অধ্যায় উনত্রিশ – বর্তমান সময়
লাক্কাতুরা টি-স্টেট এলাকা, সিলেট
বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে হাত বোলাচ্ছে তানভীর। ‘ঝামেলা যে হতে পারে সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, কিন্তু লায়লাকে না নিয়েই বা উপায় কি, বলো?’ কথাটা সুলতানকে উদ্দেশ্য করে বলে ও বাংলোর বারান্দার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখতে পেল লায়লা আর শায়লা দুই বোন বেরিয়ে এসেছে মূল দরজা দিয়ে। লায়লা পোশাক পাল্টেছে, তাকে এখন আগের চেয়ে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে। ওরা কাছাকাছি আসতেই শায়লা বলে উঠল, ‘তানভীর ভাই, আপনারা যত দ্রুত সম্ভব ফিরে আসবেন। আর আপুর দিকে খেয়াল রাখবেন।’
‘অবশ্যই,’ বলে তানভীর যোগ করল। ‘পরিস্থিতি যা, তাতে মনে হচ্ছে নিজের মাথার চেয়ে তোমার আপার দিকে বেশি নজর রাখতে হবে। তবে ভাবনার কিছু নেই। আমরা স্রেফ ডক্টর মিতায়নের অফিসটা খুঁজে বের করেই লায়লাকে ফেরত পাঠিয়ে দেব, আসলে অন্য কোনো উপায় থাকলে ওকে ইনভলভড করতাম না। আমরা নিজেরা ডক্টর মিতায়নের অফিসটা খুঁজে বের করতে গিয়ে যদি আরো সময় লাগে তবে হয়তো ডক্টরের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে।’
শায়লা তানভীরের দিকে তাকিয়ে একবার মাথা নেড়ে ওদের বাড়ির দিকে রওনা দিল। মাইক্রোতে ওঠার আগে তানভীর দেখল বাড়ির দরজায় শায়লা- লায়লার মা দাঁড়িয়ে কড়া দৃষ্টিতে ওদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে, লেখকদের ভাষায় যে-দৃষ্টিকে বলে ‘ক্রুর দৃষ্টি।
মনে-মনে নিজেকে এক দফা সাবধান করে দিয়ে গাড়ির কাছে চলে এলো ও। মাইক্রোর মাঝের সিটে বসে আছে লায়লা আর সুলতান। ইকবালকে পেছনে উঠতে বলে ও এসে বসল ড্রাইভারের পাশের সিটে। আরেকবার বাংলোর বারান্দার দিকে তাকিয়ে ড্রাইভারকে নির্দেশ দিল গাড়ি স্টার্ট দেয়ার জন্যে। ড্রাইভার সুরমার গলি থেকে গাড়ি উঠিয়ে আনল মূল রাস্তায়।
স্যার, কোনোতা খায়তায়না নি?’ বয়স্ক ড্রাইভার সিলেটি ডায়লেক্টে ওরা কিছু খাবে কি না জানতে চাইবার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরেকবার তানভীরের মনে পড়ে গেল যে ওরা কেউই দুপুরে খায়নি।
‘খাওয়া তো দরকার কিন্তু লাক্কাতুরা পৌঁছানোটা আরো বেশি দরকার,’ বলে ও একটু ভেবে যোগ করল। ‘ঠিক আছে এক কাজ করো, এখানে কোনো খাবারের দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত কিছু কিনে নিয়ে এসো। হালকা কিছু এনো, যাতে দ্রুত কাজ চালানোর মতো খাওয়া সেরে নেয়া যায়।’
ড্রাইভার গাড়ি থামাতেই সুলতান, ইকবাল আর রসুল মিয়া নেমে গেল। তানভীর মোবাইল বের করে ওর মাকে কল দিল। অনেকক্ষণ মায়ের কোনো খবর নেয়া হয় না। কল করে জানতে চাইল দুপুরে খেয়েছে কি না, বিকেলে কখন বাইরে যাবে, ফার্নিচারের অর্ডার আজ দেবে কি না ইত্যাদি।
মায়ের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে মোবাইলটা পকেটে রাখতেই পেছনের সিট থেকে লায়লা জানতে চাইল, ‘আঙ্কেল-আন্টি কেমন আছেন?’
‘হুম্, ভালো। মা ভালোই আছে, বাবা মারা গেছেন,’ বলে ও আর কী বলবে ভেবে পেল না। ‘আঙ্কেল, মানে তোমার বাবাও নাকি মারা গেছেন শুনলাম, কি হয়েছিল?’
লায়লা একটু চুপ থেকে উত্তর দিল, ‘বাবার লিভার সিরোসিস হয়েছিল, তুমি তো জানতেই বাবা টুক-টাক ড্রিংক করত। শেষদিকে এসে মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছিল। পরিবারের লোকজন-ডাক্তার সবাই মিলে মানা করার পরও বাবা শুনতেন না।’
‘পরিবারের লোকজন বলতে নিশ্চয়ই শায়লা?’ তানভীর মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠল।
লায়লার কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে পেছনে ফিরে দেখল সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওকে তাকাতে দেখে সামান্য মাথা নেড়ে হ্যাঁ-সূচক জবাব দিল। লায়লা ঠিকই বুঝতে পেরেছে বাবা যে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে কথা বলেনি, এটা তানভীর জানে। এরপর আর কথা হলো না কিন্তু নীরবতা যেন ভারী পর্দার মতো ঝুলে রইল দুজনার মাঝে, যতক্ষণ না সুলতানরা এসে উদ্ধার করল ওদেরকে।
সুলতান খাবার নিয়ে আসতেই তানভীর গাড়ি ছেড়ে দিতে বলল রসুল মিয়াকে। গাড়িতেই ওরা হালকা খাওয়ার কাজ সম্পন্ন করে নিল দ্রুত। কারণ ওদের মাইক্রো এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ রোড ধরে আম্বরখানার দিকে ধেয়ে চলেছে বেশ দ্রুত গতিতে।
‘এখান থেকে আর কতদূরে হতে পারে জায়গাটা?’ তানভীর খাওয়া শেষ করে মুখ মুছতে মুছতে রসুল মিয়ার কাছে জানতে চাইল।
‘স্যার, আর বেশি সময় লাগের না, এই আর ফনরো-বিশ মিনিট লাগের,‘ রসুল মিয়া তার পানের দাগওয়ালা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে জবাব দিল। কিন্তু, তার কথা পুরোপুরি ঠিক হলো না। আরো আধা ঘণ্টার ওপরে লাগল ওদের লাক্কাতুরা পার হতে। ‘ম্যাডাম খিয়াল লাখিয়ের, কোনোবায় যাইয়ার?’
লায়লা মাইক্রোর জানালা দিয়ে মনোযোগ দিয়ে বাইরে দেখছে। লাক্কাতুরা টি-এস্টেট পার হয়ে আধা মাইলের মতো সামনে এগোতেই লায়লা বলে উঠল, ‘একটু আস্তে চালান, এদিকেই কোথাও হবে,’ বলেই সে সামনে হাতের বাম দিকে দেখাল। ‘ওই পথটা হতে পারে।’
কিন্তু রসুল মিয়া পথটার কাছে আসতেই সে ধারণা বাতিল হয়ে গেল কারণ সামনে হাতের বামদিকে যে পথটা নেমে গেছে, সেটা একটা গাড়ি চলার মতো যথেষ্ট চওড়া না।
‘এটা অবশ্যই না,’ তানভীর বলে উঠল। ‘আমার মনে হয় আরো সামনে এগোতে হবে, নাকি পেছনে?’ বলে সে লায়লার দিকে তাকিয়ে রইল। কিন্তু লায়লার হাব-ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে নিশ্চিত হতে পারছে না। তাকে মাইক্রোর পেছনের সিট থেকে সাহায্য করল ইকবাল।
‘ম্যাডাম আমার মনে হয়, আরো সামনে এগোতে হবে। আমরা এখান থেকে এগিয়ে মালিনীছড়া পর্যন্ত যাব, তাও যদি আপণে পথটা বের করতে না পারেন তাহলে আবার মালিনীছড়া থেকে এই পথে ফিরে আসব ধীরে ধীরে, তাহলে আপনি বের করতে পারবেন,’ কথাটা বলে সে সমর্থনের আশায় বাকিদের দিকে তাকিয়ে রইল।
কেউ কোনো উত্তর দিল না। একটু পরে তানভীরই বলে উঠল, ‘ঠিক আছে, আমার মনে হয় এতেই কাজ হতে পারে। তবে একটা প্রশ্ন আছে আমার,’ বলে সে লায়লার দিকে ফিরে জানতে চাইল, তুমি নিশ্চিত তো জায়গাটা লাক্কাতুরা আর মালিনীছড়ার মাঝামাঝি? যদি সেটা না হয় তবে খুঁজে পেতে খবরই আছে।’
‘না না সেটা সমস্যা না, কারণ আমি এই ব্যাপারে অন্তত নিশ্চিত যে পথটা এই দুটো জায়গার মাঝামাঝি। কিন্তু আমি আসলে আরো অনেক আগে এসেছি তাও মাত্র একবার, ওই যে…’ কথা শেষ না করেই সে চেঁচিয়ে উঠল সামনের দিকে আঙুল নির্দেশ করে।
রসুল মিয়া আস্তে আস্তে মাইক্রোটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, লায়লা চিৎকার করে উঠতেই সে ওটাকে থামিয়ে ফেলল মেইন রোডের ওপরে। পেছনে একটা প্রাইভেট কার আসছিল, সেটা আরেকটু হলেই ধাক্কা খেতে যাচ্ছিল ওদের মাইক্রোর সঙ্গে, কোনোমতে সামলে নিয়ে ওদের মাইক্রোকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। পেছনের সিট থেকে একজন কারের জানালা দিয়ে মাথা বের করে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আখতা বিরেক মারছে, আবাদি গুলান মা…’ গালির শেষ অংশটা গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেল।
রসুল মিয়া যেখানে ব্রেক করেছে তানভীর সেদিক দিয়ে বামে তাকিয়ে দেখতে পেল দুই পাশে গজার গাছের সারির ভেতর দিয়ে একটা টিলাকে পাশ কাটিয়ে মূল রাস্তা থেকে ভেতরে দিকে চলে গেছে একটা মাটির কাঁচা রাস্তা। রাস্তাটা কাঁচা হলেও একেবারে সরু না, আরামসে দুটো গাড়ি পরস্পরকে পাশ কাটিয়ে যাবার মতো চওড়া পথ। ‘লায়লা, তুমি নিশ্চিত এটাই সেই রাস্তা?’
‘অবশ্যই, এইযে লালচে টিলাটা এটার পাশ দিয়ে মিতায়ন গাড়ি নিয়ে ঢুকে গেছিল, পরিষ্কার মনে আছে আমার,’ সে বেশ জোরের সঙ্গে বলে উঠল। ‘এটাই সেই রাস্তা।
রসুল মিয়ার দিকে ইশারা করতেই সে ধীরে ধীরে বামে বাঁক নিয়ে কাঁচা রাস্তাটায় নামিয়ে দিল মাইক্রোটাকে।
‘সাবধানে চালাবেন,’ বলে তানভীর সামনের দিকে মনোযোগ দিল। ছোটো- বড়ো বিভিন্ন আকৃতির বেশ কিছু টিলাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেছে কাঁচা রাস্তাটা। দুয়েক জায়গায় ফসলের জমি চোখে পড়লেও কোনো বসতি দেখতে পেল না ওরা। আবার দুয়েকটা টিলার গায়ে দূর থেকে ছড়ানো চা বাগান আর দুয়েকটাকে ঘিরে কাঁটা তারে বেড়া দেখতে পেল ও। ‘ওই বেড়াগুলো কিসের?’ রসুল মিয়ার কাছে জানতে চইলো তানভীর।
মনে খরিয়ের, ওগলা লাক্কাতুরা বাগানের ঠিলা অইবার পারের, বুড়ো ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতেই জবাব দিল। ‘টিলা ওগুলান যদি ডাইনে অইতো, তাইলে মালিনীছড়ার অইতে পারত, কন্তু বামে ওউনের কারণে ধইরা নিতে পারুক্কা ওগুলান লাক্কাতুরার টিলা।’
‘তারমানে, আমরা এখন যেখান দিয়ে যাচ্ছি, এই জায়গাটা লাক্কাতুরারও নয়, আবার মালিনীছড়ারও প্রপার্টি নয়,’ বলে ও আনমনেই বলে উঠল, ‘হতে পারে এই জায়গাটা নির্দিষ্ট কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি। যদি তাই হয়… ‘
কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল ও তার আগেই পেছন থেকে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল লায়লা, ‘ওই যে, বাংলোটা দেখা যাচ্ছে, ওটাই মিতায়নের আসাম প্রজেক্টের অফিস,’ তার গলায় উত্তেজনা আর স্বস্তি মিলে-মিশে একাকার।
ওদের মাইক্রো এখনো ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। তানভীর দেখল বাংলোটা এখনো ওদের অবস্থান থেকে বেশ দূরে কিন্তু দূর থেকেই সহজে চোখে পড়ছে, কারণ বাংলোটা একটা টিলার ওপরে অবস্থিত। ওরা যে পথটা ধরে এগিয়ে এসেছে সেটা ধীরে ধীরে একটা টিলা বেয়ে ওপরে উঠে গেছে। শেষ মাথায় চমৎকার একটা বাংলো বিকেলের রোদে রীতিমতো ঝিলমিল করছে।
‘স্যার, উঠিয়ের নি?’ রসুল মিয়া জানতে চাইল।
তানভীর কিছু না বলে ইশারা করে বলল ওপরের দিকে উঠতে। প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই গিয়ার পরিবর্তন করে রসুল মিয়া মাইক্রোটাকে জোরগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলল। টিলা বেয়ে ওদের মাইক্রো বাংলোর কাঠের তৈরি গেটের কাছে এসে থেমে গেল। মাইক্রো থামতেই ওটা থেকে প্রথমেই নেমে এলো তানভীর।
জায়গাটাতে চোখ বুলিয়ে ওর কাছে মনে হচ্ছে পুরনো কোনো ওয়েস্টার্ন সিনেমার সেটে চলে এসেছে, কারণ কাঠের তৈরি বাংলোটা অক্ষরিক অর্থেই অনেকটা বুনো পশ্চিমের মতো দেখতে।
‘ওয়াও,’ ওর পাশ থেকে সুলতানের গলা শুনতে পেল ও। ইকবাল আর লায়লাও নেমে এসেছে। বুড়ো রসুল মিয়াকে মাইক্রোটা নিয়ে টিলার নিচে নেমে অপেক্ষা করতে বলে সবাইকে নিয়ে বাংলোর কাঠের গেট পার হয়ে ভেতরে প্রবেশ করল ও।
জায়গাটা সুন্দর, তারচেয়ে বেশি সুন্দর বাংলোটা। টিলার ওপরে একপাশে অনেকটা সমতল জায়গায় বানানো হয়েছে ওটাকে। ওপরে টিনের চালের নিচে বড়ো বড়ো কাঠের গুঁড়ি বসিয়ে বানানো হয়েছে সামনেটা। একপাশে সিমেন্টের দেয়াল। সামনে লম্বা বারান্দা আর তারচেয়ে সুন্দর বারান্দার সামনের খোলা আঙিনা। অসাধারণ সুন্দর একটা বাড়ি।
‘চমৎকার জায়গা, তাই না?’ তানভীর সবাইকে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে বলে ও সুলতানের দিকে ফিরে কথাটা বলতে বলতে একহাতে গেটটা লাগাতে যাচ্ছিল-তার আগেই তীব্র গুলির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে গেটটা ওর হাত থেকে ছুটে গিয়ে বাড়ি খেল পাল্লার সঙ্গে। তানভীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে নিয়ে সুলতান গড়িয়ে পড়ল মাটিতে, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আরো দু-তিনটে গুলি এসে লাগল বাংলোর গেটে।
দুজনেই মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে, গুলির শব্দে কান ঝালা-পালা হয়ে গেছে তানভীরের, ওর ওপর থেকে সরে গেল সুলতান। কানে কিছু শুনতে না পেলেও ঝাপসা চোখে ও দেখতে পেল একহাতে নিজের বিরাট পিস্তলটা বের করে এনেছে সুলতান, অন্যদিকে ইকবাল আর লায়লাকে চিৎকার করে নির্দেশ দিল মাটিতে শুয়ে পড়ার জন্যে।
‘স্যার, স্যার… সুলতানের তীব্র ঝাঁকির সঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলো তানভীর। মাটিতে আধশোয়া অবস্থাতেই একটানে বের করে আনল নিজের ডেজার্ট ঈগল। ‘সুলতান, হচ্ছেটা কি?’ প্রশ্ন শেষ হবার আগেই ওরা যেখানে শুয়ে আছে তার কাছেই বাংলোর কাঠের বেড়ার চলটা উঠিয়ে দিল দুটো গুলি। অন্যদিকে তাকিয়ে দেখল বাংলোর পথের কাছে একটা ছোটো খোঁয়ারের মতো আছে, সেটার আড়ালে বসে আছে ইকবাল আর লায়লা। হাতের ইশারায় ওদেরকে স্থির থাকতে বলে উঠে বসল ও। সুলতান, গুলি আসছে কোন দিক…’
সুলতানের জবাব দিতে হলো না কাঠের গেটের বাইরে থেকে ভেসে আসা গুলিতে আরেকটু হলেই ঘায়েল হতে যাচ্ছিল ও-কিন্তু আবারো সুলতান ওকে টেনে সরিয়ে দিল। ‘স্যার, সাবধান,’ বলেই সে হাতের ইশারায় কাঠের বেড়ার বাইরে দেখাল। সম্ভবত গুলি আসছে গেটের বাইরে থেকে।’
তানভীর দেখল সুলতান টিলার একপাশে গাছপালার আড়ালের দিকে নির্দেশ করছে। ‘এভাবে খোলা জায়গায় বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়, যদি বাইরে থেকে গুলি আসে তবে বাংলোর দিকে এগোনোই ভালো হবে,’ তানভীর কথাটা বলতেই সুলতান সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। ‘তাহলে আমি বাংলোর দিকে এগোই, আমাকে কভার করার জন্যে তুমি গুলি করবে,’ তানভীরের কথা শেষ হতেই আবারো সুলতান মাথা নেড়ে জবাব দিল।
খোঁয়ারের আড়ালে থাকা ইকবাল আর লায়লার দিকে ইশারা করে ও বাংলোর দিকে এগোতে বলল। তারপর সুলতানের দিকে ফিরে ইশারা করতেই কাঠের বেড়ার ফাঁক দিয়ে নিজের পিস্তল বের করে গুলি করতে শুরু করল সুলতান।
খানিকটা কুঁজো হয়ে বাংলোর দিকে দৌড়াতে শুরু করল তানভীর। পায়ে চলা পথটা ধরে এক দৌড়ে বাংলোর বারান্দার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এমন সময় ধাম করে খুলে গেল বাংলোর কাঠের দরজা। তানভীর নিজেকে সামলানোর আগেই সেখানে উদয় হলো এক অস্ত্রধারী। দরজা খুলেই দুই পা এগিয়ে এলো সে বাংলোর বারান্দায়।
কুঁজো হয়ে দৌড়াতে থাকা তানভীর অস্ত্রধারীকে দেখতে পেয়ে হঠাৎ একেবারে ব্রেক কষে থেমে গেল। থামার ধাক্কা সামলাতে না পেরে পা পিছলে ছিটকে পড়ল বাংলোর প্রবেশ পথের ওপরে। হাত থেকে ছুটে গেল ডেজার্ট ঈগল।
মাটিতে পড়ে যাওয়া তানভীরের দিকে অস্ত্র তুলল বের হয়ে আসা অস্ত্রধারী। লোকটার হাতে ধরা পুরনো দিনের দোনলা বন্দুকের কালো নলের দিকে তাকিয়ে তানভীর অনুধাবন করল, ওর হিসেবে বিরাট গরমিল হয়ে গেছে।