অধ্যায় আট – সময় : ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
শান্তির মঠ, লাসা, তিব্বত
দুজনার প্রথম সাক্ষাটা কোনোদিকে মোড় নিচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছে না শামান।
দুজনেই দুজনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শামান একবার মানুষটার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু, ওর মনে হলো সেটা হাসির চেয়ে মুখ ভেংচানো হলো বেশি। সামনে বসে থাকা মানুষটার উচ্চতা হবে ওর থেকে এক ফুট কম। কিন্তু মানুষটা চওড়ায় ওর থেকে ঠিক দ্বিগুণের বেশি হবে। শামান একটু ঘাড় বেঁকিয়ে মানুষটার বাম পাশের কান দেখার চেষ্টা করল কিন্তু কালো লম্বা চুলে দুই পাশের কানই ঢেকে আছে তাই সেটা সম্ভব হলো না।
‘হে হে শামান, তোমার চুলগুলা তো এহনো দেহি আগের মতোই আছে,’ বলে বিধু নামের মানুষটা বড়ো এক টুকরো রুটি মুখে পুরে দিল। সেইসঙ্গে সামনের বাটিতে স্তূপ করে রাখা সিদ্ধ সবজি থেকে অনেকটা পুরে দিল মুখে। সেগুলোকে সামলে নিয়ে বলে উঠল। ‘তোমার চুলগুলা কেমুন জানি মরচা পইড়া নষ্ট অওয়া লুহার মাতোন দেহায়। হে হে,’ বলে মানুষটা আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়ল তার খাবার নিয়ে।
বিধুর কথা শুনে শামান রাগ হবে নাকি ঠিক বুঝতে পারল না। সে একবার অসহায়ভাবে পাশে বসে থাকা নোরবুর দিকে তাকাল। নোরবু হাত নেড়ে ওকে শান্ত থাকতে বলল। বিধু, তুমি তো আশা করি জানো পরিস্থিতি কি,’ বলে নোরবু আরো যোগ করল। ‘আর কেনই বা ডেকে পাঠানো হয়েছে তোমাকে।’
শামান, নোরবু আর বিধু নামের মানুষটা এই মুহূর্তে বসে আছে মঠের বড়ো রসুই ঘরের এক প্রান্তে। একটু আগে শামানকে নিয়ে নোরবু চলে আসে রসুইতে। সেখানে পৌঁছে দেখে বিধু এরমধ্যেই খেতে বসে গেছে।
‘হুম,’ নোরবুর প্রশ্নের জবাবে বিধু শুধু একটু মাথা নাড়ল। আস্তে করে সে থুকপার বাটিটা তুলে নিয়ে পুরোটাই ঢক ঢক করে চালান করে দিল গলায়। খাওয়া শেষ করে মস্ত একটা ঢেকুর তুলে বাম হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে সে একটা হাসি দিল ওদের দুজনার দিকে তাকিয়ে। ‘আহ্, যা ক্ষুধা পাইছিল। হুম, আমি জানি। কুনো বিষয় না। আমারে ভালো তির-ধনুক দেন। সব মাইরা সাফ কইরা ফেলাব,’ বলে সে আবারো একটা হাসি দিয়ে মাখন চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে তাতে চুমুক দিল।
শামান কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই নোরবু আবারো হাত নেড়ে ওকে মানা করল। ‘বিধু, তোমার তাহলে কন্নোরে যেতে কোনো আপত্তি নেই?’
‘না না, ডুকপা লামা বিপদে আর আমি চুপচাপ বইসা থাকব এইটা হয়?’ বলে সে মঠের শিক্ষানবীশ এক ছেলেকে ডাক দিল। ‘এই যে ভাই, আরেকটু চা এনে দাও না। এত অল্পে হয়, কও দেহি!’
‘শামান যদি তোমার সঙ্গে যায় তবে তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?’ নোরবু জানতে চাইল।
নোরবুর প্রশ্ন শুনে বিধু একটু অবাক হয়ে তাকাল নোরবুর দিকে। তারপর শামানকে দেখল। ‘ওহ, তাইলে তো ভালাই হয়। কিন্তু ও মারামারি পারে তো— নাকি? যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে ওর? নাকি সব আমারই করা লাগব। আমি কিন্তু বাপু তোমারে বোঝার মতো টানতে পারব না,’ বলে সে মাথা নাড়তে লাগল।
শামান নোরবুর দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে কাঁধ ঝাঁকাল।
‘ঠিক আছে, তাহলে তো কোনো ঝামেলাই রইল না,’ শামানের দিকে তাকিয়ে দ্রুত বলে উঠল নোরবু। ‘এখন চলো তোমাদের আমি এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, ওরা দুজনেই উঠে দাঁড়িয়ে নোরবুকে অনুসরণ করতে লাগল। নোরবু ওদের নিয়ে মঠের নিচে একেবারে পাতালে চলে এলো। পুরো মঠটাই পাহাড় কেটে নির্মিত, তাই এর একেবারে অভ্যন্তরে একটা অংশ আছে যেটা পাহাড়ের একেবারে পাদদেশে চলে গেছে। ওরা দুজনেই নোরবুর পেছন পেছন হাঁটছে আর অবাক হয়ে দেখছে মঠের নিচে আরেক জগৎ।
‘কি অবস্থা, এই মঠে এত বছর থাকছি অথচ এইটার তলে এইরহম কিছু আছে ভাবতেও পারি নাই,’ বিধু অবাক হয়ে বলে উঠল। শামান মুখে না বললেও মনে-মনে ভাবল বিধু ভুল বলেনি।
নোরবু ওদের নিয়ে একেবারে পাতালে এসে একটা লোহার তৈরি বড়ো দরজার সামনে থামল। দরজার বাইরের কবজাতে আটকানো হাতের কবজির মতো মোটা শিকলটা ধীরে ধীরে খুলে ফেলল। তারপর শক্ত করে ঠেলে ফাঁক করে দিল লোহার ভারী দরজাটা।
তিনজনে মিলে ভেতরে প্রবেশ করতেই শামান শুনতে পেল—ওর পাশ থেকে বিধু বিস্ময়সূচক শব্দ করে উঠল। ও নিজেও কম অবাক হয়নি কামরাটা দেখে। ওদের এই শান্তির মঠের নিচে এরকম একটা কামরা আছে তাও আবার এরকম সংগ্রহসহ এখানে না এলে জীবনে কোনোদিন মানতেও পারত না শামান।
প্রথমেই যে-ব্যাপারটা অবাক করছে ওদেরকে সেটা হলো পাহাড়ের একেবারে ভেতরে পাতালে হবার পরও কামরার ভেতরটা বেশ আলোকিত। কোথাও প্ৰদীপ বা মশাল জ্বলার কারণে এই আলো আসছে, ব্যাপারটা এমন নয়। বরং আলোটা আসছে প্রাকৃতিক কোনো উৎস থেকে। শামান অনুমান করল সম্ভবত পাহাড়েরই ফাঁক-ফোকড় দিয়ে এমন কোনো ব্যবস্থা করা আছে যাতে প্রাকৃতিক আলো দিনের বেলা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
‘তোমরা শান্তির মঠের ইতিহাস কতটুকু জানো আমি জানি না। তবে এই শান্তির মঠের যে বাহ্যিক আকৃতি তোমরা এখন দেখতে পাও—এই কাঠামো তৈরির ইতিহাস কিন্তু মোটেও শান্তির কিছু নয়। রাজা ভূমি ও রাজা মহীশূড় যারা মঠ স্থাপণের জন্যে এই দুর্গটা আমাদের দান করেন তার দাদার বাবা স্থাপন করেছিল এই দুর্গটা। চৈনিক দেশ-তিব্বত-আর ভারতবর্ষের সংযোগস্থলের এই জায়গাটা ছিল তার রাজ্য নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার। উনি ছিলেন ভয়ংকর অত্যাচারি মানুষ। তারই বংশধরেরা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পর দুর্গে এই মঠ স্থাপন করা হয়। কিন্তু তার কিছু সংগ্রহ রাজার অনুরোধেই রেখে দেয়া হয় পাতালের এই তালাবদ্ধ কামরায়। সেটারই একটা অংশ তোমরা দেখতে পাচ্ছো এই মুহূর্তে,’ বলে নোরবু একটা ছোটো লাঠির মতো জিনিস তুলে নিয়ে মাথার ওপরে গোল চাকতির মতো দেখতে সোনালি রঙের একটা জিনিসে বাড়ি মারল।
সঙ্গে সঙ্গে সোনালি রঙের গোল ধাতব চাকতির মতো দেখতে জিনিসটা একটু শব্দ করে খানিকটা ঘুরে গেল। বাইরে থেকে আসা অলোটা ধাতব চাকতিতে প্রতিফলিত হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেটা ছড়িয়ে পড়ল অন্যদিকে, সেখানে আরেকটা চাকতির ওপরে গিয়ে পড়ল। সেটা থেকে আরেকটা। কয়েক মুহূর্তের ভেতরে গুহার মতো পুরো কামরাজুড়ে বিশটার মতো এরকম চাকতিতে ছড়িয়ে পড়ল সোনালি আলো। ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল পুরো কামরা
আর যা দেখল তাতে এমনকি শামান আর বিধুর মতো যোদ্ধারও গা শিউরে উঠল।
জায়গাটাকে কামরা না বলে গুহা বলাটাই শ্রেয়-পুরো গুহাটাই আসলে একটা অস্ত্রাগার। গুহাটা অনেকটা মোটা একটা গলির মতো। সোজা সামনের দিকে এগিয়ে শেষ মাথায় একটু ডানে বাঁক নিয়েছে। সোনালি চাকতিগুলো থেকে ছড়ানো আলোয় যা দেখতে পাচ্ছে সেটা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
শামান খেয়াল করে দেখল ওর জানামতে এমন কোনো ধরনের অস্ত্র নেই যা এখানে দেখতে পাচ্ছে না ওরা। অসংখ্য ধরনের কাতানা, কুকরি, কোঁচ, জোয়ালা, বাটালসহ হরেক রকমের তির-ধনুক, বর্শা—এমন কোনো ধরনের অস্ত্র নেই যা এখানে নেই। সারি দিয়ে রাখা ঝকঝকে চকচকে অস্ত্রগুলোতে আনমনেই হাত বোলাতে বোলাতে সামনে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা। ওর পাশ থেকে ভেসে আসা নানা ধরনের বিস্ময়সূচক শব্দে বুঝতে পারছে বিধুরও একই অবস্থা।
‘তোমাদেরকে রাজা মহীশূড়ের বিশেষ অস্ত্রাগারে নিমন্ত্রণ। প্রাচীন চৈনিক দেশ, তিব্বত আর মোঙ্গল দেশে পাওয়া যায় এমন কোনো অস্ত্র নেই যা এখানে নেই, ‘ নোরবু বলে উঠল।
‘এইজন্যেই,’ শামানের পাশ থেকে বিধু বলে উঠল। ‘ছোটোবেলা থেইকে যহনি মঠে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ হইতো সেইগুলা কই থেকে আইতো এইটা নিয়া আমার মনে বরাবরই প্রশ্ন আছিল,’ বলে সে শামানের দিকে দেখল একবার। আইজ বুজলাম ওইগুলা কই থেইকে আইতো।’
শামান এক জায়গা থেকে চেইনের সঙ্গে আটকানো একটা লোহার বল তুলে নিল। চেইনটা তুলে ঝাঁকি দিতেই বলের মসৃণ উপরিতল থেকে এক ঝাঁক লোহার কাঁটা বেরিয়ে এলো। মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলটা রেখে দিল ও। ‘এমন কোন ধরনের অস্ত্র আছে যা নেই এখানে?’ প্রশ্নটা ও করেছে নোরবুর উদ্দেশে।
ওর প্রশ্ন শুনে হেসে উঠল নোরবু। আনমনেই হাত নেড়ে বলে উঠল, ‘এসব বাদ দাও। যে জিনিসটা দেখানোর জন্যে তোমাদের এখানে নিয়ে এসেছি সেটা দেখাই চলো,’ বলে সে অস্ত্রাগারের শেষ মাথার বাঁকটার দিকে রওনা দিল। বাঁকের অন্যপাশে চলে এলো সে। তাকে অনুসরণ করে সেদিকে এগোল শামান আর বিধুও। জায়গামতো পৌঁছে শামানরা বুঝতে পারল অস্ত্রাগারের এই বিশেষ জায়গাটাতে শুধু বিশেষ ধরনের অস্ত্রগুলোকেই রাখা হয়ে থাকে। এখানকার প্রতিটি জিনিস আকৃতি আর বৈশিষ্ট্যে যেন এক অদ্ভুত আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।
‘এটা দেখো,’ বলে নোরবু একটা কাঠের কারুকাজ করা বাক্সের সামনে এসে থামল। কালো রঙের কাঠের বাক্সটার গায়ে সুন্দর কারুকাজ করা। তবে কাঠের রং আর কারুকাজের আকৃতি যতই সুন্দর হোক না কেন, সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে জিনিসটা অনেক পুরনো।
নোরবু বাক্সটার সামনে গিয়ে ওটার একপাশে লাগানো হুড়কোটা খুলে ডালাটা তুলে দিল। শামান আর বিধু দুজনেই বেশ কৌতূহল নিয়ে ফিরে তাকাল ওটার ভেতরে। কিন্তু ভেতরে তাকিয়ে যেন একটু হতাশই হলো শামান। ভেতরে বেশ সাধারণ দেখতে দুটো চামড়ায় মোড়ানো কাতানা—মানে এক ধরনের তলোয়ার পাশাপাশি রাখা। নোরবু দুটো কাতানার একটা হাতে তুলে শামানের দিকে ফিরে তাকাল। ‘শামান, তুমি হয়তো অনেক অস্ত্র দেখতে পাচ্ছো এখানে। কিন্তু ইতিহাস, ঐতিহ্য, আভিজাত্য আর গঠন বৈশিষ্ট্যে এগুলোর কোনোটাই এই জোড়া কাতানার সামনে কিছুই নয়।’
‘এইগুলা?’ বেশ অবাক হয়ে শামানের পাশ থেকে বিধু বলে উঠল। ‘এইগুলা তো কেমন জানি পুরান লাগতাছে।’
তার কণ্ঠস্বরেই বোঝা যাচ্ছে সে বেশ হতাশ হয়েছে ও দুটো দেখে।
বিধুর কথা শুনে হেসে উঠল নোরবু। ‘তুমি যতটা সাধারণ ভাবছো জিনিস দুটো ততোটা সাধারণ নয়। তবে হ্যাঁ, এগুলো বেশ পুরনোই বটে। কেন সেটাও বলছি,’ বলে সে একহাতে কাতানার খাপটা ধরে অন্যহাতে চামড়ার ফালি দিয়ে মোড়ানো বাঁটে ধরে টান দিল। চামড়ার কারুকাজ করা খাপের ভেতর থেকে লোহার টুকরোটা বেরিয়ে আসার পর শামান প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না। কিন্তু জিনিসটার দিকে ভালোভাবে তাকাতেই ওর অভিজ্ঞ চোখ ঝিঁকিয়ে উঠল। অনেকটা মুগ্ধ হয়েই সে নিজের হাতে তুলে নিল কাতানাটা। হাতে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেক দফা মুগ্ধ হয়ে গেল ও।
প্রথম দেখায় প্রেম না হলেও, প্রথমবার হাতে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে প্রেমে পড়ে গেল জিনিসটার। তবে ও কিছু বলার আগেই পাশ থেকে নোরবু বলে উঠল, ‘আশা করি হাতে নেয়ার পর তুমি বুঝতে পারছো জিনিসটা একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির।
ভিন্ন তো অবশ্যই, শামান মনে মনে বলে উঠল। কারণ সব লোহার কাতানা যেখানে হয় চক চকে সাদা এটা একেবারেই কুচকুচে কালো। তবে এটার ধারালো প্রান্তের ঠিক আগে অদ্ভুত এক চকচকে সোনালি আবহ বিদ্যমান, এরকম এর আগে কখনো দেখেনি শামান। এ ছাড়া কাতানার মাথা সাধারণত হয় ভোঁতা, কিন্তু এটার মাথা একদিকে চোখা। তবে এগুলোর কোনোটাই শামানকে অবাক করেনি, যতটা অবাক করেছে এর ওজন। একবারেই পালকের মতো হালকা জিনিসটা। ‘এটা…এটা এত হালকা কেন? মানে কিভাবে?’ বেশ অবাক হয়ে নোরবুর কাছে জানতে চাইল সে।
‘এর কারণ জিনিসটা সাধারণ কোনো লোহায় তৈরি নয়। কথিত আছে রাজা মহীশূড়ের পূর্বপুরুষরা নাকি হিমালয়ের পাদদেশে পাওয়া এক উল্কাপিণ্ড থেকে সংগ্রহ করা লোহা থেকে তৈরি করেছিল এই বিশেষ তলোয়ার। আর তাই এটার বৈশিষ্ট্যও একেবারে আলাদা। আকৃতি অনুযায়ী অস্বাভাবিক হালকা, কখনো ভাঙে না, বাঁকা হয় না এমনকি ধারও করতে হয় না একে। পৃথিবীর বুকে পাওয়া যেকোনো আকরিক ধাতুর চেয়ে শক্ত এটা। একেবারেই ব্যতিক্রম এই ধাতু। এই জোড়া কাতানাতে যতটুকু ব্যবহৃত হয়েছে এই ধাতু এর বাইরে নাকি আর কিছুটা আছে শুধু উরগ নামে এক সর্পপূজারি জাতির কাছে। আর নাকি কোথাও নেই এই ধাতু,’ বলে লামা নোরবু থামল।
‘রাজা মহীশূড়ের পূর্বপুরুষরা এই তিব্বত আর হিমালয়ে নিজেদের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার পেছনে নাকি এই তলোয়ারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তবে রাজা মহীশূড়দের পরবর্তী বংশধরেরা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে শান্তির পথে আসার সময় সে নাকি এই তলোয়ার গৌতম বুদ্ধকে উৎসর্গ করে একে চিরতরে এই অস্ত্রাগারে রেখে দেন। আর তাই এই কাতানা জোড়ার একটা বিশেষ নাম আছে,’ বলে নোরবু একটু থেমে যোগ করল। ‘স্বয়ং বুদ্ধ নাকি এই নাম দিয়েছিলেন। কথিত আছে রাজা মহিশূড়ের পূর্বপুরুষদের একজনের হয়ে এক অন্ধকারের দেবতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন নাকি বুদ্ধ। এই জোড়া কাতানা দিয়ে উনি অন্ধকারের সেই দেবতাকে পরাজিত করে এর বিশেষ গুণাবলির জন্যে স্বয়ং বুদ্ধ এই জোড়া কাতানাকে নাম দিয়েছিলেন ‘হিম্বা’।’
বলে লামা নোরবু জোড়া কাতানা নিজের হাতে তুলে নিয়ে সে দুটোকে শামানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল, ‘বৃহত্তর হিমালয়ে শান্তি নামিয়ে আনতে এই ‘জোড়া হিম্বা’কে একবার দাফন করা হয়েছিল। আমি একে সেই বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। যাতে করে তুমি এটা দিয়ে আরেকবার শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারো। সেইসঙ্গে ফিরিয়ে আনতে পারো ডুকপা লামাকে, বলে সে অস্ত্র জোড়া তুলে দিল শামানের হাতে।