ব্রজবিহারীর ধনুর্ভঙ্গ
ব্রজবিহারীর ধনুর্ভঙ্গ পণ ছিল না মাধবীকে বিয়ে করার, ছিল সেটা ধনুর; তাই চিঠিটা পেয়ে একটু অবাক হয়েছিলাম বইকি।
বাড়ি-ঘর ছেড়ে এতকাল নিরুদ্দেশে থাকার পর ফিরে এসে অবশেষে মাধবীর মত একটা আধবুড়িকে তার বিয়ে করাটা আমার কাছে একটু অভূতপূর্ব বলেই মনে হয়।
ষাট বছর পেরিয়ে বিয়েব ছাঁদনাতলায় গিয়ে লটকানো কম বিস্ময়কর নয় তো।
অবাক তো হয়েছিলামই, আরো অবাক করে দিল সে নিজে এসে তার পরে।
চিঠির ল্যাজ ধরে ব্রজ হাজির হলো শেষে।
পাছে তুমি ভুল বোঝো ভাই, তাই চলে আসতে হলো আমায় এই সাত তাড়াতাড়ি… এসে বলল সে।
না, ভুলু বোঝাবুঝির কী আছে ভাই! এরকম তো হয়েই থাকে আকচার। আমি বলতে চাই, প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথায়…
প্রেম ফ্রেম নয় ভাই, সে বাধা দেয় আমার কথায়—চিঠিটায় আমি ব্রজ বলে আমার নামসই করেছি তো, সেই জন্যেই আসতে হলো আমায়। শতং বদ মা লিখ, শাস্ত্রে বলেছে। সে কথাটা ভুলে গেছলাম বেমালুম। তাই ওই স্বাক্ষরটা আমার ঠিক হয়নি। কিসের থেকে কী দাঁড়ায়, ফৌজদারি আদালত অবধিই বা গড়ায় কি না কে জানে। এই বয়সে কি জেলে যেতে হবে শেষটায়, তাই…
বিয়ে করাও তো একরকমের জেলে যাওয়া ভাই, আমি শুধাই তাই নয় কি?
জেল যে, তা এর মধ্যেই টের পেয়েছি বিলক্ষণ। কিন্তু তাহলেও আলিপুরের সশ্রমের চেয়ে তো ঢের ভাল। আরামপ্রদ কারাবাসই বলা যায় একরকম।
তা বলতে পারে বটে। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে, মাধবীকে বিয়ে করার কথা ছিল ধনুর। তোমার তো নয়; কিন্তু তুমি যে…
ধনুই তো বিয়ে করেছে। এই দ্যাখো না। বলে সে একটা ছাপানো নিমন্ত্রণপত্র আমার হাতে দিল, তাতে শ্রীধনুর্ধর রায়ের সঙ্গে কুমারী মাধবী বসুর বিয়ের কথাই হাপার অক্ষরে লেখা রয়েছে বটে।
তাহলে ধনুই বিয়ে করছে, তুমি নও। তাই বল তাহলে। আমি হাঁপ ছাড়ি।
ধনু ওরফে আমি। আমিই শ্রীব্রজবিহারী বর্মণ।
হেঁয়ালি রাখো। খোলসা করে বল সব।
হেঁয়ালি নয়, সত্যি কথাই। তুমি বন্ধুজন, তোমার কাছে প্রকাশ করতে বাধা নেই। জানি, তুমি আবার তা পুনঃপ্রকাশ করে আমায় জেলে পাঠাবার ব্যবস্থা করবে না। তাই খোলসা করে সব তোমাকে বলার জন্যই এতখানি আমার ছুটে আসা।
তুমি ব্রজ না ধনু, কে তাহলে, ঠিক করে বল দেখি। সঠিক ঠাওর না পেয়ে আমি বলি—আমার নিজেরই কেমন খটকা লাগছে। তোমাদের দুজনের চেহারায় এমন আশ্চর্য মিল ছিল যে কে কোষ্টা আমরা ঠাউরে উঠতে পারতাম না। তুমি ধনু, না, ব্রজ?
আমি ব্ৰজই। বলে সে করুণ সুর ধরে : কিন্তু, আর তো ব্ৰজে যাব না ভাই, যেতে মন নাহি চায়। মা পেয়েছি বাবা পেয়েছি… ব্রজের খেলা ভুলে গেছি…না, মা আমার মারা গেছে সম্প্রতি। এখন থেকে আর আমি ব্রজ নই। অতঃপর, আমি শ্রীধনুর্ধর—এখন থেকে বরাবর।
বুঝতে পারছি না কী ব্যাপার।
সবটাই আমার কাছে যেন ধাধার মতই লাগে। সে বলতে থাকে।
ভাওয়ালের মেজকুমারের সেই কেসটা, ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলা গো! তোমার মনে আছে নিশ্চয়? আমার ব্যাপারটাও প্রায় সেই রকমই বলতে গেলে। তবে ভাওয়ালের বেলায় সন্ন্যাসীর নিজের সাধু হবার ইচ্ছা ছিল। আর এক্ষেত্রে আমার অনিচ্ছাসত্ত্বেও, ব্যাপারটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। এই যা তফাত।
আইন-বিরুদ্ধ কোন কাজ করার বাসনা কোনদিনই আমার ছিল না, এক্ষেত্রে তো নয়ই, কিন্তু পাকচক্রে কেমন করে কী যে ঘটে যায়! ভবিতব্যের লিখন যাকে বলে আর কি!…
আমাদের সোনারপুর থেকে সেই কলেজে পড়বার সময় আমি আর ধনু নিরুদ্দেশ হয়ে গেলাম না? বছর চল্লিশেক হলো তো? তারপর থেকে আমাদের আর কোন খবর পাওনি তোমরা—রাখওনি তেমন। ভাগ্যান্বেষণে সারা ভারত তারপর ঘুরেছি আমরা দুজনে, তারপরে কোথাও কিছু সুবিধা করতে না পেরে কপাল ঠুকে বর্মা মুল্লুকে পাডি দিলাম আমরা। বর্ষায় গেলেই কপাল ফেরে, বলত লোকে তখন। অন্ততঃ শরৎবাবুর উপন্যাস পড়ে সেই রকমের একটা ধারণা জন্মেছিল আমাদের।
মাঝপথে সমুদ্রে ঝড়ের মুখে পড়ে আমাদের যাত্রী জাহাজটা ডুবে যায়—সেই থেকে ধনুর সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি। আরেকটা জাহাজ এসে নিমজ্জমান আমাদের কতকগুলোকে তুলে নেয়, তাদের ভেতরে ধনু ছিল না কিন্তু। মনে হয় সে তলিয়ে গেল সেই ঝড়ে।
যাক, আমি তো সেই জাহাজে বর্মায় গিয়ে পৌঁছলাম। এটাসেটা করতে করতে ঢাকের ব্যবসায় লেগে গেলাম শেষটায়। ঢীক এক রকমের দামী কাঠ, জান বোধহয়? টীকের কারবারে অনেক টাকা কামিয়ে ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর টিকে থাকা গেল না…।
কেন? টীকের জঙ্গল সব সাফ হয়ে গেল বুঝি?
না না। আমরাই সাফ হয়ে গেলুম। বর্ষার নয়া বিপ্লবী সরকার এসে বিদেশীর যত ব্যবসাপত্তর বাজেয়াপ্ত করে নিল, নিঃসম্বল উদ্বাস্তু হয়েই ফিরে আসতে হলো স্বদেশে।
কোথায় যাই? ভাবলাম, বাড়িতেই ফিরে যাই, কিন্তু বাড়িঘর কি আছে আর আমার? মা ছোটবেলায় মৃত, তারপর মামার বাড়িতেই আমি মানুষ কিন্তু সেখানে যেতে মন চাইল না। ভেবেচিন্তে নিজের গ্রাম সোনারপুরেই ফিরলাম।
কিন্তু সোনারপুর আর সেই সোনার গ্রামটি নেই, শহরতলী হয়ে তার ভোল পালটে গেছে এখন। কোথায় যে আমাদের ভিটে ছিল তার কোন হদিশই মিলল না। আর মিললেই বা কী হতো? তিন কূলে তো কেউ ছিল না আমার। শুনলাম মামারাও সেখান থেকে উঠে গেছেন কোথায়।
ভাবলাম, আপাতত আমার ইস্কুলের বন্ধু পার্থর বাড়িতেই উঠি গিয়ে নাহয়। তারপর দিনকয়েক সেখানে কাটিয়ে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়ে পড়া যাবে আবার।
সোনারপুরে পার্থদের বর্ধিষ্ণু পরিবার। তারা নিশ্চয় উঠে যায়নি অন্য কোথাও।
গিয়ে দেখলাম, পার্থ তার বাড়ির বোয়াকেই বসে। কিন্তু সে আর সেই আগের পার্থটি নেই—ছিমছাম সুশ্রী চেহারার সেই পার্থ। ভুঁড়ি বাগিয়েছে এখন, বুড়িয়ে গেছে বেশ।
পার্থ, চিনতে পারছিস আমায়?
শুধোতেই না তার মুখ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তারপর তার হুঁড়ির পরিধিতে আন্দোলন দেখলাম।
-ওমা ধনু যে! অ্যাদ্দিন পরে। কী আশ্চর্য!
তারপরই সে হাঁক পাড়ল বাড়ির নেপথ্যে—মা! মা! নেমে এসে একবারটি। ধনু ফিরে এসেছে আবার—পরলোকের থেকে।
আর, এই ভাবেইনতুন নাটকের যবনিকা উঠল আমার জীবনে। আমি বলতে যাচ্ছিলাম,
না, আমি ধনু নই, ব্রজ। আমরা দুজনে যে দেখতে ঠিক একরকম ছিলাম তা কি তোমার মনে নেই? এমন কি মাস্টারদেরও ভুল হতো আমাদের দুজনকে নিয়ে। ধনুর অপরাধে আমাকেই বেত খেতে হয়েছিল কতবার। মনে পড়ছে না তোমার?… বলতে যাচ্ছি, কিন্তু বলতে দিলে তো! কই পেলাম না কথাটা বলবার।
ইতিমধ্যে পার্থর মা নেমে এসেছিলেন–আমাকে দেখে তার আনন্দ যেন উথলে উঠল। পাড়ার আরও লোক সব জড়ো হল এসে, যেন হারানো মানিক ফিরে পেয়েছে সবাই-কারো আর আনন্দের অবধি রইল না। সেই উল্লাসের তোড়ে আমার কথাটা কোথায় যেন তলিয়ে গেল। পাড়ার ফুরসতই হলো না আর।
এরই ভেতরে পার্থ আমায় আড়ালে ডেকে বলেছে—জান, তোমার মা ইতিমধ্যে লাখখানেক টাকা পেয়েছেন লটারিতে? তবে বুড়ি আর বেশিদিন টিকবে না ভাই! শরীর এমন ভেঙে পড়েছে তার। চোখেও ভাল দেখতে পান না আর।
খবরটা পেতেই আমি চেপে গেলাম একদম। আমার মত বদলে গেল সঙ্গে সঙ্গে। ব্রজকে সলিল-সমাধিতে পাঠিয়ে ধনু বনে গেলাম দেখতে না দেখতে। আর, সবাই যখন আমাকে ধনু বলেই ধরে নিয়েছে, চিনতে ভুল হচ্ছে না কারো—তখন বৃথা আর ব্রজবুলি আউড়ে আমার লাভ কী?
পার্থ আমাকে খবর দিল আরো। মাধবীর খবরটাও দিল আমায়। মাধবী আমাদের সঙ্গেই পড়ত স্কটিশ চার্চ কলেজে, তাকে বেশ মনে ছিল আমার যদিও আমার চাইতে ধনুর সঙ্গেই তার ভাব ছিল বেশি।
পার্থ বলল—মাধবী এখনো তোমার জন্যে অপেক্ষা করে বসে আছে। তাকে বিয়ে করবে বলে তুমি কথা দিয়েছিলে না? সেই কথা বিশ্বাস করে এখনো সে আর কাউকে বিয়ে করেনি।
তাই নাকি? কিন্তু এই বয়সে—সেটা কেমন হবে? …মানে, তাকে এই বিয়ে করাটা? আমি বলি পার্থকে।
সে তুমি যা ভাল বোঝ। আমার মতে, তোমার ওকে বিয়ে করাই উচিত। তোমার মাকে সে-ই এতদিন ধরে দেখাশুনা করছে—সেবা-যত্ন করছে ঠিক আপন শাশুড়ির মতই। তারও তো তিনকুলে কেউ নেই এখন আর। সে তোমার মা-র কাছে থাকে। ঠিক তার মেয়ের মতই।
ধনুর মাকে গিয়ে প্রণাম করতেই তিনি আমায় বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে বসলেন—জানতুম তুই ফিরে আসবি একদিন। ঠাকুর-দেবতার দোর ধরে তোকে পেয়েছিলাম, জাহাজডুবি হলেও তুই বেঁচে যাবি আমি জানতাম। নিশ্চয় আর কোন। জাহাজ তুলে নেবে তোকে।…
তাই হয়েছিল মা। আরেকটা জাহাজ কাছ দিয়েই যাচ্ছিল তখন–তুলে নিল আমাদের। কিন্তু ব্রজ-বেচারীর আর কোন পাত্তা পাওয়া গেল না তারপর।
আমার স্থির বিশ্বাস ছিল আমার মরবার আগে তোকে আমি দেখতে পাব। মাকে তোর মনে পড়বে একদিন। ফিরে আসবি তুই আমার কোলে আবার।
মাধবীকে নিয়ে একটু বেগ পেতে হবে ভেবেছিলাম কিন্তু সে কোন উচ্চবাচ্য করল; আর বিয়ে করার কথাটা পাড়লই না একেবারে। বেঁচে গেলাম আমি, বলতে কি!
শৈশবের থেকে মা-হারা, মাতৃস্নেহ কাকে বলে জানিনে, তার স্বাদ ষোল আনাই পেলাম ধনুর মা-র কাছে। নিজের মায়ের সেবা করার সুযোগ পাইনি, দুঃখ ছিল মনে, তারও কোন ত্রুটি রাখলাম না আমি। মাতৃসেবার চূড়ান্ত করে ছাড়লাম।
বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো স্বপ্নের মতই প্রায়। ইতিমধ্যে…।
ইতিমধ্যে আমাদের তো ঘুণাক্ষরেও জানাওনি এসব কিছু। বাধা দিয়ে আমি শুধাই—কারণ কী? নতুন মা পেয়ে কি পুরনো বন্ধুদের ভুলে গেলে সব?
না। তা নয়। তবে আমার মা, মানে ধনুর মা মারা গেলেন কিনা হঠাৎ। তাঁর বিষয়-সম্পত্তির সাকসেশন সাটিফিকেট, ব্যাঙ্কের হিসেব-পত্তর এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল এতদিন। তার পরে সে-সব ঝঞ্ঝাট চুকে বুকে যাবার পর, শোন বলি কী হলো…।
বলে ব্রজ চুপ করে রইল। নিজের মনের সলিলসমাধিতে তলিয়ে গেল যেন।
কী হলো? আমি ওকে উসকে দিই। ব্রজের লীলাখেলার উপসংহারটা জানবার জন্য আমার আগ্রহ।
ভাবলাম, আর কেন? সবকিছু এবার বেচে-টেচে দিয়ে টাকা-কড়ি নিয়ে এখানকার পাত্তাড়ি গুটোই। অন্য কোথাও গিয়ে নতুন করে ব্যবসাপওর ফঁদি আবার। তাই ভেবে তার আগে মাধবীর একটা ব্যবস্থা করা দরকার বলে আমার মনে হলো। ও বেচারীর তো কেউ নেই কোথাও। আর এতদিন ধরে ধনুর মাকে দেখেছে-শুনেছে…সেই ভেবে না, একটা মোটা টাকা দিয়ে ওর কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম।
কিন্তু মাধবী আমায় এককথায় চমকে দিল। বলল, ব্রজবাবু, আপনি কি ভেবেছেন যে আপনাকে আমি চিনতে পারিনি? কিন্তু ধনুর মা মনে কষ্ট পাবে বলে, সেই ভেবে এতদিন মুখ খুলিনি আমার। ভেবেছি যে মা যখন তার হারানো ছেলে ফিরে পেয়ে সুখে আছেন, তাঁর জীবনের শেষ কটা দিন তিনি সুখেই থাকুন। কেন আবার কষ্ট পান। তাই আমি কাউকে কিছু বলিনি। এমন কি, আপনাকেও আমি সে-কথা ঘুণাক্ষরে টের পেতে দিইনি। পাছে আপনি ধনুর মাকে ফেলে তাঁর প্রাণে দাগা দিয়ে আবার ফের কেটে পড়েন। কিন্তু এখন তো আমার মুখ খোলার কোন বাধা নেই। থানায় আমি খবর দিতে চললাম।
শুনেই না আমার হয়ে গেছে। আবার যেন আমি বঙ্গোপসাগরেই তলিয়ে যাচ্ছি…আমার সেই ভরাডুবির মধ্যে শুনতে পাই সে বলছে…ব্রজ, তোমার হয়তো মনে থাকতে পারে, কলেজের ক্লাসে আমি ঠিক তোমার পেছনের বেঞ্চটিতে বসতুম। তোমার মাথার পেছন দিকটা দেখে দেখে মুখস্থ হয়ে গেছল আমার। তাই, সামনে দেখে তোমাকে ঠিক চেনা না-গেলেও পেছন থেকে…যাক্, আর সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমাকে তুমি ঠকাতে পারনি।
সলিল-সমাধি থেকে ভেসে উঠে আমি বললাম-ঠকাতে চাইও না আমি। ধনু তোমাকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছিল। ধনুর সেই কথাটা আমি রাখব। যখন ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক ধনুর ভূমিকা নিতে হয়েছে আমায়, তার কথাও আমায় রাখতে হবে তখন।
শুনে সে চুপ করে রইল। তারপর আমি আরও বললাম, দ্যাখ মাধবী, আমাদের দুজনেরই যৌবন পেরিয়ে গেছে। এই শেষ বয়সে দুজনকেই দুজনের দরকার আমাদের। আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে আর তোমাকে ছেড়েই কি আমি থাকতে পারব? পরস্পর মিলে-মিশে আমরা ঘর বাঁধি এস।
আর তারপরই তোমার এই ছাঁদনাতলা? আমি বলি, এখন তাহলে নতুন ঘরানায় তোমার নয়া সঙ্গীত? নতুন ঘরে নতুন সঙ্গী এখন?
মেয়েছেলের চোখকে কখনো ফাঁকি দেয়া যায় না ভাই! অবশ্যি, তার জন্য কোন আপসোস নেই আমার—তার প্রমাণ দেখ তো এই–
বলে ছাপানো কার্ডখানা আমার হাতে সে তুলে দিল।
এই কার্ডখানা তোমায় পাঠালেই কোন গলদ হতো না আর। তুমিও আমায় ধরতে রতে না তাহলে—আর কেউ যেমন পারেনি। কিন্তু ভাবলাম, তুমি আমার পুরনো ব্ধি, ছাপানো চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো উচিত হবে না তোমায়। তাই হাতে লিখে বয়ের কথা জানাতে গেছি, আর তার ফলেই আগের অভ্যাসবশে নিজের সাবেক নামটাই মই করে বসেছি শেষটায়। তাই এই গলদটা হলো।
কিছু গলতি হয়নি। তোমার কোন ভাবনা নেই, কারু কাছে এ-কথা আমি ফাঁস করব না, তুমি নিশ্চিন্ত থেকো। তবে কোনদিন হয়তো তোমার কাহিনীটি, কাউকে গল্প না-করলেও, গল্পচ্ছলে লিখে বসতে পারি। তাহলেও কোন ভয় নেই তোমার। গল্প-কথায় কেউ কখনো বিশ্বাস করে না। আর, আমার গল্প তো ভাই, হেসেই উড়িয়ে দেয় সবাই। আমি তাকে বলি।——তুমি ভয় খেয়ো না ব্রজ।
না না না। আমি আর ব্রজ নই। ব্রজের লীলাখেলা আমার ফুরিয়ে গেছে। এখন আমি ধনু…ধনু…ধনু…।
বারংবার ওর ধনুষ্টঙ্কার শুনতে হয়।