ভেজা বারুদ – ৪

টিভিতে পারমিতার রান্নাঘর চলছে। উপকরণ খাসির রেওয়াজি মাংস, ওয়েস্টার সস, কুকিং রাম, বেসিল লিফ, বেরিস্তা…এসবের অনেক কিছুই ওরা চেনে না। বেসিল পাতাটা কীরকম তুলসী পাতার মতো দেখতে। এইসব রান্নার প্রোগ্রামগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে সুলতার। বিশেষত গার্নিশ করা দেখতে। প্টে সাজিয়ে কত সুন্দর করে শশা, লংকা, টম্যাটো, রঙিন ক্যাপসিকাম আলপনার মতো সাজিয়ে দেয়। দুটো সবুজ ধনেপাতা যেন লক্ষ্মীর একজোড়া পা। এরকম সুন্দর করে সাজানো খাবার বাড়িতে কখনও দেখেনি সুলতা। সুলতা, চানু, ওদের বাবা, মা, কারওর জন্মদিন হয় না। আগে ভাইয়ের জন্মদিন হত। অনেক আগে। তখন ঠাকুমা ছিল। বাজার থেকে জ্যান্ত শিঙি মাছ কিনে আনত বাবা, ঠাকমা গিয়ে গঙ্গায় ছেড়ে আসত। একটু পায়েস খাওয়া হত। কোনওদিন কেক কাটা হয়নি, মোমবাতি নেভানো হয়নি, বাড়িতে কোনওদিন হ্যাপি বার্থডে গান হয়নি। টিভিতে একটা অন্য জগতে ঢুকে যায়। টিভির মায়েরা সব কী সুন্দর সেজেগুজে থাকে। তিন ভাই একসঙ্গে থাকে, নিজেদের বাড়ি। মাটন ওডিপাস হয়ে গেছে। এটা একটা গ্রিক রান্না। যে রান্না করল, সে নাকি গ্রিস দেশে অনেকদিন ছিল। যে টেস্ট করল, সে চামচ দিয়ে একটুখানি কেটে মুখে দিয়ে বলল অ’সাম। সুলতার মা বলল, ঢং। সুলতার মাও সুলতার সঙ্গে বসে মাঝে মাঝে টিভি দেখে, আর মন্তব্য করে। সিরিয়াল দেখতে দেখতে কখনও বলে মুখপুড়ি, কখনও বলে আদিখ্যেতা, কখনও বলে তোকে যমে নেয় না কেন। ওদের ছশো কুড়ি স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের মধ্যে চোদ্দো ইঞ্চি বাক্সের ভিতরই গোটা পৃথিবীটা ঢোকানো। টিভিই ওদের বাইরের বিশ্ব। তুই আমার ইলিশ মাছ, তুই আমার কই—গাইতে গাইতে দেব নাচে, হিরণ নাচে—বরফ পড়া জমিতে, ধু-ধু সাদা, ওখানে লাল-নীল পোশাকে কোয়েল মল্লিক, নুসরত…তোর লাইগ্যা মাইরি বলছি দেওয়ানা হই…এটা গানের পরের লাইন…এই লাইনটা সাদা বরফের মধ্যে নয়, ফুল ছেটানো বাগানে, দূরে পাহাড়। চ্যানেল ঘোরালে কোনও মা বুক চাপড়ে কাঁদছে, মুখ ঝাপসা করা কোনও মেয়ে বলছে, ওরা চার জন ছিল। ওরা বলল আমাদের সঙ্গে চল নইলে জানে মেরে দেব। আমি যখন বাঁচাও বলে চিৎকার করতে গেছি, তখন আমার মুখের ভিতরে কাগজ পাকিয়ে ঢুকিয়ে দিল, গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে দিল…তারপর অন্য চ্যানেলে—না-না-না…ধর্ষণটর্ষণ চিরকাল হয়ে আসছে, আজকে নাকি, আগে এত টিভি চ্যানেল ছিল না—তাই…এসব কুৎসা-কুৎসা…অন্য চ্যানেল। তু মেরি হার্ট বিট হ্যায় তু সুপা ডুপা হ্যায়—আয় বুকে আয় সেটে যা সেটে যা।

এ চ্যানেল থেকে ও চ্যানেলে ঘোরে ওরা। সুলতা রুটি বেলতে পারে, ভাতের মাড় গালতে পারে, আলু কুটতে পারে, কাপড় জামা কাচতে পারে, যাকে বলে গৃহকর্মে নিপুণা। বহুদিন ধরেই ও গৃহকর্মে নিপুণা। বরানগরের বাড়িতে তো গ্যাস এল কয়েক বছর আগে, নইলে কোরোসিনে রান্না হত; কয়লায়, স্টোভে পলতে পরাতে পারে সুলতা, পলতে পড়ে গেলে উঠিয়ে দিতে পারত, কয়লার তোলা উনুনও ধরাতে পারত ঘুঁটে ভেঙে…কিন্তু হোম সায়েন্সে কত কম নম্বর পেত…।

ইস্কুলে কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করত বড় হয়ে কী হতে চাও…সুলতা বলত—জানি না। কিন্তু এইম অফ ইয়োর লাইফ—মুখস্থ করেছিল আই ওয়ান্ট টু বি এ টিচার…। দিদিমণি লিখেছিল বইয়ে যা আছে লিখবে না, তুমি নিজের মনের কথা লিখো। ও সেদিন নিজের মনের কথা ভাবছিল, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিল না। টিচাররা পড়াশুনোয় কত ভালো হয়, সব বানান ওরা জানে। কী করে টিচার হবে, ওর তো খুব বানান ভুল হয়। এটুকু জানত ও, দেখতে সুন্দর হলে হিরোইন হওয়া যায়। আই ওয়ান্ট টু বি এ টিচার রচনায় টিচারের জায়গায় হিরোইন লিখে দেবার কথা ভেবেছিল। টিচারস আর ব্যাকবোন অফ এ নেশন, টিচারস সার্ভ ফর সোসাইটি, এ সব তো মুখস্থই, টিচারের বদলে হিরোইন লিখে দিলেই তো হয়। কিন্তু হিরোইন বানানটা নিয়ে তো গণ্ডগোল। যতবার হিরোইন লিখবে, ততবার ভুল হবে। ও লিখেছিল আই ওয়ান্ট টু বি আই ডু নট নো। সুলতা তখন ক্লাস টেনে। বোঝাই যাচ্ছে, ঠিক মতো বাক্য গঠন করতে পারত না তখনও।

টিভিতে রূপচর্চার অনুষ্ঠানও দেখে সুলতা। রূপলাগি, রূপটান, রূপসাগর কত কী নাম। ওখানে কত কী মাখামাখি হয়। মুখের উপর পাকা পেঁপে, শশা বাটা, আপেল, আঙুর, কলা সবই মেখে ফেলতে বলে। এমনকী কুমড়ো, পুঁইপাতাও। বোধ হয় কোনও রূপ বিশেষজ্ঞ এখনও কচুবাটা মুখে মেখে নিতে বলেছে এমন শোনেনি সুলতা। ও তেমন কিছু মাখে না। কলেজে মেয়েরা বলত তুই মুখে কী মাখিস রে, বল না, বল না। ও বলত, কিছু তো মাখি না…ওরা বিশ্বাস করত না। বলত বাব্বা, বলবি না…কিচ্ছু না মেখেই এত চকচক করে…।

সুলতা জানে ছেলেরা ওকে দেখে। কলেজে ঝাড়ি কথাটা শিখেছিল। বারবার তাকানোকে ঝাড়ি করা বলে। ওদের কলেজটা কো এডুকেশন কলেজ ছিল না। সকালে মেয়েদের, দুপুরে কো-এড। কত ছেলে আগে আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। একবার জ্বর হয়েছিল বলে, পরপর চার-পাঁচদিন কলেজে যায়নি সুলতা, যে দিন গেল, শুনতে পেল—কী হয়েছিল, আসনি কেন? কে বলেছিল বুঝতে পারেনি সুলতা। সুলতা বুঝতে পারত অনেক চোখ ওর দিকে। ওর কীরকম গা শিরশির করত, ভালোই তো লাগত বেশ। ও মাথা নিচু করেই কলেজে ঢুকত, ও জানত দুপাশের দাঁড়ানো ছেলেরা ফুল ছিটোচ্ছে—দৃষ্টি দিয়ে। একবার ওর ব্যাগের উপর উড়ে এসে পড়েছিল এক টুকরো ভাঁজ করা কাগজ। লেখা—শুধু তোমারই জন্য হয়েছি প্রেমের বন্য। আমার নাম অনন্য। আমায় ফোন করলে হব ধন্য। ওর মোবাইল নম্বরটা লেখা ছিল এরপর। সুলতার মোবাইল ফোন ছিল না। এখনও নেই। কোনও বুথ থেকে ফোন করতে পারত। নিশ্চয়ই খুব ইচ্ছেও করছিল। এই ছেলেটাই কি ওই ছেলেটা…যে বলেছিল কী হয়েছিল আসনি কেন? ওদের ক্লাসের অনেক মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ছিল। একটা মেয়ে তো রোজ ওর বয়ফ্রেন্ডের বাইকে করে ফিরত। ছেলেটা কলেজের উলটো দিকে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সুলতা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখত। ওর একটা বান্ধবী ছিল, মধুমিতা। ওর সঙ্গে প্রায়ই এক বাসে ফিরত। ও সিঁথিতে নামত, সুলতা তো বরানগর। মধুমিতা বয়ফ্রেন্ডদের গল্প করত। ওর অনেক বয়ফ্রেন্ড। গিফট দেখাত, বলত এটা মলয়, এটা অর্ণব, এটা পিন্টু, এটা বুলটুদা। সুলতা জিজ্ঞাসা করত, লাভার কে? মধুমিতা বলত, কেউ না। সুলতা বলেছিল, তাহলে? মধুমিতা বলেছিল, তা হলে কী? কী বলতে চাইছিল সুলতা ঠিক বোঝাতে পারছিল না। একদিন বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিল, একটা ছেলে এল, বলল শ্যামবাজারে এসেছিলাম, দেখা হয়ে গেল। চ’ কচুরি খাই। ওখানে একটা দোকানে ঢুকেছিল ওরা। কলাপাতায় কচুরি ছোলার ডাল। ছেলেটার নাম অর্ণব। মধুমিতা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। ঝাঁকড়া চুল, টাইট গেঞ্জি পরা, এদেরই তো সেকসি ছেলে বলে। এই শব্দটা সুলতা উচ্চারণ করতে পারত না। অসভ্য কথা। কিন্তু মধুমিতারা কী অনায়াসে এসব বলত। চওড়া কাঁধের ছেলেদের কিস খেতে ইচ্ছে হয় বলত। ওরা যখন বসেছিল, টেবিলের তলায় ওই অর্ণবের পা-টা বারবার সুলতার পায়ে লাগছিল। সুলতা পা সরাচ্ছিল। ছেলেটার পা এবার সুলতার পায়ের পাতা চেপে ধরেছে, পায়ে চটি নেই, পায়ের পাতার উত্তাপ লাগছিল। এরপর আর সুলতা পা সরাচ্ছিল না। কোনও মুঠোয় থাকা চড়াই পাখির মতোই পা-টা স্থির। নানাভাবে ওর পায়ের উপর ছেলেটার পা খেলা করছিল, অথচ মধুমিতার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিল, সিনেমা যাবার কথা বলছিল, সুলতা যেন বুঝতে পারছিল মধুমিতার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে ছেলেটা ওর দিকে তাকাচ্ছিল, ওর বুকের দিকে তাকাচ্ছিল, সুলতা ওড়না টানছিল। মধুমিতাও বুঝেছিল, ছেলেটাকে বলেছিল অ্যাই ওকে চাটছিস কেন? তক্ষুনি ছেলেটা পায়ের চাপ হালকা করে দিয়েছিল, সুলতা পা-টা সরিয়ে নিয়ে একদম ওর চেয়ারের পায়ার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ছেলেটার মুখ দেখে কিচ্ছু বোঝার জো ছিল না। ওর মুখ এক কথা বলছিল, ওর পা অন্য কথা বলছিল। মধুমিতা কাকে বিয়ে করেছে কে জানে! হয়তো ওদের কাউকেই করেনি। এতদিনে নিশ্চয়ই বিয়ে হয়ে গেছে। মধুমিতার খবর জানে না, তবে মধুমিতার কথা মনে এলেই ওই ছেলেটার মুখ ভেসে ওঠে। অর্ণব। বাজে ছেলে। তবুও ওই ছেলেটাই কতবার স্বপ্নে এসেছে। ঘোড়ায় চেপে। রূপকথার গল্পে যেমন হয়। বলেছে তোমায় উদ্ধার করতে এসেছি। তোমায় নিয়ে যাব আমি। ঘোড়া ছুটছে, তখন টগবগ শব্দ নয়, মোটরবাইকের ঘড়ঘড় শব্দ।

মধুমিতার চেয়ে তো সুলতা কত ভালো দেখতে। কিন্তু সুলতা কখনও প্রেম করেনি। কেন করেনি? সুলতা নিজে নিজেই ভাবে। প্রেম করতে গেলে একটা মোবাইল লাগে। ও দেখেছে যারা প্রেম করে তারা সবসময় পিটপিট করে মোবাইল টেপে। ওর তো মোবাইল নেই। আর কী লাগে? সাহস। ওটাও তো ওর নেই। ওর ভয় করে। ওর বাবার মতন। ওর ভূতকে ভয় করে, ওর যৌবনকেও ভয় করে। ওদের বরানগরের বাড়ির কলঘরে আয়না ছিল না, এ বাড়ির বাথরুমে আয়না আছে। আয়নায় নিজেকে দেখে ভয় করে। ও বাড়িতে নিজেকে দেখতে পারত না এরকম। কিন্তু ও বুঝত ওকে দেখছে, মধুমিতা যেমন বলেছিল চাটছে। ও বাড়িতে ম্যাক্সি পরেই স্নান করতে হত, তারপর গামছা জড়িয়ে উপরে। উপরে কলঘর ছিল না তো, জল এত পাজি, গায়ে লেপটে থাকে। ও বুঝত ওকে সবাই দেখছে। ভয় করত। একজন ছিল, মদন কাকু বলত, সিঁড়িতে হট করে গায়ে হাত দিয়েছিল, মাকে বলেনি কিচ্ছু, বলতে ভয় করেছিল। মদন কাকুকেও না। শুধু মদন কাকুকে দেখলে জড়োসড়ো হয়ে থাকত, দুটো হাত দিয়ে দুটো কাঁধ ধরে থাকত। বরানগর পাড়ায় একটা ছেলের গলায় মান্না দে-র গান ও কেন এত সুন্দরী হল শুনেছে, পিছন ফিরে তাকায়নি। আর সেই যে ছেলেটা, চিঠি গুঁজে দিয়েছিল, বলেছিল হয়েছি প্রেমের বন্য, ওঁর নাম মনে আছে। অনন্য। ওর আর একটা চিঠির জন্য ওর অপেক্ষা ছিল, সঙ্গে বেশি করে ভয়—যদি আবার চিঠি আসে একটা? দুটো ছেলে, ‘অ’ দিয়ে নাম। ‘অ’ দিয়ে অপমান হয়, অপেক্ষা হয়, অভিমানও হয়।

সুলতার কবে বিয়ে হবে সুলতা জানে না। কেউ জানে না। এই ফ্ল্যাটটা না হলে হয়তো ওর বাবা চেষ্টা চরিত্র করত। বিয়েটা হয়ে গেলে বাবার তো একটা বোঝা কমে। বোঝাই তো। কোনও আয় নেই, অন্ন ধ্বংস। কী করে আয় করবে ও। পড়াশোনায় তো ভালো নয় ও, টিউশনি পাবে না। একদম নিচু ক্লাস। চেষ্টা করেছিল বরানগরে। সবাই ইংলিশ মিডিয়ামের ম্যাম চায়, ম্যাম। সবাই এখন কম্পিউটার শেখে। কম্পিউটার? ও ব্বাবা! অনেক টাকা। তা ছাড়া কঠিন। এসব ভাবলেই ভয় করে। একবার বরানগরে অনেক পোস্টার দেখেছিল—ফ্রিতে ম্যাসাজ শিখে প্রচুর আয় করুন, ১৮ থেকে ৪০ বছরের মহিলারা যোগাযোগ করুন। দুটো মোবাইল ফোনের নম্বর ছিল। টুকে এনেছিল ও। ওর ভাইকে বলেছিল যোগাযোগটা করিয়ে দে না রে…। চানু বলেছিল, ধুস! তোর কি একটুও বুদ্ধি নেই ঘটে? জানিস তোকে দিয়ে কী করানো হবে? সুলতা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল। চানু বলেছিল, একটা ইডিয়েট। সুলতা ঘাড় কাত করেছিল। মেনে নিয়েছিল ইডিয়েটই তো। বোকার হদ্দ। ওই যে অনন্য বলে ছেলেটা, ওকে কি খুঁজে বের করা কঠিন ছিল কিছু? যে চিঠি দিয়েছিল। কলেজ থেকে ফেরার সময়, ডে সেকশনের যে ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের ভিতর থেকে একটা আওয়াজ শুনেছিল—কী হল, নম্বরটা? ওর মোবাইল নেই সেটাতো মুখ ঘুরিয়ে বলতেই পারত। ও বুঝত কেউ ওকে বাসে ওঠা পর্যন্ত ফলো করছে। ওর ভয় করেছে। তাড়াতাড়ি বাসে উঠে গেছে। হতেই তো পারত অনন্য বলত কোনও কিছু চাই না, শুধু তোমাকে চাই। এসব তো হারিয়ে যাওয়া। ভেবে কী হবে। যাক, যা গেছে তা যাক। সুলতার বাবা রোজ কাগজ কেনে না। চানুর ইংরিজি শেখার জন্য সপ্তাহে দু-দিন, ইংরিজি কাগজ। আর রোববার রোববার বর্তমান কাগজ নিয়ে আসে। চুপিচুপি পাত্র-পাত্রী পড়েছে কতবার। ও তো এরকম বিজ্ঞাপনও দেখেছে, যেখানে লেখা থাকে কোনও দাবি নাই, কেবলমাত্র সুন্দরী বিবেচ্য। বাবা এসব দেখেই না। টিভিতে রূপচর্চার অনুষ্ঠান হয়, ওখানে একজন বলেছিল—সুন্দরী মানে ফরসা রং, ভালো ফিগার, বড় চোখ, ঘন চুল আর টিকালো নাক নয়। সৌন্দর্য থাকে ব্যক্তিত্বে। পার্সোনালিটিতেই সৌন্দর্যের প্রকাশ হয়। বুদ্ধিমত্তা, সুন্দর কথা বলা এইসব কিছু নিয়েই মেয়েদের সৌন্দর্য। তাহলে কি ও সুন্দরী? ওর তো ফিগার ভালো। ফিগার মানে কী? হাইট? কত হাইট হলে ঠিক? ও তো পাঁচ দুই। বেশি মোটাও না, রোগাও না। চুল তো ভালোই। চুল ওঠে না। চোখ দুটো একটু ছোট, নাকটাও একটু মোটা, কিন্তু ফরসা তো। ওকে অনেকেই বলেছে, মেয়েরাই—যেমন মধুমিতা, বলেছে তুই মাইরি খুব সেকসি। হাই সেকসি—এই আওয়াজটাও শুনেছে সুলতা, ছেলেদের মুখে, চলন্ত সাইকেল থেকে, রোয়াক থেকে…। এটা খুব অসভ্য কথা, কিন্তু শুনলেই কেমন একটু লাগে, শিরশির করে। শিহরন, বরানগরের বউদি যেটা বলত কারেন্টের মতো।

এক রবিবার সকালে এগারোটা নাগাদ হরিপদর ঘরে বেল বাজল, হরিপদ তখন গামছা পরে দেশি পুঁটি কুটছিল। দেশি পুঁটি সচরাচর পাওয়া যায় না। লেজের কাছটায় একটা লাল ফোঁটা নাকের মাঝখানে একটা ভারী সুন্দর দাগ। পুঁটিমাছ কুটে দেয় না ওরা। রেখার হাঁটু মুড়ে বসা বারণ। পারেই না। জলচৌকিতে বসে উবু হয়ে ওকে কোটাকুটির কাজ করতে হয়। হরিপদ মাছ কুটতে পারে।—বরানগরের মানুষ কিনা, ছেলেরা গঙ্গায় ধরা মাছ ফেরি করে বিক্রি করত। তপসে আর গুলে মাছই বেশি। হরিপদ মায়ের অনেক কাজ করত। ওর মাকে সাহায্য করতেই মাছ কোটাটা শিখে নিয়েছিল। হরিপদর সামনে বসে আছে সুলতা। সুলতাকে হরিপদ বোঝাচ্ছিল। দেশি পুঁটির পিত্তিটা ভারী ইয়ে, একটু চাপ পড়লেই ফেটে যায়। আর তেতো হয়ে যায়। দ্যাখ, এই জায়গাটা আস্তে করে বঁটিতে কেটে বাঁহাতে পেটের তলায় চাপ দিয়ে ডান হাতে পেটের ময়লা টেনে নিবি, পিত্তির থলেটা ময়লার সঙ্গে বেরিয়ে আসবে। এসব শিখে রাখা ভালো, শ্বশুরবাড়িতে এসব লাগবে। ওধার থেকে রেখার গলা—দাঁড়ি-গোঁফের দেখা নেই ক্ষুরে দিচ্ছে শান। সুলতার অবশ্য অন্য একটা প্রবাদ বাক্য মনে এসেছিল—একই মানে, গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। এই প্রবাদ বাক্যটা অনেক সোজা, আর কমন পেয়েছিল দু-বার। এটা অবশ্য কাউকে বুঝতে দিল না সুলতা, বাবার পুঁটি মাছ কাটা দেখছিল। বেল শুনে হরিপদ উঠল। জমাদারটা আজ একটু আগে এসে গেল। কলিং বেল এর ডিংডং শুনলে হরিপদর প্রথম প্রথম মনে হত যেন আগামী জন্মে আছে। এই ডিং ডং ওর এই জন্মের শব্দ নয়। একটু বড়লোক বড়লোক লাগত। ফ্ল্যাশ টিপলে হুঁশ করে জল ছড়িয়ে গিয়ে ওসব জিনিসপত্র সাফ করে দিলে কেমন যেন লাগত। যেন একটা টুসকি মারল আর অন্য কেউ সাফ করে দিল সব, নিজেকে মগ দিয়ে জল ঢালতে হল না। এখানে এখনও কেয়ারটেকার আসেনি। গেটের সামনে বসে থাকবে। যাদের ফ্ল্যাটে কেয়ারটেকার আছে, ওরা সব সেলাম পায়। এ-বাড়িতেও কেয়ারটেকার রাখার কথা হচ্ছে। হরিপদকে সেলাম মারবে। হরিপদর এখন ফ্ল্যাশ, কমোড, কলিংবেল অভ্যেস হয়ে গেছে। গামছাটা একটু টাইট করে নিয়ে গেট খুলল। খুলেই দেখল গুরুপদ কর্মকার। ও কী করবে বুঝতে পারছিল না। ও তো এমনি একটা গামছা পরে আছে, ভিতরে কিছু নেই। সুলতাও একটা ম্যাক্সি, ভিতরে কিছু আছে কিনা বাবাদের জানতে নেই। লিভিং কাম ডাইনিং স্পেস-এ বাজারের থলেটা উলটেছে একটু আগে। আলু, পেঁয়াজ, কাঁচালংকা গড়াগড়ি খাচ্ছে। একটা কুমড়োর ফালি ভেতরে আছে, একটা থালায় কিছু পুঁটি, একটা বঁটি উঁচিয়ে রয়েছে।

হরিপদ বলল আসুন, আসুন…বসুন। কাঠের চেয়ারটা দেখিয়ে দেয়। তিনটে প্লাস্টিকের আর একটা কাঠের চেয়ার রয়েছে ওখানে। গুরুপদ কর্মকার ঘরের চারদিকে চোখ চালায়।…সব বিচ্ছিরিভাবে আছে…হরিপদ মাথা চুলকোচ্ছিল। গুরুপদ বলল, না-না, অসময়ে আসলাম তো…ওইসব যেমন আছে থাকে…গুরুপদ ওইসব জিনিসগুলি দেখতে থাকে। ওইসবের মধ্যে মেয়েটাও পড়ে…। হরিপদ বোঝে…ও ঠিক আছে, কাকার মতন…। সুলতা ম্যাক্সিটা একবার টানল। তারপর ঘরে চলে গেল। রেখা ঘর থেকে একবার উঁকি দিল। গুরুপদ বলল—আবার চিঠিটা…। আমার একটা ছেলে রাখা ছিল। সকালে রোজ আসত। আমার কামকাজ করত, খুচখাচ চিঠিপত্র লেখা, ফাইলগুলি ঠিকমতো রাখা, এইসব করত। ছেলেটার জন্য একটা ল্যাপটপও কিনলাম। ছেলেটা ভালোই কিন্তু কামাই দিত। চাকরির পরীক্ষা, কোচিংয়ে পরীক্ষা এইসব। ছেলেটা চাকরি পাইয়া গেছে। একটা চিঠি আসল পরশুদিন। খামের উপর ল্যাখা আর্জেন্ট অ্যান্ড ইমপর্টেন। চিঠিটা পড়লাম, আমার ছেলের সম্পর্কে লেখছে। ডিয়ার মিস্টার কর্মকার, ইয়োর সন, জয়দীপ কর্মকার। স্টুডেন্ট অফ দিস স্কুল…ইংলিশ পড়তে আমার কষ্ট নাই, মাঝে-মাঝে বুঝি না। পরটা লিখছে ক্যান, দুইবার। পরটা মাকে কী?

চিঠিটা এগিয়ে দিল গুরুপদ। হরিপদ পড়ছে। অ্যাবিউজ অফ সেল ফোন…অ্যাবিউজ মানে কী…ভুল ইউজ, মানে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। হি ভেরি অফটেন ডাউন লোডস ইরোটিকাজ…। ইরোটিকা মানে কী? হরিপদ বলে আমিও ভালো ইংরাজি জানি না…।

কেন, ইংলিশ কাগজ দেখলাম সেদিন আপনার বগলে…গুরুপদ বলে।

—না ওটা আমার ছেলের জন্য আনি। আপনার কাছে যে ছেলেটা কাজ করত, ও কোথায় চাকরি পেল।

ও একটা ব্যাংকে পেয়ে গেছে।

—ব্যাংক? উরিবাবা…আমার ছেলেটাতো কত পরীক্ষা দিল। মোটামোটা বই পড়ে। ওই ছেলেটার নাম ঠিকানাটা দিন না, আমার ছেলেটাকে ওর কাছে পাঠাব, যদি একটু গাইড করে…।

—ওই ছেলেটা আপনার জন্য কিছু করবে না। ও একের নম্বরের নিমকহারাম। আমি ওর জন্য কম স্যাকরিফাইজ করিনি। সকালে একটু ফল খাই। আমার আপেল ওরে দিছি। পূজায় জামা। এরকম ঝাপুস কইরা ছাইড়া দিলি? আগে একটা ঠিকমতো লোক দে…।

কথাটা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে যায় গুরুপদ। হরিপদর মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকায়। বলে আপনার ছেলেটা তো আছে…আচ্ছা, সেটা পরে হবে। আগে চিঠির কেসটা শ্যাষ করি।

হরিপদর হাতে সেই চিঠি। কেমব্রিজ মালটিপারপাস স্কুল। ইরোটিকায় আটকে আছে হরিপদ। ছেলে ঘরে শুয়ে আছে। ব্যাটা আলসে। ওকে জিজ্ঞাসা করবে! ও যদি না পারে তো ওর প্রেস্টিজ একটু পাংচার মতন হয়ে যাবে। একটা ডিকশনারি আছে ওর। ওটা খুলল। ইরোটিকা মানে দেখল রিরংসা আনয়নকারী, কামোদ্দীপক, অশ্লীল।

রিরংসা মানে হরিপদ ঠিক বুঝল না।

কিন্তু বাকি দুটো তো ভালোমতোই বুঝল। হরিপদ আবার ভালো করে পড়ল পুরো চিঠিটা। অ্যাবিউজ মানে, ডিকশনারিতে দেখল ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার, অতিরিক্ত ব্যবহার, অবৈধ অভ্যাস…তাহলে মানে যেটা দাঁড়াচ্ছে, সেটা তো সুবিধার নয়। একটু চিন্তায় পড়ল হরিপদ। জিজ্ঞাসা করল, ছেলের বয়স কত হল?

—এই তো চোদ্দোয় পড়েছে। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াল হরিপদ। এ জন্যই বলে হোস্টেলে ভেবেচিন্তে দিতে হয়। এবারে চিঠিটার সারমর্মটা বোঝাতে হবে। ইশ…। কী ঝামেলার কাজ। প্রোরাটা মানেটাও দেখে নিল। আনুপাতিক, নিয়মমাফিক ভাগ। এবার একটু শ্বাস টেনে নিল হরিপদ। বলল—প্রিন্সিপাল চিঠি লিখেছে। বলছে আপনার ছেলে জয়দীপ কর্মকারকে আর এই ইস্কুলে রাখা যাবে না, হোস্টেলেও রাখা সম্ভব নয়। ও মোবাইলে ইয়ে ছবি, মানে কামিনী-কাঞ্চন ছবি জমিয়ে হোস্টেলে অন্যদের দেখায়। একবার ওয়ার্নিং দেওয়া সত্বেও এই অভ্যাস ছাড়েনি, আরও কিছু এমন কাজ করেছে যা এই ইস্কুলের নিয়মের ইয়ে। এগেইনস্ট রুলস অফ দি ইনস্টিটিউশন। আপনাকে এখনই এখানে এসে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করে এবং ছেলেকে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে এবং ইস্কুলের মাইনে, হোস্টেল খরচ, যেটা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে সেটা হিসাব করে, প্রোরোটা, মানে, অনুপাতে যা হয়, মানে যতদিন থেকেছে সেটা কেটে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে…

দোষটা যেন হরিপদই করেছে। হরিপদ মাথা নিচু করে বসে থাকে।

—শালা…।

গুরুপদ কর্মকার কাকে বলল, ছেলেকে না প্রিন্সিপালকে ঠিক বোঝা গেল না।

—টাকা ফিরত দেখায়। টাকা ফিরতের ইয়ে করি।

পিতা-পুত্র ও প্রিন্সিপালের মধ্যে হরিপদ ঢুকবে কেন। ও চুপ।

কী ঠিক কিনা?

প্রশ্নটা হরিপদকেই করা হচ্ছে।

ঠিক-বেঠিক নিয়ে একটা প্রশ্ন। টাকা ফেরত নিয়ে একটা মন্তব্য ছিল গুরুপদর। যেটা বলতে চেয়েছে সেটা মোটামুটিভাবে বুঝতেও পেরেছে হরিপদ। এবং এই ব্যাপারে হরিপদ একমত কি না সেটাই জানতে চাওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন এল; এবং হরিপদ মাথা নাড়ল। টাকা ফিরত দেখায় এ্যালা। হুঃ। একটা উঠতি বয়সের ছেলে একটু দোষ কইরা ফাইলাইছে, এইজন্য বলবে ইস্কুল থিকা তাড়িয়ে দেব? এদিকে যে খবরের কাগজের পাতা জুইড়া অমুক তেল, তমুক তেল, হট বিউটি, নাইট কুইন…। দেখি। যাই, কী কয় দেখি। থাউক। এটা কিন্তু প্রাইভেট। আপনার আমার ব্যাপার। আচ্ছা, আপনার একটা ছেলে আছে না?

—হ্যাঁ, আছে তো…।

—সে ইংরাজি-টিংরাজিতে কেমন? অর্থ বুঝতে গেলে আপনের মতো ডিকশনারি দেখতে লাগে?

—না-না, আমি কি অত পড়েছি নাকি? আমার ছেলে তো গ্র্যাজুয়েট। বি কম। চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছে।

—তাতেই আমার কাজ চলবে। চাই একটা বিশ্বাসী ছেলে। ধরেন, আমার সেক্রেটারির কাজ করবে। ডাকেন তো, কথা কই…।

ভৃগুমুনির কথা তো মিলে যাচ্ছে। এই সপ্তাহ কেমন যাবে—মেষ রাশিতে আছে সপ্তাহের প্রথম ভাগে প্রাপ্তি যোগ। হরিপদর মেষ রাশি, ওর ছেলের কিছু একটা গতি হওয়া মানে তো হরিপদরই প্রাপ্তিযোগ। হরিপদ ওর ছেলেকে ডাকল। চানু একটা হাফপ্যান্ট পরেছিল, গায়ে গেঞ্জি। এই যে, ছেলে।

—বেশ তো, নাম কী?

—চন্দন।

চাকরির চেষ্টায় আছ?

—হ্যাঁ।

—কোথায় চাকরি? চাকরির বাজার খুব খারাপ।

একটা ভালো কথা বলি, দালালের খপ্পরে পইড়ো না। চাকরি দিবার দালাল আছে, বলে, রেলে চাকরি করে দেব, আগে টাকা চায় অ্যাডভান্স। দুই একটার যে ব্যবস্থা হয় না, তা নয়, ওদের সঙ্গে হাইলেবেলে সেট আপ আছে। দুই-একটা চাকরির কুমিরের ছায়ের মতন দেখায়, তারপর দুই তিনশো জনের কাছ থেকে টাকা খায়, তারপর ভাগে।

হরিপদর ছেলে বুঝতে পারছে না এসব কথা উঠছে কেন? ও বলে আমি তো কাউকে চাকরির জন্য টাকাপয়সা দেব বলিনি…

—বলো নাইতো, তাহলে ঠিক আছে। পরীক্ষা দিয়ে নিজের হিম্মতে চাকরি পাওয়ার জোশই আলাদা। এখন কিছু ইনকামের লাইন আছে?

—মানে?

—মানে আবার কী, কোনও রোজগারপাতি আছে?

—না, কেন?

কপাল কুঁচকায় চানু। হরিপদ ওর কুঁচকানো কপাল দেখতে পায়। ছেলেটার সব কিছুতেই বিরক্তি। বলতে পারিস তো রোজগার নেই। বেকার। কিছু ব্যবস্থা করে দিন না…। গুরুপদ কুঁচকানো কপাল দেখে যদি…

—আমি একটা ছোটখাটো ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারি। সত্যি কথা—আমি ইংলিশে উইক। চিঠিপত্র ঠিক মতো লিখতে পারি না, ইংলিশে চিঠিপত্রও আসে, ওগুলা মোটামুটি বুঝি, তবে মাঝেমধ্যে একটু খটমট লাগে। তুমি ইংলিশে কেমন।

—মোটামুটি।

—আমার ছেলেটা ইংলিশ মিডিয়াম। এখানে থাকে না তো। তবে ছোট। মোটামুটি চিঠিপত্র, ফর্ম ফিলাপ, ব্যাংকের ফিপটিন জি ভরা, কম্পিউটারে টিকিট কাটা, এসি-মেসিন গণ্ডগোল করলে কমপ্লেইন করা, এইসব আর কী। সকালের দিকে। আমার বাড়ির একতলায় আমার একটা অফিস আছে। আস একদিন। কালই আস। পয়সাকড়ি যা দেব পকেটমানি হয়ে যাবে। পাড়ায় অনেকেই আছে, কাজ দাও কাজ দাও করে। যারে তারে আমি ঘরে ঢুকাব ক্যান। প্রাইভেট ম্যাটার। যে আমার এই কাজটা করবে সে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জানবে অনেক সময়। চেকটেক ফালায়ে আসবে ব্যাংকে। কিন্তু এসব নিজের মধ্যেই রাখবে। পাবলিকসিটি করবে না, এইজন্য একটু দেখেশুনে নিতে হয়। তোমার বাবা ইজ এ ফাইন ম্যান, ভেরি গুড ম্যান, মনে প্যাঁচপুঁইচ নাই। তুমিও আশা করি বাপের গুণ কিছুটা পাবে। আমরা হলাম এই এলাকার পুরোনো লোক। ১৯৫২ সালে আমার ঠাকুরদাদা ফরিদপুর থেকে আসেন চোখের সামনে হল ইলেকট্রিক, রাস্তা-ঘাট, স্বপ্ননীড়, ইঁদুর বাড়ি, পার্লার-মার্লার। আমি ফ্ল্যাটেম্যাটে থাকি না, ওইগুলা আমার কাছে খাঁচা লাগে। হাটতলার কাছে আমার বাড়ি। লোকনাথ ভবন। ছাদে লোকনাথ বাবার সিমেন্টের মূর্তি আছে সবাই চেনে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *