অধ্যায় তিপ্পান্ন – বর্তমান সময়
আম্বরখানা, সিলেট
‘তানভীর, তুমি ঠিক আছো?’ অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভ করতে থাকা জালাল ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে ঝিমোতে থাকা তানভীরকে উদ্দেশ্য করে জানতে চাইল। ‘হুম?’ ঝট করে সোজা হয়ে বসে তানভীর। একবার বাইরে দেখল তারপর জালালের দিকে ফিরে সামান্য মাথা নেড়ে আবারো বাইরে ফিরে তাকাল।
রাত শেষ, তবে ভোরের আলো ফুটতে এখনো বেশ দেরি আছে। ছোটোবেলায় তানভীর নানির মুখে নানা ধরনের কিসসা শোনার সময়ে কখন যেন শুনেছিল দিনের দুটো সময় খুব অশুভ। বিকেল আর সন্ধের সন্ধিক্ষণে একটা সময় থাকে যখন দিনের আলো শেষ হয়ে গিয়ে সন্ধের অন্ধকার ফুটে ওঠে। আরেকটা সময় হলো, ভোরবেলা যখন রাতের আঁধার শেষ হয়ে গিয়ে সকালের আলো ফুটে ওঠে। এই দুটো সময়ে অন্ধকার নাকি সবচেয়ে গাঢ় হয়, এই দুটো সময়ে পৃথিবীর সব অশুভ শক্তি নাকি একসঙ্গে মুক্তি পায়। তবে এসব কথা কখনোই বিশ্বাস করেনি তানভীর, আজো করে না। বরং এই মুহূর্তে শারীরিকভাবে নিঃশেষিত মনে হলেও মনের কোণে বিস্মিত এক আনন্দ ভর করেছে ওর।
লঞ্চের ডেকে শেখারভের সঙ্গে মারামারির পরে প্রায় তিন ঘণ্টার মতো সময় পার হয়েছে। জালাল, সুলতান আর ইকবালের জন্যে সময়টা খুব ব্যস্ততার হলেও তানভীরের জন্যে সময়টা একরকম ফ্রি ছিল। শেখারভ মারা যাবার পর সুলতান আবারো ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোস্টগার্ডকে একেবারে সঠিক লোকেশন জানাতেই একটু পরেই তারা কয়েকটা স্পিডবোট আর নিজেদের লঞ্চ নিয়ে এসে ওদের লঞ্চটাকে ঘিরে ফেলে।
ওরা নিজেরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর যে কয়জন মারা গেছে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করাসহ লঞ্চের সারেং ও বাকিদেরেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল—সেটা ওদেরকে জেরা করে বের করা হবে। টেড চ্যাঙের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি, সম্ভবত স্রোতের টানে সেটা অন্যদিকে চলে গেছে। তাকে খোঁজার জন্যে লোক লাগানো হয়েছে। তবে ওদিককার ব্যাপারগুলো সামলানোর পর সুলতান আর ইকবালকে কোস্টগার্ডের সঙ্গে দায়িত্ব দিয়ে জালাল আর তানভীর শেখারভের মৃতদেহ অর ব্ল্যাক বুদ্ধার বাক্সটা নিয়ে তানভীরের নির্দেশে জালাল আর ও যাচ্ছে শাহী ঈদগাহের ল্যাবে।
তানভীরের পরিকল্পনা হলো, শেখারভের মৃতদেহ পুলিশ কিংবা ইএএফের হাতে দেয়ার আগে নিজেরা পরীক্ষা করে দেখতে চায়। আর সেই সঙ্গে ব্ল্যাক বুদ্ধা রাখা বাক্সটাও খোলেনি কিংবা ওটা উদ্ধার হয়েছে এটাও কাউকে জানায়নি। ওরা তীরে আসার পরে একটা পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়ে সেটাতে মৃতদেহ আর বাক্সটা তুলে নিয়ে জালাল আর ও চলেছে ল্যাবের দিকে।
‘শেখারভের দেহ আর ব্ল্যাক বুদ্ধার ব্যাপারে তুমি কাউকে কিছু জানালে না, পুলিশ বাদই দিলাম ইএএফকে তো অন্তত জানানো উচিত ছিল, নাকি?’ ড্রাইভ করতে করতে আনমনেই বলে উঠল জালাল।
‘হুম,’ বলে তানভীর লম্বা হাইম ছাড়ল। ওর হাতে একটা চিকন ছুরি-যেটাকে স্টিলেটো বলে। টাইটানিকে মারামারির সময়ে শেখারভ ওটা ডেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। পরে তানভীর খুঁজে বার করে নিয়ে এসেছে। স্টিলেটোটা বাঁ হাতে নিয়ে ডান হাতের আঙুল দিয়ে ভ্রুর ওপরে কাটা জায়গার ব্যান্ডেজটা আলতো করে পরীক্ষা করে দেখল তানভীর।
‘খবরটা এখুনি চাউর করতে চাচ্ছি না কয়েকটা কারণে। প্রথমত, ওই বাক্সের ভেতরে আদৌ ব্ল্যাক বুদ্ধা আছে কি না এটা তো আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই। তাই আমি আগে ডক্টর মিতায়নকে দিয়ে ওটা পরীক্ষা করাতে চাই, তারপর অথরিটিকে জানাতে চাই। যেহেতু এটা একটা সেনসিটিভ কেস কাজেই ভুল খবর এক্সপোজ না করাই বেটার হবে,’ বলে তানভীর একটু থেমে যোগ করল।
‘আরেকটা ব্যাপার, জালাল ভাই। তুমি তো জানোই ব্ল্যাক বুদ্ধা একটা অমূল্য জিনিস, আন্তর্জাতিক মার্কেটে এটার দাম কত হবে কেউই বলতে পারে না। কাজেই এই জিনিসটা যে কারো হাতে তুলে দেয়া যাবে না। ওই বাক্সের ভেতরে,’ বলে তানভীর অ্যাম্বুলেন্সের লাশের সিটের নিচে রাখা বাক্সটা দেখিয়ে বলে উঠল, ‘ব্ল্যাক বুদ্ধা যদি আসলেই থেকে থাকে ওটার ব্যাপারে কাউকেই আমি বিশ্বাস করি না। এমনকি পুলিশ কিংবা ইএএফকেও না। কাজেই বাক্সের ভেতরে ব্ল্যাক বুদ্ধাই আছে, ব্যাপারটা নিশ্চিত হবার পর ওটা আমি একমাত্র পাশা স্যারের হাতে তুলে দেব। কাজেই আগে নিশ্চিত হই, তারপর আমি কল দেব পাশা স্যারকে। কি বলো?’
‘ঠিক আছে,’ বলে জালাল অ্যাম্বুলেন্সটাকে একটানে ল্যাবের পাথর বিছানো পথ ধরে টেনে নিয়ে সোজা চলে এলো নির্মাণাধীন ল্যাবের প্রবেশ পথের কাছে। সিট থেকে বাইরে নেমে শরীর টানটান করে কয়েক দফা আড়মোড়া ভাঙল জালাল। ‘শরীরের বারোটা বেজে গেছে, জিনিসটা পাশা স্যারের হাতে তুলে দিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে,’ বলে ও পাশাপাশি হাঁটতে থাকা তানভীরের পিঠে একটা চাপড় মারল। ‘কমান্ডার, তুমি আজ যা দেখালে না, ওই রাশিয়ান দানবকে এভাবে হারিয়ে দিলে! ব্যাপারটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতাম না,’ বলে সে হেসে উঠল।
তানভীরও মৃদু হেসে রক্ত মুছল নিজের মুখ থেকে। ‘হারালাম আর কই? আপনারাই তো গুলি করে শেষ করলেন ব্যাটাকে। ব্যাপার কি, গার্ডরা কই?’ প্রবেশ পথের সুইং ডোর ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল ওরা।
‘সব ঘুমাচ্ছে,’ বলে জালাল আর তানভীর দ্রুত ইঁটতে লাগল। ‘এক অর্থে ভালোই হয়েছে। সবার অলক্ষ্যে কাজ সারতে পারব।’ দুজনে সোজা চলে এলো ডক্টর মিতায়নের কেবিনের সামনে। রিসেপশনে কেউই নেই। ডক্টরের দরজার বাইরে গার্ডটা একটু দূরে সরে ওদের দিকে পিঠ দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে আছে। গার্ডকে দেখে মৃদু হেসে উঠল জালাল।
‘বলেছিলাম না, সব ব্যাটা ঘুমাচ্ছে, চলো-প্রফেসর মিতায়ন সব শুনে খুব খুশি হবে, বেচারা তো—’ জালাল রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল, সঙ্গে তানভীরও।
ভেতরটা একেবারে অন্ধকার। এমনকি ডিম লাইটও জ্বলছে না, শুধু প্রফেসরের বিছানার কাছে বাইরের জানালা দিয়ে আসা মৃদু আলো চোখে পড়ল।
‘প্রফেসর,’ তানভীর বলে উঠল। ‘প্রফেসর মিতায়ন? অপনার জন্যে সুসংবাদ আছে। ব্ল্যাক বুদ্ধা উদ্ধার হয়েছে, সেইসঙ্গে মারা পড়েছে জেড মাস্টার আর তার সহযোগী।’
‘কে কমান্ডার নাকি?’ বিছানার কাছ থেকে ঘুম জড়ানো গলা ভেসে এলো। চাদরে মোড়ানো মানুষটা উঠে বসছে ধীরে ধীরে। উঠে বসতে বসতে সে বলে উঠল, ‘এত রাতে, ব্যাপার কি?
‘প্রফেসর ব্ল্যাক বুদ্ধা উদ্ধার হয়ে…’ তানভীর কথা শেষ করার আগেই কেবিনের বাতি ধপ করে জ্বলে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে পেছন ফিরে জালাল আর ও দেখতে পেল। দেয়ালের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কালো মুখোশধারী চারজন সশস্ত্র মানুষ। তাদের ঠিক মাঝখানে নিচু টুলে মুখ-হাত-পা বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে তিনজনকে। এর মধ্যে লায়লার কপালের পাশে পিস্তল চেপে ধরে আছে একজন মুখোশধারী।
‘আমি জানতাম কমান্ডার, আপনি পারবেন,’ আবারো কণ্ঠস্বরটা ভেসে আসতেই তানভীর আর জালাল একসঙ্গে সেদিকে ফিরে তাকাল। জালালের একটা হাত চলে গেল অস্ত্রের ওপরে। সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দে কেঁপে উঠল পুরো রুম। জালাল পেট চেপে ধরে গড়িয়ে পড়ল তানভীরের ওপরে। জালালকে সামলাতে গিয়ে ফ্লোরের ওপরে পড়ে গেল তানভীরও।
নিজেকে একটু সামলে নিয়ে জালালকে সোজা করে চেপে ধরল তার ক্ষতস্থান। হর হর করে রক্ত বেরিয়ে আসছে তার পেট থেকে। ‘প্রফেসর আপনি পাগল হয়ে গেলেন নাকি, আপনি…’ হতভম্ভ তানভীর কথা শেষ করার আগেই ডক্টর মিতায়ন বিছানা থেকে উঠে এসে, ধোঁয়া বেরুতে থাকা পিস্তলটা মাটিতে চেপে ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ওদের সামনে।
প্লিজ কমান্ডার, এরকম বি-গ্রেড হিন্দি সিনেমার নায়কদের মতো কথা বলবেন না, আপনার মতো স্মার্ট মানুষের সঙ্গে ব্যাপারটা একেবারেই যায় না,’ বলে সে ওদের সামনে দুই পা ভাঁজ করে বসে পড়ল। হাতের পিস্তল আর মুখ-চোখের অভিব্যক্তি বাদ দিলে তার পরনে সেই আগের পোশাক, একই মানুষ। কিন্তু সেটা পুরোপুরিই বদলে গেছে। আগের সেই ভদ্র চোখ আর অসহায় অভিব্যক্তির জায়গা দখল করেছে হিংস্র এক জোড়া কালো চোখের মণি আর মুখের নগ্ন উল্লসিত অভিব্যক্তি। ‘আর প্লিজ দয়া করে প্রফেসর বলবেন না, ডক্টর বলতে পারেন কারণ ডিগ্রি তো আছেই আমার। আমি প্রফেসর নই। প্রফেসর ছিল টেড চ্যাঙ, সম্ভবত তাকে মেরে ফেলেছেন আপনারা। ভালোই হয়েছে, বেচারা ভালো মানুষটা বহুত যন্ত্রণা ভোগ করেছে আমাদের কারণে,’ বলে সে মৃদু হেসে উঠল।
‘এর মানে কি ডক্টর? টেড চ্যাঙ, টেড চ্যাঙ তো…’ তানভীরের মাথায় সব ঘোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
‘আহা, বেচারা কমান্ডার! জীবনে প্রথমবারের মতো টেবিল ছেড়ে মাঠে নেমেছে,’ মিতায়ন তার হাতের পিস্তলটা তানভীরের খুঁতনিতে চেপে ধরে ওর হাত থেকে স্টিলেটোটা কেড়ে নিল। ‘তার ওপরে প্রথম কেসেই পুরনো প্রেমিকার সঙ্গে মোলাকাত,’ বলে সে চুক চুক করে শব্দ করে উঠল মুখ দিয়ে।
‘প্রেমিকদের নিয়ে এই এক সমস্যা। এই বলদগুলোকে দিয়ে যা খুশি করানো যায়,’ বলে সে ঝট করে উঠে দাঁড়াল। ‘আরে বলদ, টেড চ্যাঙ ছিল সত্যিকারের আর্কিওলজিস্ট, সেই ছিল সত্যিকারের প্রফেসর, ব্ল্যাক বুদ্ধার ব্যাপারে জানা, তিব্বতের সেই কাতানা থেকে মেসেজ উদ্ধার করা, মোট কথা এই ব্ল্যাক বুদ্ধা অভিযান ছিল পুরোপুরি প্রফেসর টেড চ্যাঙের ব্রেইন চাইল্ড, আর আমি ছিলাম আয়োজক। কারণ আমি স্কলার নই, আমি আসলে…’
‘জেড মাস্টার,’ তানভীর হতভম্ভ হয়ে বলে উঠল। ‘তুমিই আসল জেড মাস্টার।’
‘একদম ঠিক, কমান্ডার,’ জেড মাস্টার উঠে দাঁড়িয়ে পিস্তলের নলটা চেপে ধরল তানভীরের খুলির ওপরে। ‘আমিই জেড মাস্টার। যার কোনো নাম, পরিচয় নেই, নেই কোনো চেহারা। কারণ কি জানো, আমি যখন যেখানে যে কাজ করি একেবারে নিখুঁতভাবে করি। সময় নিয়ে নিজের আলাদা পরিচয় দাঁড় করিয়ে এমনভাবে করি যেন কোনো ট্রেস না থাকে কারো। আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো অপারেশন ছিল ব্ল্যাক বুদ্ধা। আর তাই এর প্রস্তুতিও নিতে হয়েছে সেভাবে। ভার্সিটির শিক্ষক হয়ে, বিয়ে করে,’ বলে সে ফিরে তাকাল মুখ-হাত-পা বাঁধা লায়লার দিকে। ‘তবে এই ব্যাটা শেখারভ বেঈমানি না করলে সবই ঠিকমতো হতো। যাই হোক তুমি অনেক ভালো কাজ করেছো কমান্ডার। আমার এই বিরক্তিকর বিয়ে যে এত ভালো কাজে দেবে আগে বুঝতে পারিনি,’ সে লায়লার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘এই বিয়েটা নিখুঁত একটা পরিচয় দিয়েছে আমাকে, তারপর সব হারানোর পর কমান্ডারকে কাজে লাগিয়ে ব্ল্যাক বুদ্ধা উদ্ধারের জন্যেও কাজে দিয়েছে,’ বলে সে লায়লার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল।
‘তারমানে এই পুরোটা সময় তুমি আসলে…’ তানভীর খুবই অসহায় বোধ করছে। জালালের চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে। পেট দিয়ে সমানে বেরুচ্ছে রক্ত। কিছুক্ষণের ভেতরে চিকিৎসা না দিলে মারা যাবে মানুষটা।
‘এত খারাপভাবে বলো না কমান্ডার। হ্যাঁ, আমি সব সাজিয়ে পরিকল্পনা করে ব্ল্যাক বুদ্ধা উদ্ধার করে যখন শেষ হাসিটা হাসব তখন এই ব্যাটা শেখারভ আর হেকমত মিলে আমার সঙ্গে বেঈমানি করে। শেখারভ আসলে ব্ল্যাক বুদ্ধা একাই মেরে দিতে চেয়েছিল। হেকমতও তাই চেয়েছিল, ফলে দুজনে মিলে আমার সঙ্গে বেঈমানি করে প্রথমে, তারপর একে অপরের সঙ্গে। আমি যখন রিক্ত নিঃস্ব আহত অসহায় হয়ে মরতে বসেছিলাম তখন তুমি ফেরেশতার মতো হাজির হলে কমান্ডার। আমাকে হেকমত আর শেখারভের কবল থেকে উদ্ধার করলে। তারপর আমার হয়ে শেখারভ আর প্রফেসরকে মেরে উদ্ধার করে আনলে ব্ল্যাক বুদ্ধা,’ বলে সে নিজের লোকদের একজনের দিকে ফিরে ইশারা করল।
লোকটা একবার মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল। ‘কমান্ডার, তুমি আমার এত উপকার করলে এর বিনিময়ে আমি তোমাকে প্রাণ উপহার দেব। আর সেইসঙ্গে তোমার বন্ধুর অবস্থা তো দেখছোই। আমি আমার লোকদের নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাব। একবার ভেবেছিলাম, সবাইকে মেরে রেখে যাব পরে ভাবলাম দরকার কি, আমার যে চেহারা তোমরা দেখেছো সেটা তো আমি বদলেই ফেলতে পারব। আর ব্ল্যাক বুদ্ধা হাতে এলে এত টাকা আসবে যে…যাই হোক তোমাকে আমি কিছু করব না। তবে তোমাকে আমি অপশন দিচ্ছি; ল্যাবের সব লোক বন্দি আর অজ্ঞান। তোমার বন্ধুর অবস্থা খারাপ, তোমার হাতে অপশন আছে দুটো। হয় আমার পিছু নেয়া অথবা তোমার বন্ধুকে বাঁচানো। এখন তোমার ইচ্ছে,’ বলেই সে ইশারা করতেই একজন এসে ওদের মোবাইল অস্ত্র সব নিয়ে নিল। ওদেরকে রুমের ভেতরে রেখে মিতায়নের বাহিনী বেরিয়ে যাচ্ছে, তানভীর বলে উঠল। ‘তুমি পৃথিবীকে বদলাতে না পারলে পৃথিবী তোমাকে বদলে দেবে’ এটা তোমরই কথা ছিল তাই না?’
মিতায়ন বেরিয়ে যেতে যেতে পেছন ফিরে মৃদু হেসে উঠল, ‘হ্যাঁ কমান্ডার, এটা আমারই ডায়লগ ছিল। শুধু এটাই না আমি টেড চ্যাঙের ব্যাপারে যা যা বলেছি সবই আসলে আমার নিজের কথা,’ বলে সে তানভীরের দিকে ফিরে বলে উঠল। ‘জীবনের চড়াই-উতরাইয়ে আমার সবচেয়ে বড়ো উপলব্ধিগুলো বলেছি তোমাকে, মনে রাখতে পারলে তোমারও কাজে লাগবে কমান্ডার,’ বলে সে তানভীরের দিকে ফিরে একবার চোখ টিপে লায়লার দিকে ফিরে একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে বলে উঠল, ‘গুড বাই, মাই লাভ। ভেবেছিলাম তোমাকে আর তোমার বদমেজাজি মা-টাকে শেষ করে দিয়ে যাব, সঙ্গে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তোমার বোনটা মারা পড়ত। কিন্তু তোমরা সবাই বেঁচে গেলে কমান্ডারের কারণে, ওর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার কারণে,’ বলে সে তানভীরকে দেখিয়ে মৃদু হেসে ধাম করে বন্ধ করে দিল দরজাটা।
জালালের পেট চেপে ধরে একবার অসহায়ভাবে লায়লা-শায়লা আর ওদের মাকে দেখল তানভীর। তারপর জালালকে মাটিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে চলে এলো জানালার কাছে। জেড মাস্টারের লোকেরা সবাই চড়ে বসতেই অ্যাম্বুলেন্সটা চলতে শুরু করল।
মাটিতে শুয়ে থাকা জালাল হঠাৎ চোখ খুলে হেসে উঠল। তানভীর অবাক হয়ে ফিরে তাকাল তার দিকে। ওর অবাক মুখের দিকে আধো খোলা চোখে তাকিয়ে জালাল বলে উঠল, ‘গুলি খাইলে তাহলে এমন লাগে। জীবনে এত গুলি করছি কিন্তু গুলি খাই নাই এর আগে,’ বলে সে চোখ বন্ধ করে ঢলে পড়ল মাটিতে।
একবার তাকে দেখে আরেকবার অপস্রিয়মাণ অ্যাম্বুলেন্সটার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রাগের সঙ্গে দেয়ালে লাথি মারল তানভীর।
ওকে পুরোপুরি বোকা বানিয়েছে জেড মাস্টার। ওর বোকামির জন্যেই পালিয়ে যেতে পেরেছে সে, ওর বোকামির জন্যেই মরতে বসেছে জালাল।
এসব কিছুই ঘটেছে একমাত্র ওর বোকামির জন্যে।