অধ্যায় একত্রিশ – বর্তমান সময়
ফজলুল কাদের রোড, চট্টগ্রাম
‘এই জন্যই, বুঝেছিস, আমি কাজে যাওয়ার আগে খুব ভালো জায়গাতে খেতে চাই না, শারিয়ার বাম হাতে ওর পেটের ওপরে একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে ডান হাতে সিগারেটের ছাই ঝাড়ল।
‘আরে বস,’ শারিয়ারের কথা শুনে ভুবন হেসে উঠল। ‘জানো তো, ফাঁসির আসামিদেরকে ফাঁসি দেওয়ার আগে ভালো-মন্দ খাওয়ানো হয়। তুমি আমাদের যেখানে নিয়ে যেতে চাইছো সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কী না কী হয় কে জানে। কাজেই ভালোভাবে একটা খাওয়া না দিলে কী হয়!’
‘হুমম, এখন নড়তে না পারলে ব্যাপারটা যে আরো ত্বরান্বিত হবে সে-ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই,’ শারিয়ার ভুবনের দিকে তাকিয়ে দেখল পানের রসে ছেলেটার দুই ঠোঁট একেবার লাল হয়ে উঠেছে। ভুবনকে আরাম করে মিষ্টি পান চিবুতে দেখে ওরও খানিকটা লোভ লাগল। একবার ভাবল নেবে নাকি নিজেও একটা। পরমুহূর্তে ভাবল না থাক, এমনিতেই বেশি হয়ে গেছে পান-টান খেয়ে আবার যদি জর্দার কারণে মাথা চক্কর দেয় তখন বিপদ হবে একটা।
সিগারেটে আরেক টান দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে রেস্টুরেন্টটার একটা ছবি তুলল শারিয়ার। নামটা বেশ ভালো লেগেছে ওর ‘মেজ্জান হাইলে অইয়ুন’। নামটার শুদ্ধ বাংলা দাঁড়ায় ‘মেজবান খেলে আসুন’। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি এখানকার খাবারের স্বাদ। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি খাবারের স্বাদ পেতে তুলনা নেই।
‘বস, তুমার মনে হয় রেস্টুরেন্টটা পছন্দ হয়েছে?’ ভুবন জানতে চাইল।
‘হুমম, ভালো লেগেছে,’ বলে ও মোবাইলে তোলা ছবিটা দেখে নিয়ে ওটা রেখে দিল। ‘এখন তো টেনশনে আছি। এরপরে একসময় মুড ভালো থাকলে তখন এখানে এসে খেয়ে যেতে হবে। মেজবান খেয়েছিলাম সেই আর্মিতে থাকতে। ট্রেনিংয়ের সময়ে একবার ছুটিতে এসে বেশ কয়েকজন মিলে খেয়েছিলাম আমরা, ‘ বলে শারিয়ার স্মৃতিচারণা করে খানিকটা অবেগজড়িত গলায় বলে উঠল, ‘কত বছর পার হয়ে গেছে, অথচ মনে হয় সেদিনের ঘটনা,’ আনমনেই মাথা নাড়ল সে।
‘তুমি আর্মিতে ছিলে?’ ভুবন বেশ অবাক হয়ে জানতে চাইল। বিকেল থেকে একসঙ্গে থাকতে থাকতে দুজনার ভেতরের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে ইতিমধ্যেই। ‘ছাড়লে কেন?’
‘হা-হা-হা,’ করে হেসে উঠল শারিয়ার। ‘সে এক লম্বা গল্প,’ বলে সে রাস্তার অন্যপাশে চায়ের দোকানটা দেখাল। ‘সুমনের আসতে সময় লাগবে মনে হয়, চল চা খাই। খেতে খেতে গল্প করি,’ দুজনেই চায়ের দোকানের সামনে এসে দুকাপ চা অর্ডার করে শারিয়ার বলে উঠল। ‘আসলে ছাড়িনি,’ বলে ও মৃদু হেসে উঠে যোগ করল। ‘বের করে দিয়েছিল। নিজের কমান্ডিং অফিসারকে চড় মেরেছিলাম,’ বলে সে দোকানদারকে দিয়ে যাওয়া চায়ের কাপটা তুলে ধরে বলে উঠল, ‘চিয়ার্স।’
ভুবন ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তারপর আনমনেই মাথা নেড়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠল, ‘হায়রে মানুষ! তুমি একটা পাগল ছাড়া আর কিছু না। তুমি কমান্ডিং অফিসারকে মেরে আর্মি ছাড়লে। আর আমি কী করিনি একটা সময় আর্মিতে যাওয়ার জন্য,’ বলে সে আনমনেই মাথা নাড়ল। ‘আর এখন ওই সময়টাকে জীবনের…’ সে বাক্যটা শেষ করল না ইচ্ছে করেই।
‘কেন? তুই না স্পেশাল অপসে ছিলি কমান্ডো হিসেবে?’ শারিয়ার একটু অবাক হয়ে গেছে ছেলেটার কথা শুনে। আর্মিতে না থাকলে সেটা কীভাবে সম্ভব?’
ভুবন খানিকটা হেসে বলে উঠল, ‘আমি স্পেশাল অপসে ছিলাম, কিন্তু এই দেশের আর্মিতেই ছিলাম, এটা তো বলিনি। তবে হ্যাঁ আমি বাংলাদেশের আর্মিতে কাজ করেছি কিন্তু সেটা ওদের নিয়মিত হিসেবে নয় অনেকটা এই মুহূর্তে যেমন করছি এখানে।’
অনেক বিচিত্র গল্প আছে মনে হয় এই লম্বা যাত্রায়, শারিয়ার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে উঠল। ‘আদিবাসী গোত্রের এক ছেলের স্পেশাল অপস কমান্ডো হওয়া, তারপর সেখান থেকে এখন একটা সিকিউরিটি কোম্পানির অফিসার,’ আনমনে কাঁধ ঝাঁকাল শারিয়ার। ‘কোনোভাবেই মেলাতে পারছি না।’
‘উফফ বস, আর বলো না,’ বলে সে হেসে উঠল। স্মৃতিকাতরতার হাসি। যদি কোনোদিন সুযোগ হয় একটা বই লিখব এ নিয়ে, বলে সে নিজের ডান হাতটা তুলে শূন্যের ওপরে মেলে ধরল। ‘নাম দিব কী জানো, রিগ্রি ক্ষ্যাং’।’
‘এ কেমন নাম?’
‘আমি যে গোত্রের মানুষ সে পুরো গোত্রেরই বসবাস এগারোটা পাহাড়ের ওপরে একটা গ্রামে। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটা পাহাড়ি পানির ছড়া, যেটাকে নদীও বলতে পারো। নদীটার নাম ‘রিগ্রি ক্ষ্যাং’। তোমাদের বাংলায় এর অর্থ শান্ত পানির ধারা।’
‘বাহ, একেবারে কবি কবি ব্যাপার,’ হেসে উঠল শারিয়ার।
‘মোটেই না, বস। অনেক রক্ত লেগে আছে এই পানির শান্ত ধারায়,’ বলে সে নিজের হাত দুটো দেখাল। ‘আর এই দুই হাতে, অনেক যন্ত্রণা মিশে আছে আছে এই রিগ্রি ক্ষ্যাঙের মৃদু মন্দ স্রোতে। আমাদের গ্রামের প্রথম শিক্ষিত মানুষ ছিল আমার দাদা। সেই প্রথম আমাদের গোত্রকে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করায়। এর ফল ভালো হয়নি, আর তাই আমার বাবা যখন গোত্র প্রধান হয় সেই নীতি থেকে সরে আসে সে। কিন্তু আমি ব্যতিক্রম ছিলাম, দুনিয়া দেখতে চেয়েছিলাম, আমি বিশ্বকে জয় করতে চেয়েছিলাম কিন্তু…’ হঠাৎ থেমে গেল সে। তারপর দুঃখী হাসি দিয়ে বলে উঠল। ‘দেশপ্রেম, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর বিসর্জন, এসব মিথ কাটিয়ে উঠেছি বস এখন দুনিয়াতে একটাই মিথ আছে আমার জন্য। আমার স্ত্রী আর ছোটো বাচ্চাটা। আচ্ছা বাদ দাও। তোমার কথা বলো। তোমার পরিবারে কে আছে?’
‘টাকা,’ চায়ের কাপটা ফেরত দিতে দিতে বলে উঠল শারিয়ার।
‘মানে?’ ভুবনকে দেখে মনে হচ্ছে আরেকটু হলে চায়ের কাপে বিষম খেতো সে।
‘বস্তা বস্তা টাকা আছে আমার পরিবারে,’ বলে হেসে উঠল শারিয়ার। ‘কিন্তু সে টাকা খরচ করার মতো কেউ নেই। বাবা আছে, আজ ত্রিশ বছর ধরে ডিজ্যাবল, কোমায় আছে। আর পরিবারে একটাই ছেলে সেটাও পাগল, কীসের নেশায় দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় খোদাই জানে একমাত্র।’
‘তা তুমি কিছু করো না কেন, তুমি বুঝিয়ে-শুনিয়ে বাড়িতে নিয়ে এলেই তো পারো?’ ভুবন খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠল।
শারিয়ার মুখ তুলে তাকাল তার দিকে। ‘হ্যাঁ চেষ্টা করেছিলাম, শুনলো আর কই। সব বাদ দিয়ে চট্টগ্রামে ফজলুল কাদের রোডে চা খাচ্ছে এখন ব্যাটা, আর জুনিয়র কলিগের সঙ্গে জীবনের গভীরতা নিয়ে ফালতু ফিলোসফি কপচাচ্ছে,’ বলে হেসে উঠল সে।
ভুবন এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল তার দিকে। কয়েক মুহূর্ত লাগল তার বিয়ষটা বুঝতে। তারপর হা-হা করে হেসে উঠল সে। দুজনেই হাসতে লাগল। শারিয়ার হাত তুলে ঘড়ি দেখল। ‘সুমন হারামজাদা তো ভালো দেরি করছে। আরো সময় পার হলে তো ঝামেলা বাড়বে।’
‘আমরা যে কাজ করতে যাচ্ছি তাতে এমনিতেও ঝামেলা কম হবে না। এমন এক কাজ, যেটাতে বিফল হলে সব মেসআপ হবেই। সফল হলেও জবাব দিতে দিতে জান বের হয়ে যাবে,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বলে উঠল, ‘বস, তুমি একটা খারাপ লোক। ডানহিল খাইয়ে খাইয়ে অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছো। এখন আর রেগুলার সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না,’ সে হাত বাড়িয়ে আছে শারিয়ারের দিকে।
‘ভালো,’ শারিয়ার ব্লেজারের পকেট থেকে ডানহিলের প্যাকেটটা বের করে ধরিয়ে দিল ওর হাতে। শালা, প্রত্যেকটা বিড়ি উসুল করব আমি তোর কাছ থেকে,’ কপট রাগের ভঙ্গিত বলল সে। ‘আচ্ছা ভুবন, একটা ব্যাপার বল তো। তুই যে যেতে চাচ্ছিস আমার সঙ্গে, কাজটা কী ভালো হবে তোর জন্য? তুই তো ফ্যামিলি ম্যান,’ বলে হেসে উঠল শারিয়ার। ‘মানে পারিবারিক মানুষ।’
ভুবনও হেসে উঠল ওর শব্দচয়ন শুনে। ‘পারিবারিক মানুষ! যা বললে বস,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে ফিরে তাকাল। ‘শোন, আমি ঘরে বসে থাকার মানুষ নই। আমি নিয়ম মেনে নিয়মকে বদলে দেবার মানুষ। আর আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, তুমি যদি গণ্ডির বাইরে কিছু একটা করতে চাও তবে অবশ্যই তোমাকে গণ্ডির বাইরে বেরুতেই হবে। কিছু করার নেই,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে একটা আঙুল তুলল। ‘বস, তুমি সুপার হিরো মুভি দেখো?’
‘আমি মুভিই দেখি না, শারিয়ার হেসে বলে উঠল। ‘তার ওপরে আবার সুপারহিরো মুভি! তবে হ্যাঁ, ছোটোবেলায় কমিকস পড়তাম খুব।’
‘তোমার ফেভারিট সুপারহিরো কে?’ ভুবনকে দেখে মনে হচ্ছে আলোচনার জন্য সে খুব মাজার বিষয় পেয়ে গেছে।
‘হুমম,’ শারিয়ার পড়ে গেছে দ্বিধায়। ‘ওরকম স্পেশাল ফেভারিট তো কেউ নেই। তবে ব্যাটম্যানকে ভালো লাগে সবসময়ই।’
‘আমার কে জানো?’ বলে সে ভ্রু নাচাল। ‘সবাই শুনে অবাক হয়। টনি স্টার্ক, মানে আয়রন ম্যান। আয়রন ম্যানের মুভিতে একটা ডায়লগ আছে যেটা আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। কথাটা অনেকটা এরকম ‘কখনো কখনো হাঁটতে শেখার আগে দৌড়াতে হয়’। আর এসব কেসের ক্ষেত্রে দৌড়াতে না পারলে কখনোই সামনে আগানো যায় না।’
‘কিন্তু সুমন তো অনেক দেরি করে ফেলছে,’ শারিয়ার ঘড়ি দেখল।
‘কল দিই?’ ভুবন মোবাইল বের করতে করতে বলে উঠল। মোবাইলে কথা বলে সে শারিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘চলে এসেছে প্রায়। তবে মজার একটা কথা বলল সুমন। গাড়ি, খবর আর মানুষ তিনটাই নাকি আছে তার কাছে।’
‘গাড়ি আর খবর তো বুঝলাম,’ শারিয়ার আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিতে- দিতে বলে উঠল। কিন্তু মানুষটা আবার কে?
‘সেইটাই তো বুঝলাম না। চলে আসছে প্রায়, আমি একেবারে এখানকার লোকেশনই বলেছি, এলেই দেখতে পাব আর কি।’
শারিয়ার খানিকটা অস্থির ভঙ্গিতে আরেকবার ঘড়ি দেখল। ‘খুব দেরি হয়নি ওদের। কিন্তু সময় বেশি নেই আমাদের হাতে। কারণ এখান থেকে আমাদের গেস্ট হাউজে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে পোশাক বদলাতে হবে। সেই সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তারপর বেরোতে হবে। যা বুঝতে পারছি ওখানে একবার ঢুকলে আর… ওই যে চলে এসেছে ওরা। আরে সুমন দেখি টমিকে নিয়ে এসেছে।’
রাস্তা পার হয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা টমিকে দেখিয়ে বলে উঠল ভুবনকে। ভুবনও তাকিয়ে আছে রাস্তা পার হয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা টমি আর সুমনের দিকে।
সন্ধেবেলা ওরা যখন জানতে পারে কাল সকালের আগে বাউন্ডারির অন্যপাশের প্রাইভেট প্রপার্টিতে ওরা সার্চ করতে পারবে না। তখন শারিয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, ও নিজেই ঢুকবে ওখানে। ভুবনের সঙ্গে শেয়ার করার পর সেও বেশ মজা পায় পরিকল্পনাটাতে।
তবে আজ রাতেই ওই এলাকাতে অভিযান চালানোর পেছনে শারিয়ারের আরেকটা বড়ো কারণ হলো কেন জানি সে সন্দেহ করছে প্রশাসনের ভেতর শত্রুপক্ষের লোক আছে। কারণ যতবার ওরা যাই করতে যাচ্ছে সেটা করার আগেই শত্রুপক্ষের লোকজন জেনে যাচ্ছে। ওরা যে ওই এলাকাতে কিছু একটা বের করতে পেরেছে, এই খবর দেখা যাবে জায়গামতো চলে গেছে। ওরা কাল সকালে ওয়ারেন্ট ম্যানেজ করে ওখানে অভিযান চালানোর আগেই। আর এ কারণে আজ রাতেই অভিযান চালানোর পরিকল্পনা শারিয়ারের, আর সেটাও নিজে থেকে।
তবে ওদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুধু ওরা দুজন যথেষ্ট ছিল না। কারণ ওরা দুজনেই বাইরের লোক কেউ তাই সরাসরি টিমের স্থানীয় কাউকে দরকার ছিল ওদের শারিয়ার আর ভুবন দুজনে মিলে ঠিক করে সুমনকে ওদের সঙ্গে নেওয়া হবে। তবে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হবে যদি সে রাজি হয় হবে, না হলে তাকে ব্যাপারটা গোপন রাখতে বলা হবে। কিন্তু সুমনকে প্রস্তাব দেওয়ার পর প্রথমে খুব চিন্তায় পড়ে গেলেও পরে সে রাজি হয়ে যায়। এরপর তিনজনে বসে পরিকল্পনা করে।
প্রথমে, ওরা ঠিক করে ওদের একটা গাড়ি লাগবে। ওরা যেহেতু আনঅফিশিয়ালি অপারেশনটা চালাচ্ছে কাজেই এই গাড়ি আনরেজিস্টার্ড হতে হবে। সুমন জানায় তার পরিচিত মেকানিক আছে, চাইলে সে গাড়ি ম্যানেজ করতে পারবে। এরপরে যেই ব্যাপারটা ওদের দরকার সেটা হলো নির্দিষ্ট কিছু তথ্য। ওই ডকইয়ার্ডে কাজ করে এমন কাউকে লাগবে ওদের যে ওদেরকে সামান্যতম হলেও কিছু তথ্য দিতে পারবে যে, গত কয়েকদিনে ওই ইয়ার্ডে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে কিনা। কারণ একেবারে আউট অব দ্য ব্লু শারিয়ার ঢুকতে চাচ্ছে না ওখানে। অপারেশনটা চালানোর জন্য ওর কিছুটা হলেও তথ্য দরকার সুমন জানায় ওই ইয়ার্ডে কাজ করে এমন একজন ইনফর্মার আছে ওদের। শারিয়ার চাইলে সে যোগাযোগ করে দেখতে পারে লোকটার সঙ্গে।
তো সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সুমন চলে যায় ইনফর্মারের ওখান থেকে খবর সংগ্রহ করে মেকানিকের কাছ থেকে গাড়ি ম্যানেজ করে নিয়ে আসার জন্য। আর শারিয়ারকে নিয়ে ভুবন চলে আসে রাতের খাওয়া-দাওয়া করার জন্য। কথা ছিল সুমন সব কাজ সেরে সোজা চলে আসবে ওদের ওখানে। তারপর সেখান থেকে গেস্ট হাউজে গিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে ওরা বেরুবে রাতের অভিযানে। কিন্তু সুমন কোথা থেকে এবং কীভাবে টমিকে নিয়ে এলো সেটা বোধগম্য হচ্ছে না শারিয়ারের কাছে। সুমন কাছাকাছি আসতেই দুই কাঁধ নেড়ে বিশেষ ভঙ্গি করল শারিয়ার, ‘ব্যাপার কী?’
‘আরে বস আর বলো না, তুমিই কথা বলো,’ বলে সে টমির দিকে দেখাল।
টমিকে একাধিকবার কনফারেন্স রুমে দেখলেও তাকে সামনাসামনি ভালোভাবে দেখেনি শারিয়ার। তাকে দেখে যতটা খাটো আর মোটা মনে হচ্ছিল এখন কাছ থেকে দেখে বোঝা গেল সে তার চেয়েও একটু বেশি খাটো, সেই সঙ্গে আরো খানিকটা বেশি মোটা। পরনে তার হালকা স্নিকার্স, খাকি থ্রি-কোয়ার্টার আর কালো টি-শার্ট। শারিয়ার দেখল তার আগের টি-শার্টটা বদলে অন্য একটা পরেছে সে এখন। এটাতে হিথ লেজারের জোকারের মুখ দেখা যাচ্ছে। তার সঙ্গে ট্যাগ লাইন লেখা ‘হোয়াই সো সিরিয়াস?’। সিরিয়াস লেখা জায়গাটা ঠেলে উপচে আছে টমির ভুঁড়ি। পিঠে তার ভুঁড়ির চেয়েও পেটমোটা একটা ব্যাগ, সেই সঙ্গে মাথায় একটা হাস্যকর টুপি।
‘বস, আগেই বলে নেই। আমি আপনাদের রাতের অভিযানের ব্যাপারে জানি,’ বলে সে এমন একটা হাসি দিল যেন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারির পর ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো কন্সপিরেসির তথ্যটা তার জানা। কিন্তু তার তথ্যটা শুনে শারিয়ার সোজা তাকাল সুমনের দিকে। তার দিকে তাকিয়েই সে বলে উঠল, ‘কীভাবে?’
