অধ্যায় আটাশ – সময় : ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
পৃথুরা বনভূমি, কন্নোর, ভারতবর্ষ
মুহূর্তের জন্যে শামানের মনে হলো ওর সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। এভাবে পথের ওপরে দাঁড়িয়ে না থেকে, বরং চেষ্টা করলে হয়তো জঙ্গলের ভেতরে লুকানো যেত।
‘সাবধান! উলটোপাল্টা কিছু করো না, জঙ্গলে লুকানোর সময় নেই, শত্ৰু না মিত্র জানা নেই। শত্রু হলে আর সংখ্যায় বেশি হলে স্রেফ উলটো ঘুরে জঙ্গলে ঢুকে পড়াই সবদিক থেকে শ্রেয় হবে,’ দ্রুত নিজের চুল আর মুখ ঢাকতে ঢাকতে কালন্তিকে সাবধান করে দিল শামান।
কালন্তি একবার মাথা নেড়ে সায় জানাল।
ওরা পুরোপুরি প্রস্তুত হবার আগেই বাঁক ঘুরে এগিয়ে এলো একটা ঘোড়ার গাড়ি। শক্তিশালী ঘোড়া দুটোর পেছনে একটা মালামাল আনা-নেয়া করার খাঁচার আকৃতির ভেতরে অনেকগুলো কাঠের গুঁড়ি বসানো। আর সেগুলোর ওপরে শরীর খাড়া করে বসে আছে এক বুড়ো লোক। বুড়োকে দেখে দুজনেই একটু স্বাভাবিক বোধ করল। এই বুড়ো আর যাই হোক শত্ৰু নয়।
বুড়োর ঘোড়াদুটো বেশ দ্রুত গতিতে মোড় নিয়ে রাস্তার ওপরে উঠে আসছিল হঠাৎ জঙ্গলের কিনারায় ওদেরকে দেখে গতি কমে গেল ওটার। একেবারে ওদের সামনে এসে থেমে গেল ঘোড়ার গাড়ি। শামান-কালন্তি দুজনারই মনে প্রশ্ন, ব্যাপার কি, বুড়ো ঘোড়ার গাড়ি থামাল কেন?
‘অ্যাই তুমরা,’ বুড়ো গাড়ির ওপর থেকে ঘাড় বেঁকিয়ে উঁকি দিল। ‘এয়ানে কি করো, তোমরা? ঝগড়া করার জইন্যে এউয়া কেমন জায়গা?’ বলে বুড়ো খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল। শামান ইশারায় কালন্তিকে জবাব দিতে বলল।
কালন্তি অসহায়ভাবে কাঁধ ঝাঁকাল। ‘অ্যই মেয়ে, আর ছেলে। তোমরা কথা কও না ক্যান?’ বুড়োর গলা শুনে শামানের মনে হলো বুড়ো সোমরস খেয়ে একেবারে মাতাল হয়ে আছে। আবারো ও কালন্তির দিকে ফিরে ইশারায় কথা বলতে বলল। চাচা, আমরা জঙ্গলের ভেতরে পথ হারায়ে ফেলেছি। মন্তলার হাটের দিকে আমাদের গ্রাম, আপনি বলতে পারবেন সেডা কোন দিকে?
‘হা-হা-হা,’ কালন্তির কথার জবাবে বুড়ো ভুরি দুলিয়ে হেসে উঠল। শামান কালন্তির দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করল। কালন্তি অসহায়ভাবে বলে উঠল, ‘আর কি বলব?’
‘অ্যাই তোমরা মিথ্যে কচ্ছো ক্যান? তোমার বউ,’ বলে সে শামানের দিকে দেখাল। ‘ঝগড়া করে বাড়ি থেইকে পলায়ছিল তুমি এইসে ধরেছো, তাই না?’ শামান কিছু না বলে অসহায়ভাবে হাসল। বুড়ো ইশারায় ওদেরকে গাড়িতে উঠে পড়তে বলল। ‘আমি মন্তলার হাটের দিকেই যাইছি, উঠে পড়ো।’
কালন্তি শামানের কাছে ইশারায় জানতে চাইল কী করবে। জবাবে শামান লাফিয়ে একটা গাছের গুঁড়ি ধরে ফেলে ওটা বেয়ে উঠে এলো ওপরে। কালন্তি রাগের সঙ্গে শামানের দিকে একবার আঙুল নেড়ে সেও উঠে এলো ওপরে। ওঠার সময়ে শামান তাকে সাহায্য করার জন্যে হাত বাড়াল কিন্তু রাগের সঙ্গে সেটা এড়িয়ে গেল কালন্তি।
‘ওরে বাপরে, মেয়ে দেখি এখনো রেইগে আছে,’ বলে বুড়ো হাসতে লাগল। ‘তা বাপু ওকে মানালে কী করে, রাগ করা মেয়ে মানুষকে মানানো তো সোজ লয়,’ বলে সে হাসতেই থাকল।
কালন্তির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল শামান, ‘আর বইলেন না চাচা, জান বারায়ে গেছে। তা চাচা এই সময়ে কই যাচ্ছেন এইগুলান নিয়া?’
‘কাম,বাপু, কাম,’ বুড়োকে দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ আনন্দে আছে। ‘কামে বুড়ারেও ছাড়ে না। তয় এইবার বিরাট একটা কাম পাইয়েছি, এই কারণেই এই ঘুড়া দুইট্টা আর গাড়ি ভাড়া করেছি।’
‘কি কাম চাচা?’ শামানের পাশে বসে থাকা কালন্তি জানতে চাইল। সে পথের ওপরে কড়া নজর রেখেছে, কারণ যে রাস্তা দিয়ে ওরা যাচ্ছে সেই রাস্তাতে লিচ্ছবীদের পাহারা থাকতে পারে।
‘আর কইয়ো না, জঙ্গলের মইধ্যে কাঠ কাটতে কাটতে জীবন শ্যাষ হয়ে যাচ্ছিল, তার উপরে গেল বছর মন্দায় এক্কেরে শ্যাষ। এইবার একটা ভালা কাম পাউনে জানডা বাঁচবো মনে হইতেছে। লিচ্ছবী রাজার লুকেরা বিরাট একটা কাম পাওয়ায়ে দিছে,’ বলে বুড়ো তার ছোটো লাঠির মাথায় আটকানো ছিপের মতো দেখতে দড়ি নিয়ে ঘোড়া সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
শামান আর কালন্তি দুজনেই বুড়োর শেষ কথা শুনে একেবারে সচকিত হয়ে উঠেছে। দুজনেই একে অপরের দিকে ফিরে তাকাল। শামান দেখল একটু আগে চোখা করা লাঠির এক প্রান্তে ধরে রাখা আঙুলের গাট সাদা হয়ে গেছে কালন্তির। ইশারায় তাকে শান্ত থাকতে বলল ও। ওরা বসেছিল ঘোড়ার গাড়ির ওপরে রাখা কাঠের গুঁড়িগুলোর এক পাশে। কালন্তি সাবধানে শরীরটা টেনে টেনে যতটা সম্ভব চাচার কাছাকাছি চলে এলো। ‘লিচ্ছবী রাজার লুকেরা কি কাম পাওয়ায়ে দিছে চাচা?’ মুখে আগের মতোই হাসি ধরে রেখে ও জানতে চাইল।
‘আরে, তুমরা জানো না, কুন মুলুকে থাহো? কাইল দিন বাদে পরশু তো বিরাট ঘটনা ঘইটতে যাইতেছে মন্তলার বাজার এলাকায়। হের লাইগ্গা লিচ্ছবী রাজার বিরাট অয়োজন চলতাছে। হেইহানেই কাম পাওয়ায়ে দিছে আমার এক ভাতিজা।’
শামান ঝট করে কালন্তির দিকে দেখল। কাল বাদে পরশু তারমানে অব্যশই বড়ো কিছু একটা ঘটতে চলেছে। যজ্ঞ বাবা তাহলে মরার আগে ভুল বকে যায়নি। কিন্তু কি ঘটতে চলেছে পরশু।
‘চাচা আমরা তো জঙ্গলের মানুষ, এসব খবর রাহিনে, কত কী হয়, এইগুলা আমাগো জাইন্না কী হইবে?’ বলে কালন্তি আরেকটু হাসি যোগ করে নিরীহভাবে জানতে চাইল, ‘কিন্তু আপনের কথা শুইন্নে তো ভারি জাইনতে ইচ্ছে করতেছে কী হইবে ওইখানে? আর এত গাছের গুঁড়ি দিয়ে কী কইরবে ওরা?’
বুড়ো গাড়ি চালাতে চালাতে রাগত ভঙ্গিতে ফিরে তাকাল কালন্তির দিকে। বুড়োকে ফিরে তাকাতে দেখে আনমনেই শামানের হাত চলে যাচ্ছিল নিজের তলোয়ারের বাটের দিকে কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে মুখের বোকা বোকা হাসিটা ধরে রাখল।
‘এইজন্যেই বাপু তুমার বউ তুমার উপর রাগ কইরে বাড়ি থেইকে বারায়ে যায়, কুনো খবর রাখিসনে,’ বলে বুড়ো রাগত ভঙ্গি ভুলে গিয়ে হাসতে হাসতে লাগল খিক খিক করে। ‘মা জননি কিছু মনে করিসনে, তোর জামাইডা এক্করে ভ্যাবলা।’
শামান মনে মনে বুড়োর পিণ্ডি চটকাচ্ছে। শালা বুড়ো আবোল-তাবোল বকছে কিন্তু কাজের কথা বলছে না।
‘ও তো এম্বাই চাচা,’ কালন্তি বলে উঠল। ‘কিন্তু চাচা আমাগোও ভারি জানতি ইচ্ছে হইচ্ছে আসলে কী হইবো ওইখানে আর এত কাঠ দিয়েই বা কী হইবে?’
বুড়ো অবারো ফিরে তাকাল ওদের দিকে। এবার রাগত ভঙ্গির জায়গায় দেখা দিয়েছে দুঃখের হাসি। ‘ও, তুইও তো দেহি তোর ভ্যাবলা জামাইয়ের মতোই। ‘ ওইহানে কী হইবে সেইটা আমি কী জানি। আমারে বুঝি কইয়েছে রাজার লুকেরা। তয় এইডা জানি অনেক বিরাট কিছু হইতে যাইতেছে, আর বুকা তরা, এই কাঠ দেইহা কইতাছে আর এত কাঠ দিয়ে হেরা কী কইরবো, আরে বুকার দল অমার মতো এই রহম আরো কতজনরে কইছে এইরহম কাঠ আনতে তার সীমা আছে। বুকার বুকা, তরা জামাই-বউ দুনিয়াতে চলবি ক্যামনে?’ বুড়ো অনমনেই বিড়-বিড় করতে লাগল।
‘এই দাঁড়াও,’ এতক্ষণের স্বাভাবিক কথোপকথন বাদ দিয়ে নিজস্ব গলায় প্রায় ধমকে উঠল কালন্তি, বুড়ো ঘোড়ার রাশ টানতে গিয়ে আরেকটু হলে ঘোড়াসহ গাড়ি উল্টাতে উল্টাতে কোনোমতে সামলে নিল। শামানও আরেকটু হলে পড়েই যাচ্ছিল গাড়ি থেকে। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে ফিরে তাকাল কালন্তির দিকে। কারণ মেয়েটা হঠাৎ এভাবে চিৎকার করে ওঠাতে ওর ভালো লাগেনি, কে জানে রাগের মাথায় আবারো বোকার মতো কিছু করে বসে কি না।
কিন্তু কালন্তির দিকে ফিরে ও দেখল মেয়েটা খুবই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামল।
‘কিরে মা জননী, নাইমে গেলি যে, বুড়ার কথায় রাগ কইরেছোস?’ বুড়োকে দেখে মনে হচ্ছে সে একটু দ্বিধান্বিত।
‘না চাচা, আমগো গাঁও আইসে গেছে,’ বলে সে উলটো পথে জঙ্গলের দিকে দেখাল, ‘ওই দিকে আমাগো গাঁও, এই বুকাডা,’ বলে সে শামানকে দেখাল। নিজের গাঁওয়ের রাস্তাও ভুইলে যায়, কী যে করব এরে নিয়ে চাচা।’
কালন্তির কথা শুনে বুড়ো এক মুহূর্ত দুজনকেই দেখল, তারপর জোরে হেসে উঠল। শামান গাড়ি থেকে নেমে বুড়োকে ধন্যবাদ জানাতে বুড়ো হাসতে হাসতেই বিদায় নিল।
বুড়োর গাড়িটা চলে গেল। শামান কিছু বলার জন্যে উদ্যত হতেই কালন্তি হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে ওকে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ল। শামান দেখল বুড়োকে সে জঙ্গলের যেদিকে দেখিয়েছিল তার উলটো দিকের জঙ্গলে ঢুকে ওকে এগোতে ইশারা করল। কিছুদূর এগোতেই সে বলে উঠল, ‘এবার বলতে পারো। রাস্তার কাছাকাছি কথা বলাটা ঠিক হতো না। কারণ কোন দিকে লিচ্ছবীদের পাহারাদার আছে কে জানে।’
‘তুমি না বললে তোমাদের গ্রাম ওদিকের জঙ্গলে তবে এইদিকে ঢুকলে কেন?’ শামান জানতে চাইল।
কালন্তি ওর দিকে ফিরে আগের মতোই একটা রহস্যময় হাসি দিল। ‘বোকা? বুড়োকে নিজের আসল এলাকা দেখিয়ে দেব নাকি, আর শোন এখন যেদিকে যাচ্ছি আমাদের এলাকা মূলত সেদিকেও না। আমরা এখান থেকে অনেকটা এগিয়ে বাঁক নিয়ে আবার অন্যদিকে যাব। কারণ পথের ওপর থেকে কেউ যদি নজর রেখে থাকে তবে বিপদ হতে পারে।’
শামান মাথা নেড়ে সমর্থন জানিয়ে পা চালাল। মেয়েটা জঙ্গলের পথে যেন উড়ে চলেছে। আর পাহাড়ি এলাকার মানুষ শামান চাইলেও তার সঙ্গে তাল রাখতে পারছে না। তার ওপরে আহত শরীর। আরো বেশ কিছুদূর এগিয়ে শামান দুই হাঁটুতে হাত রেখে ওকে থামতে বলল। ‘আর চলতে পারছি না। তুমি না বলেছিলে কাছেই তবে এতদূরে কেন?’
‘বোকা, তুমি আসলেই বোঝনি?’ কালন্তি বেশ অবাক হয়েই জানতে চাইল। শামান মাথা নেড়ে জানাল সে বোঝেনি।
‘শুনলে না মন্তলার হাটে বিরাট কিছু চলছে, তারমানে ওদিকে অবশ্যই পাহারা আছে। তাই যেখানে নামতে চেয়েছিলাম তারচেয়ে অনেক আগেই নেমে গেছি। আচ্ছা, বুড়ো যা বলল সেটা তো যজ্ঞ বাবার কথাকেই সমর্থন করে?’
‘হ্যাঁ, অবশ্যই,’ শামান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কালন্তিতে এগোনোর ইশারা করল। কিন্তু একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো, যাই ঘটতে চলেছে, বুড়ো ওখানে কাজ করছে তাও সে জানে না আসলে কী ঘটতে চলেছে। আর বুড়োর কথায় যা বুঝলাম তাতে মনে হলো ওইখানে আরো অনেক লোক কাজ করছে তারমানে বেশ বড়ো কিছু একটা ঘটতে চলেছে।’
‘হ্যাঁ, আমাদের সেটাই বের করতে হবে,’ বলে কালন্তি থেমে দাঁড়িয়ে একবার চারপাশে দেখল। ‘আর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে হবে। বলে সে চারপাশটা দেখে নিয়ে নিশ্চিত হয়ে নির্দিষ্ট দিকে দেখিয়ে এগোতে ইশারা করল।
ওরা আরো প্রায় ঘণ্টাখানেকের মতো হেঁটে এক জায়গায় এসে থামল। মুখের ভেতরে আঙুল পুরে কালন্তি পাখির ডাকের মতো বিচিত্র এক ধরনের শব্দ করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে সামনের দুর্ভেদ্য জঙ্গলের একটা অংশ আলগা হয়ে গেল। শামান চিনতে পারল ওইদিন এ পথ দিয়েই ওদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজ সকালে ওরা এই পথ দিয়েই বের হয়েছে।
ওরা দুজনে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করতেই হা হা করে ছুটে এলো কয়েকজন প্রহরী। ‘রাজকুমারী, আপনি বেঁচে আছেন। রাজাসহ সবাই…’ লোকটাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কালন্তি রীতিমতো দৌড়াতে লাগল। শামানও এগিয়ে গেল তার পিছু পিছু। থারুদের বসতির আগে সেই খালের ওপরে সেতুটা ওঠানোই আছে আজ। সেটা দৌড়েই পার হলো ওরা। বসতির লোকজন সবাই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। ওরা খালপাড়ের পথ ধরে দৌড়ে এগিয়ে গেল রাজা মানরুর বাসস্থানের দিকে। ওখানে গিয়ে দেখল শাক্য থারু সবাই বসে আছে। সবার অগ্রভাগে বিধু-ঘোষিতরাম-ধোয়ী আর জাথুরিয়া।
ওদেরকে দেখে প্রায় সবাই উঠে দাঁড়াল। রাজা মানরু দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল কালন্তিকে। ‘আমি তো ভেবেছিলাম তোরা…’ বলে সে কালন্তিকে জড়িয়ে ধরে রেখে একজন প্রহরীর উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে উঠল, ‘এই, বাড়ির ভেতরে খবর পাঠাও। কালন্তি ফিরে এসেছে।’
বাবা-মেয়ের এই মিলন দৃশ্য থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতেই শামান দেখল হেলে- দুলে ওর দিকে এগিয়ে আসছে বিধু আর ঘোষিত। হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করল শামান, গায়ের রংটা বাদ দিলে দুজনেই প্রায় একইরকম দেখতে।
‘আরে ওস্তাদ, মারাত্মক খেল দেখাইলা…’ বলে সে হাতের কনুই দিয়ে ঘোষিতের গায়ে গুঁতো মারল। ‘দেখেছিস আমার ওস্তাদ বলে কথা, একেবারে মরা থেকে জাইগা উঠছে। তাও আবার রাজকুমারীকেও উদ্ধার করে আনছে,’ বলেই সে এগিয়ে এসে প্রায় সর্বশক্তিতে জড়িয়ে ধরল শামানকে।
শামানের মনে হলো ওর শরীরের সব হাড় একসঙ্গে ভেঙে যাবে। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। বরং বিধুর পিঠে মৃদু চাপড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে গেল রাজা মানরু আর শাক্য রাজা শংকরাদিত্যের দিকে।
‘যোদ্ধা, তুমি ফিরে আসাতে আমরা সবাই খুশি,’ রাজাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ও কালন্তি আর মানরুর দিকে ফিরে বলে উঠল, ‘রাজা মানরু, খবর আছে। আমরা জানতে পেরেছি কাল বাদে পরশু মন্তলার হাটে কিছু একটা হতে যাচ্ছে কিন্তু এটা বের করা যায়নি যে কী হবে। আমাদেরকে এখন…
‘মস্তক ছিন্ন করা হবে,’ পেছন থেকে গম্ভীর গলায় বলে উঠল কেউ একজন। প্রতিউত্তর শুনে ফিরে তাকাল শামান।
শাক্য রাজা শংকরাদিত্য কথা বলে উঠেছে, ‘বাজার থেকে আমাদের একেবারে ভেতরের গুপ্তচরের মাধ্যমে আপনারা আসার একটু আগেই আমরা খবর পেয়েছি। কাল বাদে পরশু জনসম্মুখে বৌদ্ধ শ্রমণদের মস্তক ছিন্ন করা হবে,’ বলে সে সবাইকে এক পলক দেখে নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে যোগ করল, ‘তারই আয়োজন চলছে মন্তলার হাটে।