বৈজ্ঞানিক ইতিহাস
বাঙালি যে নিজের দেশের ইতিহাস অনুসন্ধানে উৎসাহহীন, স্বদেশের প্রাচীন কাহিনির জন্য বিদেশির দ্বারস্থ, কিছুদিন পূর্বেও এইসব কথা তুলিয়া আমরা পরস্পরকে লজ্জা দিয়ে এ বিষয়ে সজ্ঞান করিবার চেষ্টা করিতাম। সেদিন এখন কাটিয়া গিয়াছে; বাংলার গ্রাম খুজিয়া, মাটি খুঁড়িয়া বাঙালিই এখন তাম্রশাসন এবং শিলালিপি বাহির করিতেছে, বাঙালি পণ্ডিত তাহার পাঠোদ্ধার ও অর্থোদ্ধার করিতেছে, বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ তাহার ঐতিহাসিক তথ্য ও মূল্য নির্ণয় করিতেছে। বাঙালি ঐতিহাসিককে বাদ দিয়া এখন আর বাংলার ইতিহাস লেখা সম্ভবপর নয়। বাংলা সাহিত্যের আকাশে যে অন্ধকার ঘনাইয়া আসিতেছে, আশা করা যায় ইতিহাসের মশাল তাহার একটা কোণ রক্তিম করিয়া রাখিবে।
আমাদের এই নবীন ইতিহাস-চৰ্চায় যাঁরা অগ্রণী তাঁরা একটা কথা খুব স্পষ্ট করিয়াই সকলকে বলিতেছেন। তাঁরা বলেন, তাঁরা যে ইতিহাস অনুসন্ধান ও রচনা করিতেছেন তাহা পুরনো ধরনের পাঁচমিশালো ঢ়িলাঢ়ালা ইতিহাস নয়। তাদের রচিত ইতিহাস ‘বিজ্ঞানসম্মত।’ ইতিহাস, এবং তাঁরা যে প্রণালীতে ঐতিহাসিক সত্যের অনুসন্ধান করেন তাহা ‘বিজ্ঞানানুমোদিত ঐতিহাসিক প্রণালী’।
ইতিহাসের সম্বন্ধে এই ‘বিজ্ঞানসম্মত’ ও ‘বিজ্ঞানানুমোদিত’ প্রভৃতি বড় বড় কথাগুলির প্রকৃত অর্থটা কী তোহর আলোচনার সময় হইয়াছে। কথায় কথায় বিজ্ঞানের দোহাই দেওয়ার, আর সকলরকম বিদ্যার আলোচনাকেই বিজ্ঞান বলিয়া প্রচার করার চেষ্টা উদ্ভূত হইয়াছে গত শতাব্দীর ইউরোপের নববৈজ্ঞানিক পণ্ডিতসমাজে। ইউরোপ এখন আবার এই রোগটাকে দূর করিতে সচেষ্ট। সে দেশ হইতে বিদায় লইয়া ব্যাধিটা যাহাতে আমাদের ঘাড়ে আসিয়া না চাপে সে সম্বন্ধে পূর্বাহ্নেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কেননা এ দেশে যা একবার আসে তা তো আর সহজে বিদায় হয় না, তা শাক-হুনই কি আর প্লেগ-ম্যালেরিয়াই কি। বিশেষত দুর্বল শরীরে সকল রকম রোগই প্রবল হইয় উঠে। আর দেহের রোগের চেয়ে মনের ব্যাধি যে বেশি মারাত্মক তাহাতেও কেহ সন্দেহ করিবেন না।
যে বিদ্যার চর্চাই করি না কেন, তাহাকে বিজ্ঞান বলিয়া প্রমাণ ও প্রকাশ করিবার ইচ্ছার নিদান হইতেছে, উনবিংশ শতাব্দীতে জড়বিজ্ঞান বা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অদ্ভূত উন্নতি, আর সেই বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞানকে মানুষের জীবনযাত্রার কাজে লাগাইবার চেষ্টার অপূর্ব সাফল্য। প্রথমটিতে পণ্ডিতকে মুগ্ধ করে, কিন্তু জনসাধারণকে অভিভূত করিয়াছে দ্বিতীয়টি। রেল,
আধুনিক জড়বিজ্ঞানের প্রকট মূর্তি। এমন অবস্থা বেশ কল্পনা করা যায় যে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানগুলি ঠিক আজকের অবস্থাতেই আসিয়া পৌঁছিয়াছে, কিন্তু সেগুলিকে ঘর-গৃহস্থালির কাজে লাগাইবার কোনও ব্যবস্থা করা হয় নাই। তাপ ও বাম্পের সকল ধর্মই জানা আছে, কিন্তু রেল স্টিমার তৈরি হয় নাই। তাড়িত ও চুম্বকের নিময়গুলি অজ্ঞাত নাই, কিন্তু ঘরে ঘরে বিনা তেলে আলো জ্বলে না, বিনা কুলিতে পাখা চলে না। ফ্যারাডে ও ম্যাকসওয়েল … …, কিন্তু এডিসনের জন্ম হয় নাই। যদি সত্যিই এই ঘটনাটা ঘটিত তাহা হইলে জনসাধারণের কাছে আধুনিক জড়বিজ্ঞানের আজ যে আদর ও মর্যাদা আছে তাহার কিছুই থাকিত না। এবং কি ঐতিহাসিক কি অনৈতিহাসিক জড়বিজ্ঞানের গণ্ডির বাহিরে কোনও পণ্ডিতই নিজের শাস্ত্রকে ‘বিজ্ঞানসম্মত’ বলিয়া প্রচার করিবার জন্য অত ব্যস্ত হইতেন না। কারণ এই ব্যস্ততার মূলে আছে শাস্ত্রটাকে ‘বিজ্ঞান’ নাম দিয়ে জনসমাজে জড়বিজ্ঞানের প্রাপ্য যে মৰ্যাদা তাহার কিছু অংশ আকর্ষণ করিবার লোভ। নামে যে কিছু যায় আসে না’ এ কথাটা কবি বসাইয়াছেন প্রেমোন্মাদিনী কিশোরীর মুখে এবং সেইখানেই ও তত্ত্ব শোভা পায়। প্রকৃতপক্ষে মানবসমাজের অর্ধেক কাজ নামের জোরেই চলিয়া যাইতেছে, এবং পণ্ডিত-সমাজকেও সে সমাজ হইতে বাদ দিবার কোনও সংগত কারণ দেখা যায় না।
নিজের শাস্ত্রকে বিজ্ঞান এবং শাস্ত্রালোচনার প্রণালীকে বৈজ্ঞানিক বলিয়া নিজের ও পরের মনকে বুঝাইবার যে ইচ্ছা তাহার আরও একটু গভীরতর কারণ কাছে। যখনই কোনও একটা বিদ্যার হঠাৎ অভূতপূর্ব উন্নতি হইয়াছে তখনই সেই বিদ্যার অনুসৃত প্রণালীটাকে সব তালার একমাত্ৰ চাবি মনে করিয়া তাহারই সাহায্যে সমস্ত শাস্ত্ৰেই সম্ভব অসম্ভব ফললাভের চেষ্টার পরিচয় ইউরোপের চিন্তার ইতিহাসে বার বার দেখা গিয়াছে। দশমিক রাশির আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন গ্রিসে যখন পাটিগণিতের প্রতিষ্ঠা হইল। তখন এই রাশিক্রমটির গুণ আর শক্তি সম্বন্ধে পণ্ডিতদের বিস্ময়ের আর সীমা রহিল না। ইহাতে আশ্চৰ্য হইবারও কারণ নাই। যে গণনা মেধাবী পণ্ডিতেরও দুঃসাধ্য ছিল, ইহার বলে শিক্ষার্থী শিশুও তাঁহা অনায়াসে সমাধান করিতে লাগিল। এমন ব্যাপারে লোকের মন স্বভাবতই উৎসাহে ও আশায় চঞ্চল হইয়া উঠিবারই কথা। ফলে এই রাশিক্রমের নিয়ম ও প্ৰণালীকে সকল রকম বিদ্যায় প্রয়োগ করিয়া জ্ঞানবৃদ্ধির চেষ্টা হইতে লাগিল। এবং অবশেষে পিথাগোরাস ঠিক করিলেন যে, জগৎটা রাশিরই খেলা, রাশিক্রমেরই একটা বৃহত্তর সংস্করণ। সুতরাং এই রাশিক্রমের হেরফের আরও ভাল করিয়া করিতে পারিলে বিশ্বসংসারের কোনও তত্ত্বই অজ্ঞাত থাকিবে না। তারপর সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন বীজগণিতের প্রয়োগে জ্যামিতিশাস্ত্রের হঠাৎ আশ্চৰ্যরকম উন্নতি হইল। তখন পণ্ডিতেরা নিঃসংশয়ে স্থির করিলেন যে, জ্যামিতিক প্রণালীই সকল জ্ঞানের একমাত্র প্রণালী। অমন যে ধীর স্থির বৈদান্তিক স্পিনোজা, তিনিও তাঁর দর্শনশাস্ত্রটিকে জ্যামিতির খোলসে আবদ্ধ করিলেন। এখন সেই কঠিন খোলস অতিকষ্ট্রে সরাইয়া। তবে তাঁর চিন্তার রস গ্ৰহণ করিতে হয়। ইহার পর আসিল নিউটনের আবিষ্কৃত গণিতের পালা। নিউটন যখন তাঁর গণিতের সাহায্যে গ্ৰহ-উপগ্রহের মস্ত গতিবিধির ব্যাখ্যা প্রদান করিলেন তখন চোখের সম্মুখ হইতে যেন চিরকালের অজ্ঞানের পর্দাটা সরিয়া গেল। জাগতিক ব্যাপারের মূলসূত্রটা যে বাহির হইয়া পড়িয়াছে তাহাতে আর সন্দেহ থাকিল না। এবং কোনওরকমে এই গণিতটা প্রয়োগ করিতে পারিলেই যে সকল বিদ্যাই জ্যোতিষের মতো ধ্রুব হইয়া উঠিবে, সকলেরই এই স্থির বিশ্বাস হইল। এই বিশ্বাসের জের এখনও চলতেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে ও গত শতাব্দীর প্রথমে যখন তাড়িত ও চুম্বকের অনেক ঘরের কথা বাহির হইয়া পড়িল তখন আবার জ্ঞানসমুদ্রে একটা ছোটখাটো ঢেউ উঠিয়ছিল। তাড়িত ও চুম্বকের ধর্ম ও নিয়ম জগতেব সব জিনিসেই আবিষ্কৃত হইতে আরম্ভ হইল। মনের বল যে তাড়িতেরই শক্তি ইহা তো একরকম স্বতঃসিদ্ধই বোঝা গেল, এবং স্ত্রী-পুরুষ, জল-স্থল, ঠান্ডা-গরম ইত্যাদি যেখানেই জোড়া বর্তমান সেইখানেই যে চুম্বকের দুই প্রাস্তের সম্বন্ধ ও ধর্ম বিদ্যমান, এ বিষয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের কোনও সন্দেহ ছিল না। জার্মন পণ্ডিত শেলিং এই চুম্বক বেচারির উপর একটা ভারী রকমের গোটা দর্শনশাস্ত্ৰই চাপাইয়া দিলেন। বিজ্ঞা পাঠকের এরকম ছোটবড় আরও অনেক দৃষ্টান্ত মনে পড়িবে; এবং যদিও খুব ভয়ে ভয়েই বলিতেছি, আমাদের দেশে যে ত্ৰিগুণতত্ত্বের চাবি দিয়া সংসারের সকল রহস্যের দুয়ার খুলিবার চেষ্টা হইয়াছিল তাহাও আলোচ্য বিষয়ের আর-একটা উদাহরণ।
সুতরাং আজ যে সকল শাস্ত্রের আচার্যেরাই বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক প্রণালীর দিকে ঝুকিয়া পড়িয়াছেন ইহাতে নূতনত্ব কিছু নাই, এমন ঘটনা পূর্বেও অনেকবার ঘটিয়া গিয়াছে এবং ভবিষ্যতেও অনেকবার ঘটিবে। বর্তমান যুগের শরীর ও মন বিজ্ঞানের বলেই গড়িয়া উঠিয়াছে। আমরা এক দিকে দেখিতেছি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানগুলির জ্ঞানের পথে অপূর্ব সফলতা, অন্য দিকে দেখিতেছি। কর্মের জগতে তাদের বিস্ময়কর পরিণতি। সুতরাং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গণ্ডির বাহিরের বিষয় লইয়া যাদের কারবার তাঁরা যে একবার ওই বিজ্ঞানের পথটা ধরিয়া চলিবার চেষ্টা করিবেন তাহা নিতান্তই স্বাভাবিক। যখন দেখা যাইবে যে ও পথটা যতই প্রশস্ত হোক। ওটা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেরই গন্তব্য পথ, অন্য বিদ্যাগুলির নয়, তখন মোড় ফিরিবার কথা মনে আসিবে। যাহাকে ঘাটে যাইতে হইবে সে যদি হাটের পথের শোরগোল দেখিয়া সেই পথেই চলিতে শুরু করে তবে ঘাটে পৌঁছিতে বিলম্ব ছাড়া আব কোনও ফল হয় না।
আমাদের নব্য-ইতিহাসের আচার্যেরা যে এইসব ভাবিয়া চিন্তিয়া, এইসব গভীর অগভীর কারণে চালিত হইয়া বৈজ্ঞানিক প্ৰণালীর কথা তুলিয়াছেন, এমন কথা আমি বলিতেছি না। কেননা আমাদের দেশে এ কথাটা ম্যাঞ্চেস্টারের কাপড়ের মতো একেবারে বিলাত হইতে তৈরি মালই আসিয়াছে; এবং ইংরেজি পুথির মাড়োয়ারি মহাজন ইহাকে ঘরে ঘরে ছড়াইযা দিয়াছে। সুতরাং ইতিহাস অনুসন্ধানের সম্পর্কে এই বৈজ্ঞানিক প্রণালী কথাটার মূলে কোনও বস্তু আছে কি না সে আলোচনা আমাদের দেশে নিষ্প্রয়োজন বা অপ্রাসঙ্গিক নয়।
২
অবাস্তর কথা বাদ দিয়া মূল কথা বলিতে গেলে কেবল এইমাত্রই বলিতে হয় যে, বিজ্ঞানবিদ্যার কাজ, প্রকৃতির বিভিন্ন বিজ্ঞানের কাজের প্রণালী ও প্রকৃতির বিবিধ শক্তি ও ধর্মের আবিষ্কার করা। কিন্তু এই কাজ কিছু বিজ্ঞানবিদ্যারই একচেট নয়। পৃথিবীতে যেদিন হইতে মানুষের জন্ম হইয়াছে, মানুষ যখন বনে জঙ্গলে গিরিগুহায় বাস করিত, সেদিন হইতে কেবলমাত্ৰ দেহরক্ষার জন্যই মানুষকে অল্পবিস্তর এই কাজে হাত দিতে হইয়াছে। মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাইতে পারিয়াছে সেদিন সে প্রকৃতির এক মহাশক্তি আবিষ্কার ও আয়ত্ত করিয়াছে। যেদিন কৃষিকাৰ্য আরম্ভ করিয়াছে সেদিন তো প্রকৃতির বহু বিভাগের কাজের প্ৰণালী বাহির করিয়া ফেলিয়াছে। কথা এই যে, জীবনযাত্ৰাটা চালাইবার জন্য মানুষকে তাহার চারিপার্শ্বের প্রকৃতির যে সাধারণ-জ্ঞান অর্জন করিতে হয়, বিজ্ঞানবিদ্যালব্ধ জ্ঞানের সহিত তাহার কোনও জাতিগত প্ৰভেদ নাই। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিশেষত্ব তাহার ব্যাপকতা, গভীরতা ও সূক্ষ্মতায়। সাধারণভাবে ঘরকন্নার জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন হয় প্রকৃতির সমস্ত অংশের পরিচয় করা। সুদূর নক্ষত্রের গঠন-উপাদান হইতে আরম্ভ করিয়া অণুবীক্ষণদৃশ্য কীটাণুর জীবন-ইতিহাস পর্যন্ত সমস্তই ইহার জ্ঞাতব্য। জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য যে সাধারণ-জ্ঞানের প্রয়োজন তাহা মূলস্পশী না হইলেও চলে; বিজ্ঞানবিদ্যার লক্ষ্য একবারে প্রাকৃতিক ব্যাপারের মূলের দিকে। এক ঋতুর পর অন্য ঋতু আসে ভুয়োদর্শনের ফলে, এই যে জ্ঞান ইহা সাধারণ-জ্ঞান। নির্দিষ্ট পথে নিরূপিত সময়ে সূৰ্য্যমণ্ডলকে প্রদক্ষিণ করিবার জন্য পৃথিবীতে কেমন করিয়া ঋতু-পরিবর্তন হয় সে জ্ঞান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। উপযুক্ত আহার পাইল শরীর পুষ্ট ও বলশালী হয়, আর আহার-অভাবে শরীর শীর্ণ ও দুর্বল হয়, এ জ্ঞান সাধারণ-জ্ঞান। জীবদেহ কেমন করিয়া ভুক্তদ্রব্য পরিপাক করে এবং পরিপক অন্নরস কেমন করিয়া জীবশরীরের ক্ষয় পূরণ ও উপাদান গঠন করে সে জ্ঞান বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। সাংসারিক কাজের জন্য যে জ্ঞানের প্রয়োজন তাহা স্কুল হইলেও চলে, তাহাতে চুলচেরা হিসাবের প্রয়োজন নাই, বরং সে হিসাব করিতে গেলে সুবিধা না হইয়া অনেক সময় কাজ অচল হইয়া উঠিবারই কথা; কিন্তু বিজ্ঞান চায় সকল জিনিসেরই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসাব। একটা চারাগাছ যখন বাড়িতে থাকে তখন প্রতিদিনই কিছু কিছু বাড়ে ইহা সকলেই জানি, ইহা সাধারণ-জ্ঞান। গাছটা প্ৰতি সেকেন্ডে কতটুকু বাড়িতেছে তাহা জানা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। প্রচলিত ঘড়ির সময়ের বিভাগ সাংসারিক কাজের জন্য যথেষ্ট, আচাৰ্য জগদীশচন্দ্ৰকে কতকগুলি পরীক্ষার জন্য এক সেকেন্ড সময়কে হাজার ভাগে ভাগ করা যায় এমন যন্ত্রের উদ্ভাবন করিতে হইয়াছে। সাংসারিক প্রয়োজনের পরিমাপ-যন্ত্র মুন্দির দাড়িপাল্লা, বিজ্ঞানবিদ্যার চাই ‘কেমিক্যাল ব্যালান্স’।
যেমন জ্ঞানে তেমনি জ্ঞানের প্রণালীতে বৈজ্ঞানিকে ও সাধারণে কোনও ব্রাহ্মণ-চণ্ডাল ভেদ নাই। যে জ্ঞানেন্দ্ৰিয়ের পথে ও কর্মেন্দ্ৰিয়ের চেষ্টায় আমরা বহির্জগতের জ্ঞান লাভ করি সেই ইন্দ্ৰিয়গুলিই বিজ্ঞানেরও ভরসা। যে ন্যায় ও যুক্তি আমরা প্রতিদিনকার সাংসারিক কাজে ব্যবহার করি সেই ন্যায় ও যুক্তির প্রণালীই বিজ্ঞানেরও একমাত্র সম্বল। এমনকী আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য আমরা জগৎ-সংসারটার যে রূপ কল্পনা করি এবং যেরকম ভাগে তাকে ভাগ করি মোটামুটি তাহার উপরেই ভিত্তি করিয়া বিজ্ঞান তার বৈজ্ঞানিক জগৎ নির্মাণের চেষ্টা করে। এ বিষয়টি ফরাসি দার্শনিক বার্গসো এমন চমৎকারভাবে বুঝাইয়াছেন যে তাহার পর আর কাহারও বাগাড়ম্বর নিষ্প্রয়োজন।
সাধারণ জ্ঞানের প্রণালী ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রণালী মূলে এক হইলেও, বিজ্ঞান যে ব্যাপক গভীর ও সূক্ষ্ম জ্ঞান চায় তাহার জন্য তাকে নানারকম কৌশল আবিষ্কার করিতে হয়। বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি, গণিত, পরীক্ষা এইগুলিই সেই কৌশল। ইহার কোনওটির লক্ষ্য অতিদূর বা অতিসূক্ষ্মকে ইন্দ্ৰিয়ের গোচরে আনা, কোনওটির উদ্দেশ্য এক বস্তুকে অপর বস্তু হইতে তফাত করিয়া অন্য অবস্থায় তার গুণাগুণ পরীক্ষা করা, কোনওটির চেষ্টা যে কাজের নিয়মটা এমনি ভাল বোঝা যায় না। তাকে গণিতের কলে ফেলিয়া আয়ত্ত করা–এই কৌশলগুলিতেই বৈজ্ঞানিক প্ৰণালীর বিশেষত্ব এবং ইহারাই বিজ্ঞানের উন্নতির প্রধান সহায়। কিন্তু এই বিশেষত্ব অতি বিশিষ্ট রকমের বিশেষত্ব। অর্থাৎ যে কাজের জন্য যে কৌশলটির দরকার সেই কাজ ছাড়া আর অন্য কাজে তাহাকে প্রয়োগ করা বড় চলে না। কারণ এই কৌশলের আকার ও ভঙ্গি নিয়ন্ত্রিত হয় জ্ঞানের বিষয়লক্ষ্যের দ্বারা। কাজেই এক বিজ্ঞানের কৌশলকে অন্য বিজ্ঞানে বড় কাজে লাগান চলে না এবং একই বিজ্ঞানের এক বিভাগে যে কৌশল চলে অন্য বিভাগে তাহা অনেক সময় অচল। গতি-বিজ্ঞানে যে গণিত দিগ্বিজয়ী, রসায়ন-বিজ্ঞান তাকে কাজে লাগাইতে পারে না। রসায়নের যে বিশ্লেষণ-প্ৰণালী, তাড়িত-বিজ্ঞানে তাহার প্রভাব নাই।
কাজেই ব্যাপার দাঁড়াইতেছে এই যে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রণালীর যাহা বিশেষত্ব তাহাকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বাহিরে নেওয়া চলে না। এই বিশেষত্বের বেশির ভাগই প্ৰত্যেক বিজ্ঞানের জন্য স্বতন্ত্র, বিজ্ঞান-বিশেষেই বিশেষভাবে আবদ্ধ। আর যাহা সমস্ত প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেই সাধারণ তাহা মোটেই বিজ্ঞানে অনন্যসাধারণ নয়। তাহা হইতেছে সাধারণ যুক্তি ও জ্ঞানের প্রণালী, এ বিষয়ে বিজ্ঞানে ও সাধারণ-জ্ঞানে কোনও ভেদ নাই। এই প্ৰণালীকে বৈজ্ঞানিক প্ৰণালী বলিয়া কোনও লাভ নাই। কেননা এখানে বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক উভয়েরই আসন এক জায়গায়।
সুতরাং ঐতিহাসিক যখন বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালীর কথা বলেন তখন প্রথমেই সন্দেহ হয় যে, তাহার কথাটার অর্থ, যুক্তিসংগত প্ৰণালী ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু কেবল এইটুকু বলিলে লোকের মনোযোগও যথেষ্ট আকৃষ্ট হয় না এবং বিষয়টাকেও সেরকম মর্যাদা দেওয়া হয় না। বিজ্ঞানের নামের মন্ত্র উচ্চারণ করিলে এই দুই কাজই অনেক সময় কী যেন একটা শক্তির বলে অচিন্তিত উপায়ে সিদ্ধ হইয়া যায়।
দুই-একটা উদাহরণ নেওয়া যাক। শ্ৰীযুক্ত রাখালদাসবাবুর ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ আমাদের দেশের নবীন ইতিহাস-চৰ্চার একটি প্রথম ও প্রধান ফল। সেই পুথি হইতে দৃষ্টান্ত তুলিব।
দিনাজপুর জেলায় বাণগড়ে মহীপালদেবের যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে তাহাতে লেখা আছে যে, মহীপালদেব বাহুবলে সকল বিপক্ষ দল সংগ্রামে নিহত করিয়া অনধিকৃত বিলুপ্ত’ পিতৃরাজ্য গ্রহণ করিয়া অবনীপাল হইয়াছিলেন। ওই তাম্রশাসনেই তাঁহার পিতা বিগ্রহপালদেবের বিষয় উল্লিখিত আছে যে তিনি সূৰ্য হইতে বিমল কলাময় চন্দ্রের মতো উদিত হইয়া ভুবনের তাপ বিদূরিত করিয়াছিলেন। এবং তাঁহার রাণহস্তীগণ প্রচুরপয়ঃ পূৰ্বদেশ হইতে মলয়োপত্যকার চন্দন-বনে যথেচ্ছ বিচরণ করিয়া হিমালয়ের অধিত্যকায় উপস্থিত হইয়াছিল। শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্ৰেয় মহাশয় এই তাম্রশাসনের ব্যাখ্যায় লিখিয়াছেন, ‘মহীপালদেবের পিতার কোনোরূপ বীরকীর্তির উল্লেখ নাই। তাঁহাকে সূৰ্য হইতে চন্দ্ররূপে উদ্ভূত বলিয়া এবং তজ্জন্য ‘কলাময়’ত্বের আরোপ করিবার সুযোগ পাইয়া কবি ইঙ্গিতে তাহার ভাগ্যবিপর্যয়ের আভাস প্ৰদান করিয়া থাকিবেন। তাহার সেনা ও গজেন্দ্ৰগণ (আশ্রয়স্থানাভাবে) নানা স্থানে পরিভ্রমণ করিয়া, শিশির-সংযুক্ত হিমাচলের অধিত্যকায় আশ্রয়লাভের কথায় এবং মহীপালদেবের ‘অনধিকৃত বিলুপ্ত’ পিতৃরাজ্য পুনঃপ্রাপ্তির কথায়, দ্বিতীয় বিগ্রহপালদেবের শাসন-সময়েই পাল-সাম্রাজ্যের প্রথম ভাগ্যবিপর্যয়ের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যাইতে পারে।’ এই ব্যাখ্যা সম্বন্ধে রাখালবাবু টীকা করিয়াছেন, ‘মৈত্ৰেয়মহাশয়ের উক্তি সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানসম্মত।’ এ কোন বিজ্ঞান? মৈত্ৰেয়মহাশয়ের ব্যাখ্যা সুযুক্তিসংগত এবং রসজ্ঞতারও পরিচায়ক বটে এবং তিনিও সেইভাবেই কথাটা লিখিয়াছেন। ইহার মধ্যে বিজ্ঞান বেচারাকে টানিয়া আনা কেন?
কলহণ রাজতরঙ্গিণীতে কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্যের গৌড়ের রাজাকে হত্যার এবং রাজ-হত্যার প্রতিশোধের জন্য গৌড়পতির ভৃত্যগণের পরিহাস কেশব’-নামক দেবতার মন্দির অবরোধ ও তাহদের বীরত্বের এক কাহিনি বর্ণনা করিয়াছেন। ‘গৌড় রাজমালায় শ্ৰীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ অনুমান করিয়াছেন যে এই কাহিনি সম্ভবত অমূলক নয়, কেননা কলহণ প্রচলিত জনশ্রুতি অবলম্বনেই এই বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। এবং মূলে সত্য না। থাকিলে কাশ্মীরে গৌড়ীয়গণের বীরত্বকাহিনির কোনও জনশ্রুতি থাকিবার কথা নয়। এ সম্বন্ধে শ্ৰীযুক্ত রাখালবাবু লিখিয়াছেন, ‘শ্ৰীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ, কলহণ মিশ্র কর্তৃক লিপিবদ্ধ গৌড়ীয়গণের বীরত্বকাহিনী অমূলক মনে করেন না, এবং বলেন যে, প্রচলিত জনশ্রুতি অবলম্বনেই কলহণ এই বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া থাকিবেন। কিন্তু কলহণ কর্তৃক লিপিবদ্ধ ললিতাদিত্যের দক্ষিণাপথ-বিজয়-কাহিনী কিঞ্চিৎ পরিমাণে কল্পনাপ্রসূত বলিয়া মনে করিতে তিনি কোনো দ্বিধা বোধ করেন নাই। একই গ্রন্থকার কর্তৃক লিখিত একই গ্রন্থে একই বিষয়ে এক অংশ অমূলক এবং দ্বিতীয় অংশ সত্যরূপে গ্ৰহণ করা ইতিহাস-রচনাব বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালী নহে।’ তার পর রাখালবাবু আমাদিগকে জানাইয়াছেন যে, রাজতরঙ্গিণীর ইংরাজি-অনুবাদ-কর্তা স্টাইন-সাহেব এ ঘটনাটা সত্য বলিয়া গ্ৰহণ করিতে প্রস্তুত নহেন।’ স্টাইন-সাহেবের মত সত্য হইতে পারে এবং রমাপ্রসাদবাবুর ভুল হইতে পারে, কিন্তু কোনও জনশ্রুতির মুলে সত্য আছে কি না তাহা স্থির করিবার কোনও বাঁধা ‘বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালী’ নাই। চারি দিক দেখিয়া এ কথাটা বিচার করিতে হয়, শেষ পর্যন্ত হয়তো ইহা অল্পবিস্তর মতামতের বিষয়ই থাকিয়া যায়। কিন্তু এই বিষয়ের প্রণালীর মধ্যে বৈজ্ঞানিক বিশেষত্ব কিছু নাই। সচরাচর দশজনে একটা কথার সত্যমিথ্যা নির্ণয় করিতে হইলে যে-রকমভাবে বিচার করে এও ঠিক সেই রকমের বিচার। তারপর সম্ভবত একটু অবাস্তর হইলেও না বলিয়া থাকা যায় না যে রাখালবাবু তীহার ‘বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালী’র যে একটি সূত্রের কথা এখানে বলিয়াছেন তাহা নিতান্তই অচল। সে সূত্র আর কোনও বিচার না
করিতে হয়। ‘বিজ্ঞানসম্মত’ হইলেও প্রকৃতপক্ষে ও সূত্রটা কেহ মানিয়া চলে না, এবং প্রয়োজন হইলে রাখালবাবুও মানেন না। তিব্বতের তারানাথ গোপালদেব গৌড়বাসীর রাজা হইবার অব্যবহিত পূর্বের অবস্থা সম্বন্ধে লিখিয়াছেন, ‘প্রতিদিন এক-একজন রাজা নির্বাচিত হইতেন, কিন্তু ভূতপূর্ব রাজার পত্নী রাত্ৰিতে তাহাদিগকে সংহার করিতেন। কিছুদিন পরে গােপালদেব রাজপদ লাভ করিয়া, রাস্ত্রীর হস্ত হইতে আত্মরক্ষা করিয়া, আমরণ সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন।’ এই রাজপত্নীর গল্প সম্বন্ধে রাখালবাবু লিখিয়াছেন, ‘তারানাথের ইতিহাস বিশ্বাসযোগ্য নহে, কিন্তু ধর্মপালদেবের তাম্রশাসনে যখন গোপালদেবের নির্বাচনের কথা আছে তখন তাহার উক্তির এই অংশমাত্র গ্রহণ করা যাইতে পারে যে, গোপালদেবের পূর্বে ভূতপূর্ব রাজপত্নীর অত্যাচারে দেশে অরাজকতা উপস্থিত হইয়াছিল।’ সুতরাং ‘বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালীতে রচিত ইতিহাস’ যে একই গ্রন্থের একই বিষয়ে এক অংশ পরিত্যাগ করিয়া অপর অংশ গ্ৰহণ করিয়া থাকে কেবল তাই নয়, একই ছত্রের এক অংশকে উপকথা এবং অন্য অংশকে সত্য বলিয়াও সাব্যস্ত করে। এইরূপে রাখালবাবু তাহার. গ্রন্থে বহুবার বহু স্থলে বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালীর কথা তুলিয়াছেন। কিন্তু তাহার কথার অর্থ, সাধারণ সুযুক্তি-সংগত প্ৰণালী ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃত কথা এই যে, যে জাতীয় সত্য ইতিহাসের লক্ষ্য, তাহা দৈনন্দিন জীবনে সর্বসাধারণ যাহা লইয়া কারবার করে সেই রকম সত্য। সুতরাং সে সত্য আবিষ্কারের প্রণালীও সাধারণ বুদ্ধিমান মানুষের প্রতিদিনকার কাজের যুক্তির প্রণালী। সে প্রণালীতে কোনও বৈজ্ঞানিক বিশেষত্বের আশা করা দুরাশা।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালীর কথা পুনঃ পুনঃ শুনিয়া মনে হয়, বুঝি পুরাতত্ত্ব অনুসন্ধানের কতকগুলি বাধা নিয়ম আছে যাহা মানিয়া চলিলেই ঐতিহাসিক সত্যে পৌঁছনো যায়। এর চেয়ে ভুল ধারণা আর নাই। ইতিহাসে বিজ্ঞান নয়, কিন্তু সত্যে পৌঁছিবার বাঁধা রাস্তা যেমন বিজ্ঞানেরও নাই, তেমনি ইতিহাসেরও নাই। এইরূপ পাকা রাস্তা থাকিলে কি বিজ্ঞানে কি ইতিহাসে প্রতিভাবান ও প্রতিভাহীনের একদর হইত। কিন্তু প্ৰতিভাবান ছাড়া তো কেহ ইতিহাস গড়িয়া তুলিতে পারে না। এ মজুরের দালান-গাঁথা নয় যে ইটের উপর ইট বসাইয়া গেলেই হইল। যে উপাদান লইয়া সাধারণ লোকে কিছুই করিতে পারে না, ঐতিহাসিক প্রতিভা যার আছে। তিনি তাহা হইতেও সত্যের কল্পনা করিতে পারেন এবং অনুসন্ধানে সেই কল্পনা সত্য বলিয়া প্রমাণ হয়। সবরকম বড় সত্যে পৌঁছিবারই এই পথ। তার পর এও ভুলিলে চলিবে না যে, ঐতিহাসিকের আসল কাজ ধ্বংস করা নয়, গড়া। সত্য অনুসন্ধানের একটা অসম্ভব আদর্শ খাড়া করিয়া কিছুই বিশ্বাস করি না বলিয়া মুখ ফিরাইয়া বসিয়া থাকিলেই যে ঐতিহাসিক সত্য আসিয়া হাতে ধরা দিবে, এমনও বোধ হয় না।
হয়তো উত্তরে শুনিব যে, বিজ্ঞানের যেটা লীলাভূমি সেই সাগরপারে বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের নিয়মকানুন কাটাছোটা হইয়া ঠিক হইয়া গিয়াছে, সুতরাং ইতিহাসের যে একটা বিজ্ঞানসম্মত প্ৰণালী আছে তাহাতে আর সন্দেহ করা চলে না। এই আইনকানুন যে ঠিক হইয়াছে তাহাতে সন্দেহ করি না। কিন্তু তাহা হইলে সমুদ্রপারের ঐতিহাসিক পণ্ডিতদের ‘বিজ্ঞান বিজ্ঞান’ খেলা। এ খেলার প্রবৃত্তি কেন হয় এ প্রবন্ধে তাঁহাই দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছি। সুতরাং লর্ড অ্যাকটন বা সীলীর বচন তুলিয়া কোনও লাভ নাই।
মানবজাতির মুক্তির জন্য ভগবান তথাগত যে চারটি মহাসত্যের প্রচার করিয়াছিলেন তাহার একটি এই যে, সকল জিনিসই নিজের লক্ষণে বিশিষ্ট–’সৰ্বং সলক্ষণাং স্বলক্ষণং’। এক নাম দিয়া ভিন্ন বস্তুকে এক কোটায় ফেলা যায়, কিন্তু তাহাতে বিভিন্ন জিনিস এক হয় না। বর্তমান যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গণ্ডির বাহিরে যে-সকল বিদ্যা আছে তাহাদের মুক্তির জন্য ভগবান বুদ্ধের বাণীর নিতান্ত প্রয়োজন হইয়াছে।