‘আরে! আমি জানি নাকি?’ সুমন আঁতকে ওঠার মতো বলে উঠল। ‘আমি গেছি পিবিআইতে একটা কাজে, সে এসে বলা শুরু করল তোমরা নাকি রাতের অভিযানে যাবে, এই ব্যাপারে ও নাকি সব জানে। আসতে চাইল, আমি কী করে মানা করব। তাই নিয়ে এসেছি।
‘আরে শারিয়ার স্যার, শান্ত হোন,’ বলে টমি একটা হাসি দিল। ‘আমি আপনাদের অভিযানের ব্যাপারে জেনেছি তানভীর স্যারের কাছ থেকে। আপনি পরিকল্পনা ঠিক করার পর সম্ভবত তানভীরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আপনি কল করার একটু পরেই তানভীর স্যার আমাকে কল করে বলল আপনাকে আনঅফিশিয়ালি যা যা টেকনো সাপোর্ট লাগে দিতে। তাই চলে এলাম,’ বলে সে খুব চটুল একটা ভঙ্গিতে হাত নাড়ল।
‘তানভীর বলেছে?’ শারিয়ার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আপনি তানভীরকে চেনেন কীভাবে। আর ও আমাকে না জানিয়ে আপনাকে বলতে যাবে কেন?’
‘আমি তানভীর স্যারের সঙ্গে সিলেটে অপারেশন ব্ল্যাক বুদ্ধাতে ছিলাম। অপারেশন ব্ল্যাক বুদ্ধার কাজ শেষ করার পর স্যার যখন অসুস্থ আমি গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে আরেকটা কেসে কাজ করতে। এরপর স্যারের নির্দেশেই আমি চট্টগ্রাম আসি। উনি আমাকে অসম্ভব স্নেহ করেন। উনি আর আমিও এরকম মানে আনঅফিশিয়ালি অনেক কাজ করেছি একসঙ্গে,’ বলে সে কাঁধ ঝাঁকাল। ‘আর তার চেয়ে বড়ো কথা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে।’
শারিয়ার এখনো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে টমির দিকে। ‘নিরাপত্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য হতে পারে না। কাজেই সাবধান, টমি,’ বলে সে টমিকে হাতের ইশারায় সাবধান করে দিয়ে সুমনের দিকে দেখল। ‘আমি বন্ধু তানভীরকে কল করব, সে যদি টমির ব্যাপারে আমাকে গ্রিন সিগন্যাল না দেয়, আমি ওরে সোজা গেস্ট হাউসে নিয়ে আমার রুমের বাথরুমে আটকে রাখব আমাদের অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
‘আরে বস, আপনি দেখি বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছেন,’ বলে হেসে উঠল টমি। ‘আপনি তানভীর স্যারকে কল করেন। কোনো সমস্যা নাই।’
‘আচ্ছা আগে বলেন টমি সাহেব, কী খবর আছে আপনার কাছে?’ বলে শারিয়ার হেসে উঠল। ‘আপনারে পরেও বাইন্ধা রাখা যাবে।’ সবাই হেসে উঠল। টমিও হাসল তবে তার হাসি অন্যদের তুলনায় খানিকটা মলিন। ‘আচ্ছা এখানে না, এই রাস্তার ওপরে আলোচনার দরকার নেই। আমরা গেস্ট হাউসে যেতে যেতে কথা বলব। যত সময় বাঁচানো যায় ততই ভালো। চলো সবাই,’ বলে ওরা রাস্তা পার হয়ে সেখানে চলে এলো যেখানে সুমন তার সঙ্গে নিয়ে আসা মাইক্রোটা রেখে এসেছে।
শারিয়ারসহ সবাইকে গাড়িটার সামনে নিয়ে এসে সে দেখাল। ‘বস এইটাই পেলাম। দারুন না?’ নীল রঙের ছোটো মাইক্রোটা দেখিয়ে সে বলে উঠল। ‘নম্বর প্লেট একদম ভুয়া, কারো বাপেরও সাধ্য নাই ধরার।’
‘দারুণ না মোটেই, তবে কাজ চলবে মনে হচ্ছে, শারিয়ার মাইক্রোর স্লাইডিং ডোরটা ঠেলে উঠে পড়ল ভেতরে। ওর সঙ্গে উঠল টমি। আর সুমন ড্রাইভিং সিটে, তার পাশে ভুবন।
‘বলেন টমি সর্দার, কী আছে আপনার তথ্যের ভাণ্ডারে?’
‘বস, প্রথমে দুপুরবেলা আপনার করা প্রশ্নটা দিয়ে শুরু করি,’ টমি বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে শুরু করল। শারিয়ারের একদম মনে নেই দুপুরবেলা সে কী প্রশ্ন করেছিল। ‘কোনো প্রশ্ন?’
‘প্রফেসর সুলতানের সঙ্গে অথরিটির কোনো ব্যাপারে সমস্যা হয়েছিল? কোনো বিষয়ে সমস্যা হওয়ার পর তার আর্কিওলজিস্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।’
‘সেটা কী জানা গেছে?’ সামনে থেকে ভুবন জানতে চাইল।
‘নাহ অনেক চেষ্টা করেও সেটা জানা যায়নি, কিন্তু সেখানেই তো মজা?’ টমি অকারণে নাটকীয়তা করার চেষ্টা করছে তবে, শারিয়ার অনুমান করল এটা সম্ভবত ছেলেটার অভ্যাস। ‘বিষয়টা কীভাবে জানতে পারলাম সেটা বলি। প্রথমে আমি অনলাইনে চেষ্টা করি নিজের অথরাইজড আইডি থেকে নির্দিষ্ট কেস ফাইলটাকে এক্সেস করতে। কারণ আমি যতটুকু জানি ডিজিটাইজড প্রসেসে আর্কিওলজি, মানে প্রত্নতত্ত্বের বেশিরভাগ ফাইলই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাজেই অথরাইজড আইডি দিয়ে চেষ্টা করলে ফাইলগুলোতে অ্যাক্সেস করতে না পারার কোনো কারণ নেই। কিন্তু,’ বলে টমি আবারও হেভি একটা ভাব নিতে যাচ্ছিল কিন্তু শারিয়ারের চোখে চোখ পড়াতে সে কঠিন দৃষ্টি দেখে চোখ সরিয়ে নিল। ‘আমি ওদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এক্সেস করতে পারলাম। সেখানে সব ফাইলই আছে কিন্তু প্রফেসর সুলতানের কোনো ফাইল নেই। এরপরে আরেকটা মিডিয়াম থেকে চেষ্টা করে বহু ঘাঁটাঘাঁটি করার পর প্রফেসরের লাইসেন্স বাতিল করার ফাইলটা পেলাম। কিন্তু কেন তা করা হয়েছে তার কোনো ডিটেইল নেই।
‘এরপরে আমি একজনকে ঢাকায় ওদের ওখানে পাঠালাম। ওরা জানাল ওদের অনেক কেস সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় হ্যান্ডেল করে। তাই এমনও হতে পারে সেকশন পরিবর্তন হওয়ার পর হয়তো সেটা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। এবার পাশা স্যারের স্পেশাল রিকোমেন্ডেশনে একজনকে পাঠানো হলো ওখানে। ওখানে গিয়ে বহু চেষ্টা করেও এই রিলেটেড কোনো ফাইল পাওয়া গেল না। এর মানে, না প্রত্নতত্ব বিভাগে না সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ে এরকম কোনো ফাইল আছে। এর মানে কী দাঁড়াল?
‘এর মানে দাঁড়াল, হয় অথরিটি অথবা এর ভেতরের কেউ অথবা বাইরে থেকে কেউ না কেউ কলকাঠি নেড়ে ফাইলটাকে রেকর্ড থেকে মুছে দিয়েছে,’ বলে শারিয়ার ভুবনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল। ‘ভুবন কেসটাকে আসলে সাদা চোখে প্রথমে যেরকম মনে হচ্ছে আদতে সেটা নয়। এর ভেতরে আরো অনেক অনেক ম্যাটেরিয়াল আছে।’
‘বস একটা ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করো, যদি প্রফেসরের কেসটাকে একটা মই মনে করি আমরা, এই মইয়ের একট বড়ো মিসিং ধাপ হলো এই ফাইল গায়েব,’ বলে সে সামনের সিট থেকে একবার পেছন ফিরে বলে উঠল। ‘কেন জানি আমার ফিলিং হচ্ছে যে, এই মিসিং ধাপটাকে পূরণ করতে পারে একমাত্র ডক্টর শশী। আর সে-কারণেই সম্ভবত সে অপহৃত হয়েছে।’
শারিয়ার চিন্তিত মুখে ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে নেমে আসা নিজের চোখা গোঁফে হাত বুলাচ্ছে। ‘তবুও একটা ব্যাপার মিলছে না,’ বলে সে সামনে সুমনের দিকে ইশারা করে বলে উঠল। ‘এবার সুমন মিয়া, তুমি জানাও কী বের করতে পারলে? কী আছে বাউন্ডারির ওপাশে?’
‘ওখানেও গরম খবর আছে বস,’ সুমন সামনে থেকে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে উঠল। ‘তোমরা তো জানোই ওই জায়গাটা একজনের পারিবারিক সম্পত্তি। ওটা মূলত একটা প্রাইভেট ডকইয়ার্ড। ওখানে একপাশে কন্টেইনার রাখা হয়। অন্যদিকে জাহাজ ভাঙার কাজ চলে। কাজেই জায়গাটা খুব একটা সুবিধার না। কারণ কন্টেইনার রাখার অংশটুকু মোটামুটি সিকিউরড হলেও যেদিক থেকে জাহাজ ভাঙার কাজ চলে সেদিকটা আসলে একেবারেই খোলা। এই হলো জায়গা। আর মালিকের ব্যাপারে যদি বলি তবে ওটা একটা পারিবারিক ব্যবসার অংশ। ওখানে মালিকপক্ষ তাদের নিজেদের মতো লোককে, সোজা কথায় বলতে গেলে শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনকে দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে। ওখানে ওরাই সব নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই বুঝতেই পারছো। এরা হলো হিংস্র ধরনের মানুষ।’
শারিয়ার ডানহিলের প্যাকেট বের করে নিজে ধরাতে ধরাতে একটা এগিয়ে দিল ভুবনের দিকে। টমির দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, ‘আপনি কি….?’
‘না, বস আমি খাই না,’ বলে সে একটু কাঁচুমাচু হয়ে বলে উঠল। ‘বস, তানভীর বস আমাকে তুই করে ডাকে। আপনি অন্তত তুমি করে না ডাকলে কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে।’
‘হা-হা,’ জোরে হেসে উঠল শারিয়ার। ‘ঠিক আছে। সুমন এরপরে বলো। যে খবরের জন্য বলেছিলাম সেটার ব্যাপারে কিছু কী জানা গেছে?’
‘বস, তোমাকে একটু বলে নেই। এসব ডকইয়ার্ডগুলো হলো ক্রাইম আর ড্রাগের আখড়া। কারণ আগেই বলেছি এসব জায়গায় মালিকদের চেয়ে অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ন্ত্রণ থাকে অনেক বেশি। যে কারণ এসব জায়গায় আমাদের ইনফরমার থাকেই। কিন্তু অনফরচুনেটলি এখানে আমার নিজের কোনো ইনফরমার ছিল না। আমার এক ছোটো ভাই আছে পুলিশে, ওর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি ওর খুব কাছের একজন কাজ করে ওখানে। তো ওই ছোটো ভাইয়ের সঙ্গে আমি গেলাম তার সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে লোকটার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হলো। সে ওখানে বসেই বেশ খোঁজখবর নিল। তারপর বলল গত কয়েকদিনে ওখানে তেমন কিছু ঘটেনি। তবে একটা ব্যাপার সে জানাল যেদিন বৃষ্টি হয় তার পরের দিন বেশ কিছু কন্টেইনারের কনসাইনমেন্ট ছিল ওখানে। ওদের অ্যাসোসিয়েশনের নেতাগোছের একজন প্রায় কোনো কারণ ছাড়াই সেটা বাতিল করে। এটাও নাকি তেমন কোনো সমস্যা নয়। কারণ এরকম নাকি প্রায়ই হয়। কিন্তু সে খবর নিয়ে জানতে পারে এর আগের দিন থেকে ওই জায়গাটুকু নাকি রীতিমতো লকডাউন করে রেখেছে তার লোকেরা এবং ওখানে নাকি বেশ কিছু বাইরের লোকজনের যাতায়াত হচ্ছে বিগত কয়েকদিন ধরে। এমনকি তাদের কাছেও ব্যাপারটা বেশ অস্বাভাবিক লেগেছে।’
‘আচ্ছা শুনে যেটা মনে হচ্ছে কিছু হতে পারে আবার নাও পারে। তবে যাচাই করে দেখতে তো আর কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমার বিশ্বাস ওই জায়গায় কিছু না কিছু ঘাপলা তো আছেই তা-না হলে ডক্টর শশীকে অপহরণ করে ওদিক দিয়ে নিয়ে যেত না ওরা। কারণ সহজ পথ ছেড়ে এত ঘুরবে কেন?’ গোঁফে হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠল শারিয়ার।
‘এই সামনে রাখো, রাখো,’ হঠাৎ ভুবন ইশারা করল সুমনকে গাড়ি থামানোর জন্য। ‘বস,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে ফিরে বলে উঠল, ‘আমার বাসা পাশের গলিতে। তোমরা খানিক অপেক্ষা করো। আমি যাব আর আসব,’ বলে সে চট করে মাইক্রো থেকে নেমে গেল।
‘ভুবন স্যার আসতে আসতে আমি একটা জিনিস দেখাই তোমাদের,’ বলে টমি তার ল্যাপটপ বের করে শারিয়ারকে ইশারা করল। ল্যাপটপে একটা সফটওয়্যার ওপেন করে শারিয়ারকে দেখাল। ‘এটা অনেকটা গুগল আর্থের কাছাকাছি একটা জিনিস। সেইম জিনিসটা চাইলে মোবাইলে অ্যাপের মতোও ব্যবহার করা যাবে। সুমন ভাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী আমি বাউন্ডারির ওপাশে পুরো জায়গাটাকে এখান থেকে মার্ক করে আলাদা একটা ম্যাপের স্লটে ওপেন করেছি। এখানে দেখো পরের জায়গাটা দেখা যাচ্ছে,’ বলে সে শারিয়ারকে জায়গাটার একটা থ্রিডি ইমেজের মতো ভিউ দেখাল। ‘হয়তো ভাবছেন এসব খুব কঠিন কাজ ব্যাপারটা আসলে একেবারেই সহজ। আমি গাড়িতে আসতে আসতেই করে ফেলেছি। ‘আসলে এসব সামান্য ব্যাপার আমার জন্য, বলে সে আরো কিছু আত্মম্ভরি কথাবার্তা যোগ করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শারিয়ার মৃদু ধমক দিল তাকে।
‘টমি, কাজের কথা…’
‘ওকে ওকে বস,’ বলে সে পুরো থ্রিডি মডেলটা আবারও ঘুরিয়ে দেখাল। ‘একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করো। তাহলেই পুরো জায়গাটার ব্যাপারে আমরা একটা সম্যক ধারণা পেয়ে যাব। এই জায়গাটার ব্যপ্তি বিশাল হলেও পুরোটা আমাদের দরকার নেই। জায়গাটাতে প্রবেশ করার তিনটে পথ আছে। একটা জলপথে, ওটা বাদ। এরপরে এই দেখো এটা বাউন্ডারির পেছন দিক দিয়ে এখানে বিরাট একটা গেট আছে। আর এখানে মূল রাস্তা থেকে প্রবেশ পথ ধরে। এখানেও বিরাট একটা গেট আছে। আর বাকি রইল আকাশপথ। আচ্ছা তোমরা কোনোদিক দিয়ে ওখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছো?’
‘তুমি যেগুলো বললে টমি, আমরা এগুলোর কোনোটাই ব্যবহার করব না আমরা ওখানে প্রবেশ করব আমরা ভাবছি বাউন্ডারি টপকে ওখানে ঢুকব। কারণ এছাড়া অন্যদিক দিয়ে ঢুকতে গেলে হয় অনেক ঘুরতে হবে, তার ওপরে সিকিউরটির ঝামেলা তো আছেই।’
‘ভেরি গুড। তাহলে ওখান থেকে শুরু করে আমি পুরো জায়গাটার ব্যাপারে একটা সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রথমেই দেখো। যদি তুমি বাউন্ডারি দিয়ে ভেতরে ঢোক তবে দেখবে এখানে দেয়ালের ঠিক ওপাশেই বেশ অনেকটা জায়গায় পানি। তোমাদের জন্য বেটার হবে, ওখানে দেয়ালের ওপরে উঠে অনেকখানি এগিয়ে যাবে। তারপর এখানে নামবে। দুটো কারণে; এদিকটা খুবই ভালো হবে, এখানে কোনো পাহারা নেই। আর দুই, এখান থেকে তোমরা যেখানে যাবে সেই জায়গাটাও বেশ কাছে।’
‘আচ্ছা,’ শারিয়ার মনোযোগ দিয়ে দেখে পুরো জায়গাটার একটা আউটলেট মাথায় নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এত বিস্তারিত মনে রাখা তো মুশকিল।’
‘কোনো চিন্তা নেই বস, ব্যবস্থা আছে। এখানে নেমে এখান থেকে তোমরা যদি তোমারে হাতের বামে যাও তবে কন্টেইনার রাখার এলাকা গড়বে যদি ডানে যাওয়া যায় তবে আধমাইলের মতো এগোলে মূল প্রবেশপথ। আর যদি সোজা হয় তবে কোয়ার্টার মাইলের মতো এগোলে সামনে থেকে ডকইয়ার্ড এলাকা শুরু। এখন সুমন স্যারের সোর্সের তথ্য অনুযায়ী সন্দেহভাজন জায়গাটা যেখানে সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে ওখানে নেমে সেখান থেকে সোজা এগোতে হবে পাঁচশ গজের মতো, তারপর সেখান থেকে ডানে মোড় নিতে হবে। তারপর আরো আধ মাইলের মতো গেলে তবে পৌঁছে যাবে সেই অফিস এলাকাটাতে,’ বলে সে থ্রিডি মডেলে রেড মার্ক করে দেখাল জায়গাটা।’
শারিয়ার অত্যন্ত কৌতূহলের সঙ্গে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই ভুবন চলে এলো। ‘বেশি দেরি করলাম না তো?’ বলে সে সহাস্যে উঠে বসল গাড়িতে। শারিয়ার তাকিয়ে দেখল ভুবনের পরনে কালো প্যান্ট, কালো শার্টের ওপরে ধূসর জ্যাকেট। মাথায় একটা মাঙ্কি ক্যাপ ভাঁজ করে রাখা। হাতে একটা ব্যাগ।
‘পারফেক্ট,’ ভুবনের পোশাকটা দেখে খুশি হয়ে উঠেছে শারিয়ার। মনে মনে সে ভাবল প্রফেশনাল লোকের সঙ্গে কাজ করার এই এক মজা। না বললেও এরা অনেক কিছু বুঝে ফেলে। ‘সুমন, গাড়ি ছাড়ো। সোজা গেস্ট হাউস। ব্যাগে কী?’ সে কৌতূহলের সঙ্গে প্রশ্ন করল ভুবনকে।
শারিয়ারের প্রশ্ন শুনে ভুবন হেসে উঠল। ‘গেস্ট হাউসে গিয়ে দেখাচ্ছি। তুমি মজা পাবে দেখলে।
সুমন গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে আধা ঘণ্টার ভেতর চলে এলো গেস্ট হাউসে। সেখানে পৌছে সবাইকে নিয়ে নিজের কামরায় চলে এলো শারিয়ার। টমি যে প্ল্যানটা শারিয়ারকে বুঝিয়েছে সেটাই ভুবনকে বোঝাতে বলে সে তার ফাস্ট পা্যকটা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করে চলে এলো ওয়াশ রুমে। ওয়াশ রুমে এসে আগের পোশাক পালটে পরে নিল কালো প্যান্ট। কালো শার্টের ওপরে নেভি ব্লু সোয়েটার পরে সেও ভুবনের মতো মাথায় চাপিয়ে দিল কালো একটা মাঙ্কি ক্যাপ। রুমে ফিরে এসে নিজের পিস্তল, ছুরি আর ছোটো পিস্তলটা সাজিয়ে রাখল টেবিলের ওপরে।
জিনিসগুলো রেখে সবার দিকে ফিরে সে বলে উঠল, ‘আচ্ছা, এখন আমি পুরো পরিকল্পনাটা সবাইকে জানাব। আমরা এখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যাব সেই দিঘির ওখানে যেখানে কেয়ারটেকারটা খুন হয়েছে। সেখান থেকে আমি আর ভুবন সেই নৌকোটাতে করে বাউন্ডারির কাছে চলে যাব। আমরা বাউন্ডারির ভেতর দিয়ে ওখানে ঢুকে সুমনের সোর্স আর টমির মডেল অনুসরণ করে সেই সন্দেহজনক অফিস এলাকাতে অভিযান চালিয়ে বের করার চেষ্টা করব ডক্টর শশীকে ওখানে আটকে রাখা হয়েছে কি না। যদি পাই তো ভালো, না পেলে আমরা আর সেই বাউন্ডারির কাছে না গিয়ে মূল গেট দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টা করব। একারণেই আমরা বাউন্ডারির ভেতরে ঢোকার পর টমি আর সুমন তোমরা ওখান থেকে গাড়ি চালিয়ে মূল রাস্তায় উঠে সেই বাউন্ডারি এলাকার মূল গেটের কাছাকাছি এসে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবে। কারণ আমরা ওখানে অপারেশন সেরে এই মূল গেট দিয়েই বের হওয়ার চেষ্টা করব। কাজেই এখানেই তোমাদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করাটা খুব জরুরি। এখন পর্যন্ত এই হলো আমার পরিকল্পনা এখন বলো কারো কোনো প্রশ্ন আছে?’
‘ভেতরে তাহলে আমি আর তুমি যাচ্ছি?’ ভুবন জানতে চাইল।
‘হ্যাঁ,’ শারিয়ারের সংক্ষিপ্ত উত্তর।
‘বস, আমরা কী…’ সুমন কিছু একটা বলছিল কিন্তু শারিয়ার একটা হাত তুলে থামিয়ে দিল। ‘সুমন তোমার জন্য বাইরে থাকাটাই ভালো হবে। কারণ এ-অভিযান আমরা চালাচ্ছি অবৈধভাবে। কাজেই এতে নানা সমস্যা হতে পারে। আমি চাইছি তোমাকে যতটা সম্ভব ঝামেলা মুক্ত রাখতে। তারপরও কে জানে কী হয়। আর টমি তুমি গাড়িতে থাকেব সুমনের সঙ্গে। গাড়িতে বসেই তুমি কমিউনিকেশন ডিভাইসগুলোর নিয়ন্ত্রণ করবে এবং আমাদেরকে তোমার ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে গাইড করবে। বোঝা গেছে?’
‘জি, বস,’ টমি বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়ল। ‘বস যদি অভয় দেন তো একটা আইডিয়া আছে আমার,’ স্কুলের ক্লাসে পড়া ধরলে ছোটো পোলাপান যেভাবে হাত তোলে সেভাবে হাত তুলল টমি।
‘বলো,’ শারিয়ার নিজের অস্ত্রগুলো বিছানার ওপরে টাওয়াল বিছিয়ে সেটার ওপরে সাজাতে সাজাতে জানতে চাইল। ‘সভয়ে বলব নাকি অভয়ে বলব?’ টমি মৃদু হেসে জানতে চাইল।
‘সভয়ে বলেন জনাব, শারিয়ারও হেসে উঠল তার সঙ্গে। সে নিজের অস্ত্রগুলো টাওয়ালের ওপরে সাজিয়ে রেখে তার জিনিসপত্র ভুবনকে ইশারা করল বের করতে। ‘বস, আপনারা একবার ওই গ্রাউন্ডের ভেতরে ঢুকলে তো ওখানে অপারেশন চালানোটা আপনাদের জন্য যেরকম ঝামেলার হবে। আবার অন্যদিকে, ডক্টর শশীকে খোঁজা আবার তাকে পেয়ে গেলে বেরোতেও সমস্যা হবে। কারণ আপনারা কেউই ওই এলাকাটা চেনেন না।’
‘কিন্তু তোমার ওই সফটওয়্যার, যেটা আমার মোবাইলে সেট করে দিতে বলেছিলাম, শারিয়ার টমিকে কথাটা বলতে বলতে দেখতে পেলভুবন তার জিনিসপত্র বের করে সাজাতে শুরু করেছে।
‘সেটা তো আছেই,’ টমি সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলছে দেখে শারিয়ারের কাছে ভালো লাগল ব্যাপারটা। কিন্তু ভেবে দেখলাম ওটাতে দুটো প্রবলেম আছে। কারণ একে তো অন্ধকারে ওটা বের করলে অন্যদের চোখে পড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। তার ওপরে তোমরা যদি দৌড়ের ওপরে থাকো তবে ওটা দেখার সময়ই পাবে না। এই জন্যই এর একটা সমাধান আছে আমার কাছে।
টমি কথা বলতে বলতে থেমে গেছে। কিন্তু সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। ‘তোমরা যেখানে প্রবেশ করতে যাচ্ছো এর কাছেই আমরা যেহেতু অবস্থান করব কাজেই আমি চাইছি ছোটো একটা ক্যামেরা ড্রোন যদি ফ্লাই করতে পারি তবে তোমাদের নির্দেশনা তো দিতেই পারব সেই সঙ্গে যেকোনো মুভমেন্ট থেকে যেকোনো ব্যাপারে তোমাদের খুব সহজেই অ্যালার্টও করতে পারব। আর তোমাদেরকেও কিছু করতে হবে না, স্রেফ হেডসেটে আমার সঙ্গে অডিয়ো কানেকশনে থাকলেই চলবে।’
‘আইডিয়া ভালো কিন্তু এই জিনিস পাবে কোথায়?’ ভুবন নিজের ব্যাগ খুলে জিনিসপত্র বের করতে করতে প্রশ্ন করল।
‘আছে আমার নিজের কাছেই আছে। আমাকে জাস্ট অফিসে যেতে হবে একবার,’ টমির গলায় আবার পুরনো সেই বাহাদুরি ভাব ফিরে আসছে।
‘এখন আবার অফিসে যাবা?’ প্রশ্নটা টমিকে উদ্দেশ্য করলেও শারিয়ার তাকিয়ে আছে ভুবনের দিকে। ভুবন মাথা নেড়ে তার সাপোর্ট ব্যক্ত করল। ‘ঠিক আছে যাব, যদি কাজে লাগে তবে সময় আর কতই-বা লাগবে?’ বলে সে টাওয়ালের ওপরে ভুবনের রাখা জিনিসগুলো দেখে আঁতকে উঠল। ‘ওরে মাদারটোস্ট, এইগুলা কী?’
ভুবন একে একে তার ব্যাগ থেকে দুনিয়ার জিনিস বের করে সাজিয়ে রেখেছে টাওয়ালের ওপরে। শারিয়ার তো বটেই টমি আর সুমনও এগিয়ে এসেছে দেখার জন্য। ‘এইগুলা কী?’ শারিয়ার জানতে চাইল। ‘তুমি তো দেখি মিয়া পুরো যুদ্ধ বাঁধানোর আয়োজন নিয়া আসছো।’
‘আরে বস, এগুলা তো কিছুই না। আমার কালেকশনে যা আছে তার কিছুই তো আনি নাই, দেখো।’ বলে সে সারি দিয়ে সাজিয়ে রাখা জিনিসগুলো দেখাতে লাগল। ‘ম্যাগনাম থ্রি-সিক্সটি,’ বলে সে টাওয়ালের ওপর থেকে পিস্তলটা তুলে নিয়ে ম্যাগজিন লাগিয়ে লোড-আনলড করে চেক করে নিল। ‘পনেরো গুলির রাউন্ড ম্যাগজিন, আর সাইলেন্সার,’ বলে সে সাইলেন্সার আর পিস্তল হোলস্টারে রেখে দিল।
‘এটা আমার কোল্ট সেভেন্টি কিং কোবরা,’ বলে শারিয়ার নিজের পিস্তলটা তুলে দেখাল। ‘ছয় রাউন্ডের ক্লাসিক সিলিন্ডার কিন্তু এটাতে এক্সট্রা ক্লিপ আর লেজার পয়েন্টার সেট করে মেশিনে কনভার্ট করা যায়,’ বলে সে ওটাকে মেশিনে কনভার্ট করে হোলস্টারে রেখে সাইলেন্সারটাও রেখে দিল পকেটে। ‘এটা আমার লাইটওয়েট কার্বনের ছুরি, আমেরিকার মাইক্রোটেক কোম্পানির, ‘ বলে সে ছোটো কালো ফলার ছুরিটা দেখাল। ‘এটার উলটোদিকের অংশ দিয়ে তারও কাটা যাবে, ‘ বলে ওটা দেখিয়ে নিজের পায়ের গোড়ালির সঙ্গে রেখে দিল। ‘আমার আর ছোটো একটা পিস্তল আছে। কমিউনিকেশন ডিভাইস টমি দেবে।’
‘এই?’ হাসির সঙ্গে খানিকটা টিটকিরির ভঙ্গিতে বলে উঠল ভুবন। ‘এবার আমারগুলো দেখো। বলে সে ছোটো একটা পিস্তল তুলে দেখাল। ‘গ্লক পিস্তল মেল ভার্সন,’ বলে ওটাতে ক্লিপ লাগিয়ে নিজের গোড়ালির সঙ্গে আটকে নিল। এরপরে টাওয়ালের ওপর থেকে সে পাঙ্খার মতো দেখতে একটা চকচকে ফলার ছুরি দেখিয়ে বলে উঠল। ‘আমার গোত্রের বিশেষ ছুরি, এটাকে আমরা বলি হোগলা, বলে সে ছুরিটা নিজের পিঠের দিকে খাপের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখল।
‘এইটা ছুরি না তলোয়ার,’ ফোড়ন কাটার মতো বলে উঠল সুমন।
‘এইগুলা কী?’ জানতে চেয়ে টাওয়ালের ওপর থেকে গোল দেখতে পায়রার ডিমের মতো সাইজের গোল বলের মতো একটা জিনিস তুলে দেখতে লাগল টমি ‘এই রাখ,’ বলে সে বলটা টমির হাত থেকে নিয়ে সাবধানে শারিয়ারের হাতে দিয়ে দিল। ‘বস, তুমি এটা রাখো, বলে সে আরেকটা ওরকম দেখতে জিনিস তুলে দিল। ‘এগুলো হলো ছোটো স্মোক বম্ব। বেশি গণ্ডগোল দেখলে ওপরের এই জায়গাটা চেপে দিয়ে এগুলো ছুড়ে দেবে। ঝাঁঝালো ধোঁয়া বেরিয়ে এসে নাক-মুখ জ্বালিয়ে দেবে শত্রুর। তবে সাবধানে, কারণ নিজের নিশ্বাস বন্ধ রাখতে হবে।
শারিয়ার বল দুটো নিয়ে নিজের ভেতরের পকেটে রেখে দিল। ‘ওগুলো কী?’ খুবই অবাক হয়ে শারিয়ার জানতে চাইল।
ভুবন মৃদু হেসে ওঠে অনেকটা ইংরেজি ওয়াই (Y) অক্ষরের মতো দেখতে জিনিসটা তুলে দেখাল সবাইকে।
‘এটা একটা গুলতি?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করল টমি।
তার দিকে একটা আঙুল তুলে হেসে উঠল শারিয়ার। ‘একদম ঠিক। আজ রাতে আমি এটা ব্যবহার করব, পিস্তল না।’
তুমি গুলতি ব্যবহার করবে?’ সুমন প্রশ্ন করল। চেয়ারে হেলান দিয়ে হাইম ছাড়ছিল সে। ‘ওটার ফিতাটা এমন ক্যান?’
হ্যাঁ, আমি গুলতি ব্যবহার করব,’ সে শারিয়ারের দিকে দেখিয়ে বলে উঠল। ‘যেদিন তোমার সঙ্গে আমার গ্যারাজে মারামারি হলো নিঃশব্দে তোমাকে যে বারবার আঘাত করছিলাম সেটা কী ছিল জানো?’
‘এই গুলতি?’ শারিয়ার অবাক হয়ে প্রশ্ন করল। ‘এইজন্যই…’ তীব্র নিঃশব্দ ব্যথার কথা মনে হতেই সে খানিকটা শিউরে উঠল।
‘একদম,’ বল সে টাওয়ালের ওপর থেকে চামড়ার থলের মতো দেখতে একটা থলে তুলে নিয়ে মুখটা খুলে দেখাল ওটার ভেতরে রুপালি রঙের ছোটো ছোটো বল। ‘একটা গুলতি আর এই ছোটো এক ব্যাগ সাইকেলের বল দিয়ে যেকোনো জায়গায় নিঃশব্দে নরক নামিয়ে আনতে পারি আমি। আর এই গুলতিটা কী দিয়ে বানানো জানিস?’ বলে সে গুলতির কাঠের হ্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে আসা পাকানো রাবারের মতো ফিতে দুটো দেখাল। ‘কনডম দিয়ে।’
‘কী দিয়ে!’ সুমন চেয়ারে হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসল।
ভুবন হাসতে হাসতে জিনিসটাকে টেনে দেখাল আবারও। ‘কনডম পাকিয়ে। জিনিসটা হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু এটার মতো মারাত্মক জিনিস খুব কমই আছে। কাঠের এই হ্যান্ডেলের সঙ্গে দুই দিকে দুটো করে চারটে খুব ভালো কোয়ালিটির নতুন কনডম খুব ভালো করে পাকিয়ে ওটাতে বিশেষ ধরনের তেল দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তারপর আবার ওটাকে দুই হাতে বারবার ভালোভাবে পাকিয়ে একটার সঙ্গে আরেকটা আটকে দিয়ে বানানো হয় জিনিসটা। ছোটোবেলায় এগুলো দিয়ে আমরা উড়ন্ত চড়ুই পাখি থেকে শুরু করে বাদুড় পর্যন্ত ফেলে দিতে পারতাম। আর এখন বড়ো বড়ো অফিসার ফেলে দিতে পারি,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে উঠল। তার সঙ্গে হেসে উঠল সুমন আর টমি।
‘এই চলো চলো, অনেক খাজুরে আলাপ হয়েছে,’ শারিয়ার ধমকে উঠল। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
শারিয়ার ধমকে উঠতেই সবাই যার যার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে নিচে চলে এলো। সুমন নীল মাইক্রোটাকে নিয়ে আসতেই একে একে উঠে বসল সবাই ওটাতে। ‘বস, কোন দিকে?’
‘আগে অফিসে চলো, টমির ড্রোনটা নিতে হবে,’ বলে সে টমির দিকে দেখল একবার। ‘তারপর ওখান থেকে সোজা সেই দিঘির ওখানে। আজ রাতের ভেতরেই ডক্টর শশীর খবর বের করতে হবে আমাদের।