ভারত ও সংলগ্ন বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধকেন্দ্র ও মোগলমারির বৌদ্ধবিহার – ভাস্করব্রত পতি
আমাদের এই আলোচনার গতিমুখ হল মোগলমারির বৌদ্ধবিহারের সাথে ভারত এবং সংলগ্ন দেশগুলির বৌদ্ধবিহারের মধ্যেকার সাদৃশ্য এবং সম্পর্ক অনুধ্যান করা। এই বিষয়টি অতি বৃহৎ এবং গবেষণাধর্মী হওয়া উচিত। সেসাধ্য এবং সুযোগ আমাদের নেই। কেবলমাত্র মোগলমারি খননকার্যে যাওয়ার সুবাদে এবং মোগলমারির খননকার্যে উঠে আসা সামগ্রী দেখে খননে রত বিশিষ্ট পন্ডিতদের সাক্ষাৎকারে যে মতামত পেয়েছি তা সংক্ষেপে তুলে ধরলাম।
আলোচনা প্রসঙ্গেই এসেছে বিহারের নালন্দা মহাবিহারের কথা। বাংলাদেশের সোমপুরা মহাবিহার। মালদার জগজ্জীবনপুরের মহাবিহারের প্রসঙ্গ আনতে হয়েছে। কিন্তু পাঠকদের আরেকটু কৌতূহল নিবৃত্তির স্বার্থে অতি পরিচিত এই বৌদ্ধবিহারগুলির পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নানা বৌদ্ধবিহারের এবং বৌদ্ধমন্দিরের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। সেইসাথে ভারত-সংলগ্ন দেশগুলিতে বৌদ্ধচর্চার কেন্দ্রগুলির তালিকাও উল্লেখিত হয়েছে।
মোগলমারিতে চতুর্থ পর্যায়ের খননের পর ড. অশোক দত্ত মন্তব্য করেন, ‘গঠনশৈলী দেখে মনে হচ্ছে, এখানে অন্তত তিনবার বিভিন্ন পর্যায়ে বহু সময়ের ব্যবধানে বৌদ্ধবিহারটির নির্মাণ হয়েছিল।’ এই মোগলমারিতে মিলেছে অজস্র স্ট্যাকোর কাজ। এখানে প্রাপ্ত স্ট্যাকোর Lotas Petal Bricks-এর কাজগুলির সাথে বিহারের নালন্দা মহাবিহারের যথেষ্ট মিল রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোগলমারির শিল্পসুষমা অন্যদের চেয়েও ভালো। যাই হোক সেসব প্রসঙ্গে পরে আসছি।
বৌদ্ধধর্ম প্রথমে প্রাচীন মগধ (বর্তমান বিহার)-এ প্রসার লাভ করেছিল। কিন্তু মগধের বাইরে এর প্রসার ঘটেছিল মৌর্যসম্রাট অশোকের আমলে। তিনি তা নেপাল, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে প্রচার করেছিলেন। প্রথমে মগধের সম্রাট বিম্বিসার বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন নিজস্ব বিশ্বাসে। এরপর তিনি স্থাপন করেন বেশ কিছু বৌদ্ধবিহার।
সম্রাট অশোক (৩০৪-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মৌর্যসম্রাট হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন ২৭২-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি পরিবর্তিত হন চন্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক-এ। তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন তাঁর দুই ব্রাহ্মণ সহযোগীর সহায়তায়। তাঁরা হলেন Radhasvami Hhw Manjushri।
বিখ্যাত ব্যাকট্রিয়ান নৃপতি Menander ছিলেন বৌদ্ধ। তিনি প্রথমে তক্ষশীলা থেকে শাসন করতেন। পরে Sagala (বর্তমান শিয়ালকোট) থেকে রাজ্য পরিচালনা করতেন। বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং প্রচারের নানা তথ্য মেলে Milinda Panha বইতে।
প্রথমদিকে যাঁরা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতেন তাঁদের বলা হত—Jinaputto, Saugata, Sakyans, Sakyaputto, Ariyasavako, Sakyabhiksy। খ্রিস্টপূর্ব ৫০ অব্দ থেকে ৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গান্ধার শিল্পে ‘গ্রেকো বুদ্ধিস্ট আর্ট’-এর সংমিশ্রণ ঘটে। অনেক বৌদ্ধবিহারে তার ছাপ পাওয়া গেছে।
Lokaksema হলেন একজন প্রাচীন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী যিনি চীনা ভাষায় প্রথম মহাযান বৌদ্ধ সূত্রগুলিকে পরিবর্ধন করেছিলেন। গান্ধার যুগের সন্ন্যাসী Jnanagupta Hhw Prajna বৌদ্ধধর্মের সংস্কৃত সূত্র থেকে চীনা ভাষায় অনূদিত করেন। ৫৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু Vinitaruci প্রথম ভিয়েতনাম-এ যান বৌদ্ধধর্মের প্রচারে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় Vietnamese Zen বা Thien Buddhism। অষ্টম শতাব্দীতে পদ্মসম্ভব (Padmasambhab) প্রতিষ্ঠিত করেন Tantric Buddhism, ইন্দোনেশিয়াতে বুদ্ধধর্ম প্রচার করেন Vajrabodhi.
এরপর এই সময়কালেই বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠতে থাকে বৌদ্ধবিহারগুলি। বিভিন্ন নৃপতি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেন। বৌদ্ধধর্মের প্রসারে মনোনিবেশ করেন। সপ্তম শতকে ভারতে এসেছিলেন সুয়ান জাং। তিনি তাম্রলিপ্ত থেকে বামিয়াম পর্যন্ত গিয়েছিলেন। সেসময় অসংখ্য বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসী দেখেছিলেন, তা তিনি নিজের ভ্রমণ বৃত্তান্তে লিখেছেন।
মোগলমারি বিহারের সঙ্গে ভারত এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ সংস্কৃতির যে মিল বা সাদৃশ্য পাওয়া গেছে তা আলোচনার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক, এইসব এলাকায় কোথায় কোথায় এখনও বৌদ্ধ উপাসনাস্থল রয়েছে।
ভারত-সংলগ্ন বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বৌদ্ধবিহার, মঠ, মন্দির
শ্রীলঙ্কা (Srilanka)
কলম্বো (Colombo)—১. Buddhist Cultural Centre, Dehiwala.
বালাপিটিয়া (Balapitia)—১. Kothduwa Temple, Maduganga River
কেলানিয়া (Kelania)—১. Raja Maha Vihar
মাদম্পি (Madampe)—১. Senanayake Aramaya
কালসুতারা (Kalsutara)—১. Asokaramaya Buddhist Temple
ডাম্বুলা (Dambula)—১. Dambulla Cave Temple
অনুরাধাপুরা (Anuradhapura)—১. Atamasthana ২.Samadhi Statue ৩. Kuttam Pakuna ৪. Sri Maha Bodhiya ৫. Lovamahapaya৬. Isurumuniya ৭.Lankarama ৮. Abhayagiri Dagaba ৯. Thupara Maya ১০. Mirisaveti Stupa ১১. Ruwanwelisaya ১২.Jetavanarama
ক্যান্ডি (Candi)—১. Temple Of The Tooth
নেপাল (Nepal)
কাঠমান্ডু (Kathmandu)—১. Swayambhunath ২. Boudhanath
মুস্তাং (Mustang)—১. Muktinath
রূপান ডিহি (Rupandihi)—১. Lumbini—এটি গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। কপিলাবস্তু শহরের এখানেই সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল।
কপিলাবস্তু (Kapilabastu)—১. Talaurakot
ভূটান (Bhutan)
ভূমথাং (Bhumthang)—১. Kurjey Lhakhang—এটি ভূটানের সবচেয়ে পবিত্র বৌদ্ধ মন্দির। এখানে গুরু রিনোপচের ছবি রয়েছে।
পারা (Para)— Rinpung Dzong 2. Paro Taktsang (Tigers Nest) —এটি ভূটানের সবচেয়ে ভালো বৌদ্ধ মন্দির।
পুনাখা (Punakha)—১. Punakha Dzong—১৬৩৭ থেকে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই বৌদ্ধবিহারটি তৈরি করেছিলেন Zhabdrung Ngawang Namgyal. এটি এখন Southern Drukpa Kagyn School -এর প্রধান বৌদ্ধবিহার।
ফোবজিকা (Phobjika)—১. Gangreng Monastery
থিম্পু (Thimpu)—১. Chargi Monastery
চীন (China)
বেজিং (Bejing)—১. Big Bell Temple ২. Zhihua Temple ৩. Zhenjue৪. Yunju ৫. Fayuam ৬. Jietal ৭. Miaoying ৮. Tanzhe ৯. Tianning ১০. Wanshou ১১. Guangji ১২. Guanghua ১৩. Temple of Azure Clouds
হেনান (Henan)—১. Youguo Temple ২. Songyui Pagoda ৩. Iron Pagoda ৪. White Horse Temple ৫. Shaolin Monastery ৬. Daxiangguo Temple
ফুজিয়ান (Fujian)—১. Manicharan Temple ২. Guanghua Temple ৩. Kaiyuan Temple ৪. Wanfu Temple
জিয়াংসু (Jiangsu)—১. Tianning Temple—এটি বিশ্বের উচ্চতম প্যাগোডা। মাটি থেকে মোট ৫০৫ ফুট বা ১৫৩.৮মিটার উঁচু। ২. Hanshan Temple৩. Linggu Temple ৪. Huqiu Temple ৫. Qixia Temple ৬. Jiming Temple
সাংহাই (Shanghai)—১. Jingam Temple ২. Donglin Temple৩. Longhua Temple ৪. Jade Buddha Temple
সাংসি (Shanxi)—১. Pagoda of Fogong Temple ২. Nanchaw Temple ৩. Foguang Temple
হিবেই (Hebei)—১. Longxing Monastery ২. Putuo Zongcheng Temple ৩. Punning Temple ৪. Kaishan Temple
স্যাংসি (Shaanxi)—১. Xingjiao Temple ২. Famen Temple ৩. Giant Wild Goose Pagoda ৪. Small Wild Goose Pagoda
ইউনান (Yunan)—১. Three Pagodas ২. Yuantong Temple
ঝিজিয়াং (Jhejiang)—১. Puji Temple ২. Lingyin Temple ৩. Jingci Temple ৪. Baoguo Temple ৫. Guoqing Temple ৬. Liume Pagoda
সিচুয়ান (Sichuan)—১. Bao’ew Temple
সানডং (Shandong)—১. Four Gates Pagoda ২. Lingyan Temple ৩. Zhan Shaw Temple
কুয়ান ঝাও (Quanshou)—১. Kaiyuan Temple
জিয়াংসি (Jiangxi)—১. Donglin Temple
গুয়াংডং (Guangdong)—১. Temple of Six Banyan Trees ২. Nanhua Temple ৩. Temple of Bright Filial Piety
হোহট (Hohhot)—১. Five Pagoda Temple
আনহুই (Anhui)—১. Huacheng Temple
সিচুয়ান (Sichuan)—১. Baoen Temple
তিব্বত (Xizang)—১. Chokorgyel Monastery ২. Dorje Drak৩. Drepung Monastery ৪. Drongcren Monastery ৫. Drogchen Monastery ৬. Ganden Monastery ৭. Jokhang Monastery ৮. Menri Monastery ৯. Katok Monastery ১০. Khorzhak Monastery ১১. Yerpa Monastery ১২. Mindrolling Monastery ১৩. Palpung Monastery ১৪. Tsi Nesar Monastery ১৫. Surmang Monastery ১৬. Nechung Monastery ১৭. Palyul Monastery ১৮. Samding Monastery১৯. Tsurphu Monastery ২০. Sakya Monastery ২১. Sera Monastery ২২. Simbling Monastery ২৩. Shechen Monastery ২৪. Ralung Monastery ২৫. Tashil Hunpo Monastery ২৬. Samye Monastery
মায়ানমার (Mayanamar)
রেঙ্গুন রিজিয়ন (Yangon Region)—Yangon (Rangoon)—১. Kaba Aye Pagoda (একে বলা হয় World Peace Pagoda) ২. Shwedagongon Pagoda ৩. Sule Pagoda ৪. Botahtaung Pagoda
ম্যাণ্ডালে রিজিয়ন (Mandalay Region)—
Bagan (Pagan)—১. Bupaya Pagoda ২. Ananda Temple৩. Dhammayangyi Temple ৪. Dhammayazika Pagoda৫. Tharbyinnyu Temple ৬. Tharabha Gate ৭. Gawdawpalin Temple ৮. Payathonzu Temple ৯. Shwegugyi Temple১০. Manuha Temple ১১. Htilominlo Temple ১২. Mingalazedi Pagoda১৩. Shwezigon Temple ১৪. Sulamani Temple ১৫. Lawkananda Pagoda ১৬. Shwkananda Pagoda ১৭. Mahabodhi Temple
মান্দালা (Mandalay)
১. Shwenandaw Monastery ২. Atumashi Monastery ৩. Mahamuni Buddha ৪. Kuthadaw Pagoda
রাখাইন স্টেট (Rakhine State)—১. Le-Myet-Hna Temple ২. Shite-Thaung Temple ৩. Koe Trang-Temple ৪. Andraw Thein Ordination Hall ৫. Htukkanthein Temple
মন স্টেট (Mon State)—১. Kyaiktiyo Pagoda
শান স্টেট (Shan State)—১. Hpaung Daw U Pagoda ২. Pindaya Caves
বাগো রিজিয়ন (Bago Region)—
বাগো (Bago)
১. Shwethalyaung Buddha (Reciling Buddha) ২. Shwemawdaw Paya
প্যায় (Pyay)
১. Shwesandaw Pagoda
ইন্দোনেশিয়া (Indoneshia)
মধ্য জাভা (Central Java)—১. Candi Borobudup ২. Candi Plaosan ৩. Candi Sari ৪. Candi Mendut ৫. Candi Kalasan ৬. Candi Sewu ৭. Candi Banyunibo ৮. Candi Pawon
পূর্ব জাভা (East Java)—১. Candi Surawana ২. Candi Jabung
পশ্চিম জাভা (West Java)—১. Candi Batujaya
সুমাত্রা (Sumatra)—১. Candi Muaro Jambi ২. Candi Muara Takus
থাইল্যাণ্ড (Thiland)
ব্যাঙ্কক (Bangkok)—১. Wat Arun ২. Wat Pho ৩. Wat Nen Chamabophit (Marble Temple) ৪. Wat Suthat ৫. Wat Ratchanadda ৬. Wat Phra Kaew
চিয়াং রাই (Chiang Rai)—১. Wat Phra That Doi Chom Thong ২. Wat Phra Sing ৩. Wat Phra Kaew
সারাবুরি (Saraburi)—১. Wat Tham Krabok পাথুম থানি (Pathum Thani)—১. Wat Phra Dhammakaya
চিয়াং মাই (Chiang Mai)—১. Wat Aranyawiwake ২. Wat Chedi Liem ৩. Wat Chedi Luang ৪. Wat Umong ৫. Wat Phra Singh৬. Wat Doi Mae Pang ৭. Wat Chiang Maw
কাঞ্চনাবুরি (Kanchanaburi)—১. Tiger Temple
ফিট সানুলোক (Phit Sanulok)—১. Wat Nang Phaya ২. Wat Sam Ruen ৩. Wat Laemphrathat ৪. Wat Grong Greng Rin 5. Wat Phra Sri Rattana Mahatal Woramahawithan ৬. Wat Ratchaburana Pritsanulok.
কম্বোডিয়া (Combodia)
নমপেন (Phnom Penh)—১. Wat Botum ২. Wat Phnom ৩. Wat Qunalom ৪. Wat Preah Keo (Silver Pagoda)
আঙ্কোর (Ankor)—১. Ta Som ২. A Kor Wat ৩. Bayon ৪. Ta Prohm ৫. Preah Khan ৬. Krol Ko ৭. Preah Pallay ৮. Neak Pean
পুরসাট (Pursat)—১. Wat Bakan
কম্পোং থম (Kampong Thom)—১. Prasat Kuh Nokor
বাংলাদেশ (Bangladesh)
১. Jagaddala Mahavihar ২. Buddha Dhatu Jadi (Bandarban Golden Temple) ৩. Somapura Mahavihar ৪. Mahasthan Garh (Pundrabardhan Pura) ৫. Moynamati Mahavihar (Salban Vihara)
আফগানিস্তান (Afganistan)
এই দেশটির নাম উচ্চারিত হলেই মনে পড়বে বামিয়ান প্রদেশের বুদ্ধমূর্তিগুলির কথা। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে তালিবান নেতা মোল্লা মোহম্মদ ওমরের নির্দেশে তালিবান সৈন্যরা মূর্তিগুলি ভেঙে দেয়। ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর স্বীকৃতি পাওয়া বৌদ্ধ সংস্কৃতির এই নিদর্শনটি হারিয়ে যায়।
এখানে দু-টি দন্ডায়মান বুদ্ধমূর্তি ছিল হিন্দুকুশ পাহাড়ের গায়ে। এলাকাটি আফগানিস্তানের কাবুল থেকে ২৩০কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। বিখ্যাত সিল্ক রুটের মধ্যে পড়ে। প্রায় ২,৫০০মিটার উঁচু এলাকা। এই মূর্তির মধ্যে গান্ধার শিল্পের প্রভাব ছিল। বেলেপাথরের তৈরি মূর্তির ওপরে স্ট্যাকোর অলংকরণ দেখা গিয়েছে।
আফগানিস্তানে ২য় থেকে ৯ম শতাব্দীর মধ্যে গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধ সংস্কৃতি। বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির নির্মাণে সুবিখ্যাত গান্ধার শিল্প অনুসৃত হয়েছে। ছোটো বুদ্ধমূর্তিটির উচ্চতা ৩৭মিটার। এটি Sakyamuni বুদ্ধ। সম্ভবত ৫৪৪-৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে এটিকে তৈরি করা হয়। বামিয়ানের বৃহৎ বুদ্ধমূর্তিটির উচ্চতা ৫৫মিটার। একে বলা হয় Vairocana বুদ্ধ। আবার দীপঙ্কর বুদ্ধ-ও বলা হয়ে থাকে। সম্ভবত ৫৯১-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তা নির্মিত হয়েছিল।
৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল এখানে এসেছিলেন চীনা পরিব্রাজক সুয়ান জাং। তিনি সেসময় এখানে ১০টি বৌদ্ধবিহার এবং এক হাজার বৌদ্ধভিক্ষু দেখেছিলেন বলে লিখেছেন। সোনা এবং দামি রত্ন দিয়ে অলংকৃত ছিল বুদ্ধমূর্তি দু-টি।
ষষ্ঠ শতকে নির্মিত বামিয়ান বুদ্ধমূর্তি। তেমনি একই সময়েই নির্মিত মোগলমারি মহাবিহার। এই দুইয়ের মধ্যে অবশ্য দূরত্বগত এবং সংস্কৃতিগত বিস্তর ফারাক। কিন্তু বামিয়ানে দেখা গিয়েছে স্ট্যাকোর কাজ। মোগলমারিতেও স্ট্যাকোর কাজ মিলেছে। সেসময় স্ট্যাকো-র অলংকরণ একটা চলতি প্রথাই ছিল বলা যায়।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থিত বৌদ্ধবিহার মঠ
জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir)
Dzongkhul Monastery, এছাড়া লাদাখে রয়েছে প্রায় ৩২টি বৌদ্ধ কেন্দ্র। সেগুলি হল—১. Alchi Monastery ২. Bardan ৩. Basgo ৪. Zangla ৫. Takthok ৬. Phyang ৭. Thikse ৮. Sani ৯. Sankar ১০. Diskit ১১. Hindur ১২. Chemry ১৩. Hemis ১৪. Korzok ১৫. Rizong১৬. Phyang ১৭. Rangdum ১৮. Starna ১৯. Sumda Chun ২০. Kursha ২১. Lamayuru ২২. Likir ২৩. Lingshed ২৪. Stongdey ২৫. Spituk ২৬. Mashro ২৭. Matho ২৮. Namgyal Tsemo Monastery ২৯.Phugtal ৩০. Shey ৩১. Mulbekh ৩২. Hunle
সিকিম (Sikim)
১. Rumtek Monastery ২. Dubdi Monastery ৩. Pemayangtse Monastery ৪. Phodang Monastery ৫. T. Suklakhang Monastery৬. Ralang Monastery ৭. Enchey Monastery ৮. Phensang Monastery ৯. Tashiding Monastery
অন্ধ্রপ্রদেশ (Andhra Pradesh)
১. Nagarjuna Konda ২. Thotla Konda ৩. Amaravati
উড়িষ্যা (Odisha)
১. Dhouli ২. Lalitgiri ৩. Udaygiri And Khandagiri Caves৪. Ratnagioro ৫. Udaygiri ৬. Puspagiri Mahavihar ৭. Brahmani Temple ৮. Marichi Temple ৯. Jaipur (খুব সাম্প্রতিককালে এখানে কেশরাইপুর হাতিখোলা গ্রামে একটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান মিলেছে )
মহারাষ্ট্র (Maharashtra)
১. Elora Caves ২. Ajanta Caves ৩. Bhaja Caves ৪. Ghorawadi Caves ৫. Pandavleni Caves ৬. Mahakali Caves ৭. Kanheri Caves ৮. Aurangabad Caves ৯. Karla Caves ১০. Deekhabhoomi Caves ১১. Bedes Caves ১২. Jogeshwari Caves
হিমাচলপ্রদেশ (Himachal Pradesh)
১. Key Monastery ২. Kebber Monastery ৩. Dhankar Gumpha৪. Gandhnola Monastery ৫. Kardang Monastery ৬. Tayul Monastery ৭. Tangyud Monastery ৮. Kungri Monastery ৯. Rewalsar Monastery ১০. Gozzangwa Monastery ১১. Shashur Monastery ১২.Gemur Monastery ১৩. Lhalung Monastery ১৪. Tabo Monastery ১৫. Namgyal Monastery
উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh)
১. Varanasi ২. Saranath ৩. Kushinagar ৪. Chankhandi Stupa৫. Jetavana Sravasti ৬. Dhamek Stupa
মধ্যপ্রদেশ (Madhya Pradesh)
১. Sanchi ২. Deur Kothar ৩. Dharmrajeshwar
কর্ণাটক (Karnataka)
১. Namdroling Monastery
তামিলনাড়ু (Tamilnadu)
১. Chudamani Vihara
গোয়া (Goa)
১. Bandora (Bandivataka) ২. Rivoria (Rishivana) ৩. Kundne (Kundivataka) ৪. Margao (Mathagrama) ৫. Arambol (Harahara)
বিহার (Bihar)
১. Nalanda ২. Rajgir ৩. Mahabodhi Mahavihar ৪. Odantapura ৫. Vikramshila Mahavihar
পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)
১. Raktamrittika Mahabihar ২. Jagajjibanpur Mahabihar ৩. T. Apan Choling Monastery ৪. Zang Dhok Palri Phodang ৫. Ggum Monastery ৬. Mag-Dhog Yolmowa Monastery ৭. Bhutia Busty Monastery ৮. moghalmari Mahabihar.
অরুণাচল প্রদেশ (Arunachal Pradesh)
১. Tawang Monastery (এটি ভারতের বৃহত্তম এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিহার) ২. Buddhist Pilgrimage Centre ৩. Brama-Dung Chung Ani Gompa ৪. Singsur Ani Compa ৫. Bomdila Monastery ৬. Urgelling Monastery
পশ্চিমবঙ্গে যেসব বৌদ্ধবিহার-এর সন্ধান মিলেছে সেদিকে তাকানো যেতে পারে। মালদহ জেলার হবিবপুর থানার জগজ্জীবনপুর মৌজা (জে এল নং-৭৩)-তে তুলাভিটা গ্রামে মিলেছিল রাজা মহেন্দ্রপাল দেবের তাম্রশাসন এবং একটি বৌদ্ধবিহার। পাল রাজবংশে এই রাজার নাম এর আগে শোনা যায়নি। তুলাভিটাতে রাজা মহেন্দ্রপালের দেওয়া জমিতেই গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধবিহার। যা পরবর্তীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই মহেন্দ্রপাল ছিলেন ধর্মপালের পুত্র দেবপালের পুত্র। মহাসেনাপতি বজ্রদেবের অনুরোধে এই জায়গাটি দান করেছিলেন। সেটি ছিল ‘নন্দদীর্ঘিকা-উদ্রঙ্গ বিহার’-এর সংলগ্ন জমি ১৯৮৭-এর ১৩ মার্চ তুলাভিটায় মহেন্দ্রপালের তাম্রশাসন পাওয়ার পর ১৯৯০-তে একে ‘রাজ্য সংরক্ষিত স্মারক’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯২-১৯৯৪-তে এখানে খননের দায়িত্বে ছিলেন রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সুধীন দে। তবে সর্বোৎকৃষ্ট খনন শুরু হয় ১৯৯৬ থেকে।
এই জগজ্জীবনপুর বৌদ্ধবিহারের নামকরণে এসেছে জলাশয় ‘নন্দদীর্ঘিকা’-র নাম। বহু প্রাচীন এই নন্দদীর্ঘিকা বা নন্দদীঘি আজও রয়েছে তুলাভিটার কাছেপিঠে। কোনো বৌদ্ধবিহারের নামের আগে কখনো জলাশয়ের নাম যুক্ত হয়নি। এখানে মিলেছে প্রচুর টেরাকোটার ফলক বা Terracotta Plaque.
অবলোকিতেশ্বর, মঞ্জুশ্রী, বোধিসত্ত্ব, বিদ্যাধর, ভারবাহক, যোদ্ধা, উপাসক, কিন্নর-কিন্নরী, শিব, সূর্য, গন্ধর্ব, বরুণ ইত্যাদি সহ সিংহ, বরাহ, বঁাদর, হাঁস, মুরগি, হরিণ, মাছ ইত্যাদির ফলক রয়েছে দেওয়ালে। পাওয়া গেছে রাহু ও কর্কটের মূর্তি, ভেড়ার মিথুন মূর্তিও।
পালযুগে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও সেসময় ধর্মের গোঁড়ামি ছিল না। তাই অবলোকিতেশ্বর, গন্ধর্ব, মঞ্জুশ্রীর মতো বৌদ্ধ দেব-দেবীর পাশাপাশি শিব ও সূর্য, বরুণদেবের মূর্তিও ছিল। পোড়ামাটি ও উপরত্নের বিভিন্ন আকারের অসংখ্য পুঁতি বা Beads মিলেছে।
মোগলমারিতেও একই চিত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে এখানে ৪৫ ধরনের চিহ্নিত ইট ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমে লাল রং করা হয়েছিল। পরে সেই ইটের উপরে স্ট্যাকোর ব্যবহার করা হয়। এখানকার বৈশিষ্ট্যতে অভিনবত্ব লক্ষ্য করা গিয়েছে। আয়তনের দিক থেকে মোগলমারি অবশ্য মুরশিদাবাদের রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারে এবং মালদহের জগজ্জীবনপুর মহাবিহারের চেয়েও বড়ো, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বৃহত্তম। ড. অশোক দত্তের মতে মোগলমারি বৌদ্ধবিহারটি গুপ্তোত্তর যুগের সময়কালে নির্মিত। তবে গুপ্তযুগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। জগজ্জীবনপুর বৌদ্ধবিহারের নির্মাণ কিন্তু পরে—পালযুগে। মহেন্দ্রপালের আমলে।
মুর্শিদাবাদের রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হয়। এটির খননকার্য করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস আর দাস। কর্ণসুবর্ণ নগরীর উপকন্ঠে এই রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের (Lo-To-MOWEICHI) অবস্থান। এটির নির্মাণকাল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে। সুয়ান জাং সপ্তম শতাব্দীতে এখানে ১০টি সংঘারাম ও দু-হাজার শ্রমণ দেখেছিলেন। রাজবাড়িডাঙা খননকার্যের ফলে জানা যায়, পাল আমল অর্থাৎ দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত কর্ণসুবর্ণে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল। ১৯২৮-২৯-এ যে খননকার্য হয়েছিল তাতে ষষ্ঠ-সপ্তম শতাব্দীর বৌদ্ধমন্দির ও বিহারের সন্ধান মিলেছিল।
উল্লেখযোগ্য বিষয় জগজ্জীবনপুরে কোনো স্ট্যাকোর কাজ মেলেনি বলে জানিয়েছেন ড. অশোক দত্ত। মোগলমারির উত্তরপ্রান্তে নর্দমায় ইট বঁাচাতে স্ট্যাকোর ব্যবহার করা হয়েছে। শামুক, ঝিনুক থেকে চুন তৈরি হয়েছিল এখানে। তার প্রমাণ মিলেছে খননের ফলে। কর্ণসুবর্ণে স্ট্যাকোর কাজ পাওয়া গেছে। মোগলমারির বিহারের গাত্রে স্ট্যাকোর আকৃতির ধরন গুপ্তযুগের। মোগলমারিতে প্রাপ্ত ভোটিভ ট্যাবলেটের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গিয়েছে। এখানকার Style বেশকিছু ক্ষেত্রে Regional Culture-কে অনুসরণ করেছে। স্বকীয়তা দেখিয়েছে মোগলমারি। ভোটিভ ট্যাবলেটে সাধারণত বুদ্ধগয়ার স্টাইল অনুসৃত হয়। কিন্তু মোগলমারিতে নতুন সংস্কৃতি অনুসৃত হয়েছে। এখানে ভোটিভ ট্যাবলেটে উড়িষ্যার মন্দিরের স্টাইল লক্ষ করা গিয়েছে বহুলাংশে।
অতি সম্প্রতি উড়িষ্যার ঐতিহাসিক জেলা জাজপুরে খননের ফলে গুপ্ত শাসনকালের পরবর্তী সময়কালের একটি বুদ্ধমূর্তি এবং বৌদ্ধবিহারের সন্ধান (২০১২- এর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে) মিলেছে। কেশরাইপুর হাতিখোলা গ্রামে কয়েকজন মিস্ত্রী নর্দমা তৈরির সময় মাটি কাটতে গিয়ে কিছু পুরোনো জিনিস পান। এরপরই এখানে অনুসন্ধানের কাজ চালানো হয়।
এখানেই আবিষ্কৃত হল ৩০মি লম্বা এবং ৩০মি চওড়া একটি বৌদ্ধবিহার। ১০ ফুট × ৯ ফুট মাপের ৪টি ঘর আবিষ্কৃত হয়েছে। গবেষকদের মতে এই বৌদ্ধবিহারটি ভৌমকর রাজাদের অনুগ্রহে অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। সোভাংশী এবং ভৌমকারা রাজবংশের রাজধানীতে হিন্দু স্থাপত্যের সাথে সদ্য আবিষ্কৃত বৌদ্ধ সংস্কৃতি নি:সন্দেহে অন্যদিক সূচিত করবে।
এবার আলোচনা করা দরকার নালন্দা মহাবিহার সম্পর্কে। পঞ্চম-ষষ্ঠ শতক থেকে ১১৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই নালন্দাতে যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল সেখানে ছিল শিক্ষার পরিবেশ। ইখতিয়ারউদ্দিন-মোহম্মদ-বিন-বখতিয়ার-খলজির আক্রমণে তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই নালন্দার শিক্ষাদান শুরু হয় Sakraditya-এর আমলে। একে অনেকেই বলেন Kumara Gupta বা Kumara Gupta-2। এখান থেকে হিন্দু গুপ্তরাজা, হর্ষবর্ধন এবং পালরাজাদের সময়কাল পর্যন্ত নালন্দার প্রসার ছিল। ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সুলতান খলজি এটি ধ্বংস করেন।
মোগলমারি মহাবিহার খননের সময় স্তূপ মিলেছে ৪২০সেমি গভীরে। সেখানে রয়েছে প্রদক্ষিণ পথ। অনুমান করা হয় এটির নির্মাণ ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীতে। নালন্দা মহাবিহারে এরকম অসংখ্য স্তূপের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেসব রাজা, শ্রেষ্ঠী, বণিককুল বৌদ্ধবিহারগুলিতে অর্থ সাহায্য করতেন এই স্তূপগুলি তাঁদেরই পরিচয়বাহী। ভোটিভ স্তূপের কাছে অন্তত ২৫টি টেরাকোটার প্রদীপ পাওয়া গেছে খননের সময়।
পঞ্চমবারের খননের সময় মিলেছে একটি ধূসর রঙের হাঁড়ি। তার মধ্যে ছিল ২০০টির বেশি প্রাচীন কড়ি। এটি একটি কক্ষের মধ্যে পোঁতা ছিল। ড. অশোক দত্তের মতে, মালদ্বীপ থেকে আমদানি করা হত এইসব কড়ি। তখন যে বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম ছিল কড়ি—তা নিশ্চিত। এর অর্থমূল্য ছিল। তাই সযত্নে সুরক্ষিতভাবে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল এভাবে। বণিক, রাজা, শ্রেষ্ঠীদের সাথে সুবর্ণরেখা নদী, তাম্রলিপ্ত এবং বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে সুদূর মালদ্বীপের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। মোগলমারির সঙ্গে যে অন্য এলাকার গভীর সম্পর্ক ছিল তা নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে। কুইক লাইমের (চুন) সাথে জিপসাম বা বালি মিশিয়ে তৈরি হয় স্ট্যাকোর কাজ। স্ট্যাকোর ইতিহাস অবশ্য অনেক প্রাচীন। খ্রিস্টীয় প্রথম শতক থেকে এর যাত্রা শুরু। প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া শহরে এই স্ট্যাকোর প্রচলন হয়েছিল। যদিও অনেকের মতে প্রাচীন ইরান শহরে এর চল হয়েছে। আফগানিস্তানে জিপসামের ব্যবহার লক্ষ করা গিয়েছে। ‘সুধা’-র Material-টির ওপর নির্ভর করেছে বৌদ্ধরা। এই ‘সুধা’ থেকেই ‘সৌধ’ কথার উৎপত্তি। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকে পূর্ব ভারতে স্ট্যাকোর যে গঠনগত বৈচিত্র্য লক্ষ করা গিয়েছে তা পূর্ব ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো নিদর্শন। এখানকার বুদ্ধমূর্তির মুখের সাথে মিল রয়েছে মুর্শিদাবাদের রাজবাড়িডাঙার (রক্তমৃত্তিকা মহাবিহার)। দু-টি ক্ষেত্রেই বুদ্ধের চোখ টানা টানা। এখানে বুদ্ধের কান লম্বা। কপালে চোখ থাকছে। এটি মহাপুরুষদের লক্ষণ।
দেওয়ালচিত্রের বিবরণ অন্যান্য বৌদ্ধবিহারেও পাওয়া গেছে। মোগলমারির সাথে সাদৃশ্য পাওয়া গেছে যথেষ্ট। ষষ্ঠ বার খননের ফলে মোগলমারিতে দেওয়ালের গায়ে পাওয়া গেছে ১৪টি নানা ধরনের মূর্তির উপস্থিতি। বিশিষ্ট মূর্তিবিশারদ অনসূয়া দাস জানান—এগুলির নির্মাণকার্য পঞ্চম থেকে সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত, যা নালন্দার সমকালীন। যে যে মুদ্রার মূর্তি মিলেছে দেওয়ালের গায়ে তা বেশ অভিনব। বোধিসত্ত্ব বা অবলোকিতেশ্বর মূর্তি আছে। আছে জাংগুলি মূর্তি। কুবের রয়েছে। মিথুন ফিগারের মূর্তি মিলেছে। যার সাথে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় থেকে প্রাপ্ত মূর্তির মিল আছে। পাহাড়পুর, ময়নামতী, কুমারা-তে প্রাপ্ত মুদ্রা-মূর্তির সাথে মিল অনেকাংশে। ড. অশোক দত্তের মতে, সম্ভবত বৌদ্ধ জাতকের কাহিনি অবলম্বনে দেওয়ালের গায়ে এই অলংকরণগুলি করা হয়েছে। অনসূয়া দাস জানান, মানুষের জীবনের নানা চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছে এই মূর্তির নির্মাণকারীরা। তাই একই সঙ্গে নারী ও পুরুষের মিথুনমূর্তিও ছিল। এ আসলে নাগরিক মনেরই পরিচয়।
মোট ৪৫ ধরনের ইটের ব্যবহারের খোঁজ মিলেছে, যা অভিনব। তিনি জানান, এগুলি ‘ডেকোরেটিভ ব্রিকস’। প্রথমে ইটগুলিতে লাল রং করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই ইটের ওপর স্ট্যাকোর ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো-না-কোনো সময়ে কোনো-না-কোনো রাজার সহায়তা মিলেছিল এই স্ট্যাকোর কাজের জন্য। তিনি জানান, প্রাচীরের বাইরের দেওয়ালের অলংকরণ অনেক বেশি পরিমাণে দেখা গিয়েছে, যা বেশ অভিনব এবং চিত্তাকর্ষক।
প্লাস্টারের নানারকম কারুকার্য এবং উন্নতমানের প্রয়োগবিদ্যা দেখে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছিল যে, সেসময় স্থাপত্যবিদ্যা চর্চা ছিল বেশ উন্নত।
পাহাড়পুর মহাবিহার (বাংলাদেশ)-এর কথা আগেই উল্লেখিত হয়েছে। মহাস্থানগড়ের সাথেও মিল রয়েছে বলা হয়েছে। বগুড়া জেলার (বাংলাদেশ) শিবগঞ্জে রাজা পুণ্ড্রবর্ধনের আমলের রাজধানী গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে। একে বলা হত পুণ্ড্রনগর (Pundranagara) বা পুণ্ড্রবর্ধনপুরা (Pundrabardhanpura)। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে এফ বুচানন হ্যামিলটন প্রথম এখানে এসেছিলেন। তবে আলেকজাণ্ডার কানিংহ্যাম একে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে। এখানে অবলোকিতেশ্বরের মূর্তির সন্ধান মিলেছে, যা পাওয়া গেছে মোগলমারিতেও।
