অধ্যায় তেইশ – বর্তমান সময়
পিবিআই ব্যুরো, চট্টগ্রাম
মিটিং রুমের প্রবেশ দরজার বাইরে এসে বড়ো করে একবার দম নিল শারিয়ার। ঘড়ি দেখল। দুইটা চল্লিশ বাজে। গার্ডের কাছে শুনেছে মিটিং শুরু হয়েছে একটু আগেই।
মিটিং রুমের দরজার হাতলে হাত রেখে শারিয়ার অনুভব করল দুনিয়াতে আসলে সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো নিজের ইগো বিসর্জন দেওয়া। এত ভেবে লাভ নেই। দরজাটা ধরে ঠেলা দিল শারিয়ার। একহাতে নিজের ফাইল আর নোটবুকটাকে ধরে রেখে ভেতরে প্রবেশ করে মৃদু কাশি দিতেই সবাই ফিরে তাকাল ওর দিকে।
রুমের ভেতরে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পেছনে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে একটু নার্ভাস হাসি দিলো শারিয়ার। ‘সরি, লাঞ্চ করতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে গেল।
রুমটা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আর দশটা মিটিংরুম থেকে আলাদা কিছু নয়। একপাশে প্রজেক্টর থেকে শুরু করে সব ধরনের আইটি ফ্যাসিলিটি আছে। সেটাকে সামনে রেখে লম্বা একটা টেবিল। সেই টেবিলটাকে ঘিরে এই মুহূর্তে বসে আছে আট-দশ জন মানুষ। পেটমোটা ছোটোখাটো একজন মানুষ প্রজেক্টর সেট করতে ব্যস্ত। তার ঠিক পাশেই সকালের সেই স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছে রুম্পা তালুকদার, তার চেহারাতে সকালের সেই চকচকে ভাব আর নেই। খানিকটা এলোমেলো আর ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। একই অবস্থা তার টিমের বাকি মেম্বারদেরও। তবে মিটিং রুমের পরিস্থিতি দেখে শারিয়ার বুঝল ফর্মাল মিটিং এখনো শুরু হয়নি। বরং বলা চলে মিটিংয়ের প্রস্তুতি চলছে।
রুম্পা তালুকদার তার দিকে তাকিয়ে আছে। শারিয়ার মৃদু একটা হাসি দিয়ে হাতের ফাইলটা দেখাল। ‘আমি কাল রাতের ব্যাপারে ব্রিফিং দিতে এসেছিলাম,’ শারিয়ার এটুকু বলতেই তাকে হাতের ইশারায় ভেতরে প্রবেশ করল রুম্পা। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে থ্রি-কোয়ার্টার পরা মোটুকে নির্দেশনা দিতে।
শারিয়ার ভেতরে ঢুকে টেবিলের একপাশে বসে থাকা ভুবনের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
‘আরে, কী ব্যাপার, বস?’ ওকে বসতে দেখে একটা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেইক করে ভুবন সহাস্যে জানতে চাইল। শারিয়ার খেয়াল করে দেখল ওর মতোই ছেলেটার চেহারাতেও কাল রাতের ঘটনার ফলস্বরূপ বেশ কিছু কালশিটে পড়েছে। ‘তোমার চেহারা একেবারে চকচক করছে দেখা যায়। বিউটি পার্লার হয়ে এলে নাকি?’
‘এখানকার অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে বিউটি পার্লারে আমার চেয়ে বেশি যাওয়া দরকার তোমার বসের, শারিয়ার ফাইলগুলো রাখতে রাখতে ইশারায় রুম্পার দিকে দেখিয়ে বলে উঠল।
‘আরে বাদ দাও, হাতের ইশারায় ওদেরকে উড়িয়ে দিয় ভুবন বলে উঠল। ‘তুমি আসাতে আমি খুশি হয়েছি বস। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবেই না। তা ফিরে যাচ্ছ কখন? রাতের ট্রেনে নাকি প্লেনে?’
শারিয়ার ভুবনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা রহস্যের হাসি হাসল। ‘এত সহজে তোমাদের ছেড়ে ফিরছি না আমি। সিনেমাতে মাত্র ইনটারভাল হলো, মূল গল্প তো এখনো অর্ধেকের চেয়ে বেশি বাকি।’
ভুবন খুব অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই সামনে থেকে রুম্পা তালুকদার কথা বলে উঠল। ‘এক্সকিউজ মি,’ বলে সে হাতের লেজার পয়েন্টারটা দিয়ে টেবিলে টোকা মারল। সবাই তার দিকে ফিরে তাকাতেই সে বলতে শুরু করল।
‘প্রথমেই সবাইকে ধন্যবাদ জানাই আজকের ফর্মাল মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য। আমি রুম্পা তালুকদার, স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অফিসার, পিবিআই চট্টগ্রাম ব্যুরো। প্রফেসর সুলতান আবদেল হিট অ্যান্ড রান কেসের দায়িত্বরত অফিসার হিসেবে কর্মরত আছি। এখানে উপস্থিত কয়েকজন সুপিরিয়র অফিসার, যারা এই কেসের মনিটরিং এন্ড অবজারভেশন করবেন-তারা বাদে বাকিরা সবাই আমার অধীনেই কাজ করবেন,’ শেষে কথাটা বলার সময়ে সে তাকিয়ে রইল শারিয়ারের দিকে। ‘আমি প্রথমেই এখানে উপস্থিত সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। প্রথমেই আমার টিমের সাইবার ম্যাটেরিয়াল এক্সপার্ট এবং ডিজিটাইজড ফরেনসিকের এক্সপার্ট ঢাকা থেকে আসা,’ বলতেই পাশ থেকে থ্রি-কোয়ার্টার পরা পেট মোটা খানিকটা গোপাল ভাড় টাইপের চেহারার মানুষটা কাশি দিয়ে বলে উঠল, ‘ইয়ে আমি ময়মনসিংহ থেকে এসেছি গতকাল।’
‘ও আচ্ছা,’ নিজেকে দ্রুত শুধরে নিল রুম্পা। ‘অফিসার টমি পোদ্দার আমাদের সাইবার রিলেটেড সব ব্যাপার থেকে শুরু করে ফরেনসিকের ডিজিটাইজড ইস্যুগুলো নিয়ে হেল্প করবে। এছাড়া আমাদের টিমে আছে অফিসার মল্লিক সারোয়ার, তারিক জামেল, সাবরিনা সুলতানা, সুমন হাওলাদার,’ নিজের টিমের লোকদেরকে একে একে পরিচয় করিয়ে দিল সে। ‘এছাড়া আরেকজন আছে, এই মুহূর্তে সে অবস্থান করছে পতেঙ্গা রোডের সেই বাড়িতে। একজন স্পেশাল কমান্ডো অপারেটিভ আছে আমাদের সঙ্গে,’ বলে সে ভুবনকে দেখাল। ‘এক্স স্পেশাল অপস কমান্ডো অফিসার ভুবন শর্মা আমাদের ফিল্ড লেভেল অপারেশনে সাহায্য করবে,’ বলে সে চলে গেল টেবিলের সামনের দিকে। ‘এছাড়া এখানে আমাদের টিমের মনিটরিং ও অ্যাডভাইজিং সেলের পার্ট হিসেবে উপস্থিত আছেন সারোয়ার আহমেদ স্যার ও ডেইজি সুলতানা ম্যাডাম। এখন আমরা…’
রুম্পা এটুকু বলতেই শারিয়ার নিজের হাত তুলল।
শারিয়ারকে হাত তুলতে দেখে রুম্পা বলে উঠল, ‘ও সরি আমি পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গেছিলাম। এখানে আছেন স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অফিসার শারহান শাহরিয়ার।’
‘শারিয়ার,’ শারিয়ার মৃদু হাসিমুখে বলে উঠল।
‘মিস্টার শারিয়ার,’ রুম্পা চিবিয়ে বলে উঠল, ‘এই কেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ছিলেন। কিন্তু আজ সকালে উনাকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে উনি এই কেস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উনার অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন,’ বলে সে টমির দিকে ফিরে বলে উঠল, ‘টমি, তুমি প্রস্তুত?’ টমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই রুম্পা তার অফিসারদের একজনকে উদ্দেশ্য করে মাথা নাড়ল। সে রুমের লাইটগুলো অফ করে দিতেই টমি তার প্রেজেন্টেশন শুরু করল।
‘টমি আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু মূলত আমি শুরু থেকে কেসের ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করব। এই বিশেষ কেস, যেটাকে নাম দেওয়া হয়েছে প্রফেসর সুলতান আবদেল হিট অ্যান্ড রান কেস, এই কেসটার শুরু হয় একটা অ্যাক্সিডেন্টের ঘটনা দিয়ে। গত পরশু রাতে, আনুমানিক রাত একটা বা দেড়টার দিকে বৃষ্টির ভেতরে চট্টগ্রামেরই কিছু ধনী পরিবারের বখাটে ছেলেমেয়েরা লং ড্রাইভে ঘুরে বেড়ানোর সময় পতেঙ্গা রোডের এই জায়গাতে,’ ম্যাপে একটা বিন্দু দেখাল সে, ‘একজনকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলে,’ আবারও বাটন চাপতেই একটা গাড়ি ও সেটার নম্বর প্লেটের ছবি ফুটে উঠল। এরপরের একটা স্লাইডে পাঁচজন ছেলেমেয়ের ছবি দেখা গেল।
‘শুরুতে কেসটা খুবই সাধারণ একটা হিট অ্যান্ড রান কেস ছিল। ছেলেমেয়েগুলো টহল পুলিশের গাড়ির সামনে ধরা পড়ে যায় এবং এটা পরিষ্কার হয় যে, ওরা অ্যাক্সিডেন্টলিই লোকটাকে চাপা দেয়। কিন্তু ঘটনা জটিল হতে শুরু করে পরের দিন। পরদিন ভোরে পুলিশ যেখন লোকটার পরিচয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিতে যায় তখন বের হয় লোকটা কাছেই একটা বাড়ির বেইজমেন্টে গত তিন বছর ধরে লুকিয়ে ছিল এবং কিছু একটা নিয়ে গবেষণা করছিল সে। ওই বেইজমেন্টে আমাদের লোকেরা ঢুকে এগুলো দেখতে পায় এবং বেশ অবাক হয়ে যায়,’ বলে সে আরো বেশ কিছু ছবি দেখাল এবং সবাই বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মৃত মানুষটার বিস্তারিত গবেণষণার ছবি দেখে।
‘সর্বনাশ,’ একজন উপদেষ্টা শব্দ করে বলে উঠল। ‘কে এই লোক?
‘পুরো কেসটা জটিল চেহারা পেতে শুরু করে এখান থেকেই। লোকটার পরিচয় উদ্ধার করতে গিয়ে দুটো ব্যাপার ঘটে। প্রথমত, অ্যাক্সিডেন্টের পরের দিন সকালেই লোকটার ছবিসহ নিউজ ছাপা হয় কয়েকটা পত্রিকায়। ওইদিন বিকেলেই মর্গ থেকে লোকটার লাশ চুরি করার চেষ্টা চালানো হয়। অন্যদিকে আমরা ধারণা করছি লোকটার নিউজ পত্রিকাতে বেরুবার পরপরই এই ব্যাপারটা ঘটানো হয়। কারা করতে পারে সেটা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে এবং লোকটার পরিচয় নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে বের হয় আরো বড়ো চমকপ্রদ তথ্য। মানুষটা পেশায় ছিলেন একজন আর্কিওলজিস্ট। নিজের ফিল্ডের বেশ বিখ্যাত মানুষ উনি। তবে কুখ্যাত বললেও অত্যুক্তি হবে না। কারণ এই লোকটাই একের পর এক বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলাতে জড়িয়েছে সময়ে এবং এর আর্কিওলজির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে আজ থেকে কয়েক বছর আগে। এছাড়াও ধারণা করা হয় এই লোকটা আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত কিছু সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। বেইজমেন্টে তার রুমে বেশ কিছু কাগজ পাওয়া গেছে, যা থেকে পরিষ্কার ধারণা করা যায় যে, নেক্রপলিস এবং রেলিক নামে অন্তত দুটো সংগঠনের হয়ে কাজ করত সে। প্রশ্ন হলো, এই লোকটা গত তিন বছর ধরে এই বাড়ির বেইজমেন্টে লুকিয়ে আসলে করছিলটা কী?’ রুম্পা টানা কথা বলে একটু থামল। তারপর আবারও বলতে শুরু করল।
‘এরপর কী হলো?’ একজন জানতে চাইল।
‘এইখানে কেইস হিস্ট্রির ব্যাপারে একটু আলোকপাত করব আমরা। কারণ এই কেসের সিরিয়াসনেস বুঝতে হলে এই অংশটুকু জানা খুব জরুরি। প্রথমে কেসটা ছিল পুলিশের কাছে, তারপর এটার গভীরতা অনুভব করে সেটাকে দেওয়া হয় সিবিআইকে। আন্তর্জাতিক চোরাচালানিদের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর পিবিআই ঢাকা ব্যুরো থেকে বিশেষ নির্দেশে কেসটা ওদেরকে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম ব্যুরোর হাজারো অনুরোধ উপেক্ষা করে কেসটাকে তাদের অধীনে দেওয়া হয় এবং ঢাকা থেকে একজন স্পেশাল অফিসার রওয়ানা দেয় কেসটাকে নিয়ে কাজ করার উদ্দেশে। সেই সঙ্গে তাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য টেম্পোরারিভাবে গেস্ট অপারেটিভ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এক্স কমান্ডো অফিসার মিস্টার ভুবনকে। এরপরের অংশটুক আমি সেই স্পেশাল অফিসারের কাছ থেকে শুনতে চাই। মিস্টার শারিয়ার, শারিয়ারের নামের প্রথম অংশটুক রুম্পা খুব সাবধানে এবং যত্নের সঙ্গে উচ্চারণ করল।
শারিয়ার বসা অবস্থা থেকেই কথা বলে উঠল, সবাইকে অভিবাদন জানাল সে প্রথম। তারপর গতরাতে কী ঘটেছে সেটা বিস্তারিত বর্ণনা করে গেল। শারিয়ারের বর্ণনা থামল একেবারে সকালে বাসার ডাইনিং রুমে রুম্পার টিম প্রবেশ করা আগ পর্যন্ত। শেষ করে শারিয়ার বলে উঠল, ‘যা বললাম এটা হলো ঘটনা। এখানে আমার কয়েকটা বিষয় আলোচনা করার আছে,’ বলে সে টেবিল থেকে নিজের নোটবুকটা হাতে তুলে নিল।
‘আপনার কথা আমরা পরে শুনব,’ শারিয়ারের কথা রুম্পা পাত্তা দিল না, বরং সে ফিরে তাকাল ভুবনের দিকে। ‘এখানে আমি মিস্টার ভুবনের বক্তব্য আগে শুনতে চাই,’ বলে সে ভুবনের দিকে ফিরে ইশারা করল।
শারিয়ার কথা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল। ভুবন একবার রুম্পার দিকে তাকিয়ে তারপর ফিরে তাকাল শারিয়ারের দিক। সে এখনো কিছু বলতে শুরু করেনি। শারিয়ার ওকে ইশারায় কথা শুরু করতে বলল। ভুবন একবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলো।
‘আমার পরিচয় তো আপনারা পেয়েছেন। এক্স স্পেশাল অপস কমান্ডো ছিলাম। দূরপাল্লার স্নাইপিং রাইফেলে আমার স্পেশালিটি। যদিও আমি এখন আর এসব কোনোটাতেই নেই। আমি একটা প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানিতে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করি। মাসখানেক আগে পাশা স্যারের বিশেষ অনুরোধে বিজিবির সঙ্গে একটা বিশেষ অপারেশনে কাজ করেছিলাম। এরপরে গতকাল সকালে পাশা স্যার হঠাৎ বললেন পতেঙ্গা রোডে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য ঢাকা থেকে একজন স্পেশাল অফিসার আসছে। আমি যেন পিবিআই অফিসে গিয়ে এই বিশেষ ব্যাপারে ওদেরকে হেল্প করি। সে অনুযায়ী আমি গতকাল দুপুরের পর পিবিআই অফিসে গিয়ে অস্ত্র, এই কেসে কাজ করার স্পেশাল অনুমতিপত্র, আর শারিয়ার স্যারের ফোন নম্বর থেকে শুরু করে পাসকোড সব বুঝে নেই। সেই অনুযায়ী আমি বিকেলের দিকে যখন ঢাকা থেকে ট্রেন আসার কথা তখন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের দিকে রওয়ানা দিই। এমন সময় আমার মোবাইলে একটা কল আসে। সেখানে আমাকে জানানো হয়, পিবিআই থেকে নতুন নির্দেশনা এসেছে, ঢাকা থেকে ট্রেন আসতে লেট হবে, আমি যেন স্টেশনে না গিয়ে পতেঙ্গা রোডের সেই বাড়িতে চলে যাই। আমাকে যথাযথ পাসকোড বলা হয়। আমাকে যথাযথ নির্দেশনাও দেওয়া হয় এবং কলটাও এসেছিল পিবিআইয়ের টিএনটি নম্বর থেকে। কাজেই সন্দেহ করার কোনো কারণ ছিল না। তবুও আমি যেহেতু কথা বলতে বলতে স্টেশনের একেবারে কাছে চলে গেছিলাম কাজেই আমি স্টেশনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ট্রেন আসলেই লেট। কাজেই আমি পতেঙ্গা রোডের সেই বাড়িতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে ডিউটিরত পুলিশের সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকি। অনেক সময় গড়িয়ে যায় কিন্তু কেউ আসেনি। একটা সময় পরে আমি ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি শারিয়ার স্যার চট্টগ্রাম এসেছেন এবং বেশ কিছু ঝামেলা হয়ে গেছে। আমার কেন জানি সন্দেহ হয় কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। এমন সময় ওখানে আমাদের পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়। আমি বাইরে বেরুতেই আমার ওপরে হামলা হয়। একেবারেই হঠাৎ আমার ওপরে কোনো ধরনের স্প্রে করা হয়, যে কারণে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তবে খুব বেশি সময় আমি অজ্ঞান ছিলাম না। জ্ঞান ফিরে আসতেই আমি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখি গার্ড দুজন অজ্ঞান। বাড়ির ভেতরে আওয়াজ পেয়ে সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে অন্ধকারের ভেতরে একজনকে দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলি। সেই লোকটাই শারিয়ার স্যার ছিলেন। এরপর তো… ‘বাক্য সম্পূর্ণ না করে সে কাঁধ ঝাঁকাল। ‘বাকিটা আপনারা জানেন, তবুও আমি সংক্ষেপে বলছি,’ ভুবন অল্প পরিসরে সব বলে গেল সেই বেইজমেন্টে কী হয়েছিল।
ভুবনের কথা শেষ হতেই রুমের চারপাশ থেকে অনেক প্রশ্ন ভেসে আসতে থাকে। রুম্পা একটা হাত তুলে সবাইকে শান্ত থাকতে বলে। ‘আমি জানি এখানে অনেক গড়মিল আছে। আমি একে একে পুরো পরিস্থিতি সাজিয়ে বলার চেষ্টা করছি। প্রথমত, প্রফেসর সুলতান আবদেল হিট অ্যান্ড রান কেসের অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট,’ বলে সে টমির দিকে ইশারা করল। টমি একটা বাটন চাপতেই সিসি টিভি ফুটেজে একজন মানুষের চেহারা ফুটে উঠল। শারিয়ার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে।
রুম্পাও তাকিয়ে আছে শারিয়ারের দিকে। ‘আমার ধারণা মিস্টার শারিয়ার খুব ভালোভাবেই চিনতে পেরেছেন মানুষটাকে। এই মানুষটাই মিস্টার ভুবনের ছদ্মবেশে মিস্টার শারিয়ারকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল,’ আবারও প্রজেক্টরে একটা ছবি দেখা গেল। মানুষটা চট্টগ্রাম স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সিসি টিভির জুম করা ছবি। ‘শুধু তাই না, এই লোকটাই চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গ থেকে প্রফেসরের লাশ চুরির চেষ্টা করেছিল,’ আবারও লোকটার একটা ছবি ফুটে উঠল। ‘সেখানে পরিষ্কার দেখা গেল মেডিকেলের বাইরে আরো দুজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে অছে এই লোক।
‘মানুষটা কে?’ কেউ একজন প্রশ্ন করল।
‘মানুষটা কে, সেটা জানার আগে আরো গুরুত্বপূর্ণ বাপার হলো এই কেসটাতে আসলে ঘটছে কী, আমরা একে একে জোড়া লাগাব এখন,’ বলে সে টমির দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। ‘একেবারে শুরু থেকে যদি শুরু করি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন প্রফেসর-যাকে নিয়ে এই কাহিনির শুরু, হঠাৎ তার দীর্ঘদিনের প্রজেক্ট নিয়ে সরকারের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধাল। তার লাইসেন্স বাতিল করা হলো। সে বছরখানেক পর স্রেফ গায়েব হয়ে গেল। এর তিন বছর পর সেই মানুষটার লাশ পাওয়া গেল নিতান্তই আকস্মিভাবে চট্টগ্রামের এক বাড়ির রাস্তার বাইরে বৃষ্টির রাতে। জানা গেল, সেই মানুষটা ওই বাড়ির বেইজমেন্টে লুকিয়ে গত তিন বছর ধরে কিছু একটা নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছিল। এই পর্যন্ত আমরা পরিষ্কার। সমস্যা দেখা দেয় এই মানুষটার সঙ্গে অন্তত দুটো বড়ো বড়ো আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত সংগঠনের সংযোগ পাবার সম্ভবানা দেখা দেয়। সেই সম্ভবানাকে আরো জোরদার করে এই মানুষটা,’ বলে সে নকল ভুবনের ছবিটা দেখাল। ‘এই লোকটা পরের দিন মর্গ থেকে লাশ চুরির চেষ্টা করে। সেটা করতে না পেরে সে ভিন্নভাবে পরিকল্পনা করে। সে কোনো না কোনোভাবে জানতে পারে, ঢাকা থেকে একজন এজেন্ট আসছে। সে সম্ভবত পিবিআইয়ের ভেতরের কারো সঙ্গে আঁতাত করে এই তথ্য বের করে নেয় এবং তার বা তাদের মাধ্যমেই সে ফোন কলটাও করায়। এই লোকই ফোন করিয়ে ভুবনকে দূরে সরিয়ে নিজে ভুবন সেজে শারিয়ারকে অপহরণ করার চেষ্টা চালায়। সেটাও করতে না পেরে সে চলে আসে সেই বাড়িতে। একদিকে গার্ডদের আহত করে অন্যদিকে,’ মেয়েটা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল আবারও শারিয়ার হাত তুলল। কিন্তু এবারও তাকে কথা বলতে না দিয়ে মেয়েটা বলে চলল।
‘আপনার জিজ্ঞাসা কিংবা ফিডব্যাক পরে নেওয়া হবে। আগে আমরা পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করে নেই,’ বলে আবারও সবার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করবে তার আগেই ভুবন কথা বলে উঠল।
‘এখানে আমার একটু কথা বলার আছে। না হলে পরিস্থিতিটা বোঝানো যাবে না,’ সে অনুমতির ধার না ধেরে সোজা বলতে লাগল। ‘যেভাবে সবাই শুধু শারিয়ার স্যারকে দোষারোপ করছে গতকালের রাতের ব্যাপারে এখানে উনাকে এতটা দোষারোপ করার কিছু নেই। আমরা দুজনেই পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। আর হ্যাঁ, দোষ যদি থেকে থাকে, ভুল যদি হয়ে থাকে তবে শারিয়ার স্যারের সঙ্গে আমারও সমান পরিমাণ দোষই আছে।’
‘মিস্টার ভুবন আমরা এখানে ব্লেইম গেম খেলছি না। আমরা এখানে একটা জটিল বিষয় রিসলভ করার চেষ্টা করছি…’
‘ম্যাডাম, আপনি এই পয়েন্টটা মিস করছেন। আমি কথা বলতে চাইছি পরিস্থিতিটা বোঝানোর জন্যই। আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝিটা হয়েছে, কারণ অন্ধকারের ভেতরে আমাদের দুজনার মাঝে এই পরিস্থিতিটা সৃষ্টি করা হয়েছে।’
রুমের সবাই তাকিয়ে আছে ভুবনের দিকে।
‘আচ্ছা,’ রুম্পা নিজের হাত তুলল। ‘ধন্যবাদ ভুবনকে, তাহলে পরিস্থিতিটা কী দাঁড়াল। এই লোকটা প্রথমে মর্গ থেকে প্রফেসরে লাশ চুরি করতে চাইল তারপর সে কেসের অপারেটিভকে অপহরণ করতে চাইল। এরপর সে দুজন অপারেটিভের মাঝে গণ্ডগোল পাকিয়ে…
‘সে চেয়েছিল আমাদের দুজনার ভেতরে গণ্ডগোল লাগানোর সুযোগে বেইজমেন্টের সেই রুমে ঢুকে কিছু একটা করতে। কিন্তু সেটা সে করতে পারেনি। কারণ সে রুমের ভেতরে ঢুকতেই মোর্শেদের জ্ঞান ফিরে আসে এবং মোর্শেদ বাইরে থেকে দরজা লক করে দেয়। এরপরে যখন আমি সেটা খুলি তখন আমার আর ভুবনের সঙ্গে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে সে,’ এইটুকু বলে শারিয়ার একটা হাত তুলল। ‘আমি স্বীকার করছি ওই সময়ে ওই রুমে দরজাটা খোলার সিদ্ধান্তটা আমার সবচেয়ে বড়ো ভুল। কিন্তু ওই মুহূর্তে আসলে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না।’
‘হ্যাঁ মিস্টার শারিয়ার, আমি এইখানে আপনার সঙ্গে একমত পোষণ করি। আপনি যদি ওই রুমটা না খুলতেন তবে লোকটা হয়তো এখন আমাদের হাতে বন্দি থাকত এবং সম্ভবত বেইজমেন্টের ওই রুমটাও অক্ষত থাকত। আপনার ছোটো একটা ভুলের কারণে পুরো ব্যাপারটাই শেষ হয়ে গেছে বলতে গেলে,’ রুম্পা শান্ত গলায় কথা বলছে। কিন্তু তার গলায় চাপা আগুন। ‘কারণ খুব অযাচিতভাবেই লোকটাকে ধরার বিরাট একটা সুযোগ এসে গেছিল আমাদের হাতে।’
শারিয়ার কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল। আনমনেই সে একবার ভুবনের দিকে তাকাল। ছেলেটা এভাবে সবার মাঝে ওকে সাপোর্ট করে ওকে কৃতজ্ঞতা-পাশে আবদ্ধ করে ফেলেছে।
‘কে এই লোক, আমাদের মাঝে থেকে এতকিছু করে ফেলল আমরা তার টিকিও ছুঁতে পারলাম না,’ উপদেষ্টাদের একজন জানতে চাইল।
‘এইবার আমি বলতে চাই,’ রুম্পার পাশ থেকে টমি বলে উঠল। বাটন চাপতেই লোকটার সবগুলো টুকরো টুকরো ছবি কোলাজ হয়ে একটা ফ্রেমে চলে এলো। তারপর সেখান থেকে চলে গেল একটা ওয়েবসাইটে। ‘এটা ইন্টারপোলের এশিয়া জোনের অপরাধীদের একটা তালিকা। এখানে এই লোকের ব্যাপারে বেশ বিশদ বলা আছে। এর নাম হুয়ান জিং। চায়না অরিজিনেটেড হলেও সে মূলত অপারেট করে থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া-মায়ানমার-ইন্ডিয়া-নেপাল এসব দেশে। এই প্রথমবারের মতো তাকে বাংলাদেশে অপারেট করতে দেখা গেল। এই লোক একজন প্রফেশনাল অ্যান্টিক হান্টার এবং কিলার। একটা সময় সে চায়নিজ আর্মিতে কমান্ডো হিসেবে কাজ করেছে। এরপরে ইন্দো-পাক যুদ্ধের পর থেকে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু কেস ফাইল হয় যে, সে যুদ্ধের সুযোগ সেসব দেশ থেকে অনেক টাকার বিনিময়ে মিলিটারি রিসোর্স ব্যবহার করে অ্যান্টিক পাচার করছিল। আর্মি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর সে অনেকদিন গায়েব ছিল। এরপর তাকে দেখা যায় এশিয়াসহ বিশ্বের বড়ো বড়ো সব অ্যান্টিক চোরাচালানির হয়ে ভাড়ায় কাজ করতে। প্রায় আট-দশটা ভাষা জানা, মিলিটারি ট্রেনিং পাওয়া এই আন্তর্জাতিক অপরাধী সেরাদেরও সেরা। তার টেকনো স্কিলও অসাধারণ। আমরা ধারণা করছি প্রফেসরের সঙ্গে রেলিক নামে যে সংস্থার কানেকশন ছিল বা নেক্রপলিস তাদের কেউ এই লোকটাকে ভাড়া করে থাকতে পারে। এ ধরনের অপরাধীদের এখনকার সময়ে বলা হয় থাকে টেকনো ক্রিমিনাল। তার টেকনো স্কিলের একটা উদাহরণ দিচ্ছি,’ বলে টমি আরেকটা বাটন চাপল।
প্রজেক্টরে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া একটা গাড়ির ছবি ফুটে উঠল। ‘এই সেই এসইউভি যেটাতে করে সে শারিয়ার স্যারকে অপহরণ করতে চেয়েছিল। এই গাড়িটা এর আগের দিন সে স্টেশন রোড থেকে চুরি করে। এক বেলায় গাড়িটাতে বুলেট প্রুফ ডিভাইডার সেট করা হয়, গ্যাস অপারেটরের ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি গাড়িটাতে একটা ছোটো জ্যামারও বসানো ছিল। যে কারণে গাড়িতে বসা অবস্থায় শারিয়ার স্যার কাউকে কল করতে পারেনি কিংবা তার কাছে কোনো কল আসেনি।’
‘তাহলে মৌসুমি আপা…’
‘সম্ভবত কোনো কারণে একটা পর্যায়ে ঝাঁকি লেগে বা কোনোভাবে জ্যামারটা ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এ-থেকে দুটো ব্যাপার প্রমাণ হয়। এক, সে একা অপারেট করছে না। দুই, সে বা তার টিমের অসাধারণ স্কিল আছে, সেই সঙ্গে রিসোর্স। তা না হলে একটা গাড়িকে এভাবে একবেলায় এতটা বদলে ফেলা, এমনকি চট্টগ্রাম শহরের সেরা ওয়ার্কশপের পক্ষেও কঠিন।’
‘এই লোক আসলে চাচ্ছেটা কী?’
‘তার চেয়ে জরুরি প্রশ্ন,’ রুম্পা একটা হাত তুলল। ‘কেসের এই পর্যায়ে আমরা যা যা জানি সব শেয়ার করা হয়েছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে এখন সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন, আমাদের নেক্সট পরিকল্পনা কী?’ বলে রুম্পা কাঁধ ঝাঁকাল। যদিও আমি কেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তবুও আমি সবার ইনপুট চাচ্ছি যেহেতু এটা একটা টিম ওয়ার্ক।’
সবাই চুপ। আবারও শারিয়ার হাত তুলল।
‘ইয়েস মিস্টার শারিয়ার, এবার আপনি বলতে পারেন।’
‘ধন্যবাদ,’ শারিয়ার। মৃদু হাসি মুখে বলে উঠল। কেন জানি ওর ভীষণ সিগারেটের তৃষ্ণা পাচ্ছে। ‘প্রথমেই আমি নিজের অবস্থানটা একটু পরিষ্কার করতে চাই। যদিও এই কেস থেকে আমাকে ডিসচার্জ করা হয়েছে এবং আমি কাল রাতের ব্যাপারে রিপোর্ট করে ফেলেছি এবং সেই রিপোর্টটা লিখিত আকারে জমা দিলেই এই কেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমার সব দায়িত্ব শেষ করে আমি ঢাকায় ফিরে যেতে পারি। কিন্তু আমি যেহেতু একটা পর্যায় পর্যন্ত কেসের সঙ্গে ছিলাম সেহেতু আমার কিছু বলার আছে। সেই সঙ্গে,’ বলে সে সবাইকে দেখল একবার। ‘যদি টিমের এবং অথরিটির আপত্তি না থাকে আমি এই টিমের অংশ হিসেবে কাজ করতে চাই,’ বলে সে একবার রুম্পার দিকে দেখল। ‘মিস রুম্পার অধীনে।’
রুম্পা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শারিয়ার বলে উঠল, ‘তবে সেটা পরের বিষয়। আমি আগে পুরো কেসটাকে যেভাবে অ্যানালিসিস করার চেষ্টা করেছি, অনেকটা সেভাবে বিষয়টা সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। এরপরে আমি কেসের সঙ্গে থাকলে থাকব, না থাকলে নেই।’
সবাই তাকিয়ে আছে শারিয়ারের দিকে। ‘যেহেতু এই কেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার মিস রুম্পা তালুকদার, সেহেতু উনি অনুমতি দিলে আমি শুরু করতে চাই।’
রুম্পা কিছু না বলে তাকিয়ে আছে শারিয়ারের দিকে। হঠাৎ এই লোকের এত ভক্তিকে সে খানিকটা সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। কিছু না বলে সে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।
‘আমি সম্প্রতি ইউরোপ থেকে একটা স্পেশাল ইনেভস্টিগেশন, ফরেনসিক ও কমান্ডো ট্রেনিং সমাপ্ত করে এসেছি। সেখানে খুব ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার শিখেছি আমি। কর্পোরেট থেকে শুরু করে অ্যাকাডেমিক জগতে এই ব্যাপারটা আগে থেকেই প্রচলিত আছে। যেটাকে বলে সোয়াট অ্যানালিসিস।’
‘SWOT—Strength, weakness, opportunities, threats,’ শারিয়ারের পাশ থেকে ভুবন বলে উঠল।
‘একদম ঠিক,’ ভুবন ব্যাপারটা জানে দেখে একটু অবাক হলেও তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানাল শারিয়ার। ‘এই সোয়াট অ্যানালিসিস ব্যাপারটা একটা সময় শুধু কর্পোরেট ও অ্যাকাডেমিক জগতে ব্যবহৃত হলেও ইদানীং ইনভেস্টিগেশন তো বটেই এমনকি সাইকোলজিক্যাল ইভালুয়েশনের জন্যেও ব্যবহার করা হয়। গতকালের ঘটনার পর আমি যখন কেসটা নিয়ে বসলাম আমিও ঠিক এই পদ্ধতিতে কেসটাকে সাজানোর চেষ্টা করেছি এবং সেখান থেকে কিছু জিনিস বের করতে পেরেছি, যেগুলো আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই,’ বলে শারিয়ার তার অডিয়েন্সের দিকে তাকাল। সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছে। এমনকি রুম্পাও ভীষণ কৌতূহলের সঙ্গে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
‘প্রথমেই আসি, স্ট্রেন্থ বা এই কেসে আমাদের শক্তি বা সামর্থ্য কী সেই বিষয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই কেসে আমাদের শক্তি খুব কম। এখানে আমাদের সবচেয়ে বড়ো শক্তি আমাদের ম্যান পাওয়ার, আমাদের অথোরিটি এবং রিসোর্স। এই কেসে একটা শক্তিশালী টিম কাজ করছে, সরকারি যেকোনো সংস্থা থেকে চাইলেই আমরা সাহায্য পাব, যেকোনো রিসোর্স চাইলেই ম্যানেজ করা সম্ভব এবং ট্রাস্ট মি আমরা এটাকেই কাজে লাগাব। এরপরে আসে উইকনেস বা দুর্বলতা। এই কেসে আমাদের সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা হলো আমাদের অজ্ঞতা। এই কেসের পুরো চিত্রটা এমনকি আজ দুপুরের এই মিটিংয়ের আগে আমরা বুঝতেই পারছিলাম না। আমার ধারণা এই মিটিংয়ের পর সেটা খানিকটা দূর হয়েছে এবং আমার বিশ্বাস সামনে আরো হবে। আমাদের আরেকটা বড়ো দুর্বলতা হলো আমাদের হাতে কোনো তথ্য নেই। প্রফেসর আসলে কে, সে কেন গুরুত্বপূর্ণ, আমরা জানি না। আমরা আসলে কী সমাধান করতে চাইছি। আমরা প্রফেসরের ব্যক্তি-জীবনের রহস্য সমাধান করতে চাইছি। নাকি তার মৃত্যুরহস্য ভেদ করতে চাইছি, নাকি তার মৃত্যুকে ঘিরে যেসব জটিলতা তৈরি হয়েছে সেগুলোর সমাধান করতে চাইছি, এটাই এখনো পরিষ্কার নয়। এরপর তিন নম্বর দুর্বলতা হলো, আমাদের শত্রু আসলে কে এবং তারা কী চায় আমরা এখনো পরিষ্কার জানি না। আর এই জায়গা থেকেই আমরা সোয়াটের পরের পয়েন্ট মানে অপরচুনিটি বা সুযোগ বাদ দিয়ে চলে যাব থ্রেট বা ঝুঁকিতে। আমি মনে করি এই কেসে আমাদের সবচেয়ে বড়ো থ্রেট বা ঝুঁকি হলো আসলে আমরা এই কেসটায় বিফল হলে কী হারাবো জানি না। দ্বিতীয়ত, এই থ্রেটকে শক্তিশালী করে তুলেছে এই কেসে আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থার ইনভলভমেন্ট থাকা। এটাই এই কেসের সবচেয়ে বড়ো ঝুঁকি, শারিয়ার টানা কথা বলে সামনে থেকে পানির গ্লাসটা তুলে নিল।
শারিয়ার পানি খাচ্ছে সামনে থেকে উপদেষ্টাদের একজন বলে উঠল, ‘আর অপরচুনিটিজ?’
‘বলছি। এবার তৃতীয় পয়েন্ট কিংবা শেষ পয়েন্টটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই,’ বলে শারিয়ার একটা আঙুল তুলল। ‘কিন্তু তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। যেহেতু এখানে ফিল্ড অপারেটেড টিমের লোকজন আছেন এবং ফরেনসিকের মানুষেরাও আছেন সেহেতু আমি আশা করি উত্তরগুলো ঠিকঠাক পাব,’ বলে সে রুম্পার দিকে তাকালে। রুম্পা সামান্য মাথা নেড়ে টমির দিকে তাকাল। টমিও মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
‘আমার প্রথম প্রশ্নটা ছিল, যে গাড়িটাতে করে আমাকে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল সেটাকে কেন্দ্র করে। সেটার জবাব আমার ধারণা আমরা পেয়ে গেছি এবং সেই লোকটা কীভাবে আমাদের বোকা বানিয়েছে এবং কীভাবে কল ব্লক করেছে সেটারও ধারণা আমরা পেয়েছি। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, আমাদের ভেতরে সমস্যা আছে। শর্ষের ভেতরে ভূত আছে,’ বলে সে কঠিন চোখে তাকাল রুমের সবার দিকে। ‘যেহেতু আমরা জানি না ইনসাইড জবটা কে করছে কাজেই সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। প্রয়োজনে পিবিআই অফিসে অভিযান চালাতে হবে। সিসি টিভি ফুটেজ চেক করতে হবে,’ বলে সে আবারও নিজের নোটবুকের দিকে তাকাল। ‘এরপরে আমার প্রশ্ন প্রফেসরকে ঘিরে। আমরা আসলে প্রফেসর সুলতান আবদেল সম্পর্কে কতটুকু জানি। সে সফল একজন আর্কিওলজিস্ট ছিল এবং একটা সময় সে বিগড়ে যায়। এগুলো জানা আছে কিন্তু আরো বিস্তারিত জানা দরকার।’
‘এখানে আমি একটু হাইলাইট করতে পারি,’ টমি পোদ্দার তার মোটা শরীরটা নেড়ে বলে উঠল। ‘প্রফেসরের বিস্তারিত বায়ো আমার এখানে আছে। খুব সংক্ষেপে বলি। প্রফেসরের বাড়ি নারায়নগঞ্জে। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে সে পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে চলে যায়। সেখানে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আর্কিওলজি ছিল তার মেজর। অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করার সময়ে সে তার সুপারভাইজারের সঙ্গে চলে যায় মিশরে। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে সে। এরপর একটা সময়ে সে এশিয়ান আর্কিওলজি নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। সেই ভিত্তিতেই নিজের দেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছে দীর্ঘদিন। এরপরে…’
‘এতকিছু আমাদের জানার দরকার নেই। আমার একটাই প্রশ্ন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যে বিষয়টা নিয়ে তার সমস্যা হয় সেটার ব্যাপারে আমি জানতে চাই, শারিয়ার না থামালে টমি বলেই যেত।
টমি একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে জবাব দিল, ‘এই বিষয়ের ওপরে তেমন কিছু নেই আমারে ডাটবেইজে।
‘প্রফেসরের পরিবার এবং এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দরকার আমার,’ বলে শারিয়ার ফিরে তাকাল বাকিদের দিকে। ‘এরপরের প্রশ্ন যেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে, সেই ছেলেমেয়েগুলো যারা প্রফেসরকে চাপা দিয়েছিল তারা কি এখনো বন্দি?’
‘হুমম, বিশেষ ক্ষমতাবলে এখনো কাস্টডিতে রাখা হয়েছে তাদের।’
‘ওদের সঙ্গে কি বিস্তারিত কথা হয়েছে,’ বলে শারিয়ার কাঁধ ঝাঁকাল। ‘আই মিন ওরা কি আসলেই….’
‘এটার জবাব আমি জানি,’ রুম্পার পাশ থেকে একজন অফিসার বলে উঠল। ‘এই কেসের শুরু থেকে আমি ছিলাম এবং আমি জানি ওদের ব্যাপারটা আসলেই অথেনটিক। ওরা আসলেই ভুল করে সেদিন বৃষ্টির ভেতরে প্রফেসরকে চাপা দেয়। তাকে ইনটেনশনালি হত্যা করার উদ্দেশ্য বা মোটিভ কোনোটাই তাদের নেই এবং প্রফেসরের অটোপসি রিপোর্টও তাই বলছে। আসলেই সে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।’
শারিয়ার এক মুহূর্ত ভাবল। ‘এরপরের প্রশ্ন, প্রফেসর যে বেইজমেন্টে থাকত সেটার দারোয়ান বা বাড়ির মালিককে কি ধরা হয়েছে। ওরা কী বলছে?’
‘বাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি। সে পরিবারসহ বিদেশ থাকে। আর আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি,’ খুব স্মার্ট ভঙ্গিতে বলে উঠল রুম্পা। ‘এই ব্যাপারে মালিকের জড়িত থাকার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেছে তা হলো, দারোয়ান ব্যাটা মালিক বিদেশ থাকার সুবাদে চুরি করে বেইজমেন্টটা ভাড়া দিয়েছিল প্রফেসরকে। প্রফেসর তাকে এক কাঁড়ি টাকা দিত প্রতি মাসে, তার ওপরে সে কোনো ঝামেলাও করত না। আর যেহেতু বেইজমেন্টে থাকত সে এবং খুব একটা বাইরেও যেত না, কাজেই জানাজানি হওয়ার কোনো সুযোগও ছিল না। কাজেই এখান থেকে খুব বেশি কিছু জানা যাবে না, কাঁধ ঝাঁকাল রুম্পা।
‘আমার এর পরের জিজ্ঞাসা, ফরেনসিকের কাছে,’ বলে সে টমির দিকে তাকাল। যদিও আমি জানি পুড়ে গেছে, কিন্তু সেই বেইজমেন্ট থেকে কি কিছু বোঝা গেছে?’
‘এটার জবাব আমি দিতে পারব।’ টমির পাশ থেকে আরেকজন অফিসার বলে উঠল, ‘ওখানে যেটা হয়েছে; আগে এক রাউন্ড কাজ করেছিলাম আমরা। প্রফেসর আবদেলের ডিটেইল স্টাডির ব্যাপারটা তো দেখেছেনই আপনারা,’ বলে সে টমি দিকে ইশারা করতেই টমি প্রফেসরের স্টাডির সেই গবেষণার দেয়াল ছবি দেখাল। সবাই আরেক রাউন্ড অবাক হলো।’ অফিসার বলে উঠল। ‘এই ছবি আর গবেষণা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিওলজি ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়েছে দেখি ওরা কী বলে। কাল রাতে আগুন লাগার পর আজ সকাল থেকে আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝতে পেরেছি ওখান থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
‘আরেকটা অন্ধ গলি,’ ভুবন বলে উঠল।
‘উপস্থিত সবার জ্ঞাতার্থে বলছি, আমি প্রশ্নগুলো করেছিলাম মূলত দুটো উদ্দেশে। উত্তরগুলো জবাব সবার জানার দরকার ছিল। অন্যদিকে এই প্রশ্নগুলোর জবাব জানাটা দরকার ছিল আমাদের সোয়াটের তৃতীয় পয়েন্ট অপরচুনিটি বা সুযোগগুলোর বোঝার জন্য। আমার কাছে মনে হয় এই কেসের যে জিনিসগুলো আমাদের ঘোলাটে ছিল সেগুলোর কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। সেই হিসেবে আমাদেরকে এখন ফোকাস করতে হবে তিনটে প্রশ্নের ওপরে। তাহলেই আমরা আমাদের সুযোগগুলো বুঝতে পারব। প্রথম প্রশ্ন, আমাদের সরকারের সঙ্গে প্রফেসরের বিরোধের কারণটা বের করতে হবে। তাহলেই প্রফেসরের হাইবারনেশন বা লুকিয়ে থাকার কারণ এবং নেক্রপলিস বা রেলিকের সঙ্গে তার সম্পর্কের ব্যাপারটা খানিকটা পরিষ্কার হবে। মানে, প্রফেসর ওখানে বসে আসলে কী করছিল সেটা বোঝা যাবে। আর সেটা বোঝা গেলে আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত এই সংস্থাগুলো কেন তার পেছনে লেগেছিল বা মৃত্যুর পরেও কেন লেগে আছে সেটা বোঝা যাবে। একটা কথা মনে রাখবেন, ওরা যে কারণেই তার পিছু লেগে থাক ওরা এখনো সেই কারণ সমাধান করতে পারেনি, তা না হলে ওরা এখনো লেগে থাকত না, প্রফেসরের লাশ চুরির চেষ্টা করতো না। এর মানে কেস এখনো আমাদের হাতে আছে, এটা আমাদের প্রথম সুযোগ।’ বলে শারিয়ার একটা আঙুল তুলল।
‘দ্বিতীয় সুযোগ, আমরা অনেক কিছুই এখন পর্যন্ত আলোচনা-পর্যালোচনা করছি। কিন্তু একটা খুব অবভিয়াস প্রশ্নের উত্তর কি আমরা জানতে পেরেছি বা জানার চেষ্টা করেছি?’ বলে সে অডিয়েন্সের দিকে তাকিয়ে রইল। ‘যে মানুষটা তিন বছর ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে কিছু একটা করছিল সেই মানুষটা ওইদিন বৃষ্টির রাতে মূল রাস্তার ওপরে যেখানে অ্যাক্সিডেন্টটা হয় সেখানে আসলে সে করছিলটা কী? এটা কি আমরা জানি?’
শেষ প্রশ্নটা শারিয়ার উচ্চারণ করছ রুম্পার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু রুম্পার মুখে কোনো জবাব নেই। বাকি সবাইও চুপ।
‘আমার ধারণা এই প্রশ্নের জবাব আমাদের জানা নেই। আমরা যদি কেসের সমাধান চাই তবে এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে জানতে হবে বা খুঁজে বের করতে হবে। এটা আমাদের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ। আমি যদি এই কেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার হতাম তবে আমি এখন যেটা করতাম সেটা অনেকটা এমন,’ বলে শারিয়ার রুম্পার দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করল। অথবা বলতে পারেন এই কেসের অফিসার রুম্পার প্রতি আমার সাজেশনটা থাকবে অনেকটা এরকম। প্রথমত, প্রফেসরের অতীত খুঁজতে হবে আমাদের, তাকে বুঝতে হবে। এই কাজে টিমের একটা অংশকে লাগিয়ে দিন। দ্বিতীয়, যে সংস্থাগুলো বা এজেন্ট বা হুয়ান নামের লোকটা, সে নিজে হোক বা টিম নিয়ে হোক অপারেট করছে। যত বড়ো সংস্থারই হাত থাক না কেন তার পেছনে, কাজ করতে হলে তাকে মুভ করতে হবে। আপনার টিমের একটা অংশ লাগিয়ে দিন রুট লেভেল থেকে এদের ব্যাপারে তথ্য খুঁজে বের করতে। লিস্টেড ইনফর্মার, পারসোনাল খবরি, টিকটিকি যার যা সোর্স আছে লাগিয়ে দিলে কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই। তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই কেস সমাধান করতে হলে এর অ্যাবসুলুট বেসিক থেকে শুরু করতে হবে,’ বলে সে তাকিয়ে রইল রুম্পার দিকে।
‘সেই স্পট থেকে যেখানে প্রফেসরের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। এই কেস সমাধান করতে হলে আপনাকে জানতে হবে কেন প্রফেসর ওই রাতে বেরিয়েছিল এবং মাঝরাতে বৃষ্টির ভেতরে ওখানে কী করছিল সে,’ বলে সে খানিকটা এগিয়ে টিমের সবার উদ্দেশে বলে উঠল। ‘আমার পরামর্শ হলো, কেস সলভ করতে হলে এক্ষুণি কাজে নামুন। এখনো সুযোগ আছে, একটু পর আর থাকবে না,’ সে নিজের হাতের স্পোর্টস ঘড়িটাতে টোকা দিয়ে বলে উঠল।
‘সময় বোমার মতোই টিকটিক করে প্রবাহিত হচ্ছে।’