ভগবদগীতা-সমালোচনা – ৫ম পরিচ্ছেদ
নবম অধ্যায়ে কৃষ্ণ বলিলেন, মুক্তি প্রদান করিবার সময় ঈশ্বর ভক্তের জাতি বিচার করেন। জাতি উচ্চ হইলে সহজে মুক্তি লাভ হয়। সুতরাং পাপী শূদ্রেও যখন ঈশ্বরপরায়ণ হইলে মুক্তি পায় তখন তোমার ন্যায় ভক্তিপরায়ণ ক্ষত্রিয় যে সহজে উৎকৃষ্ট গতি লাভ করিবে, সে বিষয়ে সন্দেহ কি? (৯অ—৩৩)। হিন্দু শাস্ত্রের ঈশ্বর অনেকটা হিন্দু রাজাগণের ন্যায়, জাতি অনুসারে শাস্তি বা মুক্তি প্রদান করেন; কিন্তু বাইবেলের ঈশ্বরের নিকট সকল লোকই সমান। “God is no respecter of Persons.”
দশম অধ্যায়ের নাম বিভূতিযোগ। এই অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ কিয়ৎক্ষণ কথোপকথনের পর আপনার বিভূতি ও ঐশ্বর্য্যের এক দীর্ঘ তালিকা প্রদান করেন। তাহা হইতে নমুনা স্বরূপে কিয়দংশ উদ্ধৃত হইল। তিনি বলিলেন,—“আমি, দৈত্য কুলে প্রহ্লাদ, হস্তিগণের মধ্যে ঐরাবত, অশ্বের মধ্যে উচ্চৈঃশ্রবা; সবিষ ভুজঙ্গের মধ্যে বাসুকি, নির্ব্বিষ ভুজঙ্গের মধ্যে অনন্ত, মৎসের মধ্যে মকর, অক্ষরের মধ্যে অকার, সমাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব, মাসের মধ্যে অগ্রয়াহণ,” ইত্যাদি। কেবল বলিলেন না তিনি রাসভের মধ্যে কোনটি! সেটা বোধ হয়, ভক্তের বুদ্ধিপরীক্ষার্থ।
একাদশ অধ্যায়ে অর্জ্জুন একটা মস্ত আবদার করিয়া বসিলেন, তিনি কৃষ্ণকে বলিলেন, তোমার বিশ্বরূপ দেখাও। কৃষ্ণ তথাস্তু বলিয়া তাহার পরম বন্ধুকে এক জোড়া দিব্য চক্ষু প্রদান করিলেন। পাণ্ডুনন্দন বিশ্বরূপ দর্শন করিয়া নয়ন মন সার্থ করিলেন। বিশ্বব্যাপী মূর্ত্তি বাক্য দ্বারা বর্ণনা করা অসম্ভব। কৃষ্ণানন্দের গীতাস্থ আলেক্ষ্য দর্শন করিলে পাঠকবর্গ অনেকটা আইডিয়া করিতে পারিবেন। ধনঞ্জয় দেখিলেন, কৃষ্ণের দেহ, বাহুতর বাহু, উদর, বাহু, উদর, মুখ, এবং নেত্র দ্বারা শোভিত। তাঁহার আদি, অন্ত, মধ্য কিছুই নাই এবং একাকী স্বর্গ, পৃথিবী, অন্তরীক্ষ ও সমস্ত দিগ্বলয় ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছেন। কুরুশ্রেষ্ঠ অর্জ্জুন কিন্তু কোন্ স্থান হইতে দর্শন করিয়াছিলেন, কোন ভাষ্যকারই তাহা লেখেন নাই। মহামতি পার্থ আরও দেখিলেন, যে মহাবীর ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ, এবং অন্যান্য মহীপালবর্গ, তাহাদের যোদ্ধৃগণের সহিত কৃষ্ণের বদনবিবরে প্রবেশ করিতেছেন এবং বিশাল চন্তাঘাতে তাহাদের উত্তমাঙ্গ সকল চূর্ণীকৃত হইতেছে। বাসুদেব, এই ভয়ঙ্কর মূর্ত্তিতেই বলিলেন, আমিই লোকক্ষয়কারী সাক্ষাৎ কালরূপী হইয়া লোকসংহারে প্রবৃত্ত হইয়াছি। তুমি ব্যতিরেকে প্রতি পক্ষীয় সমস্ত বীরগণই বিনষ্ট হইবে। অতএব তুমি যুদ্ধার্থ উত্থিত হইয়া জ্ঞাতিবর্গকে সমরে বিনষ্ট করিয়া যশোলাভ এবং সমৃদ্ধ রাজ্য উপভোগ কর, (১) আমি উহাদিগকে অগ্রেই নিহত করিয়া রাখিয়াছি, এক্ষণে তুমি বিনাশের নিমিত্ত মাত্র হও। হে অর্জ্জুন, আমি অগ্রেই ভীষ্ম, দ্রোণ, জয়দ্রথ প্রভৃতি বীরগণকে বিনাশ করিয়া রাখিয়াছি; তুমি কেবল তাহাদিগের গলা একটু একটু কাটিয়া দাও, আর অধিক কিছু করিতে হইবে না। তাহাতেই তোমার কার্য্য উদ্ধার হইবেক। তজ্জন্য কিছু মাত্র ব্যথিত হইও না। অনতিবিলম্বে সংগ্রামে প্রবৃত্ত হও, নিশ্চয়ই তোমার জয় হইবে।
এই সকল দেখিয়া শুনিয়া অর্জ্জুনের জ্ঞানমার্গ উন্মুক্ত হইল। এবং আমি হন্তা উহারা হত, এরূপ ভ্রান্তি দূর হইল। ইংরাজ বিচারপরিগণকে আমরা গীতার এই অংশটুকু পাঠ করিতে অনুরোধ করি। কারণ তাঁহারা অনেক সময় অমুক লোক অমুক লোককে হত্যা করিয়াছে ভাবিয়া নিরাপরাধীকে অনর্থক শাস্তি প্রদান করেন। কুসংস্কারবিশিষ্ট কতক গুলা দেশীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক, ‘একজন শ্বেতকায় একজন কৃষ্ণকায়কে হত্যা করিয়াছে’ বলিয়া মধ্যে মধ্যে চীৎকার করিয়া উঠে। ভক্তি এবং শ্রদ্ধার সহিত গীতাপাঠ করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, বৃন্দাবনের ননি চোরাই যত অনর্থের মূল। তিনিই যথার্থ হত্যাকারী, সাহেব নিমিত্ত মাত্র। যিনি নিমিত্ত মাত্র তাঁহার আবার অপরাধ কি?
বন্ধুর স্তব স্তুতিতে সন্তুষ্ট হইয়া নন্দদুলাল নিজ মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বলিলেন,—হে অর্জ্জুন, “তোমা ব্যতিরেকে আর কেহ আমার তেজোময় বিশ্বব্যাপী মূর্ত্তি দর্শন করে নাই।” এই কথাটার জন্য বঙ্কিম বাবু কিছু গোলে পড়িয়াছিলেন; কেননা কুরুসভায় এবং অন্যান্য স্থানে সহস্র সহস্র লোককে এই বিশ্বব্যাপী মূর্ত্তি দর্শন করাইয়া আজ বলিলেন কি না—“আমার বিশ্বরূপ তুমি ভিন্ন আর কেহ দেখে নাই।” (কৃষ্ণচরিত্র—১৭৩ পৃষ্ঠা)। কিন্তু উপন্যাসরচকের কল্পনাময়ী লেখনী সঙ্গে সঙ্গেই একটা সুন্দর মীমাংসা করিয়া দিয়াছেন। সমস্ত বিশ্বরূপ গুলাই প্রক্ষিপ্ত। “অঙ্গুলীকণ্ডুয়ণনিপীড়িত প্রক্ষিপ্তকারির জাতি গোষ্ঠী সম্ভূত কোন কুকবি প্রণীত অলীক উপন্যাস।” (২)
ত্রয়োদশ অধ্যায়ের নাম প্রকৃতি, পুরুষ, বা ক্ষেত্র, ক্ষেত্রজ্ঞ বিভাগ যোগ। এই অধ্যায়ে “ক্ষেত্র, ক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান এবং জ্ঞেয়” এই সকল বিষয়ের বর্ণনা আছে। “এই ভোগায়তন শরীরই ক্ষেত্র এবং এই ভারি আশ্চর্য্যের কথা যিনি বিদিত আছেন, বুধগণ তাঁহাকে “ক্ষেত্রজ্ঞ” নামে অভিহিত করেন।” সর্ব্বব্যাপী, সর্ব্বশক্তিমান, আদ্যন্তবিহীন, পরব্রহ্মই জ্ঞেয়, এবং বিষয়ে বৈরাগ্য, নিরহংকারিতা, জন্ম, জরা, মৃত্যুর দোষ দর্শন ইত্যাদি বিংশতি প্রকার জ্ঞান। “আমাদের আত্মা আমাদের শরীরাভ্যন্তরে বাস করিয়াও আমাদের সহিত কোন সম্পর্ক রাখেন না। সাক্ষীর ন্যায় আমাদের সকল কার্য্য নিরীক্ষণ করেন।” ইহাই নাকি একটা মস্ত জ্ঞানের কথা; এবং যিনি ইহা জানেন, তিনি যেরূপ কার্য্য করুন না কেন, এই বর্ত্তমান দেহ পাতে তাঁহাকে আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করিতে হয় না। অর্থাৎ তিনি ন্যায় পথ অতিক্রম করিয়া “ইন্দ্রিয়াদি দ্বারা কোন প্রকার নিষিদ্ধ কার্য্যের অনুষ্ঠান করিলেও” তাঁহার কিছু মাত্র পাপ হয় না!!! এবং তিনি মোক্ষ প্রাপ্ত হন (শশধর তর্কচূড়ামণি ১৩অ—২৩ শ্লোকের বং অং)। “স পুরুষঃ সর্ব্বথা বিধিমভিলঙ্ঘ্য বর্ত্তমানোহপি পুনর্নাভিজায়তে। শ্রীধর। পরিত্রাণলাভের এমন সহজ উপায় আর কোন ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায় না। উল্লিখিত জ্ঞানের প্রশংসা গীতার নানা স্থানে পাওয়া যায়। চতুর্থ অধ্যায়ে লিখিত আছে যে,—যদ্যপি তুমি সকল অপেক্ষা অধিক পাপী হও, তথাপি এই জ্ঞানরূপ ভেলা দ্বারা সমস্ত পাপসমুদ্র হইতে উত্তীর্ণ হইবে।
ইহা সম্বন্ধে কোন ইউরোপীয় পণ্ডিত বলেন,—“What is this knowledge, that has such wonderful effects? The blasphemous assertion (অহং ব্রহ্ম) I am God.”(৩) “The perfect beatitude will be our reward, if we can only bring ourselves to the conclusion that there is no difference between God and man; between virtue and vice; cleanliness and filth; and heaven and hell!!!”
পাপের প্রকৃত প্রায়শ্চিত্ত অনুতাপ। কেবল মাত্র উপযুক্ত অনুতাপ দ্বারাই পাপ ধ্বংস হইতে পারে। গীতার লেখক এই মহামূল্য সত্য জানিতেন না।
চতুর্দ্দশ অধ্যায়ে গুণত্রয় লক্ষণ বর্ণিত আছে। জগতের যাবতীয় পদার্থেই নাকি গুণত্রয় বর্ত্তমান আছে। শ্রীমান কৃষ্ণানন্দ স্বামী বলেন যে, “তৃণ হইতে ব্রহ্ম পর্য্যন্ত ত্রিগুণময়ী মায়া রজ্জুতে গ্রথিত রহিয়াছে,” তর্কচুড়ামণি মহাশয় কিন্তু ইহা স্বীকার করেন না। তিনি মনে করেন, “দুর্ব্বাসা কপিলাদি মুনিগণ ত্রিগুণের অতীত” (১৮অ—৪২)। তবে যে মধ্যে মধ্যে (স্ত্রীলোক দেখিলে রেতঃপতন প্রভৃতি) “কদাচিৎ অসৎ প্রবৃত্তির কার্য্য দেখিতে পাওয়া যায়; উহা তাহাদের স্বভাবের পরিচায়ক নহে”। (বোধ হয় বাল্যকালের বদ্ অভ্যাসের ফল) “অর্থাৎ নিদ্রিত ব্যক্তির মশক তাড়না করার ন্যায় দৈহিক সংস্কারানুসারে হইয়াছে”। কৃষ্ণানন্দেরও বচন প্রমাণ আছে।—“পৃথিবীতে বা স্বর্গে অথবা দেবতাদিগের মধ্যে এমন কোন পদার্থ নাই যাহাতে এই তিন গুণ বিদ্যমান নাই” (১৮অ—৪০)। চূড়ামণি মহাশয়ের স্বপক্ষে ইহাও বলা যাইতে পারে যে, মানব কিঞ্চিত চেষ্টা করিয়াই আপনাকে ত্রিগুণাতীত করিতে পারে, তখন ব্রহ্মা এবং বড় বড় মহর্ষিগণ যে তাহা আজিও পারেন নাই, তাহা সম্ভবপর বলিয়া বোধ হয় না। ভাল, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী গুণ তিনটী কি?(৪) বৈজ্ঞানিক পণ্ডিত শ্রীশশধর তর্কচূড়ামণি বলেন, উহারা শক্তি (Force)। পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের সংজ্ঞানুসারে বিচার করিলেন, উহারা জড় পদার্থ (matter), শক্তি (Force) বা জড়ের গুণ (property) বলিয়া বোধ হয় না।
সংস্কৃত দর্শন শাস্ত্রাদিতেও উহাদিগকে জড় পদার্থ বলে না। উহারা শক্তি বা Force হইতে পারে না। কেননা শক্তি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য পদার্থ নয়। তাহার গুরুত্ব, বা লঘুত্বাদি গুণ সকল নাই। কিন্তু সত্ত্বাদি গুণ সেরূপ নয়। “সত্ত্বগুণ=লঘ, দীপ্তি বিশিষ্ট এবং নিরুপদ্রব। এই গুণ হইতে জ্ঞানের উদয় হয়। রজোগুণ=অনুরাগাত্মক, অভিলাষ এবং আসক্তি হইতে সমুদ্ভূত; উত্তেজক এবং গতিশীল। তমোগুণ=আচ্ছাদক, ভারবিশিষ্ট এবং অজ্ঞানসম্ভূত।” এরূপ লক্ষণ বিশিষ্ট কোন পদার্থ শক্তি হইতে পারে না। উহাদিগকে জড়ের গুণও বলা যায় না। কেননা গীতাতেই সাত্ত্বিক, রাজসিক এবং তামসিক, এই ত্রিবিধ দান, ত্রিবিধ তপ ইত্যাদির উল্লেখ আছে। দান বা তপ ক্রিয়ামাত্র, উহারা জড় পদার্থ নহে; সুতরাং উহাদের property (গুণ) থাকিবে কি প্রকারে? ইহাদের সম্বন্ধে এতখানি লেখার আবশ্যকই ছিল না। কেননা শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রেই জানেন যে, প্রাচীন পণ্ডিতগণ (৪) ভ্রম প্রযুক্তই এই গুণত্রয়ের অস্তিত্ব কল্পনা করিতেন। তাহাদের অস্তিত্বের কিছুমাত্র প্রমাণ নাই।
গুণত্রয় বিভিন্ন ভাবাপন্ন হইলেও ইহাদের কার্য্য একই—দেহীকে বন্ধন। সত্ত্ব জ্ঞানাভিমানে, রজঃ কর্ম্মবন্ধনে এবং তমঃ অজ্ঞান দ্বারা জীবকে বন্ধন করে। অর্থাৎ গুণত্রয় হইতে পুনর্জন্ম হয়। ত্রিগুণের অতীত হইতে পারিলে আর জন্মান্তর পরিগ্রহ করিতে হয় না। আর যদি গুণত্রয়ের অস্তিত্বই না থাকে, তবে দেহীর পুনর্জন্ম হইবে কোথা হইতে?
হিন্দু ধর্ম্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাতা স্বধর্ম্মনিরত পণ্ডিতবর শ্রীশশধর তর্ক চূড়ামণির নিকট একবার সন্তানোৎপত্তির প্রক্রিয়াটা শুনুন। “অতীব সূক্ষ্ম কেবল শক্তিমাত্র স্বরূপে অবস্থিত জীব সকল ঘটনা ক্রমে বিবিধ খাদ্য দ্রব্য অথবা নিশ্বাস বায়ুর সহিত সংশ্লিষ্ট হইয়া পিতার দেহে প্রবেশ করে। পরে তাহা হইতে এমন অভিন্ন ভাবে পিতার আত্মার সহিত মিশাইয়া যায় যে, কোন প্রকারেও তাহাদের পার্থক্য অনুভব করা যায় আ, যেন এক হইয়া যায়। পরে যখন স্ত্রী আর পুরুষের যোগ হয়, তখন ঐ বিলীন শক্তি টুকু আবার বিশ্লিষ্ট হইয়া পিতার দেহের অনুমাত্র ভৌতিক পদার্থের আশ্রয় পূর্ব্বক মাতৃ জরায়ুতে প্রবেশ করিয়া, আবার মাতৃদেহে একেবারে সমবেত হইয়া যায়; পরে মাতা হইতে দেহের পুষ্টি সাধন পূর্ব্বক, আবার মাতা হইতে বিস্খলিত হইয়া জন্মগ্রহণ করে। এক একবার মহাপ্রলয়ের পর ব্রহ্ম আর প্রকৃতি হইতে ঠিক এরূপে জীবের উৎপত্তি হইয়া থাকে।”
এমন প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বৈজ্ঞানিকগণ জীবিত থাকিতে আমরা ম্লেচ্ছদিগের গ্রন্থ পড়িয়া মরি কেন? আচ্ছা, তর্কচূড়ামণি মহাশয় কোন পথে (নাসারন্ধ্র বা বদন বিবর) পিতৃদেবের শরীরাভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়াছিলেন, তাহা কি তিনি জানিতে পারিয়াছেন? আমাদের বিশেষ অনুরোধ তিনি দন্ত দ্বারা অন্নাদি অধিক পরিমাণে চর্ব্বন না করেন। কেননা তাহাতে হয় ত তাঁহার ভাবি পুত্রের অতীব সূক্ষ্ম শরীর জড়িত থাকিতে পারে।
————————
(১) সকল সময় কৃষ্ণচন্দ্র নিষ্কাম ধর্ম্ম প্রচার করেন না। মুখে নিষ্কাম ধর্ম্মের যতই কেন প্রশংসা করুন না, লাভালাভের দিকে তিনি বিলক্ষণ দৃষ্টি রাখেন। এই জন্যই Tawney সাহেব বলেন;—a vein of insincerity runs through this exhortation.
(২) বঙ্কিম বাবুর মতে সমস্ত গীতা খানিই “প্রক্ষিপ্ত,” একাদশ অধ্যায় কি আবার প্রক্ষিপ্তের মধ্যে “প্রক্ষিপ্ত?’ প্রক্ষিপ্ত হউক বা না হউক, একাদশ অধ্যায় কোন কুকবি প্রণীত নয়। কাব্যাংশে এই অধ্যায়ই গীতার মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
(৩) সুখের বিষয়ে এই যে, “সকল মানবের আত্মা এবং ঈশ্বরের আত্মা এক অবিভক্ত পদার্থ” তাহা বৈদান্তিকগণ ছাড়া ভারতের অন্যান্য দার্শনিকগণও স্বীকার করিতেন না। সাংখ্যদর্শনে আত্মার বহুত্ব উত্তমরূপে প্রমাণীকৃত হইয়াছে।
জন্মমরণকরণানাম্ প্রতিনিয়মাৎ অযুগপৎ প্রবৃত্তেশ্চ।
পুরুষ বহুত্বং সিদ্ধং ত্রৈগুণ্য বিপর্য্যয়াচ্চৈব।।
ভারতের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ভক্তপ্রবর রামানুজ এইরূপে অদ্বৈতবাদের অযৌক্তিকতা দেখাইয়াছেন;—
All the Shastras tell us of two principles—knowledge and ignorance, virtue and vice, truth and falsehood. Thus we see pains everywhere, and God and human soul are also so. How can they be one? I am sometimes happy, sometimes miserable. He the spirit is always happy, such is the discrimination. How can the two distinct substances be identical? He is eternal light, with our anything to obscure it—pure one superintendent of the world. But human soul is not so. Thus a thunderbolt falls on the tree of no-distinction. How canst thou, oh slow of thought, say, I m He, who has established this immense sphere of Universe in its fulness? Consider thine own capacities with a candid mind. By the mercy of the Most High a little understanding has been committed to the. It is not for thee, therefore, O perverse one, to say, I am God. All the qualities of sovereignty and activity are eternally God’s. He is therefore a being endowed with qualities (সগুণ). How can he be devoid of qualities (নির্গুণ). Why again should this useless illusion be exercised? if you say as a sport—why should a being of unbounded joy engage in sport? To say that God has projected an illusion for deluding his creatures; or that a being essentially devoid of qualities (নির্গুণ) become possessed of qualities (সগুণ) under the influence of illusion (মায়া) is equally opposed to Godliness. You cannot, if you believe Him to be all truth, allow the possibility of his projecting a deceptive spectacle. Nor can you believe, if you believe Him to be all knowledge and all power, assent to the theory of His creating anything under the influence of Avidya (অবিদ্যা) or ignorance.
(Monies Williams’s Religious Thought and Life in India)
শ্রীচৈতন্যদেব অদ্বৈতবাদিগণকে তিরষ্কার করিয়া বলেন;—
“মায়াধীশ, মায়াবশ ঈশ্বরে জীবে ভেদ।
হেন জীব ঈশ্বর সহ কহত অভেদ।।”
পণ্ডিতবর Charles H. Tawney সাহেব গুণত্রয় সম্বন্ধে বলেন,—Here we have an instance of the ingenious puerility which often characterizes Hindu speculations.
(৪) সকল দর্শনেই গুণত্রয়ের অস্তিত্ব স্বীকার করে নাই।