ভারত ও জার্মানী

ভারত ও জার্মানী

Kurhaus Hochland

Badgastein

(Austria)

১১/৩/৩৬

প্রিয়বরেষু,

আপনার সুদীর্ঘ পত্র প্যারিসে যথাসময়ে পাইয়াছিলাম। আপনার সহিত দেখা হইল না—এই দুঃখ। আপনি যে দুইজন ভদ্রলোকের নাম ঠিকানা দিয়াছিলেন তাঁদের সহিত আলাপ করিয়াছিলাম। তাঁরা চমৎকার লোক।

অনেক কথা বলিবার আছে। আজ মাত্র ২/১টি বিষয়ের উল্লেখ করিব। হিটলারের বক্তৃতা সম্পর্কে ভারতবর্ষে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হইয়াছে তাহা আপনি খবরকাগজে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করিয়াছেন। আমার মনে হয় যে “ফেডারেশনে”র পক্ষ হইতে একটা তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আমি বিশেষ চিন্তা করিয়াই বলিতেছি। এরূপ প্রতিবাদের ফল ভাল ছাড়া মন্দ হইবে না। জার্মানীতে যে ভারতবাসীরা আছেন তাঁরা কি করিবেন জানি না—তাঁদের পক্ষে কিছু করা হয়তো একটু মুস্কিল, কিন্তু আমরা যারা বাহিরে আছি—আমাদের কর্তব্য সুস্পষ্ট। এ বিষয়ে আপনি দ্বিধা করিবেন না। যদি কমিটির মত লইয়া তার পর প্রতিবাদ করা সময়সাপেক্ষ অথবা অসুবিধাজনক হয়, তাহা হইলে আপনি সভাপতি হিসাবে ফেডারেশনের নামে প্রতিবাদ করিতে পারেন। যদি এ বিষয়ে কোনও ভীরু ব্যক্তি ভবিষ্যতে কোনও প্রশ্ন করেন, তাহা হইলে আপনি বলিতে পারেন যে দেশে জনমতের নির্দেশ অনুসারে আপনি কার্য করিয়াছেন। দেশবাসী যখন দেশে প্রতিবাদ করিতেছেন তখন ইয়ুরোপবাসী ভারতীয়দের এ বিষয়ে প্রতিবাদ অবশ্য অবশ্য করা উচিত। আমি অনেক চিন্তার পর দেশের কাগজের জন্য একটা প্রতিবাদ পাঠাইয়াছি এবং জার্মান পণ্য বর্জনের প্রস্তাব সমর্থন করিয়াছি। শীঘ্রই আমি জার্মান কর্তৃপক্ষদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে একটা প্রতিবাদ পাঠাইব। তবে আমার পশ্চাতে কোনও প্রতিষ্ঠান নাই বলিয়া হয়তো সেরূপ প্রভাব হইবে না। ২ বৎসর পূর্বে ফেডারেশন যে প্রতিবাদ জানাইয়াছিল তাহাতে কিছু কাজ হইয়াছিল, কারণ খুব নরম জবাব “ফরেন আফিস” থেকে আসিয়াছিল। আপনার প্রতিবাদে আপনি উল্লেখ করিতে পারেন যে ঐ পত্রের মর্ম অনুসারে এ পর্যন্ত কাজ হয় নাই। বরং এখন নূতন করিয়া ভারতবাসীদের অপমান করা হইয়াছে। আপনি বোধ হয় লক্ষ্য করিয়াছেন যে জাপানে এ বিষয়ে “সরকারী” প্রতিবাদ হইয়াছে।

লক্ষ্ণৌ কংগ্রেস ৮ই এপ্রিল আরম্ভ হইবে—তার পূর্বেই আমাকে পৌঁছিতে হইবে। সুতরাং আমার ইয়ুরোপ-প্রবাস শেষ হইয়া আসিতেছে। আমাকে যাইতেই হইবে। আপনি যাহা বলিয়াছেন এবং অন্যান্য অনেক বন্ধু একই ভাবে যাহা বলিয়াছেন তাহা বিবেচনা করার পর এ কথা বলিতেছি। পত্রে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা সম্ভব নয়। বলা বাহুল্য যে ফেরা মাত্র আমাকে বন্দী করার সম্ভাবনা রহিয়াছে। যদি বন্দী না করে তাহা হইলে কিভাবে কাজ করা উচিত সে বিষয়ে আপনি যাহা বলিয়াছেন আমি তাহা অনুমোদন করি। তাড়াতাড়ি দেশে ফিরিতে হইতেছে বলিয়া অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। দেশভ্রমণের প্রবল অতৃপ্ত বাসনা রহিয়াছে কিন্তু নানা কারণে তাহা চরিতার্থ করিতে পারিতেছি না।

Women’s International League-এর পত্রিকায় আপনার প্রবন্ধ দেখিয়া বিশেষ সুখী হইলাম। আপনি আমাকে লিখিতে বলিয়াছিলেন—এখন দেখিতেছি যে না লিখিয়াই ভাল করিয়াছি, কারণ তার ফলে আপনার এরূপ সুন্দর প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। প্রকৃতপক্ষে “ডাব্‌লিন” ‘প্যারিস্” এবং তার পর Lausanne-এ এতটা ব্যস্ত ছিলাম যে কোনও প্রবন্ধ লিখিয়া উঠিতে পারি নাই; এমন কি, চিঠিপত্রের সময়মত উত্তর দিতে পারি নাই।

আর একটা কথা হিটলারের সম্পর্কে বলা উচিত ছিল। প্রতিবাদ করিলেই যে “ফেডারেশনের” সঙ্গে একেবারে বিচ্ছেদে হইয়া যাইবে, একথা সত্য নয়। কারণ দুই বৎসর পূর্বে একটা তীব্র প্রতিবাদ হইয়াছিল এবং তার ফল মন্দ হয় নাই। জার্মানীর বিরুদ্ধে আমাদের (ভারতীয়দের) বহু অভিযোগ আছে। সেদিনও (জানুয়ারী মাসে) যখন বার্লিনে গিয়াছিলাম তখন আবার প্রতিবাদ জানাইয়া আসিয়াছি। ওরা শক্তের ভক্ত—নরমের যম। সুতরাং প্রতিবাদ ছাড়া আমাদের উপায় নাই। যদি ফেডারেশনের সহিত বিচ্ছেদ ঘটে তার জন্যও প্রস্তুত হইয়া আমি একথা বলিতেছি। ইটালীর বিরুদ্ধে মানবতার দিক থেকে আমাদের অভিযোগ আছে—ভারতের স্বার্থ বা আত্মসম্মানের দিক দিয়া কোনও অভিযোগ নাই। কিন্তু জার্মানীর বিরুদ্ধে ভারতের দিক থেকে আমাদের বহু অভিযোগ আছে।

হিটলারের গভর্মেন্টের পতনের আশু সম্ভাবনা মোটেই নাই। যুদ্ধ যদি কোনও দিন বাধে এবং যুদ্ধে যদি জার্মানীর অবস্থা কাহিল হয় তাহা হইলে হয়তো পতন হইতে পারে—নতুবা নয়। তবে যদি আমাদের “বয়কটের” ফলে জার্মানীর ব্যবসায়ের উপর হাত পড়ে, তাহা হইলে জার্মান ব্যবসাদারেরা হিটলারের উপর চাপ দিবে। এখন জার্মানীতে দুই দলের খুব প্রতিপত্তি—সেনাবিভাগ এবং ব্যবসাদারদের দল।

আজ এই পর্যন্ত। আশা করি আপনার শরীর এখন সুস্থ হইয়াছে। ভ্রমণ এবং নানা ঘাটে জল খাওয়া—এর ফলে আবার শ্রান্ত বোধ করিতেছি। “ডাব্‌লিন” থাকিতে আবার পেটের ভিতরে বেদনা দেখা দেয়। এখন এখানে আসিয়াছি—বিশ্রামের জন্য এবং সঙ্গে সঙ্গে bath treatment-এর জন্য। গত বৎসর এখানে উপকার পাইয়াছিলাম। আশা করি এবারও উপকার পাইব এবং কতকটা চাঙ্গা হইয়া দেশের দিকে রওনা হইতে পারিব। আমার আন্তরিক প্রীতি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করিবেন। ইতি

