ভালবাসার সন্ধানে
আচ্ছা, মধুমিতা তোমার তো বয়েস একুশ-বাইশ মতান্তরে সাতাশ-আটাশ হল। তুমি বিয়ে করোনি কেন?
বর কোথায়?
কেন? মা-বাপ কখনও কোনও সম্বন্ধ করেননি?
সম্বন্ধের বিয়ে আমার পছন্দ নয়। সেই সেজেগুজে যেতে হবে। আগুনের পরশমণি গাইতে হবে। মোচার ঘণ্টে আদা দিতে হয় কি না, আলাস্কার রাজধানী কোথায়—এইসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
খবরের কাগজে তো নানা রকম বিজ্ঞাপন বেরয়, তার থেকে নিজেই বাছতে পারো।
পাত্র-পাত্রীর কলমের সবই তো আসলে সেই শিবরাম চক্রবর্তীর বিজ্ঞাপন।
শিবরাম চক্রবর্তীর বিজ্ঞাপনটা আবার কী? তিনি তো ব্যাচেলর ছিলেন। তিনিও কি নিজের বিয়ের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন নাকি।
তা দেবেন কেন? বিয়ের জন্যে বিজ্ঞাপন দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান ছিলেন তিনি।
তা হলে বিজ্ঞাপনটা কীসের?
সপ্তাহে সপ্তাহে খবরের কাগজে মজার মজার কলাম লিখতেন শিবরাম। তা সেই কলামে শিবরাম একবার একটা বিয়ের বিজ্ঞাপনের খসড়া দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল, ‘পাত্রীর নিজস্ব বাড়ি থাকা প্রয়োজন। বাড়ির ফটোসহ আবেদন করুন।’
বুঝতে পেরেছি, তুমি কী বলতে চাও। তা হলে বিয়ে করতে গেলে তোমাকে প্রেমের পথে যেতে হবে।
সে তো চেষ্টা করে যাচ্ছি, কোনও সুবিধে হচ্ছে না।
হেঁজি-পেঁজি, রানী-বানী, সবিতা-কবিতা সকলের হিল্লে হয়ে যাচ্ছে। আর তোমার সুবিধে হচ্ছে না।
চেষ্টায় তো ত্রুটি করছি না।
তা কী রকম চেষ্টা করছ, শুনি।
শেষেরটাই বলছি।
বলো। মন দিয়ে শুনছি।
আমাদের পাড়ার মোড়ে একটা নতুন বইয়ের দোকান হয়েছে না। সেই দোকানের মালিকের ছেলে দোকানে বসে। দেখতে চমৎকার, স্মার্ট, লেখাপড়া করা ছেলে।
তুমি তাকে গিয়ে সরাসরি প্রেম নিবেদন করলে?
আমি কি বোকা নাকি? আমি করলাম কি ওর ওখান থেকে ‘সচিত্র প্রেমপত্র’ কিনলাম। ছেলেটি কিন্তু নির্বিকার। একবারও আমার দিকে তাকাল না। নিঃশব্দে বইটা প্যাকেট করে দিল।
আশ্চর্য!
আশ্চর্য বলছেন। শুনুন না। দু’দিন পর ওই দোকান থেকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেছে কিনলাম ‘যৌবনের গোপন তথ্য’। ছেলেটির কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। দু’দিন গেল। তারপর কিনলাম ‘সুখী ও সার্থক বিবাহিত জীবন’। ছেলেটির দিকে কোনও পরিবর্তন দেখতে পেলাম না।
তারপর?
তারপর, আর কী? ওই দোকানে আর কখনও যাব না। ওই ছেলেটি আমাকে অপমান করেছে। কাল ওই দোকানে বই ঘাঁটছি এমন সময় ছেলেটি একটি বই এগিয়ে দিয়ে বলল, এবার আপনার বোধহয় এই বইটির প্রয়োজন পড়বে।
কী বইটি?
বইটির নাম হল, ‘সহজ শিশু পালন পদ্ধতি’।