ভূমিকা – আমার গল্প এবং যে, কারণে আপনারটিও গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা – আমার গল্প এবং যে, কারণে আপনারটিও গুরুত্বপূর্ণ 

৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৯, জীবনটি ভালো ছিল বললে কম বলা হবে। না, এটা ছিল বিরাট। ২০ বছর বয়সে আমার কলেজের প্রথম বছরটি পার করেছিলাম। আমার সর্বশেষ আঠারো মাস কাটিয়েছিলাম ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটি মার্কেটিং কোম্পানির একজন অন্যতম শীর্ষ উৎপাদন সরবরাহকারী হিসাবে। আমি ওই বয়সে আমার কল্পনাতীত আয় করেছিলাম। আমার খুব ভালোবাসার একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল, একটি নির্ভরযোগ্য পরিবার ছিল, সেরা বন্ধুমহল ছিল। সত্যিই আমি ছিলাম আশীর্বাদপুষ্ট। বলতে পারেন, আমি ছিলাম পৃথিবীর শীর্ষ অবস্থানে। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি যে, এটা ছিল সেই রাত যে রাতে আমার পৃথিবীটা শেষ হয়ে যাবে। 

রাত ১১ : ৩২ / ঘণ্টায় ৭০ মাইল বেগে দক্ষিণ দিকে ড্রাইভ করছিলাম 

আমরা রেস্তোরাঁ ও বন্ধুদের পিছনে ফেলে এসেছিলাম। গাড়িতে আমরা শুধু · দুজন ছিলাম। আমার গার্লফ্রেন্ড সান্ধ্যকালীন আয়োজনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। প্যাসেঞ্জার সিটে ঝিমিয়ে পড়েছিল। আমার ঝিম ধরেনি, বরং উত্তেজিত ছিলাম। আমি জাগ্রত ছিলাম এবং আমার চোখ দুটো সামনের রাস্তায় নিবদ্ধ ছিল। আমি Tchaikovsky’র সংগীতে ডুবে গিয়েছিলাম। রাতের ঘটনাগুলো আমাকে আনন্দের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিল, ঘুম ছিল চিন্তারাজ্যের অনেক দূরের ব্যাপার। আমার ব্র্যান্ড নিউ সাদা Ford Mustang-এ উন্মুক্ত পথে ৭০ মাইল বেগে চলছিলাম। মাত্র দুই ঘণ্টা আগে আমি আমার জীবনের সেরা বক্তব্য দিয়ে এসেছি। সবাই আমাকে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিল। এটা ছিল আমার জীবনে প্রথম। প্রকৃতপক্ষে আমি যেন মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম, চিৎকার করে যে কাউকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে। কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ড ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওকে কিছুই জানানো সম্ভব ছিল না। আমি আমার মা-বাবাকে ফোন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল, তারা হয়ত ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হতো। কিন্তু কোনভাবেই আমার পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে, ওই মুহূর্তটাই ছিল আমার মা-বাবা কিংবা কারো সঙ্গে কিছু সময় কথা বলার শেষ সুযোগ। 

একটি অকল্পনীয় বাস্তবতা 

একটি বিশাল ট্রাকের হেডলাইট দুটো সরাসরি আমার দিকে ছুটে আসে; কিন্তু দুর্ভাগ্যের এক মুহূর্তেই, ঘণ্টায় আশি মাইল বেগে ছুটে চলা বিশাল ট্রাকটি আমার Ford Mustang প্রাইভেট কারটির সামনের অংশ চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিল। দুটো গাড়ির সামনের ধাতব অংশ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। প্রথমে হঠাৎ ঘর্ষণের উচ্চ শব্দ এবং তারপর গাড়ির মাথাটি মুচড়ে ভেঙ্গে গেল। আমার Mustang- এর এয়ারব্যাগগুলি বিস্ফোরিত হলো। আমরা জ্ঞান হারালাম। আমার মাথার সম্মুখভাগে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছিল। গাড়ির দরজাটি আমার শরীরের বামপাশে আঘাতি করে ভেঙে পড়েছিল। গাড়ির ধাতব ছাদটি আমার মাথার সঙ্গে চেপ্টে যায়। আমার মাথার খুলি স্লাইস করে ফেলে এবং বাম কান প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমার বাম চোখের সকেটের হাড়গুলি চূর্ণ হয়ে যায়, বাম চোখ যেন বিপজ্জনকভাবে ঝুলে পড়েছিল। আমার বাম হাত ভেঙে গিয়েছিল, মুল শিরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, কনুই বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল, ভাঙা হাড় হাতের উপরের অংশে চামড়া ভেদ করে ঢুকে গিয়েছিল। 

আমাকে গাড়ি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। এটা সম্ভব হয়নি। আমার কোমরের নীচে তিনটি জায়গা ভেঙে গিয়েছিল। অবশেষে, আমার উরু, যেখানে শরীরের সবচেয়ে বড় হাড় রয়েছে, অর্ধেকটা ভেঙে গিয়েছিল এবং একপাশ আমার উরুর চামড়ায় বিদ্ধ হয়েছিল। 

সবজায়গায় শুধু রক্ত আর রক্ত। আমার শরীর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমার ব্রেইন চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রচণ্ড শারীরিক ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার শরীর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। রক্তের চাপ থেমে গিয়েছিল এবং আমি গভীর কোমায় চলে গিয়েছিলাম। 

আমরা কি দ্বিতীয়বার জীবন ফিরে পাই? 

পরবর্তীকালে যা ঘটেছিল তা শুধু অবিশ্বাস্য ছিল না, অনেকেইে বলেছিলেন যে, এটা ছিল একটি অলৌকিক ঘটনা। জরুরী উদ্ধারকর্মীরা এসে গিয়েছিল। সব রকমের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে তারা আমার রক্তাক্ত দেহ কেটে বের করেছিল। এ কাজে আমার দেহ থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল। আমার হৃদযন্ত্রের ওঠানামা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমার শাসক্রিয়া থেমে গিয়েছিল। আমি ক্লিনিকালি মারা গিয়েছিলাম। 

মেডিকেল সহকর্মীরা দ্রুতই আমাকে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হেলিকপ্টারে তুলেছিল এবং আমাকে বাঁচানোর জন্যে খুব দৃঢ়ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ছয় মিনিট পর তারা সফল হয়েছিল। আমার শ্বাসক্রিয়া আবার শুরু হয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমি জীবিত ছিলাম। 

আমি ছয়দিন অজ্ঞান ছিলাম এবং জ্ঞান ফিরে জানতে পারলাম, আমি হয়ত আর কখনো হাঁটতে পারব না। হাসপাতালে ছয় সপ্তাহ কেটে গেল। আরোগ্য হওয়া ও জীবনে ফিরে আসার জন্যে ওই সময়টা আমার কাছে ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। ধীরে ধীরে হাঁটতে সক্ষম হলাম। আমাকে হাসপাতাল থেকে মুক্ত করে দেয়া হলো। আমি আমার মা-বাবার সেবাযত্নে আবার বাস্তব পৃথিবীতে ফিরে এলাম। 

এগারোটি ভাঙা হাড়, স্থায়ী ব্রেইনডেমেজ এবং এই সময়ে আমার প্রেমিকা এখন প্রাক্তন হয়ে গিয়েছে, সে আমার সঙ্গে ব্রেকআপটা হাসপাতালেই করেছিল। আমি জেনে গিয়েছিলাম যে, জীবন আর কখনোই আগের মতো হবে না। বিশ্বাস করুন আর না করুন, আমার জন্যে এ সবকিছু একটি ভালো বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। 

যদিও জীবনের এই নতুন বাস্তবতায় চলে আসাটা খুব সহজ ছিল না এবং মাঝে মাঝে আমি খুব আশ্চর্য হয়ে ভাবতাম, কেন আমার জীবনে এসব ঘটে গেল? আমাকে জীবনে ফিরে আসার সব দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। 

আমার জীবন কেমন হতে পারত এটা ভাবার পরিবর্তে জীবনে তখন যা যা ছিল, আমি তা আলিঙ্গন করেছিলাম। ‘আমার জীবন এরকম না হয়ে অন্য রকম হতে পারত’, ‘যদি দুর্ঘটনাটি না ঘটত,’ এসব ভাবার পরিবর্তে আমি শতভাগ মনোনিবেশ করেছিলাম আমার তখন যা যা ছিল সেগুলোকে সর্বোচ্চ ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। যেহেতু আমার পক্ষে ঘটে যাওয়া অতীতটা পরিবর্তন করা সম্ভব ছিল না, আমি ফোকাস করলাম আমার সমস্ত চিন্তা ভাবনা সামনের দিকে নিয়ে যেতে। আমি নিজেকে উৎসর্গ করলাম আমার সব সম্ভাবনা অর্জনের মাধ্যমে স্বপ্নপূরণের জন্যে। অন্যরাও একইভাবে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, আমি সে পথও আবিষ্কার করে ফেললাম। 

আমার যা কিছু ছিল তার জন্যে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ হতে পারলাম। আর আমার যা ছিলনা, তা কোনো অভিযোগ ছাড়াই শর্তহীনভাবে মেনে নিলাম। জীবনে যা যা চেয়েছিলাম তা পাওয়ার সব সম্ভাবনা সৃষ্টির দায়দায়িত্ব একমাত্র আমার নিজের বলেই মেনে নিলাম। অবশেষে এই ব্যাপক বিধ্বংসী গাড়ি দুর্ঘটনা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভালো ঘটনার একটিতে পরিণত হয়ে গেল। আমার বিশ্বাস, প্রতিটি ঘটনাই যে-কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে হাজির হয়, কিন্ত সবচেয়ে কার্যকরী প্রভাবশালী কারণটা খুঁজে বের করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের জীবনের চ্যালেঞ্জ, ঘটনা ও পরিস্থিতিসমূহের জন্যে এই নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার দুর্ঘটনাটি একটি বিজয়ী প্রত্যাবর্তনের প্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম। 

২০০০ সালটি আমার শুরু হয় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। আমি ভেঙে গিয়েছিলাম, কিন্তু পরাজিত হইনি। তবে বছরটি শেষ হয় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। আমার কোনো গাড়ি ছিল না, স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিশক্তিও কিছুটা লোপ পেয়েছিল। নিজেকে নিয়ে দুঃখ করা এবং ঘরে বসে থাকার জন্যে পৃথিবীর সবগুলো অজুহাতই আমার কাছে ছিল। এরকম একটা অবস্থানে থেকেও আমি ফিরে গিয়েছিলাম আমার কর্মস্থলে, আমার বিক্রয় অবস্থান Cutcoতে। আমি ভাবতে পারিনি, ওটাই হতে যাচ্ছে আমার ক্যারিয়ারের সেরা বছর। বছরটি আমার শেষ হয়েছিল সর্বোচ্চ বিক্রয়ের রেকর্ডে। এ সবই হয়েছিল আমার শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অবস্থা থেকে সেরে উঠার সময়ে; ধংসাবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে। 

২০০১ : আমার অভিজ্ঞতা থেকে জীবনের কিছু অমূল্য শিক্ষা পেয়ে গেলাম। আমি মনে করলাম, আমার প্রতিকূল অবস্থা ও তা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অন্যের জন্যে অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত করা যায়। মানুষকে উৎসাহ প্রদান ও ক্ষমতায়নের ওটাই ছিল সেরা সময়। হাইস্কুল এবং কলেজে আমি আমার গল্প বলা শুরু করলাম। আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করতে থাকলাম। শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন অনুষদ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেলাম। আমি যুব সমাজকে প্রভাবিত করার একটা মিশন শুরু করি। 

২০০২ : আমার প্রিয় বন্ধু Jon Berghoff অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে আমার দুর্ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখতে উৎসাহিত করে। আমি লেখা শুরু করলাম। শুরু করেই থেমে গেলাম। আসলে আমি কোনো লেখক ছিলাম না। হাইস্কুলে রচনা লেখাটাই আমার কাছে যথেষ্ট কষ্টকর মনে হতো! সুতরাং একটি বই লেখার তো প্রশ্নই আসে না। বারবার চেষ্টা করেছি, সব চেষ্টাই হতাশায় শেষ হয়েছে। আসলে তখনও বই লেখাটা আমার জগত ছিল না। আমি কোম্পানিতেই ভালো করছিলাম। 

২০০৪ : আমি নিজ হাতে ব্যবস্থাপনা দেখতে চেয়েছিলাম। আমি আমাদের Sacramento Cutco অফিসে বিক্রয় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের দল কোম্পানিতে সেরা হয়েছিল এবং বিক্রয়ে সে বছর সকল সময়ের বার্ষিক রেকর্ড অতিক্রম করেছিল। সেই শরতে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিক্রয়ের সর্বোচ্চ মাইলফলক স্পর্শ করেছিলাম। কোম্পানির সমগ্র খ্যাতির অর্ধেকই ছিল আমার। আমার মনে হলো, আমি কোম্পানিতে যা যা করতে চেয়েছিলাম তার সব কিছুই সম্পাদন করে ফেলেছি। আমি অনুভব করলাম, একজন মটিভেশনাল স্পিকার হওয়ার এটাই সেরা সময়। আমার মনে হলো, সেই বইটা আমি আবারো লিখতে পারি। গত কয়েক বছর আমার মাথায় এ চিন্তাটা বারবার কাজ করছিল। আমি Ursula’র সঙ্গেও দেখা করলাম। আমরা ছিলাম অবিচ্ছেদ্য এবং আমার এই অনুভূতি ছিল যে, সে ছিল আমার একমাত্র একজনই। 

ফেব্রুয়ারি ২০০৫ : আমার সর্বশেষ কনফারেন্সে দর্শক সারিতে বসে আমার একটা বেদনাদায়ক উপলব্ধি হয়েছিল। আমি কখনোই আমার সম্ভাবনাকে পূর্ণতায় নিয়ে যায়নি। এটা ঠিক, আমি কিছু পুরস্কার জিতেছি, রেকর্ড ভেঙেছি। কিন্তু আমি দর্শক সারিতে বসে যখন দুজন সেরা পারফরমারকে Cutco কোম্পানির দেয়া সেরা বার্ষিক পুরস্কার হিসেবে লোভনীয় Rolex নিতে দেখি, তখন আমার উপলব্ধিতে এটা এসেছিল যে, আমি কখনোই শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম না। কমপক্ষে সারা বছরব্যাপী ছিলাম না। আমার নিজের কাছে খুবই খারাপ লাগবে, যদি আমার সম্ভাবনা পূরণ না করে কোম্পানি ছেড়ে যাই। এটার জন্যে আমার প্রয়োজন ছিল পুরো একটা বছর সময় দেয়া, কিন্তু এই সময়ে আমার সবকিছু কোম্পানিকে উজাড় করে দিতে হয়েছিল। 

২০০৫ : বেশ দেরিতে শুরু করা সত্ত্বেও আমি প্রায় দ্বিগুণ বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা লক্ষ্য স্থির করেছিলাম। আমি শঙ্কিত ছিলাম, কিন্তু সেই সঙ্গে ছিলাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি নিজ থেকে অনুভব করেছিলাম, ওই বইটি লেখা এবং আমার কথা সারা পৃথিবীকে জানানোর জন্যে আমার নিজের ভেতর একটা বাধ্যবাধকতা ছিল। আমি পুরো ৩৬৫টি দিন কাটিয়েছিলাম কোম্পানির বিক্রয়ের কাজে এবং আমার বই লিখে। আমার জীবনের প্রথম ২৫ বছরের ভেতর সে বছর ছিলাম সবচেয়ে বেশি শৃঙ্খলিত। আমি এর আগে জীবনে কখনো যা করিনি সেরকম কিছু করার জন্যে আবেগতাড়িত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বেদনাদায়ক অথচ আরামপ্রদ মাঝারিমানের জগত (mediocrity) থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এই চিন্তাটাই আমার জীবনকে নতুনভাবে পরিচালিত করেছিল, অসাধারণ হওয়ার পথ খুঁজছিলাম। বছর শেষে দুটো লক্ষ্যেই পৌঁছে গিয়েছিলাম, কোম্পানিতে বিগত সেরা বিক্রির বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং আমার প্রথম বইটা শেষ করেছিলাম। এটা অফিসিয়াল: আপনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে সবকিছুই সম্ভব। 

২০০৬-এর বসন্ত : আমার প্রথম বই Taking Life Head On: How to Love the Life You Have While You Create the Life of Your Dreams আমাজন বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় ৭ম স্থান অর্জন করেছিল। তখন একটা অভাবনীয় ব্যাপার ঘটে গেল। আমার প্রকাশক আমার বেস্টসেলিং বইয়ের শতভাগ রয়্যালটি নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল। সে একেবারেই লাপাত্তা হয়ে গেল। আমার বাবা-মা এ ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে গেলেন। আমি হইনি। আমার গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে আমি যদি একটি জিনিসও শিখে থাকি তা হচ্ছে যে, জীবনের যে দিকগুলো আমরা পাল্টাতে পারব না সেসব বিষয় নিয়ে অযথা ভাবনা চিন্তা করা বা মন খারাপ করার কোনো মানেই হয় না। সুতরাং আমি ভেঙে পড়িনি। আমি আরও শিখেছি, আমাদের চ্যালেঞ্জ থেকে যা আমরা শিখি সেদিকে মনোনিবেশ করে এবং অন্যের জীবনেও সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা একটা কাজ করতে পারি, যে কোনো প্রতিকূল অবস্থাকে একটা সুযোগ বা সুবিধায় পরিণত করতে পারি। 

২০০৬ : পেশাটি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছাড়াই, আমি দুর্ঘটনাক্রমে হয়ে গেলাম জীবন ও ব্যবসার একজন সফল প্রশিক্ষক। বছর চল্লিশের একজন অর্থ উপদেষ্টা আমার কাছে প্রস্তাব করেন তার প্রশিক্ষক হওয়ার জন্যে। আমি রাজি হয়ে গেলাম। খুব ভালবাসার সঙ্গেই আমি এটা শেষ করেছিলাম। আমার প্রথম মক্কেল তার জীবন ও ব্যবসায়ে পরিমাপযোগ্য সফলতা পেলেন। অন্যদের সাহায্য করার প্রতি আমার যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি হলো। ঠিক ২৬ বছর বয়সে আমি একজন সফল পেশাদার কোচ হয়ে গেলাম। 

আমার এই প্রশিক্ষণ ব্যবসা তখন মধ্য গগনে। আমি শতশত উদ্যোক্তা, বিক্রয়কর্মী ও ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। ঠিক এর পরপরই আমি আমার জীবনের প্রথম বক্তৃতা দিলাম টাকার বিনিময়ে। Boys and Girls Clubs of America তাদের জাতীয় সম্মেলনে আমাকে মূল বক্তা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। যদিও ১৯৯৮ সাল থেকেই আমি প্রাথমিক বিক্রয়কর্মী ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারদের সমন্বয়ে বহু দর্শকপূর্ণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে আসছিলাম। খাড়া চুল, তরুণ চেহারা, ডাক নাম- “Yo Pal” Hal, -যুব সমাজকে প্রভাবিত করতে পারছিলাম। আমি বক্তব্য দেয়া শুরু করেছিলাম স্থানীয় হাইস্কুল ও কলেজে। তখন আমি আমার গল্পও শেয়ার করতাম। 

২০০৭ : এ বছর জীবনটা আমার সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে গেল। জীবন যেন ঝরে পড়ল জীবন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে যায়। রাতারাতি আমার আয় হয়ে গেল অর্ধেক। আমার মক্কেলরা কোচিং চালানোর আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। আমি ঘরভাড়াসহ সব রকমের বিল পরিশোধ করার সামর্থ হারিয়ে ফেললাম। আমি ৪২৫,০০০ ডলারের দেনায় পড়ে গেলাম। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম। মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে একেবারে তলানিতে চলে গেলাম। আমি জীবনে কখনো এতটা নিরাশ, হতবুদ্ধি ও বিষন্ন বোধ করিনি। আমি কীভাবে আবার জীবনে ফিরে আসব এটা ভেবে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। খুব মরিয়া হয়ে আমি আমার সেই অনতিক্রম্য সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে থাকলাম। আমি স্বাবলম্বনমূলক বিভিন্ন বই পড়লাম, সেমিনারে গেলাম, এমনকি একজন প্রশিক্ষককের শরণাপন্ন হলাম। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। 

২০০৮ : এ বছর আমার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করল। আমি অবশেষে খুব কাছের এক বন্ধুর কাছে আমার খারাপ সময়ের সবকিছু খুলে বললাম (যা . আমি এতদিন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে গোপন রেখেছিলাম)। সে আমাকে প্রশ্ন করল: তুমি কি শরীরচর্চা করছ? আমি উত্তর করলাম: আমি সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারি না বললেই চলে— সুতরাং, না। “দৌড়ানো শুরু করো,” সে বলল। “এটা তোমাকে খুব ভালো অনুভব করতে সহায়ক হবে এবং তুমি সঠিকভাবে চিন্তা করতে সক্ষম হবে”। ওহ, আমি দৌড়ানো পছন্দ করি না। কিছু একটা করার জন্যে আমি মরিয়া ছিলাম। সুতরাং আমি তার উপদেশমতো দৌড়ানো শুরু করলাম। এই দৌড়ানো থেকে আমার যা যা উপলব্ধি হলো, তা আমার জীবনের একটা সন্ধিক্ষণে (টার্নিং পয়েন্ট) পরিণত হলো (বিস্তারিত দ্বিতীয় চ্যাপ্টারে The Miracle Morning Origin – Born Out of Desperation ) এবং আমি দৈনন্দিন ব্যক্তিগত উন্নতিমূলক একটা রুটিন করতে অনুপ্রেরণা পেলাম। আমি আশা করলাম যে, এটা আমাকে সক্ষম করে তুলবে ঠিক সেই ব্যক্তিতে পরিণত হতে, যে আমার সমস্যা সমাধান করে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। এটা বিস্ময়করভাবে কাজে লেগেছিল। বস্তুত আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই এত দ্রুত পরিবর্তন এসেছিল যে, আমি এটাকে বলেছিলাম- আমার “Miracle Morning.” 

শরৎ, ২০০৮ : আমি আমার The Miracle Morning নিয়ে এগিয়ে চললাম। কতকগুলো ব্যক্তিগত উন্নতিমূলক অভ্যাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঘুমের সময় নিয়ে পর্যালোচনা করলাম। আসলে কতটুকু ঘুম আমাদের প্রকৃতই প্রয়োজন, তাও গবেষণা করলাম। আমার অনুসন্ধানগুলি আমিসহ অধিকাংশ মানুষের কাছে এতদিন সত্য মনে হওয়া দৃষ্টান্ত এবং উপলব্ধিগুলি সম্পূর্ণরূপে ছিন্নভিন্ন করে দিল। আমার অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের ফলাফলে সন্তষ্ট হয়ে আমি তা আমার প্রশিক্ষণ মক্কেলদের (coaching clients) সঙ্গে শেয়ার করলাম। তারা তাদের পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে এটা বলেছিলেন। অবিশ্বাস্যভাবে আমি দেখতে পেলাম যে, যাদের সঙ্গে আমার আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি তারা ফেসবুক ও টুইটারে তাদের Miracle Mornings নিয়ে পোস্ট দিচ্ছে। 

২০০৯ : সত্যিই আমার সেরা বছর। আমি আমার স্বপ্নের নারীকে বিয়ে করলাম। আমাদের একটা কন্যাসন্তান হলো। আমার প্রশিক্ষণ ব্যবসা ব্যাপক সফলতা অর্জন করল। মক্কেলদের চাপে তাদের জন্যে আমাকে একটা অপেক্ষমান তালিকা করতে হয়েছিল। আমি পেশাদার বক্তা হয়ে গেলাম। হাইস্কুল, কলেজ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অলাভজনক সম্মেলনে আমি বক্তব্য ও কী- নোট মেসেজ (keynote messages) দিচ্ছিলাম। The Miracle Morning দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল। প্রতিদিন আমি অসংখ্য ই-মেইল পেতে শুরু করলাম। সেসব মেইলে সবার একই কথা, এটা তাদের জীবন পরিবর্তন করে দিচ্ছিল। আমি তখন মনে করলাম যে, এটা সারা পৃথিবীর সবার সঙ্গে শেয়ার করাটা আমার দায়িত্ব এবং একটা বই লেখার মাধ্যমেই সে কাজটি সবচেয়ে ভালোভাবে করা সম্ভব। ধীরে হলেও আমি আবারও লেখা শুরু করলাম। ‘আর কোনো ভুল নয়, আমি এখনও লেখক নই, কিন্তু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। আমার প্রিয় বন্ধু Romacio Fulcher সব সময় বলেন, “সব সময়ই একটা পথ থাকে যখন তুমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”। 

আপনার জীবনকে সামনে নিয়ে যাওয়া 

জীবনে কী কী অতিক্রম ও অর্জন করা যায় তার প্রমাণ দেখাতে আমি আমার গল্পটা আপনার সঙ্গে শেয়ার করছি। আপনার চ্যালেঞ্জগুলো কত কঠিন এটা কোনো ব্যাপার না। আমি মৃত অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পেরেছিলাম, আমাকে বলা হয়েছিল, আমি কখনোই হাঁটতে পারব না, ভেঙে যাওয়া সেই জীবনে আমি এতটাই হতাশ হয়েছিলাম যে সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইনি। এরূপ অবস্থায় পতিত হয়েও যদি আমি জীবনের স্বপ্ন বুনতে পারি, তাহলে আপনার জন্যে কোনোই যুক্তিসঙ্গত অজুহাত নেই, যা দিয়ে আপনি দেখাবেন যে, আপনার পক্ষে জীবনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে আপনার কাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু অর্জন সম্ভব নয়। সবার জন্যে একথা প্রযোজ্য। 

আমি মনে করি, উদাহরণ থেকে কোনো কিছু মেনে নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। যখন কেউ একজন বিশেষ কোনো পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কিছু অতিক্রম করে বিশেষ কিছু অর্জন করে তখন তা একটা ভালো উদাহরণ হয়ে যায়। এভাবে পরিস্থিতি অতিক্রম করে কোনো কিছু অর্জন করা আপনার পক্ষেও সম্ভব। আপনার অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি কেমন এটা কোনো ব্যাপারই না। এটা শুরু হয় আপনার জীবনের প্রতিটি বিষয়ের সামগ্রিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়ার মাধ্যমে এবং কোনো কিছুর জন্যে অন্যকে দোষারোপ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। যে মাত্রায় আপনি আপনার জীবনের যে-কোনো কিছুর দায়িত্ব নিতে পারেন, তাই হচ্ছে আপনার ব্যক্তিগত ক্ষমতার মাত্রা যা দিয়ে আপনি আপনার জীবনের কোনো কিছুর পরিবর্তন সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন। 

এটা বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, দায়বদ্ধতা ও দোষ একই জিনিস নয়। দোষ নির্ধারণ করে কোনো কাজের জন্যে কারো ত্রুটি, অন্য দিকে দায়বদ্ধতা কোনো কাজের উন্নতির জন্যে কারো প্রতিশ্রুতিকেই নির্ধারণ করে। পিছনে আমার দুর্ঘটনার কথা ভাবলে, যেখানে দুর্ঘটনাটির জন্যে আমার কোনো দোষ ছিল না, আমি দায়বদ্ধ ছিলাম আমার জীবনের উন্নতির জন্যে, আমার পরিস্থিতিকে আমি যেমন চেয়েছিলাম সেরূপ করার জন্যে। কার দোষ এটা আসলেই কোনো বিবেচ্য, বিষয় নয়। যা কিছু বিবেচ্য তা হচ্ছে আপনি, আমি সবাই অতীতকে অতীতে ফেলে দিতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমাদের জীবনকে ঠিক সেরকমভাবে তৈরি করতে, যে রকম আমরা চাই। শুরুটা হতে পারে আজই। 

সময়টা আপনার, গল্পটাও আপনার 

জেনে রাখুন, ঠিক এই মুহূর্তে আপনি আপনার জীবনের যেখানেই থাকুন, তা অস্থায়ী এবং ভাবুন, ঠিক এখন আপনার কোথায় থাকার কথা। আপনি জীবনের এই মুহূর্তে পৌঁছেছেন ঠিক সেই জিনিসটি শিখতে, যা আপনাকে অবশ্য‍ই শিখতে হবে। সুতরাং আপনি হতে পারবেন সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তিটি হওয়া আপনার খুবই প্রয়োজন। আপনাকে এটা হতে হবে আপনার জীবনকে সেরকম করার জন্যে-যা আপনি প্রকৃতই চেয়ে থাকেন সব সময়। এমনকি যখন জীবন খুব কঠিন অথবা চ্যালেঞ্জিং- বিশেষ করে জীবন যখন কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং, বর্তমান সময়টি তখন সর্বদায়ই আমাদের জন্যে একটা সুযোগ: শিক্ষার জন্যে, বিকশিত হওয়ার জন্যে এবং আগের চেয়ে অধিক ভালো হওয়ার জন্যে। 

আপনি আপনার জীবনের গল্প লেখার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন এবং কোনো গল্পই ভালো হতে পারে না, যদি সেখানে নায়ক বা নায়িকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কাহিনী না থাকে। প্রকৃতপক্ষে, চ্যালেঞ্জ যত বড়, কাহিনীও তত অধিকতর ভালো। যেহেতু আপনার গল্পটি এখান থেকে শুরু হয়ে কোথায় যাবে তার কোনো সীমাবদ্ধতা ও সীমানা নেই, সেক্ষেত্রে পরবর্তী পাতায় আপনি কী বলতে চান? 

সুখবর হচ্ছে, আপনার সামর্থ্য রয়েছে আপনার জীবনের যে কোনো কিছু পরিবর্তন করার অথবা সৃষ্টি করার। শুরুটা হতে পারে এখনই। জীবনের যে কোনো কিছু যা আপনি চান তা খুব দ্রুততার সঙ্গে ও সহজেই সৃষ্টি করতে পারেন। হ্যাঁ, এটা পারেন শুধুমাত্র নিজেকে সেই ব্যক্তিতে পরিণত করার মাধ্যমে, যে এগুলো করতে সক্ষম। এই বইটি সে সম্পর্কেই যা আপনাকে সাহায্য করবে সেই ব্যক্তি হতে, যা হওয়া আপনার প্রয়োজন। যা আপনি সারা জীবন চেয়েছেন। এর কোনো সীমানা নেই। 

একটি কলম হাতে নিন 

আর একটুও পড়বার আগে, অনুগ্রহ করে একটি কলম অথবা পেন্সিল হাতে নিন যাতে আপনি এই বইটিতে লিখতে পারেন। যখন পড়বেন, পরবর্তীকালে আবারও পড়া প্রয়োজন হতে পারে এরকম মনে হলে সে অংশটুকু চিহ্নিত করুন। আন্ডারলাইন, বৃত্ত, হাইলাইট করুন, পৃষ্ঠাগুলোর কোণ ভাঁজ করুন এবং মার্জিনগুলিতে নোট নিন যাতে আপনি ফিরে এসে দ্রুত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ, ধারণা এবং কৌশলগুলি স্মরণ করতে পারেন। 

ব্যক্তিগতভাবে, এটা নিয়ে এক সময় আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে কারণ আমি আবেশিতভাবেই একজন অনিবার্য পারফেকশনিস্ট (perfectionist)। আমি আমার জিনিসগুলি পরিস্কার ও ঝকঝকে দেখতে অভ্যস্ত। আমি এক সময় বুঝতে পারলাম যে, আমার এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। কারণ এরকম একটা বইয়ের উদ্দেশ্য— তা স্পর্শবিহীন রাখা নয়, বরং সর্বোচ্চভাবে মুল্যবান যা কিছু আছে, তা যেন আমরা বের করে নিতে পারি। এখন আমি আমার সবগুলো বইয়ে বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে রাখি, যেন সমগ্র বই পড়া ছাড়াই আমি অতি দ্রুত যে-কোনো সময় সেগুলো আবার পড়তে পারি এবং খুব দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মূলভাব আয়ত্ব করতে পারি। 

ঠিক আছে, আপনার হাতে কলম রয়েছে, তাহলে আমরা শুরু করতে পারি। আপনার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় এখনই শুরু হতে চলেছে… 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *