ভেলকিবাজির সাতকাহন
আমাদের আড্ডাটির কথাটা তো আগেই বলেছি। সাপ্তাহিক আড্ডা। শিক্ষামূলক বটে। একেক সপ্তাহে একেক টপিকের উপর আলোচনা চলে।
আমি আর সাজিদ মাগরিবের নামাজ পড়ে এগুচ্ছিলাম। উদ্দেশ্য-আড্ডাস্থল। আজ আড্ডা হচ্ছে সেন্ট্রাল মসজিদের পেছনে। ওই দিকটা একটা মাঝারি সাইজের বটগাছ আছে। বটতলাতেই আজ আসর বসার কথা।
খানিকটা দূর থেকে দেখলাম আড্ডাস্থলে বেশ অনেক জনের উপস্থিতি। কেউ একজন যেন দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে।
তাকে দেখে শামসুর রহমানের কবিতার দুটি লাইন মনে পড়ে গেল-
‘স্বাধীনতা তুমি-
বট ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ ’
আড্ডাস্থলে পৌঁছে দেখি হুলস্থুল কান্ড। আলোচনা তখন আর আলোচনায় নেই, বাড়াবাড়িতে রূপ লাভ করেছে।
দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে যে কথা বলছিল, সে হলো রূপম। ঢাবির ফিলোসফির স্টুডেন্ট। অ্যাথেইজমে বিশ্বাসী। তাঁর মতে, ধর্ম কিছু রুপকথার গল্প বৈ কিছু নয়। সে তর্ক করছিলো হাসনাতের সাথে। হাসনাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্থ্রোলজিতে পড়ে।
রুপমের দাবি- একমাত্র নাস্তিকতাই স্বচ্ছ, সৎ আর বিজ্ঞানভিত্তিক কথা বলে। কোন প্যাচ গোচ নেই, কোনো দুই নম্বরি নেই, কেন ফ্রডফিরি নেই। যা বাস্তব, যা বিজ্ঞান সমর্থন করে- তাই নাস্তিকতা।
মোদ্দাকথা, নাস্তিকতা মানে প্রমাণিত সত্য আর স্বচ্ছতার দিশা।
হাসনাতের দাবি- ধর্ম হলো বিশ্বাসের ব্যাপার। আর বিশ্বাসের ব্যাপার বলেই যে একে একেবারে রূপকথা বলে চালিয়ে দিতে হবে, তা কেন?
ধর্ম ধর্মের জায়গায়, বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যতা দেখাতে গিয়ে যে আলবার্ট আইনস্টাইন সহ বড় বড় কিছু বিজ্ঞানী আর দার্শনিকদের মন্তব্য কোট করতে লাগলো।
আমি গিয়ে সাকিবের পাশে বসলাম। তার হাতে বাদাম ছিল। একটি বাদাম ছিলে মুখে দিলাম।
সাজিদ বসলো না।
সে রুপমের পাশে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। বলল, -‘এতো উত্তেজনার কি আছে রে?’
-‘উত্তেজনা হবে কেন?’ -রুপম বলল।
-‘তোকে দেখেই মনে হচ্ছে, অনেক রেগে আসিস। এনিথিং রং?’
হাসনাত বলে উঠল, -‘উনি নাস্তিকতাকে ডিফেন্ড করতে এসেছেন। উনার নাস্তিকতা কত সাধু লেভেলের, তা প্রমাণ করার জন্যই ভাষণ দেওয়া শুরু করেছেন।’
সাজিদ হাসনাতকে ধমক দেওয়া সুরে বলল, -‘তুই চুপ কর ব্যাটা। তোর কাছে জানতে চেয়েছে আমি?’
হাসনাতকে সাজিদের এইভাবে ঝারি দিতে দেখে আমি পুরো হাঁ করে রইলাম। হাসমত সাজিদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের একজন। আর এই রুপমের সাথে সাজিদের পরিচয় ক’দিনের? মনে হয় এক বছর হবে। রূপমের জন্যে তার এতো দরদ কিসের? মাঝে মাঝে সাজিদের এসব ব্যাপার আমার এত বিদঘুটে লাগে যে, ইচ্ছে করে তার কানের নিচে দু চারটা লাগিয়ে দিই।
সাজিদের ধমক খেয়ে বেচারা হাসনাতের মনটা খারাপ হয়ে গেল। হবারই তো কথা।
সাজিদ আবার রুপমকে বলল, -‘বল কি হয়েছে?’
-‘আমি বলতে চাইছি, ধর্ম হলো গোঁজামিলপূর্ণ একটা জিনিস। সেই তুলনায় নাস্তিকতাই স্বচ্ছ, সত্য আর বাস্তবতাপূর্ণ। কোন দুই নাম্বারি তাতে নেই।
সাজিদ বলল, ‘তাই?’
-‘হুম, Any Doubt?’
সাজিদ হাসলো। হাসতে হাসতে সে এসে মিজবাহ’র পাশে বসলো। রুপম বসলো আমার পাশে। বটগাছের নিচের এই জায়গাটা গোলাকার করে বানানো হয়েছে। সাজিদ আর রুপম এখন মুখোমুখি বসা।
সাজিদ বলল, -‘বন্ধু, তুই যতটা স্বচ্ছ, সত্য আর সততার সার্টিফিকেট তোর বিশ্বাসকে দিচ্ছিস, সেটা এতটা স্বচ্ছ, সত্য আর সৎ মোটেও নয়।
রুপম বলল, -‘মানে? কি বলতে চাস তুই? নাস্তিকরা ভুয়া ব্যাপারে বিশ্বাস করে? দুই নাম্বারি করে?’
-‘হুম। করে তো বটেই। এটাকে জোর করে বিশ্বাসও করায়।’
-‘মানে?’
সাজিদ নড়েচড়ে বসলো। বললো, -‘খুলে বলছি।’
এরপরে সাজিদ বলতে শুরু করল-
‘বিজ্ঞানীরা যখন DNA আবিষ্কার করল, তখন দেখা গেল আমাদের শরীরের প্রায় ৯৬-৯৮% DNA হল নন কোডিং। অর্থাৎ, এরা প্রোটিনে কোন প্রকার তথ্য সরবরাহ করে না। ২-৪% DNA ছাড়া বাকি সব DNA-ই নন কোডিং। এগুলোর তখন নাম দেয়া হলো- Junk DNA। Junk শব্দের মানে তো জানিস, তাই না? Junk শব্দের অর্থ হলো ‘আবর্জনা’। অর্থাৎ, এই 98% DNA-র কাজ কোন কাজ নেই বলে এগুলোকে ‘বাতুল DNA’ বা ‘Junk DNA’ বলা হল।
ব্যস, এটা আবিষ্কারের পরে বিবর্তনবাদী নাস্তিকরা তো খুশি তে লম্ফঝম্ফ শুরু করে দিলো। তারা ফলাও করে প্রচার করতে লাগল যে, আমাদের শরীরের যে ৯৮% DNA আছে সেগুলো হলো, Junk, অর্থাৎ, এদের কোন কাজ নেই। এই ৯৮% DNA ডারউইনের বিবর্তনবাদের পক্ষে অনেক বড় প্রমান। তারা বলতে লাগলো- মিউটেশনের মাধ্যমে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে রূপান্তরিত হবার সময় এই বিশাল সংখ্যক DNA আমাদের শরীরে রয়ে গেছে।
যদি কোন বুদ্ধিমান স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করতো, তাহলে এই বিশাল পরিমাণ অকেজো অপ্রয়োজনীয় DNA তিনি আমাদের শরীরে রাখতেন না। কিন্তু কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বার হাতছাড়া, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় আমরা অন্য একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই এ বিশাল অপ্রয়োজনীয় কিছু DNA আমাদের শরীরে এখনো বিদ্যমান।
বিবর্তনবাদীদের গুরু, বিখ্যাত বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তো এই Junk DNA কে বিবর্তনবাদের পক্ষে বড়সড় প্রমান দাবি করে করে একটি বিশাল সাইজের বইও লিখে ফেলেন। বইটির নাম ‘The selfish Gene’।
কিন্তু বিজ্ঞান ওই Junk DNA তে আর বসে নেই।
বর্তমানে এপিজেনেটিক্সের গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, এতদিন যে DNA কে Junk বলে বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ করে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার কোন কিছুই Junk নয়। আমাদের শরীরে কোন রয়েছে নানা রকম বায়োকেমিক্যাল ফাংশন। যেগুলোকে নাস্তিক বিবর্তনবাদীরা এতদিন অকেজো, বাতিল, অপ্রয়োজনীয় বলে বিবর্তনের পক্ষে বড় প্রমাণ বলে লাফিয়েছে, সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে- এসব DNA মোটেও অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। মানবদেহে এদের রয়েছে নানান ফাংশন। তারা বলতো, প্রকৃতির অন্ধ প্রক্রিয়ায় মানুষ অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই এরকম অকেজো নন ফাংশনাল DNA শরীরে রয়ে গেছে। যদি কোন সৃষ্টিকর্তা বিশেষভাবে মানুষকে সৃষ্টি করত, তাহলে এরকম অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের শরীরে থাকত না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এসব DNA মোটেও নন ফাংশনাল নয়। আমাদের শরীরে এদের অনেক কাজ রয়েছে। তাহলে বিবর্তনবাদীরা এখন কি বলবে, তারা তো বলেছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলেই এগুলো বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ। কিন্তু এগুলোর প্রয়োজন যখন জানা গেল, তখনো কি তারা একই কথা বলবে? ডকিন্স কি তার ‘The selfish Gene’ বইটা সংশোধন করবে? বিবর্তনবাদীরা কি তাদের ভুল শুধরে নিয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবে? বল দোস্ত, এইটা কি দুই নাম্বারি না?
সাজিদ থামল। রুপম বলল, -‘বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে রকম দু-একটি ধারণা পাল্টাতে পারে। এটা কি চিটিং করা হয়?
সাজিদ বলল, -‘না। কিন্তু বিজ্ঞান কোনো ব্যাপারে ফাইনাল কিছু জানানোর আগে তাকে কোন নির্দিষ্ট কিছু এর পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দেওয়া, প্রতিপক্ষকে এটা দিয়ে এক হাত নেওয়া এবং এটা পক্ষে কিতাবাদি লিখে ফেলাটা চিটিং এবং নাস্তিকরা তাই করে।’
সাজিদ বলল, -‘শুধু Junk DNA নয়। আমাদের শরীরে যে অ্যাপেন্ডিক্স আছে, সেটা নিয়েও কত কাহিনী তারা করেছে। তারা বলেছে, অ্যাপেন্ডিক্স আমাদের শরীরের অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ। আমাদের শরীরের কোন কাজ নেই। যদি কোন বুদ্ধিমান সত্ত্বা আমাদের সৃষ্টি করত, তাহলে অ্যাপেন্ডিক্স এর মত অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রাখত না। আমরা শিম্পাঞ্জি জাতীয় এক প্রকার এপ থেকে প্রকৃতি অন্ধ প্রক্রিয়ায় বিবর্তিত বলেই এরকম অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ আমাদের শরীরে রয়ে গেছে। এটার কোনো কাজ নেই।
এটাকে তারা বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ বলে চালিয়ে দিত।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, অ্যাপেন্ডিক্স মোটেও কোনো অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ নয়। আমাদের শরীরে যাতে রোগজীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য যে টিস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটাত নাম লিম্ফ টিস্যু। এই টিস্যু আমাদের শরীরে অনেকটা সৈনিক তথা প্রহরীর মতো কাজ করে। আর, আমাদের বৃহদন্ত্রের মুখের প্রচুর লিম্ফ টিস্যু ধারনকারী যে অঙ্গটি আছে, তার নাম অ্যাপেনডিক্স।
যে অ্যাপেনডিক্সকে একসময় অকেজো ভাবা হতো, বিজ্ঞান এখন তার অনেক ফাংশনের কথা আমাদের জানাচ্ছে। বিবর্তনবাদীরা কি আমাদের এব্যাপারে কোনকিছু নসিহত করতে পারে? এখন কি বলবে অ্যাপেন্ডিক্স অকেজো? বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ?
রুপম চুপ করে আছে। সাজিদ বলল, -‘এতো গেল মাত্র দুটি ঘটনা। তুই কি ‘মিসিং লিঙ্ক’ এর ব্যাপার জানিস রুপম?
আমার পাশ থেকে রাকিব বলে উঠল, -‘মিসিং লিঙ্ক আবার কি জিনিস?’
সাজিদ রাকিবের দিকে তাকাল। বলল, -‘বিবর্তনবাদীরা বলে থাকে একটা প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে অন্য একটা প্রাণী বিবর্তিত হয়। তারা বলে থাকে, -শিম্পাঞ্জি থেকে আমরা, মানে মানুষ এসেছে বিবর্তন প্রক্রিয়ায়। যদি এরকম হয়, তাহলে শিম্পাঞ্জি থেকে কিন্তু এক লাফে মানুষ চলে আসে নি।
অনেক অনেক ধাপে শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষ এসেছে। ধর, ১ সংখ্যাটা বিবর্তিত হয়ে ১০ এ যাবে। এখন ১ সংখ্যাটা কিন্তু এক লাফে ১০ হয়ে যাবে না। তাকে অনেক গুলো মধ্যবর্তী পর্যায় (২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করে ১০ হতে হবে। এই যে ১০ এ আসতে সে অনেকগুলো ধাপ (২, ৪, ৭, ৮, ৯) অতিক্রম করল, এ ধাপগুলি হল ১ এবং ১০ এর মিসিং লিঙ্ক।’
রাকিব বলল, -‘ও আচ্ছা, বুঝলাম। শিম্পাঞ্জি যখন মানুষের বিবর্তিত হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে কিছু মানুষের কিছু শিম্পাঞ্জির বৈশিষ্ট্য আসবে। এই বৈশিষ্ট্য সম্বলিত পর্যায়টাই মিসিং লিঙ্ক, তাই না?’
-‘হুম। ধর, মৎসকন্যা। তার অর্ধেক শরীর মাছ, অর্ধেক শরীর মানুষ। তাহলে তাকে মানুষের একটি মধ্যবর্তী পর্যায়ে হিসেবে ধরা যায়। এখন কেউ যদি দাবী করে যে, মাছ থেকে মানুষ এসেছে, তাহলে তাকে ঠিক মৎস্য কন্যার মত কিছু একটা প্রমাণ করতে হবে। এটাই হল মিসিং লিঙ্ক।
রুপম বলল, -‘তো এইটা নিয়ে কি সমস্যা?’
সাজিদ আবার বলতে লাগলো, -‘বিবর্তনবাদ তখনই সত্যি হবে, যখন এরকম সত্যিকারের মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণী রয়েছে। সেই হিসাবে বিবর্তনবাদ সত্য হলে, কোটি কোটি প্রাণের বিলিয়ন বিলিয়ন এরকম মিসিং লিঙ্ক পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু মজার ব্যাপার, এরকম কোন মিসিং লিঙ্ক আজ অবধি পাওয়া যায়নি। গত দেড়শ বছর ধরে অনেক অনেক ফসিল পাওয়া গেছে কিন্তু সেগুলোর কোনটির মিসিং লিঙ্ক নয়। বিবর্তনবাদীরা তর্কের সময় এই মিসিং লিঙ্কের ব্যাপারটা খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কেউ কেউ বলে, আরো সময় লাগবে। বিজ্ঞান একদিন ঠিক পেয়ে যাবে, ইত্যাদি।
কিন্তু ২০০৯ সালে বিবর্তনবাদীরা একটা মিসিং লিঙ্ক পেয়ে গেল যা প্রমাণ করে যে, মানুষ শিম্পাঞ্জী গোত্রের কাছাকাছি কোন প্রাণী থেকেই বিবর্তিত। এটার নাম দেওয়া হল-Ida।
বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় রাতারাতি তো ঈদের আমেজ নেমে আসলো। তারা এটাকে বলল, -‘The eighth wonder of the world’
কেউ কেউ তো বলছিল, -‘আজ থেকে কেউ যদি বলে বিবর্তনবাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তারা যেন Ida কে প্রমাণ হিসেবে হাজির করে। বিবর্তনবাদীদের অনেকেই এটাকে ‘Our Monalisa’ বলেও আখ্যায়িত করেছিল। হিস্ট্রি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি চ্যানেলে এটাকে ফলাও করে প্রচার করা হলো। সারা বিবর্তনবাদ দুনিয়ায় তখন সাজ সাজ রব।
কিন্তু, বিবর্তনবাদীদের কান্নায় ভাসিয়ে ২০১০ সালের মার্চে টেক্সাস ইউনিভার্সিটি, ডিউক ইউনিভার্সিটি আর ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র গবেষক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখালেন যে, Ida কোন মিসিং লিঙ্ক নয়। এটা Lomour নামক একটি প্রাণীর ফসিল। তাদের এই রিসার্চ পেপার যখন বিভিন্ন নামিদামি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করা হলো, রাতারাতি বিবর্তনবাদ জগতে শোক নেমে আসে। বল রুপম, এইটা কি জালিয়াতি নয়? একটা আলাদা প্রাণীর ফসিলকে মিসিং লিঙ্ক বলে সাধারণ মানুষকে ধোকা দেওয়া কি চিটিং নয়?’
এরচেয়েও জঘন্য কাহিনী আছে এই বিবর্তনবাদীদের। ১৯১২ সালে Piltdown Man নামে ইংল্যান্ডে সাসেক্সে একটি জীবাশ্ম পাওয়া যায় মাটি খুঁড়ে। এটিকেও রাতারাতি ‘বানর এবং মানুষের’ মিসিং লিঙ্ক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এটাকে তো ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রেখে দেওয়া হয়। বানর এবং মানুষের এই মিসিং লিঙ্ক দেখতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতো।
কিন্তু ১৯৫৩ সালে কার্বন টেস্ট করে প্রমান করা হয় যে, এটি মোটেও কোনো মিসিং লিঙ্ক নয়। এটাকে কয়েকশো বিলিয়ন বছর আগের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, এই খুলিটি মাত্র ৬০০ বছর আগের আর এর মাড়ির দাতগুলো ওরাং ওটাং নামের অন্য প্রাণীর। রাতারাতি বিবরতন মহলে শোক নেমে আসে।
বুঝতে পারছিস রুপম, বিবর্তনবাদকে জোর করে প্রমান করার জন্য কত রকম জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে?
একটা ভুয়া জিনিষকে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রমাণ হিসেবে গিলানো হয়েছে। নেট ঘাটলে এরকম জোড়াতালি দেওয়া অনেক মিসিং লিঙ্ক এর খবর তুই এখনো পাবি। মোদ্দাকথা, এ নাস্তিকতা, এই বিবর্তনবাদ টিকে আছে কেবল পশ্চিমা বস্তুবাদীদের ক্ষমতা আর টাকার জোরে।
এ বিবর্তনবাদই তাদের সর্বশেষ সম্বল ধর্মকে বাতিল করে দেওয়ার। তাই এটাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, দাঁড় করানোর জন্য, মানুষকে গিলানোর জন্য, তাদের যা যা করতে হয় তারা করবে। যত জালিয়াতির আশ্রয় নিতে হয় তারা নিবে।
এরপরও কি বলবি তোর নাস্তিকতা সাধু? সৎ? প্রতারনাবিহীন নির্ভেজাল জিনিস?
রুপম কিছু না বলে চুপ করে আছে। হাসনাত বলে উঠলো, -‘ইশ ! এতক্ষণ তো নাস্তিকতাকে নির্ভেজাল, সৎ, সাধু, কোন দুই নাম্বারি নেই, কোন ফ্রডবাজি নেই বলে লেকচার দিচ্ছিলি। এখন কিছু বল?’
এশার আযান পড়লো। আমরা নামাযে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আমাদের সাথে রাকিব আর হাসনাতও আছে অল্প। অল্প একটু পথ হাটার পরে আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। সাজিদ বলল, -‘তোর আবার কি হলো রে?’
আমি রাগি চেহারায় বড় বড় চোখ করে বললাম, -‘তুই ব্যাটা হাসনাতকে তখন ওইভাবে ঝাড়ি দিয়েছিলি কেন?’
সাজিদ হাসনাতের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বলল, ‘শেক্সপিয়র বলেছেন, Sometimes I have to be cruel just to be kind’………
আমরা সবাই হা হা হা করে হেসে ফেললাম।
বিবর্তন তত্ত্ব এখনো বিকাশের পর্যায়ে তবে ৪৩০০ ধর্মে বর্ণিত ৪৩০০ টি সৃষ্টিতত্ত্ব কাহিনীর প্রতিটিই সত্য। কারণ ওরা সবাই আস্তিক।