প্রথম অংশ : অন্তর্ধান
দ্বিতীয় অংশ : অন্ধকারের অবতার
1 of 2

ব্ল্যাক বুদ্ধা – ২১

অধ্যায় একুশ – সময় : ২০১০ খ্রিস্টাব্দ
অর্জুনতলা, শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস, সিলেট

‘বাহ্, এই পিলারগুলো স্থায়ীভাবে এখানে রেখে দিলেই পারে,’ লায়লার মুখে খুশি যেন উপচে পড়ছে।

‘হুম্, রাখবে তোমার জন্যে!’ বলে তানভীর অ্যাকাডেমিক ভবন ‘এ’ রেনোভেশন চলতে থাকা অংশের দিকে দেখাল। ‘এগুলো বিল্ডিংয়ের কাজের জন্যে এনেছে। কাজ শেষ হলেই নেই,’ বলে তানভীর লায়লার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। নির্মাণাধীন ক্যাফেটেরিয়াতে শুরু, তারপরে এক কিলো পথের সেই কথোপকথনে যে মৃদু হাওয়া বইতে শুরু করেছিল সেই থেকে তিন বছরের ওপরে হতে চলল ওদের প্রেম। একটা সময় ওদের অসম প্রেম শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বেশ আলোড়ন তুলেছিল কিন্তু সেটাও এখন স্তিমিত। নতুন নতুন মুখ এসেছে, তাদের সঙ্গে এসেছে নতুন নতুন মুখরোচক গল্প। তানভীর অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, আর লায়লা অনার্স-মাস্টার্স দুটোই শেষ করে সিলেটেই একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছে এখন।

‘তোমার ভাইভা কেমন হয়েছে?’ যদিও উত্তরটা ওর জানা তবুও আরেকবার জানতে চাইল। সদ্যই গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হয়ে গতকাল ভার্সিটি খুলেছে। খোলার প্রথম দিনই লায়লার ভাইভা ছিল ডিপার্টমেন্টের লেকচারার হিসেবে। ভাইভা কেমন হয়েছে সেই উত্তরটা শুধু তানভীর নয় পুরো শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসই জানে। কারণ রেকর্ড রেজাল্টধারী লায়লার শিক্ষক হওয়াটা স্রেফ সময়ের ব্যাপার। তা ছাড়া ডিপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে ক্যাম্পাস পর্যন্ত সবখানে লায়লাকে চেনে না এমন কেউ নেই, একভাবে বলতে গেলে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে লায়লার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।

অন্যদিকে তানভীর একেবারেই উলটো। ও সর্বক্ষণ আছে নিজের বইপত্র নিজের সার্কেল আর আড্ডা নিয়ে। কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছে, তারপর ভালো না লাগাতে ছেড়ে দিয়ে এখন নিজের মতো থাকে। শাবি ক্যাম্পাসে সবাই লায়লাকে চেনে ট্যালেন্টেড-ক্যারিয়ারিস্ট হিসেবে। আর তানভীরের ইমেজ অনেকটাই বোহেমিয়ান ধাঁচের।

লায়লা মোবাইলে কী যেন ঘাঁটছে। শাড়ি পরে এসেছে সে আজ, লাল পাড় দেয়া হালকা সবুজ রঙের জামদানি শাড়ি, ম্যাচ করা চুরি আর কপালে টিপ। মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতেই সে ফিরে তাকাল তানভীরের দিকে। কপালের পাশ থেকে এক গোছা চুল সরিয়ে হেসে দিল ওর দিকে তাকিয়ে। মুগ্ধ হয়ে দেখছিল তানভীর। আনমনেই ও বলে উঠল, ‘তুমি অনেক পাল্টে গেছ লায়লা। সেই বুট আর জিন্স পরা রক মিউজিশিয়ান লায়লা কখন যেন পাল্টে গেল বুঝতেই পারলাম না।

ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে সে জানতে চাইল, ‘এটা কি ভালো নাকি খারাপ?’

ভালো দেখেই তো আজো একইরকম ভালোবাসি,’ বলে তানভীর একটা হাত ধরল ওর। ‘বললে না, পরীক্ষা কেমন হলো?’

আনমনেই কাঁধ ঝাঁকাল লায়লা। ‘পরীক্ষা যেমন হবার ছিল তেমনই হয়েছে, ‘ বলেই সে তানভীরের ধরে থাকা হাতটা আরো জোরে চেপে ধরল। ‘পরীক্ষা নিয়ে আমি মোটেই উত্তেজিত নই, তারচেয়ে অন্য ব্যাপার নিয়ে আমি বেশি উত্তেজিত,’ বলে সে তানভীরের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘আগে বলো তোমার মিটিং কেমন হলো?’

‘কিসের মিটিং?’ তানভীর একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করল। প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেই ওর মনে পড়ল এবারের গ্রীষ্মের ছুটিতে একজন প্রকাশকের সঙ্গে ঢাকায় দেখা করার কথা ছিল ওর। মনের ভেতরের এতদিনের বাসনা অবশেষে পরিপূর্ণ রূপ নিতে শুরু করেছে। লেখালেখি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করেছে ও। সেই সূত্রেই একজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলতে গেছিল। তবে ভুলেই গেছিল ব্যাপারটা। লায়লা জানতে চাওয়াতে এখন মনে পড়ল। ‘ওহ্, ভুলেই গেছিলাম। মিটিং ভালো হয়েছে। সত্যি কথা হলো, আমি স্রেফ কথা বলতে গেছিলাম। যে বইটা লিখতে চাচ্ছি সেটার ব্যাপারে আলোচনা হলো। ভাবছি কয়েকদিনের ভেতরেই কাজটা শুরু করে দেব।’

‘দারুণ,’ বলে লায়লা নিজের নতুন কেনা ব্ল্যাকবেরি সেটটা ঘাঁটতে লাগল। আমিও দারুণ একটা ছুটি কাটিয়েছি,’ দুর্দান্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলে উঠল সে। ‘আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটা ঘটে গেছে এবার।’

‘তাই নাকি, কি সেটা?’ তানভীর একটু অবাক হয়েই জানতে চাইল। লায়লার জীবনে কী এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল যে জানতেই পারল না। ‘ছুটির শেষ দিকে কদিন টানা তোমার মোবাইল বন্ধ ছিল,’ এমনিতেই বলে উঠল ও।

‘হ্যাঁ, তখুনি ঘটেছে ব্যাপারটা,’ বলে ও তানভীরের ধরে থাকা হাতটা আরো জোরে চেপে ধরে আরো কাছে বসাল তানভীরকে। ‘তোমাকে বলিনি সারপ্রাইজ দেব বলে। আর সারপ্রাইজটা সরাসরি দেখাব,’ বলে সে নতুন কেনা সেটটা তানভীরের হাতে ধরিয়ে দিল। ‘দেখো,’ বলে সে একটা ইমেজ ফাইল ওপেন করে দেখাল।

তানভীর ব্ল্যাকবেরির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখল দারুণ সাজগোজ করা লায়লাকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ছবিটা দেখে তানভীরের খুশি হবার কথা কিন্তু তার পরিবর্তে কেন জানি গলা শুকিয়ে এলো ওর। কোনোমতে বলল, ‘বাহ্, সুন্দর তো। কোথায় তুলেছো এটা?’

‘আরে, আগে সবগুলো দেখো তো,’ বলে সে পর পর আরো কয়েকটা ছবি দেখাল। মঞ্চের ওপরে বসে আছে লায়লা কখনো একা, কখনো বান্ধবী আর কাজিনদের মাঝে। ওর সাজগোজের ধরনটা একেবারেই আলাদা। এরকম সাজগোজ মানুষ একটা ক্ষেত্রেই করে। ‘কী ব্যাপার-কোনো বিয়েতে অ্যাটেন্ড করতে গেছিলে নাকি? জানতাম না তো,’ লায়লার চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল তানভীর। কোথায় যেন ব্যাপারটা গোলমেলে লাগছে ওর কাছে।

এতক্ষণ হাসি-খুশি থাকা লায়লা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে উঠল। তানভীর আমি কোনো বিয়ে অ্যাটেন্ড করতে যাইনি। আমি বিয়ে করে ফেলেছি,’ বলে সে আরেকটা ছবি দেখাল। সেটাতে বরের পোশাক পরা একজন পুরুষের সঙ্গে বসে আছে লায়লা, দেখেই বোঝা যায় বিয়ের ছবি, দুজনেই হাসি-খুশি।

লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল তানভীর। মোবাইল টিপে একটার পর একটা ছবি দেখতে লাগল। সবই বিয়ের ছবি-দেখলেই বোঝা যায়। ‘এটা কী ধরনের ফাজলামো, লায়লা? তুমি জানো আমি এরকম দুষ্টামি…’

‘এটা ফাজলামো না, তানভীর, লায়লাও উঠে দাঁড়িয়েছে। ‘দেখ তানভীর, আমি তোমাকে পছন্দ করি কিন্তু তুমি আমার থেকে বয়সে ছোটো। আমি ভার্সিটির টিচার হয়ে যাচ্ছি, আর তুমি এখনো এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র, ক্যারিয়ার নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই, সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাকো…’

‘প্লিজ লায়লা, বলো যা বলছো এগুলো ফাজলামো, মিথ্যে,’ তানভীর এগিয়ে এসে লায়লার দুই হাত একসঙ্গে ধরে ফেলল। ‘প্লিজ।’

লায়লার লেন্স পরা নীল চোখের মনি পাথরের চেয়েও বেশি শক্ত। ‘না তানভীর, আমি সরি, আসলে বাসা থেকে চাপ দিচ্ছিল আর আমিও…’ লায়লা বলে চলেছে তানভীরের কানে কিছুই ঢুকছে না। ও ঝাপসা চোখে দেখতে পাচ্ছে ধীরে ধীরে ওর পানিতে ঘোলাটে হয়ে আসছে চোখের দৃষ্টি, সেইসঙ্গে একটু একটু করে ঝাপসা হয়ে আসছে লায়লা।

হাতের মোবাইলটাকে সর্বশক্তিতে একটু আগে বসে থাকা কংক্রিটের ওপরে আছড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়াল ও। পাগলের মতো দৌড়াতে লাগল গোল চত্বরের দিকে, গোল চত্বর পার হয়ে এক কিলো পথ ধরে দৌড়ে চলল ও।

***

বর্তমান সময়
সুরমা, আখালিয়া, সিলেট

‘স্যার আপনি জানতেন, তাই না?’ তানভীর খুব শুষ্ক গলায় প্রশ্নটা করল।

অপর প্রান্তে হাবিব আনোয়ার পাশা কোনোরকম দ্বিধা ছাড়ই বলে উঠল, ‘কি জানতাম আমি, তানভীর?’ মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা গলা ইস্পাতের চেয়েও কঠিন আর শীতল।

সদা হাস্যোজ্জ্বল পাশা স্যারের এত শীতল গলা শুনে একটু থমকে গেল তানভীর। ‘স্যার, লায়লা ফেরদৌস, মানে আমার…মানে সে যে ডক্টর মিতায়নের স্ত্রী, এটা আপনি জানতেন, তাই না স্যার?’

‘হ্যাঁ, আমি জানতাম বললেও পুরোপুরি সত্য বলা হয় না-আবার আমি জানতাম না বললেও মিথ্যে বলা হবে,’ আনোয়ার পাশার গলায় খানিকটা শৈথিল্য। ‘এই কেসে ওপর মহল থেকে প্রথমে যখন তোমাকে ডেকে পাঠানো হয় তখন আমি কিছুই জানতাম না-কিন্তু পরে আমি জানতে পারি ব্যাপারটা। কিন্তু তখন আমি বললেও তোমাকে এই কেস থেকে সরানো হতো না।’

‘স্যার, আপনি জানতেন এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি কতটা…কতটা…’ তানভীরের গলা বুজে আসছে কষ্টের তীব্রতায়। ‘স্যার আমি, আমি আমি এই কেসে কাজ করতে পারব না, প্রয়োজনে আমি চাকরি…’

‘সাট আপ, ইউ স্টুপিড বয়, প্রায় আক্রোশের সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল আনোয়ার পাশা। ‘ইউ ফুল, তোমাকে নিয়ে আমি কত বড়ো বড়ো পরিকল্পনা করছি-আর তুমি কি না বোকার মতো একটা মেয়ের জন্যে নিজের জীবনের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইছো। গাধা কোথাকার, ‘ সত্যিকারের অভিভাবকের মতো ধমকে উঠল অনোয়ার পাশা। তবে সত্যি কথা শোন, প্রথমে না জানলেও আমি পরে যখন জানতে পারি এই কেসে লায়লা মেয়েটা ইনভলভড আছে, আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে জানাইনি, যাতে তুমি নিজে ব্যাপারটা আবিষ্কার করে সেটা ফেস করতে পারো। ট্রেনিং ট্রেনিং খেলা অনেক হয়েছে। এবার মাঠে নামো। আরেকটা কথা মনে রাখবে, এই মেয়েটা একবার অল্পের জন্যে তোমার জীবনটা ধ্বংস করতে বসেছিল, তাকে আবার সেই সুযোগ দিও না। এখন নাকি কান্না বন্ধ করে নিজের কাজে লাগো। এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।’

‘স্যার… তানভীর ভীষণ আকুতির সঙ্গে কিছু একটা বলতে চাইছিল তার আগেই কথা বলে উঠল পাশা স্যার।

‘গ্রো আপ, বয়। এখন সময় এসেছে ব্যক্তিগত ব্যাপার পাশে সরিয়ে সত্যিকারের প্রফেশনালিজম দেখানোর। কাজেই সত্যিকারের কাজ দেখাও আমাকে। মনে রাখবে তোমার ওপরে আমি অনেক বড়ো বাজি ধরেছি। গুড বাই, তানভীর কিছু বলার আগেই পাশা স্যার কল কেটে দিল ওপার থেকে।

তানভীরের মনে হলো রাগের সঙ্গে মোবাইলটা আছড়ে ফেলে। কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে জানে সেটা করে কোনো লাভ নেই। ভীষণ বিরক্ত লাগছে ওর। বাংলো বাড়িটার প্রবেশ পথের কাছে এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ফরেনসিক, পিবিআই আর পুলিশের গাড়ি

কালো রঙের একটা ফরেনসিকের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ও, কথা শেষ হতেই মনে হলো গাড়িটার টায়ারে দুটো রাগের সঙ্গে লাথি মারে। কিন্তু সেটাও করল না। বরং বুক ভরে দম নিয়ে ব্রিদিং করতে করতে গাড়ির পাশেই পায়চারী করতে শুরু করল। নিজের ভেতরের যুদ্ধটাকে থামানোর চেষ্টা করছে। গাড়িটার অন্য পাশে আসতেই দেখল গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ড্রাইভার সিগারেট টানছে। ওকে দেখে সিগারেট সামলাতে গেল লোকটা, তানভীর হাত নেড়ে তাকে মানা করে বরং তার হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে কষে দুটো টান দিল ওটাতে। ড্রাইভারের অবাক দৃষ্টির সামনেই সিগারেটটা হাতে নিয়ে চলে এলো ও বাংলোর প্রবেশ পথের অন্যদিকে।

কম দামি সিগারেটে কষে আরেকটা টান দিতেই এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না। বুক ফেটে কাশি বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণ কেশে একটু সুস্থির অনুভব করল। নিজেকে একটু স্বাভাবিক লাগছে। ভেতরের রাগ আর কাশি পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করে ওকে খানিকটা সুস্থির করে তুলেছে। সিগারেটের মোথাটা ছুঁড়ে ফেলে দিল ও।

একদিকে রাগের সঙ্গে শরীরটা জ্বলছে, আরেকদিকে মনের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যে মানুষটার সঙ্গে ওকে এই মুহূর্তে ডিল করতে হবে সেই মানুষটা একসময় চূড়ান্ত আঘাত দিয়ে ওর জীবনটা তছনছ করে দিয়েছিল, এমনকি সেই মানুষটার জন্যেই নিজের মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ না করে বাড়ি ফিরে গেছিল ও। এমনকি এই মানুষটার জন্যেই আর কখনো ফিরে আসেনি সিলেট। আর এখন কি না সেই মানুষটার সঙ্গেই কাজ করতে হবে। একবার ভাবল সব ছেড়ে-ছুড়ে চাকরির মায়া না করে চলে যাবে, কিন্তু পরমুহূর্তে নিজের বিবেক আর কর্তব্যবোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। গত আটটা বছর ধরে রাতদিন পরিশ্রম, ডিপার্টমেন্টের আস্থা অর্জন, সবকিছু এভাবে জলে ফেলতে পারবে না ও একজন বিশ্বাসঘাতক মানুষের জন্যে।

হঠাৎ একটা কথা মনে পড়াতে মৃদু হেসে উঠল ও, এ কারণেই তাহলে ক্যাম্পাসে সবুজ ভাই ওকে সাবধান করে দিয়েছিল এই কেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকার জন্যে।

‘স্যার, আপনি ঠিক আছেন?’ পাশ থেকে কেউ একজন প্রশ্ন করল।

তানভীর ফিরে দেখল সুলতান দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে-মুখে কৌতূহল, সেইসঙ্গে খানিকটা উদ্বিগ্নতাও যেন, তবে নিশ্চিত হতে পারল না ও।

‘আমি…’ বলে ও একটু থেমে যোগ করল। ‘আমি একদম ঠিক আছি। চলেন ভেতরে যাই, মেলা কাজ বাকি এখনো। এগুলো সব সারতে হবে,’ ও সুলতানের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি না মিলিয়েই বাংলোর ভেতরের দিকে রওনা দিল। ‘তারচেয়ে বড়ো কথা, অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো আসলে কিভাবে অ্যানালিসিস করা হচ্ছে তার ওপরে নির্ভর করছে বেশ কিছু ব্যাপার।

‘জি, স্যার,’ সুলতানের চোখের কৌতূহলী দৃষ্টি পরিবর্তন হয়ে সেখানে যেন রহস্যের ছায়া। ‘স্যার, ফরেনসিক টিম কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে। ওরা যা যা পাবে সেই ভিত্তিতে আমাদের একটা রিপোর্ট দিয়ে দেবে। ওদেরকে তদারকি করার জন্যে টমি স্যারও এসেছেন।’

‘আর কিছু,’ ওরা প্রায় বারান্দায় চলে এসেছে। তানভীর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে গিয়ে ফিরে তাকাল সুলতানের দিকে। এভাবে দৃষ্টি চুরি করার ব্যাপারটা ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না। ওকে ফিরে তাকাতে দেখে সুলতানও থেমে গেল। তার চোখে আবারো ফিরে এসেছে সেই পুরনো কৌতূহল। তানভীর কিছু না বলে তাকিয়ে রইল, সুলতানও তাই।

‘স্যার, আমি আপনাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই,’ সুলতানই প্রথম অস্বস্তিকর নীরবতা ভেঙে বলে উঠল।

‘কোনো ব্যাপারে?’

স্যার, ভেতরে চলেন দেখাচ্ছি,’ দুজনেই আবারো বাংলোর ভেতরে এসে ঢুকল।

বাড়ির ভেতরের অবস্থা যাচ্ছে-তাই। এবারই প্রথম তানভীর ভালোভাবে তাকিয়ে দেখল ভেতরে। এভাবে বিধ্বস্ত হবার আগে বাড়িটা খুবই সুন্দর আর সাজানো গোছানো ছিল নিশ্চয়ই। ভেতরে ঢুকে তানভীর দেখতে পেল ক্রাইম সিন অ্যানালিসিস ডিভিশন আর ফরেনসিকের লোকেরা কাজ করছে।

‘আরে, তানভীর স্যার। আবারো দেখা হয়ে গেল আপনার সঙ্গে, হাস্যোজ্জ্বল মুখে ওদের দিকে এগিয়ে এলো ছোটোখাটো একজন মানুষ। পিঠে বিশাল আকারের একটা ব্যাগ। পরনে থ্রি-কোয়ার্টার আর কালো টি-শার্ট, পায়ে সাদা কনভার্স। টি-শার্টের ওপরে ‘এ গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের লেখক জর্জ আর আর মার্টিনের বিরাট একটা ছবি। ছবিতে মার্টিনের চোখ জোড়া আগুনের গোলার মতো জ্বলছে, ঠিক তার নিচেই লেখা, ‘আই অ্যাম দ্য রিয়েল ইভিল’।

‘টমি পোদ্দার,’ শেষ শব্দটা একটু বেশিই জোর দিয়ে উচ্চারণ করল তানভীর। ‘কাজ কেমন চলছে?’

‘ভালোই চলছে, এখনো তেমন কিছু উদ্ধার করতে পারিনি, তবে আধা ঘণ্টার ভেতরে বাকি কাজটুকু শেষ করতে পারলে আশা করি দেখানোর মতো কিছু একটা পাব আমরা,’ টমি এত আনন্দের সঙ্গে ব্যাপারটা বলছে তানভীরের মনে হচ্ছে দিনের সবচেয়ে মজার ঘটনা ব্যাখ্যা করছে সে।

এরকম আনন্দের সঙ্গে কেউ কথা বললে তার সঙ্গে বেশিক্ষণ মুখ গোমড়া করে থাকা যায় না। তানভীরও মৃদু হাসি দিয়ে বলে উঠল, ‘কাজ করেন তাহলে,’ বলে সুলতানের দিকে ইশারা করল, কী দেখাতে চায় সে।

তানভীরের ইশারা দেখতে পেয়ে সুলতান টমির দিকে ফিরে জানতে চাইল, জিনিসটা কোথায় রেখেছেন?

‘অহ, ওইটা এভিডেন্স বাক্সে রাখা হয়েছে মনে হয়। আপনি ওই রুমে গিয়ে ছেলেটাকে বললেই দেখাবে, সুলতানের দিকে ফিরে কথাগুলো বলে টমি তার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।

আর তানভীরকে নিয়ে সুলতান চলে এলো পাশের রুমে। একটু আগে এখানেই সেই শ্যুটারকে আরেকটু হলে ধরে ফেলেছিল তানভীর। শ্যুটারের ওপরে লাফিয়ে পড়ার সেই স্মৃতিটা মনে পড়তেই একটু শিউরে উঠল ও।

‘স্যার, এই দেখুন জিনিসটা, প্লাস্টিকের এভিডেন্স ব্যাগের ভেতরে একটা পেটমোটা হ্যান্ডগান রাখা। সম্ভবত এই বন্দুকটা দিয়েই সেই শ্যুটার গুলি করছিল। ‘এটা কি সেই লোকটার বন্দুক নাকি, একটু আগে গুলি করছিল যে?’

‘জি, স্যার, একটা মজার জিনিস দেখাই,’ বলে সে প্যাকেট খুলে জিনিসটা বের করে আনল। জিনিসটা বন্দুক আর পিস্তলের মাঝামাঝি একটা অস্ত্র। ‘স্যার, এটা একটা বিশুদ্ধ হ্যান্ডগান।’

‘মানে কি?’ কেউ একজন ওর দিকে এক জোড়া প্লাস্টিকের গ্লাভ এগিয়ে দিতে, সেগুলো পরে নিয়ে জিনিসটা হাতে নিল ও। জিনিসটাতে ছোটো একটা হাতল ছিল একসময় সেটা কেটে ফেলা হয়েছে, সম্ভবত নলটাও বেশ লম্বা ছিল, সেটাও কেটে ছোটো করা হয়েছে। ট্রিগার ম্যাকানিজম সবই ঠিক আছে কিন্তু সেটার সাথে আবার আলগা দেখতে পেটমোটা কিছু একটা লাগানো হয়েছে। ‘এটা এমন কেন?’

সুলতানকে দেখে মনে হচ্ছে তানভীরের প্রশ্নটা শুনে সে খুশি হয়ে উঠল। ‘জি স্যার, আমিও ঠিক এই জিনিসটাই বলতে চাচ্ছিলাম। স্যার, এখন তো মানুষ মিউজিক শোনে ইউটিউবে আর বেশির ভাগই ব্যবহার করে দোকান থেকে কেনা স্পিকার আর হেডফোন। কিন্তু আপনার মনে আছে কি না জানি না একটা সময় মিউজিক ছিল মানুষের কাছে নেশার মতো। যারা মিউজিকের ব্যাপারে শৌখিন ছিল তারা নিজেদের স্পিকার মানে ডেক সেট নিজেরা বানিয়ে নিত, তাতে অ্যাম্প্লিফায়ার, সাউন্ড মিক্সার বসাত, তার ওপরে গানের ক্যাসেটের কালেকশন ইত্যাদি মিলিয়ে এলাহি কারবার আরকি। আমি যেটা বলতে চাইছি, একটা হলো মানুষের কাজ চলার মতো জিনিস, আরেকটা হলো শখের সঙ্গে কাজের জিনিসকে একেবারেই নিজের মতো করে গড়ে নেয়া,’ বলে সে তানভীরের হাতে ধরা জিনিসটা দেখাল। ‘স্যার, এই জিনিসটা এরকম একজন মানুষের শখের জিনিস। দেখুন, এটা কয়েকটা অস্ত্র মিলিয়ে বানানো হয়েছে। কাজটা যে করেছে সে অপরিসীম দক্ষ এই কাজে, কারণ কাজটা হাতে করা হয়েছে।’

‘হাতে! আর ইউ শিওর?’ তানভীর একটু অবাক হয়েই জানতে চাইল।

‘জি, স্যার, আমি এই লাইনেরই মানুষ। আমার কথার ওপরে ভরসা রাখতে পারেন, স্যার। অস্ত্রের বাঁট মানে হাতল কেটে ছোটো করা হয়েছে, সেইসঙ্গে নলটাও। আমার ধারণা ভুল না হলে এই দুটো জিনিস ছিল পুরনো আমলের একটা দোনলা বন্দুকের বডি। সেটাতে যোগ করা হয়েছে এই আলগা ম্যাগজিন, ‘ পেটমোটা জিনিসটা দেখাল সুলতান। ‘এটা অনেকটা পিস্তল বন্দুক আর সাব মেশিনগানের মাঝামাঝি একটা জিনিস। ক্লোজ রেঞ্জ গান ফাইটের জন্যে দুনিয়ার সেরা অস্ত্র বলা হয় নলকাটা শটগানকে। বিশ্বাস করেন স্যার, এই অস্ত্রটা নলকাটা শটগানের বাপ।’

‘এই কারণেই একটু আগে একজন মানুষ একটা অস্ত্র দিয়ে তিনজনকেই আরেকটু হলে কাবু করে ফেলেছিল শ্যুটার,’ আনমনেই বলে উঠল তানভীর।

সুলতান, আপনি আমাকে এতকিছু কেন বললেন?

‘স্যার, আমার মনে হয় এইরকম স্পেসিফিকেশন মডেলের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এরকম মানুষ খুব কমই আছে। ঠিকমতো খোঁজ নিতে পারলে আমরা এখান থেকে একটা লিড পেতে পারি।’

‘একদম ঠিক,’ সুলতানের আইডিয়াটা ভালো লাগল তানভীরের। টমিকে বলা এই ব্যাপারে খোঁজ লাগাতে।’

‘কি ব্যাপার, কে খুঁজে আমাকে?’ টমির তুলতুলে গলা ভেসে এলো পাশ থেকে। ‘স্যার, আমরা এখানকার ক্রাইম সিনের ব্যাপারগুলো প্রায় ঠিক করে ফেলেছি। আপনি চাইলে ডেমো দেখাতে পারি।’

‘তার আগে আমাদের মিসেস মিতায়নের সঙ্গে কথা বলা উচিত,’ সুলতান বলে উঠল।

‘পরে,’ তানভীর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে থামিয়ে দিল। ‘আমি আগে ডেমোটা দেখে নেই, তাহলে লা…মিসেস মিতায়নের সঙ্গে কথা বলতে সুবিধে হবে আমাদের জন্যে,’ কথাটা বলেই ও সুলতানের সঙ্গে দৃষ্টি না মিলিয়েই রওনা দিল টমির পিছু। সুলতান এক মুহূর্ত তার দিকে তাকিয়ে থেকে পিছু নিয়ে চলে এলো সেই বিধ্বস্ত ডায়নিং রুমে।

ফরেনসিক টিমের বাকিদেরকে গাড়িতে অপেক্ষা করতে বলে টমি ডায়নিং টেবিলের ওপরে নিজের ল্যাপটপটা রেখে খুশিতে একবার তালি দিয়ে উঠল, ‘ওক্কে, ওয়েলকাম টু…’

টমি, সংক্ষেপে বলবে। সময় কম,’ তানভীর আগেই তাকে ধমক দিয়ে উঠল একবার।

‘ও,’ বলে সে বেজার মুখে ল্যাপটপের বাটন টিপে কিছু একটা দেখে নিয়ে শুরু করল। ‘ওকে,’ বলে সে শুরু করল। ‘আমি যা বলছি সেটার কিছুটা মিসেস মিতায়নের কাছ থেকে শোনা, কিছুটা ফরেনসিক আর ক্রাইম সিন অ্যানালিসিস থেকে দাঁড় করার হাইপোথিসিস,’ বলে সে একবার ঘড়ি দেখল। ‘কয়েকদিন আগে ডক্টর মিতায়ন গায়েব হবার পর থেকেই মিসেস মিতায়ন এই বাড়িতেই অবস্থান করছিল। ডক্টর মিতায়নের অন্তর্ধান হবার একদিন পরেই মিসেস মিতায়নের ছোটো ভাই আর মা এসে তার সঙ্গে থাকা শুরু করে। তারও এক দিন পর তার ছোটো বোন এসে যোগ দেয় তাদের সঙ্গে। আজ বেলা আনুমানিক দুইটার দিকে মিসেস মিতায়নের ছোটো ভাই ঢাকা যাবার জন্যে বাড়ি থেকে বের হয়। তার সঙ্গে মিসেস মিতায়নের ছোটো বোন আর মাও বের হন কিছু কেনাকাটা করার জন্যে।’

তানভীর এই ব্যাপারটা নোট করে নিল। একটা ব্যাপার ওর খটকা লাগছিল, এত সময় থাকতে ঠিক ওরা আসার আগ দিয়েই কেন এই বাড়িতে আক্রমণ হলো সেটার একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। তারমানে ডক্টর মিতায়ন হারিয়ে যাবার পর এই প্রথমবারের মতো মিসেস মিতায়ন একা ছিল? ঠিক?’

‘একদম ঠিক, বস। তারা বেরিয়ে যাবার একটু পরেই দরজায় নক হয়। মিসেস মিতায়ন ভেবেছিল হয়তো কোনো কারণে তার পরিবারের কেউ ফিরে এসেছে। সে দরজা খুলতেই কালো মুখোশধারী তিনজন মানুষ বাড়িতে ঢুকে পড়ে। অনুপ্রবেশকারীদের একজন ভদ্রমহিলাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেডরুমে নিয়ে যায়। অন্য দুজন বাড়ি সার্চ করছিল এমন সময় বাংলোর বাইরে গাড়ির শব্দ শুনে সবাই সচকিত হয়ে ওঠে। অন্য দুজন মুখোশধারী দৌড়ে বেডরুমে প্রবেশ করে। তাদের একজন মিসেস মিতায়নকে আটকে রাখা লোকটাকে কিছু বলে। সঙ্গে সঙ্গে জোর করে তার হা-পা-মুখ বেঁধে ফেলতে উদ্যত হয় দুজনে মিলে। অন্য লোকটা বেরিয়ে যায় বেডরুম থেকে। এই লোকটাই ডায়নিং রুম থেকে অস্ত্র হাতে আপনাদেরকে আটকে রাখে। অন্য দুজনে মিসেস মিতায়নকে বেঁধে ফেলতে উদ্যত হতেই উনি একজনের অস্ত্র ধরা হাতে লাথি মারলে তার অস্ত্র থেকে গুলি বেরিয়ে যায়।’

‘মনে হয় এই গুলির শব্দটাই আমরা বাইরে থেকে শুনেছিলাম,’ ইকবাল যোগ করল।

‘ঠিক। তো সেই লোক আপনাদের আটকে রাখে আর এদিকে তারা মহিলাকে বেঁধে ফেলে তাকে নিয়ে পেছনের বারান্দা দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এরপরেরটুকু তো আপনারা জানেন, টমি তার কথা শেষ করল।

‘ওরা এখান থেকে পালাল কিভাবে?’ তানভীর মনে মনে পুরো ব্যাপারটা অ্যানালিসিস করার চেষ্টা করছে।

‘সম্ভবত বাংলোর বাইরেই তাদের জন্যে কোনো গাড়ি অপেক্ষা করছিল,’ টমির কথার সঙ্গে সঙ্গে তানভীরের মনে পড়ে গেল বাংলোতে প্রবেশ করার সময়ে ও একটা কালো রঙের গাড়িকে বাংলোর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল।

‘কালো রঙের একটা গাড়ি,’ যোগ করল তানভীর।

হতে পারে। আপনাদের সঙ্গে না পেরে ওরা বাংলোর পেছন দিয়ে উলটোপাশের রাস্তায় নেমে পড়ে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে তারা ঢুকে পড়ে মার্লিন বিল্ডার্সের নির্মাণাধীর এলাকার ভেতরে। সেখান দিয়ে তারা আখালিয়া মেইন রোডেও যেতে পারে আবার বাগবাড়ির দিকেও যেতে পারে বাইপাস রাস্তায়। সঠিক কোন দিকে গেছে সেটা এখন বের করা খুবই কঠিন।’

‘ওপাশের পুলিশ প্যাট্রোলকে সতর্ক কর হয়েছে গাড়িটার ব্যাপারে?’ তানভীর জানতে চাইল।

‘অবশ্যই, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমি সতর্ক করে দিয়েছি,’ ইকবাল বলে উঠল।

‘গুড,’ বলে এক মুহূর্ত ভাবল তানভীর। ‘আমি পরবর্তী করণীয়গুলো ঠিক করে দিচ্ছি-সবাই যার যার মতো কাজে নেমে পড়ো। প্রথমেই টমি, তুমি দুটো কাজ করবে। এই বাংলো সংশ্লিষ্ট আশপাশের যদি কোনো বাড়িতে সিসি টিভি থাকে তবে চেক করে দেখো ওই কালো গাড়ির কোনো ছবি বা নম্বর পাওয়া যায় কি না। আর তুমি, সুলতানের সঙ্গে বসে একটা অস্ত্রের ব্যাপারে খোঁজ করবে। সুলতান তুমি এই ব্যাপারে টমিকে ব্রিফ করো, ইন্টারনাল আর এক্সটারনাল ওয়েবে সার্চ দিয়ে বের করো ওই ব্যাপারে কিছু জানা যায় কি না। ইকবাল,’ বলে সে ইকবালের দিকে ফিরে যোগ করল।

‘আপনি ফোর্সে যোগাযোগ করেন কালো গাড়ির কোনো হদিস পাওয়া যায় কি না। সেইসঙ্গে মিসেস মিতায়ন ও তার পরিবারের জন্যে পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করেন,’ বলে ও উঠে দাঁড়াল। ‘সবাই যার যার কাজে নেমে পড়ো। আমি…আমি মিসেস মিতায়নের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

‘উনি, বেডরুমে আছেন, ফরেনসিকের একজন ডিউটি ডাক্তার আর নার্স তাকে পরীক্ষা করে দেখছে,’ টমি বলে উঠল। তানভীর দেখল সুলতান আর টমি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

ওরা কি কিছু টের পেয়েছে? সুলতান অবশ্যই কিছু বুঝতে পেরেছে। ওদের কারো সঙ্গেই ঠিকমতো দৃষ্টি না মিলিয়েই ও রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটা করতে হবে ওকে এই মুহূর্তে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *