ভূত আবার করবে কী?
‘দাঁও মেরেছে ভায়া’— বললেন আমার বাবা।
‘বড্ডো দূরে চলে গেল, এই যা—’ মা যেন পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না ব্যাপারটাতে।
‘দূর? দূর তুমি কাকে বলো?’— বাবা মাথা নাড়লেন সবেগে, ‘বড়ো নদীতে স্টিমার ধরলে ঘণ্টা পাঁচেকের রাস্তা মোটে—দ্যাখো না, কেরি আর সুসিকে সামনের মাসেই পাঠিয়ে দিচ্ছি ওদের কাছে। পেটে ভরে পাকা পিচ খেয়ে আসবে—’
‘তা পারবে পিচ খেয়ে আসতে। পিচেরই বাগিচা তো!’— এবিষয়ে মা বাবার সঙ্গে একমত।
কথাটা এই— বাবা আর কাকা এতদিন এক গাঁয়েই ছিলেন, বাবা করেন ডাক্তারি, কাকার ছিল চাষ-আবাদ। হালে কাকা, ওই যে বাবা বলেছিলেন, দাঁও পেয়ে গিয়েছেন একটা। মিসিসিপির উজানে, মাইল চল্লিশ দূরে, একটা সম্পত্তি পেয়ে গিয়েছেন সস্তায়। পাঁচ একরের একটা ফলন্ত পিচ-বাগিচা, আর তার সঙ্গে খাসা একখানা পাকা বাড়ি। দাম মাত্র হাজার পাঁচেক ডলার, তার বেশি হলে কাকা পেরে উঠতেন না কিনতে।
এ-গাঁয়ের জমিজমা চাষ-আবাদ বেচে দিয়ে কাকা আর কাকিমা একদিন রওনা হয়ে গেলেন তাঁদের নতুন দেশে। ওঁদের ছেলেপিলে হয়নি। তাইতেই আমাদের দুই বোনের উপরে দরদ একটু বেশি। যাওয়ার আগের দিন আমাদের বাড়িতে ডিনারের নিমন্ত্রণ ছিল ওঁদের, খেতে বসে কাকা আর কাকি দু-জনেই বার বার বলতে লাগলেন, ‘ইস্টারে কেরি-সুসি যাচ্ছিস তো? নিশ্চয় যাবি। থেকে আসবি কয়েকটা দিন নতুন দেশ দেখা হয়ে যাবে—’
আমাদের খুব আগ্রহ। এই ষোলো বছর বয়স আমাদের দুই বোনেরই, যমজ আমরা। তা এই ষোলো বছরে বেড়ানো-ট্যাড়ানো আমাদের বড়ো একটা হয়ে ওঠেনি। বাবা ডাক্তার মানুষ, কাজ ছেড়ে একদিনের তরেও কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সারা বচ্ছরে এমন একটা দিনও তাঁর আসে না, যেদিন হাতে একটাও মারাত্মক রোগী নেই। তাকে ফেলে রেখে নিজে হাওয়া খেতে যাওয়া বিবেকে বাধে, তারই দরুন, তাঁর হিসাব তাঁরই কাছে, ত্রিশ বৎসরের ভিতর একবারও তিনি গাঁয়ের বাইরে পা দেননি।
বাবা যেতে পারেন না বলে মায়েরও যেতে মন চায় না, যদিও তাঁর দিদি থাকেন মেরিভিলে, ছোটো ভাই থাকেন বোস্টনে। অনায়াসে আমাদের নিয়ে দুই-এক মাস কাটিয়ে আসতে পারেন সে-সব জায়গায়, কিন্তু চাড় নেই মা-জননীর। আগে বলার কেউ ছিল না, ইদানীং আমরা শিখেছি বলতে। কিন্তু বলা শুধু অরণ্যে রোদন হয়েছে— এককথায় উড়িয়ে দিয়েছেন আমাদের বায়না, ‘তোরা এমন স্বার্থপর হলি কী করে বলতো? আমরা চলে গেলে এ-গাঁয়ের রোগীগুলো পটপট করে মরে যাবে না সব? ডাক্তার কি আর মাথা ঠিক রেখে ওষুধ দিতে পারবে কাউকে?’
কিন্তু এবার? এবার আর কোনো অসুবিধে দেখা যাচ্ছে না। মাকে রেখেই আমরা চলে যাব। বাড়ি থেকে মিসিসিপির ঘাট আধ ঘণ্টার রাস্তা। বাবা রোগী দেখতে বেরুবেন সেই বেলা নয়টায়, তার আগে গাড়িটা অনায়াসে আমাদের ঘাটে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারবে। তারপর স্টিমারে চাপলেই নিশ্চিন্দি। কখনো এপার, কখনো ওপারের হরেকরকম দৃশ্য দেখতে দেখতে মজাসে ঘণ্টা চার-পাঁচ কাটিয়ে দেব, তারপরে কাকাদের স্টেশন, কাকা গাড়ি নিয়ে থাকবেন সেখানে। আমরা স্টিমার থেকে নেমে গাড়িতে চড়ব, ছয় মাইল মেঠো পথ গড়গড়িয়ে পেরিয়ে যাব এক ঘণ্টায়। তারপরই কাকিমার আদর আর পাকা পাকা পিচ ঘরে তৈরি ক্ষীরের সঙ্গে। খামারটা কেনার সময় গোরুও গোটাকতক পেয়েছেন কাকা।
ব্যাস, কাকারা গ্রাম থেকে বেরুবার আগেই প্রোগ্রাম ঠিক হয়ে গেল আমাদের। যদিও ইস্টার আসতে দেড় মাস দেরি তখনও।
নতুন জায়গায় পৌঁছে কাকা চিঠি দিলেন। অজস্র প্রশংসা তাঁর বাড়ির, তাঁর বাগিচার, তাঁর দুধোল গাইয়ের, তাঁর হাজার ঐশ্বর্যের। চিঠি পেয়ে আমরা খেপে উঠলাম যেন, কেরি আর আমি। মাঝের এই পাঁচটা হপ্তাকে দশ আঙুলে টিপে গুঁড়িয়ে দেবার কোনো উপায় নেই বলে কখনো হই বিমর্ষ, কখনো হই ত্রু«দ্ধ। ভগবানের দয়া নেই। একদা তিনি বলেছিলেন, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’— অমনি লাইট এসে গিয়েছিল আঁধার বিশ্বে। আজ কি তিনি একবার হেঁকে উঠতে পারেন না ‘লেট দেয়ার বি ইস্টার’ বলে?
যাহোক, অসময়ে সে-হাঁক ভগবান না-দিলেও, যথাসময়ে ইস্টার এসেই গেল, আর দু-জনে দুটো ছোটো হাতব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এক হপ্তার জন্য আমরা বেরিয়ে পড়লাম বহির্বিশ্বের উদার বক্ষে। গাড়ি করে বাবা নিজে আমাদের স্টেশনে পৌঁছে দিলেন, টিকিট কেটে বসিয়েও দিলেন স্টিমারে। ও-মাথায় কাকা থাকবেন আবার, ভাবনা কিছু নেই।
কী আনন্দ! মিসিসিপিটা এপার-ওপার করতে হল বার তিনেক। মাঝ-গাঙে যখন স্টিমার পৌঁছায়, মনে হয় এই তো আটলান্টিক! সারেং-এর কাছে অনেক দরবার করে তার দূরবিনটা দু-মিনিটের জন্য একবার ধার পেয়েছিলাম। তা সেটা চোখে লাগিয়েও ডাইনে-বাঁয়ে কোনো পারে একটা গাছগাছড়া দেখতে পাইনি। কেরি আবার ওরই মধ্যে একটু কবি, তারস্বরে আওড়াতে লাগল—
দ্য সি, দ্য সি, দ্য ওপন সি
দ্য ডিপ, দ্য ব্লু, দ্য এভার-ফ্রি—
বেলা দুটো তখনও বাজেনি, আমাদের জায়গায় আমরা পৌঁছে গেলাম। সারেং লোকটি বড়ো ভালো, একজন খালাসি আমাদেরই তদারকির জন্য মোতায়েন করে দিলেন। সে আমাদের যত্ন করে নামিয়ে দিল নিরাপদে। এখানটাতে নামবার লোক আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না বলেই সম্ভব হয়েছিল এটা। যাত্রী এ-লাইনে কম।
কাকা হাজির গাড়ি নিয়ে। নদীর ধার দিয়ে দিয়ে কিছদূর চলবার পরেই মাঠের ভিতর ঢুকে পড়ল গাড়ি বাঁয়ে একটা মোড় খেয়ে। তারপরই নদী হারিয়ে গেল আমাদের চোখ থেকে। একটা অনন্ত সৌন্দর্যের উৎস যেন শুকিয়ে গেল হঠাৎ। বড়োই খারাপ লাগল কিছুক্ষণ।
কিন্তু মাঠেরও যে নিজস্ব সৌন্দর্য মোটে নেই, তাও নয়। ধীরে ধীরে সেইদিকে দৃষ্টি ফিরতে লাগল আমাদের। মাঝখান দিয়ে লাল সুরকির রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে, যতদূর নজর চলে, তার দুই পাশে সবুজ-সবুজ আবাদি মাঠ। দিগন্তের কোলে কুয়াশার মতো দেখা যায় নীচু পাহাড়ের শ্রেণি, কেরি সেইদিকেই তাকিয়ে আছে, ওদের উপলক্ষ্য করে কোন কবিতা আওড়ানো যায়, মনে মনে তাই ভাবছে হয়তো। আমার বোন, আমি আর চিনি না ওকে?
কাকা নানা কথা কইছেন। তাঁর তিলার্ধ সময় নেই। পিচ পাকছে, এ-মরশুম শেষ না-হলে আর দম ফেলবার ফুরসত হবে না তাঁর। গাছ থেকে ফল পাড়ানো, প্যাক করানো, ছয় মাইল দূরের স্টিমারঘাটে বা বারো মাইল দূরের রেলস্টেশনে নিয়ে শহরে শহরে পাঠানো। ছ-টা লোক হিমশিম খেয়ে যায়। নিজে তিনি, আর পাঁচ-পাঁচটা মজুর।
তার উপরে মুশকিল, সারাদিন ভূতের খাটুনি খাটো, রাতে ভূতের ভয়ে জেগে থাকো—
কথাটা বলে ফেলেই তক্ষুনি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কাকা। আমরা চাপতে দেব কেন? ভূতের ভয়ে জেগে থাকা? সে আবার কী? আমরা দুই বোনে জেরার উপরে জেরায় নাজেহাল করে ফেললাম কাকাকে। অন্য কথা পাড়বার ব্যর্থ চেষ্টায় প্রায় মিনিট দশেক কাটিয়ে অবশেষে তিনি থলের মুখ খুলে বেড়াল বার করে দিলেন।
কথাটা এই, পিচপার্কে— হ্যাঁ, কাকার বাড়ির নাম পিচপার্কই বটে। নাম কাকার দেওয়া নয়, আগের আমল থেকেই আছে ওই নাম। পিচপার্কে ভূত আছে। কাকা বা কাকিমা দেখেননি সে ভূতকে। তবে আগে নাকি ঢের লোকে দেখেছে বিভিন্ন সময়ে, ঢের লোকে চিনেওছে তাকে। মানে— পিচপার্কের আগের মালিকই মরে ভূত হয়ে আছেন ওই বাড়িতে। খুন! খুন করা হয়েছিল ভদ্রলোককে।
‘বাড়ির ভিতরেই?’— প্রশ্ন করল কেরি।
আমার যেন মনে হল, কাকা ঢোঁক গিললেন একটা, ‘না, বাড়ির ভিতরে নয়। বাগিচার ভিতরে বচসা হয় চাকরদের সঙ্গে। একটা চাকর ছিল জাতে ইন্ডিয়ান। সে মনিবকে ছোরা মেরে পিটটান দেয়। ধরা অবশ্য পড়েছিল, এখনও সে জেল খাটছে কোথাকার কোন জেলে যেন।’
‘তা বাগিচায় খুন হওয়ার পরে ভদ্রলোক বাড়িতে এসে উৎপাত করেন কোন হিসাবে?’ প্রশ্নটা আমার, ‘আর উৎপাতগুলোই বা কী জাতীয়?’
‘প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারব না, কারণ ল্যান্ডর মশাইকে আমি ওকথা জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পাইনি। মানে অনেকে দেখে থাকলেও আমি এখনও দেখিনি তাঁকে, তোর কাকিও দেখেননি। দেখবার আগ্রহও তিলমাত্র নেই আমাদের। তবে অন্য কথা যেটা জিজ্ঞাসা করলি, তার উত্তর সহজেই দেওয়া যায়। কী জাতীয় উৎপাত? এই ধর, চেঁচামেচি, হুটোপাটি, হঠাৎ যেন ছাদ ফুঁড়ে উপর থেকে কেউ লাফিয়ে পড়ল ঘরের ভিতরে—’
‘কোন ঘরের ভিতরে? যেকোনো ঘরে?’— এবারকার প্রশ্ন করার পালা কেরির, সে পালা ফেল করার পাত্রী নয়।
আবার যেন ঢোক গিললেন কাকা, ‘না, যেকোনো ঘরে নয় বাছা, একমাত্র আমার ঘরেই। অন্য কোনো কামরায় সারা রাত টুঁ শব্দটি টের পাবে না কেউ। রাঁধুনি আছে, দু-দুটো দাসী আছে, তাদের ঘরে কিছু হাঙ্গামা নেই, যা-কিছু সব আমার ঘরে। তোর কাকি তো না-ঘুমিয়ে না-ঘুমিয়ে ফ্যাকাশে মেরে গিয়েছে একদম। দেখলেই বুঝতে পারবি এখন—’
আমি আর কেরি গা-টেপাটেপি করছি। একটা গভীর উত্তেজনা রি-রি করে ওঠা-নামা করছে আমাদের শিরা-উপশিরা বেয়ে বেয়ে। ভূত দেখব। থুড়ি, দেখা নাকি সে দিচ্ছে না ইদানীং, কাকাদের তো দেয়নি। কিন্তু দেখা না-দিক, সাড়া দিচ্ছে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ছে বিছানার উপরে। কী মজা! ঘুমিয়ে আছি, হঠাৎ একটা আড়াই মণ মানুষ লাফিয়ে নামল পিঠে বা পেটে। অবশ্য নিজের ওরকম অভিজ্ঞতা হলে ভালো লাগবে বলে মনে করিনে, কিন্তু কাকা বা কাকির যদি ওরকম হয়, হচ্ছেও তো, শুনতে মজা বই কী!
‘আমাদেরই শোবার ঘরে রে, আমাদেরই শোবার ঘরে’— এবার ঢোক না-গিলেই বিলাপ শুরু করলেন কাকা। ‘শুনতে পাই, সে মারা যাওয়ার পরে যে-কয়জন পর পর মালিক হয়ে এসেছে পিচপার্কে, সেই কয়জনকেই ল্যান্ডরের ভূত তাড়িয়েছে— ওইরকম ভয় দেখিয়ে। তার হাতে-গড়া জিনিস অন্যে ভোগ করবে, এটা সে সইতে পারছে না আর কী।’
‘তাইতেই বুঝি সম্পত্তিটা অত সস্তা দামে পেয়ে গেলে তুমি?’— আমার পালা এবার প্রশ্ন করার, পালার সদব্যবহার করতে আমি ভুললাম না।
‘তা বই কী! ল্যান্ডরের পর চার হাত ফিরল এ-যাবৎ। প্রথম বার বিকিয়েছিল, আট হাজারে, তারপর দফায় দফায় কমতে কমতে আমার বেলায় দাম দাঁড়াল পাঁচে। ভূতটা এদিকে উৎপাত যা-ই করুক, ওদিক দিয়ে ওকে ধন্যবাদ দিতে হয়।’
কথায় কথায় পথ এদিকে ফুরিয়ে গিয়েছে, বড়োরাস্তা থেকে একটা গলিপথে গাড়ি নামতেই সেটা টের পেলাম। কাঁটাতারের বেড়া দু-ধারে, তার ভিতরে কেবল পিচের গাছ আর পিচের গাছ। হাজারে হাজারে লাখে লাখে ফলে আছে পিচ— কোনোটা সবুজ, কোনোটা আধা-হলুদ, কোনোটা পাকা সোনালি। বেশ টের পেলাম, আমার মুখের ভিতর জিভটা ভিজে উঠেছে। কেরির দিকে তাকিয়ে অনুমান হল তারও দশা তদ্রূপ।
গলিটা বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়েনি, ওর পাশ দিয়ে বরাবর চলে গিয়েছে আরও খানিকটা। সেদিকেও পিচ বাগিচা ছড়িয়ে আছে অঢেল সমারোহে—
আমি না-বলে পারলাম না, ‘কত গাছ বসিয়েছিল ওই অভাগা ল্যান্ডর!’
কাকা প্রায় ধমকে উঠলেন, ‘ও-নাম আমরা করি না এ-বাড়ির হাতার মধ্যে শুনতে পেলে সে চটে যেতে পারে—’
আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল যেন। ভয়ে ভয়ে এদিকে-ওদিকে তাকালাম বার বার, এই হাওয়াতেই সে মিশে আছে নাকি এই মুহূর্তে? কী ভয়ানক অবস্থা!
বাড়িটাও সুন্দর! এক-তলাই, কিন্তু অনেক জায়গা জুড়ে রয়েছে। মনে হল অনেকগুলো ঘর, তিনদিক দিয়ে টানা বারান্দা তো চোখেই পড়ল, পেছন দিকেও আছে কিনা, বোঝা গেল না গাড়ি থেকে। এরকম বাড়ি এদেশে কেউ বানায় না, ওই ল্যান্ডর লোকটা, থুড়ি, নামটা মনে মনেও না-করাই নিরাপদ, ওর মাথায় এমন বেমক্কা নকশার বাড়ি তৈরি করার কথা এল কোত্থেকে?
যাহোক, বারান্দাগুলো দেখাচ্ছে ভালো। থামে থামে ফুলন্ত লতা উঠেছে, সুন্দর!
গাড়ি থামতেই কাকিমা এগিয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ালেন। আদর-আপ্যায়ন, কুশল প্রশ্ন, বাবা-মায়ের খবর নেওয়া— এমনকী, আমাদের গাঁয়ের বাইশটা গেরস্তর ছেলে-বুড়ো সকলেরই নাম ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ, সে একটানা উচ্ছাসের টগবগানি।
ডিনারের দেরি আছে, অথচ লাঞ্চও সমাধা হয়ে গিয়েছে কোন কালে। কাকিমা দুই বোনের জন্য দুই প্লেট খাবার এনে দিলেন, সোনা-রং ক্ষীরের সাথে সোনা-রং পিচফল। আশ মিটিয়ে খেলাম। প্রতিশ্রুতি রেখেছেন কাকিমা।
খেয়ে উঠেই ছুটোছুটি বাড়িময়। সোনার সংসার কাকিমার। হাঁস, মুরগি, ছাগল, গাই। নেই কেবল কুকুর আর বেড়াল। অথচ আমাদের গাঁয়ে থাকতে কাকার বাড়িতে কুকুর ছিল দুটো আর বেড়াল তিনটে। রীতিমতো ভালোবাসতেন তাদের। এখানে এরকম কেন? জিজ্ঞাসাই করলাম কথাটা। কাকিমা চাইলেন কাকার দিকে। সে-চাউনির অর্থ আমি বুঝলাম। চট করে বলে ফেললাম, ‘ভূতের কথা কাকা বলেছেন, কিন্তু কুকুর-বেড়ালের সাথে তার সম্পর্ক কী?’
কাকা ‘কাজ আছে’ বলে চলে গেলেন। যাওয়ার সময়ে চোখে চোখে কিছু একটা উপদেশ দিয়ে গেলেন কাকিমাকে। কী সেটা, তখনই তা বুঝতে পারলাম না। কাকিমা আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন এদিকে, ‘সম্পর্ক? আছে বাছা সম্পর্ক আছে। ওনাদের উপস্থিতি মানুষে আগে থাকতে টের পায় না, কিন্তু ওরা পায়। কী যে চেঁচামেচি, কেঁউ কেঁউ মিউ মিউ করে তখন, ভয় ধরিয়ে দেয় সাংঘাতিক। আর যখন ওঁরা আসেন, আমরা হয়তো চোখ বুজে ঠকঠক করে কাঁপছি শুধু, ওরা তখন সেঁধুচ্ছে এসে খাটের তলায়, না-হয়তো কোলের ভিতর। ভূতের চাইতে তখন বেশি বিরক্তি বোধ হয় ওদেরই জন্য।’
একটু থেমে উনি নিঃশ্বাস ফেললেন কয়েক বার, ‘কী ভালোই যে বাসতাম ওদের— ট্যাবি, কিটি, টাইগার, লিও— সব বিদায় দিতে হল একে একে। না-দিলে ওরা হয়তো মরেই যেত ভয়ে।’
‘কী সাংঘাতিক!’— কেরির আর আমার— দু-জনেরই মুখ থেকে বেরুল একইসময়ে। মনে মনে ভাবছি, ওইরকম ভয় আমাদেরও করবে না যে, তার ঠিক কী! কাকিমা অবশ্যই আমাদের মনের কথা বুঝে থাকবেন।
বলে উঠলেন, ‘তা বলে তোমাদের তো ভাবনার কিছু নেই। ওনাদের উৎপাত শুধু আমাদের শোবার ঘরেই হয়। অন্য কোনো ঘরে কিছু না। তোমাদের যে ঘর দিয়েছি, খাসা ঘর দেখবে এখন— সেখানে তোমরা কিছু টের পাবে না, নিশ্চয় বলছি—’
আমার মনে যে-প্রশ্নটা চড়াৎ করে জেগে উঠল, তা আর উচ্চারণ করার ফুরসত দিলেন না কাকিমা, হঠাৎ কী একটা কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে গেলেন অন্যদিকে। আমার প্রশ্নটা ছিল এই, অন্য ঘরে যখন ভয় নেই, তখন কুকুর বেড়ালদের অন্য ঘরেই তো রাখা যেত! বেশ দূরের কোনো ঘরে! যেখানে কাকা কাকিমার ঘরের ভৌতিক গোলমাল পৌঁছোবার সম্ভাবনা ছিল না!
যাক সে কথা। প্রশ্নটাও করা হয়নি, জবাবও পাইনি তার। এখন কেমন যেন মনে হয়— কিন্তু থাকুক সে কথা আপাতত।
হেলায়ফেলায় দিনটা কেটে গেল। ডিনারের আয়োজন পরিপাটি। চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য বাদ গেল না কোনোটাই। ‘পেয়’টার বেলায় অবশ্য মহিলাদের বরাদ্দ খুবই সীমিত। বিশেষ করে অল্পবয়সি মেয়েদের পক্ষে। শরবত গোছের একটা কী যেন আমরাও খেলাম, কাকিমাও খেলেন। তারপর আমরা উঠে গেলাম গানের ঘরে, কাকা একা বসে রইলেন রম-এর বোতল আর সিগারের প্যাকেট নিয়ে।
পিয়ানো আছে একটা গানের ঘরে। আমরা একটু-আধটু শিখেছি ও-বিদ্যা, তারই পরিচয় দিলাম কাকিমার কাছে, দুই ঘণ্টা ধরে। তারপর রাত ন-টা বাজতেই কাকিমা আর কাকা দু-জনে মিলে আমাদের নিয়ে গেলেন, শোবার ঘর দেখাতে।
চমৎকার ঘর! এককথায় একেবারে চমৎকার! দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। দুটো দিকেই চওড়া বারান্দা, দক্ষিণে আর পশ্চিমে। দুই দিকেই বড়ো বড়ো জানালা, দুটো করে এক এক দিকে। খোলা রয়েছে জানালাগুলো সব, জ্যোৎস্নার ঢেউ খেলে যাচ্ছে ঘরের ভিতর। হাওয়া ঢুকছে ফুরফুর করে, অঙ্গ জুড়িয়ে যায়। বারান্দার নীচে থেকেই বাগান শুরু, একদিকে ফুলের, অন্যদিকে সবজির।
ঘরের মাঝখানে প্রকাণ্ড খাট, পুরু গদির উপরে কলকা দেওয়া চাদর বিছানো, রাজসিক ব্যবস্থা। অবাক হয়ে এই সব দেখছি আমরা, কাকিমা শুকনো হাসি হেসে বললেন, ‘নগদ পয়সায় কিনতে হলে এসব জুটত নারে আমাদের। বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে বলেই আছে।’
কাকা বললেন, ‘শুয়ে পড়। নিশ্চিন্দি হয়ে ঘুমো। ভয়-ডর নেই কিছু। শব্দ-টব্দ যদি হয়, ওদিকে হবে। কান দিবি না তাতে। তা ছাড়া দু-জন তো আছিস। কিছু ভয় নেই। কারও কোনো ক্ষতি ওনারা করতে পারেন না। রক্তমাংসের শরীর তো আর নয়! ছায়া! স্রেফ ছায়া!’
এ যে কোন ঢং-এর সাহস দেওয়া, আমরা দুই বোন কিন্তু তা বুঝলাম না মোটেই। ছায়াকে ভয় নেই? আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানবুদ্ধিতে আমরা তো বুঝি এইরকম যে, ছায়াকেই ভয় বেশি। কায়া ধারণ করে যারা আসে, কায়দা মতো পেলে তাদের মাথায় মোক্ষম এক ঘা লাঠি দেওয়া যায়। ছায়াকে তো মেরে কাবু করা যায় না।
তবে ভরসা ওই, আমাদের এ-ঘরে ওনারা আসবেন না কখনো। দূরে যদি শব্দ শুনতে পাই, কানে তুলো গুঁজে দেব না-হয়।
কাকা-কাকিকে শুভরাত্রি জানিয়ে বিদায় দিলাম।
তারপর জামাটামা বদলে শুয়ে পড়লাম দুই বোন পাশাপাশি। ঘুম? তক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়লাম— এ কথা যদি কেউ ভেবে থাকেন, তাহলে জানব যে তিনি বালিকা চরিত্র সম্বন্ধে নিরেট অজ্ঞ একেবারে। গল্প! গল্প আর গল্প। গল্প ভূতের সম্বন্ধে নয়, কারণ ভূতের গল্প পড়ার বা শোনার সুযোগ বাবা আমাদের দেননি কখনো। অন্য ঊনকোটি চৌষট্টি রকমের গল্প বলে বলে এবং শুনে শুনে অবশেষে ড্রয়িং রুমের ঘড়িতে যখন বারোটা বাজতে শুনলাম, তখন দুই জনে দুই দিকে পাশ ফিরলাম। এবার আর না-ঘুমোলে চলে না।
চোখ জুড়ে আসতে দেরি হল না। কিন্তু তা আবার মেলতেও হল প্রায় তক্ষুনি। ধুপ করে কী একটা শব্দ হল, কী যেন পড়ল— ঠিক কেরির আর আমার মাঝখানে। চোখ মেলে কিছু দেখতে পেলাম না। আমার মনে হল কেরিই তার হাতখানা ফেলেছিল ধুপ করে, আবার তক্ষুনি গুটিয়ে নিয়েছে। আবার চোখ বুজতে বুজতে জড়ানো সুরে বললাম, ‘অমন করবি না কেরি, ঘুমোতে দে—’
কেরি সাড়া দিল না। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
একটু পরেই আমার গলায় কে যেন হাত দিল। কী ঠান্ডা সে হাত! ঘুম চট করে ভেঙে গেল। এ হাত কি কেরির? এত ঠান্ডা কেন হবে তার হাত?
তাকিয়ে দেখি কেরিও জেগে উঠেছে, সেও আমার দিকে ভয়ে সন্দেহে তাকিয়ে আছে, কী একরকম অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে, জড়িয়ে জড়িয়ে বলল, ‘তুই আমার গায়ে হাত দিয়েছিলি? অত ঠান্ডা কেন তোর হাত? জ্বর হয়নি তো?’
‘আমি হাত দিয়েছি? না, তুই?’— একটা ঝগড়া বাধাবারই তালে ছিলাম আমি। হঠাৎ একটা খলখল হাসি—
দুই বোনে শিউরে উঠে তাকালাম। জ্যোৎস্নায় সবই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, দরজা আর খাটের মধ্যিখানে একটা মানুষ দাঁড়িয়ে। ঢ্যাঙা, চোয়াল-ভাঙা, একহারা একটা দুশমন-চেহারা মানুষ।
কেরি সুট করে চাদর টেনে আপাদমস্তক ঢেকে ফেলল। তার আর নড়ন-চড়ন নেই। আমি— আমি চাদরটা পেতে বসেছি। নড়ে বসে যে চাদরটাকে টেনে তুলব, মুখে মাথায় চাপা দেব, সেটুকু বুদ্ধি মগজে আসছে না। ঢ্যাঙা মানুষটার দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাচ্ছি, ‘কাকিমা! কাকা! কাকা! কাকিমা! ও বাবা! ও মা! হে যিশু! দোহাই ভগবান!’ ইত্যাদি—
কাকিমা বলেছিল, ‘ছায়াকে আবার ভয় কী? ফুঃ!’
আর ওটা যে ছায়া, তারও তো কোনো প্রমাণ পাচ্ছি না! ছায়ার চোখ থেকে কি অমন দৃষ্টি বেরোয়? না, ছায়া ওরকম খলখল করে অট্টহাসি হাসে থেকে থেকে?
পালানো? অসম্ভব! দোর আগলে দাঁড়িয়ে আছে ওটা, তা ও ছায়াই হোক আর কায়াই হোক।
ও হাসছে, আমি চ্যাঁচাচ্ছি— শোরগোল কিছু কম হচ্ছে না। কিন্তু কী আশ্চর্য! কাকা বা কাকিমার কানে কি কিছুই ঢুকছে না তার। অথচ, একখানা ঘর বাদেই তো তারা শুয়ে আছে! মরে গেল নাকি তারা? তাদের আগে মেরে ফেলে তারপর কি ওই ছায়া আমাদের মারতে এসেছে?
কেরি তো সেই থেকে নড়ছে না, ওকেও নির্ঘাত সাবড়ে দিয়েছে। এইবার আমার পালা! ও বাবা! ও মা! হে ভগবান! হে যিশু!
ছায়ামূর্তি হেসেই চলেছে। এ-হাসির অর্থ পরিষ্কার বুঝতে পারছি আমি, ‘এতদিন বাদে এইবার পেয়েছি তোকে। আজ তোর ঘাড় মটকাবই!’
ওদিকের হাসি, এদিকের চ্যাঁচানি, এরই মধ্য দিয়ে কেমন করে রাত শেষ হয়ে এল, কিছু টের পাইনি। হুঁশ হল, হঠাৎ ওদিককার সেই ঘড়িতে টংটং করে চারটে বেজে গেল যখন। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি, মানুষটা আর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নেই।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি না। কয়েক মিনিট ঠায় চুপ করে বসে আমি বিছানায় ভাবছি, কখন আবার ভূতটা নতুন কোন মূর্তিতে দেখা দেয় হঠাৎ। কিন্তু না, দেখা সে দিচ্ছে না আর। কাকিমার মোরগেরা একে একে ডেকে উঠছে তারে-ঘেরা আঙিনায়। ভোর হবে এক্ষুনি, আজকের মতো বিপদ কাটল বোধ হয়।
নিজেকে বারকতক ঝাঁকুনি দিলাম জোরে জোরে। তারপর কেরিকে ঝাঁকুনি দিলাম আস্তে আস্তে। জোরে ঝাঁকুনি মরা মানুষকে দেওয়া যায় না, রুচিতে বাধে।
না, মরেনি ও। নিঃশ্বাস বইছে। মরেনি, কিন্তু চোখও তো মেলে না। হয়েছে, দাঁতকপাটি লেগেছে ভয়ে। উঠে গিয়ে কুঁজো থেকে জল এনে কপালে মাথায় ঝাপটা দিতে লাগলাম তার। চোখ মেলল অবশেষে।
তারপর দুই বোনে একটা পরামর্শ করে ফেললাম পাঁচ মিনিটের ভেতর।
প্রাতরাশ ও বাড়িতে আটটায়। যখন খাওয়ার ঘরে ঢুকলাম, তখন আমাদের হাতে যার যার সুটকেস। কাকা তা দেখে চমকে উঠলেন। কাকিমা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ও কী ও?’
কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম, ‘ও আর কিছু নয়। আমরা এক্ষুনি চলে যাচ্ছি—’
‘কেন? কেন?’ কাকা-কাকি দু-জনে একসাথে কথা কইতে লাগলেন, ‘কী হয়েছিল? কিছু দেখেছ নাকি? কী দেখেছ?’
‘তাই শুধু দেখেছি, যা নিজেরা সাহস করে এক রাত ওঘরে কাটাতে পারলে, নিজের চোখে আপনারাও দেখতে পেতেন। দেখেছি ভূত। আপনারা যাকে ছায়া বলেন। একটা ঢ্যাঙা, চোয়াল-ভাঙা ছায়া, যে খলখল করে হাসে, গলায় ঠান্ডা হাত বুলোয়, আর দু-চোখ দিয়ে আগুন ছড়ায়। তার সে-হাসি তো আপনারাও শুনেছেন নিশ্চয়! আর শুনেছেন আমাদের চিৎকারও! বেশি কথা কইতে পারছি না, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ভেঙে গিয়েছে গলা।’
‘আমরা কিছুই শুনিনি— কী করে শুনব? আমাদের ঘরে এদিকে যা তুলকালাম কাণ্ড কাল রাত্রে! এমন উৎপাত আগে কখনো হয়নি—’
‘তাহলে বলুন, দুটো ভূত। থুড়ি— ছায়া আছে এ বাড়িতে। একটা অবশ্য ল্যান্ডরের, অন্যটা কার কে জানে! যাহোক, আমরা বিদায় হচ্ছি—’
‘সে কী? তা কী হয়?’
‘আলবাত হয়। আপনাদের ট্যাবি, কিটি, লিও, টাইগার— এরা বিদায় হতে পেরেছে, আর আমরা পারব না? তাদেরও কি ওই ঘরে রাত্রিযাপন করতে দিয়েছিলেন কোনোদিন? কেরির দাঁতকপাটি লেগেছিল। তারা— আবোলা জীব, হয়তো মরেই গিয়েছে ভয়ে।’
সেসব কথার কান না-দিয়ে কাকা বললেন, ‘তোমাদের এখন যাওয়া কী করে হবে? আমার হাতে কাজ রয়েছে। গাড়িতে করে তোমাদের পৌঁছোতে যাব কী করে স্টেশনে?’
‘না-পারেন যেতে, আমরা হেঁটেই যাব—’
‘সে কী? ছয় মাইল রাস্তা—’
‘ষাট মাইল হলেও যাব—’
‘তোমাদের এক্ষুনি ফিরে যেতে দেখলে তোমাদের মা টং হয়ে যাবেন না রেগে?’
‘নিশ্চয় যাবেন। মা হবেন শুধু টং, বাবা হবেন টটং টং। কিন্তু সে রাগ আমাদের উপর হবে না, হবে অন্য কারও উপর। যারা ভূতের ঘরে ভাইঝিদের শুতে দেয়, পরের মুখ থেকে ভূতের বিবরণ শুনবার জন্য।’
শেষপর্যন্ত গাড়ি নিয়ে কাকাই গেলেন অবশ্য আমাদের পৌঁছোতে।
বাবা পরে অনেক কিছু জেনেছিলেন খোঁজখবর নিয়ে। ল্যান্ডর লোকটি খুন হয় বাগিচার ভিতর নয়, নিজের বিছানাতে ঘুমন্ত অবস্থায়। যে-ঘরে যে-শয্যায় আমাদের শুতে দেওয়া হয়েছিল, খুন হয় সেই ঘরে সেই শয্যাতেই। সেই থেকে ল্যান্ডরের প্রেত ওই ঘরে হানা দেয় প্রতি রাত্রে। কাকা-কাকি সাহস করে ওঘরে কোনোদিন শোননি। কিন্তু ভূতটা সম্বন্ধে কৌতূহল ছিল তাঁদের প্রচণ্ড। পরের মুখে ঝাল খাওয়ার লোভেই আমাদের শুতে দিয়েছিলেন ওঘরে।
ভূতে ঘাড় মটকায় শুনেছি। এক্ষেত্রে আর কারও ঘাড় মটকায়নি। মটকে গিয়েছে বাবা আর কাকার মধ্যেকার সম্প্রীতি।