ব্যথা-গরব

তোমার কাছে নাই অজানা কোথায় আমার ব্যথা বাজে।
ওগো প্রিয়! তবু এত ছল করা কি তোমার সাজে?

কেন তোমার অনাদরে বক্ষ আমার ডুকরে ওঠে,
চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ে, কলজে ছিঁড়ে রক্ত ছোটে,
        এ অভিমান এ ব্যথা মোর
        জানি, জানো, হে মনোচোর,
        তবু কেন এমন কঠোর
              বুঝতে আমি পারি না যে!
              অন্‌হেলা না পুলক-লাজে॥

যখন ভাবি আমার আদর কতই তোমায় হানে বেদন
বুকের ভিতর আছড়ে পড়ে অসহায়ের হুতাশ রোদন।
        যতই আমায় সইতে নারো
        আঁকড়ে ততই ধরি আরো;
        মারো প্রিয় আরো মারো
               তোমার আঘাত-চিহ্ন রাজে
               যেন আমার বুকের মাঝে॥

মনে পড়ে সেদিন তুমি ঘুমিয়ে ছিলে অঘোর ঘুমে
এ দীন কাঙাল এসেছিল তোমার পায়ের আঙুল চুমে।
        আমার অশ্রু-আঘাত লেগে
        চমকে তুমি উঠলে জেগে
        চরণ-আঘাত করলে রেগে
              সেই পরশের সান্ত্বনা যে
              আজো আমার মর্মে রাজে॥
এমনি তোমার পদ্মপায়ের আঘাত-সোহাগ দিয়ো দিয়ো
এই ব্যথিত বুকে আমার, ওগো নিঠুর পরান-প্রিয়!
      সেই পদ-চিন বক্ষে রেখে
      ভগবানে কইব ডেকে–
      'ছাই ভৃগুপদ, যাও হে দেখে
               কি কৌস্তুভ এ হিয়ায় রাজে!'
               মরবে হরি হিংসা-লাজে॥

বিষ্ণুজয়ী ভালোবাসার গর্বে এ বুক উঠবে দুলে,
সর্বহারার হাহাকার আর কাঁদবে নাকো চিত্ত-কূলে।
      এই যে তোমার অবহেলা
      তাই নিয়ে মোর কাটবে বেলা,
      হেলাফেলার বসবে মেলা,
              একলা আমার বুকের মাঝে,
              সুখে দুখে সকল কাজে॥
Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *