ্রমিক কিসিমের মানুষ ওদের পার হয়ে গেল। ‘হ্যাঁ, টমি বল। তোরা কি জায়গামতো পৌঁছাতে পেরেছিস? সুমন আছে তোর সঙ্গে?’

‘জি, বস, সুমন কথা বলে উঠল ইয়ারপিসের ভেতর থেকে। ‘আমরা জায়গামতো পৌছে গেছি। এলাকাটার মেইন গেটের বাইরে আধ মাইলের মতো দূরত্বে মেইন রোডের পাশেই একটা জংলামতো জায়গাতে গাড়ি নিয়ে অবস্থান করছি আমরা। আর টমির খেলানাটাও ওড়ানো গেছে এখান থেকে বেশ ভালোমতোই…’

‘কী, ওটা খেলনা,’ ইয়ার পিসের ভেতর দিয়ে ভেসে আসা টমির চিৎকারে মুখ কুঁচকে উঠল শারিয়ারে। তবে ও কিছু বলার আগেই ভুবন ধমকে উঠল। ‘এই আস্তে কথা বল, টমি।’

‘সরি বস, একটা আস্ত ড্রোনকে যদি কেউ খেলনা বলে…’

‘টমি,’ শারিয়ার তাকে বেশি কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জানতে চাইল। ‘তোর ড্রোনের অবস্থান কি? তুই কি আমাদের দেখতে পাচ্ছিস?’

‘আরেকটু বস। ড্রোনটা মাত্র ওই এলাকাতে প্রবেশ করল। আচ্ছা, তোমরা আমাকে কোনো কো-অর্ডিনেটস দিতে পারবে? মানে কোনদিকে আছো কিংবা তোমাদের আশপাশে বড়ো কিছু আছে কি না?’ টমির গলার আওয়াজ শুনেই মনে হচ্ছে সে ড্রোনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে ব্যস্ত।

শারিয়ার একবার আশপাশটা দেখে নিল। একটু আগে যাদের সামনে পড়ে গেছিল সেই লোকগুলো চলে গেছে। ও একবার চারপাশে দেখে নিয়ে বলে উঠল, ‘আমরা সেই দেয়াল বেয়ে নিচে নেমে কাদাময় এলাকাটা পার হয়ে এখন একটা ছোটো পায়ে চলা পথ ধরে হাঁটছি। সামনে অনেকগুলো বড়ো বড়ো আকৃতি দেখতে পাচ্ছি। মনে হয় ওগুলো জাহাজের কন্টেইনার সারি দিয়ে রাখা আছে। আমরা আর কয়েকশ গজ হাঁটলেই ওই পর্যন্ত পৌঁছে যাব।’

‘আচ্ছা, আরেকটু,’ বলে টমি একটু সময় নিতেই একটু পরেই তার উল্লসিত গলা ভেসে এলো। ‘হ্যাঁ, মনে হয় তোমারে দেখতে পাচ্ছি। বস তুমি যেকোনো একটা হাত তোলো তো,’ শরিয়ার নিজের একটা হাত তুলতেই টমি হেসে উঠল। ‘হ্যাঁ, তুমি ডান হাত তুলেছো। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। সেই সঙ্গে তোমার হাতের উচ্চকিত মধ্যমাটাও,’ বলে সে হেসে উঠল। বাকিদেরও হাসি ভেসে এলো।

‘শোন, মজা অনেক হেেছ এখন সিরিয়াস কাজের সময়,’ বলে শারিয়ার একটু বিরতি দিয়ে যোগ করল। ‘মনে রাখিস এখান থেকে আমাদের আর কোন কো- অর্ডিনেটস নেই। আর এই এলাকাও আমরা কেউ চিনি না, কাজেই তুই আর তোর ওই খেলনা,’ বলে শারিয়ার কোনোমতে নিজের হাসি চেপে বলে উঠল। ‘মানে তোর ওই ড্রোনই ভরসা। বুঝতে পেরেছিস?’

‘জি বস, লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার,’ বলে সে সুমনের সঙ্গে কিছু একটা বলে আবারো বলতে শুরু করল। ‘বস, তোমার মনে আছে কি না, আমি গেস্ট হাউসে থাকতেই তোমাকে বলেছিলাম কিছু কথা। এই মুহূর্তেই তোমাদের অবস্থান অনুযায়ী সেগুলোই আবরো বলব। তোমরা এখন যেখানে আছো সেখান থেকে খানিকটা এগিয়ে সামনে বামে ঘুরলে কন্টেইনার রাখার এলাকা। আর সেখান থেকে বরাবর সামনের দিকে গেলে জাহাজ মেরামতির জায়গা আর ডানে গেলে অফিস। আর তোমরা যেদিক থেকে এসেছো সেদিকটা মূলত গুদামঘর আর যন্ত্রপাতি রাখার জায়গা।’

‘তারমানে আমরা যে-জায়গাটায় যেতে চাচ্ছি, মানে ডক্টর শশীকে সম্ভাব্য যেখানে পাবার সম্ভবনা আছে সেখানটায় পৌছাতে হলে আমাদের আরো বেশ খানিকটা এগিয়ে বামে মোড় নিতে হবে। ঠিক?’

‘জি, বস।’

টমি উত্তর দিতেই শারিয়ার ভুবনের দিকে ফিরে ইশারা করল। দুজনে মিলে আবারো আগের মতোই এগোতে শুরু করল। হাঁটতে-হাঁটতে পেরিয়ে এলো দুটো ব্লক। আরেকটু এগিয়ে বামে ঘুরতে গিয়ে আরেকটু হলে একদল লোকের গায়ের ওপরে পড়তে যাচ্ছিল। শারিয়ার ইয়ার পিসের ভেতর থেকে আসা টমির নির্দেশনা শুনতে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে সে মানুষজনের গলায় আওয়াজ খেয়ালই করেনি।

দুজনেই মোড় ঘুরতেই দেখতে পেল প্রায় আট-দশজনের একটা দল। কাঠ- খড় দিয়ে আগুন জ্বেলে সেটাকে ঘিরে বসে আছে। উচ্চস্বরে কথা বলছে, সেই সঙ্গে ধোঁয়া টানছে। শারিয়ার আর ভুবন ঘুরে ওদের সামনে পড়তেই তারাও ফিরে তাকাল ওদের দিকে, ওরাও স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে পড়ল। শারিয়ার দেখল একাধিক লোকের হাতে সিগারেটের আগুন জ্বলছে, তবে ধোঁয়ার গন্ধ শুঁকেই সে বুঝতে পারল ওগুলো আসলে সিগারেট নয় গাঁজা। দু-একজনের হাতে দেশি মদের বোতল দেখতে পেল। ওদের সামনে পড়তেই দুই দলই কয়েক সেকেন্ড বোকার মতো তাকিয়ে রইল পরস্পরের দিকে।

শারিয়ার সাবধান হবার আগে ভুবনই হেসে উঠল। স্থানীয় ভাষায় ওদের উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলে হাত নাড়ল চালিয়ে যাবার মতো করে। ওদের সবাইকে দেখে শ্রমিকেরাও হেসে উঠল। একজন নিজের হাতের বোতল এগিয়ে দিল ওদের দিকে। হাত নেড়ে সহাস্যে সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে শারিয়ারের একটা হাত ধরে টেনে তাকে সরিয়ে নিতে শুরু করল অন্যদিকে

‘চলো চলো চলো জলদি চলো,’ বলে শারিয়াকে টেনে নিয়ে আবারো রাস্তার ওপরে সরিয়ে আনলো।

‘বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি এইবারের মতো,’ বলে শারিয়ার টমিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘এই টমি, ব্যাটা সাবধান করবি না।’

‘আরে বস, চ্যাতো ক্যান? এইটা দিয়া কি সব দেখা যায়?’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে,’ বলে শারিয়ার ভুবনের দিকে ইশারা করল। টমির ওপরে সব বিষয়ে নির্ভর করা যাবে না এটাই বোঝাল সে। কিন্তু কিছু বলার আগেই কানের ভেতর থেকে টমির গলা ভেসে এলো।

‘বস, তোমরা কিন্তু সেই অফিস এলাকার দিকেই যাচ্ছো। আর একটু এগিয়ে বামে মোড় নিলেই সেই অফিস।’

‘ওকে,’ বলে ভুবনকে নিয়ে রাস্তার ওপর থেকে অন্ধকারে সরে এলো শারিয়ার। সেই সঙ্গে বের করে আনল নিজের অস্ত্র। ‘সাবধানে ভুবন। তুই আর আমি পরস্পরকে কভার করে এগোব,’ বলে সে খানিকটা এগিয়ে গেল আর তার থেকে পাঁচ-ছয় হাত পেছনে ভুবন ঘুরে গেলো সমকোণী ভঙ্গিতে। এতে করে দুজনে দুজনকে কভার করতে পারবে।

শারিয়ার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল ওরা পায়ে চলা পথটা থেকে সরে এসে যেখানে ঢুকেছে এখানটায় সারি সারি কন্টেইনার সাজিয়ে রাখা। সেগুলোর ভেতর দিকে সামনের দিকে পথের শেষ মাথায় বেশ আলো দেখা যাচ্ছে। ও অনুমান করল ওখানেই সেই অফিসঘরটা হতে পারে যেখানে সম্ভবনা আছে কিছু একটা পাবার।

‘বস, সামনে অস্ত্রধারী পাহারাদার আছে, সাবধান।’

টমির কথা কানের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হয়ে গেল। কারণ আধো অন্ধকারের ভেতরে ওর পূর্ণ নজর এখন সামনের দিকে। ‘ভুবন,’ মৃদু স্বরে সে ডেকে উঠলভুবনকে। সামনেই একজন পাহারাদার দেখা যাচ্ছে একটা কন্টেইনারের গায়ে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে। একহাতে একটা অস্ত্রের মতো কিছু ধরা। কিন্তু জিনিসটা কী, সেটা পরিষ্কার বোঝা গেল না। শারিয়ার ইশারা করতেই এগিয়ে গেল সামনের দিকে আর শারিয়ার ঢুকে পড়ল অন্ধকার এক কোনা দিয়ে। ভুবন দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে এগিয়ে গেল লোকটার দিকে।

‘এই, এদ্দিকে কী?’ লোকটা হঠাৎ অন্ধকারর ভেতরে থেকে আলোতে বেরিয়ে আসা ভুবনকে দেখে প্রাথমিকভাবে চমক উঠলেও সে সামলে নিল নিজেকে। ধমকে উঠে সাবধান করে দিচ্ছে মনে হয় সে ভেবেছে এই এলাকারই লোক। ‘বাই ইয়াত, টয়লেট খুঁজতেছিলাম,’ বলে ভুবন বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে লোকটার দিকে এগিয়ে গেল। এবার লোকটা সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রাগের সঙ্গে এগিয়ে এলো ভুবনের দিকে। মানুষটা আরেকটু এগোতেই ভুবন দেখল লোকটার হাতে একটা হ্যান্ডগান। ভুবনের দৃষ্টি অস্ত্রটার দিকে চলে গেছে আর লোকটা সোজা অস্ত্রটা তার দিকে তুলে ধমকে উঠে জানিয়ে দিল এই দিকে আসা নিষেধ।

ভুবন দুই হাত তুলে মুদু হাসি দিয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল লোকটার দিকে। লোকটা এবার সোজা অস্ত্রটা তাক করল ভুবনের দিকে। ভুবনও জোরে হেসে উঠল। লোকটা ভুবনের হাসি দেখে কিছু একটা অনুধাবন করার চেষ্টা করল কিন্তু যখন সে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ততক্ষণে অন্ধকারের কোনা ঘুরে তার দিকে পৌঁছে গেছে শারিয়ার। লোকটা ঘুরে দাঁড়াতেই শারিয়ারের পিস্তলের বাঁটটা সোজা বসে গেল তার চাঁদিতে আর পড়ন্ত লোকটাকে ধরে ফেলল ভুবন। আলতো করে মানুষটাকে শুইয়ে দিল অন্ধকারের ভেতরে। লোকটার পায়ের মোজা খুলে সেটা মুখে ঢুকিয়ে বেল্ট দিয়ে হাত আর রুমাল দিয়ে মুখ বেঁধে দিল। যদিও আঘাতের গভীরতায় শারিয়ার জানে জ্ঞান ফিরতে এর দেরি হবে।

লোকটাকে সামলানো শেষ হতেই শারিয়ার মাটি থেকে হ্যান্ডগানটা তুলে নিল। বিদেশি জিনিস। ‘দেখেছিস অবস্থা? অবশ্যই এখানে কিছু একটা আছে তা-না হলে এসব স্থানীয় গুণ্ডাপাণ্ডাদের কাছে এই জিনিস থাকত না।’

‘অই, কাদের, কাদের, দুজনেই লোকটার হ্যান্ডগানটা পরীক্ষা করছিল

 আচমকা ডাক শুনে সতর্ক হবার আগেই কন্টেইনারের ওপাশ থেকে একজন উদয় হলো ওদের একেবারে সামনে। ভারী, শীতের পোশাক পরা লোকটর হাতেও একইরকম হ্যান্ডগান। ‘কি রে বিড়ি একলাই…’ সে সম্ভবত তার সঙ্গীর সঙ্গে সিগারেট টানতে আসছিল। কিন্তু চোখের সামনে ভিন্ন দুজনকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। মুহূর্তখানেক লাগল তার কিছু একটা অনুধাবন করতে। কিছু একটা গণ্ডগোল অনুধাবন করেই সে হ্যান্ডগানটা তুলতে যচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শারিয়ার আর ভুবন তার চেয়ে অন্তত দশ গুণ বেশি ফাস্ট। শারিয়ার নিজের সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা বের করে এনেছিল কিন্তু তার আগেই দেখল ভুবনের হাতে কিছু একটা ঝলসে উঠল। আর লোকটা মাটিতে পড়ে গেলে প্রায় কোনো শব্দ না করেই।

ভুবন এগিয়ে যেতে শুরু করেছে লোকটার দিকে, শারিয়ার অবাক হয়ে দেখল তার হাতে সেই গুলতিটা। ‘বাহ, তোর এই জিনিসটা তো সেই কাজের।’

‘আসলে জিনিসটা কতটা কাজের সেটা নির্ভর করে এটাকে চালানোর ওপরে। অবশ্য সব অস্ত্রের ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে ফিরে বলে উঠল, ‘এখন ধরবে নাকি?’

দ্বিতীয় পাহারাদারেরও স্থান হলো প্রথমটার পাশেই। শারিয়ার আর ভুবন মিলে এবার আরো অন্তত তিনগুণ সাবধানে আর দ্রুত গতিতে এগোনো শুরু করল অফিসটার দিকে। ‘বস, সামনে তোমাদের থেকে তিন কন্টেইনার দূরে। অফিসের ঠিক আগে দুটো কন্টেইনারের ওপরে একজন আছে,’ টমি তথ্যটা দিতেই শারিয়ার ভুবনের দিকে ইশারা করেই দৌড় দিল। লোকটা মনে হয় কিছু একটা দেখেছে। সে কন্টেইনারের একেবারে কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে সতর্ক চোখে চোখ বুলাচ্ছে। শারিয়ার দৌড়ে দিয়ে একেবার লোকটার বরাবর নিচে দাঁড়াল। লোকটা শারিয়ারকে দেখে অস্ত্র তুলবে তার আগেই ভুবনের লোহার বলের আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল মাটিতে। তার পড়ন্ত দেহটা ধরে ফেলল শারিয়ার। কিন্তু তাকে সামলাতে গিয়ে নিজেও পড়ে গেল মাটিতে। লোকটা তার ওপরে পড়েছে। তাকে সামলানোর আগেই আরেকজন উদয় হলো একেবারে সামনে।

অজ্ঞান লোকটা আর শারিয়ার দুজনকেই দেখে সঙ্গে সঙ্গে সে হ্যান্ডগান তুলল। শারিয়ার যদিও শরীরের একপাশ থেকে নিজের পিস্তল তুলেছে, ওটাতে সাইলেন্সারও লাগানো আছে কিন্তু লোকটাকে গুলি করতে সায় দিচ্ছে না মন। তাকে এই দ্বিধা থেকে বাঁচিয়ে দিল ভুবন। সে ভূতের মতোই অন্ধকারের ভেতর থেকে উদয় হলো লোকটার পেছনে। লোকটা চিৎকার করে শারিয়রের দিকে বন্দুক তুলতে যাচ্ছিল তার আগেই পেছন থেকে তার খোলা মুখটা চেপে ধরে বিশেষ কায়দায় চাপ দিতেই হাঁ করা মুখ আর বন্ধ হলো না, তার আগেই লোকটা জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ল। ভুবন আস্তে করে তাকে শুইয়ে দিল মাটিতে। শারিয়ার মাটি থেকে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে বসতে যাচ্ছিল ভুবন এগিয়ে এসে একটা হাত দিয়ে টেনে তুলল তাকে।

‘ঠিক আছো?’

ভুবনের প্রশ্নের জবাবে মাথা নাড়ল শারিয়ার। ‘এগুলো?’ অজ্ঞান শরীরগুলো দেখাল সে। ‘বাদ দে। টমি, আর কেউ আছে আশেপাশে?’ টমির কোনো জবাব নেই। ‘টমি টমি,’ ভুবনের দিকে তাকিয়ে আনমনে কাঁধ ঝাঁকাল একবার সেই সঙ্গে তীব্র ধমকের শব্দে ফিরে তাকালো দুজনেই।

‘এই এই,’ দুজন পাহারাদার ওদেরকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল।

শারিয়ার মনে মনে একবার দূরত্ব হিসেব করল। একজনের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব। স্রেফ একবার হাত ঝাঁকিয়েই সে দৌড় দিল। কয়েক ধাপ সামনে গিয়ে একহাতে ধরে ফেলল লোকটার অস্ত্র ধরা কবজি, অন্য হাতে লোকটার এক কান চেপে ধরে নিজের শরীরকে ছেড়ে দিল। ক্রিকেট ব্যাটে ছয় মারার মতো আঘাত হলে যেরকম শব্দ হয় অনেকটা সেরকম শব্দের সঙ্গে লোকটা ঢলে পড়ল কিন্তু তাকে ছেড়ে সোজা হবার আগেই অপর লোকটা চিৎকার করে উঠল। সেই সঙ্গে শারিয়ার দেখল লোকটার হ্যান্ডগানের কালো নলটা ওর মুখের ওপরে। ট্রিগারে লোকটার আঙুল শক্ত হয়ে উঠছে কট করে একটা শব্দের সঙ্গে দুই চোখের মাঝখানে আরেকটা তৃতীয় চোখ নিয়ে লোকটা শুয়ে পড়ল উলটো হয়ে। স্বস্তির সঙ্গে শারিয়ার উঠে দাঁড়িয়ে দেখল নিজের গুলতি নামিয়ে নিচ্ছে ভুবন। তার উদ্দেশ্যে একবার মাথা নেড়ে অফিস ভবনটা দেখাল শারিয়ার। দুজনেই সন্তর্পণে এগোতে শুরু করলে অফিসটার দিকে। ‘টমি টমি,’ আরো দুবার ডাকল শারিয়ার কিন্তু কোনো সাড়া নেই।

অফিস ঘরটার কাছেই মৃদু গুঞ্জনে সঙ্গে চলছে একটা জেনারেটর। সেটার কাছে এসে অফিসের কাছের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল দুজনে। সামনে থেকে অন্তত দুজনের গলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এরা অস্থির হয়ে উঠেছে নিশ্চয়ই লোক দুজনার চিৎকার কানে গেছে। এদের ভেতরে অন্তত একজন মোবাইলে কথা বলছে। ‘জলদি করতে হবে,’ বলেই সে জেনারেটরের পাশে পড়ে থাকা একটা পাইপ তুলে নিল। পিস্তল কোমরে রেখে পায়ে পায়ে এগিয়ে অন্ধকারের ভেতর থেকে ভূতের মতো উদয় হলো লোক দুজনার সামনে।

আসলেই একজন মোবাইলে কথা বলছিল, অন্যজন উঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সামনে কী হচ্ছে। সম্ভবত সে কারো নাম ধরে ডাকছিল, শরিয়ারকে দেখে একজন এতটাই চমকে উঠল টপ করে হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেল। কিন্তু সে সাবধান হবার কিংবা নিজের অস্ত্র তোলার কোনো সুযোগই পেল না। যদিও হাতে একটা লোহার পাইপ আছে কিন্তু সেটা ব্যবহার না করে শারিয়ার নর্তকীর মতো স্বচ্ছন্দ গতিতে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। এগোনোর গতির সঙ্গে সঙ্গে তার ডান পাটা উঠে গেল শূন্যের দিকে। শূন্যে থাকা অবস্থাতেই সেটা খানিকটা দিক পরিবর্তন করে কোমর বরাবর আছড়ে পড়ল লোকটার। তীব্র চিৎকারের সঙ্গে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল সে। একহাতে লোকটার মুখ চেপে ধরে পাইপ ধরা হাতের কনুইটা কট করে গিয়ে আঘাত হানল লোকটার কপালের পাশে, কাটা কলাগাছের মতো পড়ে গেল সে মাটিতে।

তার পেছনে অস্থির দ্বিতীয় সঙ্গী তখন নিজের অস্ত্র তুলতে শুরু করেছে। লোকটা পড়ে যেতেই শারিয়ার পাইপটাকে এক চক্কর ঘোরাল শূন্যের ওপরে। ভারতের ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনির হেলিকপ্টার শটের মতো লোহার পাইপটা গিয়ে বাড়ি মারল লোকটার হাতের অস্ত্রটাতে। সেটা ছিটকে উঠল কিন্তু পড়ে গেলনা কারণ জিনিসটা একটা স্ট্র্যাপ দিয়ে আটকে ছিল তার গলার সঙ্গে। গলার সঙ্গে জিনিসটার শক্ত টান লাগতেই তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠল সে। শারিয়ার এগিয়ে যাচ্ছিল লোকটার চিৎকার বন্ধ করতে কিন্তু সেটা করার আগেই ঠিক আগের মতো ধুপ করে একটা শব্দের সঙ্গে কপালের ওপরে লাল দাগ নিয়ে ভূপতিত হলো সে মাটিতে।

হাঁপাতে হাঁপাতে শরিয়ার ফিরে তকাল ভুবনের দিকে। ‘এটা একদম ঠিক না। আমার শিকারে তুই ভাগ বসাচ্ছিস একেবারেই ঠিক হয়নি।’

‘হয়েছে তোমার শিকার, ভুবন তার গুলতি কোমরে গুঁজে নিয়ে পিস্তল বের করে লোক দুটোর দিকে দেখিয়ে বলে উঠল, ‘দুইটা লোকরে নিঃশব্দে সামলাতে পারলে না। দুজনেই চিৎকার করে উঠল। এটা কোন কথা?’

শারিয়ার মৃদু হেসে নিজের লোহার পাইপটা দিয়ে দরজাটায় আঘাত করতে যাচ্ছিল তার আগেই চেঁচিয়ে উঠল ভুবন, ‘তুমি একটা লোকরে ভাই। এমনিতেই যে চিৎকার চেঁচামেচি করছে লোক দুজন। তার ওপরে আবার শব্দ করতে চাও?’ বলে সে শারিয়ারকে সরতে ইশারা করল।

‘দেখা যাক, উদ্দেশ্য পূরণ হলো কি না?’ বলে শারিয়ার পাইপটা ফেলে দিয়ে পিস্তল বের করে আনতেই ভুবন খুব সাবধানে দরজার লকটার ওপরে দুই দুবার ধূপ ধূপ করে সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল দিয়ে গুলি করল। তারপর শারিয়ারকে কভার করতে বরে এক ধাক্কায় দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল।

ভেতরে লোক থাকতে পারে, বন্দুক হাতে পাহারাদার থাকতে পারে, মুখে টেপ আটকানো হাত-পা বাঁধা বন্দিনী থাকতে পারে, এরকম অনেক কিছুই ভেবেছিল ওরা। কিন্তু তার বদলে যা দেখল তাতে দুজনেই বেকুব হয়ে গেল।

ভেতরে কেউই নেই, কিছুই নেই। খুবই সাধারণ একটা অফিস রুম ভেতরে। দুজনেই দুজনার দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল তারপর কয়েক কদম এগিয়ে ভেতরে ঢুকে টেবিলের ওপাশ আর কেবিনেটের অন্যপাশ দেখে নিয়ে নামিয়ে নিল পিস্তল। ‘সর্বনাশ! এখানে তো কেউই নেই।’

‘কিন্তু—’ শারিয়ার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল সেট শেষ করতে না পেরে দুজনেই অবাক হয়ে ফিরে তাকাল দরজার দিকে। দুজনকেই অবাক করে দিয়ে সেখানে উদয় হয়েছে অস্ত্রধারী এক পাহারাদার।

***

টমি ভীষণ ব্যস্ততার সঙ্গে কাজ করছে দেখে এই প্রথমবারের মতো সুমন একটু সহানুভূতি অনুভব করল ছেলেটার প্রতি। এ ছাড়া এই আধা ছেলে-আধা লোকটাকে তার অত্যন্ত বিরক্ত লাগছিল। একবার টমির দিকে দেখে নিয়ে সে একটা সিগারেট ধরাল। শীতের রাতের সামান্য বাতাসও কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে তার শরীরে।

বৃহত্তর ফরিদপুর এলাকার ছেলে সুমন তরফদার পিবিআইতে অফিসার হিসেবে যোগদান করেছে খুব বেশি সময় হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে সে এখানকার কাজকর্ম তার ভালো লাগতে শুরু করেছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সে মেধাবী ছাত্র ছিল। খুব বেশি ক্যারিয়ার সচেতন সে কখনোই ছিল না। যখন যা সামনে আসে সেটা নিয়ে ব্যস্ত থাকাটাই তার কছে জীবন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর প্রথম চাকরির বিজ্ঞাপন দেখছিল সে এই পিবিআইতে। এটাই ছিল তার প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ। এক বন্ধু বলতে গেলে একরকম জোর করেই তাকে দিয়ে আবেদন করায়। এমনকি তার আবেদনের টাকাও সেই বন্ধুই দিয়েছিল। প্রথমে শারীরিক পরীক্ষা তারপর একে একে লিখিত মৌখিক দিয়ে যখন তার চাকরি হয়ে গেল সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিল সে নিজেই। কারণ এখানে তার চাকরি হবে সে ভাবেনি, আর ঘুস ছাড়া এরকম চাকরি হয় বলেও তার জানা ছিল না। কিন্তু তারটা হলো। ছয় মাসের ট্রেনিং নিয়ে জয়েন করার পর থেকে ভালো লাগতে থাকে তার কাছে। এরপর বছর দেড়েক আগে মায়ের পছন্দের পাত্রী দেখে বিয়ে করেছে। সুন্দর গোছানো সংসার তার। কিন্তু সেই কলেজ জীবনের শুরু থেকে অ্যাডভেঞ্চারের যে নেশা সেটা আজো কাটেনি। আর সেটার লোভেই সে এখন এখানে।

এই শীতের রাতে মাঠের কিনারায় দাঁড়িয়ে বেনসনে টান দিতে দিতে জীবনের স্মৃতিচারণ আর কতক্ষণ চলত কে জানে, কিন্তু হঠাৎ ও টমির ডাকে সে ফিরে তাকাল। ‘সুমন ভাই, একটু হেল্প করো না। ওখানে তো ভয়াবহ অবস্থা চলছে।’

সিগারেটটা পিষে দিয়ে পায়ে পায়ে টমির দিকে এগোল সুমন কিন্তু হঠাৎ জংলা জায়গাটার কোনো এক দিক থেকে অত্যন্ত পরিচিত একটা শব্দ শুনে চট করে সচকিত হয়ে উঠল সে। কেউ একজন পিস্তল লোড করেছে খুব কাছেই। সুমনকে থেমে যেতে দেখে টমিও ফিরে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই সুমন ইশরায় তাকে চুপ থাকতে বলল। যদিও পিস্তল লোড করার শব্দ শুনেই সুমন বুঝতে পেরেছে যে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও সে ধীরে ধীরে সন্তর্পণে নিজের কোমরের পাশে রাখা স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনের দিকে হাত বাড়াতে শুরু করেছিল কিন্তু জংলার ভেতর থেকে একটা খিটখিটে হাসি শুনে থেমে গেল সে। কেউ একজন হাসির সঙ্গে সঙ্গে অদ্ভুত একটা টানে বাংলাতে বলে উঠল, ‘অফিসার, আরেকটু এগোও হাতটা পিস্তলের দিকে। তারপর দেখো কী করি।’

সুমন নিজের হাত দুটোকেই সরিয়ে এনে মাথার দুপাশে তুলে ধরলো। ‘গুড বয়,’ সুমন অনুভব করল পেছন থেকে কণ্ঠস্বরের মালিক এগিয়ে আসছে তার দিকে। কয়েক সেকেন্ড পরেই তার ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে কেউ একজন এগিয়ে এসে খাপের ভেতর থেকে নিয়ে নিলে সুমনের স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনটা। তারপর জোরে একটা ঠেলা মারল তাকে।

পড়ে যেতে যেতেও কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে টমির পাশে এসে থেমে গেল সুমন। টমিও দুই হাত তুলে আধ বসা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুজনেই সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল চার-পাঁচজনের একটা দল বেরিয়ে এসেছে জংলা জায়গাটার ভেতর থেকে। তাদের সর্বাগ্রে চায়নিজ মতো দেখতে লম্বা চেহারার একজন মানুষ ওদের দিকে পিস্তল তাক করে অত্যন্ত হাসি-খুশি চেহারায় তাকিয়ে আছে।

‘হেই বয়েজ, আবারো সেইই অদ্ভুত টানে বলে উঠল সে। যদি নিজেরা বাঁচতে চাও এবং তোমাদের বসদেরকে বাঁচাতে চাও তবে আমি কী বলি ভালো করে শোন।

যদিও চারপাশে অন্ধকার এবং লোকটাকে খুব বেশি পরিষ্কার দেখাও যাচ্ছে না। কিন্তু তবুও এই আধো অন্ধকারের ভেতরেই লোকটাকে দেখে পরিষ্কার চিনতে পারল টমি। এই সেই লোক যে শারিয়ারকে ট্রেন স্টেশনের বাইরে থেকে পিক করেছিল এবং পরবর্তীতে তাকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীতে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতে এই লোকটাই সেই বেইজমেন্টে ট্রিক করে শারিয়ার আর ভুবনের ভেতরে মারামারি বাধিয়ে চেষ্টা করছিল বেইজমেন্টে প্রফেসরের রুম থেকে জিনিসগুলো নিয়ে কেটে পড়তে। এই লোকটাই সেই রুমে আগুন লাগা এবং সবকিছু পুড়ে যাবার জন্যে দায়ী।

টমির কানের ভেতরে থাকা ইয়ার পিসের ভেতর থেকে শারিয়ারের গলা ভেসে আসছে। ওদের একজন এসে একটান দিয়ে খুলে নিল সেটা। সুমনের দিকে তাকিয়ে মৃদু আফসোসের সঙ্গে মাথা নড়ল টমি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *