মগরাজ – ১৬

অধ্যায় ষোলো – বর্তমান সময়

পতেঙ্গা রোড, চট্টগ্রাম

ব্যাপারটাকে কি ঠিক আক্রমণ বলা যায় নাকি অপহরণ?

ফোনে কথা বলতে বলতেই সচেতন হয়ে উঠল শারিয়ার। যেই-মাত্র সে জানতে পেরেছে অফিস থেকে নিয়োগ দেওয়া ভুবন নামের মানুষটা ওকে খুঁজে পায়নি, সঙ্গে সঙ্গে আড়চোখে একবার দেখে নিয়েছে ড্রাইভিং হুইলের সামনে বসা ভুবন নামের ভুয়া লোকটাকে। কিন্তু ভিউ মিররে চোখ পড়তেই ধরা পড়ে গেল সে। লোকটা ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। শারিয়ার সেদিকে তাকানোর পরেও সে দৃষ্টি সরিয়ে নিল না।

গাড়ি চলছে প্রায় সত্তর-আশি কিলোমিটার বেগে। আর লোকটা ভিউ মিররে তাকিয়ে আছে শারিয়ারের দিকে। শারিয়ার কানে মোবাইলটা ধরে আছে। ওপাশ থেকে তড়বড়িয়ে কথা বলে যাচ্ছে মৌসুমি। কিন্তু কোনো কথাই কানে ঢুকছে না শারিয়ারের। দুজনেই আয়নার ভেতর দিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহূর্ত যেন থমকে গেল।

শারিয়ারই প্রথমে সচকিত হয়ে উঠল। সে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করতেই লোকটা স্টিয়ারিং হুইলটা একপাশে ঘুরিয়ে দিল চট করে। সামনে এগোতে গিয়েও ভারসাম্য হারিয়ে শারিয়ার পড়ে গেল পেছনের সিটের একপাশে। তালগোল পাকানো শরীরটাকে একটু ঠিকঠাক করেই হোলস্টার থেকে বের করে আনল কিং কোবরা। কিন্তু পিস্তলটা বের করে এনেও সে হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করল ড্রাইভার আর প্যাসেঞ্জার সিটের মাঝখান একটা স্বচ্ছ কাচের আবরণ দেয়ালের মতো উঠে এসে দুই অংশকে বিভক্ত করে ফেলেছে। আর জিনিসটা যে সাধারণ কাচ না সেটা বোঝার জন্য আইনস্টাইন হওয়ার দরকার নেই। শারিয়ার পিস্তল তুলতেই সামনের সিট থেকে আবছাভাবে মানুষটার গলা ভেসে এলো, ‘মিস্টার শারিয়ার, নিজের ক্ষতি করতে না চাইলে চুপচাপ বসে থাকুন। রাইডটা উপভোগ করুন। আপাতত আপনার কোনো ক্ষতি করা হবে না। আমার স্রেফ কিছু তথ্য দরকার,’ মাঝখানের কাচের কারণে তার গলা অদ্ভুত শোনাচ্ছে।

জবাবে রাগের সঙ্গে সামনের কাচটাতে পিস্তলের বাঁট দিয়ে বাড়ি মারল শারিয়ার। যা ভেবেছিল তাই, একেবারেই আনব্রেকেবল এবং সম্ভবত বুলেটপ্রুফ কাচ। রাগের সঙ্গে বাড়ি মারলেও আরেকটু হলেই পিস্তলটা ওর হাত থেকে ছুটে যাচ্ছিল।

মিস্টার শারিয়ার, নিজের ক্ষতি করতে না চাইলে চুপচাপ থাকুন,’ আবারও সেই যান্ত্রিক গলা ভেসে এলো। শারিয়ার লোকটার কথা না শুনে বরং আরো অস্থির হয়ে উঠল। কী করা যায় বোঝার চেষ্টা করছে সে। গাড়ির মাঝখানের গ্লাসটা যদি আনব্রেকেবল হয়ে থাকে তবে জোরদার সম্ভাবনা যে, বাকি কাচগুলোও তাই। শারিয়ার পিস্তল তুলেও নামিয়ে নিল। সিনেমাতে যেমন দেখায় এসব গ্লাসে সেভাবে ক্রমাগত গুলি করে কাচ ভাঙার চেষ্টা করাটা অত্যন্ত বোকার মতো একটা কাজ। কারণ এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই কাচে গুলি করলে গুলি ছুটে যায় এদিক- সেদিক। কাজেই খুব জোর সম্ভাবনা থাকে যেগুলি করছে সে যদি এরকম বদ্ধ একটা জায়গায় থাকে তবে গুলি উলটা-পালটা যেকোনো দিকে ছুটে এসে গুলি যে করবে তারই ক্ষতি করতে পারে।

শারিয়ার ফোনটা আবারও তুলে নিয়ে মৌসুমিকে ইনফর্ম করার চেষ্টা করল কিন্তু অবাক হয়ে দেখল নেটওয়ার্ক নেই। এই ব্যাটা নিশ্চয় কিছু একটা করেছে।

কোনো ধরনের জ্যামার ব্যবহার করছে সে সম্ভবত। মাঝখানে কোনো কারণে জ্যামার কাজ না করাতেই শারিয়ার কল ধরতে পেরেছিল।

‘মিস্টার শারিয়ার, আমি আবারও বলছি আপনি চুপচাপ বসুন।’

শারিয়ার পিস্তল আর ফোন দুটোই আগের জায়গাতে রেখে দিয়ে ওর চারপাশটা পরখ করতে শুরু করল। আফসাসের সঙ্গে দেখল ওর ব্যাকপ্যাকটা সামনের সিটে পড়ে আছে। এখন মনে পড়ে গেল এই ব্যাটা অতিরিক্ত চাটুকারিতা করে ব্যাগটা ইচ্ছে করেই নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছিল। শারিয়ার মাথা ঠান্ডা রেখে সামনের কাচের প্রতিটি ইঞ্চি পরখ করতে শুরু করল। হঠাৎই একটা ব্যাপার খেয়াল করে সে খুশি হয়ে উঠল।

‘চুপচাপ তোর মাথা! মাদারটোস্ট,’ বলেই সে গাড়ির পেছনের সিটে শুয়ে পড়ল। তারপর শরীরটাকে কুঁকড়ে যতটা সম্ভব ছোটো করে ফেলল। তারপর যখন স্প্রিংয়ের মতো ঝট করে সোজা হলো স্টিলের পাত লাগানো বুটটা সোজা গিয়ে আছড়ে পড়ল বুলেটপ্রুফ কাচটার একটা নির্দিষ্ট জায়গায়। প্রতিক্রিয়া দেখে খুশি হয়ে উঠল শারিয়ার। আবারও লাথি মারল সে, আবারও…আবারও।

ছয়-সাতটা লাথি মেরে দম নিতে লাগল। কাচটাকে পরখ করার সময় সে দেখতে পায় কাচটা আনব্রেকেবল হলেও ওটা যেখানে গিয়ে মিশেছে সেই জায়গাটার কবজাটা খুব একটা শক্ত নয়। কাচটা ভাংগা সম্ভব না হলেও কবজাটা ছোটানো সম্ভব হতে পারে। একটু থেমেই আবারও বুট পরা পায়ে লাথি মারতে শুরু করল শারিয়ার। শক্তিশালী পায়ের শক্ত জুতোর আরো কয়েকটা লাথি কাচের গোড়ায় আছড়ে পড়তেই কাচটা কেঁপে উঠল

শারিয়ার যখন লাথি মারতে শুরু করে সামনের নকল ভুবন হেসে উঠেছিল কিন্তু কাচটা কেঁপে উঠতেই সে আর উপেক্ষা করতে পারল না। শারিয়ার যত লাথি মারছে সে বারবার পেছন ফিরে দেখছে।

কাচটা কেঁপে উঠতেই শারিয়ার আরো উৎসাহের সঙ্গে লাথি মারতে শুরু করল। কিন্তু আরো দুটো লাথি মারতেই ভুবন কিছু একটা করল, সঙ্গে সঙ্গে হিসহিস একটা শব্দের সঙ্গে গাড়ির পেছনটা ধোঁয়ায় ভরে যেতে শুরু করল।

,

প্রথমেই বেশ খানিকটা ধোঁয়া গিলে নিল অপ্রস্তুত শারিয়ার। সঙ্গে সঙ্গেই খকখক করে কেশে উঠল। কোনোমতো সোজা হয়ে বসে নিশ্বাস বন্ধ করে পকেট থেকে রুমাল বের করে ফেলল ও। তারপর সেটাকে মুখের ওপরে বেঁধে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল সামনের সিটে নকল ভুবনের মুখে ফুটে উঠেছে বত্রিশ ভোল্টের হাসি। শারিয়ারের ইতোমধ্যেই মাথা ভারী লাগতে শুরু করেছে। অনুমান করল সর্বোচ্চ ত্রিশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট সময় পাবে ও আর। এর মধ্যে কিছু করতে না পারলে সব শেষ। শরীরটাকে আবারও গুটিয়ে আনল সে। এবার আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেগে লাথি মারতে শুরু করল কবজায়। এক একটা লাথি কয়েক টনের শক্তি নিয়ে কবজার ওপরে আছড়ে পড়ছে। শেষ লাথিটা এত জোরে মারল শারিয়ারের মনে হলো যেন ওরে পায়ের গোড়ালিই ভেঙে গেছে। পা-টাকে টেনে এনে আবার লাথি মারতে যাবে তার আগেই একটা কবজা ছুটে গিয়ে কাচটা একপাশ থেকে সরে হেলে পড়ল।ংয়ে

পেছনের ধোঁয়া গলগল করে প্রবেশ করতে শুরু করল সামনের দিকে। শারিয়ার পিস্তল বের করে এনে এক হাতে মুখ ঢেকে সামনের দিকে দেখল। চোখে অন্ধকার দেখছে সে। প্রায় অন্ধকার ধোঁয়ার ভেতরে ভুবনের আকৃতিটা চোখে পড়তেই সোজা গুলি চালাল। গুলি লাগল কি লাগল না, সেটা বুঝতে পারল না। কিন্তু অনুধাবন করল তীব্র বেগে চলতে থাকা গাড়িটার ভেতরে ওর শরীর শূন্যে উঠে গেল। তারপর বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক বাড়ি খেয়ে থেমে গেল ওটা। তীব্র আঘাতে চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে এলো শারিয়ারের।

***

ঘুম থেকে জেগে উঠল নাকি অজ্ঞান অবস্থা থেকে জ্ঞান ফিরে এলো ঠিক বুঝতে পারল না শারিয়ার, তবে এটা অনুমান করতে পারল তীব্র কাশির চোটে শরীরটা বাঁকা হয়ে আসছে। কাশতে কাশতেই শোয়া থেকে সোজা হতে গিয়ে ধাম করে ওর মাথাটা বাড়ি খেল কিছু একটার সঙ্গে। চোখের সামনের অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি, তার আগেই কাশতে কাশতে অন্ধের মতো একটা হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরে অন্য হাতে ডানে-বামে নেড়ে একটু ফাঁকা মনে হতেই শরীরটাকে সেদিকে গড়িয়ে দিল শারিয়ার। মুক্ত বাতাসে জোরে জোরে দম নিতেই চোখের সামনের আঁধার আর বুকের কাশি দুটোই কমে এলো অনেকটা।

কাশির দমক খানিকটা কমে আসতেই শারিয়ার অনুভব করল ঘাসের ওপরে শুয়ে আছে সে। সামনেই একপাশে কাত হয়ে আছে গাড়িটা। একটু আগে ওর শরীর আসলে অনেকটাই গাড়ির ভেতরে ছিল তাই সোজা হওয়ার সময়ে মাথায় বাড়ি খেয়েছিল। গাড়িটাকে দেখতে পেয়েই শারিয়ার সচকিত হয়ে উঠল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ধরতে পারল একটু আগে আসলে ঘটেছিল কি। গাড়ির মাঝখানের পার্টিশনের কাচটা ভেঙে ও গুলি করাতে সম্ভবত নকল ভুবন গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িটা রাস্তা থেকে সরে এসে একাধিক গড়ান খেয়ে স্থির হয়ে যায় রাস্তার পাশে। ধোঁয়ার প্রকোপ আর আঘাতের চোটে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে শারিয়ার। খুব বেশি সময় ও অজ্ঞান ছিল না। কাজেই সেই নকল ভুবন আশপাশেই আছে।

গাড়িটার দিকে নজর রেখে খানিকটা টলতে টলতেই উঠে দাঁড়াল শারিয়ার। যতোটা সম্ভব নিজেকে স্থির করে খানিকটা কুঁজো হয়ে এগোল গাড়ির দিকে। গাড়ি থেকে এখনো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে, তবে পরিমাণে আগের চেয়ে কমে গেছে অনেকটা। নিজের অস্ত্রটা হাতে নেই, গাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে ওটার দরজার কাছেই পড়ে থাকতে দেখল ও পিস্তলটা। ওটাকে হাতে নিয়ে অন্য হাতে নিজের মুখ ঢেকে পিস্তলের নলের ডগা দিয়ে ঠেলা দিয়ে ও কাত হয়ে থাকা গাড়ির দরজাটা খুলে ফেলল। ওটাকে খুলে দিতেই এক ঝলক ধোঁয়া বেরিয়ে এলো। এক হাতে ধোঁয়া সরিয়ে ভেতরে উঁকি দিল ও। পেছনের সিটে কেউই নেই। সামনের সিটে আছে কিনা ঠিক বোঝা গেল না। শারিয়ার খুব সাবধানে গাড়িটাকে কেন্দ্রে রেখে অনেকটা বৃত্তের মতো তৈরি করে চলে এলো গাড়ির সামনে। শরীরটাকে কুঁজো করে খুব সাবধানে উঁকি দিল গাড়ির সামনের সিটে। নিজের ব্যাকপ্যাকটাকে পড়ে থাকতে দেখল ড্যাশবোর্ডের ওপরে। কিন্তু ড্রাইভিং সিটে কেউ নেই।

‘ধুর, শালা,’ আপনাতেই বকে উঠল ও। তবে পিস্তলটা হাত থেকে নামাল না। অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে খুব বেশি সময় হয়নি। লোকটা আশপাশেই কোথাও আছে। খুব বেশি দূরে সে যেতে পারেনি। গাড়ির সামনে এসে পিস্তলটাকে হাতে রেখেই পকেট থেকে মোবাইল বের করল। মৌসুমি আপাকে রিপোর্ট করতেই সে জানাল পাঁচ থেকে দশ মিনিটের ভেতরে ওর মোবাইল ট্র্যাক করে পুলিশের জিপ পাঠাচ্ছে। শারিয়ার কল কেটে দিয়ে প্রথমে গাড়ির ভেতর থেকে নিজের ব্যাকপ্যাকটা বের করে পিঠের ওপরে নিয়ে নিল। তারপর মোবাইল বের করে গাড়িটার একটা ছবি তুলল। তারপর ওটার নম্বর প্লেটের ছবি তুলে আশপাশের জায়গাটাকে খানিকটা পরখ করার জন্য মোবাইলটার টর্চ জ্বালতেই হঠাৎ একটা নড়াচড়া চোখে পড়ল। খানিকটা দূরেই যেন ঝোপের কাছে নড়ে উঠল কিছু একটা। ধোঁয়ার প্রভাবেই হোক অথবা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করাতেই হোক ওর মাথা এখনো ঘুরছে। তবুও চোখ কুঁচকে খানিকটা নিচু হয়ে সাবধানে পা বাড়াল ওদিকে। আরেকটু এগোতেই দেখল ঝোপের ভেতর থেকে একটা ছোটো সাইজের শেয়াল বের হয়ে দৌড় দিল জলার দিকে। শারিয়ার স্বস্তির হাসি হেসে উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু আগেই ঘটে গেল বেশ কয়েকটা ঘটনা।

প্রথমেই একটা মোটরবাইকের শব্দে সচকিত হয়ে উঠল ও। সম্ভবত এই শব্দেই শেয়ালটা পালিয়েছে। বাইকটাকে হাইওয়ে ধরে এগোতে দেখে খুশি হয়ে উঠতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই একটা দৃশ্য দেখে জমে গেল ও। বাইকটা যেদিক থেকে আসছে সেদিকেই রাস্তার একপাশ থেকে সাদা শার্ট পরা একটা ছায়ামূর্তি হাতে কিছু একটা ধরে উঠে আসছে। শারিয়ার পিস্তলটাকে বাগিয়ে ধরে দৌড় দিল রাস্তার দিকে। কিন্তু তার আগেই মূল রাস্তায় উঠে আসা মানুষটা হাতের ইশারায় থামিয়ে ফেলল বাইকটাকে। বাইকটা থেমে গেছে প্রায়। শারিয়ারও দৌড়ের গতি বাড়াতে শুরু করেছে কিন্তু তার আগেই নকল ভুবন হাতে ধরা জিনিসটা দিয়ে বাইকওয়ালাকে আঘাত করল।

শারিয়ার দেখতে পেল ভুবনের আঘাতে লোকটা পড়ে যেতেই সে লাফিয়ে বাইকে উঠে পড়ল। শারিয়ার প্রায় রাস্তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এমন সময় সে বাইকটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে দ্রুত স্টার্ট করে ফেলল। শারিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে পিস্তল তুলল কিন্তু ততক্ষণে নকল ভুবনের বাইকের গতি বাড়তে শুরু করেছে। যদিও গতি শ্লথ তবুও শারিয়ার যতটা সম্ভব দ্রুত দৌড়ানোর চেষ্টা করল। দৌড়াতে-দৌড়াতেই সে পিস্তল তুলল, কিন্তু ততক্ষণে বাইক ঝড়ের বেগে চলতে শুরু করেছে। আরেকটু এগিয়ে হাঁটুর ওপরে হাত রেখে হাঁপাতে লাগল, সেই সঙ্গে দেখল উলটোদিক থেকে আসা আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে প্রায় অন্ধকার হাইওয়ে।

একহাতে চোখ আড়াল করে ভালোভাবে তাকাতেই দেখতে পেল একটা পুলিশের জিপ একেবারে কাছাকাছি এসে থেমে গেছে ওর।

জিপটা থামতেই ওটা থেকে নেমে এলো দুজন। পিস্তল হাতে ওকে হাঁপাতে দেখে সোজা অস্ত্র তাক করে পিস্তল ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দিল।

‘আমি আমিই এখানে আপনাদের আসার জন্য খবর দিয়েছিলাম,’ হাঁপাতে হাঁপাতেই বলে উঠল শারিয়ার।

‘আগে অস্ত্র মাটিতে নামিয়ে হাত ওপরে তোলো,’ পরিষ্কার শান্ত গলায় নির্দেশ এলো। শারিয়ার তাই করল। শারিয়ার জানে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। খবর যেই দিয়ে থাকুক ওরা ভেরিফাই করবে আগে।

‘নিজেকে আইডেন্টিফাই করো।’

শারিয়ার নিজের ব্যাপারে বিস্তারিত বলতেই একজন এগিয়ে এসে ওর পকেট থেকে আইডিটা বের করে নিল। ওটা দেখে নিয়ে দুজনেই অস্ত্র নামিয়ে স্যালুট ঠুকল। স্যার, নির্দেশনা বলুন।’

শারিয়ার নিজের অস্ত্রটা তুলে দ্রুত এগোল জিপের দিকে। একটা মোটরসাইকেলকে এদিক দিয়ে যেতে দেখেছেন?’

‘জি স্যার,’ দুই পুলিশের ভেতরে অফিসার গোছের দেখতে একজন বলে উঠল। ‘লাল রঙের একটা জিটি হান্ড্রেড বাইক মনে হলো।’

‘পেছনে রাস্তার ওপরে দেখবেন একজন মানুষ পড়ে আছে, আপনি—’ বলে সে কনস্টেবলকে দেখাল। ‘ওই লোকটা যদি কথা বলার মতো অবস্থায় থাকে তবে তাকে জিজ্ঞেস করে বাইকের নম্বরটা জেনে আসুন। জলদি।’

‘আপনি আমার সঙ্গে আসুন,’ অফিসারকে নিয়ে জিপের কাছে চলে এলো শারিয়ার। ‘আগে সামনের কোনো ইউনিট যদি থাকে তবে তাদের বলুন সম্ভব হলে বাইকটাকে… আর না হয় কোনদিকে যাচ্ছে ট্রেস করার চেষ্টা করতে।’

তরুণ অফিসার টকিতে কথা বলতে শুরু করেছে, শারিয়ার মোবাইল বের করে এক মুহূর্ত ভাবল কল দেবে কি না, তারপর সেটা বাতিল করে দিয়ে সে রাস্তার দিকে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল কনস্টেবল দৌড়ে আসছে। ‘নম্বর পাওয়া গেছে?’

‘জি, স্যার।’

‘জলদি নম্বরটা আপনার অফিসারকে দিয়ে আপনি অ্যাম্বুলেন্সে কল করতে বলে লোকটার কাছে ফিরে যান। আমরা সামনে এগিয়ে বাইকটাকে ধরার চেষ্টা

করব।’

এরপরের কয়েক মিনিটের ভেতরে খুবই দ্রুত ওরা বাইকটার নম্বর আশপাশের চৌকি আর টহল পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে ওরা উঠে বসল জিপে। জিপ ছাড়তেই সেটা ঝড়ের বেগে চলতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে।

‘আমরা এই মুহূর্তে আছি কোথায়?’ শারিয়ার জানতে চাইল। ওর কপালের ওপরে চটচটে কিছু একটা টের পাচ্ছে ও। হাত দিতেই দেখতে পেল রক্ত। এত উত্তেজনায় টের পায়নি ও।

‘স্যার, আমরা আছি পতেঙ্গা রোডের খুব কাছাকাছি, লং রোড হাইওয়েতে,’ বলে সে শারিয়ারের দিকে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে দিল। ‘স্যার, আপনার কপাল থেকে রক্ত পড়ছে। আমরা…’

শারিয়ার রুমালটা নিয়ে কপাল মুছবে তার আগেই অফিসারের রেডিয়ো খর খর করে উঠল। রেডিয়োতে কথা বলে সে শারিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘স্যার, বাইকের ট্রেস পাওয়া গেছে।’

‘কোথায়? কী অবস্থায় আছে এখন?’ শারিয়ার শান্ত গলায় জানতে চাইল। যদিও শরীরের ভেতরে ওর রাগ চিড়বিড় করে উঠছে

‘স্যার, আমরা ধরতে পেরেছি। কারণ খুব কাছেই আছে বাইকটা,’ বলে সে বাইকটা কোনদিকে গেছে সেটা বর্ণনা দিতে শুরু করল। আর সঙ্গে সঙ্গে ভ্রু কুঁচকে উঠল শারিয়ারের।

শুনতে শুনতেই সে জানতে চাইল, ‘জায়গাটা এখান থেকে আর কতদূর?’

অফিসার ছেলেটা ঘড়ি দেখল তারপর খানিকটা চিন্তা করে বলে উঠল, ‘একেবারেই কাছে, স্যার। বড়োজোড় আর পাঁচ-ছয় মিনিট লাগবে যেতে।’

শারিয়ারের ভ্রু কুঁচকে উঠল। একটা ব্যাপার ওর মাথার ভেতরে পাক দিয়ে উঠছে কিন্তু সেটা নিয়ে বেশি ভাবার সময় পেল না বরং তার চেয়ে এসআইয়ের দেওয়া রুমালটা দিয়ে ভালেভাবে মুখ আর কপাল মুছে ওটাকে ভাঁজ করে বেঁধে ফেলল কপালের ক্ষতের ওপরে। এসআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোলস্টার থেকে নিজের পিস্তলটা বের করে আনল। জিনিসটার সঙ্গে ওর সখ্যতা গড়ে ওঠার আগেই ওকে কাজে নামতে হয়েছে। অস্ত্রের ব্যাপারে শারিয়ারের ধারণা খুব পরিষ্কার। অস্ত্র হলো বন্ধুর মতো, ঠিকঠাক কাজে লাগালে বিপদে এর চেয়ে বড়ো ভরসা আর নেই। ঠিক একইভাবে বিগড়ে গেলে বিপদে এর চেয়ে বড়ো শত্রুও আর নেই। পিস্তলটাকে বের করে হোলস্টারের সঙ্গে সংযুক্ত এক্সট্রা ক্লিপ আর গ্রিপটাকে আটকে দিল পিস্তলের সঙ্গে। এটা এখন একটা মেশিন পিস্তলের মতো কাজ করবে।

‘স্যার, আমরা প্রায় জায়গামতো চলে এসেছি, শারিয়ারের পাশ থেকে এসআই ছেলেটা বলে উঠল। কিন্তু স্যার, একটা কথা বলি?’

শারিয়ার একটু অবাক হয়ে ফিরে তাকাল ছেলেটার দিকে। ‘কী, বলেন?’

‘স্যার, এই বাড়িটার সঙ্গে মানে…’ ছেলেটার গলায় অস্বস্তি।

‘আমতা আমতা না করে কী বলতে চাচ্ছেন ঝেড়ে কাশেন,’ প্রায় ধমকে উঠল শারিয়ার। ও অস্ত্রটাকে তুলে ধরে বাড়িটার সামনে দেখে নিল আরেকবার। মেইনরোডের পাশেই, খানিকটা ভেতরে একটা বিরাট বাড়ি। বলতে গেলে প্রায় পুরো বাড়িটাই অন্ধকারে ছেয়ে আছে।

‘স্যার এই বাড়িটাতে মানে কয়েকদিন আগে এই বাড়িটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটা ঘটনা ঘটে গেছে। মানে এই বাড়িটাতে লুকিয়ে থাকা একজন মানুষ কয়েকদিন আগে এই রোডে,’ বলে সে মূল রাস্তাটা দেখাল। ‘এইখানে অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছে,’ একটানে কথাগুলো বলে সে থেমে গেল।

শারিয়ারের কুঁচকানো ভ্রু আরো একটু কুঁচকে উঠল। ব্যাপার কী! হচ্ছেটা কী আসলে এই এলাকাতে? প্রথমে স্টেশনের বাইরে থেকে ওকে অপহরণ করার চেষ্টা করল একজন তারপর আবার সেই লোক এখন বাইক নিয়ে পালিয়ে চলে এলো ঠিক সেখানে যেখানে ওর আসার কথা। এটা কীভাবে সম্ভব! আসলে ঘটছে কী?

শারিয়ারের মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না। ঘটনার পসরাগুলোকে সে একটার পর একটা ক্রমানুসারে সাজাতে পারছে না। কয়েক মুহূর্তের ভেতরে কথাগুলো ওর মাথার ভেতরে খেলে যেতেই শারিয়ার ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘আপনার নাম কী?’ বলে সে ছেলেটার বুকে লাগানো নেমপ্লেটটা দেখে বলে উঠল, ‘মঞ্জুরে মোর্শেদ,’ বলে সে নিজে জিপ থেকে নেমে ছেলেটাকেও নামার ইশারা করল। ‘আপনি কী পোস্টে আছেন পুলিশে?’

‘স্যার, এসআই,’ ছেলেটা হঠাৎ শারিয়ারের অভিব্যক্তি দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গেছে। ‘স্যার, ব্যাপারটা কী বলেন তো? আমি তো কিছুই…’

‘শোনেন, মোর্শেদ,’ বলে সে আবারও বাড়িটার আশপাশে দেখে নিল। এতটা অন্ধকার কেন এদিকে ঠিক বুঝতে পারছে না ও। ‘আপনি এই বাড়ির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে-ঘটনাটার কথা বললেন আমি ওই কেসটাই তদন্ত করতে এসেছি। কিন্তু এখানে আসলে কী হচ্ছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। এক কাজ করেন। আপনার জিপের ড্রাইভারকে বলেন আশপাশের কোনো ফোর্সে খবর দিতে, যত অল্প সময়ে সম্ভব এখানে ফোর্স পাঠাতে বলুন। নির্দেশনা দিয়ে আপনি আমার সঙ্গে চলুন…’

‘স্যার, ফোর্সের জন্য অপেক্ষা করলে ভালো হতো না,’ মোর্শেদের চোখে ভয় দেখতে পাচ্ছে শারিয়ার। কিন্তু তার প্রশ্ন শুনে চূড়ান্ত বিরক্ত হলো ও।

‘নাহ, ভালো হবে না,’ বলে জিপের ড্রাইভারকে নির্দেশনা দিতে ও হাতের ইশারায় দ্রুত মোর্শেদকে বলল। মোর্শেদ ড্রাইভারের সঙ্গে কাজ শেষ করে ফিরে আসতেই ও বাড়ির পথের দিকে রওয়ানা দিল। ‘আমি সামনে হাঁটছি। আপনি আমাকে পেছন থেকে কভার করবেন,’ বলে ও ব্যাকপ্যাক থেকে নিয়ে আসা টর্চ লাইটটা জ্বেলে ওটাকে বাঁ হাতে ধরে পিস্তলটাকে ডান হাতে রেখে দুটোকে সমান্তরালে ধরে এগোতে শুরু করল বাড়িটার দিকে।

রাস্তা থেকে খানিকটা ভেতরে এবং বলতে গেলে প্রায় পুরো এলাকাই অন্ধকারে ছেয়ে আছে কিন্তু দূর থেকে দেখেই শারিয়ার বুঝতে পারল বাড়িটা বিরাট। গজ বিশেক এগোতেই পায়ে চলা পথটার পাশে বাইকটাকে কাত হয়ে পড়ে থাকতে দেখল ওরা। একবার রাস্তার দিকে দেখে নিয়ে আরেকবার বাইকটাকে দেখল ও। টহল পুলিশ কেন বাইকটাকে এখানে খুব সহজেই দেখতে পেয়েছে এবার বুঝতে পারল ও। রাস্তা থেকে এদিকে আলো ফেললে যে-জায়গাটাতে আলো পড়বে ঠিক সেখানেই কাত হয়ে পড়ে আছে বাইকটা।

বাইকটাকে পার হয়ে মোর্শেদকে সাবধানে থাকতে বলে শারিয়ার আরো সাবধানে বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল। বাড়ির গেটের কাছে গিয়ে দেখল বিরাট গেটটা সামান্য ফাঁক হয়ে খুলে আছে। কিন্তু কোনো জনমানুষের ছায়াও নেই। গেটের আরেকটু কাছে যেতেই চোখে পড়ল হলুদ রঙের ক্রাইম সিন, হুলুদ টেপ ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে আছে।

ব্যাপার কী? কোনো মানুষ নেই কেন?

এরকম একটা বাড়িতে যেটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটা বড়ো ঘটনা ঘটে গেছে কিছুদিন আগে সেখানে একটা লোক কিংবা একজন পুলিশও থাকবে না এ কেমন কথা। যদিও কথাটা মনে মনে ভাবল শারিয়ার। কিন্তু তার মনের কথাটা মুখ দিয়ে ফুটে বেরিয়ে এলো মোর্শেদের।

‘স্যার, কোনো মানুষ নেই, একটা প্রাণি নেই….’

‘সাবধান, মোর্শেদ,’ বলে শারিয়ার সাবধানে এক হাতে ঠেলা দিয়ে গেটটা খুলে ফেলল। কচ কচ শব্দ করে গেটটা খানিকটা খুলে গিয়ে আটকে গেল। জোরে ঠেলা দিতেই ক্রাইম সিনের হলুদ টেপ ছিঁড়ে গেটটা পুরো ফাঁক হয়ে গেল ভেতরে। ভেতরে প্রবেশ করতেই মনের ভেতর থেকে আসা প্রথম প্রশ্নটার জবাব পেয়ে গেল ওরা। কোনো মানুষ কিংবা পাহারাদার নেই কেন।

কারণ, গেটের ঠিক ভেতরেই একটা টুলের পাশে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে এক পুলিশ কনস্টেবল। লোকটাকে দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল মোর্শেদ। তাকে কভার করে দাঁড়াল শারিয়ার।

‘স্যার, কানের নিচে বাড়ি মেরে বেহুঁশ করা হয়েছে,’ কনস্টেবলে মাথা তুলে ধরে মোর্শেদ বলে উঠল।

‘অবস্থা কি বেশি খারাপ?’ শারিয়ার জানতে চাইল কিন্তু সে আরো সতর্ক হয়ে উঠেছে। কারণ এই খোলা জায়গাতে নিজেকে একদম নিরাপদ মনে হচ্ছে না ওর।

‘না, স্যার, তেমন কিছু…

‘আচ্ছা, যেভাবে আছে সেভাবেই শুইয়ে দিন। মাথার নিচে পারলে কিছু একটা দিয়ে দিন,’ বলে দ্রুত সামনে এগোনোর ইশারা করল ও।

শারিয়ার মোর্শদকে নিয়ে বাড়ির মূল দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল।

বিরাট বাড়ি কিন্তু ভেতরে কারো নাম-নিশানাও নেই। তবে বাড়ির ভেতরে পরিবেশ দেখেই বোঝা যায় এই বাড়িতে অনেকদিন কেউ আসে না কিংবা বসবাস করে না। কারণ বাড়িটা বিরাট আর ভেতরে আরাম আয়েশের ব্যবস্থাও একেবারে পাকা থাকলেও বেশিরভাগ আসবাব মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা।

নিচের ফ্লোরটা দুজন মিলে দ্রুত দেখে নিল। ভেতরে কেউই নেই।

‘আমাদের নিচে যেতে হবে,’ শারিয়ার মোর্শেদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল ‘সম্ভবত বাড়ির বেইজমেন্টই লোকটা বাস করত।’

‘জি, স্যার। আমি চিনি,’ মোর্শেদের কথা শুনে খুব অবাক হলো শারিয়ার। ‘স্যার, আমি কেসের কাজে এখানে এসেছিলাম।’

অতো ব্যাখ্যা শোনার সময় নেই। ‘ঠিক আছে, পথ দেখান।’

শারিয়াকে নিয়ে মোর্শেদ বাড়ির নিচ তলা থেকে বেরিয়ে এলো গ্যারেজে। সেখান থেকে ছোটো একটা সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো বাড়ির বেইজমেন্টে। ওপরে যদি অন্ধকার হয় তবে এখানে পৃথিবীর সব অন্ধকার যেন একসঙ্গে জমা হয়ে আছে। ‘এখানে কোনো পাহারাদার ছিল না?’ শারিয়ার জানতে চাইল।

মোর্শেদ স্রেফ একবার কাঁধ ঝাঁকাল। ‘স্যার, ওই যে, দরজাটা, ওখানে একটা ছোটো কোয়ার্টার আছে ওখানেই থাকত লোকটা। শারিয়ার টর্চ আর পিস্তল বাগিয়ে স্টিলের একটা দরজার দিকে এগোল দুজনেই সেদিকে এগোচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন ধমকে উঠল।

‘হল্ট, এই কে তোমরা?’

শারিয়ার সোজা ঘুরে দাঁড়িয়ে পিস্তল আর টর্চ দুটোই একসঙ্গে তাক করল মানুষটার দিকে। মানুষটার হাতেও একটা টর্চ। দুজনেই বলতে গেলে প্রায় একই সময়ে দুজনের দিকে টর্চ তাক করল। ফলে মুহূর্তের ভেতরে চোখ ঝলসে গেল শারিয়ারের। ধমকে উঠে সে সাবধান করে দিল। প্রায় একইসঙ্গে লোকটাও ধমকে উঠে পিস্তল নামাতে বলল ওকে। শারিয়ার সাবধানে পিস্তলটা নামাতে শুরু করেছে এমন সময় তীব্র আঘাতের সঙ্গে চিৎকার করে মাটিতে পড়ে গেল মোর্শেদ। স্রেফ প্রবৃত্তির বশে অন্ধের মতো সামনের দিকে গুলি চালাল শারিয়ার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *