বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – ১০

১০

ঝুক ঝুক শব্দের সঙ্গে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আটটা বোগি সমেত পুরনো টাইপের ইঞ্জিনটা যখন লেভেল ক্রসিং-এর কাছে এসে দাঁড়াল, তখন ঘড়িতে ঠিক একটা বাজতে পাঁচ মিনিট। ফার্স্ট ক্লাস কামরা যে মাত্র একটাই, আর সেটাও যে পুরনো ধাঁচের, সেটা দূর থেকেই বুঝতে পারছি। অন্য কামরাগুলোতে মাথেরান থেকেই প্যাসেঞ্জার বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়ি সব রকমই আছে। ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গেই পুলকবাবুর ব্যস্ততা একেবারে সপ্তমে চড়ে গেছে। তিনি একবার এ ক্যামেরা থেকে ও ক্যামেরায় ছুটে যাচ্ছেন, একবার হিরো থেকে ভিলেন, একবার এ-অ্যাসিসট্যান্ট থেকে ও-অ্যাসিসট্যান্ট। লালমোহনবাবু পর্যন্ত বলতে বাধ্য হলেন, ‘না মশাই, শুধু টাকা দিয়ে ছবি হয় না এটা বোঝা যাচ্ছে।’

হিরোর গাড়ি রেডি, কালো চশমা পরে স্টিয়ারিং ধরে বসে আছে অর্জুন মেরহোত্রা, পাশে তার নিজের মেক-আপম্যান আর দুজন ছোকরা টাইপের লোক, বোধহয় চামচা-টামচা হবে। অর্জুনের সামনে একটা হুডখোলা জিপে তেপায়া স্ট্যান্ডের উপর ক্যামেরাও রেডি। ভিক্টর সমেত ডাকাতের দল ঘোড়ার পিঠে আগেই এগিয়ে গেছে। তারা চলন্ত ট্রেন থেকে সিগন্যাল পেলে একটা বিশেষ পাহাড়ের বিশেষ জায়গা থেকে নেমে এসে ট্রেনের পাশে পাশে দৌড় আরম্ভ করবে। ভিলেন মিকিকে দেখলাম পুলকবাবুর একজন সহকারীর সঙ্গে ইঞ্জিনের দিকে এগিয়ে গেল।

আমাদের কী করা উচিত, ঠিক বুঝতে পারছি না। কারণ মিঃ গোরের দেখা নেই। তিনি ট্রেনেই এসেছেন কি না সেটাও বুঝতে পারছি না।

ভিড় পাতলা হয়ে গেছে অথচ আমাদের দিকে কেউ আসছে না দেখে লালমোহনবাবুর উসখুসুনি আরম্ভ হয়ে গেল। বললেন, ‘ও ফেলুবাবু, এরা কি ভুলে গেল নাকি আমাদের?’

ফেলুদা বলল, ‘একটিই মাত্র প্রথম শ্রেণীর কামরা; কথা মতো সেটাতে গিয়েই ওঠা উচিত আমাদের। দেখি আরও দু মিনিট।’

দু মিনিটের আগেই, ইঞ্জিন থেকে দুটো হুইসল শোনা গেল, আর সেই মুহূর্তেই সুদর্শন দাসের হাঁক।

‘এই যে, আপনারা চলে আসুন, চলে আসুন!’

আমরা হাতে ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিলাম। সুদর্শনবাবু আমাদের ফার্স্ট ক্লাসের দরজা অবধি পৌঁছে দিলেন। বললেন, ‘আমি তো কিছুই জানতাম না। এইমাত্র একজন লোক এসে খবর দিলে—বললে গোরে সাহেব আধঘণ্টার মধ্যেই এসে পড়বেন। প্রথম শটের পর ট্রেন আবার এইখানেই ফিরে আসবে।’

কামরায় উঠে দেখি একটা বেঞ্চির উপর বড় জলের ফ্লাস্ক, আর সাফারি রেস্টোর‍্যান্টের নাম লেখা চারটে সাদা কাগজের বাক্স। অর্থাৎ আমাদের লাঞ্চ। এত ব্যস্ততার মধ্যেও ভদ্রলোকের যে আশ্চর্য খেয়াল, সেটা স্বীকার করতেই হবে।

আর একটা হুইসেলের সঙ্গে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিল। আমরা তিনজনে জানালা দিয়ে বাইরের কাণ্ডকারখানা দেখবার জন্য তৈরি হলাম। একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা, তাই মনে একটা বেশ রোমাঞ্চ ভাব হচ্ছিল।

গাড়ি ক্রমশ স্পিড নিচ্ছে। ডান পাশ দিয়ে রাস্তা গেছে, সেদিকের বেঞ্চিতেই বসেছি আমরা তিনজন। বাঁ দিকে পাহাড় পড়বে, অর্থাৎ সেটা হল ডাকাতের দিক। ডান দিকটা হিরোর দিক।

আরও একটু স্পিড বাড়ার পর ডান দিকের রাস্তা দিয়ে প্রথমে ক্যামেরা সমেত জিপ, তার পর হিরোর গাড়ি আসতে দেখা গেল। এখন অবিশ্যি হিরো ছাড়া গাড়িতে আর কেউ নেই। ক্যামেরার মুখটাও যে তার দিকেই ঘোরানো সেটা বুঝতে পারলাম। যিনি ছবি তুলছেন, তিনি ছাড়া আরও তিনজন লোক রয়েছেন, তার মধ্যে একজন হল পুলকবাবুর অ্যাসিসট্যান্ট। সে হাতে একটা চোঙা নিয়ে তার ভিতর দিয়ে হিরোকে ‘ডাইনে তাকাও’ ‘বাঁয়ে তাকাও’ ইত্যাদি নির্দেশ দিচ্ছে।

আর দুটো ক্যামেরার একটার সঙ্গে পুলকবাবু রয়েছেন—সেটা রয়েছে ট্রেনেরই একটা কামরার ভিতর। তৃতীয় ক্যামেরাটা রয়েছে ট্রেনের পিছন দিকের শেষ কামরার ছাতে।

হিরো তেমন জোরে গাড়ি চালাচ্ছে না দেখে আমার মনটা দমে গিয়েছিল, কিন্তু ফেলুদা বলল ওটা ছবিতে নাকি জোরেই মনে হবে, কারণ ক্যামেরার স্পিড কমিয়ে শটটা নেওয়া হচ্ছে।

‘তা ছাড়া যতটা আস্তে ভাবছিস, ততটা আস্তে কিন্তু যাচ্ছে না গাড়িটা, কারণ আমাদের ট্রেনটাও তো চলেছে সঙ্গে সঙ্গে, আর চলেছে বেশ জোরেই।’

ঠিক কথা। এটা আমার খেয়াল হয়নি।

কিছুক্ষণের মধ্যে ক্যামেরা আর হিরোর গাড়ি আমাদের কামরা ছাড়িয়ে চলে গেল। পুরনো কামরা, তাই জানালায় গরাদ নেই; গলা বাড়িয়ে আরও কিছুক্ষণ দেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ফেলুদা বাধা দিয়ে বলল, ‘জেট বাহাদুর ছবি দেখতে গিয়ে যদি পর্দায় দেখিস, তুই গলা বাড়িয়ে শুটিং দেখছিস, সেটা কি খুব ভাল হবে?’

লোভ সংবরণ করে উলটো দিকের জানালার ধারে বসব বলে সিট ছেড়ে দাঁড়িয়েছি, ঠিক সেই সময় নাকে গন্ধটা এল।

ফেলুদা দেখি আর আমার পাশে নেই। তার দৃষ্টি বাথরুমের দরজার দিকে, সে এক লাফে উলটোদিকে চলে গেছে, তার ডান হাত কোটের পকেটে।

‘বন্দুক বার করে লাভ নেই, মিস্টার মিত্তির। অলরেডি একটি রিভলভার আপনার দিকে পয়েন্ট করা রয়েছে।’

চলন্ত ট্রেনে ফেলুদের রিসার্ভ করা কামরায় সান্যাল, নিম্মো।

তিনজন হ্যান্ডস আপ। জটায়ুর চরম অবস্থা।

এবার দেখলাম পাহাড়ের দিকের দরজাটা খুলে গেল। একজন লোক হাতে একটা রিভলভার নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে রইল। একে কি দেখেছি আগে? হ্যাঁ—এই তো সেই লালশার্ট! কিন্তু আজ এর পোশাক অন্য, আর চেহারায় যে হিংস্র ভাব দেখছি, সেটা সে দিন এয়ারপোর্টে দেখিনি। আজ এই অবস্থায় দেখে বুঝছি, লোকটা একেবারে নিখাদ খুনে। তার হাতের রিভলভারটা তাগ করা রয়েছে সোজা ফেলুদার দিকে।

এবার বাথরুমের দরজাটা অল্প ফাঁক অবস্থা থেকে পুরো খুলে গেল, আর সেই সঙ্গে কামরাটা গুলবাহারের গন্ধে ভরে গেল।

‘সান…সান…’

লালমোহনবাবুর শরীর কুঁকড়ে ছোট হয়ে গেছে।

‘সান্যালই বটে’, বললেন আগন্তুক, ‘আর আপনার সঙ্গেই আমার আসল দরকার মিঃ গাঙ্গুলী। বইয়ের প্যাকেটটা নিশ্চয়ই ফেলে রেখে আসেননি। ব্যাগটা খুলুন, খুলে বার করে দিন। না-দিলে কী ফল হবে সেটা আর নাই বললাম।’

‘প্যা-প্‌-প্যাকেট…’

‘কী প্যাকেটের কথা বলছি বুঝেছেন নিশ্চয়ই। আপনারই বই আপনার হাতে নিশ্চয়ই তুলে দিয়ে আসিনি সে দিন এয়ারপোর্টে। বার করুন, বার করুন!’

‘আপনি ভুল করছেন। প্যাকেট ওঁর কাছে নেই, আমার কাছে।’

ট্রেনের শব্দের জন্য সকলকেই চেঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে, কিন্তু ফেলুদার গম্ভীর গলা চাপা অবস্থাতেই ট্রেনের শব্দ ছাপিয়ে সান্যালের কানে পৌঁছেছে, কারণ চশমার পিছনে ভদ্রলোকের চোখ দুটো জ্বলে উঠল।

‘লাইফ ডিভাইনের এতগুলো পাতা নষ্ট করে আপনার ঐশ্বর্য কিছু বাড়ল কি?’—ফেলুদার গলার স্বর এখনও ধীর, কথাগুলো মাপা।

‘নিম্মো’, গুণ্ডাটার দিকে আড় দৃষ্টি দিয়ে খসখসে গলায় বললেন সান্যাল, ‘ইয়ে আদমি কোই ভি গড়বড় করনেসে ইনকো খতম কর না…হাত তুলে রাখুন, মিস্টার মিত্তির!’

‘আপনার ঝুঁকিটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না কি?’ ফেলুদা বলল। ‘আপনি যে জিনিসটা চাইছেন, সেটা পেলেই তো আর আমাদের ছেড়ে দেবেন না। খতম আমাদের এমনিতেই করবেন। কিন্তু ট্রেন থামলে পর আপনার কী দশা হবে সেটা ভেবে দেখেছেন?’

‘ভেরি ইজি’, দাঁত বের করে বিশ্রী হেসে বললেন মিঃ সান্যাল, ‘আমাকে আর কে চেনে বলুন! এত প্যাসেঞ্জার রয়েছে ট্রেনে, তার মধ্যে মিশে যেতে পারব না? আপনাদের লাশ পড়ে থাকবে, আমি বাইরে বেরিয়ে অন্য কামরায় চলে যাব। ভেরি ইজি, ইজন্‌ট ইট?’

ফেলুদার সঙ্গে অনেক রকম সঙ্কটের মধ্যে পড়ে আমার সাহস বেড়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু একটা কারণে এই মুহূর্তে সাহস আনার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বার বার আমার সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল। কারণ আর কিছুই না—ওই নিম্মো। এ রকম একটা নিষ্ঠুর খুনে চেহারা গল্পেই পড়া যায়। কামরার বন্ধ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, গায়ের ফিনফিনে ফুলকারি করা শার্টটা খোলা জানালা দিয়ে আসা হাওয়াতে ফুরফুর করছে, ডান হাতটা ট্রেনের ঝাঁকুনিতে দুললেও রিভলভারটা ঠিকই ফেলুদার দিকে তাগ করা রয়েছে।

সান্যাল এক পা এক পা করে এগিয়ে এলেন। নাক জ্বলে যাচ্ছে সেন্টের গন্ধে। সান্যালের দৃষ্টি ফেলুদার ব্যাগের দিকে। এয়ার ইন্ডিয়ার ব্যাগ, ফেলুদার সামনেই সিটের উপর রাখা। লালমোহনবাবুর কী অবস্থা জানি না, কারণ তিনি এখন আমার পিছনে। ট্রেনের আওয়াজের মধ্যেও ওঁর হাঁপানির টানের মতো নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

ট্রেন ছুটে চলেছে। তার মানে শুটিংও হয়ে চলেছে নিশ্চয়ই। মিঃ গোরে কী সাংঘাতিকভাবে আমাদের ডোবালেন, সেটা উনি জানেন কি?

সান্যাল সিটে বসে বাক্সটার ক্যাচ টিপলেন। ঢাকনা খুলল না। বাক্সে চাবি লাগানো।

‘চাবি কোথায়? এটার চাবি কোথায়?’

মিঃ সান্যালের সমস্ত মুখ অসহিষ্ণু রাগে কুঁচকে গেল। —‘কোথায় চাবি!’

‘পকেটে’, শান্তভাবে জবাব দিল ফেলুদা।

‘কোন পকেটে?’

‘ডান।’

আমি জানি ওই পকেটেই ফেলুদার রিভলভার।

সান্যাল উঠে দাঁড়ালেন। রাগে ফুলছেন তিনি। কয়েক মুহূর্ত যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারপর—

‘তুমি এসো!’—আমার দিকে ফিরে গর্জিয়ে উঠলেন মিঃ সান্যাল।

ফেলুদাও আমার দিকে চাইল। ইঙ্গিতে বুঝলাম, সে আমাকে সান্যালের আদেশ পালন করতে বলছে।

যখন ফেলুদার দিকে এগোচ্ছি, তখন ট্রেনের শব্দ ছাড়া আর একটা শব্দ কানে এল। ঘোড়ার খুরের শব্দ। এর মধ্যে কখন যে বাঁদিকে পাহাড় এসে গেছে, তা খেয়ালই করিনি। ফেলুদার পকেটে যখন হাত ঢোকাচ্ছি তখন দেখলাম পাহাড়ের গা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে ডাকাতের দল নামছে।

রিভলভারের পাশে হাতড়াতেই চাবি ঠেকল হাতে।

‘দিয়ে দে।’

আমি চাবি দিয়ে দিলাম মিঃ সান্যালকে। ফেলুদার হাত দুটো এখনও মাথার উপর।

সান্যাল বাক্সের তালায় চাবি লাগিয়ে ঘোরালেন। বাক্স খুলে গেল। লাইফ ডিভাইন উপরেই রাখা। বাক্স থেকে বই বেরিয়ে এল।

জানালার ঠিক বাইরেই ঘোড়ার খুর। একটা নয়—অনেকগুলো—তীরবেগে নেমে আসছে পাহাড়ের গা বেয়ে, ছুটে চলেছে ট্রেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

সান্যাল বইটা হাতে নিয়ে কয়েকটা পাতা উলটিয়ে যেখানে পৌঁছলেন, তার পরে আর উলটোনো যায় না। কারণ সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে সাঁটা। এবার উলটোনোর বদলে সান্যাল একটা অদ্ভুত কাজ করলেন। পাতার মাঝখানটা খামচিয়ে সেটাকে ছিঁড়ে ফেললেন, আর ফেলতেই তার তলায় একটা চৌকো খোপ বেরিয়ে পড়ল। পাতাগুলোর মাঝখানটা একসঙ্গে কেটে ফেলে খোপটা তৈরি করা হয়েছে।

খোপের ভিতর দৃষ্টি দিতেই সান্যালের মুখের অবস্থা দেখবার মতো হল। উনি ভিতরে কী আশা করেছিলেন জানি না, এখন বেরোল খান আষ্টেক সিগারেটের পোড়া টুকরো, ডজন খানেক পোড়া দেশলাই আর বেশ খানিকটা সিগারেটের ছাই।

‘কিছু মনে করবেন না’, বলল ফেলুদা, ‘ওটাকে ছাইদান হিসাবে ব্যবহার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।’

এবারে সান্যাল এত জোরে চ্যাঁচালেন যে, মনে হল সমস্ত ট্রেন ওর কথা শুনে ফেলবে।

ব্রিজ পার হচ্ছে ট্রেন। নীচে ঘোড়ার পিঠে ডাকাতদল।

ট্রেন ও ঘোড়া।

‘বেয়াদবির আর জায়গা পাওনি? ভেতরের আসল জিনিস কোথায়?’

‘কী জিনিসের কথা বলছেন আপনি?’

‘স্কাউন্ড্রেল!—তুমি জানো না কীসের কথা বলছি?’

‘নিশ্চয়ই জানি, তবু আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই!’

‘কোথায় সে জিনিস?’—আবার গর্জিয়ে উঠলেন মিঃ সান্যাল।

‘পকেটে।’

‘কোন পকেটে?’

‘বাঁ পকেটে।’

ডাকাতের দল এখন জানালার ঠিক বাইরে, কারণ পাহাড় আরও কাছে চলে এসেছে। ধুলো এসে ঢুকছে আমাদের কামরায়।

‘ইউ দেয়ার!’

আমি জানি আমার উপর আবার হুকুম হবে।

‘হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছ কী—যাও, হাত ঢোকাও।’

আবার আদেশ মানতে হল।

এবার পকেট থেকে যে জিনিস বেরোল, তেমন জিনিস আমি কোনওদিন হাতে ধরিনি। হিরে আর মুক্তো দিয়ে গাঁথা এই আশ্চর্য হার রাজা-বাদশাদের হাতেই মানায়।

‘দাও ওটা আমাকে।’

মিঃ সান্যালের চোখ জ্বলজ্বল করছে, কিন্তু এবার রাগে নয়, উল্লাসে, লোভে।

আমার হাত সান্যালের দিকে এগিয়ে গেল। ফেলুদার হাত মাথার উপর তোলা। লালমোহনবাবুর মুখ দিয়ে গোঙানির মতো শব্দ বেরোচ্ছে। ডাকাতের দল—

দড়াম্!

একটা ভারী শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কামরাটা যেন একটু কেঁপে উঠল, আর তার পরেই দেখলাম নিম্মো কামরার মেঝেতে গড়াগড়ি দিচ্ছে, কারণ একজোড়া পা জানালা দিয়ে ঢুকে সটান সজোরে লাথি মেরেছে তার গায়ে। ফলে নিম্মোর হাতের রিভলভার ছুটে গিয়ে সিলিং-এর বাতির কাচ চুরমার করে দিল, আর সেই সঙ্গে ফেলুদারও হাতে বিদ্যুদ্বেগে চলে এল তার নিজের রিভলভার।

এবারে পাহাড়ের দিকের দরজাটা আবার খুলে গেল, আর সেই দরজা দিয়ে ডাকাতের বেশে যিনি ঢুকলেন তাকে আমরা তিনজনেই খুব ভাল করে চিনি।

‘থ্যাঙ্ক ইউ, ভিক্টর’, বলল ফেলুদা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *