ভূত্রাক্ষস

ভূত্রাক্ষস

কিরিবুরু পাহাড়ি উপত্যকায় একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে শিকার করার জন্য রামগড়ের রাজা একটা টিলার মাথায় হান্টিং লজ বা শিকার ভবন তৈরি করেছিলেন। মাঝে-মাঝে শিকারে গিয়ে সেখানে তিনি থাকতেন। বাড়িটা কাঠের এবং ওপরে টালির চাল। তার লাগোয়া একটা উঁচু মঞ্চও তৈরি করেছিলেন। মঞ্চে উঠে দূরবীনে চোখ রেখে জন্তুজানোয়ার দেখতেন।

গতবছর কর্নেল নীলাদ্রি সরকারের সঙ্গে কিরিবুরু গিয়ে দেখি, কোথায় জঙ্গল? সারা উপত্যকা জুড়ে চাষবাস হয়েছে। চারিদিকে পাহাড়গুলো পর্যন্ত ন্যাড়া হয়ে গেছে। এখানে-ওখানে আদিবাসীদের কয়েকটা ছোট্ট বসতি ছড়িয়ে রয়েছে। উপত্যকা দুভাগ করে যে নদীটা বয়ে যাচ্ছে, তার ওধারে টিলার মাথায় রামগড়ের রাজার হান্টিং লজ আর মঞ্চটা অবশ্য আছে। কিন্তু দেখলে মনে হবে যেন হানা বাড়ি।

নদীর এপারে সেচ দফতরের ডাকবাংলোয় আমরা উঠলুম আগের ব্যবস্থা মতো। তারপর চারদিকে দেখে নিয়ে কর্নেলকে বললুম, এ কোথায় এলুম আমরা? জঙ্গলের টিকিটিও তো দেখা যাচ্ছে না। মিছিমিছি রাইফেল বয়ে এনেই বা কী লাভ হল? কর্নেল মুচকি হেসে বললেন, একটু ধৈর্য ধরো জয়ন্ত। তোমার রাইফেলের শক্তিপরীক্ষার সুযোগ অবশ্যই পাবে।

সেচ দফতরের জিপে আমরা এসেছি। জিপের ড্রাইভারের নাম বদ্রীপ্রসাদ। সে লাল কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল আর বাংলোর চৌকিদারের সঙ্গে কথা বলছিল। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল, কর্নিল সাহাব। কর্নিল সাহাব। তুরন্তু আইয়ে, ঢুণ্ডু নি!

কর্নেল তখুনি বেরিয়ে গেলেন। আমি কিছু বুঝতে না পেরে হতচকিতভাবে তাকে অনুসরণ করলুম। এপ্রিলের বিকেল পড়ে এসেছে। ফিকে লালচে রোদুর ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। কর্নেল চোখে বাইনোকুলার রেখে নদীর উপরে কিছু দেখতে থাকলেন। বদ্রীপ্রসাদ এবং চৌকিদারের মুখ উত্তেজনায় থমথমে। তারাও ওদিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিন্তু কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তারপরই শুনলুম নদীর এপারে ওপারে ছোট্ট বসতিগুলো থেকে হইহই করে লোকেরা বেরুচ্ছে। ঢোল আর ক্যানাস্তারা পেটাতে পেটাতে তারা শোরগোল তুলেছে। কিন্তু কাউকে বসতি ছেড়ে নড়তে দেখছি না। মনে হচ্ছে ওরা কোন সাংঘাতিক জন্তু দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।

একটু পরে সব উত্তেজনা থিতিয়ে গেল। কর্নেল বাইনোকুলার নামিয়ে বললেন, হুম! কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

জিগ্যেস করলুম, ব্যাপারটা কী?

হয়তো কোনও জন্তু—কিংবা জন্তু নয়।

তার মানে?

কর্নেল পা বাড়িয়ে বললেন, এদের ভাষায় ঢুণ্ডুর মানে হল ভূত-রাক্ষস। সন্ধি করে তুমি ভূত্রাক্ষস বলতে পারো।

অবাক হয়ে বললুম, ভূত আবার রাক্ষস হয় কী করে? রাক্ষসই বা ভূত হয় কি ভাবে?

কর্নেল বাংলোয় ঢুকে তাঁর অত্যদ্ভুত সেই ক্যামেরা নিয়ে এলেন। এই ইলেকট্রনিক ক্যামেরা অন্ধকারেও ছবি তুলতে ওস্তাদ। তারপর বললেন, রাক্ষস মানুষ খায় এবং ভূতের ক্ষমতা কিংবা স্বভাব-চরিত্র তো তুমি বিলক্ষণ জানো। ঢুণ্ডুর দুরকম ব্যাপারটা আছে। কিরিবুরু উপত্যকা থেকে গত তিনমাসে সাতজন লোক নিখোঁজ হয়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকের কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া গেছে নদীর চড়ায়। আশ্চর্য ব্যাপার, কঙ্কালে একবিন্দু মাংস নেই—ঢুণ্ডু মাংস চেটেপুটে সাফ করে ফেলেছে। শুধু হাড়গুলো নিখুঁত রয়েছে।

এতক্ষণে বুঝলুম, আমার ধুরন্দর বৃদ্ধ বন্ধু কেন কিরিবুরু উপত্যকায় এসেছেন। এ তো দস্তুরমতো অ্যাডভেঞ্চার। আমার গা শিউরে উঠল অজানা আতঙ্কে। বললুম, একটু আগে ঢুকে কি সত্যি দেখলেন আপনি?

এক পলকের জন্যে দেখলুম। কর্নেল গম্ভীরভাবে বললেন। রাজাবাহাদুরের হান্টিং লজের নিচে একটা লোক ঘাস কাটছিল। তার দিকেই লক্ষ্য ছিল ওর। লোকটা কীভাবে টের পেয়ে পালিয়ে আসছিল চাচাতে চাচাতে। আমি দেখলুম কাঠের বাড়িটার কাছে একটা পাথরের আড়ালে কালো কি একটা অদৃশ্য হল। মানুষের মতো দেখতে কতকটা। যাই হোক, ডার্লিং, এবার তোমার রাইফেলের শক্তি পরীক্ষা হবে। চলে এস।…

টিলাটা ঘন ঘাসে ও ঝোপঝাড়ে ঢাকা। কার মধ্যে ছোট বন নানা সাইজের পাথর মাথা উঁচিয়ে রয়েছে। হান্টিং লজের অবস্থা জরাজীর্ণ। তবে দরজায় মরচে ধরা তালা ঝুলছে। সূর্য পাহাড়ের নিচে চলে গেছে। ধূসর আলোয় নীচের সবুজ শস্যে ঢাকা উপত্যকা যেন উত্তেজনায় শিউরে উঠছে মনে হচ্ছিল। কর্নেল কাঠের মঞ্চের পেছনে একটা গাছের ডালে ক্যামেরাটাকে যতক্ষণ মজবুত করে বেঁধে আটকে দিলেন, ততক্ষণে আমি গুলিভরা রাইফেল তাক করে চারদিকে সতর্ক নজর রাখলুম। ক্যামেরার শাটার থেকে একটা কালো সুতো টেনে এনে কর্নেল সামনে ঘাসভরা মাটির ওপর টানটান করে অন্যপাশে একটা ঝোপের গোড়ায় আটকে দিলেন। এই সুতোয় যার পা লাগবে, তার অজান্তে ক্যামেরায় তারই ছবি উঠবে।

এরপর আমরা লজের বারান্দায় উঠলুম। কর্নেল টর্চ আর রিভলভার বের করে দরজার তলায় টান দিতেই খুলে গেল। কর্নেল বললেন, আশ্চর্য তো তালাটা যেন ভোলাই ছিল।

জংধরা দরজা ঠেলতে বিশি ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে খুলে গেল। ভেতরে টর্চের আলো ফেলে দেখা গেল, একধারে শুধু একটা লোহার খাট-ছাড়া আর কিছুই নেই। মেঝেয় ধুলো জমেছে। পেছনে একটা জানালা খোলা এবং গরাদ ভেঙে রয়েছে। নিশ্চয় চোরের কীর্তি। আসবাবপত্র বা অন্যান্য জিনিস করে চুরি করে নিয়ে গেছে।

দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে কর্নেল চাপা গলায় বললেন, ডার্লিং আজ রাতে এটাই আমাদের আস্তানা। কিটব্যাগে কিছু শুকনো খাবার আছে। আর এই ফ্লাস্কে কফি আছে। হুম্। রোসো। মোমবাতিগুলো বের করি।

এই হানাবাড়িতে রাত কাটানোর কথা শুনে আমার বুক কেঁপে উঠল। কর্নেল একটা মোম জ্বেলে লোহার খাটের কোনায় বসিয়ে দিলেন। ঘরের ভেতর কেমন একটা চিমসে গন্ধ। তার মধ্যে কফি খেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু কর্নেলের তাগিদে খেতেই হল। উনি চুরুট ধরিয়ে খোলা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। আমি মোমের আলোয় ঘরের ভেতরটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগলুম।

পাশের ঘরের দরজাটা ভেঙে পড়েছে। টর্চ জ্বেলে উঁকি মেরে দেখলুম, মেঝে জুড়ে ইঁদুরের গর্ত, কাঁকুরে মাটির স্তুপ। একখানি সাপের খোলস দেখে চমকে উঠলুম। সর্বনাশ! সাপ বেরিয়ে যদি এ ঘরে হানা দেয়?

কর্নেল আমার কাছে এসে উঁকি মেরে ফিসফিস্ করে বললেন, হুম, ! সাপের আড্ডা মনে হচ্ছে। তবে আমাদের পায়ে হান্টিং বুট আছে। একটু লক্ষ্য রাখতে হবে। বলে আর একটা মোম জ্বেলে এনে এ ঘরের দরজার মাঝামাঝি রাখলেন। ব্যস্! আর চিন্তার কারণ নেই। সাপ এই আলো পেরিয়ে এ ঘরে ঢুকবে না। কারণ, আলোর সামনে সাপ নিজেকে অসহায় বোধ করে। বড় জোর ফণা তুলে আলোকে হিস হিস শব্দে ধমক দেবে।

আমরা লোহার খাটে বসে পড়লুম। বাইরে এতক্ষণে একটা জোরালো বাতাস বইতে শুরু করেছে। কাঠের বাড়িটা অদ্ভুত শব্দ করছে। বারবার চমকে উঠছি। একবার খোলা জানালা, একবার মেঝের দিকে, আর একবার পাশের ঘরের দরজার জ্বলন্ত মোমের দিকে পর্যায়ক্রমে তাকাচ্ছি। কর্নেলের সঙ্গে অনেক ভয়ঙ্কর রাত কাটিয়েছি, কিন্তু এমন সাংঘাতিক রাত কখনও বুঝি কাটাইনি। কিছুক্ষণ পরে বাইরের দরজার দিকে তাকাতে বললেন। তাকিয়ে দেখি, দরজাটা একটু একটু কাঁপছে। কেউ যেন নিঃশব্দে চাপ দিচ্ছে। মা আমার পিলে চমকে উঠল তাই দেখে। নির্ঘাৎ সেই আজব ভূত্রাক্ষস ঢুণ্ডু ব্যাটাচ্ছেলে! রাইফেল বাগিয়ে ধরলুম। কর্নেল একহাতে টর্চ অন্যহাতে রিভলভার নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।

দরজার চাপটা বাড়ছে ক্রমশ। মচমচ করছে জীর্ণ কাঠের কপাট। এবার আমিও উঠে দাঁড়ালুম। দরজাটা আমাদের ফুট দশেক দূরে। হঠাৎ কপাট দড়াম করে ভেঙে পড়ল। পরমুহূর্তে টর্চের আলোয় দেখলুম…

কিন্তু ওকি মানুষ, না ভয়ঙ্কর জন্তু? শরীরের গড়ন অবিকল মানুষের। কিন্তু একটুও লোম নেইমাথাটাও ন্যাড়া। কালচে রঙের ভৌতিক প্রাণী যেন। তার নাক মুখ-চোখ সবই মানুষের। কিন্তু কিন্তু চোখদুটো জ্বলন্ত নীল টুনি বাল্ব যেন। তার মুখ থেকে অদ্ভুত চাপা একটা গরগর আওয়াজ বেরুচ্ছে তাও শুনলুম।

মাত্র কয়েকটা সেকেন্ড। আমি রাইফেলের ট্রিগারে চাপ দিলুম। প্রচণ্ড গর্জন করে গুলি বেরল। অটোমেটিক রাইফেল। ছটা গুলি শেষ করে ফেললুম। তারপর দেখি, আজব প্রাণীটা অদৃশ্য। কর্নেল দরজায় উঁকি মেরে টর্চের আলো ফেলে বললেন, পালিয়েছে! যাগ কে, আপাতত আমাদের কাজ শেষ। চলো, বাংলোয় ফেরা যাক। ঢুণ্ডবাবাজিকে স্বচক্ষে দর্শনের ইচ্ছা ছিল। দেখলুম, আবার কী?

সকালে ঘুম ভেঙে দেখি, কর্নেল অভ্যাসমতো প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন—এখন টেবিলে ওঁর ছোট্ট ট্রেতে কয়েকটা ভেজা ফোটো। সদ্য প্রিন্ট করেছেন। আমাকে উঠতে দেখে বললেন, ঢুণ্ডবাবাজিকে দেখে যাও ডার্লিং! আমাদের চোখ অনেক সময় ভুল করে। কিন্তু ক্যামেরার চোখ নির্ভুল।

ছবিগুলো দেখে বললুম, রাতে যাকে দেখেছি, সেই বেটা।

কোনও তফাত চোখে ঠেকছে না?

না তো।

ভাল করে দেখে বলো, জয়ন্ত। কর্নেল আরেকটা ছবি দিলেন।

দেখে বললুম, টাওয়ারের পাশে একটা পাথরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা উলঙ্গ পাগল—মাথাটা ন্যাড়া।… হুঁ, পাথরের গায়ে কালোমতো একটা চিহ্ন।

ঘণ্টাখানেক পরে দিনের উজ্জ্বল আলোয় আমরা হান্টিং লজে পৌঁছলুম। রাতের সেই আতঙ্ক আর টের পাচ্ছি না। টাওয়ারের কাছে খুঁজে খুঁজে সেই পাথরটা আবিষ্কার করলেন কর্নেল। তারপর দেখি, পাথরটার মাথায় কালো গোলাকার একটা ইঞ্চিখানেক উঁচু কী একটা জিনিস। কর্নেল সেটা নাড়াচাড়া করতে করতে হঠাৎ পাথরটা নড়ে উঠল একটু কাত হয়ে গেল। অবাক হয়ে দেখলুম, হাতচারেক চওড়া একটা কুয়োর মতো সুড়ঙ্গ ধাপে-ধাপে নেমে গেছে।

একমুহূর্ত ইতস্তত করে কর্নেল বললেন, এস জয়ন্ত, ঢুণ্ডুর ডেরায় ঢুকি।

কর্নেল সবে প্রথম ধাপে পা রেখেছেন, হাতে টর্চ–কারণ ভেতরটা অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে, আচমকা ভেতরে চাপা গরগর শব্দ শোনা গেল। তারপর বিদাৎবেগে সেই ঢুণ্ডুর আবির্ভাব ঘটল এবং কর্নেলের গলা দুহাতে চেপে ধড়ল। কর্নেল জড়ানো গলায় বলে উঠলেন, মাথা! মাথা!

কর্নেলকে নিয়ে ঢুণ্ডু তখন সিঁড়ির ধাপে পড়েছে এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয়েছে। মাথা বলতে কী বোঝাচ্ছেন কর্নেল। বুঝতে দেরি হল একটু। তারপর লক্ষ্য করলুম কর্নেল একটা হাত বাড়িয়ে ঢুণ্ডুর মাথা ধরার চেষ্টা করছেন। আমি রাইফেল বাগিয়ে ধরতে দেরি করিনি। কিন্তু গুলি করে লাভ নেই, তা দেখেছি। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে রাইফেলের বাঁট দিয়ে ঢুণ্ডু ব্যাটার মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত করলুম।

ঠঙাস করে শব্দ হল। ব্যাটার মাথা না লোহার পিণ্ড! ফের ওর মাথার পেছনে এক ঘা দিতেই রাইফেলের বাঁট ভেঙে গেল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একটা অদ্ভুত কাণ্ডও ঘটল।

ঢুণ্ডুর মাথাটা ছিটকে গিয়ে দমাস করে নিচে কোথাও পড়ল এবং ধাপে ধাপে ঢঙ ঢঙ শব্দ করতে করতে পাতালে গড়াতে থাকল। তারপর, দেখলুম, ওটা মাথা নয় আদতে—একটা নিছক হেলমেটের মতো জিনিস। ঢুণ্ডুর মুণ্ডু ঠিকই আছে এবং তা একটা জলজ্যান্ত মানুষেরই। কারণ তাতে চুল আছে।

ভাঙা রাইফেল দিয়ে দুহাতে ওর চুল খামচে ধরতেই ঢুণ্ডুবাবাজি বেকায়দায় পড়ে মানুষের গলায় আর্তনাদ করল, উঃ! উঁহু-হু! গেছিরে! গেছিরে! ছাড়, ছাড়! মরে গেলুম রে!

কর্নেলের সাদা দাড়ি এবং টাক ধুলোয় ধূসর। টুপি আর টর্চ কুড়িয়ে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে বললেন, ঢুণ্ডু বাবাজিকে নিয়ে এস ডার্লিং! মহা তাঁদোড় ব্যাটাচ্ছেলে।

ঢুণ্ডু লক্ষ্মীছেলের মতো বলল, আহা টানে না এত। চলো না, যাচ্ছি। আমার চুল টানলে বেজায় লাগে যে!

ভূত্রাক্ষস বা ঢুণ্ডুর পরিচয় পাওয়া গেল রামগড় থানায়। কর্নেল বললেন, কলকাতার বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী ভবরঞ্জন বক্সীর অন্তর্ধান রহস্য তাহলে ফাঁস হল। কিরিবুরু হান্টিং লজে রামগড়ের রাজা একটা পাতাল-কক্ষ বানিয়েছিলেন শুনেছিলুম। বক্সী তার খোঁজ পেয়ে সেখানে গুপ্ত ল্যাবরেটরি করেছিলেন বোঝা যাচ্ছে। মানুষের মাংস থেকে উন্নতজাতের মানুষ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। পাগল আর কাকে বলে? মাঝখান থেকে সাতটা লোকের প্রাণ গেল। ইস্পাতের পোশাক পরে মানুষ চুরি করতেন। গুলি বিধবে কেমন করে? তবে ওই চেহারা দেখেই হতভাগা লোকগুলো ভিরমি খেত।

বিকেলে কর্নেল পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কিরিবুরু গেলেন পাতাল-ল্যাবরেটরি দেখতে। বক্সীমশাই আইনের চোখে খুনি। তার বিচার হবে। সে যাই হোক, আমি সার্কিট হাউসেই থেকে গেলুম। মানুষের পচা-গলা মাংস দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে আমার ছিল না।…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *