ব্লটিং পেপার
এই গরমে কেউ কাশী যায়?
যায়। অবশ্যই যায়। কাশী অর্থাৎ বেনারস যাওয়ার রেলের কামরাগুলো কি ফাঁকা থাকে? থাকে না। ভিড়ে গিজ গিজ করে। যেকোনও রেলের অফিসে সিট রিজার্ভ করতে গেলেই ব্যাপারটা টের পাওয়া যাবে।
প্রমথেশও টের পেয়েছিল। এবং টের পেয়ে খুশি হয়েছিল এই কারণে যে সে ছাড়াও এই ভরা গরমে আরও ঢের ঢের লোক আছে কাশী যাওয়ার। এরা সবাই কি আর কাজে-কর্মে, প্রয়োজনে কাশী যাচ্ছে, কেউ কেউ নিশ্চয়ই বেড়াতেও যাচ্ছে।
প্রমথেশ বেড়াতেই যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, সে একটু খ্যাপাটে ধরনের লোক। সংসারী মানুষ, অনতিযুবতী স্ত্রী, দুই কিশোরী কন্যা। একটি মাঝারি মাপের চাকরি। কাজকর্ম, সংসারধর্ম পালন ইত্যাদি প্রমথেশ প্রায় ঠিকঠাকই করে কিন্তু তার অন্তর্গত রক্তের ভিতরে একটা খ্যাপামি আছে। সে এক শৃঙ্খলাবদ্ধ যাযাবর। সব সময়ে তার মন উচাটন, কোথায় যাই, কোথায় যাই? একনাগাড়ে দুই সপ্তাহের বেশি ঘরে তার মন বসে না। কিন্তু সব সময়ে বেরোনো সম্ভব হয় না। তবে মাস দুয়েকের মাথায় সে চঞ্চল হয়ে ওঠে, বাইরে বেরোতেই হবে।
প্রমথেশের স্ত্রী ভাস্বতী। সে সব সময় সামলায়। প্রমথেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার হুটহাট বেরোনো সম্ভব হয় না। দুই মেয়ে আছে, তাদের ইস্কুল আছে। বাড়িতে চাদা নামে একটা সাদা
বেড়াল আছে, সে সারাদিন ভাস্বতীর পায়ে পায়ে ঘোরে। কোথাও বাইরে গেলে সেই বেড়ালের দেখাশোনা, খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করে যেতে হয়। এইরকম অজস্র ঝামেলা।
দুয়েক মাস অন্তর প্রমথেশ একাই বেরিয়ে পড়ে। কখনও কাছে-পিঠে দিঘায় বা মুকুটমণিপুরে। কখনও বা পুরী-দার্জিলিং। পয়সা ও সময় থাকলে দিল্লি, মুম্বই, মাদ্রাজ, কন্যাকুমারী। একবার নেপাল এবং আরেকবার বাংলাদেশেও গিয়েছিল। তবে প্রমথেশ স্বার্থপর নয়। যেখানেই যাক বাড়ির সকলের জন্য, এমনকী চাদা বেড়ালের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। বেরিয়ে ফেরার সময় মিষ্টি নিয়ে আসার একটা রীতি আছে, সে রীতিটাও বেশ মান্য করে চলে প্রমথেশ।
কাশী থেকে আসার সময় এক হাঁড়ি পাড়া নিয়ে এসেছে প্রমথেশ। ভাস্বতীর জন্যে শাড়ি এনেছে, বেশ দামি শাড়ি। মেয়ে দুটির জন্যে শালোয়ার-কামিজ। আর চাঁদা বেড়ালের জন্যে একটা কাঠের ইঁদুর, সেই ইঁদুরের ঘাড়টা হাওয়া লাগলেই নড়ে।
আজ ট্রেনটা প্রায় ঠিক সময়েই এসেছে। হাওড়া স্টেশনে একটা শেয়ার ট্যাক্সিতে কিঞ্চিৎ অর্থদণ্ড দিয়ে প্রমথেশ সকাল সকালই বাড়ি এসে পৌঁছেছে। এখন খাওয়ার টেবিলে সে পাড়ার হাঁড়িটা সামনে নিয়ে বসেছে।
এক মুঠো মানে বেশ কয়েকটা পাড়া বের করে সামনের প্লেটে রাখল প্রমথেশ। পায়ের নীচে চাদা বেড়াল ঘুরঘুর করছিল। তাকে একটা পাড়া দিল। চাঁদা প্যাড়াটা কুটকুট করে সঁতে কেটে খেতে লাগল।
কিন্তু ভাস্বতী ভাবেনি হাঁড়ির মধ্যে পাড়া আছে, সে ধরে নিয়েছিল এটা রাবড়ির হাঁড়ি। সুতরাং পাড়া দেখে সে স্বগতোক্তি করল, ভেবেছিলাম রাবড়ি বুঝি।
অনুচ্চ কথাটা কিন্তু প্রমথেশের কানে গেল এবং সেই মুহূর্তে একটা গভীর অনুশোচনা তার মনের মধ্যে দেখা দিল।
এক সময় পিসিমা-জেঠিমার সঙ্গে, তার আগে ঠাকুমার সঙ্গে এবং এই সেদিন পর্যন্ত বাবা-মার সঙ্গে, যতদিন তারা বেঁচে ছিলেন, বারবার গয়া-কাশী-বৃন্দাবন গিয়েছে প্রমথেশ তার অবিবাহিত বয়সে। কু-ঝিক-ঝিক রেলগাড়ি। রঙিন স্টেশন, বিচিত্র খাদ্য ও পসরা, এসবের মধ্যে কাশীর প্রধান আকর্ষণই ছিল রাবড়ি। ঘন রাবড়ি দিয়ে হাতে গরম বড় বড় ফুলকো লালরুটি তার চেয়ে সুখাদ্য জগৎসংসারে কোথাও নেই।
ভাস্বতী রাবড়ির কথা জিজ্ঞেস করা মাত্র সরল ও সৎ প্রমথেশ থমকে গেল। সত্যিই তো এত কটা দিন কাশীতে থাকলাম, রাবড়ির কথা মনে পড়ল না।
এবার কাশীতে একদিনও রাবড়ি খায়নি প্রমথেশ, তার কোনও দোষ নেই। এক সময়ে কাশীর আকাশ-বাতাস ম-ম করত রাবড়ির উষ্ণ সৌরভে। ঘন দুধের মাদক ঘ্রাণ ভাসত বাতাসে। সন্ধ্যার পরে লোকেরা মন্দির থেকে ফেরার পথে ভাঁড় ভরতি রাবড়ি আর হাতে গড়া রুটি নিয়ে যেত। তাই দিয়ে নৈশাহার হয়ে যেত রীতিমতো চেটেপুটে।
এবার প্রমথেশ গিয়ে উঠেছিল এক টুরিস্ট লজে। দুবেলা খেয়েছে সেখানে। সেই ভাত-ডাল, রুটি-মাংস, সবজি এসব জায়গায় যেমন হয় আর কি। রাবড়ি কেন, কোনও মিষ্টিই খাওয়া হয়নি। রাস্তাঘাটেও মিষ্টির দোকান নজরে আসেনি। তার বদলে সারি সারি ভুজাওয়ালার দোকান।
আসার দিন স্টেশনের কাছের পুরনো মিষ্টির দোকানটা থেকে হঠাৎ খেয়াল করে এই পাড়াগুলো কিনে এনেছে প্রমথেশ। যতদূর মনে পড়ছে, সে দোকানেও রাবড়ি দেখেনি, দেখলে নিশ্চয়ই কিনে আনার কথা মনে হত।
এখন ভাস্বতী রাবড়ির কথা উল্লেখ করায় প্রমথেশ বলল, দ্যাখো, কী আশ্চর্য কাণ্ড! এবার কাশীতে কোথাও রাবড়ি দেখলাম না।
ভাস্বতী প্রশ্ন করল, তুমি খুঁজেছিলে?
প্রমথেশ বলল, না খুঁজিনি। কিন্তু ওখানে তো ষাঁড়, সন্ন্যাসী আর রাবড়ির জন্যে খোঁজাখুঁজি দরকার পড়ত না। প্রথম দুটো এখনও আছে কিন্তু রাবড়িটা গেছে।
তারপর একটু থেমে প্রমথেশ বলল, কাশী থেকে রাবড়ি আনিনি তাই কী হয়েছে, আমি বড়বাজারে সত্যনারায়ণ পার্কের কাছে একটা দোকান চিনি, দুর্দান্ত রাবড়ি বানায়, কাশীর রাবড়ির থেকে কোনও অংশে কম নয়।
ভাস্বতী বলল, সে দোকানের রাবড়ি শেষ কবে খেয়েছ? অন্তত পনেরো বছর আগে। সে দোকান এখনও আছে তো?
ভাস্বতীর আশঙ্কাই সত্যি হল।
একদিন বিকেলবেলা অফিস ছুটির পর প্রমথেশ বড়বাজারে সেই রাবড়ির দোকানের খোঁজে গেল। বড়বাজারের রাস্তাঘাটের সঙ্গে সুপরিচয় না থাকলে সেখানে হাজারো গলিঘুজির মধ্যে কোনও কিছু খুঁজে বের করা কঠিন। রাস্তায় কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারে না বা বলতে চায় না। সেই সব দুর্ভেদ্য গলির মধ্যে ট্যাক্সি, রিকশ কিছু নিয়েই ঢোকা কঠিন। পায়ে হেঁটে, ভিড়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি করে সেই পুরনো রাবড়ির দোকানটা খুঁজল প্রমথেশ। কিন্তু পেল না।
রাস্তাঘাট, দোকানপাটের চেহারা খুব একটা পালটায়নি। ঠিক জায়গাতেই প্রমথেশ শেষ পর্যন্ত পৌঁছেছিল, কিন্তু সেই প্রাচীন দোকানটা আর নেই। সেখানে ঝলমল করছে এক ভুজাওয়ালার দোকান। আজকাল যেমন হয়েছে সব পাড়ায় পাড়ায়, চানাচুরের চেন স্টোর, মার্কিনি বাণিজ্যের কালোয়াড়ি সংস্করণ।
ক্লান্ত, গলদঘর্ম হয়ে বাসায় ফিরে ব্যর্থ প্রমথেশ ভাস্বতাঁকে কিছু বলল না। তবে মনে মনে স্থির করল, কাশীর রাবড়ির মতো উচ্চমানের না হলেও সাধারণ মানের রাবড়ি কোনও মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে আনতে হবে। ভাস্বতী তো আর দৈনিক রাবড়ি খায় না। বলতে গেলে দু-চার বছরেও একদিন খায় না, সে সাধারণ রাবড়ি খেয়েই খুশি হবে।
কিন্তু রাবড়ি কেনা এত সোজা ব্যাপার নয়। পাড়ার আশেপাশে সমস্ত মিষ্টির দোকানে খোঁজ করল প্রমথেশ। কোথাও রাবড়ি পাওয়া যায় না। সন্দেহ হল, কোনও কোনও দোকানদারের প্রশ্নসূচক এবং বিস্ময়বোধক কথায়, নতুন যুগের মিষ্টিওয়ালারা অনেকে রাবড়ির নামই শোনেনি।
বাসায় এসে এ কথা বলতে ভাস্বতী বলল, বলছ, কাশীতেই রাবড়ি দেখলে না। কলকাতায় দেখতে পাবে, আশা কর কী করে?
প্রমথেশের চেষ্টা কিন্তু কমল না। সে হাল ছাড়ার পাত্র নয়। রাস্তাঘাটে, বাজারে যেখানেই বড় মিষ্টির দোকান দেখতে পায় সে গিয়ে রাবড়ির খোঁজ করে। কিন্তু কোথাও রাবড়ি নেই।
অফিসে এসে সহকর্মীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করল প্রমথেশ।
সব অফিসেই দু-চারজন সবজান্তা লোক থাকে। তারা মেয়ের গানের মাস্টারের খোঁজ থেকে কোথায় জন্ডিসের মালা পাওয়া যায়, কোন ঘোড়া এই শনিবারের রেসে অবশ্যই জিতবে–সব কিছুর হদিশ দিতে পারে।
প্রমথেশের কথা শুনে বলাইবাবু বললেন, রাবড়ি পাবে তুমি ভবানীপুরে জগুবাবুর বাজারের পিছনের রাস্তায়। বলাইবাবু কালীঘাটের বাসিন্দা, তার পক্ষে এটা অবশ্য জানা সম্ভব।
একজন আবার বড়বাজারের কথা বললেন। কিন্তু প্রমথেশ আর বড়বাজারে যাবে না। একবার গিয়ে যথেষ্ট নাজেহাল হওয়া গেছে। ন্যাড়া বেলতলায় কবার যায়?
তবে তালতলার হরেন চক্রবর্তী বললেন, আমাদের পাড়ার কাছেই জানবাজারে রাবড়ি পাওয়া যায়। রানি রাসমণির বাড়ির উলটো দিকে দুটো পুরনো দিনের হিন্দুস্থানি দোকান এখনও পাশাপাশি আছে।
প্রমথেশ ঠিক করল জানবাজারেই আগে যাবে। অফিস থেকে হাঁটা পথে মাইলখানেকের মধ্যে পড়ে।
জানবাজারে গিয়ে হরেন চক্রবর্তীর নির্দেশমতো দোকান দুটো খুঁজে বার করতে বিশেষ কোনও অসুবিধে হল না। কিন্তু এ দুটো তো মোটেই মিষ্টির দোকান নয়, বলা উচিত দুধের দোকান। বড় বড় উনুন গনগন করে জ্বলছে। তার ওপরে বিশাল লোহার কড়াইতে টগবগ করে ফুটছে দুধ। সামনে কাঠের বেঞ্চিতে বসে কাঁচের গেলাসে দুধ খাচ্ছে খদ্দেররা।
প্রমথেশ জিজ্ঞাসা করতে জানতে পারল, হ্যাঁ, রাবড়ি পাওয়া যাবে। তবে অর্ডার দিতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই এবার প্রমথেশ জিজ্ঞাসা করল, কতটা অর্ডার দিতে হবে এবং দাম কীরকম? জানা গেল, অন্তত দশ কেজি অর্ডার না দিলে রাবড়ি বানানো সম্ভব নয়। কেজি প্রতি দাম পড়বে তিনশো টাকা করে।
দশ কেজি রাবড়ি এবং তিনশো ইনটু দশ মানে তিন হাজার টাকা। প্রমথেশের মাথা ঘুরে গেল। সে দোকানের বেঞ্চিতে বসে এক গেলাস গরম দুধ পাঁচ টাকা দিয়ে কিনে ধীরে সুস্থে সাব্যস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এল।
কিন্তু প্রমথেশের মাথা থেকে রাবড়ির চিন্তাটা কিছুতেই গেল না। রাবড়ির মতো অমন স্বর্গীয় সুখাদ্য, সেটা কেন বাজার থেকে উবে গেল।
উত্তরটা কয়েকদিনের মধ্যেই অবশ্য পাওয়া গেল। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, অফিসের সহকর্মী, পুরনো বন্ধু বহু লোকের সঙ্গেই প্রমথেশ এ নিয়ে আলোচনা করেছে।
প্রমথেশের প্রবীণ প্রতিবেশী গোবিন্দলাল ঘোষ একদা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী ছিলেন। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ের অনেক ফাঁকফোকর তার জানা আছে। ভদ্রলোক এখন একটি স্টেশনারি দোকান চালন।
এই গোবিন্দলালবাবু একটি চমকপ্রদ খবর দিলেন। রাবড়ি বাজার থেকে উঠে গেছে তার একমাত্র কারণ হল যে বাজারে এখন আর ব্লটিং পেপার পাওয়া যায় না। প্রথমে ফাউন্টেন পেন এবং তার পরে ডট কলমের এই যুগে ব্লটিং পেপারের আর প্রয়োজন নেই, কাগজের কোম্পানিগুলো আর ব্লটিং পেপার বানায় না।
সংবাদটা শোনার পর প্রথম ধাক্কাটা একটু সামলিয়ে নিয়ে প্রমথেশ গোবিন্দলালবাবুকে জিজ্ঞাসা করল, ব্লটিং পেপার? কিন্তু ব্লটিং পেপারের সঙ্গে রাবড়ির কী সম্পর্ক?
গোবিন্দলালবাবু আজ্ঞের মতো হাসলেন, বললেন, আপনার কি ধারণা যে রাবড়ি শুধু দুধ জ্বাল দিয়ে হয়? তাতে খরচা পোষাবে? রাবড়ি বানানোর সময় দুধ জ্বাল দিতে দিতে আস্তে আস্তে ব্লটিং পেপার ছিঁড়ে সেই দুধের মধ্যে দিতে হয়। তারপর যত ঘন হয়ে আসে চিনি দিয়ে সেই দুধ মাড়তে হয়।
প্রমথেশ বলল, কিন্তু আমি অল্প বয়েসে দেখেছি, দুধের কড়ার ওপরে বাঁশের চোঙা দিয়ে ফুঁ দিয়ে কারিগরেরা রাবড়ি বানাচ্ছে। সর জমছে, তারপর সেই সর হাতা দিয়ে ভেঙে আবার ফুঁ দিয়ে সর বানাচ্ছে।
গোবিন্দলালবাবু বললেন, ও সব লোকদেখানো ব্যাপার মশায়। আপনারা আজকাল যাকে বলেন বিজ্ঞাপন। ওপরের দিকে দুয়েক প্রস্থ সর হয়তো করা হয়, কিন্তু নব্বই ভাগই ব্লটিং পেপার।
গোবিন্দলালবাবুর কথাটা প্রমথেশ অবিশ্বাস করতে পারল না। তার কথার মধ্যে কার্যকারণ যোগ আছে।
সত্যিই তো বাজারে আজকাল ব্লটিং পেপার পাওয়া যায় না। সে নিজেই বহুদিন ব্লটিং পেপার দেখেনি।
প্রমথেশের আবছা মনে পড়ল, ছোট বয়সে সেই ইস্কুলে পড়ার সময়ে সে যেন শিখেছিল ব্লটিং পেপার কথাটা ভুল। ব্লটিং পেপার নয় হবে শুধু ব্লটিং। আজ কিন্তু বিলিতি ডিকশনারি খুলে দেখল ব্লটিং পেপার কথাটাই আছে, শুধু ব্লটিং নয়।
তাহলে এখন ডিকশনারিতেই শুধু ব্লটিং পেপার রয়েছে। পৃথিবী থেকে চিরকালের মতো সেই ব্লটিং পেপার, যাকে তারা বলত চোষ-কাগজ অদৃশ্য হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিদায় নিয়েছে রাবড়ি।
প্রমথেশ সেদিন রাতে শুয়ে পড়ার পর অনেকক্ষণ ধরে ব্যাপারটা নিয়ে তলিয়ে ভাবল। আজ কয়েকদিন ধরে ভাস্বতী এবং মেয়েরা লক্ষ করেছে, প্রমথেশ একটু অন্যমনস্ক। ভাস্বতীর ধারণা হয়েছিল সে হয়তো আবার বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছে।
ভাস্বতী সেদিন রাতে প্রমথেশকে প্রশ্ন করল, আজকাল তুমি কী এত ভাবছ বল তো, দূরে কোথাও বাইরে যাবে নাকি?
প্রমথেশ বলল, না তা নয়। আমি ভাবছি ব্লটিং পেপারের কথা।
ভাস্বতী অবাক হল, ব্লটিং পেপার? ব্লটিং পেপার দিয়ে কী হবে তোমার?
প্রমথেশ বলল, জান আজকাল আর বাজারে ব্লটিং পেপার পাওয়া যায় না।
ভাস্বতী আরও আশ্চর্য হয়ে বলল, না পাওয়া গেলে আমাদের কী ক্ষতি হচ্ছে শুনি। ডট পেনে ব্লটিং পেপারের তো আর দরকার পড়ে না।
সেটা প্রমথেশ জানে। কিন্তু তার মনে পড়ছে কাছারি ঘরে মুহুরিবাবু বাজার থেকে একটা বড় ব্লটিং শিট কিনে এনে সেটাকে যত্ন করে ছুরি দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করতেন। তার থেকে অধিকাংশ টুকরো কাছারি ঘরে রেখে তিনটে টুকরো তাদের তিন ভাইকে দিতেন। সেই চোষকাগজ পরম যত্নে ইস্কুলের খাতার মধ্যে রেখে দিত প্রমথেশরা। মাঝে মধ্যে সেটা চুরিও যেত।
অনেকদিন পরে পরীক্ষার হলের কথা মনে পড়ল প্রমথেশের। পরীক্ষার সময় খাতা আর প্রশ্নপত্রের সঙ্গে একচিলতে চোষকাগজও সরবরাহ করা হত। চারদিনের আটটা পরীক্ষায় আট চিলতে চোষ কাগজ জমে যেত। নির্মম পরীক্ষা পর্বের সেটাই ছিল একমাত্র আকর্ষণ। যত ছোটই হোক না কেন, আটটা চোষ-কাগজ, সেটা কম কথা নাকি, সাত রাজার ধন আট মানিক।
চিন্তাশীল স্বামীকে একটু খুঁচিয়ে দেওয়ার জন্যে ভাস্বতী বলল, শুধু ব্লটিং পেপারের কথা ভাবছ। কেন? এখন কি আর বাজারে কালির বড়ি পাওয়া যায়। স্টিলের নিব, কলমের হ্যাঁন্ডেল? লোকের প্রয়োজনই পড়ে না। দোকানদাররাও আর বেচে না।
সেদিন রাতে কেমন আবছা আবছা ঘুম হল প্রমথেশের। স্মৃতি আর তন্দ্রা জড়ানো।
কোথায় গেল সেইসব দিন কালি, কলম আর ব্লটিং পেপারের। এই তো সেদিনের কথা, তার বালক বয়েসের কথা, খুব বেশি কাল তো হয়নি। প্রমথেশ সারারাত ধরে স্বপ্ন দেখল, সে দোয়াতে কালিতে চুবিয়ে রাবড়ি তৈরির গোপন প্রণালী নামে একটা রচনা লিখছে, ডান হাত দিয়ে নিব লাগানো কাঠের হ্যাঁন্ডেলের কলমে। আর বাঁ হাতে ধবধবে সাদা চোষকাগজে লেখার গায়ের অতিরিক্ত কালি চুষে নিচ্ছে।
স্বপ্নটা শেষ পর্যন্ত একটা গোলমেলে জায়গায় এসে পৌঁছে গেল, প্রমথেশ দেখল সে রাবড়ি ভরতি বড় গামলায় কলম চুবিয়ে তাই দিয়ে লিখছে। কিন্তু সাদা কাগজে সাদা রাবড়ির দাগ পড়ছে না।
এই সময় তার ঘুম ভেঙে গেল। সে ঘুম থেকে উঠে মনে মনে স্থির করল ব্লটিং পেপার এবং তৎসহ রাবড়ির ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে।
সেদিন থেকে পূর্ণোদ্যমে প্রমথেশ লেগে গেল ব্লটিং পেপারের অনুসন্ধানে, পাড়াগাঁয়ে যাকে গোরুখখাঁজা বলে একেবারে তাই আর কি। কিন্তু গোরু খোঁজার একটা দিগ্বিদিক আছে; আশপাশের দু-দশটা মাঠ, খেত, গৃহস্থপাড়া, বাঁশঝোঁপ, বড় জোর পঞ্চায়েতের খোঁয়াড় পর্যন্ত, কিন্তু অবলুপ্ত ব্লটিং পেপারের অনুসন্ধানের কোনও নির্দিষ্ট পন্থা থাকা সম্ভব নয়।
তবু প্রমথেশ চেষ্টার ত্রুটি করল না। সে প্রথমে ভেবে নিল, আগে কোথায় কোথায় ব্লটিং পেপার পাওয়া যেত। মুদিখানা, স্টেশনারি আর অফিসের কাগজপত্র, সাজ সরঞ্জামের দোকান।
বেছে বেছে পুরনো আর বড় দোকানগুলোয় খোঁজ করতে লাগল প্রমথেশ। যেদিন মানুষেরা শেষবারের মতো ব্লটিং পেপার কেনা বন্ধ করে দিল, সেদিন নিশ্চয় কোনও কোনও দোকানে কিছু স্টক অবশিষ্ট ছিল। সেই স্টকের অবশিষ্টাংশ, সে দুটো-চারটে-দশটা যাই হোক সেগুলো দোকানে নিশ্চয় আজও পড়ে আছে, দোকানদার কোনও জিনিস ফেলে দেওয়ার লোক নয়।
অবশ্য প্রমথেশ আবার এটাও বিবেচনা করল যে, মিষ্টান্ন বিক্রেতারা সেগুলো সে সময়ে কিনে নিয়ে যেতে পারে এবং ওই অবশিষ্ট ব্লটিং পেপারগুলো দিয়েই সংসারের শেষ রাবড়িটুকু প্রস্তুত হয়েছিল।
সে যা হোক, প্রমথেশ হন্যে হয়ে খোঁজ চালিয়ে যেতে লাগল। খিদিরপুর বাজার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত, কত বিচিত্র সব দোকান সোলেমান ব্রাদার্স, মোক্ষদা ভাণ্ডার, ইম্পিরিয়াল স্টোর্স। বউবাজার, চৌরঙ্গি অঞ্চলে ভিক্টর অ্যান্ড কোম্পানি, জয়হিন্দ বিপণি।
নাম দেখে অনেক সময় বয়স বোঝা যায়, মানুষের যেমন দোকানেরও তাই। ভিক্টর মানে পঁয়তাল্লিশ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয়ের পরে কোনও ইংরেজ ভক্তের দেওয়া নাম, ইম্পিরিয়াল–তারও দশ-বিশ কিংবা বেশি বছর আগেকার। জয়হিন্দ স্বাধীন ইত্যাদির জন্মসাল অনুমান করা কঠিন নয়। তবে এরই মধ্যে আদি ও অকৃত্রিম মোক্ষদা ভাণ্ডার বা গন্ধেশ্বরী স্টোর্স এমনকী সোলেমান ব্রাদার্সের বয়স ধরা কঠিন।
বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হল প্রমথেশের। কেউ কেউ সংক্ষিপ্তভাবে নেই বলে বিদায় দিল। কেউ কেউ দোকানের আলমারি, কাগজের র্যাক খুঁজে বলল, ফুরিয়ে গেছে। কতদিন আগে ফুরিয়ে গেছে, আর কখনও পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারল না। পারবেই বা কী করে?
গড়িয়াহাট বাজারের বড় মুদিখানা দোকানের এককড়িবাবু, পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তু ব্যবসায়ী ব্লটিং পেপার শুনে কেমন ঝিম মেরে গেলেন। অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন, তারপর প্রায়। স্বগতোক্তির মতো বলতে লাগলেন, ব্লটিং, ব্লটিং পেপার। কতদিন পরে মনে করিয়ে দিলেন দাদা। সেই ক্ষীরের পুর ভরতি বড় বড় লাল পানতুয়া, কাতলামারি বিলের চিতল মাছ, খেরসাপাতি আম, পকেট ঘড়ি, ইস্টিমার… ভদ্রলোক চোখ বুজে বলে যাচ্ছিলেন। বিনা বাক্য ব্যয়ে নিঃশব্দে কেটে পড়ল প্রমথেশ।
অন্য একটা দোকান থেকে অবশ্য এত সহজে পার পেল না। সে দোকানের নীতিই হল খদ্দেরকে কখনও ফিরিয়ে না দেওয়া, নেই না বলা। শতাব্দী প্রাচীন জয় জয় মাতা গন্ধেশ্বরী ভাণ্ডার, শতাব্দীর থেকে এক দশক কম বয়সি দোকানের মালিক এখনও দোকানে দুবেলা ঘণ্টাখানেক করে বসেন। তিনি ব্লটিং পেপার শুনে বললেন, কয় শিট লাগবে। এতটা প্রমথেশ আশা করেনি। সে বলল, দুশিট হলেই হবে। দোকানি তখন একজন কর্মচারিকে ডেকে দুশিট ব্লটিং পেপার আনতে বললেন। কিন্তু ব্লটিং পেপার কোথায়? বৃদ্ধের বিশ্বাস কয়েকদিন আগেও ছিল। কিন্তু সেই কয়েকদিন তিরিশ বছর আগে চলে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি হল, কিন্তু পাওয়া গেল না। দোকানের সামনে প্রমথেশকে আশায় আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল ঘণ্টাখানেক।
অন্য একটা সাত্ত্বিক দোকানে ব্লটিং পেপার চাইতে তারা ভাবল টয়লেট পেপার। দাঁত খিঁচিয়ে তারা বলল, ও সব নোংরা জিনিস আমরা বেচি না মশায়।
কষ্ট করলে কেষ্ট অবশ্যই মেলে। একদিন প্রমথেশের ভাগ্যেও ব্লটিং পেপার মিলে গেল। এবং সে কোনও দোকানে বা বাজারে নয়, তার নিজেরই অফিসে একটা পুরনো আলমারির মধ্যে।
অফিসের পুরনো দলিলপত্র এই সাবেক কালের অতিকায় আলমারিটার মধ্যে থাকে। একটা তিরিশ বছর মেয়াদি লিজের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে, সেই লিজ-ডিডটা আলমারির মধ্যে খুঁজছিল প্রমথেশ। ঠিক ওপরের তাকে দলিলটা সহজেই পেয়ে গেল প্রমথেশ, কিন্তু তার চেয়েও বেশি পাওনা হল যখন সে আবিষ্কার করল, দলিলের তূপের নীচে রয়েছে একগাদা ভঁজ করা ব্লটিং পেপার। বার করে গুনে দেখল প্রমথেশ, সবসুদ্ধ আটটা রয়েছে। বহুকাল আগে তুলে রাখা হয়েছে, তারপর আর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। অফিসে সেই কবে কালি কলমের যুগ শেষ হয়ে গেছে।
তা এতগুলো ব্লটিং পেপারের এখন মোটেই প্রয়োজন নেই প্রমথেশের। একটা হলেই তার পক্ষে যথেষ্ট।
আলমারি থেকে লিজের দলিলটার সঙ্গে একটা ব্লটিং পেপারই বার করল প্রমথেশ। টেবিলে নিয়ে এসে সেটা একটু শুকল প্রমথেশ। তার মনে আছে, ব্লটিং পেপার ঠিক ঘ্রাণহীন ছিল না, কেমন একটা হালকা বোঁদা গন্ধ ছিল। সে গন্ধটা অবশ্য আজ সে পেল না। কেমন একটা পুরনো পুরনো গন্ধ, তা অন্তত পঁচিশ-ত্রিশ বছরের পুরনো তো বটেই। প্রমথেশের মনে পড়ে না সে এই অফিসে ঢোকার পরে ব্লটিং পেপারের ব্যবহার দেখেছে।
একটা আস্ত ব্লটিং পেপার অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া চুরির পর্যায়ে পড়ে। ব্লটিং পেপারটা বেশ কুচিকুচি করে ছিঁড়ে সে একটা প্লাস্টিকের ঠোঙায় পুরে বাড়ি নিয়ে এল।
ভাস্বতী প্রমথেশের হাতে ঠোঙা দেখে ভেবেছে অফিস থেকে আসার পথে মোড়ের দোকান থেকে প্রমথেশ বোধহয় গরম সিঙাড়া কিনে এনেছে। কখনও কখনও সে এরকম আনে। কিন্তু আজ ঠোঙাটা হালকা দেখে সেটা খুলে কাগজের টুকরোগুলো দেখে অবাক হয়ে গেল ভাস্বতী। তারপর জিজ্ঞাসা করল, এগুলো কী?
প্রমথেশ বলল, ব্লটিং পেপারের টুকরো। বহু ভাগ্যে পেয়েছি।
ভাস্বতী অবাক হল, এগুলো কী কাজে লাগবে? এর জবাবে প্রমথেশ যখন বলল, এগুলো দিয়ে রাবড়ি তৈরি হবে, ভাস্বতী রীতিমতো ঘাবড়িয়ে গেল। সে ঠোঙার মধ্যে ব্লটিং পেপারের ঘেঁড়া টুকরোগুলো অভিনিবেশ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল, রাবড়ি? ব্লটিং পেপার দিয়ে রাবড়ি?
সেদিন সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে প্রমথেশ ভাস্বতাঁকে রাবড়ির অন্তর্ধান রহস্য ব্যাখ্যা করল। ভাস্বতী সমস্ত কথা শুনে খুব একটা রোমাঞ্চিত হল এমন কথা বলা যাবে না, তবে বার কয়েক তাই নাকি, তাই নাকি বলল।
পরের রবিবার দিন সকালবেলা প্রমথেশ মাদার ডেয়ারির দোকানে লাইন দিয়ে চার লিটার দুধ কিনে আনল। অতটা দুধ এক সঙ্গে জ্বাল দেওয়া যায় এমন পাত্র এ বাড়িতে নেই। পাশাপাশি দুটো গ্যাসের উনুনে একটা গামলায় এবং একটা ডেকচিতে দুধ ভাগ করে জ্বাল দিতে লাগল প্রমথেশ, সামনে একটা থালায় কুচি করে ভেঁড়া ব্লটিং পেপার, তা ছাড়া কৌটো ভরতি চিনি, ছোট এলাচের গুঁড়ো–এইসব।
ভাস্বতী প্রথমে বিশেষ উৎসাহ দেখায়নি। কিন্তু দুধ টগবগ করে ফুটতে লাগল, সেও প্রমথেশের পাশে এসে দাঁড়াল। দুটি পাত্রে ধীরে ধীরে ব্লটিং পেপারের কুচি, চিনি আর এলাচ গুঁড়ো পরিমাণ মতো মিশিয়ে ঘন করে তৈরি হল পৃথিবীর শেষ রাবড়ি।
প্রমথেশ টেস্ট করতে যাচ্ছিল। কিন্তু তাকে থামিয়ে বলল, তুমি আগে খেয়ো না। গোবিন্দলালবাবুকে ডেকে আনো। উনি আগে খেয়ে দেখুন, গোবিন্দবাবুর কথা মতোই যখন করা হল, আগে উনি চেখে বলুন কেমন হয়েছে।
মিনিট পনেরো পরে গোবিন্দবাবুকে সঙ্গে নিয়ে প্রমথেশ বাসায় এল। তাকে বাইরের ঘরে বসিয়ে বলল, আজ আপনাকে এমন একটা জিনিস খাওয়াব যা আপনি ভাবতে পারেন না।
কৌতূহলী গোবিন্দবাবু জানতে চাইলেন জিনিসটা কী?
প্লেট ভরতি উষ্ণ রাবড়ি নিয়ে বাইরের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভাস্বতী বলল, পৃথিবীর শেষ রাবড়ি।
গোবিন্দবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, রাবড়ি পেলেন কোথায়?
প্রমথেশ বলল, বাসায় ব্লটিং পেপার দিয়ে বানিয়েছি। গো
বিন্দবাবু আশঙ্কান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ব্লটিং পেপার? ব্লটিং পেপার পেলেন কোথায়?
প্রমথেশ বলল, অফিসের একটা পুরনো আলমারির তাকে পেয়ে গেলাম। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। দেখছেন না পুরনো ব্লটিং পেপার দুধের মধ্যে কেমন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। নিন, একটু টেস্ট করে দেখুন। আপনি খেয়ে তারিফ করলে তারপর আমরা খাব।
গোবিন্দলালবাবু রাবড়ির দিকে তাকিয়ে প্রমথেশের অনুরোধ শুনে দরদর করে ঘামছিলেন। অবশেষে তার হাত থেকে পৃথিবীর শেষ রাবড়ির প্রথম প্লেটটা মেঝেতে পড়ে গেল।