ভা রহস্য
কাঞ্জনজঙ্ঘাকে এভাবে সবসময়ে দার্জিলিং থেকে দেখা যায় না। ইন্দ্রনাথ এই প্রথম দার্জিলিং আসেনি। শীতকালটা বরাবর এড়িয়ে যায় অবশ্য–ঠান্ডার ভয়ে। দু-এক বছর অন্তর শৈলনগরীতে যায় পাহাড় আর ঝাউবন দেখতে। ক্লান্ত স্নায়ুকে চাঙ্গা করতে।
প্রতিবার আসে এপ্রিল মাস নাগাদ। প্রিয় হোটেল একটাই আছে। জলাপাহাড়ের দিকে যে রাস্তাটা, যে রাস্তা দিয়ে সকালে আর বিকেলে টুরিস্টরা হই-হই করতে করতে ঘোড়া টগবগিয়ে যাতায়াত করে, সেই রাস্তার পাশেই পড়ে হোটেলটা। ঘোড়ার যাতায়াতের সময়টুকু ছাড়া জায়গাটা খুব নিস্তব্ধ। যে ঘরটায় বরাবর ওঠে, তার তিন দিকে কাঁচের জানলা। খাটে বসেই একদিকে দেখা যায় টাইগার হিলের ওপরে মাইক্রোওয়েভ টাওয়ার, আর একদিকে এভারেস্ট আর অন্যান্য পাহাড়চুড়ো। সামনে পাহাড় আর পাহাড়।
ইন্দ্রনাথ এখানে এলেই অন্যরকম হয়ে যায়। যে ইন্দ্রনাথ রুদ্রকে গোয়েন্দা কাহিনির পাঠকপাঠিকারা চেনে, জানে এবং ভালোবাসে, এ যেন সে ইন্দ্রনাথ নয়। বজ্রকঠিন ইন্দ্রনাথ এখানে এলে যেন ঋষিপ্রতিম হয়ে যায়। যতক্ষণ ঘরে থাকে, ততক্ষণ পাহাড় আর আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যে ভাবে আপন মনে, সে ছাড়া কেউ জানে না। যখন বেড়াতে বেরোয়, পাহাড়ের গা বেয়ে নীচে নেমে যায়, কখনো দার্জিলিং ছাড়িয়ে অনেক দূর চলে যায় ঝাউবনের পত্র মর্মর শুনতে শুনতে–তখন যেন আরও বেশি আত্মস্থ, আরও বেশি ধ্যানস্থ, আরও বেশি করে অন্য জগতের মানুষ হয়ে যায়। তার ভেতরকার যে সত্তাটার সন্ধান কেউ পায়নি, দার্জিলিংয়ের মন উদাস করা পরিবেশে এলেই তা ব্যাকুল হয়ে বেরিয়ে আসে বাইরে। রহস্যপ্রেমিক ইন্দ্রনাথ তখন প্রকৃতই উন্মনা হয়ে খোঁজে এমন এক রহস্য-সূত্র যা বিশ্বচরাচরে ব্যাপ্ত অথচ অনাদি অনন্ত সে রহস্যকে অনেকেই আজও বুঝে ওঠেনি।
ভার্গব বসুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল এই রকমই একটা মুহূর্তে।
জায়গাটা দার্জিলিং থেকে বেশ দুরে। একটা গোল পাথরের ওপর চুপ করে বসে রয়েছে একটা মনুষ্যমূর্তি। মাথার লম্বা চুল পিঠ পর্যন্ত লুটিয়ে পড়েছে। গায়ে তিব্বতী পোশাক। পায়ে পশমের জুতো। হঠাৎ দেখলে তিব্বতী লামা বলেই মনে হয়।
সুদূরের পানে মেলে ধরা ইন্দ্রনাথের চাহনি সহসা আটকে গেছল নিথর নিষ্কম্প মানুষটার ওপর। মাথার ওপর ঝাউগাছটা খুব বেশি হেলে পড়েছে ছাতার মতো–দুলে দুলে যেন সম্মান জানাচ্ছে মানুষটাকে।
সরু পায়ে-চলা পথটা পাথরটার হাত দশেক দূর দিয়ে গেছে। ইন্দ্রনাথই যাচ্ছিল সেখান দিয়ে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল অদ্ভুত জায়গায় অদ্ভুতভাবে মানুষটাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে। অন্যমনস্কভাবে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই উজ্জ্বল হল দুই চোখ। ঝলসে উঠল হীরকদ্যুতি–এই সেই দ্যুতি যার ঝিলিক দেখলেই প্রমাদ গোনে অপরাধী, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে অপরাধসন্ধানী।
ধারালো ঠোঁটের কোণে ভেসে ওঠে মৃদু হাসি। একটু ব্যঙ্গের, একটু বিস্ময়ের।
কেশে গলা সাফ করে নিয়ে ডাকল ধীর-গম্ভীর গলায়, ভার্গববাবু!…ভার্গব বসু!
নড়ে উঠল নিথর মূর্তি। পাথরের ওপর পাথরের স্ট্যাচুর মধ্যে বুঝি প্রাণের স্পন্দন দেখা গেল। আস্তে আস্তে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ইন্দ্রনাথের পানে।
ধবধবে সাদা মুখের চামড়া কুঁচকে গেছে। জোড়া ভুরুর নীচে চোখ দুটো এতক্ষণ স্তিমিত ছিল। ইন্দ্রনাথের পানে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পরেই তা নক্ষত্ৰকুচির মতো চিকমিকে হয়ে উঠল। বললে শান্ত গলায়, ইন্দ্রনাথ রুদ্র।…অনেক দিন পরে দেখা। কেমন আছেন?
ভালো। আপনি এখানে?
সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলে না ভার্গব বসু। মৃদু হাওয়ায় মাথার লম্বা চুল উড়ে এসে পড়ল কপালে, চোখে-মুখে। হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টাও করল না।
তারপর বললে আসুন। পাশে বসুন। বলছি।
নড়ল না ইন্দ্রনাথ। বলল বাঁকা সুরে, সঙ্গে ছুরি নেই তো? অথবা রিভলভার? সেই রিভলভারটা–যার একটা গুলিতে নাম লিখে দিয়েছেন আমার হার্ট ফুটো করবেন বলে?
আশ্চর্য হাসি হাসল ভার্গব বসু। ঝকঝকে সাদা দাঁতে রোদ্দুর ঝিলিক তুলে গেল নিমেষের জন্যে। ঝিলিক দেখা গেল তারকা উজ্জ্বল দুই চোখেও।
বলল ভরাট গলায়, ইন্দ্রনাথ রুদ্র, আমার বয়স ষাট পেরিয়েছে। রক্তের নেশাও বিদায় নিয়েছে।
টাকার নেশা? মদের নেশা? পরস্ত্রীর নেশা?
প্রত্যেকটা প্রশ্ন যেন ব্লোপাইপ থেকে নির্ভুল লক্ষ্যে ছোট ছোট তীরের মতো ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারল ইন্দ্রনাথ। প্রত্যেকটা তীর গিয়ে বিধল যথাস্থানে। মানুষটার মনের মধ্যে। তাই বুঝি ঝকঝকে হাসিটা ম্লান হল সামান্য। ঈষৎ নিষ্প্রভ হল ঝিকিমিকি চাহনি। ধবধবে সাদা সুন্দর মুখটার ওপর দিয়ে যেন চাপা বেদনার ঢেউ ভেসে গেল চকিতের জন্যে।
বলল একই রকম ভরাট মাদল-বাজনের সুরে, ইন্দ্রনাথ রুদ্র, আর কেউ না জানলেও আপনি তো জানেন, সব মানুষের মনের মধ্যেই সু আর কু দুটো প্রবৃত্তি আছে। কু প্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিলে সে সমাজের চোখে অপরাধী। আর সু প্রবৃত্তি যখন ঠেলে ওঠে, তখন সে
আপনার ভেতরে তাহলে এখন–
সু ছাড়া কু আর নেই। পাশে এসে বসুন, ইন্দ্রনাথবাবু। অনেক কথা আছে।
ইন্দ্রনাথ আর কথা বাড়াল না। সে জানে, তার প্রাণটাকে পিঞ্জরশূন্য করার জন্যে ধরাতলে বহু ব্যক্তি এখনও তৎপর, সে জানে অগণিত মানুষ যেমন তাকে ভালোবাসে, বহু পুরুষ এবং নারী তেমন তার চিতাভস্মের সন্ধান পেলে বড় খুশি হবে। সঙ্গে তাই সবসময়ে রাখে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র। প্রতিটি পেশীর বজ্রশক্তিকেও প্রকট করে তুলতে থাকে সব সময়ে। পেশায় এবং নেশায় সে যে গোয়েন্দা–তার বিশ্রাম নেই, তার জীবনের নিশ্চয়তা নেই, মুহূর্তের নিরাপত্তাবোধও নেই।
বোধ হয় এইগুলোর সন্ধানেই এই পর্বতাঞ্চলে আসে বারবার। একা।
কিন্তু ভার্গব বসুকে নির্জন এই অঞ্চলে এভাবে বসে থাকতে দেখে অণুপরমাণুর ওয়ার্নিং বেল বেজে ওঠে নিঃশব্দে। ভার্গব বসু। একদা যে ছিল পুলিশের আতঙ্ক, সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকা, সমাজের চোখে এক জীবন্ত প্রহেলিকা–আজ সে এই শান্তির অঞ্চলে মূর্তিমান অশান্তির করাল চেহারা নিয়ে উপস্থিত কেন?
দূর থেকেই তাই ছুঁড়ে দেয় বিদ্রূপ-তীক্ষ প্রশ্নবাণ, গাঁজা চরসের স্মাগলিং ধরেছেন নাকি? মিথাকুয়ানল ট্যাবলেটের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ব্যবসাটা অবশ্য ইদানীং ভালোই চলছে এ অঞ্চলে।
ইন্দ্রনাথ রুদ্র, আপনি কি সেই মতলবেই ঘুরঘুর করছেন এখানে? খরখরে হয়ে ওঠে ভার্গব বসুর ঈগল চক্ষু। বিষাণ বেজে ওঠে যেন কণ্ঠে।
গ্রিক স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে রইল ইন্দ্রনাথ। হাওয়ায় উড়তে লাগল গায়ের শাল। চুনোট করা কোঁচার অগ্রভাগ। হিরো সে চিরকাল। সুদর্শন। ব্যক্তিত্বময়। স্থিতধী। অসমসাহসিক।
বলল নিশ্চল দেহে নিষ্কম্প স্বরে, না।
তবে কেন এসেছেন এখানে?
আপনি কেন এসেছেন?
আমি? থমকে গেল ভার্গব বসু। চোখে চোখে চেয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর গলার স্বর নামিয়ে এনে বললে ভল্যুম কমিয়ে দেওয়া স্টিরিও আওয়াজে, জীবনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে। বিশ্বাস হল না? আসুন, বলছি।
.
পাশাপাশি বসে দুজনে এখন। দশ বছর আগেও দুজনে দুজনের অন্বেষণে হন্যে হয়ে ঘুরেছে। আজ বসে দুজনে পাশাপাশি। একটা মাত্র গোল পাথরের ওপর। মাথার ওপর দুলন্ত ত্রিভঙ্গমুরারি ঝাউ। সামনে গভীর খাদ। দূরে তুষারমৌলী হিমালয়। সূর্য যতই দিগন্ত ছাড়িয়ে মাথার ওপর উঠছে, কুয়াশা ততই কেটে যাচ্ছে। পাখির কাকলি আর পাতার সরসরানি ছাড়া কোনও শব্দ নেই।
ইন্দ্রনাথ রুদ্র, দূরের বরফ-ছাওয়া পাহাড়-চুড়োগুলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বলল ভার্গব বসু, আপনি জানেন, অনেক কলঙ্কে ভরা আমার অতীত। আপনি জানেন, একমাত্র শ্যালকের স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করতেও আমি দ্বিধা করিনি। লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি, কাশ্মীর থেকে মেঘালয় পর্যন্ত পুরো হিমালয় বেল্টে চোরাকারবার করেছি, রাজামহারাজার সঙ্গে বসে মদ খেয়েছি, ধনীর টাকা লুঠ করেছি, গরিবের মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। কেন ইন্দ্রনাথবাবু, কেন?
জানি কেন, মৃদু স্বরে বলল ইন্দ্রনাথ, যখন আপনি কপর্দকহীন, যখন আপনি সদ্যবিবাহিত, তখন আপনার সুন্দরী স্ত্রী ঘরছাড়া হয়েছিল এক আমেরিকান টুরিস্টের সঙ্গে। বিয়েও করেছিল অকে। তারপর–
লম্পট আমেরিকান দেহের ক্ষুধা মিটিয়ে চম্পট দেয় আমেরিকায়। তারই একটি ছেলে আর একটি মেয়েকে মানুষ করতে হচ্ছে আমাকে আজও। কারণ, ওদের মা ছিল একটা কাওয়ার্ড। আমার সামনে আর আসতে পারেনি। ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে দিয়ে–
বিষ খেয়েছিল সেই রাতেই।
ভারতীকে কাছে এনে রাখতে হয়েছিল সেই কারণেই।
.
ভারতীর কথা ভাবতেই ইন্দ্রনাথের মনে পড়ে যায় মিশরের আশ্চর্য সুন্দরী নেফারতিতিকে। রিমার্কেল বিউটি ছিল যাঁর, যিনি বিস্ময়ের পর বিস্ময় সৃষ্টি করে সহসা একদা যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছিলেন, তার জায়গায় আবির্ভূত হয়েছিল এক পুরুষমুর্তি–মিশর শাসন করেছিল কঠোর হস্তে।
কে এই নবাগত? কেউ জানে না। আজও তা রহস্যাবৃত।
অনুমান, শক্তিময়ী নেফারতিতি নিজেই পুরুষবেশে মিশর শাসন করে গেছিলেন।
কেন? না, ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ মিশরীয় প্রাচীন দেবদেবীদের ফেলে রেখে সূর্যদেবতা অ্যাটন উপাসনায় মেতে উঠেছিলেন। নীল নদের পাড়ে থিবস নগরীর মন্দির পরিত্যাগ করে রাজধানী সরিয়ে নিয়ে গেছিলেন তিনশো মাইল উত্তরে জনহীন ভূখণ্ড আমারনাতে। সতেরো বছর ছিলেন সেখানে–সূর্যই ছিল তাঁর একমাত্র উপাস্য দেবতা।
সবচেয়ে বিস্ময়কর স্বামী-স্ত্রীর চেহারা। ফারাও ছিলেন কদাকার। নেফারতিতি ছিলেন অসামান্য রূপসী।
এ যুগের নেফারতিতি বলা যায় ভারতীকে। অসাধারণ রূপবতী। কিন্তু স্বামী নির্বাচন করেছিল যাকে, তার মতো কুৎসিত মানুষ বোধ হয় ভূভারতে আর নেই। কুঁজো, কালো, সারা মুখে আর গায়ে বড় বড় আঁচিল। একটা চোখ পাথরের। ভাস্কর তার নাম। পেশাতেও তাই। নেশাও বটে। কৃষ্ণনগরের চুৰ্ণি অঞ্চলে ছোট্ট একটা স্টুডিওতে দিন নেই রাত নেই পাথর খুদে মূর্তির পর মূর্তি গড়ে যেত।
প্রতিটি মূর্তিই অনবদ্য। আশ্চর্য সুন্দর। তারিফ না করে পারা যায় না।
ভারতী ভালোবাসত শিল্পী ভাস্করকে–কদাকার ভাস্করের বাইরের সত্তাটাকে দেখেও দেখেনি সেই কারণেই। কিন্তু আস্তে আস্তে অসহ্য হয়ে উঠেছিল ভাস্করের সান্নিধ্য। শিল্পী ভাস্কর দরিদ্র ছিল না–কিন্তু ছিল অসংযমী! মদ, মেয়েমানুষ এবং জুয়ো–এই তিনটে সর্বনাশা নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল একটু একটু করে।
কি নিয়ে থাকবে ভারতী? সন্তান? ভাস্কর তা দিতে পারেনি। ভালোবাসা? ভাস্কর তাও তাকে দেয়নি।
রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিল ভার্গব বসু ঠিক এই সময়ে।
বেথুয়াডহরির জঙ্গলে দাঁড়িয়ে কথা হয়েছিল দুজনের মধ্যে।
মাথায় ছফুট লম্বা যেন সাদা মার্বেল কুঁদে গড়া ভার্গব। দুই চোখে কঠিন হিরে। কণ্ঠস্বরে অশনি সঙ্কেত।
বলেছিল নীরস স্বরে, ভারতী, শুনেছ সব?
মুখ নীচু করে বলেছিল পরমাসুন্দরী ভারতী, হ্যাঁ।
বিষ খেয়ে মরেছে–বেশ করেছে। আগেই মরা উচিত ছিল। কিন্তু ছেলেমানুষ দুটো তো কোনও দোষ করেনি।
কিন্তু তুমি নিজেই তো পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চর্কিপাক দিয়ে বেড়াচ্ছ সারা ভারতে–ছেলেমেয়ে মানুষ করবে কীভাবে?
আমি তো করব না।
তবে কে করবে?
তুমি।
আমি!
হ্যাঁ, ভারতী, তুমি। তুমি যা চাও, তা কি পেয়েছ ভাস্করের কাছে?
মুখ নীচু করেছিল ভারতী।
পাষাণকণ্ঠে বলে গেছিল ভার্গব, অথচ তোমার ভালোবাসার ভেল্কি থেকেই সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছে ভাস্কর। কি ছিল সে বিয়ের আগে? কপর্দকহীন কারিগর। তুমিই তাকে আইডিয়া দিয়েছ, প্রেরণা দিয়েছ, শক্তি জুগিয়েছ, মূর্তি গড়ার উপাদান কেনা থেকে শুরু করে স্টুডিও জোগাড় করার টাকা পর্যন্ত সব জুটিয়ে দিয়েছে।
তুমিই দিয়েছ–নইলে পেতাম কোথায়?
ভারতী, তার বিনিময়ে আমি তোমাকে চাইছি না। ছেলেমেয়ে তোমার দরকার–নয় কী? বেশ, মুখে না বলো–তোমার মন তা চাইছে, আমি জানি। মাঝে মাঝে আমি আসব–দেখে যাব তাদের–কিন্তু এক-আধ রাতের বেশি থাকতে পারব না। রাজি?
রাজি হয়েছিল ভারতী। সেই মুহূর্তে চলে এসেছিল ভার্গবের সঙ্গে বাড়ি আর ফেরেনি। ভাস্কর তার ঠিকানাও আর খুঁজে পায়নি। মাসে মাসে আসত শুধু মোটা টাকার ডিমান্ড ড্রাফট।
সেই সঙ্গে ভার্গব বসুর নিজের হাতে লেখা একটা চিরকুট।
প্রিয় ভার্যাট,
তোমার নেশার টাকা পাঠালাম। বউকে নিয়ে ভেবো না। আগের জন্মে সে ছিল ভোজরাজার কন্যা, বিক্রমাদিত্যের পত্নী। মায়াবিদ্যায় নিপুণা। তারই ভেল্কিতে তুমি আজ প্রসিদ্ধ ভাস্কর। একই মায়াবিদ্যা দেখিয়ে আমেরিকানের ঔরসে জাত দুই ছেলেমেয়েকে সে নিজের ছেলেমেয়ে করে নিয়েছে। আমি তার নাম দিয়েছি ভানুমতী। আপত্তি নেই তো?
ভার্গব বসু
ডিমান্ড ড্রাফট পেয়ে বড় খুশি হত ভাস্কর প্রতিবার। একই বয়ানের চিঠি পেয়েও অখুশি হত না। কিন্তু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠত ভার্যাট সম্বোধনটা পড়ে।
প্রথমটা মানে বুঝতে পারেনি। অভিধান দেখেছিল। মানেটা জানতে পেরে অবধি বিছুটির জ্বালা ধরে যায় হাতে চিঠিখানা পেলেই।
কারণ, ভার্যাট মানে সেই পুরুষ যে স্ত্রীকে বেশ্যাবৃত্তি করায় জীবিকার জন্য।
.
বাড়ি ঠিক করেই রেখেছিল ভার্গব। অজ্ঞাতবাসের জন্যে হিমালয়ের কোলে ছিমছাম সুন্দর কটেজ। দার্জিলিংয়ের উপকণ্ঠে।
ছেলেমেয়েদের ধমনীতে বইছে আমেরিকান রক্ত। মানুষ হোক তারা শীতের দেশে সাহেবী কায়দায়।
ছেলের নাম ভারদ্বাজ। মেয়ের নাম ভায়োলেট।
দুজনেরই চোখে রং নীল। গায়ের লং লালচে। ভারতীয় বলেই মনে হয় না। চুলগুলো পর্যন্ত সোনালি।
ভার্গব ধূমকেতুর মতো মাঝে মাঝে আসত নিরালা এই ডেরায়। কালিংম্পঙের ডক্টর গ্রাহাম হোম থেকে আনিয়ে নিত ছেলেমেয়েদের। দিন দুই হইচই করে আবার উধাও হয়ে যেত মাস কয়েকের জন্যে।
ভানুমতীকে মা আর ভার্গর্বকে বাবা বলত ভারদ্বাজ আর ভায়োলেট। ভানুমতী ভারদ্বাজকে বলত, ভাস্করাচার্য–ভাস্কর হওয়ার প্রতিভা আছে নাকি তার মধ্যে। ভায়োলেটকে বলত ভাস্বতী বড় দীপ্তিশালী, বড় তেজস্বিনী বলে।
ভারতীকে শুধু ভানুমতী নামেই ডাকত না ভার্গব। বলত, অভিনব বিদ্যাটা ভালোই শিখেছ। এক এক সময়ে ইচ্ছে যায় তোমাকে আমার পার্টনার করে নিই।
তাই তো নিয়েছ, সুন্দর চোখে, সুন্দর হেসে বলত ভারতী। সে চোখে হিমালয়ের অপার শান্তি।
অট্টহেসে বলত ভার্গব, দূর! এত হাফ পার্টনারশিপ।
ফুল পার্টনারশিপ দিলেই হয়।
না। তাহলে যে ভার্যাট কথাটা সত্যি হয়ে যাবে। পেয়ে বসবে ভাস্কর।
ও তো আমার জীবনে আর নেই।
না থাকুক। এই পৃথিবীতে তো আছে। কিন্তু ভার্যাট শব্দটার যা মানে, তা হতে দেব না। আমি বলছি অন্য পার্টনারশিপের কথা।
যেমন?
আমার এই কারবারে তোমার অভিনয় বিদ্যেটাকে কাজে লাগাতে পারলে—
ছেলেমেয়েদের তাহলে দেখবে কে?
ভারতীয় সঙ্গে রহস্যময়ী নেফারতিতির তুলনাটা এই কারণেই বারবার মাথায় আসে ইন্দ্রনাথের। আশ্চর্য মেয়ে বটে। প্রহেলিকায় প্রাণবন্ত।
.
বাগানে বসে অনেক দূরের রোপওয়ের ঝুলন্ত কামরার যাতায়াত দেখছিল ভারতী। এমনিতেই দুধে আলতা গোলা তার গায়ের রং। দীর্ঘদিন পাহাড়ী জায়গায় থাকার ফলে গালদুটো এখন টুকটুকে আপেলের মতো রাঙা। দুই চোখ কিন্তু মিশমিশে কালোজামের মতো কালো। একটু ঠাহর করলে কালো চুলের মধ্যে দু-একটা রুপোলি রেখাও আবিষ্কার করা যাবে। কিন্তু যৌবন যেন এখনো তার দেহের তটে তটে ফুঁসে ফুঁসে উঠছে। লাস্যময়ী ললনা সে কোনওকালেই নয়। তার রূপে আগুনের দাহিকাশক্তি নেই, আছে অমৃতবারির স্নিগ্ধতা। হিমালয়ের হাওয়া তাকে আরও অপরূপা এবং বুঝি অনন্তযৌবনা করে তুলেছে।
আশেপাশে কেউ নেই। এই তল্লাটেই কেউ নেই। কটেজ শূন্য। ছেলেমেয়েরা কালিম্পঙের ডক্টর গ্রাহাম হোমে। ভারতী আজ একা। বড় একা। মনের মধ্যে মহাকাশের শূন্যতা। এরকম শূন্যতা তার মনে আগেও এসেছে বহুবার। কিন্তু প্রতিবারই যেন আশ্চর্যভাবে হিমালয় জীবন্ত হয়ে উঠে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে তাকে–একা একা বেরিয়ে পড়েছে ভারতী। হিমাচলের হিম হাওয়ার স্নিগ্ধ প্রলেপ বুকের মধ্যে নিয়ে ফিরে এসেছে।
কিন্তু আজ আর সে ইচ্ছে করছে না। হিমালয়ের হাতছানি তার প্রাণে আর সাড়া জাগাচ্ছে না। কেননা, খবর এসেছে দুদিন আগে–ভার্গব বসু আর নেই।
হিমালয় গ্রাস করেছে মহাভয়ঙ্কর ভার্গকে। বর্ডার পুলিশের গুলি এড়িয়ে আর পালাতে পারেনি। মাদক দ্রব্যের বোঝা সমেত লাশ গড়িয়ে গেছে খাদের মধ্যে।
ভার্গব আর আসবে না। টাকাও আর আসবে না। সংসার চলবে কেমন করে?
ভারতী তাই আজ এত উন্মনা। স্বয়ং হিমালয়ও যেন হাহাকার করে উঠছে মাঝে মাঝে তার বুকের হাহাকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহমান বায়ু আকারে।
ভার্গব–যে ভার্গব ভারতীকে দিয়েছে নিরাপত্তা, মাতৃত্বের স্বাদ, নারীত্বের সম্মান, সে ভার্গব বিদায় নিয়েছে চিরকালের জন্যে।
ঝাপসা হয়ে আসে ভারতীর দু-চোখ।
গলা খাঁকারিটা শুনল ঠিক সেই সময়ে। পেছনে।
চমকে উঠেছিল ভারতী। পেছন ফিরে দেখেছিল অতি বৃদ্ধ এক তিব্বতী লামাকে? অষ্টাবক্র মুর্তি বললেই চলে। হাতের যষ্টিও তথৈবচ। লোলচর্মের আড়ালে তির্যক চক্ষু প্রায় অদৃশ্য। চোখ পিটপিট করে নির্নিমেষে দেখছে ভারতীকে।
নিঃশব্দে কখন এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে–ভারতী টেরও পায়নি।
বিস্মিত চোখ মেলে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিল ভারতীয়। পরক্ষণেই উবে গেছিল বিস্ময়। কৌতুক-তরল হাসিতে সমুজ্জ্বল হয়েছিল মুখচ্ছবি।
বলেছিল বীণাঝঙ্কৃত স্বরে, রাসবিহারী বসুও এমন ছদ্মবেশে ধরতে পারতেন কিনা সন্দেহ। অগ্নিযুগে যদি জন্মাতে, ব্রিটিশরাজ নাজেহাল হয়ে যেত তোমাকে নিয়ে। খাদের মধ্যে থেকে উঠে এলে কী করে? ক-টা গুলি লেগেছিল গায়ে?
ভানুমতী–ভণিতা না করে বললে ছদ্মবেশী ভার্গব বসু, এই জন্যেই তোমাকে বলি মায়াবিদ্যায় নিপুণা। কী করে বুঝলে আমি অশরীরী প্রেত নয়?
ঢং দেখে আর বাঁচি না! উঠে পড়ে ভারতী। রোপওয়েতে এলে নিশ্চয়? চিনতে পারেননি?
পাহাড়ের গায়ে গায়ে অট্টহাসি ছুঁড়ে দিয়ে বললে ভার্গব বসু, ক্ষিদে পেয়েছে।
.
বাইরে থেকে কটেজটাকে মনে হয় ছোট। দোতলা। কিন্তু ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায় ছোটখাটো একটা প্যালেস।
দোতলার বিরাট হলঘরটা আজ গমগম করছে আবির্ভাবে। ভারদ্বাজ ভায়োলেট অনেকদিন পর ড্যাডিকে দেখে খুশিতে কলকল করছে। ভারতী এঁটো বাসনকোসন সরাচ্ছে টেবিল থেকে। উজ্জ্বল চোখে বারবার তাকাচ্ছে যার পানে, এই কটেজে সে এসেছে এই প্রথম।
ভাস্কর। তার বিয়ে করা স্বামী।
ভাস্করের সামনেই বসে ভার্গব। স্মিতমুখে শুনছে ভাস্করের বক্তৃতা।
আগের চাইতে আরও কদাকার হয়েছে ভাস্কর। কুঁজো পিঠ যেন আরও নুয়ে পড়েছে বয়েসের ভারে। মুখ আর সারা দেহের আঁচিলগুলো লোমশ হয়ে ওঠায় এখন তাকে মূর্তিমান ইয়েতি বললেও চলে।
এক বিঘত লম্বা একটা পাথরের নারীমূর্তি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতে দেখাতে বলছিল ভাস্কর, প্রস্তর যুগের ভেনাস। ফ্রান্স থেকে আনিয়েছি। আহা, মুণ্ডুর যা ছিরি! বুকে পিঠে নিতম্বে এত চর্বিও থাকত সেকালের মেয়েদের? হাউ আগলি!
ভার্গব বললে, শুনেছি, হিমযুগের ঠান্ডা থেকে বাঁচবার জন্যে তখনকার মানুষদের গায়ে চর্বির আস্তরণ থাকত একটু বেশি। ভাস্কর, স্টোনএজের ভেনাস নিয়ে আলোচনা করার জন্যে তোমাকে ডাকিনি। ভারদ্বাজ, ভায়োলেট, ভারতী–তোমরাও শোনো।
ঘর এখন নিস্তব্ধ!
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল ভার্গব বসু, তোমরা জানো পুলিশের চোখে আমি এখন মৃত। মৃতই থাকব বাকি জীবনটা। এখানেই থাকব–আর কোথাও যাব না।
খুশিতে ফেটে পড়ে ভারদ্বাজ আর ভায়োলেট। প্রথমজনের বয়স চোদ্দো। দ্বিতীয়জনের বারো।
সঙ্কুচিত হয় কেবল ভাস্করের একটা চোখ–পাথরের চোখটা নির্ভাষ, নিষ্কম্প।
ভার্গব বলে চলে, আমার রোজগারের উৎস ছিল অনেক। কোটি কোটি টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি, বিরাট দলের সর্দারি করেছি। কিন্তু আর নয়। এবার আমার ছুটি। শান্তিতে জীবনযাপনের পালা।
সুবুদ্ধি হল এতদিনে। ভারতীর মন্তব্য।
সামান্য হাসল ভার্গব। বলল, কিন্তু মিতব্যয়ী হতে হবে এখন থেকে। কারণ…
বলে একটু থামল ভার্গব। তারপর বলল, এই কটেজে জমানো টাকা ছাড়া আর কোথাও একটা পয়সাও আমার নেই।
যেন শ্বাস ফেলতেও ভুলে গেছে ঘরের প্রত্যেকে।
বড় নিশ্বাস ফেলে বলল ভার্গব, আমার দেহ নিপাত্তা হয়েছে, এ খবরটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার যে-যে ডেরায় যত নগদ টাকা ছিল, সব লুঠ করে নিয়ে গেছে আমারই স্যাঙাত্রা।
বেশ করেছে। ঈষৎ কঠিন শোনাল ভারতীর গলা।
কিন্তু যেন হাহাকার করে ওঠে ভাস্কর, কিন্তু আমার তাহলে চলবে কী করে?
ঘৃণার আগুন জ্বলে ওঠে ভারতীর কালো চোখে। এত বছর পরে স্বামীর সঙ্গে দেখা, একটা কথাও সে বলেনি। ভার্গব কেন তাকে এই লুকোনো আস্তানায় কৌশলে এনে ফেলেছে–তাও জানতে চায়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে লোভী মানুষটার কদর্য মন যেন বিবমিষার বিষ ঢেলে দিল তার সারা অঙ্গে।
প্রশান্ত হাসি হাসল ভার্গব বসু, সে ব্যবস্থা করব বলেই এসেছি এখানে, ডেকে এনেছি তোমাকে। ভাস্কর, ভারদ্বাজ আর ভায়োলেট এখন বড় হয়েছে। সব জানে। তোমার স্ত্রী এখন তাদের মা। কিন্তু তোমার ঘর খালি করেছি আমি। তার গুণগার দিয়ে এসেছি মাসে মাসে–
সেই সঙ্গে একটা জঘন্য চিঠি–।
ভায়রার সঙ্গে ঠাট্টা বলেই ওটাকে ধরে নিও। ভারতী নিষ্কলঙ্ক আজও। সন্ন্যাসিনী বলতে পারো। ছেলেমেয়ে ছাড়া কেউ ওর গা ছোঁয়নি এত বছরেও।
জানলা দিয়ে হিমালয়ের পাহাড় চুড়োগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল দুই ভাইবোন। দুজনেই দুটো বিউটি।
চোখ নামিয়ে রয়েছে ভারতী। সেদিকে একবার তাকিয়েই রুক্ষ কণ্ঠে বললে ভাস্কর, সাফাই গাওয়ার দরকার নেই। আমার জন্যে কী ব্যবস্থা করেছ বলো।
ভার্গব বসুর ভয়ঙ্কর চোখদুটো একটু শুধু ছোট হল। কণ্ঠস্বর রইল অবিকৃত। বললে, কৃষ্ণনগরে তোমার স্টুডিওর আশেপাশে অনেক গাছ আছে। একটা গাছের তলায় রূপোর বাক্সে সোনার বাট রাখা আছে–বর্তমান বাজার দাম প্রায় তিন লাখ টাকা।
তি-ন-লা-খ! যেন দম আটকে আসে ভাস্করের।
ওই সোনা তোমার।
কি-কিন্তু কোথায় আছে?
সেটা তোমাকে খুঁজে বার করে নিতে হবে।
কিন্তু গাছ তো অনেক–লোকজন তো দেখে ফেলবে সব গাছের তলা খুঁড়তে গেলে—
সমাধানটা তোমাকেই করতে হবে। যেমন এখানকার সমাধান করবে ভানুমতী।
আমি! চমকে ওঠে ভারতী। সমস্যাটাই বা কী?
আমার পেছনে এই যে সিন্দুকটা দেখছ, দেওয়াল ঘেঁষা ইস্পাত-সিন্দুক দেখিয়ে বলে ভার্গব বসু, এর মধ্যে আছে ত্রিশ লাখ টাকার সোনা। তোমার, ভারদ্বাজের আর ভায়োলেটের জীবন তাতে চলে যাবে।
ও। সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ভারতীর। কিন্তু সমস্যাটা কী?
সিন্দুকটা ডবল দাম দিয়ে করিয়ে এনেছিলাম বোম্বাই থেকে। কপাটের ওপর শিবমূর্তিটার চারপাশে গোল সার্কেলের মধ্যে স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের সবকটা হরফই লেখা রয়েছে দেখতে পাচ্ছ। আমি ছাড়া সিন্দুক খোলার কায়দা কেউ জানে না। তোমাকে সেই কৌশল আবিষ্কার করতে হবে–যদি হঠাৎ আমি মারা যাই।
হঠাৎ মারা যাবে কেন? উদ্বিগ্ন স্বর ভারতীর।
কারণ আমরা হার্টের অবস্থা ভালো নয়। বর্ডার পুলিশের গুলিতে অক্ষত ছিলাম না, ভারতী। যাক সেকথা, সোনা ছাড়াও সিন্দুকে আছে একটি থলি বোঝাই হিরে। তার বাজার দাম এখন কত–বলতে পারব না। তোমার বড় আদরের ভাস্বতী আর ভাস্করাচার্যের জন্য রইল এই থলি। কিন্তু সিন্দুকের মধ্যে থেকে আবিষ্কার করতে হবে তোমাকেই।
বিচ্ছিরি হাসি সোনা গেল এই সময়ে। চমকে উঠল প্রত্যেকেই।
হাসছে ভাস্কর।
বললে, সিন্দুকটা আগুনে পুড়িয়ে ভেঙে ফেললেই ল্যাটা চুকে যাবে–সিক্রেট জানবার দরকার কী?
বিচিত্র হাসি ভেসে ওঠে ভার্গবের ঠোঁটের কোণে, সেই সঙ্গে উড়ে যাবে এই কটেজ। হাতুড়ির ঠোকা পড়লেও তা হবে। কারণ, ওর মধ্যে বসানো আছে পাওয়ারফুল এক্সপ্লোসিভ।
আতকে ওঠে ভাস্কর।
নির্দয় চাহনিটা এতক্ষণে ফুটে উঠতে দেখা যায় ভার্গব বসুর পাথর কঠিন চক্ষুতারকায়।
বলে নির্মম স্বরে, ভাস্কর, ভার্গব বসু কোনও কাজেই ফাঁক রাখে না। এতদিন তোমাকে এ-বাড়িতে আনিনি তোমার এই লোভী মনটার জন্যেই কুবেরের সম্পত্তি এখানে আছে তুমি জানতে পারলে কী-কী করবে, তাও আমি জানি। কিন্তু পার পাবে না–পরলোক বলে যদি কিছু থাকে, প্রেতাত্মা বলে যদি কিছুর অস্তিত্ব থাকে–আমি সেই প্রেতাত্মা হয়ে অভিশপ্ত করে তুলব তোমার জীবনকে।
.
সন্ধ্যা নামছে পাহাড়ের গায়ে। সূর্য আর দেখা যাচ্ছে না।
কথা শেষ করে হাঁফাচ্ছে ভার্গব বসু। হঠাৎ এক ঝলক রক্ত উঠে এল মুখ দিয়ে।
ভার্গব! চকিত কণ্ঠ ইন্দ্রনাথের।
হাত তুলে তাকে নিরস্ত করে ভার্গব, আমার আয়ু শেষ হয়ে এসেছে ইন্দ্রনাথ রুদ্র। ভেবেছিলাম ভানুমতীকে বলে যাব সিন্দুক খোলার গুপ্তরহস্য–কিন্তু আর সময় নেই। ডাক এসেছে, চললাম।
মাথাটা বুকের ওপর ঝুঁকে পড়ে ভার্গবের।
ধরে ফেলে ইন্দ্রনাথ। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে জোর গলায়, কিন্তু আমাকে শোনালেন কেন এই কাহিনী?
ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দেয় ভার্গব, সিন্দুক আপনি খুলে দেবেন বলে।
প্রাণবায়ু মিলিয়ে গেল শূন্যে শেষ শব্দটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।
রহস্য সিন্দুকের সামনে বসে আছে ইন্দ্রনাথ রুদ্র। কমল হিরের মতো চোখদুটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সিন্দুকের প্রতিটি অংশ।
ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ভারতী আর ভাস্কর, ভারদ্বাজ আর ভায়োলেট।
ইন্দ্রনাথ দেখছে, সিন্দুকটা দামি ইস্পাত দিয়ে তৈরি। চওড়ায় ছ-ফুট, লম্বায় তিন ফুট। কপাটটার প্রায় সবটুকু জুড়ে গোলাকার হাতল। হাতলের ওপর একটা শিবের মূর্তি। মূর্তির মাথায় অর্ধচন্দ্র। বাঁকা চাঁদের খোঁচাদুটো ফেরানো রয়েছে হাতল ঘিরে খোদাই করা স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের হরফগুলোর দিকে। গোল হাতলের ওপরের কিনারায় একটা তির চিহ্ন। লাল রঙের। অর্থাৎ এই তির চিহ্ন ঘুরিয়ে সঠিক হরফগুলোর দিকে ফেরালেই খুলে যাবে সিন্দুক।
বুঝলাম। যেন নিজের মনেই বলল ইন্দ্রনাথ।
কি বুঝলেন? পেছন থেকে জিগ্যেস করল ভারতী।
গোল হাতলের ওই তিরটা ফেরাতে হবে এমন কয়েকটা হরফের দিকে যা জানা ছিল কেবল ভার্গব বসুর।
বিরক্ত স্বরে বলল ভাস্কর, ওটা আমরাও বুঝেছি। কিন্তু হরফগুলো কি, তা কি বলে গেছে আপনাকে?
না। শান্ত স্বরেই বলল ইন্দ্রনাথ, সময় পেলেও বলত না। কেননা, ভার্গব আমাকে চিনত হাড়ে হাড়ে।
আমাদের যদি সেইভাবে চেনবার সুযোগ দিতেন–
ভাস্করের মুখের কথা আটকে গেল ইন্দ্রনাথ ফিরে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে। হিমেল চোখ। গা পর্যন্ত হিম হয়ে গেল ভাস্করের। সুপুরুষ, অমায়িক মানুষটার চোখ যে পলকের মধ্যে বরফ কঠিন হয়ে উঠতে পারে, আগে তা ভাবেনি।
ওই একবারই চাইল তার পানে ইন্দ্রনাথ। আবার মুখ ফিরিয়ে নিল সিন্দুকের দিকে। বলল, ভার্গব বসু শুধু তস্কর সম্রাট ছিল না, রসিক সম্রাটও ছিল। রহস্য ওর জীবনের পাতায় পাতায়। কোনওটা ভয়ঙ্কর রহস্য, কোনওটা মজার রহস্য। এই সিন্দুক ওর মজার রহস্যপ্রবণতার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। সারা জীবন ধরে ওর অনেক রহস্যের সমাধান করেছি, মৃত্যুর আগে তাই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গেল শেষ রহস্যটা উপহার দিয়ে। জানি না, পরলোক আছে কিনা, প্রেতাত্মার অস্তিত্ব আছে কিনা–যদি থাকে, তাহলে এই রাতের অন্ধকারেই বাইরে থেকে ঘরের আলোয় চেয়ারে এসে বসুক! দেখুক, তার বুদ্ধি বড়, না আমার বুদ্ধি বড়!
মাই গড! গা শিরশির করে ওঠে বোধ হয় ভাস্করের। ভারতীর দু-হাত ধরে গা ঘেঁষে দাঁড়ায় ভারদ্বাজ আর ভায়োলেট।
এসব ঘটল ইন্দ্রনাথের পেছনে। সে চেয়ে আছে সামনে সিন্দুকের দিকে। দুচোখ জ্বলছে নক্ষত্রের মতো। একটু একটু করে কণ্ঠে জাগ্রত হচ্ছে দুন্দুভি নিনাদ। যেন বিদেহীদের আবাহন করার সুরে কথাগুলো বলে একদৃষ্টে চেয়ে রইল সিন্দুকের দিকেই। তারপর সেই দিকে চেয়ে থেকেই বলল, ভারতী দেবী!
বলুন।
ভার্গব বসুর রসিক মনের পরিচিতি রয়েছে এই ফ্যামিলির প্রত্যেকের নামকরণের মধ্যে। ভা দিয়ে নাম শুরু হয়েছে প্রত্যেকের। আপনার, ভাস্করবাবুর আর ভার্গবাবুদের নামের আদ্যক্ষরে মিল কাকতালীয়। ওই মিল দেখেই ছেলেমেয়ের নামের গোড়ায় ভা লাগিয়েছিলেন উনি। তাই না?
হ্যাঁ। আমিও ওদের যে দুটো নাম দিয়েছি, তাও ভা দিয়ে শুরু। ওঁর পছন্দ হবে জেনেই করেছিলাম। আমাকেও তো ভানুমতী নামে ডাকতেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমি বাদে এখানে যারা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের নামের আগে রয়েছে ভা। এই সিন্দুকে যা কিছু আছে, তা ভাস্করবাবু বাদে বাকি তিনজনের জন্যে। তিনটে ভাওলা নামের জন্যে। তাহলে তিনবার হাতলের তির ভায়ের দিকে ঘোরানো যাক।
বলেই, উঠে গিয়ে দু-হাতে গোল হাতল চেপে ধরে লাল তিরটাকে প্রথমে ভয়ের দিকে ঘোরালো ইন্দ্রনাথ, তারপরে আয়ের দিকে।
একবার ভা হল। আরও দুবার হোক। বলে পরপর একই ভাবে হাতল ঘুরিয়ে দুবার ভা রচনা করল ইন্দ্রনাথ। মোট হল তিনবার। তিনজনের ভা সিন্দুক, এবার হও তো চিচিং ফাঁক।
হাতল ধরে টান দিল বটে ইন্দ্রনাথ। কপাট রইল অনড়। ব্যঙ্গের হাসি শোনা গেল পেছনে। হাসছে ভাস্কর।
মাই ডিয়ার ডিটেকটিভ, আমাকে বাদ দিতে গিয়ে ভুলটা করলেন। এই ফ্যামিলির আমিও একজন। চারজনের ফ্যামিলি। চারবার ভা হবে। আবার করুন–গোড়া থেকে।
কথার জবাব না দিয়ে যেন আপন মনেই বলে গেল ইন্দ্রনাথ, ভার্গব বসুর প্রেতাত্মা যদি হাজির থাকেন, তাহলে যেন এইরকম বিচ্ছিরি ভাবে হেসে উঠবেন না–ছেলেমেয়েরা ভয় পাবে। আপনার অতিরিক্ত হুঁশিয়ারি আগেই আঁচ করেছিলাম। তবুও পেরিয়ে এলাম ফাস্ট স্টেপ। এবার সেকেন্ড স্টেপ। আপনাদের প্রত্যেকের নাম দুটো। ভারতী আর ভানুমতী, ভারদ্বাজ আর ভাস্করাচার্য, ভায়োলেট আর ভাস্বতী। মোট ছটা ভা।
আজ্ঞে না, মোট আটটা ভা। ভাস্কর আর…আর…
ভার্যাট। কঠিন স্বরে পেছন না ফিরেই বলল ইন্দ্রনাথ। মানেটা ছেলেমেয়েদের সামনে আর বললাম না।–যাক, মোট ছবার ভায়ের দিকে তির ঘোরানো যাক।
ঘুরল হাতল। খুলল কপাট। ভেতরে ঠাসা সোনার বাটও দেখা গেল।
কিন্তু হিরের থলি কই?
বিদ্রুপের ছুরি ঝলসে ওঠে ভাস্করের কণ্ঠে, ব্লাফার!
বিদ্যুৎবেগে ঘুরে দাঁড়ায় ইন্দ্রনাথ, কে? ভার্গব বসু? তার নখের যোগ্যও আপনি নন। কথাটা রিপিট করবেন না–প্রেতাত্মা হাজির থাকতে পারে।
মুখ সাদা হয়ে গেল ভাস্করের। থরথর করে কাঁপতে লাগল মুখের আঁচিলগুলো।
নিরক্ত মুখে ভারতী শুধু বললে, কিন্তু হীরের থলি—
সিন্দুকেই আছে। চকিতে কণ্ঠস্বর সহজ করে বলল ইন্দ্রনাথ। এবারে আসা যাক থার্ড স্টেপে।
থার্ড স্টেপ? ভারতী বিস্মিত, সিন্দুকে তে থলি নেই।
সিন্দুকেই আছে, ভারতী দেবী! স্নিগ্ধকণ্ঠ ইন্দ্রনাথের, ভার্গব বসু, অন্তত আপনার সামনে মিথ্যে বলেননি। কারণ আপনাকে তিনি মনে মনে পুজো করতেন, মনের সিংহাসনে আপনাকে দেবীর আসনে বসিয়েছিলেন। ভারতীর চেয়ে ভানুমতী নামটা তিনি অকারণে দেননি–ভানুমতীর ভেল্কি শুধু আপনিই দেখাতে পারবেন, এই বিশ্বাস এই আস্থা নিয়ে আপনার জিম্মাতেই রেখে গেছেন ছেলেমেয়ের হিরে।
আমি। আমার..কাছে… হঠাৎ চিকচিক করে ওঠে ভারতীর চোখে। বুঝেছি।
নীরবে ঘাড় হেলায় ইন্দ্রনাথ, হা, ভানুমতী নামটাতেই এবার হাতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তির ছোঁয়াতে হবে।
সিন্দুকের কপাট আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিল ইন্দ্রনাথ। হাতলের তির ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছুঁয়ে গেল ভানুমতী শব্দটাকে।
কিন্তু কপাট আর খুলল না।
অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলল ভাস্কর, দুর মশায়? শুধু অর্ধাঙ্গিনীর নামে কোনও শুভ কাজ হিন্দু শাস্ত্রের বিধানে আছে। যত্ত সব। আমার নামটাও যোগ করুন…
নির্বিকার ভাবে বললে ইন্দ্রনাথ, এবার ফোর্থ স্টেপ। ভারতী দেবী, ভালে চন্দ্র যার, তার নাম কী?
শিব। বললে ভারতী ঈষৎ বিমূঢ় কণ্ঠে।
হাতলে রয়েছে শিব, মাথায় রয়েছে চন্দ্র–নিশ্চয় অকারণে নয়। কাছে আসুন। কী দেখছেন? চাঁদের একটা খোঁচার ওপর ছোট্ট বিন্দু। ওই বিন্দুটাই হোক এবার আমাদের চিচিং ফাঁক সঙ্কেত।
বলেই দুহাতে অর্ধচন্দ্র চেপে ধরল ইন্দ্রনাথ। চাপ দিতেই আস্তে আস্তে ঘুরে গেল শুধু বাঁকা চঁদটা। কালো বিন্দুটাকে দিয়ে ভানুমতী শব্দটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল ইন্দ্রনাথ।
খুলে এল শিবমূর্তি সমেত পুরো হাতলটা। ভেতরে একটা খুপরি। খুপরির মধ্যে একটা মখমলের থলি।
আলতো হাতে থলে বার করে এনে টেবিলে উপুড় করে দিল ইন্দ্রনাথ।
হাজারটা সূর্য যেন ঠিকরে গেল অজস্র ছোট-বড় হিরে থেকে।
স্থলিত স্বরে বললে ভানুমতী, বুঝলেন কী করে বলবেন?
সিন্দুকের ডবল দাম শুনে। ডবল দাম দেওয়া মানেই ডবল কাজ করা হয়েছে সিন্দুকে। মানে, ডবল সিন্দুক। সিন্দুকের ভেতরে সিন্দুক। ভার্গব বসুর প্রেতাত্মা এবার ঊর্ধ্বলোকে যেতে পারেন–যাকে যা দেবার, তা দিয়ে গেলাম।
কই দিলেন? আর্তনাদ করে ওঠে ভাস্কর, আ-আমার তিন লাখ টাকার সোনা কোন গাছের তলায় আছে।
নিষ্ঠুর গলায় বললে ইন্দ্রনাথ দরজার দিকে যেতে যেতে, ওটা আপনিই বার করুন আপনার কুটিল ব্রেন খাঁটিয়ে।
সে তো করবই। কিন্তু সময় তো লাগবে–ভার্গবে, ইয়ে, মানে প্রেতাত্মাটি কষ্ট পাবে—
হঠাৎ এক কাণ্ড করে বসল ভারতী। ইন্দ্রনাথের দু-হাত জড়িয়ে ধরল।
বলল চোখে চোখ রেখে গাঢ় কণ্ঠে, দাদা!
দাদা?
হ্যাঁ, আমি আপনার বোন। আমার একটা কথা রাখুন।
বিরাট নিশ্বাস ফেলে ইন্দ্রনাথ বললে, হায়রে বাংলার বধু..গাছের সন্ধানটা বলে দিতে হবে, কেমন?
হ্যাঁ, দাদা।
এই হিমালয়ে বসে?
আপনি পারবেন। ফিফথ স্টেপ নিশ্চয় ভেবে রেখেছেন।
হেসে ফেলল ইন্দ্রনাথ, দুষ্টু মেয়ে। তোমার মহাপণ্ডিত ভার্যাট স্বামীকে জিগ্যেস করো তো ভান্ডির মানে কী?
ভান্ডির।
সবই তো ভায়ের খেলা। কৃষ্ণনগরের চুর্ণিতে এতদিন ছিলে, বটগাছ দেখোনি অজস্র?
বটগাছ? হা, হা ওর স্টুডিওর দক্ষিণ দিকেই তো একটা বুড়ো বট—
ভান্ডির মানে বট গাছ। ডবল নাম তো এখানেও। ভাস্কর, ভার্যাট, ভান্ডির–বটগাছের তলা খুঁড়লেই–
তিন লাখ টাকার সোনা–! সোল্লাসে কুঁজটাকে প্রায় সিধে করে ফেলল ভাস্কর।
ইন্দ্রনাথ ততক্ষণে চৌকাঠ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাড়ির বাইরে যাওয়ার আগেই দৌড়ে নেমে এল ভারদ্বাজ আর ভায়োলেট।
দু-জোড়া নীল চোখ মেলে বললে, আঙ্কল, পুলিশে খবর দেবেন নাকি?
দু-হাতে দুজনের থুতনী ধরে বললে ইন্দ্রনাথ, নির্ভয়ে থেকো। আমি পুলিশের লোক নই। সবচেয়ে বড় কথা, তোমাদের ড্যাডি তো এখন বড় পুলিশের কাছে। এখানকার পুলিশ সব খবর নাই বা জানল?
বৃষ্টির আভাস দেখা দিয়েছিল চার টুকরো নীল আকাশে।
ইন্দ্রনাথ আর দাঁড়ায়নি।
* রোমাঞ্চ পত্রিকায় প্রকাশিত।