বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – ৫

লালমোহনবাবু শেষ পর্যন্ত আর গোঁফটা কামাননি। রাত্রে ঘুম হয়েছিল কি না জিজ্ঞেস করাতে বললেন যতবারই চোখ ঢুলে এসেছে ততবারই মনে হয়েছে ওঁর ঘরটা লিফ্‌টের মতো ওঠানামা করছে, আর তার ফলে তন্দ্রা ছুটে গেছে।

পুলকবাবু কাল রাত্রেই ফোন করে বলেছিলেন আজ সকাল দশটায় এসে আমাদের স্টুডিয়োতে নিয়ে যাবেন। আমরা আটটায় ব্রেকফাস্ট সেরে রাস্তায় বেরিয়ে পেডার রোড দিয়ে খানিকদূরে হেঁটে একটা পানের দোকান থেকে দিব্যি মিঠে পান কিনে পৌনে ন’টায় হোটেলে ঢুকতেই কেমন যেন একটা চাপা উত্তেজনার ভাব লক্ষ করলাম।

কারণ আর কিছুই না, পুলিশ এসেছে। একজন ইনস্পেক্টর গোছের লোক কাউনটারের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, হোটেলের কর্মচারী একটা ইঙ্গিত করতেই তিনি ঘুরে লালমোহনবাবুর দিকে চাইলেন। ইনস্পেক্টরের চাহনিতে যদিও কোনও হুমকির ভাব ছিল না, পাশে একটা খট্‌ শব্দ শুনে বুঝলাম লালমোহনবাবুর দুটো হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লেগে গেছে।

ইনস্পেক্টর হাসিমুখে লালমোহনবাবুর দিকে এগিয়ে এলেন। ফেলুদা শান্তভাবে লালমোহনবাবুর পিঠে একটা মৃদু চাপ দিয়ে বুঝিয়ে দিল—নার্ভাস হবেন না, ঘাবড়াবার কিছু নেই।

‘ইনস্পেক্টর পটবর্ধন। সি আই ডি থেকে আসছি। আপনি মিস্টার গাঙ্গুলী?’

‘হাঁয়েস।’

এই রে, লালমোহনবাবু ইংরিজি-বাংলা গুলিয়ে ফেলেছেন।

পটবর্ধন ফেলুদার দিকে চাইলেন।

‘আপনারা—?’

ফেলুদা পকেট থেকে ওর প্রাইভেট ইনভেসটিগেটর লেখা কার্ডটা বার করে দিল। পটবর্ধন সেটা পড়ে ফেলুদার দিকে একটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিলেন।

‘মিটার? আপনিই কি এলোরার সেই মূর্তি চুরির—?’

ফেলুদা তার একপেশে হাসিটা হেসে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।

‘গ্ল্যাড টু মিট ইউ স্যার’, হাত বাড়িয়ে বললেন পটবর্ধন। ‘ইউ ডিড এ ভেরি গুড জব দেয়ার।’

ফেলুদার বন্ধু বলে লালমোহনবাবুর খাতির বেড়ে গেল ঠিকই, কিন্তু জেরার হাত থেকে তিনি রেহাই পেলেন না। কথা হল হোটেলের ম্যানেজারের ঘরে বসে।

পটবর্ধন যা বললেন তাতে জানলাম যে মৃতদেহের গায়ে নাকি অনেক আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে, তবে খুনি এখনও ধরা পড়েনি। কিন্তু একজন লালশার্ট পরা লোক যে এয়ারপোর্ট থেকে শিবাজী কাস্‌ল-এ এসেছিল সেটা পুলিশ বার করেছে ট্যাক্সিওয়ালাটার সন্ধান বার করে। পুলিশের ধারণা এই লালশার্টই খুনি এবং তার পকেট থেকেই চিরকুটটা বেরিয়েছে। লালমোহনবাবুর কথা শুনে অবিশ্যি পটবর্ধনের ধারণা আরও বদ্ধমূল হল। বললেন, ‘এটা বুঝতেই পারছিলাম যে লোকটা গাঙ্গুলী নামে কাউকে মিট করতে গিয়েছিল এয়ারপোর্টে। আমরা গতকাল সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে যত প্লেন স্যান্টাক্রুজে নেমেছে, তার প্রত্যেকটার প্যাসেঞ্জার লিস্ট দেখে ক্যালকাটা ফ্লাইটে গাঙ্গুলী নামটা পাই। তারপর এখানের প্রত্যেক হোটেলে খোঁজ করি। দেখলাম শালিমার হোটেলে দুপুরে এসেছেন মিস্টার এল গাঙ্গুলী।’

পটবর্ধনের আসল যেটা জানার ছিল, সেটা হচ্ছে এই ব্যাপারে লালমোহনবাবুর ভূমিকাটা কী; অথাৎ ওই কাগজে তার নাম আর চেহারার বর্ণনা থাকবে কেন। লালমোহনবাবু মিস্টার সান্যালের ব্যাপারটা বলাতে পটবর্ধন বললেন, ‘হু ইজ দিস সানিয়াল? হাউ ওয়েল ডু ইউ নো হিম?’

লালমোহনবাবু যা বলবার বললেন। সান্যালের ঠিকানা জিজ্ঞেস করাতে বাধ্য হয়েই বলতে হল উনি জানেন না।

সবশেষে ইনস্পেক্টর পটবর্ধন ঠিক ফেলুদার মতো করেই সাবধান করে দিলেন লালমোহনবাবুকে। বললেন, ‘ঠিক এইভাবেই নিরীহ নির্দোষ লোকের হাত দিয়ে আজকাল চোরাই মাল পাচার হচ্ছে। কাঠমাণ্ডু থেকে কিছু দামি মণিমুক্তো এদেশে এসেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। শুনছি, তার মধ্যে নাকি নানাসাহেবের বিখ্যাত নওলাখা হারও আছে।’

সিপাহি বিদ্রোহের সময় একজন নানাসাহেব ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছিল বলে ইতিহাসে পড়েছি। পটবর্ধন সেই নানাসাহেবের কথা বলছেন কি না জানি না।

‘আমার বিশ্বাস এই প্যাকেটটাতেও কোনও চোরাই মাল ছিল’, বললেন পটবর্ধন। ‘যে গ্যাং এটা কলকাতা থেকে পাঠিয়েছে, তারই বিরুদ্ধ গ্যাঙের কেউ খবর পেয়ে শিবাজী কাস্‌লের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। সেই লোকই লালশার্টকে আক্রমণ করে, ফলে লালশার্টের হাতে তার মৃত্যু হয়।’

লালমোহনবাবু ধরেই নিয়েছিলেন যে, তাঁর নাম-লেখা কাগজ পুলিশের হাতে পড়াতে ওঁর ফাঁসি না-হয় যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হবেই। কেবল কয়েকটা উপদেশ-বাক্য শুনে ছাড়া পেয়ে যাওয়াতে ভদ্রলোকের চেহারায় নতুন জেল্লা এসে গেল।

পুলকবাবু দশটা বলে এলেন প্রায় এগারোটায়। পুলিশের ব্যাপারটা শুনে বললেন, ‘আর বলবেন না—কাল কাগজ দেখেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছে। লালুদার সঙ্গে নাম-ডেসক্রিপশন সব মিলে যাচ্ছে, অথচ পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে রহস্য।’

সান্যালের ঘটনাটা শুনে বললেন, ‘কোন সান্যাল বলুন তো? অহী সান্যাল? মাঝারি হাইট, চোখদুটো একটু বসা, থুতনিতে খাঁজ কাটা?’

‘থুতনি তো দেখিনি ভাই। দাড়ি আছে। বোধহয় আগে রাখতেন না।’

‘আমি দু বছর আগের কথা বলছি। একই লোক কি না জানি না। বোম্বেতে ছিল কিছু দিন। ছবিও প্রোডিউস করেছিল খান দু-এক। মার খেয়েছিল—যদ্দূর মনে পড়ে।’

‘লোক কী রকম?’

‘সে খবর জানি না লালুদা, তবে বদনাম শুনিনি কখনও।’

‘তা হলে বোধহয় কাগজের প্যাকেটে কোনও গোলমাল নেই।’

‘দেখুন লালুদা, আজকাল নেহাত স্মাগলিং-টাগলিং হচ্ছে বলে, নইলে আমরাও তো এককালে অনেক অচেনা লোকের হাত থেকে জিনিস নিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি। কই, কোনওদিন তো কোনও গোলমাল হয়নি।’

যে গাড়িটা কাল ব্যবহার করেছিলাম, সেটাতেই আমরা চারজনে মহালক্ষ্মীর ফেমাস স্টুডিয়োতে গিয়ে হাজির হলাম। গাড়ি থেকে নামবার সময় পুলকবাবু বললেন, ‘আগামী কালের শুটিং-এ ট্রেনের ব্যাপারটায় রেল কোম্পানির লোকদের সঙ্গে ঠোকাঠুকি হচ্ছিল। খবরটা পেয়েই প্রোডিউসার রাত্তিরের প্লেন ধরে কলকাতা থেকে চলে এসেছেন। চলুন, আপনাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি।’

আর. কে. স্টুডিয়োর ফ্লোরে ভিক্টর পেরুমল তার দলবল নিয়ে কুংফু প্র্যাকটিসে ব্যস্ত। বাঁ দিকে দূরে ফেলু অ্যান্ড কোম্পানি ও পুলক।

‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’-র প্রযোজক গোপীনাথ গোরের সঙ্গে পুলক তিনজনের আলাপ করিয়ে দেয়।

‘কালকের শুটিংটা হবে তো?’ লালমোহনবাবুর গলায় আশঙ্কার সুর।

‘শুটিং-এর ফাদার হবে লালুদা, ঘাবড়াইয়ে মৎ।’

আমরা একটা টিনের ছাতওয়ালা কারখানার ঘরের মতো বিরাট ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। এখানেই শুটিং হয়, আর আজ এখানেই চলেছে কুং-ফুর ট্রেনিং। একটা প্রকাণ্ড গদির উপর ভিক্টর পেরুমলের নির্দেশে একদল লোক লাফাচ্ছে, পা ছুঁড়ছে, আছাড় খাচ্ছে। গদি থেকে হাত দশেক দূরে একটা বেতের চেয়ারে বসে আছেন একজন বছর পঁয়তাল্লিশের ভদ্রলোক।

‘আলাপ করিয়ে দিই’, বললেন পুলকবাবু, ‘ইনি হচ্ছেন আমাদের ছবির প্রযোজক মিঃ গোরে…মিস্টার গাঙ্গুলী, স্টোরি রাইটার—মিস্টার মিত্র, আর—তোমার নামটা কী ভাই?’

‘তপেশরঞ্জন মিত্র।’

মিঃ গোরের গাল দুটো আপেলের মতো, মাথার ঠিক মাঝখানে একটা চকচকে টাক, আর চোখদুটো সামান্য কটা। ভুঁড়িটা নিশ্চয়ই ইদানীং হয়েছে, কারণ শখ করে এত টাইট জামা কেউ পরে না। পুলকবাবু আলাপ করিয়ে দিয়ে হাওয়া, কারণ কালকের শুটিং-এর নাকি অনেক তোড়জোড় আছে। বলে গেলেন, ‘দেড়টায় ফিরছি লালুদা; আমার সঙ্গে লাঞ্চ খাচ্ছেন আপনারা।’

গোরে আমাদের খুব খাতির-টাতির করে চেয়ার আনিয়ে বসতে দিলেন। নিজে লালমোহনবাবুর পাশে বসে বললেন, ‘আপনি এলেন বলে আমি খুব খুশি হলাম।’

‘সে কী, আপনি তো দিব্যি বাংলা বলেন!’

লালমোহনবাবু বোধহয় তাঁর দশ হাজার পাওনার কথাটা ভেবেই একটু বেশি খুলে তারিফ করলেন।

‘আমার ফাদারের বিজনেস ছিল ক্যানিং স্ট্রিটে। থ্রি ইয়ারস আই ওয়জ এ স্টুডেন্ট ইন ডন বস্‌কো। দেন ফাদারের ডেথ হল, আমি আঙ্কেলের কাছে চলে এলাম বুম্বই। সে তখুন থেকেই আই আম হিয়ার। লেকিন ফিলিম লাইনে দিস ইজ মাই ফার্স্ট ভেনচার।’

গোরে বাংলা জানেন দেখেই বোধহয় লালমোহনবাবু বেশ উৎসাহের সঙ্গে সান্যাল থেকে শুরু করে আজকের পুলিশের জেরা অবধি সব ঘটনা ভদ্রলোককে বলে ফেললেন। তাতে মিঃ গোরে চুকচুক শব্দ করে সহানুভূতি জানিয়ে বললেন, ‘আজকাল কাউকে বিসোয়াস করা যায় না, মিস্টার গাঙ্গুলী। আপনি এমিনেন্ট রাইটার, আপনার হাতে চোরাই মাল পাচার হবে ভাবতে শর্‌ম্‌ লাগে।’

এবার ফেলুদাও যোগ দিল কথায়।

‘আপনি তো শিবাজী কাস্‌লে থাকেন বলে শুনলাম।’

‘হাঁ। দুমাস হল আছি। হরিব্‌ল মার্ডার। ইভনিং ফ্লাইটে এসেছি আমি। বাড়ি ফিরেছি রাত ইগারটা। অ্যাট দ্যাট টাইম অলসো দেয়ার ওয়জ এ বিগ ক্রাউড ইন দ্য স্ট্রিট। হাই-রাইজ বিল্ডিংমে খুনখারাবি হোনেসে বহুৎ হুজ্জৎ।’

‘ইয়ে—সেভেনটিনথ্‌ ফ্লোরে কে থাকে জানেন?’

‘সেভেনটিনথ…সেভেনটিনথ…’ ভদ্রলোক মনে করতে পারলেন না। ‘আমার চিনা আদমি এক হ্যায় এইটথ মে—এন সি মেহতা; আউর দো মে ডক্টর ভাজিফদার। মাই ফ্ল্যাট ইজ অন টুয়েলফথ ফ্লোর।’

ফেলুদা আর কোনও প্রশ্ন করল না। মিঃ গোরেরও দেখলাম উঠি-উঠি ভাব। বললেন বহুৎ ঝামেলার প্রোডাকশন, সব সময় কিছু না কিছু কাজ লেগেই থাকে। তা ছাড়া কালকের শুটিংটা সত্যিই এলাহি ব্যাপার। মাথেরান স্টেশন থেকে ভাড়া করা ট্রেন খাণ্ডালা আর লোনাউলির মাঝামাঝি লেভেল ক্রসিং-এ আসবে। মিঃ গোরে মাথেরানেই থাকবেন, কারণ রেল কোম্পানিকে পয়সাকড়ি দেওয়ার ব্যাপার আছে। একটা পুরনো আমলের ফাস্ট-ক্লাস কামরা থাকবে ট্রেনে, মিঃ গোরে সেই কামরায় চেপেই শুটিং-এর জায়গায় আসবেন। ‘আমি খুব খুশি হব যদি আপনারা আমার সঙ্গে এসে লাঞ্চ করেন। আপনারা ভেজিটেরিয়ান কি?’

‘নো নো, নন নন’, বললেন লালমোহনবাবু।

‘হোয়াট উইল ইউ হ্যাভ? চিকেন অর মটন?’

‘চিকেন হ্যাড ইয়েসটারডে। মাটনই হোক টুমরো; কী বলেন, ফেলুবাবু?’

‘তথাস্তু’, বলল ফেলুদা।

ফেলুদা মিস্টার গোরের সব কথাই শুনছিল, কিন্তু তারই ফাঁকে ফাঁকে ওর চোখটা যে বারবার কুং-ফুর দিকে চলে যাচ্ছিল, সেটা আমি লক্ষ করছিলাম। ভিক্টর পেরুমলের ধৈর্য আর অধ্যবসায় দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। বোঝাই যাচ্ছে, ব্যাপারটাকে নিখুঁত না করে সে ছাড়বে না। যারা শিখছে, তাদের মধ্যে দু-একজন দেখলাম রীতিমতো তৈরি হয়ে গেছে।

পেরুমলকেও দেখছিলাম কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেলুদার দিকে দেখছে। ফেলুদার চাহনিতে তারিফের ভাবটা বোধহয় তাকে উৎসাহিত করছিল। গোরে চলে যাবার পর পেরুমল ফেলুদাকে ইশারা করে কাছে আসতে বলল। ফেলুদা হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে উঠে এগিয়ে গেল।

‘আইয়ে মিস্টার মিত্রা—ট্রাই কিজিয়ে—ইটস নট সো ডিফিকাল্ট।’

বাকি যারা ট্রেনিং নিচ্ছিল, তারা গদি ছেড়ে সরে গেল। পেরুমল একটা ছোট্ট লাফের সঙ্গে অদ্ভুত ভাবে ডান পা-টা মাথা অবধি তুলে সোজা সামনের দিকে ছিটকে দিল। পায়ের সামনে কেউ থাকলে নির্ঘাত ধরাশায়ী হত। ফেলুদা গদির উপর উঠে পাঁচ-ছ বার ছোট্ট ছোট্ট লাফ দিয়ে শরীরটাকে তৈরি করে নিল। পেরুমল ফেলুদার থেকে হাত চারেক দূরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমার দিকে ছোঁড়ো পা।’

পেরুমলের জানার কথা নয় যে, এনটার দ্য ড্র্যাগন দেখার পর থেকে মাস কয়েক ধরে প্রায়ই সকালে ফেলুদা আমাদের বৈঠকখানায় কুং-ফুর ঢঙে হাত পা ছোঁড়া অভ্যেস করেছে। ফুর্তি ছাড়া এর পিছনে আর কোনও উদ্দেশ্য ছিল না ঠিকই, কিন্তু পা ছোঁড়ার কায়দাটা রপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

ওয়ান-টু-থ্রি বলার সঙ্গে সঙ্গে ফেলুদার ডান পা-টা হোরাইজন্ট্যালভাবে বিদ্যুদ্বেগে সামনের দিকে ছিটকে গেল, আর সঙ্গে সঙ্গে পেরুমলের শরীরটা পিছনে ছিটকে গিয়ে আছাড় খেল গদির উপর—যদিও আমি জানি যে ফেলুদার পা তার গায়ে লাগেনি।

তারপর এইভাবে পাঁচ মিনিট ধরে চলল ভিক্টর পেরুমল আর প্রদোষ মিত্তিরের কুং-ফুর ডেমনস্ট্রেশন। আমার দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল পেরুমলের সাকরেদদের দিকে—দেড় মাস ধরে লাফ-ঝাঁপ করে যাদের জিভ বেরিয়ে এসেছে। এটা দেখে ভাল লাগল যে, হিংসার চেয়ে প্রশংসার ভাবটাই তাদের মুখে বেশি প্রকাশ পাচ্ছে। পাঁচ মিনিটের শেষে যখন দুজনে হ্যান্ডশেক করে পরস্পরের পিঠ চাপড়াচ্ছে, তখন সকলে হাততালি দিয়ে উঠল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *