নবম পরিচ্ছেদ
কার্তিক মাস যায় যায়। একটু শীত পড়িয়াছে। সুরেন্দ্রনাথের উপরের ঘরে জানালার ভিতর দিয়া প্রাতঃসূর্যালোক প্রবেশ করায় বড় মধুর বোধ হইতেছে। জানালার কাছে অনেকগুলি বাঁধা-খাতা ও কাগজপত্র লইয়া টেবিলের এক পাশে সুরেন্দ্রনাথ বসিয়াছিলেন; আদায়-উসুল, বাকি-বকেয়া, জমা-খরচ, বন্দোবস্ত, মামলা-মকদ্দমার নথিপত্র সব একে একে উল্টাইয়া দেখিতেছিলেন। এসব দেখাশুনা একরকম আবশ্যকও হইয়া পড়িয়াছিল এবং না হইলে সময়ও কাটে না। শান্তির সহিত এ জন্য অনেকখানি ঝগড়া করিতে হইয়াছিল। অনেক করিয়া তবে তাহাকে সে বুঝাইতে পারিয়াছিল যে, অক্ষরের পানে চাহিলেই মানুষের বুকের ব্যথা বাড়িয়া যায় না, কিংবা তৎক্ষণাৎ ধরাধরি করিয়া তাহাকে বাহিরে লইয়া যাইবার প্রয়োজন হয় না। অগত্যা শান্তি স্বীকার করিয়াছে এবং আবশ্যকমত সাহায্যও করিতেছে।
আজকাল স্বামীর উপর তাহার পুরা অধিকার–তাহার একটি কথাও অমান্য হয় না। কোন দিনই হয় নাই, শুধু পাঁচজন হতভাগা ইয়ার-বন্ধু মিলিয়া দিন-কতক শান্তিকে বড় দুঃখ দিতেছিল। স্ত্রীর আদেশে সুরেন্দ্রের বাহির-বাটীতে পর্যন্ত যাওয়া নিষিদ্ধ হইয়াছে। ডাক্তার মহাশয়ের পরামর্শ ও উপদেশ শান্তি প্রাণপণে খাটাইয়া তুলিবার আয়োজন করিয়াছে।
এইমাত্র সে কাছে বসিয়া রাঙ্গা ফিতা দিয়া কাগজের বান্ডিল বাঁধিতেছিল। সুরেন্দ্রনাথ একখানা কাগজ হইতে মুখ তুলিয়া সহসা ডাকিলেন, শান্তি!
শান্তি কোথায় গিয়াছিল–কিছুক্ষণে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, ডাকছিলে?
হাঁ, আমি একবার কাছারিঘরে যাব।
না। কি চাই বল, আমি আনিয়ে দিচ্চি।
কিছু চাই না, একবার মথুরবাবুর সঙ্গে দেখা করব।
তাঁকে ডাকিয়ে পাঠাই, তোমাকে যেতে হবে না। কিন্তু, এমন সময় তাঁকে কেন?
বলে দেব যে অগ্রহায়ণ মাস থেকে তাঁকে আর কাজ করতে হবে
না।
শান্তি বিস্মিত হইল; কিন্তু সন্তুষ্ট হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, তাঁর অপরাধ?
অপরাধ যে কি, তা এখন ঠিক বলতে পার্চি না, কিন্তু বড় বাড়াবাড়ি কর্চেন। তাহার পর আদালতের সার্টিফিকেট ও কয়েকখানা কাগজপত্র দেখাইয়া কহিলেন, এই দেখ, গোলাগাঁয়ে একজন বিধবার ঘর-বাড়ি সমস্ত বেনামী নিলামে খরিদ করে নিয়েচে। আমাকে একবার জিজ্ঞাসাও করেনি।
শান্তি দুঃখিত হইয়া কহিল, আহা বিধবা? তবে এ কাজটা ভাল হয়নি–কিন্তু বিক্রি হল কেন?
দশ বৎসরের খাজনা বাকি ছিল; সুদে-আসলে দেড়-হাজার টাকার নালিশ হয়েছিল।
টাকার কথা শুনিয়া শান্তি মথুরনাথের প্রতি একটু নরম হইয়া পাড়িল। মৃদু হাসিয়া কহিল, তা ম্যানেজারবাবুর বা দোষ কি? অত টাকা কেমন করে ছেড়ে দেন?
সুরেন্দ্রনাথ অন্যমনস্ক হইয়া ভাবিতে লাগিল । শান্তি প্রশ্ন করিল, অত টাকা ছেড়ে দেবে?
দেব না ত কি, অসহায় বিধবাকে বাড়ি-ছাড়া করব? তূমি কি পরামর্শ দাও?
কথাটার ভিতর যতটুকু জ্বালা ছিল, সবটুকু শান্তির গায়ে লাগিল। অপ্রতিভ হইয়া দুঃখিতভাবে সে বলিল, না, বাড়ি-ছাড়া করতে বলি না। আর তোমার টাকা তুমি দান করবে, আমি তাতে বাধা দেব কেন?
সুরেন্দ্র হাসিয়া কহিলেন, সে নয় শান্তি, আমার টাকা কি তোমার নয়? কিন্তু বল দেখি, আমি যখন না থাকব, তখন তুমি–
ও কি কথা–
তুমি–আমি যা ভালবাসি, তা করবে ত?
শান্তির চোখে জল আসিল, কেন না, স্বামীর শারীরিক অবস্থা ভাল নহে, বলিল, ও কথা কেন বল?
বড় ভাল লাগে, তাই বলি। তুমি, আমার কথা, আমার সাধ ইচ্ছা জেনে রাখবে না শান্তি?
শান্তি চক্ষে অঞ্চল দিয়া মাথা নাড়িল।
কিছুক্ষণ পরে সুরেন্দ্র পুনরায় কহিলেন, আমার বড়দিদির
নাম।
শান্তি অঞ্চল সরাইয়া সুরেন্দ্রের মুখপানে চাহিল।
সুরেন্দ্র একখানা কাগজ দেখাইয়া বলিলেন, এই দেখ, আমার বড়দিদির নাম।
কোথায়?
এই দেখ, মাধবী দেবী যাঁর বাড়ি নিলাম হয়েছে।
একমুহূর্তে শান্তি অনেক কথা বুঝিল। কহিল, তাই বুঝি সমস্ত ফিরিয়ে দিতে চাইছ?
সুরেন্দ্র ঈষৎ হাসিয়া উত্তর দিলেন, তাই হলে নিশ্চয় ফিরিয়ে দেব–সমস্ত–সব!
মাধবীর কথায় শান্তি একটু দুঃখিত হইয়া পড়িল; ভিতরে বোধ হয় একটু হিংসার ভাব ছিল। কহিল, তিনি হয় ত তোমার বড়দিদি নন। শুধু মাধবী নাম আছে। নামেতেই এই!
বড়দিদির নামের একটু সম্মান করব না?
তা কর, কিন্তু তিনি নিজে কিছু জানতে পারবেন না।
তা পারবেন না–কিন্তু আমি কি অসম্মান করতে পারি?
নাম ত এমন কত লোকের আছে।
আছে! তুমি দুর্গা নাম লিখে তাতে পা দিতে পার?
ছি! ও-কি কথা? ঠাকুর-দেবতার নাম নিয়ে–
সুরেন্দ্রনাথ হাসিয়া উঠিলেন, আচ্ছা, ঠাকুর-দেবতার নাম নাই নিলাম, কিন্তু তোমাকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারি, যদি একটি কাজ করতে পার।
শান্তি উৎফুল্ল হইয়া কহিল, কি কাজ?
দেয়ালের গায়ে সুরেন্দ্রনাথের একটি ছবি ছিল, সেই দিকে দেখাইয়া দিয়া বলিলেন, এই ছবিটি যদি–
কি?
চারিজন ব্রাহ্মণ দিয়ে নদীর তীরে পোড়াতে পার।
অদূরে বজ্রাঘাত হইলে লোকের যেমন প্রথমে সমস্ত রক্ত নিমেষে সরিয়া যায়, মুখখানা সর্পদষ্ট রোগীর মত নীলবর্ণ হইয়া থাকে, শান্তির প্রথমে সেইরূপ অবস্থা হইল। তাহার পর ধীরে ধীরে মুখে-চোখে রক্ত ফিরিয়া আসিল–তাহার পর করুণ দৃষ্টিতে স্বামীর মুখপানে চাহিয়া সে নিঃশব্দে নীচে নামিয়া গেল। পুরোহিত ডাকাইয়া রীতিমত শান্তিস্বস্ত্যয়নের
ব্যবস্থা করিয়া রাজার অর্ধেক রাজত্ব মানত করিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিল যে, এই বড়দিদি যিনিই হউন, ইহাঁর সম্বন্ধে সে আর কোন কথা কহিবে না । তাহার পরে ঘরে দ্বার দিয়া বহুক্ষণ ধরিয়া সে অশ্রুমোচন করিল। এ জীবনে এমন কটু কথা সে আর কখনও শোনে নাই!
সুরেন্দ্রনাথও কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন, তাহার পর বাহিরে চলিয়া গেলেন,–কাছারিঘরে মথুরবাবুর সহিত সাক্ষাৎ হইল। প্রথমে জিজ্ঞাসা করিলেন, গোলাগাঁয়ে কার সম্পত্তি নিলাম হয়েছে?
মৃত রামতনু সান্যালের বিধবা পুত্রবধূর।
কেন?
দশ বছরের মাল-গুজারি বাকি ছিল।
কই খাতা দেখি?
মথুরানাথ প্রথমে হতবুদ্ধি হইয়া গেল; তাহার পর কহিল, খাতা-পত্র এখনও পাবনা থেকে আনা হয়নি।
আনতে লোক পাঠাও। বিধবার থাকবার স্থানটুকু পর্যন্ত রাখোনি?
বোধ হয় নেই।
তবে সে কোথায় থাকবে?
মথুরানাথ সাহস সঞ্চয় করিয়া কহিল, এতদিন যেখানে ছিল, সেখানে থাকবে বোধ হয়।
এতদিন কোথায় ছিল?
কলিকাতায়। তাহার পিতার বাটীতে।
পিতার নাম কি জান?
জানি। ব্রজরাজ লাহিড়ী।
বিধবার নাম?
মাধবী দেবী।
নতমুখে সুরেন্দ্রনাথ সেখানে বসিয়া পড়িলেন। মথুরানাথ ভাবগতিক দেখিয়া ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি হল?
সুরেন্দ্রনাথ সে কথার কোন উত্তর না দিয়া একজন ভৃত্যকে ডাকিয়া কহিলেন, একটা ভাল ঘোড়া, শীঘ্র জিন কষিতে বল–আমি এখুনি গোলাগাঁয়ে যাব। এখান থেকে গোলাগাঁ কতদূর জান?
প্রায় দশ ক্রোশ।
এখন ন’টা বেজেছে–একটার মধ্যে পৌঁছতে পারব।
ঘোড়া আসিলে তাহাতে চড়িয়া বসিয়া কহিলেন, কোন্ দিকে?
উত্তর দিকে, পরে পশ্চিমে
যেতে হবে।
তাহার পর চাবুক খাইয়া ঘোড়া ছুটিয়া বাহির হইয়া গেল।
এ কথা শুনিয়া শান্তি ঠাকুরঘরে মাথা খুঁড়িয়া রক্ত বাহির করিল,–ঠাকুর,এই তোমার মনে ছিল! আর কি ফিরে পাব!
তাহার পর দুজন পাইক ঘোড়ায় চড়িয়া গোলাগাঁ উদ্দেশে ছুঢিয়া গেল। জানালা দিয়া তাহা দেখিয়া শান্তি ক্রমাগত চক্ষু মুছিতে লাগিল–মা দুর্গা! জোড়া মোষ দেব–যা চাও, তাই দেব–তাঁকে ফিরিয়ে দাও–বুক চিরে রক্ত দেব–যত চাও–হে মা দুর্গা, যত চাও–যতক্ষণ না তোমার পিপাসা মিটে।
গোলাগাঁ পৌঁছিতে আর দুই ক্রোশ আছে। অশ্বের ক্ষুর পর্যন্ত ফেনায় ভরিয়া গিয়াছে। প্রাণপণে ধূলা উড়াইয়া, আল ডিঙ্গাইয়া,খানা টপকাইয়া ঘোড়া ছুটিয়া চলিয়াছে। মাথার উপর প্রচণ্ড সূর্য।
ঘোড়ার উপর থাকিয়াই সুরেন্দ্রের গা–বমি বমি করিয়া উঠিল; ভিতরের প্রত্যেক নাড়ী যেন ছিঁড়িয়া বাহির হইয়া পড়িবে! তাহার পর টপ্ করিয়া ফোঁটা দুই-তিন রক্ত কষ বহিয়া ধূলিধূসরিত পিরানের উপর পড়িল; সুরেন্দ্রনাথ হাত দিয়া মুখ মুছিয়া ফেলিলেন । একটার পূর্বেই গোলগাঁয়ে উপস্থিত হইলেন। পথের ধারে দোকানে জিজ্ঞাসা করিলেন,এই গোলাগাঁ?
হ্যাঁ।
রামতনু সান্যালের বাটী?
ঐ দিকে।
আবার ঘোড়া ছুটিল। অল্পক্ষণে বাঞ্ছিত বাটীর সম্মুখে দাঁড়াইল।
দ্বারেই একজন সিপাহী বসিয়াছিল; প্রভুকে দেখিয়া সে প্রণাম করিল।
বাঢীতে কে আছেন?
কেউ না।
কেউ না? কোথায় গেলেন?
ভোরেই নৌকা করে চলে গেছেন।
কোথায়–কোন্ পথে?
দক্ষিণ দিকে।
নদীর ধারে ধারে পথ আছে? ঘোড়া দৌড়তে পারবে?
বলতে পারি না। বোধ হয় নেই।
পুনর্বার ঘোড়া ছুটিয়া চলিল। ক্রোশ-দুই আসিয়া আর পথ নাই। ঘোড়া চলে না। ঘোড়া ছাড়িয়া দিয়া তখন
সুরেন্দ্রনাথ পদব্রজে চলিলেন। একবার চাহিয়া দেখিলেন–জামার উপর অনেক ফোঁটা রক্ত ধূলায় জমিয়া গিয়াছে। ওষ্ঠ বাহিয়া তখনও রক্ত পড়িতেছে। নদীতে নামিয়া অঞ্জলি ভরিয়া জল পান করিলেন, তার পর প্রাণপণে ছুটিয়া চলিলেন। পায়ে আর জুতা নাই–সর্বাঙ্গে কাদা, মাঝে মাঝে শোণিতের দাগ! বুকের উপর কে যেন রক্ত ছিটাইয়া দিয়াছে।
বেলা পড়িয়া আসিল। পা আর চলে না– যেন এইবার শুইতে পারিলেই জন্মের মত ঘুমাইয়া পড়িবে–তাই যেন অন্তিম শয্যায় এই জীবনের মহা-বিশ্রামের আশায় সে উন্মত্তের
মত ছুটিয়া চলিয়াছে। এ দেহে যতটুকু শক্তি আছে, সমস্ত অকাতরে ব্যয় করিয়া শেষশয্যা আশ্রয় করিবে, আর উঠিবে না!
নদীর বাঁকের পাশে–একখানা নৌকা না? কলমীশাকের দল কাটিয়া পথ করিতেছে! সুরেন্দ্র ডাকিল, ‘বড়দিদি ‘! শুষ্ককণ্ঠে শব্দ বাহির হইল না–শুধু দুই ফোঁটা রক্ত বাহির হইল।
‘বড়দিদি ‘– আবার দুই ফোঁটা রক্ত ।
কলমীর দল নৌকার গতি রোধ করিতেছে। সুরেন্দ্রর কাছে আসিয়া পড়িল।
আবার ডাকিল, ‘বড়দিদি’।
সমস্ত দিনের উপবাস ও মনঃকষ্টে মাধবী নির্জীবের মত নিদ্রিত সন্তোষকুমারের পার্শ্বে চক্ষু মুদিয়া শুইয়াছিল। সহসা কানে শব্দ পোঁছিল : পুরাতন পরিচিত স্বরে–কে ডাকে না!
মাধবী উঠিয়া বসিল। ভিতর হইতে মুখ বাড়াইয়া দেখিল। সর্বাঙ্গে ধূলা-কাদা-মাখা–মাষ্টারমহাশয় না?
ও নয়নতারার মা, মাঝিকে শীগগির নৌকা লাগাতে বল্।
সুরেন্দ্রনাথ তখন ধীরে ধীরে কাদার উপর শুইয়া পড়িতেছিলেন।
সকলে মিলিয়া সুরেন্দ্রনাথকে ধরাধরি করিয়া নৌকায় তুলিয়া আনিল। মুখে-চোখে জল দিল। একজন মাঝি চিনিত, সে কহিল, লাল্তাগাঁয়ের জমিদার। মাধবী ইষ্ট-কবচসুদ্ধ স্বর্ণহার কন্ঠ হইতে খুলিয়া লইয়া তাহার হাতে দিয়া বলিল, লাল্তাগাঁয়ে
এই রাত্রে পৌছঁতে পার? সবাইকে এক-একটা হার দেব।
সোনার হার দেখিয়া তাহাদের মধ্যে তিনজন গুণ ঘাড়ে লইয়া নামিয়া পড়িল।
মাঠাকরুন, চাঁদনি রাত; ভোর নাগাদ পৌঁছে দেব।
সন্ধ্যার পরে সুরেন্দ্রনাথের জ্ঞান হইল। চক্ষু মেলিয়া তিনি মাধবীর মুখপানে চাহিয়া রহিলেন! মাধবীর মুখে এখন অবগুন্ঠন নাই, শুধু কপালের কিয়দংশ অঞ্চলে ঢাকা। ক্রোড়ের উপর সুরেন্দ্রর মাথা লইয়া মাধবী বসিয়াছিল।
কিছুক্ষণ চাহিয়া সুরেন্দ্র কহিল, তুমি বড়দিদি?
অঞ্চল দিয়া মাধবী সযত্নে তাহার ওষ্ঠ-সংলগ্ন রক্তবিন্দু মুছাইয়া দিল, তাহার পর আপনার চোখ মুছিল।
তুমি বড়দিদি?
আমি মাধবী।
সুরেন্দ্রনাথ চক্ষু মুছিয়া মৃদুস্বরে বলিলেন, আঃ–তাই!
বিশ্বের আরাম যেন এই ক্রোড়ে লুকাইয়াছিল। এতদিন পরে সুরেন্দ্রনাথ তাহা খুঁজিয়া পাইয়াছেন। অধরের কোণে সরক্ত হাসি তাই ফুটিয়া উঠিয়াছে–বড়দিদি, যে কষ্ট!
তর্তর্ ছল্ছল্ করিয়া নৌকা ছুটিয়াছে। ছইয়ের ভিতর সুরেন্দ্রের মুখের উপর চাঁদের কিরণ পড়িয়াছে। নয়নতারার মা একটা ভাঙ্গা পাখা লইয়া মৃদু মৃদু বাতাস করিতেছে। সুরেন্দ্রনাথ ধীরে ধীরে কহিলেন, কোথায় যাচ্ছিলে?
মাধবী ভগ্নকণ্ঠে কহিল, প্রমীলার শ্বশুরবাড়ি।
ছিঃ–এমন করে কি কুটুমের বাড়ি যেতে আছে দিদি?