ভবদীয়

শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু

Kurhaus Hochland

বাদগাসস্টাইন

২৫ মার্চ ১৯৩৬

ড. থিয়েরফেলডার

সমীপেষু,

প্রিয় ড. থিয়েরফেলডার,

আমার ভারতে ফিরে যাবার সময় হয়েছে। কিন্তু আমার যাওয়ার আগে স্পষ্ট অথচ বন্ধুভাবে কয়েকটি কথা আপনাকে অবশ্যই বলা প্রয়োজন মনে করি।

১৯৩৩ সালে যখন আমি প্রথম জার্মানী পরিদর্শন করি তখন আশা ছিল যে জার্মান জাতি, যারা নিজেদের শক্তি এবং আত্মমর্যাদার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে তারা অন্য যেসব জাতি ঐ একই উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করছে তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল হবে। আজ দুঃখের সঙ্গে বলছি আমি ভারতে ফিরে যাচ্ছি এই ধারণা নিয়ে যে জার্মানীর নতুন জাতীয়তাবাদ কেবল সঙ্কীর্ণ এবং স্বার্থপর নয় তা উদ্ধতও বটে। মিউনিখে হের হিটলারের সাম্প্রতিক বক্তৃতায় নাৎসী মতবাদের মূল কথাটি ব্যক্ত হয়েছে। জানি, Deutsche Nachrichtenburo এই বক্তৃতার একটি প্রতিবাদ ভারত ও জাপানে পাঠিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবাদ আমরা মেনে নিতে পারি না কারণ ব্রিটিশ বা জার্মান সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হয়নি। এই নতুন জাতিগত দর্শন এক দুর্বল বৈজ্ঞানিক যুক্তির ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তার উদ্দেশ্য হল সাধারণভাবে শ্বেতকায় জাতি, বিশেষ করে জার্মান জাতির গৌরব প্রচার করা। হের হিটলার সারা পৃথিবীতে শ্বেতকায় জাতির প্রভুত্ব করার অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায় এখনও পর্যন্ত এশিয়ায় ইউরোপীয়রা যত না প্রভুত্ব করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে এশিয়ার লোকে ইউরোপে প্রভূত্ব করেছে। আমার এই যুক্তির সারবত্তা বুঝতে হলে মঙ্গোল, তুর্কী, আরব দেশের লোক (মুর), হুন এবং অন্যান্য এশীয় জাতিদের দ্বারা বারবার ইউরোপ আক্রমণের কথা অন্যকে বিচার করে দেখতে হবে। একটি জাতির ওপর অন্য একটি জাতির প্রভুত্ব করা আমি সমর্থন করি, এজন্যে একথা আমি বলছি না। বলছি শুধু এটাই দেখানোর জন্যে যে, ইউরোপ ও এশিয়া যে পরস্পর কখনও শান্তিতে বসবাস করতে পারে না এমন কথা বলা ইতিহাসের সাক্ষ্যে মিথ্যা। সেজন্যে স্বার্থ ও জাতিগত উদ্ধত মনোভাবের দ্বারা জার্মানীর নব জাতীয়তাবোধকে উদ্বুদ্ধ হতে দেখে আমরা বেদনা বোধ করি। হের হিটলার তাঁর Mein Kamph-এ জার্মানীর পুরনো ঔপনিবেশিক নীতির নিন্দা করেছেন। কিন্তু নতুন জার্মানী তার পুরনো উপনিবেশগুলি সম্বন্ধে আবার কথা বলতে শুরু করেছে।

নতুন জাতিগত-দর্শন এবং স্বার্থসর্বস্ব জাতীয়তাবাদ ছাড়াও আর একটি বিষয় আমাদের আরও বেশি বিচলিত করে। তোষামোদের দ্বারা ব্রিটেনের আনুকূল্য লাভের আশায় ভারত এবং ভারতবাসীকে আক্রমণ করা জার্মানী সুবিধাজনক বলে মনে করে। ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট পার্টির ইতিহাসে বারবার এরকম অনেক ঘটনার উদাহরণ আমরা জানি। প্রায় দশ বছর আগে ইংল্যান্ডে প্রচারের জন্যে হের হিটলার ও ড. রোজেনবার্গের বই থেকে ভারত-বিরোধী অংশগুলি নিয়ে ইংরেজি ভাষায় একটি পুস্তিকা যখন প্রকাশ করা হয় তখন থেকে এরকম চেষ্টা শুরু হয়েছে।

আপনি এবং Deutsche Akademie আমাদের দু’ দেশের মধ্যে একটা বোঝাপড়ার জন্যে যে কাজ করেছেন তার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু আমার দুঃখ হচ্ছে, যে কারণগুলি উপরে বলেছি তার জন্যে আপনাদের সমস্ত প্রচেষ্টা পণ্ড হচ্ছে। অবশ্য আশা করি শেষপর্যন্ত আপনাদের চেষ্টা সফল হবে। কিন্তু জার্মানীর বর্তমান অবস্থা আমাদের পক্ষে যেন হতাশাজনক। একটি নতুন জাতিগত এবং রাজনৈতিক মতবাদে দীক্ষিত প্রজন্মের চেয়ে পুরনো প্রজন্মের মানুষ, যারা এক ভিন্ন ধরনের জাতিগত ও রাজনৈতিক মতবাদের আবহাওয়ায় বড় হয়ে উঠেছেন তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। জানি আমাদের পুরনো বন্ধুদের আমরা হারাবো না। কিন্তু নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে যে নতুন বন্ধু পাব সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি জার্মানদের ব্যবহার খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। কিন্তু উঠতি প্রজন্মের ওপর যখন নতুন শিক্ষাপদ্ধতির পূর্ণ প্রভাব পড়বে তখন অবস্থা কীরকম দাঁড়াবে তা কি আমরা জানি?

গত জানুয়ারি মাসে আপনি যে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তার জন্যে আপনার কাছে আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। Ministerial Dieckhoff ও Gesandter Dr. Prufer-এর সঙ্গে আমার দু’বার দীর্ঘ আলোচনা হয়। পূর্বের মতোই তাঁরা দু’জন আমার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে খুব সহৃদয় ছিলেন কিন্তু কার্যত এই সাক্ষাৎকার নিষ্ফল হয়। বুঝতে পারলাম যে তাঁরা ভারতীয় প্রশ্নটিকে আদৌ কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমার আরও ধারণা হল যদি ভারতের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া করতে হয় তাহলে আর কোনও মন্ত্রী বা মন্ত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হবে।

হের হিটলারের বক্তৃতার পর আমি একটি তীব্র প্রতিবাদপত্র ভারতীয় সংবাদপত্রের নিকট পাঠিয়েছি। আশা করি যথাসময়ে সেটি প্রকাশিত হবে। ইউরোপ থেকে চলে যাওয়ার পূর্বে এই কথাটি বলতে চাই যে জার্মানী ও ভারতের মধ্যে একটা বোঝাপড়ার জন্যে কাজ করতে আমি এখনও প্রস্তুত আছি। এই বোঝাপড়া হবে অবশ্যই আমাদের জাতীয় আত্মমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। যখন আমরা আমাদের স্বাধীনতা এবং অধিকার লাভের জন্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করছি এবং যখন আমরা চূড়ান্ত জয়ের সম্পর্কে নিশ্চিত তখন অন্য কোনও জাতির কাছ থেকে কোনও অপমান বা আমাদের জাতি ও সংস্কৃতির ওপর কোনও আঘাত আমরা সহ্য করতে পারি না।

আমি আশাবাদী; এখনও আশা আছে যে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে এবং শেষপর্যন্ত আমরা একটি বোঝাপড়া করতে সক্ষম হব। Deutsche Akademie-র সহায়তার জন্যে আমি আপনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কষ্ট করে এই চিঠির আর উত্তর দেবার দরকার নেই কারণ ক’দিনের মধ্যেই আমি ফেরার পথে যাত্রা করব এবং ভারতে পৌঁছনোমাত্র সম্ভবত আমাকে বন্দী করা হবে।

আন্তরিক শ্রদ্ধাসহ,

আপনার বিশ্বস্ত

সুভাষচন্দ্র বসু

পুনশ্চ: উপরের কথাগুলি কেবল আমার নিজের নয়, সাধারণভাবে জাতীয়তাবাদী ভারতীয়দের মনোভাব। জার্মানী সম্বন্ধে ভারতীয়দের ধারণা জানানোর উদ্দেশ্যে এই চিঠির প্রতিলিপি আপনার কোনও বন্ধু বা রাষ্ট্রের কোনও বিভাগের কাছে পাঠালে আমার কোনও আপত্তি নেই।

সু. চ. বসু

অস্ট্রিয়া থেকে অক্সফোর্ডে ডক্টর অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *