ভঙ্গ বনাম কুলীন
যে ভাষার প্রশংসায় এক শ্রেণির মহাজন অধুনা পঞ্চমুখ সেই ভাষায় একটি প্রবাদ আছে : হে গভীর-সংকট-সঙ্কুল-অরণ্যের-পথভ্রান্ত-পথিক, অরণ্য ভেদ করে জনপদে না পৌঁছবার পূর্বে হর্ষধ্বনি করো না। অধম আপ্তবাক্যটি বিস্মরণ করে হর্ষোল্লাস করে বসেছি, এমন সময় দেখি, আমি গভীরতম অরণ্যে। সেই শ্রেণির সজ্জনগণ এখন আরও প্রাণপণ লড়াই দিচ্ছেন, ইংরেজি যেন সর্বাবস্থায় কলেজাদিতে শিক্ষার মাধ্যমরূপে বিরাজমান থাকে। বোধহয়, অধুনা শিক্ষামন্ত্রী যে প্রাদেশিক ভারতীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করে ফেলবেন বলে মনস্থির করে বসেছেন, এ সংবাদ এঁদের বিচলিত করেছে।
এই শ্রেণির একাংশ কোনও তর্কাতর্কি না করে তারস্বরে ইংরেজি ভাষাসাহিত্য ও তার প্রসাদগুণ কীর্তন করেন। সে কীর্তনের ঢঙটি বড়ই মজাদার। সর্বপ্রথম তারা বলেন, যারা বাংলা বা অন্য কোনও ভারতীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করতে চান তারা অজ্ঞ; তাঁরা ভাষাতত্ত্বের মূল নীতিই জানেন না। যেহেতু এদের প্রবন্ধাদি ও ইংরেজি কাগজে ছাপা চিঠিতে এঁদের নাম থাকে তাই প্রথমেই মনে প্রশ্ন জাগে, এঁরা বুঝি সুনীতি চাটুয্যের গুরুসম্প্রদায়। কারণ এনারা যখন বলেন, আমরা লিনুগুইসটিকস জানি না, তখন আমরা ধরে নিই, আমরা জানি আর না-ই জানি, তেনারা অতি অবশ্যই জানেন। এবং লিনগুইটিক্স তো আর মাত্র একটি বা দুটি ভাষা শিখেই আয়ত্ত করা যায় না–অতএব এঁরা নিশ্চয়ই এন্তের, বিশেষ করে ইয়োরোপীয় ভাষা, বিলক্ষণ রপ্ত করার পর আমাদের অজ্ঞ বলে আত্মপ্রসাদ অনুভব করছেন। কিন্তু কই, এঁদের নাম তো ভাষাবিদ পণ্ডিতদের নাম করার সময় কেউ বলে না। এঁরা তা হলে নিশ্চয়ই ইংরেজ কবির আদেশানুযায়ীতে
অসংখ্য রতনরাজি বিমল উজল
খনির তিমির গর্ভে রয়েছে গভীরে।
বিজনে ফুটিয়া কত কুসুমের দল।
বিফলে সৌরভ ঢালে মরুর সমীরে ॥
বিফলে নয় বিফলে নয়– আমরা সন্ধান পেয়ে গিয়েছি। এবং চুপি চুপি বলছি, তারা যে-প্রকারের ঢক্কানিনাদ করছেন তার থেকে সন্দ হয়, তাঁরাও নিঃসন্দেহ ছিলেন, আবিষ্কৃত হবেনই।
আইস সুশীল পাঠক, এবারে আমরা সেইসব জেদের জলুস দেখে হতবাক হই (ইংরেজিতে অবশ্য জে বক্রোক্তিতে ব্যবহার হয়; যেমন কেউ যখন বলে, এই প্রেশাস জেমটি তুমি পেলে কোথায়? তখন তার অর্থ এই আকাট পণ্টকটিকে তুমি আবিষ্কার করলে কোত্থেকে? আমি কিন্তু, দোহাই ধর্মের, সেভাবে বলছিনে), এদের সৌরভ শুঁকে কৃতকৃতার্থ হই।
কেউ কেউ বলেন, বহু শতাব্দীর ভিতর দিয়ে ইংরেজি ভাষার বৃদ্ধি (গ্রোথ) অধ্যয়ন করলে রোমাঞ্চ হয় (এ থ্রিলিং স্টাডি)! অবশ্যই হয়! আমরা শুধোব, কোন ভাষার ক্রমবৃদ্ধির ইতিহাস পড়লে রোমাঞ্চ হয় না? তবে ইংরেজির বেলা একটু বেশি হয়। কেন বেশি হয়? এই সম্প্রদায় বলেন, ইংরেজি তার শব্দসম্পদ আহরণ করেছে অন্যান্য বহু ভাষা থেকে যেমন লাতিন, গ্রিক, ফরাসি, হিব্রু, আরবি, হাঙ্গেরিয়ান, চীনা– এস্তেক হিন্দি-বাংলা থেকে তবেই নাকি সম্ভব হয়েছে, এদের মতানুসারে– শেক্সপিয়ার, মিলটন, ওয়ারওয়ার, টেনিসন ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিস্তর ভাষা থেকে এন্তের শব্দ নিয়েছে বলে ইংরেজিতে অত-শত উত্তম কবি– এ সিদ্ধান্তটি পরে আলোচনা করা যাবে।
এই যে থ্রিলিং স্টাডি সেটা সম্ভব হয়েছে ইংরেজি অন্যান্য থেকে বিস্তর শব্দ নিয়েছে বলে। সাধু প্রস্তাব!… এস্থলে আমরা তা হলে এ তথ্যের আরেকটু পিছনে যাই– যথা, ইংরেজি অত বিদেশি শব্দ নিল কোথায়, কেন, কী প্রকারে? আমি কথা দিচ্ছি। এটা আরও থ্রিলিং হবে।
১. কোনও দেশ পরাধীন হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার ভাষাও পরাধীন হয়ে যায়। নরমান বিজয়ের পর ইংরেজি যে প্রায় তিনশো বছর অবহেলিত অপাঙক্তেয় ছিল সেকথা পূর্বেই বলেছি। এস্থলে বিজয়ী জাত যদি শিক্ষা-দীক্ষা-সভ্যতায় বিজিত জাতের চেয়ে সর্বাংশে শ্রেষ্ঠ হয় তবে বিজিত ভাষা ক্রমে ক্রমে বিদেশি ভাষার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে যায়। তাই আজও ইংরেজ সবচেয়ে বেশি ঋণী ফরাসির কাছে। এমনকি, যেসব গ্রিক-লাতিন শব্দ নিয়েছে তার চোদ্দ আনা ফরাসির মারফত।
হুবহু এই ঘটেছিল ইরানে, সে দেশে আরব বিজয়ের ফলে। তাদের শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যম হুবহু তিনশো বছর ছিল আরবি। সে ভাষার প্রভাব ফারসির ওপর এতই প্রচণ্ড যে, আজ আরবি শব্দ বর্জন করলে ফারসি এক কদমও (কদম শব্দটাও আরবি) চলতে পারবে না। হুবহু তেমনি উর্দুর ওপর (বা প্রাকৃত হরিয়ানার ওপরও বলতে পারেন) ফারসির প্রভাব পড়েছিল ও ফারসির মারফত আরবির।
পক্ষান্তরে ফ্রান্স বা জরমনির ওপর কোনও বিদেশি বেশিকাল রাজত্ব করেনি বলে ফরাসি জরমনে বিদেশি শব্দ–ইংরেজি যেরকম বে-এক্তেয়ার হয়ে গিয়েছে তার তুলনায় মুষ্টিমেয়।
২. এর পর যদি সেই বিজিত জাত– এস্থলে ইংরেজ– বিধির লেখনে আপন দেশ ছেড়ে বাণিজ্য করতে বেরোয়, সেই বাণিজ্য রক্ষা করতে গিয়ে রাজ্য জয় করতে আরম্ভ করে, এবং সর্বশেষে রাজত্ব করার ছলে ডাকাতি করে চরকা পুড়োয়, আফিঙ গেলাবার জন্য সঙিন চালায়, শত্রু ঠেকাবার জন্য কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে, ড্রাই-আরথ পলিসি এক্তেয়ার করে, নির বাগ-আবদ্ধ সহায় নর-নারীকে যারা পাশবিক হুহুঙ্কারবলে গুলি করে মারে, তারা দেশে ফিরে স্বয়ং সম্রাটের আশীর্বাদাভিনন্দনসহ সুপপ্লেট সাইজের মেডেল পায়– তবে, তখনই, সেই বাণিজ্য সেই রাজত্ব সেই ডাকাতি– এক কথায় সেই রক্তশোষণ, সেই এপ্লয়টেশনের চৌকশ সুবিধার জন্য সেইসব মহাপ্রভুরা বহু ভাষা শেখেন এবং তারই ফলে তাদের আপন ভাষাতে বেনোজলের মতো হুড়হড় করে বিদেশি শব্দ ঢোকে।
এস্থলে বিশেষভাবে লক্ষ করার জিনিস, যে বিজিত জাত ইতোপূর্বে বিজয়ী জাতের কাছ থেকে অকাতরে শব্দ নিয়ে নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে, তারাই পরবর্তীকালে অন্য জাতকে শোষণ করার সময় আরও অকাতরে শব্দ নিতে পারে। এদের তুলনায় ফরাসি-জরমন অনভিজ্ঞ বালখিল্য। তদুপরি এরা চেয়েছিল প্রধানত রাজত্ব করতে; বাণিজ্য করতে নয়। এরা নেশন অব শপকিপারজ বা শপ-লিটারজ নয়। বণিকের মানদণ্ড যখন পোহালে শর্বরী দেখা দেয় রাজদণ্ডরূপে তখন সে রাজদণ্ডের সর্বাঙ্গে বেনে-দোকানের কালিঝুলের চিত্র-বিচিত্র ছোপ আর সপসপে ভেজাল তেলের দুর্গন্ধ।
শুনেছি, কোনও কোনও আন্তর্জাতিক গণিকা বাইশটি ভাষায় অনর্গল কথা কইতে পারে। তাদের সেই ভাষাজ্ঞান নমস্য কিন্তু পদ্ধতিটা গ্রহণ না করাই ভালো। ইংরেজের শব্দভাণ্ডার হয়তো-বা নমস্য– আমি এস্থলে তর্ক করব না, কিন্তু তার পদ্ধতিটা ঘৃণ্য। পাঠক এটা দয়া করে ভুলবেন না। যদ্যপি এস্থলে এটা ঈষৎ অবান্তর তবু মনে রাখবেন, প্রথম গোলাম হতে হবে, পরে ডাকাত হবে, তবেই শব্দভাণ্ডারে সঞ্চিত হয়। এবারে চরে খান গে– যার যা খুশি করুন। এবং স্বীকার করুন, এ স্টাডি থ্রিলিংতর নয় কি না?
কিন্তু দোহাই ধর্মের, পাঠক ভাববেন না, গোলামির কড়ি তথা লুটের মাল দিয়ে ভরতি ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে আমি অনিচ্ছুক। ডাকাতির মোহরও মোহর, পুণ্যশীলের মোহরও মোহর। ফোকটে পেয়ে গেলে ব্যবহার করব না কেন? মধুভাণ্ডের রস তো আগাপাশতলা চোরাই মাল– সেটা জেনেও তো কবিগুরু সিলেটের কমলালেবুর জন্য ছোঁক ছোঁক করতেন। এটা তো তবু নির্দোষ উদাহরণ। শাহ-জাহানের হারেম ছিল ফেটে-যাওয়ার-মতো ভরতি। তথাপি তিনি মাঝে-মধ্যে বাজার থেকে রমণী আনতেন। অনুযোগ করাতে বলতেন, হালওয়া মিষ্টি, তা সে যে কোনও দোকান থেকেই আসুক। হালওয়া নিক অস্ত– আজ হর দুকান্ বাদ– না কী যেন বলে ফারসিতে।
কিন্তু প্রশ্ন, মিশ্রিত ভাষা হলেই বুঝি তিনি অতুলনীয় সর্বশ্রেষ্ঠ একচ্ছত্রাধিপতি? ফরাসি ভাষা লাতিনসতা, এবং সে কিছু গ্রিক শব্দ নিয়েছে। ইটিকে প্রায় অবিমিশ্র ভাষা বলা চলে। তবে কেন মিশ্রিত ভাষার পদগৌরবদমদমত্ত সায়েব-লোগ হন্যে হবে অবিমিশ্রা ফরাসি ভাষার পিছনে পড়িমরি করে? আসলে ভঙ্গজ চৌষট্টি-আঁসলা সর্বত্রই কুলীনের জন্য ছোঁক ছোঁক করে।
মিশ্র বলেই নাকি ইংরেজি শেক্সপিয়ার, মিলটন পেয়ে ধন্য হয়েছে।
তা হলে হায় কালিদাস! তোমার কী গতি হবে, বাছা? তোমার শকুন্তলা, রঘুবংশ, মেঘদূতের পেটে বোমা মারলেও যে তাদের জবান থেকে বিদেশি লবজো বেরুবে না!
হায় হোমর, ইস্কিলস, আরিসতোফানেস, ইউরিপিদিস!
(কিন্তু আশ্চর্য, ইংরেজ তো এখনও প্রতি বছর এঁদের কাব্য লক্ষ লক্ষ ছাপায়–নয়া নয়া অনুবাদ করে!)।
প্রাচীন যুগের আধা-মিশ্র আরবি ভাষায় কবিকুল, ওল্ড টেস্টামেটের স, দায়ুদ সলমনের সঙ অব সজ তোমরা তো বানের জলে ভেসে গেলে। দাঁতের স্মরণে দীর্ঘনিশ্বাস দীর্ঘতর হল। সান্তনা, চীনা-জাপানের কবিদের সঙ্গে পরিচয় নেই। তাঁরা অন্-ওয়েট, অ-অনড়, অসাঙ হয়ে রইলেন।
পাপমুখে কী করে বলি, এক পাল্লায় মিশ্রিত ভাষার কবি, অন্য পাল্লায় অবিমিশ্র ভাষার কবিকুল তুললে কোনটা ওজনে ভারী হবে সে নিয়ে আমার মনে সন্দ আছে। অবশ্য প্রতিপক্ষ বলতে পারেন, ইংরেজি কাব্যে যে ভেরাইটি আছে অন্য কাব্যে নেই। উত্তরে বলি, ফরাসি গদ্যে যে ভেরাইটি আছে, ইংরেজি গদ্যে তা নেই। এবং অনেকে বলতে পারেন, বত্রিশ-ভাজাই দুনিয়ার সর্বোত্তম খাদ্য না-ও হতে পারে। সিংহের এক বাচ্চাই ব্যস!
বিবিসি সম্প্রতি এবারের মতো পুনরাবৃত্তি করলেন, ইংরেজিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে চালু ভাষা। অবশ্যই। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে সেটি চালু হল– যার বয়ান এইমাত্র দেওয়া হল– সেটি বলতে ভুলে গেলেন। হয়তো-বা সে স্থলে সেটি অবান্তর ছিল। তার পর সগর্বে বললেন, হালের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন– থুড়ি, সেমিনারে দশটি প্রবন্ধ পড়া হয়; তার ন-টি ছিল ইংরেজিতে।
আমি বলি, অধুনা ডাক্তারদের একটি সেমিনারে দশটি প্রবন্ধ পড়া হয়। তার ন-টি ছিল ক্যানসার সম্বন্ধে, তবে নিশ্চয়ই ক্যানসারের গর্ব অনুভব করা উচিত।
পদ্ধতিটা কী সম্পূর্ণ অবান্তর?
ইংরেজ তার মিশ্রিত ভাষার প্রশংসা করে। তাই শুনে শুনে এদেশের অনেকেই ইংরেজের গলার সঙ্গে বেসুরো গলা মেলান। কিন্তু তর্কস্থলে একবার যদি ধরে নিই, ইংরেজের ভাষা যদি ফরাসির মতো অপেক্ষাকৃত ঢের ঢের অবিমিশ্র হত, তা হলে কে কী করত? নিশ্চয়ই উচ্চতর কণ্ঠে বলত, ভো ভো ত্রিভুবন! শূন্বন্তু বিশ্বে… ইত্যাদি ইত্যাদি… এই যে আমাদের ভাষা সে কী নির্মল কী নির্ভেজাল! সে কোনও ভাষার কাছে ঋণী নয়, সে স্বয়ংপ্রকাশ। ওহো হো হো, সে কী পূত, পবিত্র– পর্বতনিঝরিণীর ন্যায় অপাপবিদ্ধ। আইস, ইহাতে অবগাহন করিবা!
এতে আশ্চর্য হবার কী আছে? সে তার আপন রক্ত অমিত্র রাখতে চায়, ইস্তক তার ঘোড়া, তার কুকুরটাকে পর্যন্ত দো-আঁশলা হতে দেয় না। এদেশের হুদো হুদো পকেট-ছুঁচোর কেত্তনওলা মি লাটুরা আপন আপন রক্তের বিশুদ্ধতা (অবশ্য কিঞ্চিৎ নরমান বেআইনি ভেজাল আছে বইকি!) ভাঙিয়ে মারকিন মুলুকে পয়সাউলি শাদি করছেন। প্রত্যয় যাবেন না, এই হালে বিবিসি-তেই এক ইংরেজ চারচিলের বিদেশি মাতার প্রতি ইঙ্গিত করে (যদ্যপি মাতা অধিকাংশ মারকিনের মতো গোড়াতে ইংরেজই বটেন) বলেন, হি উয়োজ নেভার কুআইট ওয়ান অব আস। শুনেছি চারছিল পার্লামেন্টে তাঁর জীবনে মাত্র একবার হুট হয়েছিলেন, তাঁর বক্তৃতা চিৎকারে অসমাপ্ত থেকে যায় তিনি যখন ডুক অব্ উইজারের মারকিন রমণী বিবাহ-প্রস্তাব সমর্থন করতে চান।
সব বাবদে ইংরেজ অবিমিশ্র থাকতে চায়– শুধু ভাষার বাবদে ব্যত্যয়!
আসলে ভাষাটা বর্ণসংকর হয়ে গিয়েছে যে! এখন এরই প্রশংসায় আসমান ফাটাও!
আমরাও হুক্কাহুয়া করি। দু-একটা নরসমেন, গোটা-দুই ফরাসিও করেছে। কেউ কিছু বললে, ওদের দোহাই দেব।
হিটলার পঞ্চাশ লক্ষ ইহুদি পোড়াল নরডিক রক্ত অমিশ্র রাখার জন্য।
ইংরেজি ভাষা নির্মিত হল কত পরাধীন জাতের রক্তশোষণের পিঠ পিঠ।
.
কিন্তু ইহসংসারের সর্বাপেক্ষা মিশ্রিত, বর্ণসংকর ভাষা কোনটি- ইংরেজি যার একশো যোজনের পাল্লায় আসতে পারে না? বেদেদের, জিপসিদের ভাষা। নর্থ-পোল থেকে সাউথ-পোল, পৃথিবীর নগণ্যতম ভাষার অবদানও এ ভাষাতে আছে। বস্তুত, মূলত ইটি কোন দেশের ভাষা, আর্য সেমিতি না মঙ্গোলীয় জাতের, সেই তর্কেরই সমাধান হয়নি।
বিবেচনা করি, এ ভাষাতে আরও ডাঙর ডাঙর শেক্সপিয়ার-মিলটন গণ্ডায় গণ্ডায় অসংখ্য রতন, ডেজারট-ফ্লাউয়ারের ন্যায়–ঘাপটি মেরে আপসে আপসে আবৃজা করছেন।
একাধিক গুণী বলেন, বেদেদের ভাষা মূলে ভারতীয়। বৎস! আর কী চাই! কেল্লা ফতেহ। আইস ভ্রাতঃ! সবে মিলি বেদেদের ভাষা শিখি।