অধ্যায় চব্বিশ – সময় : ১৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
যজ্ঞবাবার ডেরা, কন্নোর, ভারতবর্ষ
বারান্দার দিকে ছুটে আসা জিনিসগুলো কোনোমতে এড়িয়ে গেল শামান।
স্রেফ হিসেবে গরমিলের কারণে আরেকটু হলেই ওর মাথাটা ভর্তা হয়ে যেত। উরগরা নদী পাড়ের কোন দিকে অবস্থান নিয়ে ওদেরকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে সেটা বোঝার জন্যেই মূর্তির পেছন থেকে মাথাটা বের করেছিল ও।
নিজে তো কিছু দেখতে পায়ইনি বরং নিশ্চিত সে ধরা পড়ে গেছে ওদের চোখে। ওর মাথাটা মূর্তির আড়াল থেকে বেরুনো মাত্র খটাখট কয়েকটা ছোটো ছোটো তির এসে বিঁধেছে মূর্তিটার চারপাশে। সঙ্গে সঙ্গে মাথা সরিয়ে নেয় শামান কিন্তু উরগদের তির লেগে দেবী মূর্তির একটা অংশ ভেঙে পড়ে ঠিক যেখানে শামানের মাথাটা ছিল সেখানে। কিন্তু ওটাকে ভেঙে পড়তে দেখে শামানকে টান দিয়ে সরিয়ে নেয় কালন্তি।
‘চোখের মাথা খেয়েছো নাকি, যোদ্ধা?’ মুখ ঝামটা দিয়ে বলে ওঠে সে। শামান কিছু না বলে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মাথা নাড়ে একবার স্রেফ। উঁকি দিয়ে উরগদের দেখা না পেলেও নিজের লোকেরা কে কোথায় লুকিয়ে আছে এটা দেখতে পেরেছে ও। মনে মনে হিসেব করে দেখল, ধোয়ী আর ঘোষিতকে ও দেখেছে বারান্দার একটা ভেঙে পড়া দোলনার অড়ালে লুকিয়ে আছে, অন্যদিকে বিধু, জাথুরিয়া আর জাথুরিয়ার দলের অন্য লোকটাকে দেখেছে বারান্দায় পড়ে থাকা একটা জলচৌকি উল্টে সেটার আড়ালে লুকিয়েছে।
‘আমরা এখন কি করাম?’ ওপাশ থেকে বিধুর চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে খটাখট শব্দ ভেসে এলো। ওরা কথা বলে উঠতেই আবারো তির এসে লেগেছে ওরা যে চৌকির আড়ালে লুকিয়ে আছে সেটাতে। শামান দ্রুত চিন্তা করছে। উরগরা আছে জলাধারের দিকে, এই বারান্দায় ওরা নড়লেও তারা তির মারছে। তারমানে ওদেরকে এখানে আটকে রাখতে চাইছে ওরা। উরগরা যদি ওদেরকে এখানে
আটকে রাখতে চায় তবে অবশ্যই এর পেছনে কোনো কারণ আছে।
তারমানে উরগরা যে উদ্দেশ্যেই ওদেরকে এখানে আটকে রাখুক না কেন দ্রুত এই বলয় থেকে বেরুতে না পারলে খবর আছে। শামান মূর্তির বেদির আড়াল থেকে সামান্য উঁকি দিয়ে বারান্দা আর জলাধারের দিকে চোখ বুলাল। এখান থেকে বেরুবার পথ আছে দুটো। যে দরজা দিয়ে ওরা প্রবেশ করেছে সেটা, আরেকটা হলো জলাধারের দিকে। জলাধারের দিকে উরগরা আছে, আর যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছে সেটা নিশ্চয়ই ওরা তীরের নিশানা দিয়ে আগলে রেখেছে। তারমানে এখান থেকে বেরুতে হলে উরগদের দৃষ্টি সরাতে হবে। আর সেটা খুব সহজ হবে না।
পুরো বারান্দা আর জলাধারের দিকটা হালকা চোখ বুলিয়ে শামান চিৎকার করে বিধুকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই জলাধারের দিক থেকে কিছু একটা উড়ে এসে বিঁধে গেল বারান্দার মাঝামাঝি থামের ওপরে। প্রায় একই সময়ে আরেকটা একইরকম জিনিস উড়ে এসে বিঁধল ওরা যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিল সেটাতে। দুটো বর্শাই জায়গামতো বিঁধার সঙ্গে সঙ্গে ওটা থেকে কিছু একটা খুলে মাটিতে পড়ে ফেটে গেল।
জিনিসটা ফাটতেই বিশ্রী গন্ধ ভক করে বাড়ি মারল ওদের নাকে। শামান ভালো করে দেখার জন্যে বেদির আড়াল থেকে উঁকি দিল, ওর পাশ থেকে উঁকি দিল কালন্তি।
দুজনেই দেখতে পেল বর্শার গায়ে লেগে থাকা যে জিনিসটা মাটিতে পড়েছিল সেটা যেখানে মাটিতে পড়ে ভেঙেছে জায়গাটা থেকে মৃদু ধোঁয়ার সঙ্গে বিশ্রী গন্ধটা বেরিয়ে আসছে। আর ধোঁয়ার ছোটো কুণ্ডলির ভেতরে নড়াচড়া করছে জীবন্ত কিছু। ‘এগুলো—’ শামান কথা শেষ করার আগেই দেখল ধোঁয়ার কুণ্ডলির ভেতর থেকে হিল হিল করে বেরিয়ে আসতে শুরু করল সরু সরু কালো রঙের কতগুলো প্রাণী।
‘সর্বনাশ! উরগদের আসল অস্ত্র, সাপ,’ আনমনেই বলে উঠল কালন্তি। ‘বলো কি! কী সাপ এগুলো?’ শামান দেখল দেড় হাত দুই হাত লম্বা সাপের দল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে বারান্দাজুড়ে।
‘রাজ, রাজবোড়া,’ কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠল ধূসরি। ‘এই সাপে এক কামড় দিলে আর দেখতে হবে না।’
‘ওস্তাদ, সাপ,’ বিধুর আতঙ্কিত গলা ভেসে এলো।
‘সবাই চুপ, নড়াচড়া করো না,’ শামান মুখে বললেও ও নিজেই ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছে। দ্রুত কিছু করতে না পারলে হয় সাপের কামড়ে মরতে হবে, আর না হয় উরগদের তির কিংবা বর্শার আঘাতে। হঠাৎই সমাধানটা চোখে পড়ল ওর। কিন্তু ঝুঁকিটা ভয়ংকর।
ক্ষণিকের জন্যে বারান্দা জরিপ করে নিল ও। সাপগুলো দুইদিক থেকে বারান্দায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিধু, তির প্রস্তুত রাখ,’ জোরে বলে উঠে কালন্তির দিকে ফিরে বলল, ‘আমি উরগদের নজর অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করব, তুমি বাকিদের সঙ্গে ওই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে, বুঝেছো?’ বলেই কালন্তির উত্তরের অপেক্ষা না করে বেদির আড়াল থেকে গড়িয়ে বেরিয়ে এলো ও। যত দ্রুত সম্ভব আরেক গড়ান দিয়ে চলে এলো বেদির সামনের দিকে, বেদির একেবারে সামনের দিকে মূর্তির পায়ের কাছে জ্বলতে থাকা একটা তেলের প্রদীপ তুলে ছুড়ে দিয়েই ও চেঁচিয়ে উঠল, ‘বিধু।’
জ্বলন্ত প্রদীপটা দরজার দিকে ছুটে যাচ্ছে, নিখুঁত লক্ষ্যে বিধুর তির সেটাকে বিদ্ধ করতেই খান খান হয়ে ছড়িয়ে পড়ল দরজার আশপাশে, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে গেল দরজার এখানে-ওখানে। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা প্রদীপ ছুড়ে দিল ও, সেইসঙ্গে আরেকটা। প্রতিটা প্রদীপ নিখুঁত লক্ষ্যে একটার পর একটা প্রদীপ ভেঙে খান খান করে আগুন আর তেল ছড়িয়ে পড়ল বারান্দার এখানে ওখানে। সেইসঙ্গে কিলবিল করে এগোতে থাকা সাপগুলোর কয়েকটার গায়েও আগুন ধরে গেল।
শামান মাটিতে শুয়ে একটার পর একটা প্রদীপ ছুড়েছে তাই উরগদের ছোড়া তির কিছু করতে পারেনি কিন্তু কাজ শেষ হতেই দেখল ওর হাতে-গায়ে সাপ উঠে পড়েছে, প্রায় লাফিয়ে উঠে বসে কোমর থেকে একটা সাপ ঝেড়ে ফেলতেই দেখল হাতে উঠে এসেছে একটা। ওটাকে অন্য হাত দিয়ে ছাড়াতে যাবে তার আগেই একটা ছোটো তির এসে বিঁধল ওর হাতে। সাপটাসহ তিরটা গেঁথে রইল কবজির একটু ওপরে। ব্যথার চোটে আনমনেই হাত ঝাড়া দিল ও। বারান্দার ওপরে সাপ আর আগুন মিলে এলাহি অবস্থা। চিৎকার করে বাকিদেরকে দরজার দিকে এগোতে বলল। কিন্তু উরগদের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে না পারলে কয়েকজনের সমাধি রেখে যেতে হবে এখানে।
‘সবাই দরজার দিকে এগোও,’ বলেই অন্যদের দিকে তাকিয়ে ও বলে উঠল, ‘রাজা মানরু আর অন্যদেরকে গিয়ে জানাও কাল বাদে পরশু কিছু একটা হতে যাচ্ছে,’ বলে শামান একহাতে নিজের কাতানা বের করে অন্যহাতে বেদির সামনে নিবেদনের জন্যে রাখা একটা কাঠের থালা তুলে ঝেড়ে দৌড় দিল বারান্দার বাইরের দিকে।
ঝুঁকিটা অনেক বেশি কিন্তু উরগদের সঙ্গে সরাসরি মোকাবেলা করতে হলে এ ছাড়া আর উপায় নেই। লাফিয়ে মাটিতে নেমেই একটা বড়ো ঝোপের আড়ালে নিজেকে আড়াল করে ফেলল ও। সেইসঙ্গে চোখ বুলাল জলাধারের পাড়ে। একটা বড়ো ঝোপ আর কয়েকটা বড়ো বড়ো গাছের দঙ্গলের মতো আছে। উরগরা এদিকেই কোথাও লুকিয়ে আছে। আরেকটু ভালোভাবে দেখার জন্যে উঁকি দিতেই ধপ করে অরেকটা তির এসে লাগল ওর বুকের লোহার জালের বর্মের ওপরে। কিন্তু, ও দেখে ফেলেছে ঝোপের ওদিক থেকে এসেছে তিরটা। আর লুকিয়ে লাভ নেই বরং নিজের সঙ্গীদেরকে নিরাপদে পার হবার মতো সুযোগ দিতে হলে উরগদের দৃষ্টি সরাতে হবে।
কাঠের থালাটা দিয়ে শরীরের অরক্ষিত অংশটা আড়াল করে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে একটু আগে তিরটা যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে দৌড় দিল শামান। খটাখট তির এসে লাগছে কাঠের থালায়। পরোয়া না করে দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিল ও। হঠাৎ শক্ত ধাক্কার সঙ্গে থমকে উঠল ও। হাতের কাঠের থালাটা ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে একটা বর্শার আঘাতে। দৌড়াতে দৌড়াতেই ওটাকে ফেলে দিয়ে সামনে ঝোপের আড়ালে তিনটে ছায়া দেখতে পেল ও।
প্রাণের পরোয়া না করে একটু এগিয়েই লাফ দিয়ে একেবারে উরগদের ওপরে গিয়ে পড়ল। শামানকে ছুটে আসতে দেখে একজন সরে গেছিল, আর বাকি দুজনকে নিয়ে গড়িয়ে পড়ে গেল ও। মাটিতে পড়ে থাকা একজন খাটো পাতলা একটা তলোয়ার বের করে বসিয়ে দিতে যাচ্ছিল ওর বুকে, সেটাকে ঠেকিয়ে দিয়ে কালো মুখোশ পরা লোকটার গলা দু-ফাঁক করে দিল ও নিজের কাতানা দিয়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই অন্য একজনের ছুঁড়ে দেয়া ছুরি এসে বিঁধলো বুকের লোহার জালের ওপরে। শামানের মনে হলো ওর বুকের ওপরে হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মেরেছে কেউ। পড়ে গেলেই মরতে হবে এখন। ছুড়িটা খুলে লোকটার দিকেই ছুঁড়ে মারল ও। মানুষটা মনে হয় এত দ্রুত প্রতিরোধ আশা করেনি, আর না হয় সে ভেবেছিল ছুরিতেই কাজ হয়ে যাবে, শামানের ছুরিটা তার হাতে গিয়ে লাগল। তার দিকে এগোতে যাবার আগেই বিপরীত দিকে দাঁড়ানো মানুষটা কিছু একটা ছুঁড়ে মারল ওর দিকে। ও প্রস্তুত হবার আগেই পিচ্ছিল জিনিসটা এসে ওর গলায় পেঁচিয়ে গেল।
ওটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করার আগেই দেখল, সাপ ছুঁড়ে দেয়া মানুষটা খাটো ধনুকে তির জুড়ে ছুঁড়তে যাচ্ছে ওর দিকে। গলায় পেঁচানো সাপ, আহত বুক-হাত কোনো কিছুরই পরোয়া না করে কাতানা ফেলে সোজা ছুটে গেল ও লোকটার দিকে। ধনুকে তির জুড়ে শামানের দিকে তাক করতে যাচ্ছিল সে, তার আগেই শামান সরাসরি তার ওপরে এসে পড়ল। দৌড়ে এসে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে একেবারে গড়িয়ে পড়ল নদীর তীরে, সেখান থেকে পানিতে।
ঘোলাটে খরস্রোতা পানি সরাসরি গিলে নিল দুজনকে। তীব্র আতঙ্কের সঙ্গে শামান অনুভব করল বরফের মতো ঠান্ডা পানিতে মারাত্মক স্রোত। দুজনে জড়াজড়ি করে পানিতে পড়তেই স্রোতের টানে এগিয়ে গেল অনেকটা। একদিকে গায়ে ভারী পোশাক, তার ওপরে সাঁতার জানলেও পানিতে একেবারেই অভ্যস্ত না শামান। সবচেয়ে বড়ো কথা ওর জড়িয়ে ধরা লোকটা লোহার মতো বজ্রমুষ্ঠিতে ধরে রেখেছে ওর গলা। বরফ ঠান্ডা পানিতে খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে যেতে দুজনের লড়াই তুঙ্গে উঠল ।
শামান লোকটাকে ছেড়ে দিলেও সে শামানের গলা সে এমনভাবে ধরেছে মনে হচ্ছে কণ্ঠার হাড় খুলে না আনা পর্যন্ত কিছুতেই ছাড়বে না। শামান নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে লোকটার মুখে ঘুসি মারার চেষ্টা করল, সেটা লাগল না। অন্য হাতে পেটে ঘুসি মেরে নিজেই ব্যথা পেল, লোকটাও ওর মতোই কিছু একটা পরে আছে পোশাকের নিচে। ছুরি বা তলোয়ারেও কাজ হবে না বুঝতে পারল শামান। আর ওগুলো ব্যবহারও করতে পারবে না ও এই অবস্থায়। আর ব্যবহার করবে কি, গলায় লোকটার হাতের চাপে মনে হচ্ছে যেকোনো সময়ে কণ্ঠার হাড় ছিড়ে যেতে পারে। পানির টানে মুখের মুখোশ খুলে গেছে, কালো মতো দেখতে একজন মানুষ, ঝকঝকে সাদা দাঁত বের হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ওর প্রাণ না নিয়ে দুই হাতে ধরে থাকা গলা ছাড়বে না।
মানুষের যখন অন্তিম সময় উপস্থিত হয় মানুষ নাকি বুঝতে পারে। শামানের কাছে মনে হলো তেমন কিছু একটাই হতে যাচ্ছে। সারা জীবনে দেখা ভালো কিছু দৃশ্য মনে করার চেষ্টা করল ও কিন্তু কাজ হলো না, শুধু কালো উরগটার বিকৃত চেহারাই চোখে ভাসছে। হঠাৎ আলগা হয়ে গেল লোকটার হাত, পানিতে হালকা লালচে মেঘ দেখে শামান ভেবেছিল ওর গলার হাড় ভেঙে বুঝি রক্ত বেরিয়ে আসছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে রক্তটা আসলে লোকটার। প্রায় ঝটকা দিয়ে সে শামানের গলা থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিল। শামান দেখল লোকটার হাতে কালো কিছু একটা ঝুলে আছে।
হঠাৎ বুঝতে পারল পানিতে পড়ার আগে লোকটা ওর গলায় একটা সাপ ছুঁড়ে মেরেছিল, সেটা এতক্ষণ নিশ্চয়ই লোকটার হাতের চাপে পিষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু মারা যাবার আগে সুযোগ পেতেই ছোবল বসিয়ে দিয়েছে মানুষটার হাতে। বেশি কিছু ভাবার সময় নেই।
লোকটা নিজের হাত ছড়িয়ে নিলেও শামান একহাতে ভাসমান লোকটার পোশাক ধরে ফেলল, অন্যহাতে নিজের বাঁ হাতে বিঁধে থাকা তিরটা খুলে নিয়ে বসিয়ে দিল লোকটার গলায়। শামানের দেহটা এসে বাড়ি খেল খরস্রোতা নদীর একপাশে ভেসে থাকা একটা পাথরের ওপরে। ওর মনে হলো শরীরের হাড় বুঝি সব গুঁড়িয়ে গেছে। ছুরি ফেলে দিয়ে পাথরটাকে আকড়ে ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু আহত বিধ্বস্ত শরীর পিচ্ছিল পাথর আর তীব্র গ্রোত্রের সঙ্গে বেশিক্ষণ লড়াই করতে পারল না। ধীরে ধীরে ডুবে যেতে শুরু করল ও। একটা হাত বাড়িয়ে পাথরের এক কিনারা ধরার চেষ্টা করল কিন্তু হাতটা ছুটে যাচ্ছে মনে হলো ওর কাছে। পুরোপুরি ছুটে যাবার আগেই ও অনুভব করল সাপের মতো পিচ্ছিল কিছু একটা জড়িয়ে যাচ্ছে ওর হাতে, চোখ দুটো অন্ধকার হতে হতে মনে মনে হেসে উঠল ও।
সাপটা তাহলে মরেনি, নিশ্চয়ই পাথরের ওপরে এসে পড়েছিল স্রোতের টানে, এখন ওকে শেষ করতে এসেছে। কিন্তু তার দরকার হবে না, এমনিতেই শেষ হতে যাচ্ছে ও। কবজির ওপরে চেপে বসা তীক্ষ্ণ ব্যথাটা পুরোপুরি টের পাবার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেল ওর চোখের সামনে।