ভল্লুক ও শৃগাল।
কোনও বনে এক ভল্লুক ও এক শৃগাল বাস করিত। উহাদের উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। একদিন উভয়ে বনে ইচ্ছামত বিচরণ করিতে করিতে এক নদীতটস্থ শ্মশান ভূমিতে উপস্থিত হইল। উহার পূৰ্ব্বদিন নিকটস্থ পল্লীবাসীরা ঐ শ্মশানে তাহাদের এক মৃত আত্মীয়কে দাহ করিতে আসিয়াছিল। দাহকালে তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায়, তাহারা অর্দ্ধদগ্ধ মৃতদেহ ফেলিয়া গৃহে পলায়ন করিয়াছিল। শৃগাল শ্মশানক্ষেত্রে সেই অৰ্দ্ধদগ্ধ মৃত মনুষ্যদেহ দেখিয়া, মহানন্দে ভল্লুককে বলিল, “এস বন্ধু! আমরা উভয়ে এই হৃষ্টপুষ্ট নরদেহ ভক্ষণ করি। আজ কাহার মুখ দেখিয়া উঠিয়াছিলাম, তাই আজ ভোজনের এমন সুন্দর আয়োজন দেখিতেছি।” এই বলিয়া শৃগাল হৃষ্টচিত্তে সেই মৃতদেহ ভক্ষণ করিতে ধাবমান হইল।
লোভবশতঃ শৃগালের জিহ্বায় লালা নিঃসরণ হইতেছে দেখিয়া ভল্লুক হাসিয়া বলিল, “দেখ বন্ধু! আমি কত মহৎ! তুমি মত মনুষ্যের দেহ টানিয়৷ ছিঁড়িয়া ভক্ষণ করিতে ধাবমান হইয়াছ, অথচ আমি কখনও মরা মানুষ স্পর্শ করি না।”
ধূৰ্ত্ত শৃগাল কিছুমাত্র লজ্জিত না হইয়। উত্তর দিল, “ভাই হে! তোমার কথা সত্য, ইহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তুমি যদি জীবিত মনুষ্যকে দেখিতে পাইলেই হত্যা না করিতে, তাহা হইলে আমি তোমার সাধুতার প্রশংসা করিতাম।”
মানুষের মৃত্যুর পর মানুষের দেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপেক্ষা মানুষের দেহে প্রাণ থাকিতে প্রাণ রক্ষা করা অধিকতর প্রশংসনীয়।