মকারান্ত
এক
লুজ ক্যারেকটার
আমার নিন্দুকেরা অবশ্যই এই ভেবে খুশি হবেন যে তারাপদ এতদিনে উপযুক্ত বিষয় পেয়েছেন। তা তাঁরা যাই বলুন আমি লুজ ক্যারেকটার দিয়েই শুরু করছি। ‘লুজ ক্যারেকটার’ শব্দটি খাঁটি বাংলা শব্দ। এ প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে বলে রাখি ইংরেজি ‘character’ এবং বাংলা ‘চরিত্র’ শব্দ দুটি এক নয়, দুইয়ের মধ্যে অতিশয় সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।
সে যা হোক। আমাদের বিষয় চরিত্র নয়, চরিত্র দোষ। বাংলা অভিধানে, রাজশেখর বসুর চলন্তিকায় চরিত্রদোষের অর্থ দেওয়া আছে, ‘লাম্পট্য, সুরাসক্তি।’
আমার এই ক্ষুদ্র রম্য নিবন্ধে এই দুটো বিষয়েই মনোনিবেশ করব। প্রথমে লাম্পট্য এবং সেই সূত্রে এই খণ্ড অধ্যায়ের নামকরণ হয়েছে লুজ ক্যারেকটার বা স্খলিত চরিত্র।
শ্রীযুক্ত তপন সিংহ পরিচালিত ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ চলচ্চিত্রটি যাঁরা কখনও দেখেছেন, তাঁদের কাছে ‘লুজ ক্যারেকটার’ শব্দটির অর্থ ব্যাখ্যা করার মানে হয় না। এই সিনেমায় অভিনেতা দীপঙ্কর দে এক বৃদ্ধের ভূমিকায় ছিলেন, তিনি তাঁর নিজস্ব অননুকরণীয় ভঙ্গিতে কাউকে গালাগাল দেওয়ার জন্য ‘লুজ ক্যারেকটার’ বলে অভিহিত করতেন। লুজের উচ্চারণ ছিল, ‘লু-উ-উ-ছ।’
তা এই সব লুজ ক্যারেকটার বা লম্পট চরিত্রের লোকেদের আমরা সবাই মোটামুটি অল্প-বিস্তর চিনি। আমার আপনার মতোই এঁরাও সংসারে বেশ বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এঁরা সাধারণত ফিটফাট থাকেন। এঁরা সর্বদাই হাসিমুখ। ঘাড়ে পাউডার, চুলে টেরিকাটা, রুমালে সুরভি। এঁরা বমণীমোহন। ওঁদেরই জন্য শাস্ত্রে উপদেশবাক্য রচিত হয়েছিল, ‘পরস্ত্রীকে মাতৃবৎ দেখবে।’
এই সব ‘লুজ ক্যারেকটার’ বা লম্পট বিষয়ে বিশেষ কিছু লেখবার অধিকার বা যোগ্যতা আমার নেই। বহুকাল আগে ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘বিদ্যাবুদ্ধি’-তে লাম্পট্য নিয়ে কিঞ্চিৎ অনধিকার চর্চা করেছিলাম।
সেও করেছিলাম বিলিতি বই টুকে। আমাদের দেশে এ রকম গুরুতর বিষয় নিয়ে মজার গল্প হয় না। লাম্পট্য নিয়ে মজা করতে গেলে সবাই ছি ছি করবে।
এই সব কাহিনীমালার নায়ক ছিলেন সেই ভদ্রলোক, যিনি বাঁকা চোখে নিজের বিবাহিত স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলতেন, ‘মাইরি বলছি, তোমাকে আজ যা দেখাচ্ছে না, একেবারে পরস্ত্রীর মতো।’
এই ভদ্রলোক সম্পর্কে অন্য একটি গল্পে দেখা যায় যে তাঁর সেই পরস্ত্রীর মতো সুন্দরী স্ত্রী তাঁর এক বান্ধবীর কাছে স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করছেন।
ভদ্রমহিলার সঙ্গে একদিন সন্ধ্যাবেলা তাঁর এক পুরনো বান্ধবী দেখা করতে এসেছেন। বলাবাহুল্য, ভদ্রমহিলার পতিদেবতা তখন বাসায় নেই। বান্ধবী ভদ্রলোকের কথা জিজ্ঞাসা করাতে স্ত্রী বললেন, ‘ও কোনওদিনই সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে না। ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। কোথায় যে যায়? কী যে করে? আমি খুবই চিন্তায় থাকি।’
এ পর্যন্ত শুনে অভিজ্ঞ বান্ধবী বললেন, ‘কোথায় যায়, কী করে—ওসব না জানাই ভাল। জানতে পারলে আরও বেশি চিন্তায় থাকবে।’
কোনও বিবাহিত ব্যক্তির চরিত্রদোষ হলে তা তিনি যতই বুদ্ধিমান হন, যতই কায়দাকানুন বুদ্ধি করুন শেষ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী সেটা ধরে ফেলবেন।
মিস্টার চৌধুরী গত কয়েক মাস ধরে অত্যন্ত সংগোপনে এবং সযতনে অফিসে তাঁর সহকর্মিণীর সঙ্গে প্রবল প্রেমলীলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সুবোধ বালকের মতো দৈনিক যথাসময়ে বাড়ি ফিরতেন যাতে তাঁর স্ত্রী কোনওরকম সন্দেহ না করেন। এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে মিসেস চৌধুরী কিছু টের পাচ্ছেন না।
কিন্তু গোলমাল হল মিস্টার চৌধুরীর জন্মদিনে। সেদিন মিসেস চৌধুরী এক বোতল একটি বহু বিজ্ঞাপিত চুল পড়ে যাওয়ার ঔষধ স্বামীকে উপহার দিলেন।
মিস্টার চৌধুরী মধ্যযৌবনে পৌঁছেছেন কিন্তু এখনও তাঁর ঘনকৃষ্ণ কেশ, ব্যাকব্রাশ করলে মাথায় ঢেউ খেলে যায়। তিনি জন্মদিনে স্ত্রীর কাছ থেকে এই উপহার পেয়ে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে স্ত্রীকে বললেন, ‘এটা কী দিলে আমাকে? আমার কি চুল উঠছে?’
‘তোমার উঠছে না,’ মিসেস চৌধুরী খুব গম্ভীরভাবে বললেন, ‘কিন্তু তোমার প্রেমিকার খুব চুল উঠছে। রোজই তোমার কোটে লেগে থাকে। আমাকে বুরুশ করে পরিষ্কার করতে হয়।’
এর পরের গল্পটি নিতান্ত ঘরোয়া।
একটি শিশুর জন্য গৃহশিক্ষিকা নিযুক্ত হয়েছে। নবযুবতী এক মহিলা বাসায় শিশুটিকে পড়াতে আসেন। তখন বাসায় শিশুটি এবং একটি কাজের মেয়ে ছাড়া প্রায় কেউই থাকে না।
এর মধ্যে একদিন শিক্ষিকা পড়াতে এসেছেন। সেদিন শিশুটির বাবা-মা দুজনেই বাসায় রয়েছেন, কী যেন একটা ছুটির দিন ছিল সেটা।
সে যা হোক, সেদিন শিক্ষিকা যখন পড়ানো শেষ করে চলে যাচ্ছেন, তখন শিশুটির মা দাঁড়িয়ে। মাতৃদেবী শিশুকে বললেন, ‘দিদিমণিকে টা-টা, বাই-বাই করো। দিদিমণিকে একটা চুমো খাও।’
অত্যন্ত নিস্পৃহভাবে ‘টা-টা, বাই-বাই’ করে শিশুটি বলল, ‘আমি কিন্তু কিছুতেই দিদিমণিকে চুমু খাব না।’
মা অবাক, ‘সে কী? কেন?’
শিশুটি বলল, ‘চুমু খেলে দিদিমণি আমাকে চড় মারবে।’
মা বললেন, ‘ছি! ছি! চুমু খেলে দিদিমণি চড় মারবে কেন?’
শিশু জানাল, ‘একটু আগে বাবা দিদিমণিকে চুমু খেয়েছিল। বাবাকে দিদিমণি একটা চড় মেরেছে।’
লাম্পট্য অবশ্য সদাসর্বদাই একতরফা বা পুরুষালি ব্যাপার নয়। এক হাতে তালি বাজে না। মহিলারাও চরিত্রদোষে ভোগেন।
এক ভদ্রমহিলাকে তাঁর স্বামী একদিন দিনদুপুরে নিজের বাড়িতে শয়নঘরের মধ্যে এক ব্যক্তির সঙ্গে আপত্তিকর, অশালীন অবস্থায় ধরে ফেলেন।
হই হই কাণ্ড। ফাটাফাটি ব্যাপার!
ঘটনাটা শেষপর্যন্ত থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াল। প্রবীণ বিচক্ষণ দারোগাবাবু সব ঘটনা শুনে তারপর ভদ্রমহিলাকে বললেন, ‘আপনি তা হলে আপনার স্বামীকে ঠকাচ্ছিলেন?’
ভদ্রমহিলা ফোঁস করে উঠলেন, ‘আমি ঠকাচ্ছিলাম? আমার বরই আমাকে ঠকিয়েছে।’
দারোগাবাবু বললেন, ‘সে আবার কী ব্যাপার?’
ভদ্রমহিলা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন, ‘ও আমাকে বেরনোর সময় বলে গিয়েছিল, ফিরতে রাত হবে। দুপুরের মধ্যেই ফিরে এসে আমাকে জব্দ করল। ওই তো ঠকাল। আমি আর কী ঠকালাম।’
এ রকম সব গোলমেলে গল্প বেশি না বলাই বোধহয় উচিত। শুধু আর একটি এবং সেটি পুরনো গল্প।
সকালের খবরের কাগজে একটি রোমহর্ষক সংবাদ বেরিয়েছে। চা খেতে খেতে সংবাদটা পড়ে বিনতা শিউরিয়ে উঠল, ‘কী সাংঘাতিক ব্যাপার।’
তার রুমমেট সুরমা এই শুনে কাগজটা হাতে নিয়ে সংবাদটা পড়ে খুব গম্ভীরভাবে বলল, ‘ব্যাপারটা আরও সাংঘাতিক হতে পারত।’
এই শুনে বিনতা বলল, ‘আর কী সাংঘাতিক হবে? ফিল্মস্টার ভুবনমোহন এক মহিলার সঙ্গে একটি হোটেল কক্ষে ছিলেন, এমন সময় দরজায় করাঘাত। ভুবনমোহন উঠে দরজা খুলে দিতেই ভুবনমোহনের স্ত্রী বিউটিরানি দেবী ঘরের মধ্যে অতর্কিতে প্রবেশ করে ভুবনমোহনের সঙ্গিনীকে রিভলভার দিয়ে ছয়টি গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেন। সঙ্গে সঙ্গে মহিলার মৃত্যু হয়।’
সংবাদপত্রের খবরটি সংক্ষিপ্ত করে বলে বিনতা আবার বলল, ‘আর কী সাংঘাতিক হবে?’
সুরমা বলল, ‘গতকাল ভুবনমোহন-এর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল আমার। মাথা ধরেছে বলে যেতে পারিনি। গেলে ওই হোটেলের ঘরে আমিই বিউটিরানির রিভলভারের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যেতাম।’
শুনে বিনতা বলল, ‘সর্বনাশ!’
তখন সরমা বললে, ‘তা হলে বল, ব্যাপারটা আরও সাংঘাতিক হতে পারত।’
দুই
পানাসক্তি
‘যদ্যপি আমার গুরু
শুঁড়ি বাড়ি যায়,
তদ্যপি আমার গুরু
নিত্যানন্দ রায়।’
লম্পটের পরে আমাদের দ্বিতীয়াংশ মদ্যপ নিয়ে।
কথায় আছে, ‘মাতালের সাক্ষী শুঁড়ি।’ শুঁড়ি হল মদ বিক্রেতা। শুঁড়িবাড়িতে লোকে মদ খেতে যায়।
এ নিয়ে আলোচনার আগে একটা জিনিস স্পষ্ট করা দরকার। লম্পট আর মদ্যপ, এক জিনিস নয়। বহু লম্পট আছে যারা সুরা স্পর্শ করে না। আবার প্রকৃত মদ্যপের লাম্পট্য আসক্তি নেই। যে মদ খায় সে শুধু মদই খায় আর মদ তাকে খায়, তার আর কিছুই করার থাকে না। তবে এমন অনেক লোক আছে, যারা কিছু পরিমাণ মদ্যপান করে খুন-ডাকাতি করতে যায়, বলাৎকারের চেষ্টা করে কিংবা বলাৎকার করেই ফেলে, তাদের কথা আলাদা।
এদিকে লম্পটের মদ্যপ হলে বিপদ। তাকে ভেবেচিন্তে, মেপে চলতে হয়। তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাকে নানারকম অভিনয় করতে হয়, মুখোশ পরতে হয়।
মাতালের মুখোশ নেই। সে অভিনয় করতেও অপারগ। তার পক্ষে রমণীর মন জয় করা কঠিন। তবে কখনও কখনও দেখা যায় (মদ্যপের প্রতি সহানুভূতি চিন্তা) অনুকম্পাবশত অনেক মহিলা কোনও কোনও মাতালের জন্য দুর্বলতা পোষণ করেন, অবশ্য সেই মদ্যপ যদি কোনও কবি বা শিল্পী কিংবা বখে যাওয়া প্রতিভা হয়।
এসব তত্ত্বকথা, কচকচি মোটেই সুবিধের নয়। বরং এবার মাতালের গল্পে চলে যাই।
তবে এখানে আমার একটা বিশেষ অসুবিধে আছে। মদ ও মাতাল নিয়ে এযাবৎকাল আমি এত বেশি গল্পকথা লিখেছি যে পাঠক-পাঠিকাদের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক—গল্পগুলো নতুন তো? নাকি নতুন বোতলে পুরনো মদ।
সত্যি কথা এই যে, শুধু মদ আর মাতাল নয়, যে কোনও বিষয়েই নতুন গল্প পাওয়া কঠিন। তবু এরপরে যে গল্পগুলি পাঠকের দরবারে পেশ করছি তার একাধিক গল্প টাটকা এবং আনকোরা।
প্রথম গল্পটি আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের, এ গল্পটি জ্ঞানত অদ্যাবধি কোথাও লিখিনি।
মধ্য কলকাতায় পুরনো জানবাজার অঞ্চলে একদা বারদোয়ারি নামে একটি দিশি মদের পানশালা অর্থাৎ শুঁড়িখানা ছিল। হয়তো এখনও আছে, বাজার-ভাঁটিখানা-মেলা-বেশ্যাপাড়া-ধর্মস্থান এগুলো সহজে অবলুপ্ত হয় না। উঠে গেলেও আশেপাশে টিকে থাকে।
সে যা হোক, নবীন যৌবনে বন্ধুবান্ধব সহযোগে কখনও কখনও এই বারদোয়ারিতে যেতাম। সেখানে এক মধ্যবয়সি ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। সুধামাধববাবু। মিলের ধুতি আর নীল ফুলশার্ট, নেহাত ছাপোষা গৃহস্থ। তিনি বেলঘরিয়া থেকে এই বারদোয়ারিতে আসতেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এত দূর আসেন?’ তিনি বলেছিলেন, ‘পাঁইটে চারআনা সস্তা হয়।’ এরপরে যখন আমি বললাম, ‘যাতায়াত খরচা তো আছে।’
সুধামাধববাবু বলেছিলেন, ‘যাতায়াত খরচা হিসাব করে যতক্ষণ পর্যন্ত মদের দামে উশুল না হয় খেয়ে যাই। ঠকবার তোক আমি নই।’
এ রকম যুক্তি মাতালের পক্ষেই সম্ভব।
এই মাতালই ড্রেনে পড়ে গেলে পুলিশকে বলে, ‘এখন আর আমি তোমার এলাকায় নই, যাও জলপুলিশ ডেকে আনো।’
এইরকম এক মাতাল রাস্তায় ভিক্ষে করছিল।
তাকে এক পথচারী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ভিক্ষে করছ কেন?’ সে জবাব দিল, ‘মদ খাওয়ার জন্য।’ এরপর আবার প্রশ্ন, ‘মদ খাবে কেন?’ জবাব, ‘ভিক্ষে করার সাহস সঞ্চয় করার জন্য।’
অবশেষে পানাসক্তি এবং লাম্পট্যের একটি যুগ্ম গল্প বলি। দুঃখের বিষয় গল্পটি পুরনো, কিন্তু অসামান্য।
গভীর রাতে মত্তাবস্থায় অনিমেষবাবু বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির সদর দরজায় চাবিটা লাগানোর চেষ্টা করছেন, এমন সময় পুলিশের জমাদার তাঁকে ধরে।
জমাদারকে দেখে অনিমেষবাবু তাঁকে বাড়িটা একটু শক্ত করে ধরতে বলেন কারণ বাড়িটা এত কাঁপছে যে তিনি চাবি লাগাতে পারছেন না।
জমাদার সাহেব অনিমেষবাবুর অনুরোধ উপেক্ষা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এত রাতে এখানে কী হচ্ছে?’
অনিমেষবাবু বলেন, ‘এটাই আমার বাড়ি। আমি বাড়ির মধ্যে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’
ঘুঘু জমাদার সাহেব কোনও কথা সহজে বিশ্বাস করেন না, তিনি অনিমেষবাবুকে বললেন, ‘চলুন আপনাকে ভেতরে দিয়ে আসি।’ টলটলায়মান অনিমেষবাবুকে ধরে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে জমাদার সাহেব দেখলেন ঘরের মধ্যে বিছানায় এক মহিলা এক ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন। সেই দৃশ্য দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে অনিমেষবাবু বললেন, ‘এবার বুঝছেন তো এটা আমার বাড়ি। ওই বিছানায় শুয়ে আছেন আমার মিসেস, আর যাকে জড়িয়ে ধরে আছেন সে হলাম আমি।’
এতদূর লেখার পরে দু’-একজন স্মরণীয় চরিত্রের কথা মনে পড়ছে। যাঁদের নাম বলা যাবে না। যাঁরা ছিলেন সোনায় সোহাগা। যেমন লম্পট, তেমনই মদ্যপ। ওপরের গল্পে পুরুষটি মদ্যপ এবং স্ত্রীটি লম্পট, অবশ্য মহিলাকে লম্পট বলা যায় কিনা কে জানে।
তা যাক কিংবা না যাক মদ্যপ-কাম-লম্পটের একটা পুরনো গল্প বলি।
এ গল্পের ভদ্রলোক আসলে মদ্যপ, লম্পট হওয়ার চেষ্টা করছেন। নবলব্ধা বন্ধুপত্নীর সাহচর্যে লাম্পট্যের সাহস সঞ্চয় করার জন্য তিনি ক্রমাগত মদ খেয়ে যাচ্ছিলেন। বাধা দিলেন বন্ধুপত্নী, তিনিও যথাসাধ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন। অবশেষে মহিলা বাধা দিলেন, ‘ওগো তুমি আর মদ খেয়ো না, তোমার মুখ কেমন ঝাপসা দেখাচ্ছে।’
পুনশ্চ:
জনৈক মন্ত্রীর বন্ধু হলেন এক বিখ্যাত অভিনেতা। সেই অভিনেতা আবার প্রচণ্ড মদ্যপ। রীতিমতো পেঁচি মাতাল। রাস্তাঘাটে গোলমাল বাধানো তাঁর স্বভাব।
সেই অভিনেতা একদা ঘোরতর গোলমাল করে এমন অবস্থা সৃষ্টি করলেন যে পুলিশ তাঁকে ধরে চালান দিল। পরের দিন আদালত থেকে অভিনেতাকে জেলে পাঠানো হল।
যথাসময়ে মন্ত্রীমহোদয়ের কাছে এই খবর পৌঁছল। কিন্তু তাঁর পক্ষে তো আইন শিথিল করে অভিনেতাকে কারাগার থেকে বার করে আনা সম্ভব নয়। অন্য দিকে তাঁর প্রিয় অভিনেতা মাতলামির দায়ে অভিযুক্ত এটাও তাঁর খারাপ লাগছে।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে অবশেষে তিনি জেলে গেলেন অভিনেতার সঙ্গে দেখা করতে। জেলের মধ্যে অভিনেতার সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে অত্যন্ত মুগ্ধ মন্ত্রী বললেন, ‘আমি শুনলাম আপনি মদ খাওয়ার জন্য এখানে এসেছেন।’
হো হো করে হেসে উঠলেন প্রবীণ অভিনেতা। মন্ত্রীকে বললেন, ‘কী যা তা বলছ। মদ খাওয়ার জন্য কেউ জেলে আসে। তার জন্য কত রকম কত ভাল জায়গা আছে। তোমাকে সত্যি বলছি, তিন দিন এখানে আছি, কেউ আমাকে এক ফোঁটা মদও খেতে দেয়নি।’