বেশ-বেশ
দুশো-তিনশো শব্দের মধ্যে গল্প? একালের জটিল জীবনের কাহিনি এত অল্পে হবে না। বরং শতবর্ষ আগের একটা ঘটনায় যাই।
মকদমপুরের জমিদার খান মফিজউদ্দিন তালুকদার বাহাদুরের একটাই দোষ, সেই দোষটা মুদ্রাদোষ। তিনি কথায় কথায় বেশ-বেশ বলেন। কেউ হয়তো বলল, গ্রামে খুব ওলাওঠা হয়েছে। তিনি চিন্তিত মুখে বললেন, বেশ-বেশ। আবার খবর এল বাঁধ ভেঙে বর্ষার নদীর জল গ্রামের মধ্যে ঢুকছে, তিনি বললেন, বেশ-বেশ। এমনকী নিজের কাকিমার মৃত্যুসংবাদ শুনেও তিনি নাকি বলেছিলেন, বেশ-বেশ।
পাঠান ব্যবসায়ীরা তখনকার দিনে গ্রামে গ্রামে ঘোড়া নিয়ে ঘুরে বেড়াত বিক্রির জন্য। তারা খুবই চতুর ব্যবসায়ী, অনেক রকম খোঁজখবর রাখে। মফিজউদ্দিনের বেশ-বেশ মুদ্রাদোষের কথা জেনে তারা একটি টগবগে, সাদা আরবি ঘোড়াকে এক বছর ধরে তালিম দিয়েছে।
মফিজ সাহেব ঘোড়াটি দেখে খুবই উৎসাহিত। তারপরে যখন শুনলেন পিঠে উঠে তার প্রিয় বাক্য বেশ-বেশ বলে লাগাম টান দিলেই ঘোড়া ছুটতে থাকবে, তিনি এক লাফে ঘোড়ার ওপরে চেপে বেশ-বেশ বললেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়া বিদ্যুৎবেগে ছুটতে লাগল।
পাঠান বিক্রেতা এতটা ভাবেনি। সে দ্রুত ধাবমান অশ্বের পিছনে চেঁচিয়ে বলল, ঘোড়া থামানোর জন্যে ব্যস ব্যস করবেন! অশ্বারোহী মফিজ ভুল শুনে ভাবলেন থামানোর জন্যেও বেশ-বেশ বলতে হবে।
অল্প কিছুদুর যাওয়ার পর ঘোড়া থামানোর জন্যে মফিজ সাহেব বেশ-বেশ বললেন। ঘোড়া আরও জোরে ছুটতে লাগল। লাগাম টেনে আবার তিনি ঘোড়াকে বললেন, বেশ-বেশ। ঘোড়া আরও দ্রুতগামী হল।
ইতিমধ্যে পাঠান ঘোড়াওলাদের একজন অন্য একটি ঘোড়া ছুটিয়ে মফিজ সাহেবের পাশাপাশি গিয়ে চলমান অশ্বোপরি মফিজ সাহেবকে জানাল, হুজুর, ঘোড়া থামানোর জন্যে ব্যস, ব্যস বলতে হবে।
ততক্ষণে ঘোড়া ছুটতে ছুটতে মকদমপুরের সীমানায় পরিখার কাছে এসে গেছে, এর পরেই চল্লিশ ফুট নীচে পদ্মবিল। শেষ মুহূর্তে ব্যস ব্যস বলে ঘোড়া থামালেন মফিজউদ্দিন। পরিখা প্রাচীরের ঠিক সামনে থমকে দাঁড়াল ঘোড়া। আশ্বস্ত হয়ে মুদ্রাদোষ বশত সহসা বেশ-বেশ বললেন মফিজ সাহেব। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিত অশ্ব পরিখা প্রাচীর লাফিয়ে আরোহীসহ ঝাঁপিয়ে পড়ল পদ্মবিলে।
সেবার অশ্ব ব্যবসায়ীদের একটি অশ্ব ক্ষতি হয়েছিল। আর মকদমপুরের অধিবাসীরা তাঁদের জমিদারকে হারিয়েছিলেন।