ভাঙনের মুখে বাংলাদেশ
নাজিমুদ্দিন মন্ত্রীসভা দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ক্রমান্বয়ে বাঙালির জীবনকে বিপর্যস্ত করে। বাঙালি মুসলমান এই সময়েই সম্পূর্ণভাবে বাঙালিত্ব ভুলে গিয়ে নিজেকে কেবলমাত্র মুসলমান বলেই পরিচয় দেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানেরা এক জাতি, অবাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের এই প্রচারে শিক্ষিত বাঙালিরা মেতে ওঠেন। এই সময়ে বাংলার মুসলিম লিগ সম্পূর্ণভাবে অবাঙালি মুসলমানদের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে। বাঙালির নিজস্বধারা থেকে বাঙালি মুসলমানেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা পাকিস্তানের দাবিতে সোচ্চার হন। মুসলিম লিগ ও ইংরেজ কর্মচারীদের শাসনে দেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়।১ এক কথায় বলা চলে, বাঙালির আত্মিক মৃত্যু ঘটে। এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবার আর কোনো পথই খোলা ছিল না। নিঃসঙ্গ ফজলুল হক ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েও বিধান সভাকক্ষে বাঙালির স্বার্থ বিনাশকারী মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে গর্জন করে ওঠেন।২ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ফজলুল হক বলেন, শাসনতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী বাংলাদেশে কোনো সরকার নেই বলা চলে। মন্ত্রীরা বিধানসভার নিকট দায়ী নন, তাঁরা মুসলিম লিগের প্রধান জিন্নার নিকট কেবলমাত্র দায়ী। যতক্ষণ পর্যন্ত জিন্না তাঁদের সমর্থন করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা অন্য কাউকে গ্রাহ্য না করেই চলতে পারেন। জিন্না ও মুসলিম লিগের শক্তিবৃদ্ধিতে কংগ্রেস পরিচালিত প্রদেশগুলির মন্ত্রীসভার দায়িত্বও কম নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এইসব প্রদেশের কংগ্রেস ভলান্টিয়ার ও অফিসারদের বাড়াবাড়ির ফলে মুসলমানেরা তাঁদের ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তার ফলে মুসলমানদের মধ্যে হিন্দু-বিরোধী মনোভাব ব্যক্ত হয়। মুসলিম লিগ দ্রুত এই সুযোগ গ্রহণ করে। মুসলিম লিগ নেতৃবৃন্দ অবিরাম তথ্য বিকৃত করে কংগ্রেস ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের উত্তেজিত করেন। স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানেরা লিগের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁরা অনুভব করেন, হিন্দুদের বিরোধিতার সামনে তাঁদের লিগের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতিও লিগের প্রভাব বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লিগকে হাতিয়াররূপে ব্যবহার করা হয়। এইভাবে মুসলিম স্বার্থের সত্যিকার প্রতিনিধিত্ব না করেও মুসলিম লিগ শক্তিশালী হয়ে ওঠে।৩
ফজলুল হক বলেন, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় বাংলাদেশ শুধু আর্থিক দিক থেকেই দরিদ্র নয়। জনসাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে পারে এমন নেতার অভাবও বাংলাদেশে ঘটেছে। একদিন শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্যলাভ করেছিল। তাঁর জন্য ফজলুল হক গর্ব অনুভব করেন। অন্য বিষয়ে আলোচনা না করে এই ভাষণে তিনি শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলার নিঃস্বতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশ উমেশচন্দ্র ব্যানার্জি, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, নরেন্দ্রনাথ সেন, মতিলাল ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ বসু, লালমোহন ঘোষ, শামসুল হুদা, আবদুল রসুল, অশ্বিনী দত্ত, অম্বিকা মজুমদার ও আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম দেয়, সে বাংলাদেশের কি নিঃস্ব অবস্থাই না আজ হয়েছে। আজ মিন্টো-মর্লে শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হবার পূর্বের দিনগুলির কথা মনে পড়ে, যখন দায়িত্বজ্ঞানহীন আমলাতন্ত্র দেশের শাসনতন্ত্র চালাত এবং যখন জনসাধারণ আজকের মতো রাজনৈতিক সুযোগসুবিধা ভোগ করতেন না। তবুও সেদিন যদি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা জনসাধারণের অধিকার বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ করত, তবে সভামঞ্চ ও প্রেস থেকে সরকারের আচরণ ও নীতির সমালোচনা করা হত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনমতের প্রভাব অনুভূত হত। কিন্তু আজকের কি অবস্থা? অপদার্থ মন্ত্রীরা মনুষ্য ইতিহাসের এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেন। যখন সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনার বোঝা ভরে উঠেছে, তখন এই দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলিকে অত্যাচার করে কলকাতা থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ধরনের ভয়াবহ অত্যাচার সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে তিরিশ বছর আগেও তা সম্ভব হত না। এখন সব কিছুই সম্ভব, কারণ প্রতিবাদ করার কেউ নেই। বর্তমান মন্ত্রীদের নীতি ও নির্যাতনের যন্ত্র গোটা বাংলাদেশকে ধবংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারেন এমন কেউ আর নেই।
ফজলুল হকের সেই বিখ্যাত ভাষণ থেকে কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হল:
I have always been proud of Bengal, proud of its achievements in the fields of Science, Literature and Art; of Law and Medicine; of Philosophy and Politics and also in all those elements of culture which are the pride and glory of every civilised nation. I will not talk of other matters but I will only refer briefly to the political bankruptcy into which Bengal has fallen. This pitiable and much despised Bengal of today is the Bengal which produced W. C. Banerjee, Surendra Nath Banerjee, Narendra Nath Sen, Motilal Ghosh, Bhupendra Nath Bose, Lalmohon Ghosh, Shamsul Huda, Abdul Rasul, Aswini Dutt, Ambica Majumdar and others too numerous to mention. I remember the days previous to the introduction of Minto-Morley Reforms when Bengal was supposed to be under the administration of irresponsible bureaucrats and when the political privileges now enjoyed by the people were utterly unknown. But in those days of autocracy if any thing were to happen which was likely to go against the interests of the people in a slightest degree, the public platform and the press would ring with denunciations of the Government conduct and Government policy, and in the vast majority of cases public protests used to prevail. But what is the case today? On their own showing and according to their own admission, the Ministers by their irresponsible policy and reckless extravagance have brought about one of the most devastative famines known to history. An when the cup of misery of the people was full horrible atrocities were perpetuated on the poor and the helpless destitutes of Calcutta on the plea of removing them to suitable habitations elsewhere. I have seen dire scenes of horror which it is impossible for me to describe but not even the hundredth part of these atrocities would have been possible even 30 years ago. Now eveyhing is possible because there is none to protest. Throughout Bengal there is none who seems prepared to raise his little finger to save his people from oppression or from the policy of the Ministers which may bring about ruin and devastation in the country.৪
কিন্তু সেদিন ফজলুল হকের এই সাবধান বাণী বাঙালির মনে কোনো রেখাপাত করেনি।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস থেকে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাস পর্যন্ত ফজলুল হক একটানা মুসলিম লিগের বিরোধিতা করেন। ইতিমধ্যে ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চের অনেক পরিবর্তন হয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে মুসলিম লিগ বাংলাদেশ, পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে একক বৃহৎ দলে পরিণত হয়। আর অন্যান্য প্রদেশেও লিগের ক্ষমতা প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রীয় আইনসভার নির্বাচনেও লিগ সাফল্য লাভ করে। জিন্না দম্ভ করে ঘোষণা করেন, এই নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করেছে যে মুসলিম ভারত পাকিস্তান দাবির স্বপক্ষে এবং লিগই মুসলমানদের একমাত্র সংগঠন। কংগ্রেস কেবলমাত্র বর্ণহিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও অসদুপায় অবসম্বনের জন্য লিগ এতটা সাফল্য লাভ করেছে। বাংলাদেশে নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।৫ ফজলুল হকও একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন:
While addressing the Muslim League legislators in Delhi, Mr. Jinnah is reported to have declared that in the battle of elections they have achieved a victory for which there is no parallel in this world. He should have added that the means by which this victory has been achieved have been unparalleled in the history of bribery, corruption, lawlessness and treachery of officials.
Mr. Jinnah is also reported to have said that the Muslim League have routed their opponents in evry battle field. Mr. Jinnah has forgotten that there are still many opponents who remain unbeaten.৬
এই নির্বাচনে ফজলুল হক মুসলিম লিগ প্রতিনিধিকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এখানে তিনি জিন্নাকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাঁর অনেক বিরোধিরাই এখনও অপরাজিত আছেন।
বাংলাদেশের আইন সভায় লিগের যে সদস্য সংখ্যা ছিল তাতে কোয়ালিশন করা ছাড়া লিগের পক্ষে মন্ত্রীসভা গঠন করা সম্ভব ছিল না। তাই লিগ নেতা সুরাবর্দি কংগ্রেস নেতা কিরণশঙ্কর রায়ের সঙ্গে কথাবার্তা চালান। মৌলানা আজাদের সঙ্গেও সুরাবর্দি আলোচনা করেন। এই কংগ্রেস-লিগ আলোচনায় ফজলুল হকের নামও উত্থাপিত হয়। আজাদ ফজলুল হককে স্পিকার করার প্রস্তাব দেন। সুরাবর্দি আপত্তি করেন। কারণ মুসলিম লিগের বাইরে অন্য কোনো মুসলমানকে সমর্থন করা লিগের পক্ষে সম্ভব নয়। মতানৈক্যের ফলে কংগ্রেস-লিগ আলোচনা ব্যর্থ হয়। রায়-সুরাবর্দি পত্রাবলী ২২ ও ২৩ এপ্রিল (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ) দ্য স্টেটসম্যান কাগজে প্রকাশিত হয়। এই পত্রাবলীতে নিজের নাম ব্যবহৃত হওয়ায় ফজলুল হক ক্ষুণ্ণ হন। তিনি বলেন : বাংলার আইনসভার স্পিকার তিনি কখনোই হতে চাননি। আর বর্তমান আইনসভার স্পিকারের পদ তিনি মর্যাদাসূচক মনে করেন না। সুরাবর্দির মনে রাখা উচিত, আমার সৌজন্যেই তাঁর এই প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে মুসলিম লিগের ভরাডুবির পর আমিই তাঁকে আমার মন্ত্রীসভার অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। আর কংগ্রেস ও বর্ণহিন্দুদের প্রতি তো সুরাবর্দি ঘৃণাই প্রদর্শন করেছেন। তাঁর জানা উচিত, বাংলার বর্ণহিন্দু যুবকদের আত্মত্যাগের ফলেই এই উচ্চপদে আসীন হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ফজলুল হকের বিবৃতি থেকে কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হল:
Mr. Suhrawardy has treated the caste Hindus of Bengal and the Indian National Congress with unfeigned contempt. He should have known that it is due to the sacrifices of the young men of the Bengali caste Hindu Community, whom he has forgotten, that he owes the exalted position which he occupies in the province today.৭
এপ্রিল মাসেই সুরাবর্দির নেতৃত্বে লিগ মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। ফজলুল হক বিরোধী পক্ষে থাকেন।
সিন্ধু প্রদেশেও লিগ মন্ত্রীসভা দায়িত্বভার গ্রহণ করে। পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম লিগ মন্ত্রীসভা গঠন করতে না পারলেও তথাকথিত আইন অমান্য আন্দোলনের মারফত এই দুইটি প্রদেশে গভীর রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে। ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট মুসলিম লিগ ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ঘোষণা করে। তার ফলে কলকাতাতে এক ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। ফজলুল হক তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে ও প্রতিবেশী হিন্দুদের মুসলমান গুণ্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের ও সরকারের নিকট হতে কোনই সাহায্য না পাওয়ায় তাঁর মন ভেঙে যায়। তবু তিনি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সরকারের ও পুলিশের সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি।৮ ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে কংগ্রেস ও লিগ নেতৃবৃন্দের আলোচনায় বোঝা যায় ভারত বিভাগ অনিবার্য। এই অবস্থায় জাতীয়তাবাদী ও মুসলিম লিগ বিরোধী মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সংগঠন এক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। মুসলিম লিগের প্রচণ্ড বিরোধিতার সামনে তাঁদের পক্ষে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ফজলুল হকও এই সময়ে লিগের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর তিনশত মুসলিম লিগ সদস্য কলকাতায় ফজলুল হকের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পুনরায় লিগের সদস্য হতে অনুরোধ করেন। ফজলুল হক তাঁদের বলেন, তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে তাঁর পক্ষে লিগে যোগদান করা সম্ভব নয়। তখন তাঁরা তাঁকে পরামর্শ দেন, তিনি যদি একটি ঘোষণাপত্রে লিখে জানান যে তিনি লিগের বিরোধী নন এবং তিনি আজীবন এই প্রতিষ্ঠানের সেবা করবেন, তাহলে তাঁরা সব ব্যবস্থা করবেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ফজলুল হক এই ধরনের একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। তারপর জিন্না ফজলুল হকের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। এই বিষয়ে ৮ সেপ্টেম্বর জিন্না কাগজে প্রকাশের জন্য একটি বিবৃতি দেন:
In view of the public declarations made by Mr. A. K. Fazlul Huq on Sept. 1 and 3, and having given his written statement pledging his whole-hearted loyalty, devotion and support to the League unconditionally, and as he has followed up these declarations by his letter dated Sept. 3 addressed to me requesting me to lift the ban which was imposed upon him nearly five years ago, and further in view of his assurance of an honest change-over and of joining the League, having already signed the membership form and pledge of the Muslim League which has been submitted by him through the Calcutta District League to the provincial organization for its acceptance of his membership and as the ban was imposed upon him by the virtue of my emergency powers, I hereby remove the same, hoping that Mr. Fazlul Huq will sincerely, earnestly and selflessly serve the Muslim League, the national, authoritative, representative organization of the Muslims of India and our cause, the achivement of Pakisthan.৯
এই বিবৃতি পাঠ করে ফজলুল হক মোটেই খুশি হননি। কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের জিন্নাপন্থীদের আচরণ দেখে তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁরা কিছুতেই তাঁকে লিগের নেতৃত্বপদে আসীন হতে দেবেন না। তবুও নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে না থেকে ফজলুল হক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিধবস্ত মুসলমানদের সাহায্যার্থে অগ্রসর হন। এই উপলক্ষ্যে তিনি বিহারেও যান। তাঁকে সভাপতি করে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান All Bengal Relief and Welfare Society গঠিত হয়।১০ এইভাবে ক্রমান্বয়ে তাঁর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তাঁকে বাংলাদেশের মুসলিম লিগের সভাপতি করবার জন্য তাঁর সমর্থকেরা উদ্যোগী হন। স্বভাবতই জিন্নাপন্থীরা উদ্বিগ্ন হন। মুখ্যমন্ত্রী সুরাবর্দি ও অন্যান্য জিন্নাপন্থী নেতৃবৃন্দ এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। তাই লিগে যোগদান করেও ফজলুল হককে জিন্নাপন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করতে হয়। তিনি প্রকাশ্যেই সুরাবর্দি মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু করেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই মন্ত্রীসভা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ায় দেশে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করায় গ্রামবাংলায় আবার দুর্ভিক্ষের পদধবনি শোনা যাচ্ছে। বরিশাল ও ময়মনসিং জেলা ঘুরে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তাঁর মতে, বহুসংখ্যক সরকারি অফিসারদের অযোগ্য ও কলঙ্কিত আচরণ এবং সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক আরোপিত বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় আইন ও বিধিনিষেধ এই অবস্থার জন্য দায়ী। এমনকি এই সরকার এতই অযোগ্য যে, দীর্ঘদিন ট্রাম ধর্মঘটের মীমাংসা পর্যন্ত করতে পারছে না।১১ তা ছাড়া মুসলমান সমাজের শিক্ষার অগ্রগতির জন্যও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা অবলম্বন করতে না পারায় ফজলুল হক মন্ত্রীসভার সমালোচনা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন, এই উদ্দেশ্যে অবিলম্বে একটি মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন করা উচিত। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী সুরাবর্দি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হলে ফজলুল হক ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’ করবার হুমকি দেন।১২
উপরিউক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও আর একটি সমস্যা নিয়েও তিনি মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে অভিমত ব্যক্ত করেন। ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় বিধবস্ত নোয়াখালি ও ত্রিপুরায় শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে মহাত্মা গান্ধী পদযাত্রা শুরু করেন। তখন তিনি বিভিন্ন প্রার্থনা সভায় সাম্প্রদায়িক মৈত্রীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে পয়গম্বর মহম্মদের বাণী উদ্ধৃত করেন। হিন্দু ও মুসলমানেরা গভীর আগ্রহ সহকারে মহাত্মা গান্ধীর ভাষণ শোনেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ওই অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা ফিরে আসে। ক্রমান্বয়ে অবস্থা অনেকটা স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর এই মহৎ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেবার জন্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তারা সক্রিয় হন। ইসলামের নামে একশ্রেণীর মুসলমান মহাত্মা গান্ধির সমালোচনায় মুখর হন। মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়, তিনি মুসলিম ধর্মের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছেন।১৩ তাই তাঁরা ওখান থেকে মহাত্মা গান্ধীর বিতাড়ন দাবি করেন। বোম্বে ও মাদ্রাজের জামিয়াত-উল-ইসলাম নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫ জানুয়ারি (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) দুটি টেলিগ্রাম মহাত্মা গান্ধীর নিকট পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, একজন অ-মুসলমান হিসাবে মহাত্মা গান্ধীর ঐশ্লামিক আইনে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই। অবশ্য মহাত্মা গান্ধী এই অভিযোগের উত্তরে বলেন : কোনো তথ্য না জেনেই এই টেলিগ্রাম পাঠানো হয়েছে। কারণ কোনো ধর্মের আচরণ বিধির ক্ষেত্রেই তিনি কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ করেননি। তিনি জানেন, তা করার তাঁর কোনো অধিকার নেই। তিনি যা করছেন তা হল পয়গম্বর মহম্মদের বাণী উল্লেখ করে সবাইকে প্রীতির মনোভাব নিয়ে বসবাস করতে উপদেশ দেওয়া।১৪
মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখবার প্রয়োজনে জিন্নাপন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন। অন্যদিকে ফজলুল হকও জিন্নাপন্থীদের প্রভাব হ্রাস করতে গিয়ে এবং মুসলমানদের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করবার উদ্দেশ্যে এমন সব মন্তব্য করেন যা তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। ওখানে দাঙ্গার অভিযোগে বহুসংখ্যক মুসলমানকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেককেই দীর্ঘদিন ধরে আদালতে বিচারের জন্য হাজির করা হয়নি। এই ধৃতব্যক্তিদের উপলক্ষ্য করে মুসলমানেরা ক্ষুব্ধ হন। ফজলুল হক ওই অঞ্চল ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং বন্দিদের জামিনের জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সফল হননি।
১২ ফেব্রুয়ারি (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) কুমিল্লাতে এক জনসভায় ফজলুল হক বলেন: নোয়াখালিতে মহাত্মা গান্ধীর অবস্থান ইসলামের প্রভূত ক্ষতি সাধন করেছে। একজন অ-মুসলমান হিসেবে তাঁর ইসলামের বাণী প্রচার করা উচিত নয়। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পরিবর্তে এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি করেছেন। তাই অবিলম্বে ওখান থেকে মহাত্মা গান্ধীর চলে যাওয়া উচিত। ফজলুল হক একথাও বলেন, ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসার পর তিনি মহাত্মা গান্ধীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলেন। মহাত্মা গান্ধী উত্তর দেন, প্রকৃত অর্থে তিনি একজন মুসলমান। ফজলুল হক তাঁকে একথাই প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে বলেন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী অসম্মত হন।
একই ভাষণে ফজলুল হক ওখানে নিরীহ মুসলমানদের উপর ‘পুলিশ জুলুম’ বন্ধ করতে না পারায় মন্ত্রীসভার সমালোচনা করেন। তিনি শ্রোতাদের স্মরণ করিয়ে দেন, আইনসভার অধিকাংশ মুসলিম সদস্য আত্মীয়স্বজনদের জন্য পারমিট ও চাকরি সংগ্রহ করতে পারলেই সন্তুষ্ট থাকেন। তাই তিনি দুর্নীতি ও স্বজনপোষণে নিমজ্জিত এই মন্ত্রীসভাকে পদচ্যুত করার জন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে বলেন।১৫
খবরের কাগজে প্রকাশিত ফজলুল হকের মন্তব্য পাঠ করে মহাত্মা গান্ধী খুবই বিচলিত হন। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেননি ফজলুল হকের মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তাঁর সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন। তাই তিনি আশা করেন, ফজলুল হক বিবৃতি মারফত কাগজে প্রকাশিত খবরের যথার্থতা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করবেন। প্রসঙ্গত মহাত্মা গান্ধী বলেন, তিনি নিজেকে একই সঙ্গে একজন খাঁটি হিন্দু ও খাঁটি মুসলমান মনে করেন। আর ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রার্থনা সভায় তিনি যা বলেছেন তাতো পয়গম্বর মহম্মদের বাণী। তা গ্রহণ বা বর্জন করার দায়িত্ব তো মুসলমান বন্ধুদের। মহাত্মা গান্ধী একথাও বলেন, তিনি নিজেকে বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না। পরিশেষে তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে আসার পর ফজলুল হকের সঙ্গে তাঁর কী কথাবার্তা হয়েছিল তা তাঁর স্মরণে নেই। এই বিষয়ে মহাত্মা গান্ধীর বিবৃতি সংবাদপত্রে এইভাবে প্রকাশিত হয়:
Mr. Gandhi said he had no recollection whatsover of the conversation. That, however, did not affect his fundamental position even if he had said what was attributed to him by Mr. Huq. Indeed, Mr. Gandhi whould put forth the claim that in South Africa he was a good Muslim simultaneously with being a good member of other religions of the world.১৬
এই বিবৃতি পাঠ করে ফজলুল হক মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভুল ধারণা দূর করতে তৎপর হন। ফজলুল হক একটি বিবৃতিতে বলেন:
I have made up my mind to interview Mr. Gandhi personally and have a heart to heart talk with him. I still maintain that his stay in Noakhali is wholly meaningless and that the proper place for him is in New Delhi where he can negotiate for the peace of all the communities in India. However, I do not wish to say anything further but I shall put myself in touch with Mr. Gandhi to seek an appointment with him when I can have an interview in order to clear up all matters.১৭
কলকাতা থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মহাত্মা গান্ধীর নিকট একটি টেলিগ্রাম প্রেরণ করে ফজলুল হক তাঁর সঙ্গে ‘হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা’ করার অনুমতি চান। এই টেলিগ্রামে ফজলুল হক উল্লেখ করেন, আমার ধর্মের নির্দেশ অনুযায়ী কাউকে অপমান করা বা অশ্রদ্ধা দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ করে এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে অপমানসূচক বা অশ্রদ্ধাসূচক শব্দ ব্যবহার করা কখনোই সম্ভব নয় যিনি সমগ্র সভ্যজগৎ কর্তৃক বন্দিত হন। কিন্তু চিন্তা ও কর্মে খোলা মনে চলা আমার জীবনের মূলনীতি। তাই কুমিল্লা ভাষণে নোয়াখালিতে আপনার অবস্থান সম্পর্কে যা ভেবেছিলাম তাই শ্রোতাদের কাছে বলেছি। আমি এখনও দৃঢ়ভাবে মনে করি, যখন বিহারে সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয় তখন আপনার পক্ষে নোয়াখালি যাওয়া মস্তবড়ো ত্রুটি হয়েছে। নোয়াখালির সংখ্যালঘুরা বিহারের সংখ্যালঘুদের মতো তত বিপন্ন নয়। সুতরাং মানবতাবোধ দাবি জানায়, সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য নোয়াখালিতে ছুটে যাবার পূর্বে আপনার বিহারের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা উচিত ছিল। তাই আমি মনে করি, আপনি অবিলম্বে নোয়াখালি পরিত্যাগ করে বিহারে যান এবং সেখানে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনুন এবং তারপর দ্রুত দিল্লিতে গিয়ে সমগ্র ভারতকে রক্ষা করুন। আপনার মনে রাখা উচিত, আপনি যখন নোয়াখালি নারকেল গাছের ছায়ায় সময় নষ্ট করছেন তখন ভারত ধবংসের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে।১৮
মহাত্মা গান্ধী ফজলুল হককে ধন্যবাদ জানিয়ে টেলিগ্রাম পাঠান:
Thanks for your wire. Do overtake me at any stage of the settled programme published and we shall renew our old acquaintance and if you convince me I shall do your bidding.১৯
ফজলুল হক এই টেলিগ্রাম পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কলকাতা থেকে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করবার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় হাইমচরে এই দুই নেতার সাক্ষাৎকার ঘটে। ফজলুল হকের গায়ে পাঞ্জাবি, পায়জামা, মাথায় ফেজ টুপি ও পায়ে পাম্পসু জুতা ছিল। তিনি মহাত্মা গান্ধীর আবাসস্থলে এসে পৌঁছোনর পরেই গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানো হয়। ফজলুল হক মহাত্মা গান্ধীর কুটিরে প্রবেশ করবার আগে পায়ের জুতা খুলে বাইরে রাখেন। তাঁরা ৬৮ মিনিট ধরে একটানা আলোচনা করেন। আরও চারজন মুসলমান সহযোগী ফজলুল হকের সঙ্গে এই আলোচনার সময় ছিলেন। ফজলুল হক যখন কুটির থেকে বেরিয়ে আসেন তখন তাঁকে খুবই শান্ত দেখাচ্ছিল এবং তিনি খুশি হয়েই ক্যামেরার সম্মুখীন হন। কিন্তু প্রেস রিপোর্টারদের নিকট কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তিনি সোজা অপেক্ষমান জিপে উঠে চলে যান।২০
ওইদিন চাঁদপুরে এক জনসভায় ফজলুল হক তীব্র ভাষায় সুরাবর্দি মন্ত্রীসভার সমালোচনা করে বলেন, এই মন্ত্রীসভার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বাংলার মুসলমানেরা কোনো সুবিচার আশা করতে পারেন না। তিনি ওখানকার মুসলমানদের কলকাতা গিয়ে তাঁদের আইনসভার সদস্যদের ফিরিয়ে নিয়ে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁদের মামলা পরিচালনার জন্য নিযুক্ত করতে নির্দেশ দেন। প্রসঙ্গত তিনি মুসলিম লিগের কেন্দ্রীয় অফিস ফাণ্ডে গচ্ছিত প্রভূত অর্থ থেকে নোয়াখালি-ত্রিপুরার মুসলমানদের বর্তমান দুরবস্থা লাঘবের সাহায্য দিতে বলেন।২১
মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলে ফজলুল হক ময়মনসিং যান। ৪ মার্চ (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) তিনি ময়মনসিং-এর আইনজীবীদের সভায় উচ্ছ্বসিত ভাষায় নোয়াখালি-ত্রিপুরায় মহাত্মা গান্ধীর কাজকর্মের প্রশংসা করেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি জীবনের বাকি দিনগুলি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার কাজে ব্যয় করবেন এবং এই পথে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। ফজলুল হকের এই মন্তব্য যেভাবে কাগজে প্রকাশিত হয়, তা এখানে উদ্ধৃত করা হল:
Mr. A. K. Fazlul Haq, ex-Premier of Bengal, who arrived here yesterday after meeting Mr. Gandhi at Haimchar, told the members of the local bar at an informal discussion that what Mr. Gandhi was doing in his present goodwill mission in the disturbed areas of East Bengal was really praiseworthy. In this connection Mr. Huq announced his intention to spend the rest of his life in preaching goodwill amongst the Hindus and Muslims. That, he added, would make Bengal really happy and prosperous.২২
এইভাবে ফজলুল হক নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং মহাত্মা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কিন্তু বাংলার জিন্নাপন্থীদের চিন্তাধারায় কোনোই পরিবর্তন হয়নি। তাই অশান্ত নোয়াখালি বারে বারে মহাত্মা গান্ধীকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
একটানা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেশ ভাগের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করে তুলছে, এই কথা উপলব্ধি করে ফজলুল হক এতটা বিচলিত হন যে, ঐক্যবদ্ধ ভারত বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তিনি আরও কিছুদিন ব্রিটিশ শাসন টিকিয়ে রাখার কথা বলেন। তিনি বিভক্ত ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধী ছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে তিনি এই মর্মে যে বিবৃতি প্রকাশ করেন তা সর্বভারতীয় লিগ নীতির বিরোধী ছিল। তবুও দেশ ভাগের সর্বনাশারূপের কথা ভেবে তিনি এই মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন:
Since those who have sown the wind are unable to control the whirlwind, there must be an agitation calling upon H M G to rescind their decision of February 20 and allow India to proceed peacefully on the road of progress.২৩
এই সময়ে বাংলার রাজনীতি এক জটিল আবর্তের মধ্যে পড়ে। ভারত বিভাগ অনিবার্য হওয়ায় কংগ্রেস ও হিন্দু-মহাসভার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিভক্ত করার দাবি করা হয়। মুসলিম লিগের দাবি ছিল গোটা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু সুরাবর্দি যখন বুঝতে পারেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও সমগ্র বাংলাদেশ তার অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভবনা নেই, তখন তিনি ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’ গঠন করার কথা বলেন। একই সময়ে শরৎচন্দ্র বসু ‘স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলা’ গঠন করার প্রস্তাব দেন। উদ্দেশ্য হল, বাঙালিকে এক মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা। মহাত্মা গান্ধির উপস্থিতিতে শরৎচন্দ্র বসু ও সুরাবর্দি বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু এই আলোচনা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি।২৪ কংগ্রেস ও হিন্দু-মহাসভা মনে করে, সুরাবর্দির প্রস্তাব গ্রহণ করলে বাংলাদেশে মুসলিম প্রাধান্য বজায় রেখে পাকিস্তান রাষ্ট্র স্থাপনের পথ প্রশস্ত করা হবে। অন্যদিকে শরৎচন্দ্র বসুর প্রস্তাবও এই উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হবে। তাই তাঁরা স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেন। তাছাড়া ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেও তাঁরা অসম্মত হন। কংগ্রেস ও হিন্দুমহাসভার পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ ভাগ করে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের সঙ্গে, আর পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সঙ্গে যুক্ত করা হোক। এইভাবেই হিন্দু-মুসলিম বিরোধের প্রকৃত মীমাংসা সম্ভব। বিভক্ত ভারতে বিভক্ত বাংলা স্বাভাবিক পরিণতি। অন্যদিকে মৌলানা আক্রাম খান ও নাজিমুদ্দিনের সমর্থকেরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বাইরে কোনো স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। তাঁরা পুরোনো দাবি আঁকড়ে থাকেন। অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অবশ্য জিন্না সুরাবর্দির প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় সুরাবর্দির পক্ষে আর এই প্রস্তাব নিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি।
এই সময়ে বাংলাদেশের মুসলিম লিগের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে। গত নির্বাচনের সময় থেকেই এই বিরোধ ছিল। সুরাবর্দির ষড়যন্ত্রের ফলেই নাজিমুদ্দিন পুনরায় নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেননি এবং তিনি সাময়িকভাবে বাংলার রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাই নির্বাচনের পর সহজেই সুরাবর্দি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। তাহলেও নাজিমুদ্দিনের সমর্থকেরা কখনোই তাঁকে শান্তিতে থাকতে দেননি। আইনসভার মুসলিম লিগ সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিলেন সুরাবর্দি বিরোধী। তবুও তাঁরা সুরাবর্দিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে রাখতে বাধ্য হন। কারণ তাঁদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারার মতো কোনো যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন না। অন্যদিকে এই দু-টি গ্রুপ ফজলুল হকের বিরোধী ছিল। ক্ষমতা-দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেও ফজলুল হকের বিরোধীরা সবাই ছিলেন জিন্নার অন্ধ সমর্থক। ফজলুল হক এই পরিবেশ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। মুসলিম লিগের অভ্যন্তরীণ কলহ নিয়ে হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড ‘The Old Quarrel’ নামক একটি সম্পাদকীয় প্রবন্ধে মন্তব্য করেন, ‘Neither group had any confidence in Mr. Fazlul Huq.’২৫ এই প্রবন্ধ পাঠ করে ফজলুল হক সম্পাদকের নিকট একটি চিঠি পাঠান। এই চিঠি ৯ মে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে প্রকাশিত হয়। তাতে ফজলুল হক লেখেন:
In course of your remarks on the Muslim League Parliamentary position in Bengal (under the caption ‘The Old Quarrel’ dated the 6th May), you have remarked that Suhrawardy is still in power because the Muslim Leaguers have not yet been able to find a more acceptable substitute.This is correct, but it is very unkind on your part to say that I could not be selected because I was not acceptable to the two contending groups. The truth is that I am not in the picture, not because I am unacceptable, but because I am convinced that the office of Chief Minister in Bengal cannot be acceptable to any honest man. I told all my firends that I have had enough of Bengal politics and I would like to keep aloof from rank communalism, dishonesty and corruption. I am sorry you were led to make that remark about my being unacceptable, because of your ignorance of my decision, regarding the Premiership of Bengal.২৬
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, ফজলুল হক লিগে যোগদান করার পরেও অনেকদিন পর্যন্ত জিন্নার বিরুদ্ধে যে মামলা তিনি কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করেছিলেন তা তুলে নেননি। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করেন যে, এই মামলা চালিয়ে যাওয়া নিরর্থক। তা ছাড়া জিন্নাও বিরোধ মেটাতে আগ্রহী হন। তাই কোর্টের বাইরে দুই পক্ষ মীমাংসা করে এবং জুলাই মাসে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) এই মামলা প্রত্যাহার করা হয়।২৭ অবশ্য হক-জিন্না বিরোধের মূল কারণগুলি তখনও বিদ্যমান ছিল। এই কারণে তাঁরা ভিন্ন পথ অনুসরণ করেন।
অবশেষে ভারত ও বাংলাদেশ বিভাগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যে পরিবেশে বাংলাদেশ বিভক্ত হয় তাতে ফজলুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গত দু-বছর ধরে ভারতের রাজনীতিতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তিনি তার নিন্দা করেন। ২৬ জুলাই (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) একটি বিবৃতিতে ফজলুল হক বলেন:
I am one of the very few Indians who condemn all that has happened in Indian polities during the last two years and I say publicly that I condemn the circumstances which have led to the unfortunate division of the province.২৮
এই সময়ে দলে দলে হিন্দুরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পূর্ববঙ্গ পরিত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গ অভিমুখে যাত্রা করেন। তাই ফজলুল হক তাঁর নিজের জেলা বরিশালে ছুটে যান এবং ১ আগস্ট (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) বরিশাল শহরের অশ্বিনী কুমার হলে এক জনসভার আয়োজন করে হিন্দুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। দেশভাগের প্রাক্কালে এই ধরনের একটি বৃহৎ হিন্দু-মুসলমানের মিলিত জনসভা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। এই সভার প্রধান বক্তা ছিলেন ফজলুল হক। আতঙ্কগ্রস্ত হিন্দুদের কথা ভেবে ফজলুল হক গভীর বেদনা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র অর্জিত হবার পর তাঁদের দায়িত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। হিন্দুরা আঘাত পান এমন কোনো আচরণ তাঁদের করা উচিত নয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বার্থেই হিন্দুদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক এতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে, হিন্দুদের পরিত্যাগ করে মুসলমানদের পক্ষে একা বসবাস করা কখনোই সম্ভব নয়। যদি মুসলমানেরা মনে করে থাকেন পাকিস্তানে তাঁরাই কেবলমাত্র সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হবেন, তবে তাঁরা মস্তবড়ো ভুল করছেন। মহান মুসলিম সম্রাট আকবর ও অন্যান্যদের রাজত্বকালের ইতিহাস পাঠ করে জানা যায়, তাঁরা সব সময় হিন্দুদের সম্মান করতেন এবং দেশ শাসনে দায়িত্বশীল পদে নিযুক্ত করতেন। পাকিস্তানের স্বার্থেই মুসলমানদের ভ্রাতৃঘাতী সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। পাকিস্তান ও হিন্দুস্থান হিন্দু-মুসলমান উভয়ের রাষ্ট্র। আর উভয় রাষ্ট্রেই হিন্দু-মুসলমানদের সমান অধিকার আছে। তিনি মুসলমানদের একথা স্মরণ করিয়ে দেন, যাঁরা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার করছেন, তাঁরা ইসলামের শত্রু এবং তাঁদের দ্বারা মুসলমানদের প্ররোচিত হওয়া উচিত নয়। হিন্দুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বরিশালের মুসলিম নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব নিতে হবে। তাঁদের ঘোষণা করা উচিত তাঁরা সর্বশক্তি দিয়ে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করবেন। যদি পাকিস্তানের অর্থ হিন্দুদের উপর উৎপীড়ন হয়, তবে একে একটি রাজনৈতিক ধাপ্পা বলতে হয়। তিনি নিজের জীবন দিয়ে হিন্দু ভাই ও বোনদের রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। ফজলুল হক প্রকাশ্যেই বলেন যে, তিনি সীমানা কমিশনের নিকট বলেছেন যে, বাংলাদেশ এক ও অবিভাজ্য, তাকে বিভক্ত করা যায় না। অবশ্য বাংলাদেশ বিভক্ত হবেই। যদিও তিনি আশা পোষণ করেন, এই বিভাগ বেশিদিন স্থায়ী হবে না। তাঁর ভাষণ (১ আগস্ট, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) খবরের কাগজে এইভাবে প্রকাশিত হয়:
Mr. A. K. Fazlul Huq, ex-premier of Bengal, to-day addressing a crowded public meeting at Aswini Kumar Hall exhorted the Hindus and Muslims of Barisal not to indulge in fratricidal strife. He emphatically said that there would be no disturbance in Barisal. Mr. Huq said that he was pained to learn that Hindus were leaving Barisal being panicky as Pakistan was going to be established. He earnestly requested the Hindus not to be panicky and not to leave homes.
Speaking to the Muslims in particular Mr. Huq said that pakistan did not mean making ways for lawlessness and abuse of power. Now that Pakistan was achieved, Muslims were to shoulder greater responsibility for protecting minorities in Pakistan. So Muslims should not do or say any such thing which would wound Hindu feelings. Co-operation of Hindus would be always needed in Pakistan for running administration.
Relationship between Hindus and Muslims was so interwoven that Muslims could never live without Hindus. If Muslims in Pakistan thought that they only would be in full power there, then it would be a very wrong idea. History tells of great Muslim Emperors like Akbar and others always honoured Hindus and entrusted Hindus with responsible work.
To make Pakistan a success, Muslims should not indulge in fratricidal strife but should always protest their Hindu brethren. Muslim leaders of Barisal should ensure confidence in minds of their Hindu brethren. Pakistan belonged to both Muslims and Hindus and Hindustan belonged to Hindus and Muslims.
He warned Muslims of Barisal not to be ill advised by those enemies of Islam who preach communal hatred. Mr. Huq added: “I am old in age as also in political life. I say if any Muslim wounds Hindu feelings in Pakistan he would be committing wrong against religion. I assure my full protection to Barisal Hindus. I told before the Boundary Commission that it was impossible to divide Bengal which is one. Of course it would be divided, but I hope division would not be lasting. Do not think Pakistan means special privileges to Muslims. You Muslims should remember that to hurt Hindus would mean to hurt your ownself. Let Muslim leaders of Barisal immediately dispel panic from the minds of Hindu minorities declaring that they would be responsible if any wrong be done to Hindus in Barisal. If Pakistan meant any oppression on Hindus then I would say Pakistan was political bluff.”
Fazlul Huq continued: “If it is necessary to save lives and properties of Hindus, I shall not hesitate to offer myself to sacrifice my life for defending those whom I have always regarded as my brothers inhabiting in the same land and inspired by the same ideas.”২৯
এইভাবে দেশবিভাগ যখন অনিবার্য হয়ে পড়ে তখনও ফজলুল হক হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বজায় রেখে বাঙালি জাতিকে এক মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেন।
তথ্যসূত্র
১ Mukhopadhyay, Shyamaprasad, Panchasher Mannantar (In Bengali), Calcutta, 1350, pp 1–119.
২ Speech delivered by A. K. Fazlul Huq on the floor of the Bengal Legislative Assembly. Vide Bengal Legislative Assembly Proceedings, Eighteenth Session, 1944, Vol. LXVII–No. 2, pp. 201–203; 207–215.
৩ Ibid. pp. 207–208.
৪ Ibid. p. 209.
৫ The Statesman, 31 December, 1945; 3 April, 1946.
৬ Ibid. 9 April, 1946.
৭ Ibid. 24 April, 1946.
৮ Lahiri, Pak–Bharater Ruparekha, pp. 333–334.
শ্রীপ্রভাসচন্দ্র লাহিড়ী লেখেন, মুসলমান গুণ্ডারা বারে বারে ফজলুল হকের বাড়ি আক্রমণ করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে তিনি মুসলিম লিগে যোগদান করতে বাধ্য হন। (Vide Ibid.)
৯ The Statesman, 2 and 9 September, 1946.
১০ Ibid. 10–11 November, 1946.
১১ Hindusthan Standard, 24 March. 1947.
১২ Ibid. 6 January, 1947.
১৩ Ibid. 7 February, 1947.
১৪ Ibid. 27 January, 1947.
১৫ Ibid. 18 February, 1947.
১৬ Ibid. 14 February, 1947; Times of India, 18 February, 1947.
১৭ Hindusthan Standard. 18 February, 1947.
১৮ Ibid. 19 February, 1947.
১৯ Ibid. 21 February, 1947.
২০ Ibid. 24 and 28 February, 1947.
২১ Ibid. 28 February, 1947.
২২ Times of India, 5 March, 1947.
২৩ The Statesman. 26 April, 1947.
২৪ Sen, Bhowani. Bangabhanga O Pakistan (In Bengali), published by the Bengal Provincial Committee of the C. P. I., Calcutta, May 1947, Vide Appendix.
২৫ Hindusthan Standard, 6 May, 1947.
২৬ Ibid. 9 May, 1947.
২৭ Tribune, 26 July, 1947.
২৮ Hindusthan Standard, 27 July, 1947.
২৯ Address delivered by A. K. fazlul Huq at Barisal on 1 August, 1947. Vide Hindusthan standard, 3 August, 1947; Vide also The Stateman, 4 August, 1947. বরিশাল শহরে ১ আগস্টের (১৯৪৭ খ্রি.) জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হক। এই সভায় আমন্ত্রিত হয়ে কংগ্রেসের সতীন সেন ও সরল দত্ত, মুসলিম লিগের আবদুল ওয়াহিফ খান, মহম্মদ এম, হোসেন চৌধুরী এবং সামসের আলি উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় মোফাজ্জেল হক, স্থানীয় উকিল হবিবুল্লাহ, মহকুমা শাসক, মওলানা মুরারজামান ও এম. ফকির ভাষণ দেন।