ভারত মন্ত্রশক্তিতে শক্তিমান হল
ভারতে জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রপাঠ করে আগুন জ্বালাতে সক্ষম হয়েছেন, কোনও দাহ্য পদার্থের সাহায্য তিনি নেননি— সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান মারফৎ এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়বার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সর্বত্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সরকারী মহল থেকে এই সংবাদের সত্যতা স্বীকার অথবা অস্বীকার কিছুই করা হয়নি। তবে জ্বালানি কমিশনের জনৈক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী এক বেতার বিবৃতিতে জানান, ‘যাই ঘটুক না কেন, ভারত কখনও শান্তির পথ ত্যাগ করবে না। আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমনের জন্য প্রয়োজন হলে ভারত তার নবলব্ধ শক্তিকে প্রয়োগ করতে দ্বিধা করবে না।’
পাকিস্তানের বিশ্বস্তসূত্রের খবরে প্রকাশ, ভারত মন্ত্রশক্তিতে আগুন জ্বালাবার কায়দা বের করে ফেলেছে এই সংবাদ পাওয়া মাত্র প্রধানমন্ত্রী জনাব ভুট্টো বিশেষ বিচলিত হয়ে পড়েন এবং হট লাইনে তৎক্ষণাৎ পিকিং ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর তিনি ঘনিষ্ঠ মহলকে এই আশ্বাস দেন যে, পাকিস্তান মন্ত্রশক্তিতে আগুন জ্বালাতে না পারলেও তার আগুন জ্বালবার উপযুক্ত বস্তুর অভাব কোনদিনই হবে না। পাকিস্তানে দেশলাই শিল্প সম্প্রসারণের জন্য বন্ধু দেশগুলির কাছ থেকে প্রচুর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি তিনি পেয়েছেন। তবে জনাব ভুট্টো রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মন্ত্রশক্তিবলে আগুন জ্বালাবার ভারতের একচেটিয়া অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন।
জনাব ভুট্টো পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী উর্দু দৈনিক ‘পয়জারে পয়মাল’ এ এক বিশেষ বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত যদি বৈদিক মন্ত্রের প্রয়োগে আগুন জ্বেলে থাকে তবে তার কপিরাইট সে একা ভোগদখল করতে পারে না। পাকিস্তানকেও তার নো-হাউ-এর হিস্যা দিতে ভারত বাধ্য। কারণ বৈদিক আর্যরা বর্তমান পাকিস্তানেরও অধিবাসী ছিলেন। সিন্ধু নদী, হিন্দুকুশ পর্বত প্রভৃতি তার সাক্ষ্য বহন করছে। আগুন জ্বালবার বৈদিক মন্ত্র ভারতের হাতে সঁপে দিয়ে পাকিস্তান চুপ করে থাকতে পারে না।’
চীন ভারতের মন্ত্রশক্তিতে আগুন জ্বালবার খবর বিনা মন্তব্যে প্রকাশ করেছে। নিউ চায়না নিউজ এজেন্সি শুধু বলেছে, ‘পুণা, ১৯ মে— বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ‘নবার্ণব মন্ত্ৰ’ পাঠ করে কোলাবা জেলার সুধাগড়ের শ্রী কে ভি সিদোর শাস্ত্রী কাঠে আগুন সৃষ্টি করেন। তিনি তিনবার মন্ত্রপাঠ করেন এবং আগুন জ্বলে ওঠে।’
আমেরিকান সেনেটারপদপ্রার্থী মি : সিম্পল্টন বলেন, ‘ভারতের এই সাফল্য রাশিয়া থেকে কেরোসিন আমদানীর উপর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। কারণ ভারত এর পরে নিশ্চিতভাবেই কাঠের ভারত এর পরে নিশ্চিতভাবেই কাঠের মশাল জ্বালবার যুগকে এগিয়ে আনতে সমর্থ হবে। ভারতের দিকে আমাদের এখন সর্বদাই কৌতূহলী দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ আজ যে মন্ত্ৰ কাঠে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে, কাল যে সেই মন্ত্র মোটরগাড়ি বা এরোপ্লেনের ইঞ্জিন কি লোকোমোটিভকে চালিয়ে দেবে না, একথা নিশ্চয় করে বলা যায় না। এবং মন্ত্রচালিত ইঞ্জিনের রাণিং কস্ট্ যে প্রায় কিছুই পড়বে না, এটা নিশ্চিত ভাবেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।’
সোভিয়েতের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়, ‘ভারত মন্ত্রশক্তির উপর নির্ভর করলেও আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া; বন্ধুত্ব এবং প্রগতিশীল সহযোগিতা চুক্তির উপর তার প্রতিক্রিয়া অনুকূল হবে। এর ফলে ভারত-সোভিয়েত মৈত্রীর ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে। তবে আমাদের প্রগতিশীল বন্ধুরা কোনও হঠকারী বস্তুবাদ মন্ত্রশক্তিতে বিশ্বাসী ভারতীয় জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেবার অপচেষ্টা করে বিশ্বাসীদের বিরাগভাজন হবার মতো মূঢ়তা প্রকাশ করবেন না, এ আশা আমরা তাঁদের উপর রাখি। মহামতি লেনিন বলেছেন, জনগণের উপর আস্থা রাখো, তাঁদের সঙ্গে থাকো। এই মহাবাক্য পালনই শ্রেয় বলে আমরা বিবেচনা করি।’
কোলাবা জেলার সুধাগড়ের শ্রী শাস্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল, ‘নবার্ণব মন্ত্ৰ’ বৈদিক মন্ত্র কিনা তা সরাসরি বলতে অস্বীকার করেন। বলেন যে ওটা স্টেট সিকরেট। আমাদের নিরাপত্তার খাতিরে এই মন্ত্রগুপ্তি বিশেষ প্রয়োজন। শ্রী শাস্ত্রীর পিসতুতো ভাই-এর মামাশ্বশুর জানান, শ্রী শাস্ত্রীর এই গৌরবে একজন ভারতীয় ব্রাহ্মণ হিসাবে তিনি গর্বিত।
কেন তিনি গর্বিত সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রশক্তির রহস্যকে উদ্ঘাটন করে শাস্ত্রীজী প্রমাণ করে দিলেন যে, মন্ত্রের অলৌকিক শক্তি আজও জাগ্রত। ‘
পদার্থবিজ্ঞানী ড: জ্ঞানগর্ভ মহাজন বলেন, ‘দেখুন আগের দিন শুনলাম ভারত পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সত্যি বলতে কি কথাটা শুনে খটকা লেগেছিল। ভারত আবার পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটাবে, হ্যাঃ। আজ শুনছি ভারত মন্ত্রের শক্তিতে কাঠে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, এটা বরং বিশ্বাস করা যায়। যার যা কাজ মশাই।’
প্রশ্ন : একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসাবে আপনি মনে করেন, মন্ত্রের শক্তিতে কাঠে আগুন ধরানো সম্ভব?
ড: মহাজন : সম্ভব কি মশাই, আগুন তো জ্বালিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন : এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী ড: মহাজন?
ড: মহাজন : কথাটা হচ্ছে মন্ত্রশক্তি। হোয়াট ইজ শক্তি? না এনারজি। অ্যান্ড হোয়াট ইজ মন্ত্র? না ভাইব্রেশন সৃষ্টি করার ওর্যাল ডিভাইস্। মন্ত্রের ভাইব্রেশনে শক্তি অর্থাৎ এনারজি ট্রানস্ফরমড হয়ে কাঠে ফ্রিকশন ঘটিয়েছে। এবং ফ্রিকশনে তাপ সৃষ্টি হয়েছে। আগুন জ্বলেছে। পারফেক্ট বিজ্ঞান। বিশ্বাস করতে বাধা কোথায়? অল আওয়ার ঋষিস্, বুঝলেন বাঘা বৈজ্ঞানিক ছিলেন।
প্রশ্ন : এখানে কাকে আপনি বৈজ্ঞানিক বলবেন? শাস্ত্রীজীকে না নবার্ণব মন্ত্রের স্রষ্টা ঋষিকে?
ড: মহাজন : অকোরস নবার্ণব মন্ত্রের স্রষ্টা সেই গ্রেট ঋষিকে। শাস্ত্রীজী তো মেয়ার এ টেকনোক্র্যাট।
রামধন মুদী, ভগলু গোয়ালা এবং পানি পাঁড়ে এই তিনজনই পৃথকভাবে গৃহীত সাক্ষাৎকারে জানান, এই খবরে তাঁরা আনন্দিত। শাস্ত্রী বাবা খুবই মহাত্মা লোগ আছে। ফুঁকসে আগ জ্বালাইছে। আব্ শালা চোট্টা গরমিন খুব টাইট খাবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ যখন অন্ধকারে এইভাবে ডুবে আছে তখন এই নবার্ণব মন্ত্রের এই সাফল্য আশার আলো জ্বেলে দিল। পশ্চিমবঙ্গে যাতে নবার্ণব মন্ত্রের প্রয়োগে ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী শীঘ্রই দিল্লি যাবেন। তবে তাঁর এই দিল্লি সফরের খবর খুবই গোপন রাখা হবে।
২২ মে ১৯৭৪