ভ্যাম্পায়ার
স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে চাকরি হয়েছে সুমিতের। প্রথম পোস্টিং বাঁকুড়া জেলার খুরুল নিত্যানন্দ বিদ্যামন্দিরে। সোনামুখী থেকে দশ কিলোমিটার ভিতরে। কাঁকুরে জমি, জঙ্গলের কিছুটা অবশেষ আছে। জলের কষ্ট। স্কুলে কুয়ো আছে একটা। স্কুলের পাশেই একটা ছোট বাড়ি। ছ’টা ঘর। ওখানে কয়েকজন মাস্টারমশাই থাকেন। বেশিরভাগ মাস্টারমশাইরাই সাইকেলে কিংবা মোপেডে ৭-৮-১০ কিলোমিটার দূর থেকে যাওয়া আসা করেন। এদিকের অনেকটা জমিতে শুধু ঘাস হয়। ওরা বাবুইঘাস বলে। তা দিয়ে এটাসেটা বানায়, দড়িও বানায়। কিছু জমিতে ধান হয়, বছরের একটাই ফসল। অনেকেই ছাগল চরায়। কেউ কেউ পোলট্রিও করেছিল। সুমিত এখানে এসে একটা দারুণ কথা শুনল ওদের স্কুলের একমাত্র পিয়নের মুখে – কালে কালে কী হইল স্যার, মুরগিরও বাটফুলো রোগ হল। বাটফুলো রোগটা গোরু-ছাগলের হয়। এখানে বার্ডফ্লুকে ‘বাটফুলো’ রোগ বলছে। এখানে আর পোলট্রি নেই। ইংরেজির স্যার বলেছেন সব কিলিং করে দেওয়া হয়েছে। কালিংকে কিলিং বলছে আর কী।
এদিককার লোকেরা কাজের খোঁজে পুবে যায়। আর সুমিত কাজের খোঁজে পুব থেকে এসেছে পশ্চিমে। সুমিতের বাড়ি বর্ধমানে। বর্ধমান শহরে ওদের বাড়ি, গুসকরার দিকে ওদের গ্রামের বাড়ি। বনপাস স্টেশনের দিকে আধঘণ্টার হাঁটাপথে। ওদের জমি বেশিটাই বর্গা দেওয়া আছে। সুমিতের বাবা চালের ব্যাবসা করতেন, একটা আড়ত ছিল। সুমিতের বাবা গত হয়েছেন তিন বছর হল। সুমিতের উপরের দুই ভাই এখন চালের ব্যাবসাটা দেখাশুনো করে। সুমিতের এক দিদিও আছে। জামাইবাবুর একটা কোল্ডস্টোরেজের মালিকানা আছে। হোটেলও আছে। জামাইবাবুর বর্ধমানের উপকণ্ঠে কুনুর নদীর ধারে দারুণ বাড়ি। কলকাতাতেও ফ্লাট আছে। বিয়েটা সুমিতের বাবাই দিয়ে গিয়েছিলেন। সম্বন্ধ করা বিয়ে। কিন্তু দিদি-জামাইবাবুর মনে সুখ নেই।
সুমিতের পুরো নাম সুমিতকুমার যশ। ওরা উগ্রক্ষত্রিয়। উগ্রক্ষত্রিয়কে সংক্ষেপে আগুরি বলা হয়। আগুরিদের নাকি খুব তেজ। খুব সাহসী হয় নাকি ওরা। সুমিতের মনে হয় ও হল আগুরি কুলের কলঙ্ক। একদম রাগ নেই, জেদ নেই, এমনকী অ্যান্বিশনও নেই। বি এসসি পাশ করেছিল জুলজি অনার্স নিয়ে। তারপর স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে চাকরিটা পেয়ে গেল। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এসসি পড়তেই পারত ও, দাদারা বলেছিল আমাদের তো তেমন হল না, তুই পড়। যতদূর পারিস পড়। সাইনটিস্ট হয়ে যা, না হয় ডি এম হয়ে যা।
কিচ্ছু হয়নি সুমিত। মাস্টার হয়েছে। এই স্কুলটা দশ ক্লাস পর্যন্ত ছিল। হালে এগারো-বারো স্যাংশন হয়েছে। ক্লাস ফাইভ থেকেই ছেলেমেয়েরা একসঙ্গেই পড়ে। ক্লাস এইটের পর মেয়েদের সংখ্যা কমতে থাকে। এগারো ক্লাসের বিজ্ঞান বিভাগে আটচল্লিশ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন মেয়ে। স্কুলের কোনো ইউনিফর্ম নেই। যে সব পোশাক পরে আসে সেগুলো বড় মলিন। সেলাই করা। কলকাতার রাস্তায় চল্লিশ টাকায় যেসব জঙ্গল ছাপ শার্ট ফুটপাতে ঢেলে বিক্রি হয় তা এইসব জঙ্গল অঞ্চলে আসে না।
ক্লাস এইটের একটা ছেলের একদিন প্রচণ্ড পেট ব্যথা। ব্যথায় শুয়ে পড়ল। সুমিত জিজ্ঞাসা করল আজেবাজে খাবার খেয়েছ বুঝি কিছু?
ছেলেটা মাথা নাড়ে।
কী খেয়েছ তবে।
ছেলেটা বলে কিচ্ছু খাইনি স্যার।
কিচ্ছু না খেয়ে স্কুলে এসেছ? বিকেল চারটে পর্যন্ত খালি পেটে থাকবে? আজ তো মিডডে মিলের মাসী আসেনি।
ছেলেটা বলে না খেয়েই তো আসি।
সুমিত জানতে পারল এরকম অনেকেই কিছু না খেয়ে আসে। স্কুলে মিডডে মিল পায়। কেউ কেউ শুধু দুটো মুড়ি খেয়ে আসে। কেউ কেউ পান্তা।
বর্ধমান জেলায় এতটা দরিদ্র গ্রাম বোধহয় নেই। এর মধ্যেও পড়াশুনো করছে ওরা, ভাবতেও ভালো লাগে। কেউ কেউ ধানকাটা বা ধান ওঠার সময়টা স্কুলে আসে না। জন খাটতে যায়। জন খাটতে বর্ধমান জেলাতেই যায়। বর্ধমানের মাটিটা ভালো। তা ছাড়া বর্ধমানে তো সেচ আছে। ডিভিসি।
সেদিন সুমিত তাড়াতাড়ি ওর কোয়ার্টারে গেল। হাঁড়িতে ভাত ছিল। কিছুটা তরকারিও ছিও। বাটি করে নিয়ে এসে ছেলেটাকে দিল। ছেলেটা ভাত খেল।
একটু পরেই পেট ব্যথা কমে গেল ছেলেটার।
সুমিত জানে এটা গ্যাস্ট্রিক পেইন। প্রায়শ পেট খালি থাকলে এরকম ব্যথা হতেই পারে। এর প্রধান চিকিৎসা হল খাওয়া। পেট খালি না রাখা।
ছেলেটার নাম নিবারণ রুইদাস। বোধ হয় মুচি। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বাগদি আছে, কর্মকার ও কুম্ভকার আছে, মাহাতো আছে কিছু সাঁওতালও আছে। বর্ণহিন্দুও বেশ কিছু আসে। বামুন ও কায়েত খুব কম। যখন জঙ্গল কেটে কৃষি জমি তৈরি হয়, প্রথমেই তখন শিল্প তৈরি করতে হল। আদি শিল্পটি কামারশালা। চাষের জন্য লাঙল, কোদাল এসব দরকার হত। কিন্তু মুচিরা বোধ হয় অনাহূত। গোরু-টোরু মরে গেলে সেই চামড়া ছাড়িয়ে নেবার জন্য ওরা আসত। আর বাঁচতে গেলে কোথাও তো ডেরা বাঁধতেই হয়। সুমিত ওদের গ্রামের বাড়ির শেষ প্রান্তে, তিন-চার ঘর রুইদাস দেখেছিল। ওদের অবস্থা খুব খারাপ।
সেদিন নিবারণকে দুটো ভাত খাওয়ানোর পর নিবারণ আর সুমিতের মধ্যে কেমন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। নিবারণের চাউনিটা কেমন যেন পালটে যায়। কিছুটা লজ্জা, কিছুটা কৃতজ্ঞতা, কিছুটা ‘আর কখনও করবো না’। সুমিত অন্যের আড়ালে নিবারণকে ডেকে মাঝে মাঝে তিন টাকা দামের বিস্কুট প্যাকেট হাতে গুঁজে দেয়।
নিবারণ পড়াশুনায় মন্দ নয়। ওদের ক্লাসে জীবনবিজ্ঞান পড়ায় সুমিত। বইয়ের ছবিতে ক্ষুদ্রান্ত বৃহদন্ত্র, পায়ু এগুলোকে নিবারণো বলে খেটোনাড়ি, ভুকুনারি, পোঁদছ্যাঁদা। অবলীলায় বলে। কারণ এখনও সুযোগ পেলে এই কাজ করে। পরব-টরবে খাসি কাটা হলে ছাল ছাড়াবার ডাক পায়। তবে ছালটা এখন আর কেউ ফোকটে দেয় না। কিনতে হয়। নিবারণের সঙ্গে মাঝে মধ্যে গল্প করে সুমিত। নিবারণের বাবা নেই। তিন বছর আগে মারা গেছে।
কী হয়েছিল?
পেটে জল। যখন পোড়াতে গেলাম ফয়রার মত জল বেরোল।
সুমিত জানে পেটে জল, মানে অ্যাসাইটিস কোনও রোগ নয়। অন্য রোগের উপসর্গ। লিভারের সিরোসিস হলে পেটে জল জমে।
তোর বাবা মদ খেত?
খুব। সারাদিন। সব পয়সা উড়াত।
নিবারণের মা খাটতে যায়। ওর এক বড় ভাই আছে, আর দুটো বোন আছে। ওর দাদা ক্লাস ফোরের পর পড়েনি। বোন দুটো স্কুলে যায় দুপুরে। মিঠে মিল পায় বলে। মাঝে মাঝে লুটিস আসে – সাপ্লাই নেই বলে মিঠে মিল হবে না, তখন স্কুলে যায় না। বুঝতে অসুবিধে হয় না। মিঠে মিল মানে মিড-ডে মিল।
-কেউ পড়াশুনো করল না, তুই যে পড়ছিস বড়? দাদা বলে না আমার পয়সায় খাচ্ছিস?
সুমিত জিজ্ঞাসা করে।
-ঠিক স্যার। দাদা কথায় কথায় বাথান করে আমার পয়সায় খাচ্ছিস -লাজ নাই? মাগনার উপর চাখনা? আমি বলি তুমার একার পয়সায় খাচ্ছি নাই। মাও রোজগার করে, নিজেও করি।
-এত গঞ্জনা নিয়েও পড়াশুনোটা করিস কেন নিবারণ?
-কী করব। পড়তে ভালো লাগে যে। কত কী জানছি।
-কতদূর অবধি পড়াশুনো করতে চাস নিবারণ?
-কে জানে? কমসে কম মাধ্যমিকটা তো পাশ দিব।
-তরপর কী করবি?
ঠোঁটটা উলটে চুপ করে রইল নিবারণ।
তারপর বলল, আপনার মতো স্যার হতে হলে তো কমসে কম বি এসসি পাশ দিতে হবে, তাই না?
সুমিত ঘাড় নাড়ায়।
তখন নিবারণের দীর্ঘশ্বাস জঙ্গুলে বাতাসে মিশে যায়।
সুমিত বলে কী বই পড়তে তোর বেশি ভালো লাগে?
ও বলে ভূগোল।
সুমিত বলে ভারতের পাঁচটা নদীর নাম বলত শুনি। ও বলে কুকুরানি, আঘনি, ডুলুং, কাঁসাই, গঙ্গা। সুমিত বলে ওসব কুকুরানি, আঘনি ডুলুং আবার কী নদী?
কেন ইদিককার নদী ইদিককার দী কি লদী লয়?
স্কুল স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির বসবে। যেহেতু সুমিত জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক, ওর উপরই দায়িত্ব পড়ল। একটা এন জি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। প্রেশার ইত্যাদি যেমন দেখবে, সেই সঙ্গে প্রত্যেক ছাত্রের মল-মূত্রের জন্য আলাদা আলাদা পাত্র দিতে হবে। ওরা একটা স্যাম্পল সার্ভে করছে৷ ডব্লু এইচ ও নাকি টাকা দিচ্ছে। শতকরা কতজনের মলে কৃমির লার্ভা, ব্যাসিলাস আছে, ইত্যাদি দেখা হবে। রক্তও নেওয়া হবে। পরীক্ষা করা হবে রিপোর্টও দেওয়া হবে। প্রত্যেকের রক্তর গ্রুপও নিয়ে দেওয়া হবে।পরীক্ষাগুলো এখানে হবে না নিশ্চই, বাইরেই হবে। কিন্তু আলাদা আলাদা টেস্টটিউবে ঠিকমতো নম্বর দেওয়া, এবং একটা খাতায় সেই নম্বর যার, তার নাম লিখে রাখা – বিরাট কাজ। সুমিত কয়েকজনকে বেছে নিয়েছে। তার মধ্যে নিবারণও আছে। রক্ত টানা হল। রক্তের টেস্টটিউবে অ্যান্টিকুয়াগুলান্ট মিশিয়ে নেড়ে ছিপি দিয়ে বন্ধ করা – এসব হল। অনেকে জীবনে প্রথম রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছে।
দিন পনেরো পর একটি মেয়ে রিপোর্ট নিয়ে এল। শতকরা ৪১ জনের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকের চেয়ে কম। শতকরা ২৮ জনের মলে কৃমির লার্ভা এসব লেখা একটা সামগ্রিক রিপোর্টও এনেছে। এছাড়া প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রীকে এইসব পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হবে। ওই ভদ্রমহিলা জিজ্ঞাসা করল – নিবারণ রুইদাস কে?
সুমিত বলল কেন বলুন তো? মেয়েটি বলল ওর শরীরে একটা রেয়ার, মানে ভেরি রেয়ার গ্রুপের রক্ত আছে। বোম্বাই গ্রুপ।
বোম্বাই গ্রুপ ব্যাপারটা সুমিত জানে। বোম্বাইতে প্রথম এই রক্তের স্যাম্পল পাওয়া যায় বলে এই রক্তকে বোম্বাই গ্রুপ বলা হয়েছে। তখনও মুম্বই হয়নি। তাই এটা বোম্বাই গ্রুপ। এই রক্তে মাদার অ্যান্টিজেনে H থাকে সিরামে অ্যান্টি H থাকে না। ফলে অন্য গ্রুপের রক্ত এই রক্তে মেশে না।
সুমিতের ভাগ্নেটার বোম্বাই গ্রুপ। সম্প্রতি ধরা পড়েছে ওর অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। যেটা সাধারণ অ্যানিমিয়া থেকে একদম আলাদা। সাধারণ অ্যানিমিয়া ভালো মন্দ খেলে সেরে যায়। এটা সারে না।
ভাগনেটার বয়স এখন পাঁচ। চার বছর বয়েসেই ছুটোছুটি করতে গিয়ে হাঁপ ধরত মাঝে মাঝেই নাক দিয়ে কিংবা দাঁত দিয়ে রক্ত বেরোত। তখনই ডাক্তার দেখানো শুরু। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম, সেই সঙ্গে ব্যাসোফিলও কম। বর্ধমানের ডাক্তাররা সব ফেল। কলকাতার ডাক্তাররা কেবল এই টেস্ট ওই টেস্ট করাল। ইতিমধ্যে গায়ে লাল লাল র্যাশ, মাঝে মাঝে জ্বর। কেউ ভাবল লিউকোমিয়া, কেউ ভাবল থ্যালাসেমিয়া। শেষ অবদি ভেলোরে বোনম্যারো টেস্ট করে এখন বলছে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। রক্ত দিতে হবে। কিন্তু দেখা গেল ওর বোম্বাই গ্রুপ। এ নিয়ে খুব চিন্তা। বোম্বাই গ্রুপের রক্ত তো বোম্বাইতে পাওয়া যায় না, তা হলে যত টাকাই লাগুক, আনানো যেত। এই রক্ত খুব কম মানুষের শরীরেই আছে। কলকাতার একটা নার্সিংহোম বোম্বাই গ্রুপ আনিয়ে দেয়। অনেক টাকা নেয়। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী তো দিতে পারে না। এজন্য দিদি জামাইবাবুর খুব চিন্তা। টাকার অভাব নেই। অথচ রক্ত পাচ্ছে না।
খুব জুলজুল চোখে, লোভীর চোখে, শয়তানের চোখে নিবারণের দিকে দৃষ্টি দেয় সুমিত।
সুমিতের জামাইযাযু এখন নিবারণদের উঠোনে। কুলগাছের ছায়ায় খাটিয়ায় বসেছেন। খাটিয়ার এক কোণে আধাবসা সুমিত। দাঁড়িয়ে আছে নিবারণ। নিবারণের মা। একটা রোগা দুবলা কুকুর কিছুক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে এখন চুপ। সুমিতের জামাইবাবুর নাম রতনকুমার। উনি ঘামছেন।
রতন বলল – তোমার ছেলের কোনো কষ্ট হবে না। বাড়ির ছেলের মত থাকবে। ভালো খাবে, ভালো পরবে। আমরা যা খাই তাই খাবে।
-কী খেতে ভালোবাসিস নিবারণ?
নিবারণ কিছু বলে না।
নিবারণের মা বলে ডিম আর মণ্ডা।
রতন বলে – রোজ সকালে ডিমসেদ্ধ পাবে ও। রোজ মাছ। মাছ ছাড়া আমাদের খাওয়াই হয় না। রাতে প্রায়ই চিকেন হয়। স্কুলে ভর্তি করে দেব বর্ধমান টাউনে। মাস্টার রেখে দেব। শুনেছি নিবারণ অনেক পড়াশুনো করতে চায়। সে হবেখনে।
যত পড়তে চায় পড়বে।
-কিন্তু রক্ত শুষে লেবার কথা বলছিলেন যে আমাদের ম্যাস্টর ছ্যার?
-শুষে নেওয়া বলছেন কেন। মাসে একবার একটু টেনে নেওয়া করতে হবে আরেকটা জীবন বাঁচাবার জন্য। এতে ওর পুণ্যি হবে। তোমাদের সবার পুণ্যি হবে। আর রক্তের কথা বলছ মাসি, ওর কি এখানে রক্ত হয়? যা খায় তাতে রক্ত হবে কী করে? আমরা যা খেতে দেব তাতে গায়ে রক্ত হবে। রক্ত একটু টেনে নিলে আবার হয়ে যায়। শরীরের মধ্যে ব্যবস্থা আছে। গোরুর একবার দুধ দুইলে কি দুধ শেষ হয়ে যায়? পরে তো আবার দুধ হয়। তবে হ্যাঁ। জাবনা দিতে হয়। তোমার নিবারণের এখন উঠতি বয়েস। ভালো খাবে, রক্ত ভুরভুর করে তৈরি হবে। তোমাদের মাস্টারকে জিজ্ঞেস কর না।
সুমিতের দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকায় নিবারণের মা। সুমিত চোখ সরিয়ে নিয়ে দুবার ঘাড় নাড়ায়। মানে হ্যাঁ বলছে।
নিবারণ তো কিছু রোজগারপাতিও করে শুনেছি। তোমাদের পুষিয়ে দোব’খনে। প্রতি মাসে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেব।
-ছেলে ফিরে পাব কবে? নিবারণের মা মাথা চুলকোয়।
ছেলে তো তোমারই থাকছে মাসি। তোমায় মাঝে মাঝেই দেখতে আসবে। বর্ধমান কতদূর আর? চার ঘন্টার তো রাস্তা। স্কুলের ছুটি পড়লে তোমার কাছে পাঠিয়ে দোব। আমার ঘরে থাকা মানে তোমাদের ওই মাষ্টারের ঘরেই থাকা।
নিবারণের মা এবার দু’হাতে নিজের খাংলা চুল চেপে ধরে। বলে রক্ত চুষে নিলে মানুষ বাঁচে নাকি। বাণ মেরে অনেক ওঝা রক্ত চুষে লেয়, মানুষ মরে যায়। ওটা হয় মন্তরে। আর তোমরা তো সত্যিকারের পিচকিরি দিয়ে রক্ত টেনে লেবে।
রতন সুমিতের দিকে তাকায়। রতন চায় সুমিত এবার কিছু বলুক। রতন নিজেকে ঝাঁকিয়ে বলে অ্যাই সুমিত…।
কুলগাছের একটা শুকনো পাতা সুমিতের গায়ের উপরে পড়ে। সুমিত পাতাটা সরায় না। সুমিত রতনের চোখের দিকেও তাকায় না। খাটিয়ায় একটা ঝুলে থাকা দড়ি পাকায় শুধু।
রতন দু’হাতের আঙুলে একটা মাপ দেখিয়ে বলে – এইটুকু, এইটুকু মাত্র। কিছু মনে করবেন না মাসি, মা-বোনেদের প্রতি মাসে কত রক্ত বেরিয়ে যায়। তাতে কি কিছু অসুবিধা হয়? কত লোক রক্ত বেচে সংসার চালায়। ওদের ছেলেপুলেও হয়। এইটুকু রক্ত বেরিয়ে গেলে আবার তৈরি হতে কতটা সময় লাগে – বল না সুমিত।
সুমিত বলে – চার-পাঁচ দিন।
এবার সবাই চুপচাপ। একটা ঘুঘু ডাকল। ভাদ্রে গুমোট গরম। রতন ঘাম মোছে।
নিবারণের মা বলে – বড়ছেলেটা থাকলে এখন সুবিধে হত।
নিবারণ এতক্ষণ পরে প্রথম কথা বলল। দাদা থাগলে কী আবার বলত। বলত – যা পালা।
আমার লেকাপড়া দাদার পছন্দ না।
নিবারণের মা বলল – এটাই হয়েছে জ্বালা। রেতে কতটা কেরাচিনি পোড়ায়। ও কি আর পড়ালেখা করে বাবুদের মতো হতে পারবে?
কুনদিন না।
-কেন পারবে না? বললাম তো ওকে বি এ পাশ দেওয়াব। আমার উপর ছেড়ে দেন না কেনে?
আবার সব চুপচাপ। একটা শালপাতা ছেঁচড়াচ্ছে উঠোনে।
নিবারণের মা বিড়বিড় করল –
‘অবলার সঁগে চাষ আর অদেখার সঁগে বাস।’
ভালো বাংলায় এই কথাটাকেই লেখা যায় – পরকে করেছ আপন বন্ধু ঘরকে করেছ পর। কিন্তু সুমিত জানে নিবারণের মায়ের কথার ঠিক এই অনুবাদ হয় না। নিবারণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে। সুমিত বলল দাঁড়িয়ে আছিস কেন নিবারণ, বোস।
নিবারণ সংকোচে সুমিতের পাশে বসে। সুমিত ওর পিঠে হাত দেয়।
বলে, কিছু বলরে নিবারণ।
রা কাড়…।
নিবারণ বলে আপনি যা বলবেন স্যার…।
রতনকুমার তাকিয়ে আছে সুমিতের দিকে।
সুমিত দেখতে পায়–ওর বোন আর ভাগনেটাও ওর দিকে চেয়ে আছে।
কিন্তু নিবারণের মায়ের মুখ আকাশের দিকে।
সুমিত বলল লেখাপড়া যদি করতে চাস তো…
কিছুক্ষণ থেমে বলল চলেই যা। নিবারণ ওর মায়ের কাছে যায়। বলে – তবে যাই?
নিবারণের মা নিবারণের মাথায় হাত দিয়ে বলে আশভুলাটা…।
ভালো বাংলায় এর মানে আহারে আশামুগ্ধ ছেলে…।
নিবারণ বলে তবে আজ যাব না। আর সাতদিন পর।
রতন বলে – কাউকে কিচ্ছু বলার দরকার নেই। লোকে বাগড়া দেবে। একদম চুপ মেরে থেকো। রতন একটা হাজার টাকার নোট বার করে নিবারণের দিকে এগিয়ে ধরে। নিবারণ হাত বাড়ায় না। নিবারণের মায়ের দিকে তারপর। নিবারণের মা বলে – এটা দিয়ে কী করব?
-কেন টাকা কত দরকার তোমাদের…।
-তবে খুচরো দাও না কেনে। দশ-বিশ। এই এত্ত ভারি টাকা আমরা ভাঙাইতে লাইরব।
রতন পাঁচটা একশো বার করে। পাঁচটা গান্ধিজির ছবি নিবারণের মায়ের সামনে সাজানো।
নিবারণ রোজই সকালে ডিম সেদ্ধ পায়, একটা করে। কলা, দুধ। ছাদের চিলে কোঠাটা ওর পুরো। ঘরে টেবিল, চেয়ার, বইয়ের তাক, এমনকী একটা আয়নাও।
আয়নায় এর আগে নিজেকে কখনও এভাবে দেখেনি। ওর গায়ে শ্রাবণের বীজতলা। নতুন নতুন রোম উঠছে। হাতে চামড়া আর খরখর করছে না।
কেমন বাবুদের ছেলেদের মতো লাগছে চেয়ার টেবিলে। এই কি নিবারণ রুইদাস? যেন অচেনা।
বইপত্র নিয়ে এসেছে এখানে। একজন মাস্টারমশাই রেখে দিয়েছেন রতন। সুমিত বলেছে পরীক্ষার সময় স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিলেই চলবে। ক্লাস নাইনে উঠে গেলে বর্ধমান শহরের স্কুলে ভর্তি করে দেবে বলেছে।
রতনকে কাকা ডাকে নিবারণ। রতনের ছেলেটা তা হলে ভাই। ভাই খুব সুন্দর দেখতে। ফরসা, কিন্তু ফ্যাকাশে ফরসা। ওর কত খেলনা। ঢাক পেটানো, মাথা দোলানো মানুষ, হরেন মারা গাড়ি, পুতুল হাসে হাহা হিহি। ছেলেটার নাম রাজা। রাজার সঙ্গে নিবারণের বেশ ভাব হয়ে গেছে। কাকিমা বলেছে রান্নাঘরটায় ঢুকিস না। ঢোকে না নিবারণ।
নিবারণ জানে ও মুচি। ওদের শোবার ঘরেও যায় না নিবারণ।
ওদের বাড়ির টুকটাক কাজ করে, বিকেলে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পাশটা একটু ঘুরে আসে।
ও আসার পরের দিনই নিবারণের গা থেকে রক্ত নিয়ে গেল।কলকাতায় টেস্ট হল। বাড়িতে রক্তের রিপোর্ট আর মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে এল রতনকুমার। সব ঠিক আছে। বোম্বাই গ্রুপ।
দশদিন পর বর্ধমানের একটা নার্সিংহোমে নিয়ে গেল নিবারণকে। রক্ত টেনে নিল। কতটা নিল নিবারণ জানতে পারল না। ও তখন চোখ বুজে ছিল। চোখ বুজে ওদের গাঁয়ের পোড়া থানটার কথা ভাবছিল। জারুল গাছ, পোড়া মায়ের পাথরের পাশে মাটির ঘোড়া। হাতের রবারটা আলগা হয়ে গেল। বলল হয়ে গেছে। টেবিলে একটা ট্রেতে দুধ, ডিম সেদ্ধ, সন্দেশ।
এরকম করে মাঝে মাঝে রক্ত দিতে হবে নিবারণকে। উপরের চেয়ার টেবিল আয়না লাগানো ঘরটা কি গোয়াল? আর ডিম, কলা, দুধ বুঝি খোল খড় ভুসি?
ডিম, দুধ, কলা, খাবার সময় ওর প্রথম প্রথম লজ্জা করত। আবার একটু ভয়ও করত। কখনও কষ্টও হত – ওর বাড়ির লোকেদের জন্য। এখন যেন ও খায় না-গাদায়। ও জানে ও তো নিজের জন্য খাচ্ছে না। ও খাচ্ছে অন্যের জন্য।
পুজো এল। নতুন জামা পেল নিবারণ। এক্কেবারে চকচকাইয়া। একশো টাকা বখশিস পেল হাতে। আর ওর মায়ের জন্য একটা শাড়ি। কাকা বলল দেশ থেকে ঘুরে আয়। মায়ের জন্য কিছু কিনবার জন্য বাজারে গেল। একটা আয়না কিনবে ভাবল। কী মুখ দেখবে মা? কিনল না। দুটো জামা কিনবে দুই বোনের জন্য? ফুটপাতে ফ্রক বিক্রি হচ্ছে। – পঁয়ষট্টি করে। দুটো জামা কি করে হবে? সারা বাজার জুড়ে কত জিনিসপত্র ছড়ানো। হাতা-চিরুনি-গলার মালা-বিস্কুট প্যাকেট-মিহিদানা…। পকেটে একশো টাকা নিয়ে কখনও এভাবে বেরোয়নি নিবারণ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই কিনে উঠতে পারে না।
কার্জন গেটের পিছন দিকটায় একটু ভিড়। একটা লোক কালো কালো বড়ি বিক্রি করছে। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে যায় নিবারণ। রক্ত–রক্ত–রক্ত। লাল লাল রক্ত। শরীরের রক্ত যদি ঠিক থাকে, সাফিসিয়েন্ট থাকে মাননীয়গণ, তবে গায়ে শক্তি থাকে। বুকে ভরা বল আর তেজে ভরা মন মানুষ হইতে হবে আমায় এখন। এই একেকটা বড়ি মানে এক কাপ রক্ত। এর এক একটা বড়ি মানে দু সের দুধ, এক সের আপেল এক পো কাজু-কিশমিশ…
একটা শিশিতে পঞ্চাশটা বড়ি। চল্লিশ টাকা দিয়ে কিনল নিবারণ ওর মায়ের জন্য।
মা বলল – অ-মা, চিনাই যায় না রে তুকে। বাবুদের ছাঁ হঞে ইসেছিস… বলেই নিবারণের হাত ধরল। ‘লজর লাগবে যে’, বলেই নিবারণের বাঁ হাতের কড়ে আঙুলটা কামড়ে বলল ধূলার ছা, ধূলার ছা।
শাড়িটা, রক্তের ওষুধটা দিল। আর দিল বাবুদের দেওয়া টাকা, বাবুরা কথা নড়চড় করেনি।
টাকাটা নিয়ে নিবারণের পিঠে হাত বুলিয়ে দিল নিবারণের মা।
মা বলল রক্ত দিছিস মাথা ঘুরে না?
নিবারণ বলে কিছু বুঝি না। বরং আগে যখন ঘরে থাকতাম, মাথা ঘুরত। খাওয়া ঠিকঠাক হলে শরীলের মধ্যে রক্ত আপনা-আপনি হয়ে যায়। মা বলে নিবারণ, রক্ত যখন টেনে লেয়, খুব কি ব্যথা লাগে? নিবারণ বলে ধুর। পিমড়ে কামড়ের মতো। কিছু বুঝা যায় না।
দু’দিন ধরে মায়ে পুতে গল্প করল। কী কী খায় নিবারণ বিতাং করে তত্ত্ব তালাশ নিল। নিবারণ একটু কমিয়ে কমিয়ে বলল। এত ভালো ভালো খাবারদাবারের কথা দুই ছোট বোনের সামনে বলতে লজ্জা করছিল খুব।
এমনি করে কেটে গেল আরও দু’মাস। নতুন বছর এল। নতুন বছরে নতুন স্কুলে ভর্তি হবে নিবারণ। নিবারণ খুব ভালো সুদ কষা, লাভক্ষতির অঙ্ক পারে। অ্যালজাবরাও পারে। নিবারণ হিসেব করে দেখেছে ওর পিছনে বাবুদের দেড় হাজার টাকার উপর মাসে খরচ হয়। মাস্টারই তো নেয় চারশো টাকা।
দুনিয়াতে কত সুখ। চপ-কাটলেটের সঙ্গে বেগুনি সুতোর মতো পেঁয়াজে কত সুখ লেগে থাকে। পাউরুটির গায়ে লেপটে থাকা মাখনে কত সুখ। ফ্যানের হাওয়ায় পর্দা নড়ে সুখে। কলিং বেলে টুংটাং শব্দ ফোটে সুখে। না পারা অঙ্ক যখন গোপাল স্যার বুঝিয়ে দেয়, কী সুখ। আর একটা সুখও আছে। ওই বাচ্চাটাকে দেখলে সুখ হয় বড়। বাচ্চাটা কথা বলে, ছুটোছুটি করে, নিবারণের মনে হয় ওর মধ্যেও নিবারণ আছে। নিবারণের রক্ত তো ওর শরীরে। ছেলেটা যখন শ্লেটের উপর চক দিয়ে A লেখে, B লেখে, নিবারণের মনে হয় নিবারণ লিখছে। নিবারণের গাঁয়ের মুচির রক্ত আগুরি ছানার প্রাণ বাঁচাচ্ছে। সুখ। বড় সুখ।
চার মাস হল এ বাড়িতে এসেছে নিবারণ। দশ-বারো বার রক্ত দিয়েছে। এত সুখের বদলে এটুকু এমন কী।
বাড়িতে খুব তোড়জোড়। রাজাকে নিয়ে ভেলোর যাবে ওরা। ওখানে কি একটা চিকিৎসা করাবে আর অন্যদের শরীর থেকে রক্ত নিতে হবে না। অন্য শরীর মানে তো নিবারণ। কারণ রাজা আর নিবারণ দু’জনেরই বোম্বাই গ্রুপ। হতে পারে একজন মুচি অন্যজন আগুরি। ভেলোরে গিয়ে যদি রাজা ভালো হয়ে যায়, তাহলে তো আর নিবারণকে দরকার হবে না।
ধক করে উঠে নিবারণের বুক। খাঁচার মধ্যেকার সুখে থাকা একটা টিয়াপাখি ককিয়ে ওঠে।
একদিন সুমিত স্যার এ বাড়ি আসে। নিবারণের পিঠে হাত দিয়ে বলে ভালো আছিস তো? মাথার চুল নাড়িয়ে দেয়। তারপর রতনকাকার সঙ্গে আস্তে আস্তে অনেক কথা বলে। তারপর যাবার সময় নিবারণকে বলে তোদের বাড়ি আর একবার যেতে হবে। তোদের ভাইবোনদেরও রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
নিবারণ ওর চোখে প্রশ্ন চিহ্ন ধরে রাখলে, সুমিত বলে দরকার আছে। সে পরে দেখা যাবে।
ক্রমশ ওদের বাড়ির বিভিন্ন কথাবার্তায় জানতে পারল – ভেলোরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যানটেশন সম্ভব কিনা খতিয়ে দেখতে। গোপাল স্যারকে বোনম্যারো মানে কি জিজ্ঞাসা করাতে নিবারণ জানতে পারল হাত পায়ের হাড়ের মধ্যে যে তুলতুলে মজ্জা, ওটাই হল রক্ত তৈরির কারখানা। নিবারণ বুঝল রাজার ওই হাড়ের ভিতরের মজ্জার ভিতরে কিছু ওষুধপত্র-ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হবে। টাকা থাকলে কত কী হয়।
ওরা ভেলোর গেল। নিবারণ তখন দেশের ঘরে। গাঁয়ে তখন পোড়ামার পরব চলছে। আগে মুরগি বলি হত খুব। এবার সেরকম হল না। পোড়ামা খুব জাগ্রত। পরবের সময় অনেকেই মানত করে ঢেলা বাঁধে।
নিবারণ পোড়ামায়ের থানে গেল। উবু হয়ে বসল।
কী চাইবে ও?
এখানে আসার আগে ও ভেবে এসেছিল মায়ের কাছে বলবে ভেলোরে গিয়ে রাজা যেন ভালো না হয় মা।
রাজা ভালো হয়ে গেলে তো নিবারণ বাতিল।
কিন্তু উবু হয়ে ও কথা বলতে পারল না। কিছুতেই পারল না। বরং ছেলেটাকে ভালো করে দাও বলে জারুল গাছের ডালে একটা ঢিল বেঁধে দিল।
কিন্তু নিবারণ তো জানে না বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যানটেশন করতে গেলে আবার দরকার হবে সেই বোম্বাই গ্রুপ। বোম্বাই গ্রুপের মজ্জা। সেই মজ্জা একটা শরীরের হাড়ের ভিতর থেকে টেনে অন্য শরীরের হাড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। আর বোম্বাই গ্রুপ যদি কোনো শরীরে পাওয়া যায়, তার পরিবারের অন্যদেরও সেই রক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
বেচারা ঢেলাটাও তো জানে না এতসব। পোড়ামায়ের থানে সরল গ্রাম্য বালকের সুখে দোল খাচ্ছে মানসিকের ঢেলাটা।