অধ্যায় তিন – সময়: ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দ
রামু, চট্টগ্রাম
সবকিছু শেষ হতে চলেছে আজ। কে জানে, হয়তো ভালোভাবে অথবা খারাপভাবে। শেষবারের মতো একবার ঘোলাটে তরলে নিজের প্রতিকৃতিটা দেখে নিল তালেব কিরান। মনে মনে মৃদু হেসে উঠল সে। সকল সর্বনাশের চূড়ান্ত হতে চলেছে আজ। কিংবা… পরবর্তী ভাবনাটা ভেবে শেষ করার আগেই পিঠে তীব্র শব্দে চাপড় খেয়ে একটু চমকে উঠল
‘হুমম হুমম,’ বলে বিশালাকায় মানুষটা আবারও একটা চাপড় বসিয়ে দিল কিরানের পিঠে। নিজের বিচিত্র ভাষায় সে বোঝাতে চাইছে, এত চিন্তার কিছু নেই। ‘সব ঠিক হয়ে যাবে,’ বিশালাকায় ফিরিঙ্গি গোমেজ নিজের বিচিত্র ভাষায় যা বোঝাতে চাইছে সেটা কিরানই বলে উঠল। বলে উঠতেই বিশালাকায় ফিরিঙ্গি কিরানের পিঠে আরো দুটো চাপড় বসিয়ে দিল। তারপর শিশুর মতো সরল হেসে থলিটা দেখিয়ে ঢোক দেওয়ার ভঙ্গি করল, সে নিজে এক ঢোক পান করতে চাইছে।
কিরান মাত্র আরকের ছোটো থলিটা মুখের সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছিল ফিরিঙ্গি গোমেজের থাবড় খেয়ে ওটা থেকে খানিকটা তরল ছলকে পড়ল ওর কাপড়ের ওপরে। আর খানিকটা গড়িয়ে পড়ল নিচে। রাগের সঙ্গে গোমেজের দিকে ফিরে তাকাল কিরান। ‘বাল ঠিক হবে,’ বলে ঢকঢক করে অনেকটা আরক গলায় ঢেলে দিতেই প্রথমে মুখ আরা গলার পেশি সেটাকে অগ্রাহ্য করে ঠেলে দিতে চাইল ওপরের দিকে, তারপর কড়া তরল সেই অগ্রাহ্যতাকে বেমালুম অস্বীকার করে দাবানলের মতো নেমে গেল নিচের দিকে। আনমনেই একটা ঢোক গিলল কিরান। ফিরিঙ্গি গোমেজের দিকে থলিটা বাড়িয়ে দিয়ে আবারও বলে উঠল, ‘নে, তুইও খা এই বালের মদ।
ফিরিঙ্গি গোমেজ কড়া চোখে কিরানের দিকে তাকিয়ে রইল এক মুহূর্ত। তারপর নিজের বিশাল দেহ নাড়িয়ে এমনভাবে খলখলিয়ে হেসে উঠল যেন কিরান খুব মজার কিছু বলেছে। তারপর গলায় আরক ঢেলে দিয়ে তার নিজের ভাষায় কিছু একটা বলে উঠল। বাংলা আর পর্তুগিজ মিশ্রণে নিজের জড়ানো জিহ্বার টানে সে যা বলল সেটা খুব অদ্ভুত শোনায়। কিরান কিছুটা বুঝতে পারলেও অন্য কারো সাধ্য নেই সেই ভাষা বোঝার। কারণ একে তো সে আসলে আধা বোবা তার ওপরে তার বাংলার ভেতরে কঠিন পর্তুগিজ টান। আর একারণেই কথার শুরুতে শব্দগুলো অদ্ভুতভাবে বেঁকে যায়। শুনতেও শোনায় খুব অদ্ভুত, যেমন ‘গালি’ হয়ে যায় ‘গেলি’, ‘নয়’ হয়ে যায় ‘নেয়’। গলায় আরক ঢেলে দিয়ে খুশি হয়ে সে আবারও শরীর দুলিয়ে হাসতে লাগল। কড়া আরকের নেশা যে তাকে বেশ ভালোভাবেই পেয়ে বসেছে কোনো সন্দেহ নেই।
আরকের থলিটা গোমেজের হাত থেকে কেড়ে নিল কিরান। পাগল আরেকটু মাতাল হলে একে সামলাবে কে। এমনিতেই এই মুহূর্তে সে জীবন-মরণ এক প্রশ্নের সম্মুখীন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে তবুও একটা পুরনো স্মৃতি কেমন যেন ভাবাতুর করে তুলল কিরানকে। স্মৃতির পটে ঝাপসা ঝলকের মতো চোখের সামনে ফুটে উঠল লাল-সাদা পোশাক পরা বাড়ি থেকে পালানো ছিপছিপে এক তরুণের অবয়ব, গর্বিত ভঙ্গিতে একটা পা তুলে দিয়েছে জাহাজের পাটাতনের ওপরে, উঁচু গ্রীবা আর গর্বিত মস্তক, জাহাজের সামনে রাখা নিশান ছাড়িয়ে দৃষ্টি চলে গেছে দিগন্তের দিকে। চোখে মুখে অস্বাভাবিক দুঃসাহস আর মনের ভেতরে বয়ে চলেছে দুর্দান্ত এক ঝংকার, পৃথিবীকে নিজের পদতলে নিয়ে আসার এক কল্পিত বাসনা।
‘হুজুর, সব তৈয়ার আছে,’ পর্দার মতো করে দেওয়া চটের আবরণ সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা এক আর্দালি বলে উঠল। ‘সকলেই আপনাদের জন্য অপেক্ষা কইরছে।’
চোখের সামনে ফুটে ওঠা সেই চিত্রটা আর্দালির কথায় এক লহমায় হারিয়ে গেল। বুকের ভেতর জমা হয়ে ওঠা দীর্ঘ নিশ্বাসটাকে আরেকটু চেপে ধরে কিরান একবার ছেলেটার উদ্দেশে হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিল সে যাচ্ছে। ছেলেটা বিদায় নিতেই গোমেজের হাত থেকে আরকের থলিটা একরকম কেড়ে নিল সে। তারপর অবশিষ্ট তরল গলায় ঢেলে থলিটা আবারও গুঁজে রাখল নিজের ঢোলা পায়জামায় বসানো কোমর বন্ধনির একপাশে।
আরকের নেশায় গোমেজ তার পর্তুগিজ ভাষায় কী কী জানি সব বকবক করছে সেগুলো না শুনে সে এসে দাঁড়াল কাঠের চিলেকোঠার সামনের অংশে। এখান থেকে কর্ণফুলির শাখা নদী বান্দু আর নাফ নদের মোহনাস্থলটা বেশ পরিষ্কার চোখে পড়ে। আর দুই নদীর কৌণিক মিলনস্থলে বিরাট খালি জায়গাটার পাশেই বিরাট এই খণ্ডলার মাঠ। খণ্ডলার মাঠের এক কিনারায় অবস্থিত এই অস্থায়ী কাঠের বাড়িটার চিলেকোঠার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো মাঠটাতে একবার চোখ বুলাতে বুলাতে অভ্যাসবসত ডাত হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙুলি মুখের কাছে উঠে এলো কিরানের। ঠোঁটের কিনারায় উঠে আসতে আসতেই বিশেষ একটা ভঙ্গিতে ভাঁজ হয়ে গেল আঙুল দুটো, বিশেষ ধরনের তেল দিয়ে পালিশ করা চোখা গোঁফের কিনারাটা বহুবারের মতো আরেকবার ঘসে দিল দুই আঙুল দিয়ে। জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও কিরান আজও নিজের প্রিয় গোঁফজোড়াকে ধরে রেখেছে পরম যত্নের সঙ্গে।
কথাটা ভাবতে ভাবতে আনমনেই সামান্য হেসে উঠল কিরান। জীবন থেকে সবই যদি হারিয়ে যায় তবে আর বেঁচে থেকে লাভ কী। যদিও এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে কঠিন মনে হচ্ছে তার কাছে। গোঁফে তা দিতে দিতে আরেকবার পুরো খণ্ডলার মাঠে চোখ বুলিয়ে নিল কিরান। খণ্ডলার বিরাট মাঠটাকে আজকে তার স্বাভাবিক আকৃতির চাইতে একটু ছোটো মনে হচ্ছে। কারণ মাঠের দুই পাশে বসানো হয়েছে বেশ কিছু অস্থায়ী স্থাপনা। সাদা চামড়ার বাবুদের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘টেন্ট’ আর ফিরিঙ্গিরা এটাকে ডাকে তাঁবু বলে। কাপড়ের এই বড়ো বড়ো অস্থায়ী স্থাপনার ভেতরে কোনোটাতে অবস্থান করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষেরা আর কোনোটাতে অবস্থান করছে বিশেষ এক প্রাণি যাদের নিয়ে আজকের এই আয়োজন। আর এই পুরো আয়োজনটাই পরিচালিত হচ্ছে কিরানের নেতৃত্বে। মাঠের দিকে তাকাতেই কিরানের দৃষ্টি চলে গেল একটা বিশেষ তাঁবুর দিকে। ওটাতেই রাখা আছে তার জীবন-মরণের সবচেয়ে বড়ো বাজি, যেটা আজ তাকে হয় সব দায় থেকে মুক্ত করবে আর না হয় ধ্বংস হবে সে। তবে আজ যা-ই ঘটুক না কেন সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত আছে সে। আসলেই কী?
‘গোমেজ, চল আমাদেরকে যেতে হবে,’ গোঁফে তা দিতে দিতে কিরান গোমেজের রক্তলাল চোখের দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলে উঠল।
আরকের নেশা গোমেজকে ভালোই ধরে বসেছে। অবশ্য ধরে বসেছে বললে ভুলই হবে। সে এরকমই থাকে সবসময়। কিরানের নির্দেশের জবাবে সে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল যাওয়ার জন্য। এমন বিরাটাকায় একজন মানুষ এরকম শিশুর মতো হতে পারে, না দেখলে ভাবাই যায় না। আর তারচেয়ে বড়ো কথা একজন পর্তুগিজ এক বাঙালির কথা এভাবে মেনে নিয়ে সর্বক্ষণ তার কথামতো চলবে, এটা আরো অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিরান তার দিকে এগোতেই সে কিরানের কোমর থেকে নিয়ে আবারও আরকের থলিটা মুখের কাছে নিয়ে যাচ্ছিল কিরান টান দিয়ে সেটা ছিনিয়ে নিল তার হাত থেকে। থলির মুখটা বেঁধে নিজের কোমরবন্ধনীতে আটকে দিয়ে গোমজকে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল।
প্রায় ছয় ফিট দীর্ঘ কিরানের চাইতেই আরো প্রায় আধ ফুটখানের বেশি উঁচু গোমেজ। কিরানের ঊরুর মতো মোটামোটা একেকটা হাত, সেই সঙ্গে বিশাল চিতানো বুক আর আধভাঙা মুখ মিলিয়ে যেকোনো নতুন মানুষের জন্য গোমেজ এক দানববিশেষ ছাড়া আর কিছু না। তবে তার চোখ দুটো একেবারে শিশুর মতো সরল। গোমেজকে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিজের কোমর থেকে একটা কিরিচ খাপসহ বের করে গোমেজের কোমরে গুঁজে দিল কিরান। ‘গোমেজ, আমরা নিচে যাব, কথা বলব। তুই একদম শান্ত থাকবি, মনে থাকবে?’ কিরান নিজের দুই হাতে গোমেজের কালচে চুলগুলো ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বলতে লাগল। একে একে সব হারিয়ে এই আধাপাগল গোমেজই তো আছে ওর। কিন্তু আজকের আলোচনায় গোমেজের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। সে কারণেই গোমেজকে শান্ত রাখা দরকার। কিরানের কথার জবাবে গোমেজ সামান্য হেসে মাথা নাড়ল। তার দৃষ্টি কিরানের কোমরে রাখা আরকের থলের দিকে।
নিজের তর্জনী তুলে এপাশ-ওপাশ করে মানা করতেই জিভ কেটে হেসে ফেলল গোমেজ। তার সঙ্গে হেসে উঠল কিরান। হেসে উঠে একবার তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে কাঠের দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখা প্রায় সাড়ে ছয় ফিট লম্বা লাঠিটা তুলে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দিল গোমেজের। লাঠিটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠল, তবে সময় হলে আমি যখন ইশারা করব তখন এটা দিয়ে…’ কথাটা শেষ না করে সে গোমেজকে ইশারায় বুঝিয়ে দিল কী করতে হবে। কারণ এই কাজ এর আগেও বহুবার করেছে তারা।
গোমেজকে ঠিকঠাক করে নিজের পরিধেয় টেনে ঠিক করে নিল কিরান। তারপর মাথার চুলে একবার হাত বুলিয়ে পরে নিল টুপিটা। গোঁফে তা দিতে দিতে গোমেজকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। কাঠের ঘর থেকে বেরিয়ে মই বেয়ে নেমে এলো নিচে। ঘরটার নিচেই খোলা বারান্দার মতো জায়গা। সেখানে ইতোমধ্যেই বেশ ভিড় জমে উঠেছে। ভিড়ের একেবারে মধ্যমণি হয়ে বসে আছে কয়েকজন মানুষ। নিজেদের ভেতরে কথা বলছিল তারা, কিরানকে দেখে চুপ হয়ে গেল সবাই। কিরান এগিয়ে যেতেই কেউ একজন একটা কাঠের কেদারা এগিয়ে দিল তার দিকে। ওটাকে টেনে নিয়ে বুক টানটান আর শিরদাঁড়া সোজা করে বসে পড়ল সে। তার কেদারার ঠিক পাশেই লাঠি হাতে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল গোমেজ।
কিরান চোখেমুখে ফুটিয়ে তুলেছে এক ধরনের অবজ্ঞার হাসি, সেই সঙ্গে যেন খানিকটা কৌতুককর ভঙ্গি। কিরানের বাবা বলত, যখন সহায় হিসেবে তোমার কিছুই নেই তখন তোমার পোশাক আর শারীরিক ভঙ্গিই হলো সবচেয়ে বড়ো বন্ধু। সেটাকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে স্রেফ শারীরিক ভঙ্গি দিয়েই বিশ্ব জয় করা সম্ভব। কথাটা মনে আসতেই বাবার স্মৃতি পলকের জন্য বাতাসের ঝাপটার মতো বয়ে গেল ওর মাথার ভেতরে। আহা, কতদিন বাবার সঙ্গে দেখা হয় না।
‘তালেব কিরান?’ কিরান কেদারায় গিয়ে বসতেই সবাই চুপ হয়ে গেছিল। কারণ সবাই আশা করেছিল কিরান কিছু একটা বলবে। কিন্তু সেও চুপ থাকাতে ওদের সামনে কেদারায় উপবিষ্টদের ভেতরে কেউ একজন সামান্য বিরক্ত হয়েই কথা বলে উঠেছে, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তোমার বক্তব্য কী?’
কথাটা শুনে নিজের মাথাটাকে সামান্য ঘুরিয়ে মুখ তুলে মানুষটার দিকে তাকাল কিরান। গিলে করা আদ্দির পাঞ্জাবি আর কোঁচানো ধুতি মানুষটার পরনে। মাথায় বিরাট একটা পাগড়ি আর গলার সোনার মালা চকচক করছে। বিশালাকায় মানুষটার হাতে লোহা কাঠের লাঠি আর মুখে লটকানো তাচ্ছিল্যের হাসি। তার হাসিটা সত্যিকারের তাচ্ছিল্যের, কিরানের হাসির মতো আলগা নয়। চাটগাঁও এলাকার সবচেয়ে বড়ো কুঠিবাড়িগুলোর একটার মালিক সরদার পাতিল শেঠ সাদা চামড়া থেকে শুরু করে দেশীয় সবাই তার কুঠিবাড়ির একচ্ছত্র ও নিয়মিত গ্রাহক। ইদানীং পাশ ব্যবসা হিসেবে ষাঁড়ের লড়াইয়ে টাকা খাটাতে শুরু করেছে সে। আর সেটার শুরুতেই বিবাদ লেগেছে কিরানের সঙ্গে। কিন্তু এত দিনে একবারও সে সুবিধে করে উঠতে পারেনি। এবার প্রথমবারের মতো সে মওকা পেয়েছে কিরানের চোদ্দটা বাজানোর। আর সেটা করতে যে লোকটা কোনো কসুর করবে না তা তার গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে।
সরদার পাতিল শেঠের দিকে তাকিয়ে কিরান একটা হাসি দিয়ে বলে উঠল, ‘কিয়ের পরিস্থিতি আর কিয়ের করণীয়? ঠিক বুঝলাম না, বলে সে কেদারায় উপবিষ্টদের দিকে চোখ বুলিয়ে নিল একবার। কিন্তু সবার চেহারায় যেরকম অভিব্যক্তি আশা করেছিল সেরকমটা না দেখে বরং কেমন জানি শত্রুভাবাপন্ন অভিব্যক্তিই বেশি চোখে পড়ল। শুধু সন্দ্বীপের লবণের কারবারি মেহরার চোখেই যেন খানিকটা ভরসা খুঁজে পেল সে। ‘আজ এই এলাকায় সবচায়া বড়ো উৎসবের দিন। আমার তো বেশ আনন্দই লাগতাছে,’ বলে সে হেসে ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু সামনের সবার অভিব্যক্তি দেখে হাসি বন্ধ হয়ে গেল তার।
‘কিরান, ফাজলামো কইরো না,’ সরদার পাতিল শেঠের পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠল। ‘আমাদেরকে বইলো না যে, পরিস্থিতি কী তুমি জানো না,’ বলে একটু থেমে মানুষটা হাতের চেটো থেকে কিছু একটা তুলে মুখে পুরে যোগ করল, ‘তোমার মতো চালাক মানুষ যে কিনা রাজা আর ফকির সবার বাড়ির হাঁড়ির খবরও জানে, ফিরিঙ্গি আর ইংরেজ দুই জাতশত্রুকে এক চৌপায়ায় বসিয়ে মদ পান করে, সে এত বড়ো খবর জানে না এটা খণ্ডলার হাটের ঘেঁয়ো কুত্তাও বিশ্বাস করবে না।’
কিরান মুখ তুলে তাকাল অসম্ভব শুকনো মানুষটার দিকে। শরীর তো নয় যেন কঙ্কাল। কিন্তু পরনের পরিচ্ছদ বেশ দামি। আর হবেই না বা কেন। বাঙ্গাল মুলুকের সেরা মসলিনের কারবারিদের একজন এই ব্রাহ্মণ পুরুত ঠাকুর। স্রেফ লাভের মুখ দেখেই সে জাত-পাতের বারোটা বাজিয়ে লুকিয়ে এই খণ্ডলার হাটের ষাঁড়ের লড়াইয়ে নাম লিখিয়েছে। এত দিন অন্য লোক দিয়ে কাজ চালালেও আজ বিশেষ পরিস্থিতিতে জাত হারানোর ভয় থাকা সত্ত্বেও ঠিক নিজেই হাজির হয়েছে বিশেষ আলোচনায়। টাকা-পয়সার সামনে জাত-পাত অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়ে।
মানুষটার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে কোনোমতে একটু হাসি জোগাড় করে কিরান কথা বলে উঠল। উপস্থিত সুধীদের সবাই হলো একেকটা হায়না। খণ্ডলার হাটে আজ লড়াই বন্ধ হলে এদের কিছুই আসবে-যাবে না। কারণ এদের অর্থের সীমা নেই। কিন্তু আজ লড়াই না হলে কিরানকে পথে বসতে হবে। তাই তাকে খেলতেও হবে খুব সাবধানে।
তাই নাকি, ধীরেন শেঠ? তাইলে এত কথা না বলে আমি যা বলি সেটা শুনেন,’ বলে সে সবার দিকে আরেকবার নজর বুলিয়ে নিল। একটাও বন্ধুভাবাপন্ন মুখ পড়ছে না। শুধু মেহরার চোখে কোনো ভাব নেই। তার দিকে তাকিয়ে একটু আশার আশ্রয় খুঁজলে কিরান। তারপর বলতে শুরু করল, ‘হ্যাঁ, আমি অস্বীকার করব না যে, পরিস্থিতির ব্যাপারে আমি জানি। বরং যা হইছে সেটা সবার আগে আমার কানেই আসছে। আরাকানরাজ যে খণ্ডলার মাঠের মেলা আর ষাঁড়ের লড়াই দুইটাই স্থগিত করছে সেইটা আমি কেন এহন সবাই জানে। তবে আপনাদের কাছে আমার একটা জিজ্ঞাসা আছে। খণ্ডলার মাঠের এই লড়াইয়ের আয়োজন মেলার শেষ দিনে কেন আমরা করি? কেন একটা বছর ধইরা এর লগে সংশ্লিষ্ট সবাই মিইলা এত অর্থ ঢাইলা আমরা এতগুলা প্রাণের অপচয় করি?’
কিরানের কথার কোনো জবাব নেই। সবাই চুপচাপ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একেকজনের চেহারায় একেক ভাব, তবে সবার চোহারায় সেই পুরনো দোদুল্যমানতা। সবারই মনে একই ভাবনা; অর্থের অপচয়, নাকি প্রাণ ক্ষয়? কোনটা মুখ্য? কারণ এই বৃহত্তর চাঁটগাঁ শাসিত আরাকানরাজের নির্দেশের বরখেলাপ মানে সব হারানো তো বটেই এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
‘কারণ আমরা যা করি,’ আগের কথার জের ধরে কিরান বলে চলল। ‘সেইটা আদতে প্রাণক্ষয় না, বরং সাধারণ মানুষের মনে প্রাণের জোয়ার আইনা দেয়। সারাটা বছর ধইরা মানুষ অপেক্ষা করে এই লড়াইয়ের। আর স্রেফ রাজদরবারের গুজব শুইনা আমরা সারাটা বছরের বিনিয়োগ আর মানুষের আনন্দ উপেক্ষা কইরা সব বন্ধ কইরা কেন বাড়ি চইলা যাব?’ এখনো সবাই চুপ। বাতাসে ভারী হয়ে ঝুলে আছে দ্বিধা আর সিদ্ধান্তহীনতার দোদুল্যমানতা।
‘আমরা ব্যবসায়ী, নিজেগো রক্ত আর ঘামের ফসল আমরা এমনে নষ্ট হইতে দেব? আপনারা সবাই বলতাছেন আরাকানরাজ খণ্ডলার মেলা আর ষাঁড়ের লড়াই দুইটাই স্থগিত করেছে। এইটা এহনও স্রেফ শোনা কথা। নাকি কোনো দাপ্তরিক ঘোষণা আসছে? কই সেই ফরমান? কোথায় সেই ঘোষণাপত্র? কেউ দেখছেন আপনারা?’
কিরানের শেষ কথাটা উচ্চারিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জটলার পেছন থেকে উড়ে এলো গোল করে মোড়ানো কিছু একটা। জিনিসটা উড়ে এসে পড়ল কিরানের একেবারে সামনে। উপস্থিত জনতার প্রায় সবার দৃষ্টি ঘুরে গেল জিনিসটা উড়ে আসার উৎসের দিকে। কাঠের চালাটার প্রবেশপথের কাছে একাধিক লাঠিয়াল সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা-চওড়া দাড়িওয়ালা একজন সুপুরুষ। আরকানের পোশাক পরনে মানুষটার। লম্বা পোশাকের প্রান্ত যেখানে হাঁটু ছুঁয়েছে তার নিচ থেকে বেরিয়ে আছে সিল্কের পায়জামার ঝুল। এক হাতে পালিশ করা কালো কাঠের লাঠি আর অন্য হাতটা এখনো শূন্যে ধরে রাখা। ওই হাতেই যে সে ক্ষণকাল আগে জিনিসটা ছুঁড়েছে যে দেখলেই বোঝা যায়।
গোল করে মোড়ানো জিনিসটা উড়ে এসে পড়তেই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার বসে ওটা তোলার জন্য হাত বাড়িয়েছিল কিরান। কিন্তু উপস্থিত মানুষটাকে দেখে একটু চমকে উঠল সে। আশপাশের মানুষদের ফিসফিসে গুঞ্জন শুনে বুঝতে পারল শুধু সে না, প্রায় সবাই চমকে উঠেছে উপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে।
‘সুবাদার চাচা, আপনে?’ কিরানের মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে গেল। সুবাদার আকরাম বেগ চাঁটগা এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী সুবাদারদের একজন। তবে কিরানের জন্য এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়, সুবাদার আকরাম বেগ তারা বাবার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও বটে। উপস্থিত জনতার ভেতরে শুধু কিরান নয়, সবারই অবাক হওয়ার পেছনে অন্যতম একটা কারণ হলো এই খণ্ডলার হাটে এই এলাকার সবচেয়ে বড়ো ষাঁড়ের লড়াইয়ে সুবাদার আকরাম বেগের ষাঁড় লড়াইয়ে নামানো হয়—এরকম একটা গুজব ভেসে বেড়ালেও সেটার সত্যতা যাচাইয়ের সাহস কারো হয়নি। কিন্তু সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এরকম একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সুবাদার নিজে হাজির হয়ে যাবে খণ্ডলার মাঠে, এটা কেউ ভাবতে পারেনি।
‘তোলো ওইটা,’ সুবাদার আকরাম বেগ এগিয়ে আসতে আসতে কিরানের দিকে তাকিয়ে লাঠি উঁচিয়ে জিনিসটা ওঠানোর নির্দেশ দিল। সে এগিয়ে আসতেই একাধিক লোক নিজেদের তেপায়া ছেড়ে উঠে দাঁড়াল এগিয়ে এসে একটা তেপায়া টেনে বসে পড়ল আকরাম বেগ।
কিরান তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জিনিসটা তুলে নিল নিজের হাতে। সামান্য ঝাড়া দিয়ে গোল করে মোড়ানো জিনিসটার এক প্রান্তে বাঁধা সুতোটা ধরে টান দিতেই খুলে গেল ওটা। স্রেফ একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েই কিরান বুঝতে পারল জিনিসটা আরাকান রাজের দাপ্তরিক ফরমানের একটা লিপিকৃত রূপ। কিরানের জন্য ওটা আসলে দাপ্তরিক ফরমান নয়, ওর ধ্বংসলিপি।
জিনিসটা অন্যদেরও চোখে পড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে ফিসফিসানি। কিরান বহুকষ্টে নিজেকে সামলালো। চোখ তুলেই দেখতে পেল আকরাম বেগ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ‘বলো ছোকরা, কি এইটা?’
‘খণ্ডলার মেলা আর ষাঁড়ের লড়াই বন্ধের লাইগা আরাকানরাজের দাপ্তরিক ফরমান,’ কিরানের এক নিশ্বাসে বলা কথাটা যেন বোমার মতো বিস্ফোরিত হলো ওর চারপাশের মানুষদের ভেতরে। জিনিসটা কী জানা মাত্রই সবার ভেতরে ফিসফিস শুরু হয়ে গেছে। এর কারণও অজানা নয়। হয়তো এই ফরমানের ফলে কিরান পথে বসবে, তবে অন্যদের ভেতরে অনেকে পথে না বসলেও অর্থের অঙ্কে ক্ষতির মাত্রাটা তাদের জন্যও একেবারে কম হবে না। তাই বাতাসে হতাশার ফিসফিসানি।
‘সবাই চুপ,’ আকরাম বেগ নিজের লাঠিটা সামান্য উঁচিয়ে ধমকে উঠতেই সবাই চুপ হয়ে গেল। ‘বলো ছোকরা, কথা বলো। সবাই বলে তালেব কিরান না কি এই এলাকার সবচেয়ে চালাক লোক, দেখি এই পরিস্থিতিতে কী সমাধান দেয় সে,’ আকরাম বেগ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিরানের দিকে।
কিরানও তাকিয়ে ছিল আকরাম বেগের দিকে। তার প্রশ্নটা শুনে আপনাতেই ওর দৃষ্টি নেমে গেল নিচের দিকে। দুবার মুখ খুলল সে, কথা বলার জন্য কিন্তু কোনো আওয়াজ বেরুলো না। কিরানের মনে পড়ে গেল আজ থেকে তিন বছর আগে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যখন সে বাড়ি ছেড়েছিল আকরাম বেগ নিজ থেকেই ওকে ডেকে নিজের নৌ-ব্যবসার হাল ধরতে বলেছিল। জল-জীবনে বিপর্যস্ত কিরান তখন আকরাম বেগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেছিল বেশ রূঢ়ভাবেই। আর আজ কিনা আবারও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সেই আকরাম বেগেরই মুখোমুখি হতে হয়েছে ওকে। হে খোদা! এ তোমার কেমন বিচার? ধর্মে অবিশ্বাসী কিরান আনমনেই ভেতরে ভেতরে বলে উঠল কথাটা। দুনিয়াবি কর্মপন্থা যখন শূন্যে অসার, স্রষ্টাই তখন আশ্রয়ের আধার।
‘শূন্য থেইকা আসে মানুষ, শূন্যে মিলাই যায়, শূন্য থেইকা ঘুইরা দাঁড়ায়, শূন্যতেই জীবন সাজায়,’ ফিসফিস করে বলা আকরাম বেগের কথাগুলো শুধু কিরানেরই কানে পৌছাল, সঙ্গে সঙ্গে ঝট করে মুখ তুলল সে। কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আকরাম বেগ আবার কথা বলে উঠল, ‘দেখা যায় এলাকার সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষটার জবান বন্ধ হইয়া গেছে,’ তার কথা শুনে এরকম বাজে পরিস্থিতিতেও হেসে উঠল অনেকে। অতি চালাক কিরানকে অপদস্ত হতে দেখে মজা পাচ্ছে অনেকে। আকরাম বেগ হাত তুলতেই আবারও সবাই থেমে গেল। ‘আমি আপনাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কারণ এখন আর স্বীকার করতে দ্বিধা নাই যে, আমিও এই হাটের লড়াইয়ে টাকা খাটাইতাম। আপনাদের যেমন সব ডুবছে আমারও তাই। তবে এখনো শেষ রক্ষা করার একটা উপায় আছে আমার কাছে।
সবাই আশায় ফিরে তাকাল তার দিকে। কিন্তু আকরাম বেগ কারো কথা না শুনে বলে চলেছে। ‘আপনারা কি কেউ জানেন কী কারণে হঠাৎ আরাকানরাজ এই খণ্ডলার হাটের লড়াই বন্ধ করার ফরমান জারি করল?’ সবাই চুপ। হয় কেউ জানে না, আর না হয় সুবাদারের সামনে ভুলভাল খবর বলে ঝাড়ি খেতে চাইছে না। ‘এই ছোকরা, তুমি জানো?’
কিরান মাথা নাড়ল। যদিও গতকাল রাতেই ওর কাছে খবর এসে পৌঁছেছে যে, আরাকানরাজ লড়াই বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কিন্তু কেন, সেই কারণ সন্ধান করার মতো সময় পায়নি কিরান।
‘সম্রাট শাহ সুজা আরাকানরাজের হাতে নিহত হইছে, সপরিবারে,’ আকরাম বেগের কথাটা যেন বোমার মতোই বিস্ফোরিত হলো সবার মাঝে। গুঞ্জন করে উঠল সবাই। একেক জন নানা প্রশ্নে জর্জরিত করতে চাইল সুবাদারকে।
‘নিজের অতিথিরে এইভাবে…?
‘আহা, সম্রাট কদিন আগেই এদিক দিয়া গেলেন, উনার…’
‘সবাই কি মারা গেছে?’
‘সুবাদার সাহেব, আপনি কি…’ পাতিল শেঠ কিংবা লবণের কারবারি কারো প্রশ্নেরই জবাব দিল না সুবাদার আকরাম বেগ। বরং নিজের লাঠি জোরে ঠুকে দিল মাটিতে। কী হইছে, কেন হইছে, কিছুই জানা যায়নি এহনও। তবে এইটা নিশ্চিত যে সম্রাট মৃত্যুবরণ করছেন। নিজের অতিথিরে নিজের আয়ত্তের ভেতরে খুন করছে আরাকানরাজ,’ শেষ কটা কথা আকরাম বেগের মুখ দিয়ে তীব্র ঘৃণার সঙ্গে বেরিয়ে এলেও সে অসম্মানজনক কিছু বলল না, কিংবা কোনো গালি দিল না।
‘তাহলে সম্রাট আওরঙ্গজেব কি…’
‘এইমুহূর্তে কিছুই বলা সম্ভব না। হয়তো মোঘলগর লগে আরাকানরাজের সংঘাত আসন্ন। হয়তো ফিরিঙ্গিরা কিংবা মগরা মিলা কিছু একটা করব। আসলে কী হবে কেউই জানে না। তবে আমি এইটা বলতে পারি, এই অবস্থায় খণ্ডালের মাঠের মেলা কিংবা লড়াইয়ের ওপরে আরাকান রাজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকব না। যে কারণে আরাকান রাজ এটা বন্ধের ঘোষণাপত্র পাঠাইছে। তবে,’ বলে সে একটা আঙুলতুলল। ‘এখানেই আমি শেষ বারের মতো একটা ঝুঁকি নিতে চাইছি। আরাকানরাজের যে অবস্থা তাতে ফরমান জারি করলেও হাটের ওপরে নিয়ন্ত্ৰণ করার মতো অবস্থা বা পরিস্থিতিতে ওরা নাও থাকতে পারে। আর এ কারণেই আমরা লড়াই জারি রাখব।’
সবাই তাকিয়ে আছে সুবাদারের দিকে। সে কী বলতে চাইছে বোঝার চেষ্টা করছে। ‘তবে সেইটা সীমিত পরিসরে। যেইখানে সূর্য মাথার ওপরে উঠলে লড়াই হতো সেইখানে এহনই আমরা লড়াই শুরু করব। শুধু বিশেষ বিশেষ ষাঁড়গুলোর ভেতরেই লড়াই হইবে। আর বেলা পড়তির আগেই লড়াই শেষ কইরা আমরা মেলার পাততাড়ি গুটায়ে ফেলব, যাতে আরাকানরাজের বন্ধের ফরমানের বাস্তবিক প্রয়োগের আগেই অন্তত সমস্ত লগ্নি করা অর্থ উইঠা আসে। মানুষও বিনোদন পায়। আর সেই সঙ্গে আপনারাও সব হারানোর হাত থেইকা বাঁচেন,’ শেষ কথাটা সে বলেছে কিরানের দিকে তাকিয়ে।
কিরান মনের গহিনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই আকরাম বেগের পরের কথাটা শুনে চমকে উঠল সে। কিন্তু এইখানে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে হইবে। কোনো প্রাণহানি হওয়া চলবে না। আর এই দায়িত্ব নিতে হইবে কিরানরে,’ বলে সে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে যোগ করল ‘কিরানরে লড়াইয়ের মাঠে থাকতে হইবে, ওরে দস্তকের ভূমিকা পালন করতে হবে,’ আকরাম বেগের কথা শেষ হতেই কোনো এক অদ্ভুত কারণে হেসে উঠল কিরানের পছনে দাঁড়ানো গোমেজ। মাটিতে দুবার লাঠি ঠুকে সে নিজের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল।
আর কিরান অনভব করল তার শুকনো গলাটা আরো শুকিয়ে খসখসে হয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে যা ঘটতে চলেছে তার চেয়ে আর্থিক ধ্বংসই ভালো ছিল। তাতে অন্তত প্রাণটা বাঁচত, এবার তো ধনে-প্রাণে দুটোতেই মরতে হবে।