তেমনি বাংলাদেশের কুমিল্লাতে রয়েছে Salban Vihara বা ময়নামতী মহাবিহার। এটি সোমপুরা বিহারের চেয়েও ছোটো। কিন্তু দেওয়ালে অসংখ্য টেরাকোটার চিত্র রয়েছে। সমুদ্রের সাথে একই সমতলে এর অবস্থান। তাই এর নাম হয়ে ওঠে ‘Samatata’। অনেকে বলেন—Kutila Vihar, Charratra Mura, Mainamati Ranir Vihar, Ananda Rajar Bari ইত্যাদি নামেও। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে এখানে বৌদ্ধসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। দেওয়াল অলংকরণের যে স্টাইল অনুসৃত হয়েছে এখানে তার সাথে মোগলমারির মিল রয়েছে বহুলাংশে।
Somapura Mahabihar এই সুপ্রাচীন বৌদ্ধবিহারটি বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার বাদলগাছি উপজেলাতে পাহাড়পুর-এ অবস্থিত। মোগলমারি মহাবিহারের গঠনশৈলীর সাথে এই সোমপুরা মহাবিহার বা পাহাড়পুর মহাবিহারের প্রচুর মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে UNESCO এটিকে World Heritage হিসেবে ঘোষণা করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত বৌদ্ধবিহার এটি।
শেষের কথা—ষষ্ঠ থেকে একাদশ শতাব্দীতে গৌড় রাঢ় এবং পার্শ্ববর্তী উৎকল সীমান্তে সমৃদ্ধ ছিল দন্ডভুক্তি রাজ্য। কনৌজ থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত বিস্তৃত একটি পথ সমুদ্র-উপকূল ধরে রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রসারিত হয়েছে। বণিকের দল এই পথ দিয়ে যাতায়াত করত। তমলুক থেকে (তাম্রলিপ্ত বন্দর) একটি শাখাপথ দন্ডভুক্তিতে এসে মিলিত হয়েছে। মোগলমারি এলাকার প্রখ্যাত গবেষক ড. বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি জানান, সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী, ভূস্বামী ও বণিককুলের দাক্ষিণ্যে, চিত্তসম্পদদানে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতকে মোগলমারি এলাকায় গড়ে ওঠে সুরম্য বৌদ্ধবিহার। নবম ও দশম শতাব্দীতে পাল শাসনের সময় ধর্ম ও জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেও এর প্রসিদ্ধি ছিল অক্ষুণ্ণ।
খননে মিলেছে, বৌদ্ধভিক্ষুদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত মৃৎপাত্র, কড়ি, প্রদীপসহ নানা সামগ্রী। টেরাকোটার প্রদীপ হল যেকোনো বৌদ্ধবিহারের মূলপরিচায়ক। এছাড়া ‘কড়ি’-ও অন্যতম উপাদান। এ দু-টিই বহুল পরিমাণে পাওয়া গিয়েছে। উপরের ছাদে Wooden Structure-এ লোহার বিম ব্যবহৃত হত। সুরকি দিয়ে করা বৌদ্ধবিহারকে ঘিরে যে RAMP-এর সন্ধান মিলেছে একে বলা হয় ‘প্রদক্ষিণা পথ’। এই পথে ঘুরত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। মনাস্ট্রির মধ্যেই ছিল মন্দির। মূলত Triratha Structure পরিলক্ষিত হয় বিহারটিতে। পুরো ঢিবিটি পার্শ্ববর্তী কৃষিজমি থেকে অন্তত ২০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
পরিব্রাজক সুয়ান জাং, ফাসিয়ান বা ইৎ-সিং-দের বিবরণে এতদঞ্চলে বেশ কিছু বৌদ্ধবিহার ও শ্রমণের কথা পাওয়া যায়। এখানকার বৌদ্ধসংস্কৃতি বিরাজ করেছিল ১২০০-১৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সুয়ান জাং এতদঞ্চলে ১০টি বৌদ্ধবিহারে ১০০০ জন বৌদ্ধ শ্রমণ ও ভিক্ষুর অবস্থানের কথা লিখেছিলেন। যদিও মোগলমারি বৌদ্ধবিহারে থাকত ১০০ জন ভিক্ষু। তাদের জন্য তৈরি হয়েছিল ছোটো ছোটো কুঠুরি।
কিন্তু মোগলমারি বৌদ্ধবিহার কি সেরকমই কোনো এক বৌদ্ধবিহার—যা দেখেছিলেন তাঁরা? এটি যে একটি বৌদ্ধবিহার সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কত প্রাচীন, কে বানিয়েছিলেন, কতজন থাকত, কীভাবে ধ্বংস হল—সেইতিহাস এখনও মাটির তলায়। ভবিষ্যতে হয়তো সেই ইতিহাস উন্মোচিত হবে—সেই আশায় আমরা থাকছি।
তথ্যসূত্র :
• সাক্ষাৎকার—ড. অশোক দত্ত, ড. দুর্গা বসু
• শারদীয়া গণশক্তি, ১৪১২ (ইতিহাসের বৌদ্ধবিহারে—সাগর চট্টোপাধ্যায়)
• কালান্তর, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২
• অন্যস্রোত, ২য় বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, আগষ্ট-২০১১
• টেরাকোটা, তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ-১৪১৯ (মোগলমারির খননকার্য-ভাস্করব্রত পতি)
• Excavation At Moghalmari—Dr. Ashoke Dutta
• ঝড় সাহিত্য পত্র, ফেব্রুয়ারি – ২০১০, বিষয় – মুর্শিদাবাদ
• বর্ধমান জেলায় বৌদ্ধ ঐতিহ্যের সন্ধানে – ড. সর্বজিৎ দাস
• আনন্দবাজার পত্রিকা, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, গণশক্তি, মৈত্রী, আপনজন, জন্মভূমি পুণ্যিপুকুর, কবিতার কাগজ, এবং সায়ক, সৃজন, উপত্যকা ইত্যাদি পত্রপত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা
• বিভিন্ন ওয়েবসাইট
উৎখননের পূর্বে সখিসোনার ঢিবি
উৎখননের একটি মুহূর্ত
বিহারের গর্ভগৃহের ত্রিরথ কাঠামো
দেয়ালে স্টাকো অলংকরণ
ভগ্নাংশ জোড়া দিয়ে পুনর্গঠিত বুদ্ধমূর্তি
ব্রোঞ্জের ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া মুকুট
ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি
মস্তকবিহীন বুদ্ধমূর্তি
প্রবেশদ্বারে নকশাযুক্ত ইটের ব্যবহার
গ্রামের ভেতরে স্তূপভিত্তি
প্রাচীরগাত্রে স্টাকোর মূর্তি
প্রাচীরগাত্রে স্টাকোর মূর্তি
প্রাচীরগাত্রে স্টাকোর মূর্তি
প্রাচীরগাত্রে স্টাকোর মূর্তি
মূর্তি উন্মোচনে ড. অশোক দত্ত
বৌদ্ধমহাবিহারের প্রবেশদ্বার
বুদ্ধের বাণী-সংবলিত উৎসর্গফলক এবং তার ছাঁচ
কারুকার্যমন্ডিত উৎসর্গফলক
রাজা সমাচারদেবের মুদ্রার উভয়পার্শ্ব
সোনার লকেট
স্টাকোর নির্মিত মস্তকের ভগ্নাংশ
নকশাযুক্ত ইট
মোঘলমারিতে প্রাপ্ত প্রত্নদ্রব্য শিল্পীদের অলংকরণে
গোপাল বসু
বরুণ সাহু
তপন রাণা
অর্ণব মুখোপাধ্যায়
মিলন বারিক
মিলন পাল
.
লেখক-পরিচিতি
ড. অশোক দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভূতপূর্ব অধ্যাপক। মোগলমারি প্রত্নক্ষেত্রের খনন-অধিকর্তা (২০০৪-২০১২)। বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ, গবেষক ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা। মোগলমারি বিষয়ক গ্রন্থ Excavations at Moghalmari.
ড. রজত সান্যাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। মোগলমারির খননকার্যে ড. অশোক দত্তের সহকারী। অনুধ্যানী গবেষক ও বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক।
ড. বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি সাহিত্যের ভূতপূর্ব অধ্যাপক। লোকসংস্কৃতি ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে অনুধ্যানী গবেষক ও প্রাবন্ধিক। উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্রন্থ দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি।
প্রকাশচন্দ্র মাইতি রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহশালা অধিকার-এর পক্ষ থেকে নিযুক্ত মোগলমারি প্রত্নক্ষেত্রের খননকার্যের বর্তমান নির্দেশক। বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
জ্ঞানবজ্র রেপা (রামকৃষ্ণ দাস) বৌদ্ধভিক্ষু। বিশিষ্ট বৌদ্ধ বিশেষজ্ঞ। অধিকাংশ সময় সাধনায় মগ্ন থাকেন। গবেষক ও প্রাবন্ধিক। বহু গ্রন্থের প্রণেতা। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ধম্মপদ, বৌদ্ধধর্ম পরিচয়, কর্মপদ প্রভৃতি।
সূর্য নন্দী অবসরপ্রাপ্ত সাহিত্যের শিক্ষক। এবং সায়ক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। অনুধ্যানী প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
ফিরোজ খান সরকারের সমাজকল্যাণ দপ্তরের কর্মী। অন্যস্রোত সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। লোকসংস্কৃতি বিষয়ে উৎসাহী গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
শুভেন্দু মুখার্জী বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক ও প্রাবন্ধিক। মোগলমারি প্রত্নখননে ড. অশোক দত্তের সদাসঙ্গী, সহকারী।
অতনু প্রধান মোগলমারি গ্রামের ভূমিপুত্র। মোগলমারি তরুণ সেবা সংঘ ও পাঠাগারের সহ-সম্পাদক। প্রত্নবিষয়ে অনুসন্ধানী, প্রাবন্ধিক।
সন্তু জানা সাহিত্যের শিক্ষক। পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ে অনুধ্যানী গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
ড. বিমলকুমার সীট ইতিহাসের শিক্ষক। ইতিহাসবিদ। বহু গ্রন্থের প্রণেতা। ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে বিশিষ্ট গবেষক।
শ্যামলী মিশ্র সাহিত্যের শিক্ষিকা। লোকসংস্কৃতি ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রাবন্ধিক।
তরুণ সিংহ মহাপাত্র সাহিত্যের শিক্ষক। লোকসংস্কৃতি বিষয়ক লোকভাষ পত্রিকার সম্পাদক। লোকসংস্কৃতি ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে অনুধ্যানী প্রাবন্ধিক গবেষক।
বিশ্বজিৎ ঘোষ পর্যটন বিষয়ে স্নাতকোত্তর। ‘দন্ডভুক্তি পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র’-এর সম্পাদক। পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ে অনুধ্যানী গবেষক। বহু প্রবন্ধের রচয়িতা।
ড. প্রদ্যোৎকুমার মাইতি ইতিহাস বিষয়ের ভূতপূর্ব অধ্যাপক। লণ্ডন ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ের বিশিষ্ট লেখক। আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ক বহু গ্রন্থের প্রণেতা ও লোকচর্চার অন্যতম দিশারি।
চিন্ময় দাশ বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। ভূমিংস্কার দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার অনুধ্যানী সমীক্ষক। গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
আশিস বড়ুয়া অত্তদীপ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। গড়িয়া বৌদ্ধ সংস্কৃতি সংসদের সম্পাদক। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও গবেষক। চলো যাই ভ্রমণ পত্রিকার সম্পাদক।
ভাস্করব্রত পতি শিক্ষক ও সাংবাদিক। পুণ্যিপুকুর সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক। লোকসংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ে গবেষণাধর্মী অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন। কয়েকটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।