বৃষ্টিমহল ৩.৩৫

৩৫

ঘরটা খালি হয়ে যাবার পর হৃদি সামির পাশে একটু ঘন হয়ে বসল। সামি বালিশে হেলান দিয়ে বসেছিল। গলা পর্যন্ত কম্বল টানা। হৃদি ওর মাথায় একটা হাত রেখে বলল, ‘শুয়ে থাক চুপ করে। ঠিক হয়ে যাবে।’ 

—‘দরজাটা লক করে দিয়ে আয় তো!’ সামি হুকুম করল। হৃদি একটু লাল হয়ে বলল, ‘কেন?’ 

—‘তুই আমার কথা শুনিস না কেন? প্রতিটা কথায় কাউন্টার অপিনিয়ন দিতে হয় কেন তোর?’ 

–‘কাউন্টার অপিনিয়ন কোথায় দিলাম? জাস্ট জানতে চাইলাম।’ 

—‘এত কিছু জানতে হবে না। যা বলব তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করবি। জানিস না স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত?’ 

—‘মোটেও না। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ 

—‘ওই একই কথা।’ 

হৃদি হেসে ফেলল, ‘একই কথা না? ফাজিল কোথাকার!’ 

—‘ছিঃ তুই নিজের বরকে গালি দিচ্ছিস? অনেক গুনাহ হবে।’ 

হৃদি হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গিয়ে দরজাটা লক করল। ঘরের মধ্যে এখনো আবছা একটা অন্ধকার ছড়িয়ে আছে। ফ্যান চলছে না। এয়ার কন্ডিশনও না। কোথাও কোনো শব্দ নেই। শুধু জানালা দিয়ে খানিক বাদে বাদে ভেসে আসছে তিতির পাখির ডাক। হৃদি দরজা লক করার সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা থেকে নড়ল না। ঘুরে দাঁড়ালো, কাঠের দরজার গায়ে হেলান দিয়ে। ভারি সুন্দর দেখাচ্ছিল তাকে। চোখে মুখে ঝিলিক দিচ্ছিল চাপা একটা আনন্দ। এখানে আসবার পর থেকে যে মানসিক কষ্টটা অনবরত তাকে ভেতরে ভেতরে কুরেকুরে খাচ্ছিল, হঠাৎ করে সেই কষ্টটা যেন ফুৎকারে উড়ে গেছে। ভালো লাগার ভোমরাটা গুনগুন করে গাইছে গান। উড়ে এসে বসতে চাইছে মনের দেয়ালে। সামি ওর দিকেই চেয়ে ছিল, নিবিড় চোখে। তার উষ্কখুষ্ক চুল। চোখজোড়া লাল। মুখে ভর করেছে এক নিচ্ছিদ্র বিভোরতা। 

ধীরেধীরে গায়ের কম্বলটা সরিয়ে রাখল সে। দুর্বল পা দুটো রাখল ঠান্ডা টাইলসের মেঝের ওপর। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে আসলো হৃদির কাছে। কাছাকাছি পৌঁছে একটা মুহূর্তও দেরি না করে সে হৃদির ঠোঁটে একটা গহন চুমু খেলো। তার শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে এখন আত্মবিলয়ের স্ফীতি। সে একটা হাত বাড়িয়ে হৃদিকে নিজের খুব কাছে টেনে এনে বলল, ‘বিভাকে সুন্দর বলছি দেখে তোর খারাপ লাগছে?’ 

হৃদি আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। হৃৎপিণ্ড এমনভাবে ধুকপুক করছিল যে মনে হচ্ছিল যেন আরেকটু হলেই বিকল হয়ে যাবে। সামির উষ্ণ মোলায়েম নিশ্বাস এসে পড়ছিল ওর গালে। সে কম্পনযুক্ত গলায় বলল, ‘তোকে কে বলছে?’ 

সামি ভারি সুন্দর করে হাসল, টেনে টেনে বলল, ‘আমি মেয়েদের প্রশংসা করলে তোর খুব জ্বলে? 

—‘তুই একটা ফালতু!’ 

সামি এই কথার প্রত্যুত্তরে আরো অনেকগুলো উত্তপ্ত চুমু খেলো হৃদির সারা মুখে। জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘সুন্দর মেয়েগুলোকে আমি চাই না। আমি চাই এই পেত্নীটাকে! 

৩৬

—‘এতগুলো টাকা আপনার ঠিক কী কারণে প্রয়োজন?’

আকাশ বাবাকে প্রশ্ন করল, সন্দিগ্ধ কণ্ঠে। একটু আগে সে ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরেছে। ফিরেই দেখল বাবা বসে আছেন বসার ঘরে। তার পরনে লুঙ্গি। খালি গা। চোখ কোটরে ঢোকা। গাল দুটো একটু ফোলা। ভীষণ অসুখী একটা চেহারা। মা বেঁচে থাকতে কিন্তু লোকটা মোটেও এরকম ছিল না। আর দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিক ছিল। মা চলে যাবার পরপর লোকটা রাতারাতি বদলে গেলো। দেখলে এখন বোঝা যায় না যে এককালে সে ভদ্রলোক ছিল। ঝুমকি ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিল কুঁজো হয়ে। আর বাপ ব্যাটার কথোপকথন শুনছিল কান খাড়া রেখে। 

মনসুর নিজের চকচকে টাক মাথাটা হাতড়াতে হাতড়াতে বললেন, ‘একজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম। প্রায় বছর দেড়েক আগে। এখন সেই লোক খুবই যন্ত্রণা করছে। দুদিনের মাঝে টাকা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’ 

—‘কেন ধার নিয়েছিলেন এতগুলো টাকা?’ 

—‘বিজনেসে খাটিয়েছিলাম। লাভ হয়নি।’ 

আকাশ চিন্তিত গলায় বলল, ‘আমি দুদিনের ভেতর এতগুলো টাকা কী করে জোগাড় করব?’ 

—‘তোমার বন্ধু বান্ধবরা তো ভালোই টাকাওয়ালা বলে জানতাম। ওদেরকে বলে একটা ব্যবস্থা করো না! নিজের বাবার জন্য এতটুকুও করতে পারবে না? এর আগে কোনোদিন মুখ ফুটে তোমার কাছে কিছু চেয়েছি কি?’ 

—‘আমার কোনো বন্ধুর পক্ষে এককালীন এতগুলো নগদ টাকা ধার দেওয়া সম্ভব না।’ 

—‘এম পি’র ছেলেকে বলো। সে নিশ্চয়ই কোনো ব্যবস্থা করতে পারবে।’ আকাশ বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘ওর বাবার কাছে আমি কিছুতেই হাত পাতব না। আপনি আপনার পাওনাদারের কাছ থেকে আরো কিছু সময় চেয়ে নিন। দেখি কিছু করতে পারি কিনা।’ 

দুই লক্ষ টাকা দুদিনের মধ্যে জোগাড় করাটা তার জন্য সহজ কাজ নয়। সবচেয়ে বড় কথা নিজের বাবাকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। নেশাখোর লোককে বিশ্বাস করা উচিত না। তার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে লোকটা মিথ্যা কথা বলে কিছু টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছে। অযথা টাকা উড়াবে, মদ খাবে, ফূর্তি করবে। সে একটু চিন্তা করে নিয়ে বলল, ‘এক কাজ করুন আপনার পাওনাদারের নম্বরটা আমাকে দিন। আমি কথা বলে দেখি।’ 

আকাশের কথাটা কানে যাওয়া মাত্র ঝুমকি ঝাড়ু দেওয়া বন্ধ করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। জরুরি গলায় বলল, ‘না না। তোমার কোনো প্রয়োজন নেই এসব মানুষের সাথে কথা বলার। এরা মানুষ ভালো না।’ 

ঝুমকির কথা শুনে মনসুর একটা ধমক দিয়ে উঠে বললেন, ‘তুমি এত কথা বলো কেন? নিজের কাজ কর। আমাদের কথার মাঝে ইন্টারফেয়ার করো না।’ 

ধমক খেয়ে ঝুমকি একটু নিভে গেলো। আকাশ ঝুমকির ছোট হয়ে যাওয়া মুখটা এক পলক দেখে নিয়ে বাবাকে বলল, ‘উনি কথা বললে সমস্যা কোথায়? আপনি এরকম করেন কেন সবসময় উনার সাথে? 

মনসুর গমগম করে বললেন, ‘সে কেন আমাদের মাঝখানে কথা বলবে? সে কে?’ 

আকাশ তীব্র চোখে তাকালো লোকটার দিকে, ঘেন্না জড়ানো গলায় বলল, ‘সে কে তা আপনি জানেন না? আমার বলে দিতে হবে?’ প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে উত্তরের আশা না করেই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। ডাইনিং টেবিলে তারা বসেছিল। আকাশকে দেখতেই সে বলল, ‘ভাইয়া, ভাত খাবেন না?’ 

আকাশ অন্যমনস্ক গলায় বলল, ‘তোমরা খেয়েছ?’ 

তারা চোখে লাগানো ভারি চশমাটা আঙুল দিয়ে ঠিক করে নিয়ে বলল, ‘আমরা খেয়েছি। আপনার খাবার বেড়ে রেখেছি টেবিলে।’ 

—‘আমি খেয়েছি দুপুরে। 

তারা একটু লাজুক গলায় বলল, ‘ইয়ে, ভাইয়া আজকে আমি রান্না করেছিলাম।’ 

শুনে আকাশ একটু প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বলল, ‘তাই নাকি? কী রেঁধেছ তুমি?’

—‘ফ্রাইড রাইস আর চিকেন ফ্রাই।’ 

—‘আচ্ছা, রাতের বেলা খাবো। কেমন?’ 

তারা হালকা মাথা নেড়ে বলল, ‘ঠিক আছে।’ 

বান্দরবান থেকে ফিরেছে ওরা তিনদিন হলো। ফিরেই আকণ্ঠ ডুবে গেলো সবাই কর্মব্যস্ত জীবনে। দেখতে দেখতে অভিজিতের ছুটিও ফুরিয়ে এলো। আগামীকাল ভোরে বিভাকে সাথে নিয়ে সে বাংলাদেশ ছাড়ছে। আজ দুপুরে অভিজিৎ সব বন্ধুদের বাইরে খাইয়েছে। ভার্সিটিতে আকাশের দুটো মাত্র ক্লাস ছিল। তাই বারোটার মধ্যে কাজ শেষ করে বেরিয়ে পড়তে পেরেছিল। বিকেল চারটায় মনীষা আসার কথা। তাকে বাসার ঠিকানা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রুদ্রর আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অফিস ছুটির আগে আর বেরোনোর উপায় নেই। দুপুরে অফিস থেকে এক ঘণ্টার ব্রেক নিয়ে বিভার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। মনীষা এসে পৌঁছুলো চারটা বাজার আরো মিনিট দশেক সময় পরে। রিকশা থেকে নেমে সে সোজা উঠে আসলো চারতলায়, আকাশদের ফ্ল্যাটে। দরজা খুলল ঝুমকি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আশ্চর্য সুন্দর মেয়েটার দিকে একটু অবাক চোখে তাকালো সে। বলল, 

—‘তুমি?’ 

মনীষা হেসে বলল, ‘আকাশ আছে?’ 

ঝুমকি শশব্যস্ত হয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ আছে। তুমি কে? ওর বন্ধু নাকি? 

—‘বন্ধু নই। বড়বোন।’ বলল মনীষা। মিষ্টি স্বরে। মনীষা ভেতরে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে আশপাশটা একটু চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিল ছোট্ট একটা ঘরে অনেক আসবাব এঁটে গেছে। এক সেট সোফা, সেন্টার টেবিল, এমন কি একটা সিঙ্গেল খাটও। ঝুমকি তখন তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে। মনীষার পরনে একটা খড় রঙের সিল্ক শাড়ি। চুলগুলো ভেজা। মনে হয় একটু আগেই গোসল করেছে। ভেজা চুল ছড়িয়ে আছে পিঠময়। মুখে কোনো প্রসাধন নেই। শুধু চোখের কোলে হালকা একটু কাজলের ছোঁয়া। ঝুমকির মনে হলো এত সুন্দর মেয়ে সে বহুদিন দেখেনি। দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে গেলো! একটা অনিচ্ছাকৃত বড় শ্বাস পড়ল তার। একটা সময় সে নিজেও দেখতে খারাপ ছিল না। কতদিন হয়ে গেলো একটু যত্ন করে সাজা হয় না! 

মনীষা ঝুমকিকে ওরকম ডবডবে চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল, ‘ইয়ে, আসলে আমি বাসা ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি। আপনাদের চিলেকোঠার ঘরটা নাকি ভাড়া হওয়ার কথা? 

—‘ও, তুমি বাসা দেখতে এসেছ? তাই বলো। বাড়িওয়ালা এখন উপস্থিত আছেন। আমিই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি, চল।’ 

আকাশ ঘরে ঢুকল সেই মুহূর্তে। মনীষা ওকে দেখামাত্র এক গাল হেসে বলল, ‘এইযে, আকাশ সাহেব। আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম।’ এটুকু বলে মনীষা একটু থামল, তারপর প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই ঝুমকিকে ইঙ্গিত করে বলে উঠল, ‘কিন্তু… উনি… মানে উনার পরিচয়টা জানা হলো না এখনো। 

—‘আমি আকাশের…’ 

পুরো বাক্যটা শেষ করতে পারল না ঝুমকি। হঠাৎ থমকে গেলো। মুখ দিয়ে আর একটা কথাও উচ্চারণ না করে সিঁটিয়ে গেলো কেমন যেন। মনীষা ঝুমকির চুপসে যাওয়া মুখটা একবার ভালো মতো দেখে নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো প্রশ্নবিদ্ধ চোখে। আকাশের মধ্যে একটা অপ্রস্তুত ভাব চলে এসেছে। চোখে ধরা পড়েছে বিরক্তিসূচক অস্বস্তি। সে ঝুমকিকে আড়চোখে দেখল একবার, তারপর ব্যস্ত গলায় মনীষাকে বলল, ‘চলুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে। উনার আসা লাগবে না।’ 

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনীষা আকাশকে প্রশ্ন করল, ‘উনি কে আকাশ?’ 

আকাশ আড়ষ্ট গলায় উত্তর দিল, ‘আমার বাবার স্ত্রী।’ 

—‘ও আচ্ছা। তাই বলো। উনি মানুষ কিন্তু খুব ভালো। আমার পছন্দ হয়েছে।’ 

আকাশ হাসল, ‘বেশ তো, এখন ঘরটা পছন্দ হলেই হলো।’ 

ঘর পছন্দ না হবার কোনো কারণ নেই। মনীষা একা মানুষ। ঢাকা শহরে আপনজন বলতে আপাতত তার কেউ নেই। বাবা মা মারা গেছেন বছর দুয়েক আগে। একমাত্র ভাই বৌবাচ্চা নিয়ে থাকেন জাপানে। নিজের ছেলেটা দুবছরের আগে দেশে ফিরছে না। অতএব একটা ঘরে তার দিব্যি চলে যাবে। বাড়িওয়ালার পরিবারের সাথে কথা বলে মনে হলো এরা মানুষ খারাপ না। ঢাকা শহরে একা মেয়ের পক্ষে বাড়ি ভাড়া করে থাকা রীতিমতন অসম্ভব একটা ব্যাপার। বেশ কয়েক জায়গায় সিঙ্গেল মেয়ে বাড়ি ভাড়া দেবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে। এখানেও বাড়িওয়ালা একটু গাঁইগুঁই করছিলেন বটে, কিন্তু আকাশের কাজিন হিসেবে পরিচয় দেবার পর আপত্তিটা আর বেশিক্ষণ টিকল না। ঠিক হলো আগামী সপ্তাহেই সে বাক্স- প্যাটরা নিয়ে এই বাসায় মুভ করবে। ঝুমকি আর তারার সাথে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেশ জমে গেলো মনীষার। মনে হচ্ছে এ বাড়িতে আসার পর দিনগুলো তার খারাপ কাটবে না। ফিরে যাবার সময় আকাশ ওর সাথে নিচে নামল। গলির মাথা পর্যন্ত হেঁটে আসলো দুজনে একসাথে। আকাশ বলল, ‘রুদ্র আসতে চেয়েছিল। অফিসের জন্য আসতে পারল না বেচারা।’ 

—‘কথা হয়েছে আমার সাথে। ও খুব লক্ষ্মী ছেলে। আমার ভাগ্য ভালো যে, তোমাদের মতো ছোট ভাই পেয়েছিলাম।’ 

‘ছোটভাই’ শব্দটা আকাশের কানে লাগল। একটু হেসে বলল, ‘ছোট ভাই?’ 

—‘তা নয়তো কী?’ 

আকাশ হাসতে লাগল। মনীষা হাঁটা থামিয়ে ওর হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, ‘তোমার হাসিটা সুন্দর। বেশি বেশি হাসবে, কেমন?’ ‘ 

আকাশ একটু লাল হলো, নিচুস্বরে বলল, ‘ধন্যবাদ।’ 

৩৭

মাগরিবের নামাজের পর একটু পড়ার টেবিলে বসেছিল হৃদি। আগামীকাল একটা ইন্টারভিউ আছে। বাবার ব্যাংকে সার্কুলার দিয়েছিল কিছুদিন আগে। বাবার ইচ্ছেতেই অ্যাপ্লাই করে দিল। এখন মুখের সামনে গাইড বই খুলে একটু পড়াশোনা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যত চেষ্টাই করুক না কেন, পড়ায় কোনোমতেই মন বসছে না তার। মনের রাজ্যের আবহাওয়া ভীষণ খারাপ। আগামীকাল বিভা চলে যাচ্ছে। ব্যাপারটা মনে পড়তেই বারংবার বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠছে। এরপর আবার কবে দেখা হবে ওর সাথে কে জানে! রাগটা গিয়ে বিভার আব্বা আম্মার ওপরেই পড়ে সর্বদা। কী দরকার ছিল মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে অত দূরে পার করে দেবার? বিভাকে ছাড়া হৃদির যে কোনো আনন্দই শতভাগ পূর্ণতা লাভ করে না। কেউ জানে না, বিভা চলে যাবার পর হৃদি কী ভয়ংকর রকমের একা হয়ে হয়েছিল। অমৃতার জায়গাটাও অন্য কেউ নিতে পারবে না এ কথা সত্য। কিন্তু অমৃতা যে ক্যারিয়ারিস্ট মেয়ে। সপ্তাহের পাঁচটা দিন সে কাজের চাপে আকণ্ঠ ডুবে থাকে। মনে চাইলেই যখন তখন তাকে কাছে পাওয়া যায় না। হৃদির চোখ ভিজে আসছিল একটু পর পর। খানিক আগে চায়ের টেবিলে বাবা কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছেন, ‘হয় চাকরি নয় বিয়ে এর যেকোনো একটা করে আমাদেরকে একটু উদ্ধার করা যায় কি?’ 

হৃদি কোনো উত্তর দিতে পারেনি। বাবার কথাবার্তার ধরন বরাবরই একটু খটোমটো। যতটা সম্ভব পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টা করেই দিন পার করে হৃদি। কিন্তু আজকে বাবার বলা কথাটা তীক্ষ্ণ ফলার মতো গিয়ে বিঁধলো বুকে। বাবা কথাটা বলে শেষ করতেই মা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন হৃদির কাছে। গলায় ঝোলানো তাবিজটা ঠিকঠাক আছে কিনা তা হাত দিয়ে দেখে নিয়ে বললেন, ‘এটা কিন্তু খুলিস না।’ হৃদি মায়ের দিকে একটা আগুনগরম দৃষ্টি দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজের ঘরে এসে সামিকে ফোন করে বাবার বিষয়টা বলতেই সে উল্টো খ্যাঁক দিয়ে উঠল, ‘তোর বাপের সমস্যা কী? একই কথা বারবার বলে কেন? মাথা খারাপ নাকি উনার? আমি তো বলছি যে আমার মায়েরে রাজি করাইতে আর কয়েকটা দিন সময় লাগবে। তুই এই কয়টা দিন একটু বাসা ম্যানেজ করতে পারতেছিস না? আজিব কারবার! 

—‘আমার বাপ ঠিকই আছে। সমস্যা তোর মায়ের। উনার আমাকে পছন্দ হয় না কেন? আমার বাবার তোদের মতো কাড়ি কাড়ি টাকা নাই দেখে? ভীষণ লোভী তোর মা!’ 

সামি রাশভারি গলায় বলল, ‘হৃদি দ্যাখ, আমার মাকে নিয়ে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। খবরদার!’ 

—‘তুমিও আমার বাবাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলবা না। মনে থাকে যেন।’ কথাটা বলে সে ফোন কেটে দিয়েছিল। 

অপমান, লজ্জা আর অভিমানে টলমল করে উঠেছিল বুক। কেউই বোঝে না তাকে। না বোঝে নিজের বাবা মা, না বোঝে সামি! গাইড বই সামনে নিয়ে গলায় ঝোলানো তাবিজটা নাড়াচাড়া করছিল সে বিষণ্ণ মনে। হঠাৎ মনে হলো এর ভিতরে কী আছে একটু খুলে দেখা যাক। ছোট্ট পিতলের তৈরি গোল জিনিসটার মুখ মোম দিয়ে ঢাকা। হৃদি মোমের অংশটুকু আঙুল দিয়ে খুঁড়তে লাগল। খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় পেয়ে গেলো ভাঁজ করা ছোট্ট এক কাগজ। কাগজ খুলে দেখল সেখানে বাংলায় লেখা, ‘হৃদিতার বিয়ে হয়ে যাক যাক যাক…!’ ব্যাক্কল বনে গেলো সে। হা করা মুখ নিয়ে কিছুক্ষণ স্তম্ভিত নয়নে চেয়ে রইল টুকরো কাগজটার দিকে। সেই সময় ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে ছোট ভাই হৃদয় উঁকি দিয়ে বলল, ‘আপু, তোকে বাবা ডাকছে।’ 

হৃদি হাতে ধরা কাগজটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। গটগট করে হেঁটে আসলো ড্রইংরুমে। বাবা মা দুজনেই সোফায় বসে আছেন। হৃদি ঘরে এসেই সরাসরি মায়ের মুখের সামনে কাগজটা মেলে ধরে বলল, ‘এইগুলা কী? এসবের মানে কী?’ 

মায়ের মুখটা একটু বোকা বোকা হয়ে গেলো। কাগজটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বললেন, ‘এমা, বাংলায় লিখে দিয়েছে দেখি!’ 

—‘তোমাকে কতবার মানা করছি এইসব হাবিজাবি জিনিস না আনতে? তুমি নিজে যে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করো সেটাই তো যথেষ্ট মা! এইসব তাবিজ কবজ তো দরকার নাই আমার!’ 

মা মিনমিন করে কী যেন বললেন। স্পষ্টভাবে বোঝা গেলো না। বাবা বললেন, ‘আচ্ছা এসব কথা পরে হবে। এখন তুই বোস আমার সামনে। কথা আছে।’ 

হৃদি কটমটে রাগি মুখ নিয়ে বসলো বাবার সামনে, উল্টোদিকের সোফায়। বাবাকে বেশ ঝরঝরে দেখাচ্ছে এখন। ঠোঁটের কোণে একটি প্রসন্ন হাসি। তিনি একবার কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, ‘তোর বন্ধুর বাবা ফোন করেছিলেন। এমপি সাহেব।’ 

হৃদির মুখে একটা সূক্ষ্ম ভাবান্তর ঘটে গেলো। কটমটে চোখজোড়ায় বিস্ময়ের পর্দা পড়ল। কুঁচকে থাকা কপাল নিমেষে হয়ে উঠল মসৃণ অস্ফুটে বলল, ‘তাই নাকি?’ 

—‘হ্যাঁ, এইতো একটু আগে ফোন করেছিলেন।’ 

—‘কী বললেন?’ দম বন্ধ করে প্রশ্ন করল হৃদি। 

—‘ছেলের জন্য আমাদের মেয়েকে চাইলেন। বললেন আমরা রাজি হলে খুব শীঘ্রই তিনি বিয়ের ঝামেলাটা সেরে ফেলতে চান।’ 

মা ফোড়ন কেটে বললেন, ‘কিন্তু ওই ছেলের মা কিন্তু সহজ বান্দা না। মহিলা ভীষণ ঝগড়াটে। আমি বলে দিলাম তোমাদের।’ 

বাবা হাত তুলে মাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ওসব ঠিক হয়ে যাবে।’ হৃদির ঠোঁটে না চাইতেও একটা স্বস্তির হাসি ঝিলিক দিচ্ছিল। বাবা বললেন, ‘এবারে উনি বড় করে অনুষ্ঠান করতে চাইছেন না। যে মেয়েটির সাথে সামির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কী যেন নাম মেয়েটির আমি ভুলে গেছি, তার পরিবার নাকি এখনো খুব ঝামেলা করছে। তাই উনি চাইছেন নিভৃতে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে। মিডিয়ার লোকজনকেও জানাতে চাইছেন না এখন। আপাতত আকদ হয়ে যাক। কয়েকমাস পরে অনুষ্ঠান করা যাবে। 

হৃদির কাছে পুরো ব্যাপারটা স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। একটা জিনিস তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না যে সামির আম্মা এ সম্পর্কে এত দ্রুত রাজি হয়ে গেলো কীভাবে? আদৌ তার অনুমতি নেয়া হয়েছে কি? অনেকগুলো প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল তার মনে। সে চট করে উঠে পড়ে নিজের ঘরে দৌড়ে আসলো। ফোন করল সামিকে। সামি সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছিল। পুলসাইডের একটা টেবিলের ওপর ফোনটা রাখা ছিল। রিংটোন বাজতেই সে সাঁতার থামিয়ে পুল থেকে উঠে আসলো। ভেজা হাত দিয়েই ধরল ফোন। হৃদি হাঁপধরা গলায় বলল, ‘কীভাবে সম্ভব?’ সামির পরনে শুধু একটা হাফ প্যান্ট, আদুর গা। চুল আর শরীর বেয়ে টপটপ করে ঝরে পড়ছে জল। সেইরকম ভেজা জবজবে অবস্থায়ই সে হৃদির প্রশ্ন শুনে অবাক গলায় বলল, ‘কীসের কথা বলতেছিস?’ 

—‘তোর আব্বা ফোন করছিল আমার আব্বাকে। বিয়ের প্রস্তাব দিতে।’ সামি হতভম্ব গলায় বলল, ‘বলিস কী?’ 

—‘তুই জানিস না?’ 

—‘ঘটনা কী খুলে বল।’ 

হৃদি বিস্তারিত বলল সবকিছু। সামি শুনেটুনে মনের আনন্দে কয়েকটা লাফঝাঁপ দিয়ে ফেলল। ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে হৃদি সেই লাফঝাঁপ টের পেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল। এরকম নির্মল আনন্দ তার অনেক অনেকদিন হয়নি। স্বপ্ন তাহলে সত্য হতে যাচ্ছে… প্রতিদিন প্রিয় মানুষটার সাথে একই ছাদের নিচে বাস করা… একসাথে ঘুম থেকে ওঠা… একসাথে ঘুমোতে যাওয়া… একসাথে খাবার খাওয়া ..যখন ইচ্ছে তখন দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরা। আহা, এত সুখ তার কপালে সইবে কি? উচ্ছ্বসিত এক হর্ষ দমকে বুক ভেসে যাচ্ছিল তার। সেই উথালপাথাল খুশির মধ্যে হঠাৎ করেই একটা মানুষের কথা খুব করে মনে পড়ল হৃদির। আজকে যা কিছু সে পেয়েছে বা পেতে যাচ্ছে এর পেছনে সেই মানুষটার হাত আছে শতকরা আশিভাগ। হ্যাঁ এই মুহূর্তে সেই মানুষটার সাথেই একটাবার কথা বলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করল সে। বলল, ‘সামি, একটু পরে ফোন দিচ্ছি তোকে। এখন রাখছি।’ 

সামি ফোন কাটল। তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে দ্রুত পা বাড়িয়ে নেমে এলো নিচে। পাল্টে নিল জামা কাপড়। তড়িঘড়ি করে ছুটে চলল বাবা মায়ের ঘরে। দরজা খোলা ছিল। রোমেলা বসে আছেন ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলের ওপর। মাথার চুলে চিরুনি চালাচ্ছেন ধীর গতিতে। সামিকে ঘরের দরজায় দেখতে পেয়েই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। ক্রুদ্ধভাবে বললেন, ‘তোমার বাবা আমার অমতেই ওই মেয়ের পরিবারের সাথে বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছে। এটা কি সে ঠিক করল? আমার মতামতের কি কোনো দাম নেই?’ 

সামি কয়েক পা এগিয়ে এসে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়ালো। স্থির দুটি চোখ মায়ের বিক্ষুব্ধ মুখের ওপর রেখে সন্দিহান গলায় বলল, ‘মা হৃদিকে তোমার অপছন্দ কেন? বিভা অন্য ধর্মের ছিল। কিন্তু হৃদি তো অন্য ধর্মের নয়। ওকে নিয়ে তাহলে আপত্তি কেন?’ 

রোমেলা ঝাঁঝালো গলায় বললেন, ‘ওদের ফ্যামিলি স্ট্যান্ডার্ড লো। আমাদের সাথে কোনোভাবেই যায় না। কোথায় তানিশা, আর কোথায়… ইশ। … ভাবতেই আমার কেমন লাগছে। এই থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য তুমি তানিশার মতো একটা মেয়েকে ছেড়ে দিলে? তোমার বুদ্ধিসুদ্ধি কি জীবনেও হবে না? 

সামি দৃঢ় গলায় বলল, ‘মা প্লিজ। আমার সামনে আর কখনো হৃদিকে তুমি থার্ড ক্লাস বলো না। ওকে নিয়ে কেউ খারাপ কিছু বললে আমার ভালো লাগে না। তোমার চিন্তা ভাবনা চেঞ্জ করো। পৃথিবী বদলে গেছে। ক্লাস বলে কিছু নেই এখন আর। সবাই সমান। আরেকটা কথা শুনে রাখো, বিভাকে হারানোর পর হৃদির জন্যেই আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। হৃদিকে হারিয়ে ফেললে আমি আর বাঁচব না।’

এটুকু বলে সে আরো দু পা সামনে এগিয়ে এলো। মায়ের দুটো হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে করুণ গলায় বলল, ‘লক্ষ্মী মা আমার! রাজি হয়ে যাও, প্লিজ?’ 

রোমেলা ছেলের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। আর চোখ ভরে আসছে জলে। ওই বেহায়া বজ্জাত মেয়েটা তার ছেলেকে কী জাদু করেছে খোদা জানেন। তার একটা মাত্র ছেলে। কত শখ ছিল নিজে পছন্দ করে দেখে শুনে ছেলের জন্য বৌ আনবেন। আল্লাহ তার কপাল থেকে সেই সুখটাও কেড়ে নিলেন। তিনি কান্না চেপে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করে বললেন, ‘আচ্ছা দেখা যাক। এখন যাও। ভালো লাগছে না আমার।’ সামি মায়ের হাত ছাড়ল না, আকুলিবিকুলি হয়ে বলল, ‘হৃদি খুব ভালো মেয়ে মা। তোমাকে খুব ভালোবাসবে। দেখে নিও! 

রোমেলা জোর করে ছেলের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলেন। চাপা গলায় বললেন, ‘দেখা যাবে।’ 

—‘বাবা কোথায়?’ 

—‘বাড়িতেই আছে। কোনদিকে আছে জানি না।’ 

মাস্টার বেডরুম থেকে বেরিয়ে সামি ছুটল বাবার খোঁজে। স্টাডিরুমে পাওয়া গেলো বাবাকে। দরজায় করাঘাত করল সে কয়েকবার। ভেতর থেকে আওয়াজ ভেসে আসলো, ‘কে?’ 

— ‘আমি।’ 

—‘এসো, দরজা খোলা আছে।’ 

সামি ভেতরে ঢুকল। ঘরের ভেতর ল্যাম্পশেডের হলদে আলো জ্বলছে। লম্বা টেবিলটায় ডাই করে রাখা রাজ্যের সব ফাইলপত্র। হক টেবিল সংলগ্ন চেয়ারে বসে আছেন। তার মুখের সামনে ল্যাপটপ খোলা। ছেলে ঘরে ঢুকতেই তিনি ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে বললেন, ‘কী খবর?’ 

সামি টেবিলের উল্টো পাশে এসে বাবার মুখোমুখি দাঁড়ালো। তার চোখ মুখ থেকে খুশির আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। হকের মনে হলো ছেলের এরকম আনন্দ ডোবা চেহারা তিনি বহুদিন দেখেননি। তার মনটা এক নিবিড় প্রসন্নতায় ছেয়ে গেলো। সামি দমবন্ধ করে বলল, ‘বাবা! থ্যাংক ইউ!’ 

হক বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। কয়েক পা হেঁটে এগিয়ে আসলেন ছেলের কাছে। ছেলের পিঠে একটা হাত রেখে বললেন, ‘মাই প্লেজার। এখন তুমি বলো, ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবলে?’ 

সামি একটু অবাক গলায় বলল, ‘বুঝলাম না।’ 

—‘বিয়ে মানে একটা দায়িত্ব। বিয়ের পর বৌকে খাওয়াবে কী? নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তো, নাকি?’ 

সামি মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। খানিক বাদে বলল, ‘আমি চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করেছি বেশ কয়েক জায়গায়।’ 

হক ছেলের মুখের দিকে গম্ভীর চোখে চেয়ে বললেন, ‘আমার সাথে কাজ করতে তোমার এখনো আপত্তি আছে?’ 

সামি একটু অপ্রতিভ হলো, ‘না, আপত্তি কীসের?’ 

—‘আমার যা কিছু আছে, সব তো আজ বাদে কাল তোমাকেই দেখতে হবে। তাই না?’ 

—‘হুম।’ অন্যমনস্কভাবে সায় দেয় সামি। 

—‘আমি আমাদের ম্যানেজার সিরাজ সাহেবের সাথে তোমার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডেট ফিক্স করে দিচ্ছি। কাল পরশু একবার তুমি উনার সাথে দেখা করো। ডিসকাস করো। ফ্যাক্টরিগুলো এক্সপ্লোর কর। এমপ্লয়ীদের সাথে কথা বলো। বুঝে দেখো কোন ফিল্ডে তুমি প্রথমে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। কেমন?’ 

—‘আচ্ছা।’ মাথা নেড়ে বলল সামি। 

—‘তোমার বন্ধুদের মধ্যে কেউ তোমার সাথে কাজ করতে আগ্রহী কিনা দেখতে পারো।’ 

এই প্রস্তাবটা সামির পছন্দ হলো। সে সশব্দে বলে উঠল, ‘আকাশকে বলে দেখতে পারি।’ 

—‘হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।’ 

৩৮

—‘কীরে কী অবস্থা?’ ফোন কানে নিয়ে বলল অমৃতা। 

হৃদি কোনো ভূমিকা ছাড়াই বলল, ‘দোস্ত, থ্যাংক ইউ!’ 

—‘থ্যাংকস কেন?’ 

—‘তোর জন্যেই এটা সম্ভব হলো।’ 

—‘কীসের কথা বলতেছিস, মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারতেছি না।’

—‘সামির বাবা ফোন করেছিলেন।’ 

—‘তাই নাকি?’ 

—’হ্যাঁ, বাবার সাথে কথা বলেছেন আমাদের বিয়ের ব্যাপারে।’

—‘ওয়াও! গ্রেট নিউজ!’ 

হৃদি খুশিতে বাকবাকুম হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ গ্রেট নিউজ। তোকে থ্যাংকস দোস্ত।’ 

—‘আমাকে কেন থ্যাংকস দিচ্ছিস?’ 

‘আমি জানি তুই উনাকে এই বিয়ের ব্যাপারে কনভিন্স করছিস। তাই না?’ 

অমৃতা একটু স্তিমিত কণ্ঠে বলল, ‘চেষ্টা করছিলাম। কতটুকু পারছি জানি না।’ 

—‘পেরেছিস।’ 

এ কথার পর দুজনেই চুপ করে রইল। কয়েকটা নীরব ক্ষণ কাটার পর অমৃতা বলল, ‘যাক, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক দিন পর একটা সুসংবাদ পেলাম।’ 

—‘তুই কেমন আছিস?’ 

— ‘এই তো।’ 

–‘মন খারাপ?’ 

–‘বিভার অন্য খারাপ লাগছে।’ 

–‘আমারও। ভীষণ মন খারাপ ছিল জানিস? হঠাৎ বাবা ডাক দিয়ে সুখবরটা শোনালেন। তারপর মন ভালো হয়ে গেলো।’ 

‘ব্যাপারটা অনেক জোশ তাই না? ভালোবাসার মানুষটার সাথে সারাজীবন একসাথে থাকা! ভাবতেই অন্যরকম একটা ফিল হয়। তোরা অনেক লাকি দোস্ত। মা শা আল্লাহ।’ 

—‘হুম। তোর জীবনেও এরকম দিন আসবে। চিন্তা করিস না।’

—‘আমি এসব নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই।’

—‘তোর গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন? 

—‘কী রকম?’ 

—‘মনমরা।’ 

দীর্ঘ নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো হৃদি ফোনের ওপাশ থেকে। তারপর কিছুক্ষণ নীরব। 

—‘ভালো লাগে না কিছুই!’ বিষাদ বেজে ওঠে অমৃতার কণ্ঠে। 

—‘কী হইছে?’ 

—‘আই মিস হিম, দোস্ত!’ 

—‘ট্রাই টু কন্ট্রোল ইওরসেল্ফ।’ 

—‘ট্রাই করতেছি। পারতেছি না। কী করব? মরে যাব?’ 

—‘ফালতু কথা বলিস না।’ 

—‘সত্যি মরে যেতে মন চায়।’ 

—‘দাঁড়া তোর জন্য একটা বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতেছি। একটু ওয়েইট কর।’ 

—‘বয়ফ্রেন্ড লাগবে না আমার।’ 

—‘লাগবে, লাগবে। ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলেটারে ধইরা নিয়া আসব তোর জন্য।’ 

—‘ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম মানুষটাকে আমি দেখে ফেলছি। এখন আর অন্য কাউকে চোখে লাগবে না।’ 

—‘যত্তসব আজাইরা কথা।’ 

—‘উনাকে দেখতে ইচ্ছা করে দোস্ত!’ 

—‘তুই কিন্তু আমাকে প্রমিজ করছিস, তুই আর কখনো দেখা করবি না।’

—‘প্রমিজ মনে আছে। নিজ উদ্যোগে দেখা করব না। কিন্তু দেখা হয়ে গেলে?’ 

—‘দেখা হয়ে গেলে চোখ বন্ধ করে রাখবি।’ 

হৃদির কথা শুনে শুকনো হাসল অমৃতা। বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে বালিশের ওপর রাখা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থেকে কথা বলছিল সে। ল্যাপটপের ওয়াল পেপারে একটা মানুষের ছবি দেওয়া। মানুষটির গায়ে ফুল হাতা সাদা শার্ট। গলায় সাদা কালো টাই। ঠোঁটে ধারালো হাসি। মা কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন খেয়াল করেনি অমৃতা। হঠাৎ মায়ের গলা কানে আসলো, ‘এটা কার ছবি?’ 

একটু অপ্রস্তুতভাবে ঘুরে তাকালো সে মায়ের দিকে। হৃদির সাথে কথা শেষ করে নিয়ে একটু কৌতুকের গলায় মাকে বলল, ‘সিনেমার নায়ক। সুন্দর না?’ 

শাহানা ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘এই নায়কের কোনো সিনেমা তো আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি। তুই আবার নায়ক নায়িকার ছবি জমানো শুরু করলি কবে থেকে?’ 

অমৃতা হাসে। কিছু বলে না। শাহানা কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে চেয়ে থেকে মেয়ের মুখের ওপর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিলেন, ‘ফাইজলামি করিস তুই আমার সাথে? এই ছেলেটাকে তো আমি চিনি। কোথায় যেন দেখেছি।’ 

—‘ছেলে নয় মা, ভদ্রলোক বলো।’ 

শাহানা কড়া গলায় বললেন, ‘লোকটা কে? আমি কোথায় দেখেছি লোকটাকে? চেনা চেনা লাগছে কেন?’ 

—‘উনাকে তুমি চেনো। আমার বন্ধু সামির বাবা।’ 

শাহানার মুখটা মুহূর্তে কেমন ছাইরঙা হয়ে উঠল। চোখে ঝিলিক দিল শঙ্কা। 

—‘সামির বাবার ছবি তোর কম্পিউটারে কেন?’ 

অমৃতা চোখ লুকিয়ে বলল, ‘উনাকে আমার ভালো লাগে।’ 

—‘ভালো লাগে মানে?’ 

—‘ভালো লাগে মানে ভালো লাগে।’ 

—‘কী বলতে চাচ্ছিস তুই?’ 

—‘ভালো… বাসি!’ 

সেকেন্ড না গড়াতেই একটা চড় এসে পড়ল অমৃতার গালে। শাহানা ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ‘কথাটা বলতে তোর লজ্জা করল না?’ 

৩৯

বিভাবরীর এ যাত্রায়ও বাড়ি ফেরা হলো না। বন্ধুর বিয়ে ফেলে রেখে স্বামীর সাথে উড়াল দেবে, এতটা ঘোর সংসারি সে এখন অবধি হয়ে ওঠেনি 1 বন্ধুরা অভিজিৎকেও যেতে দিতে চাইছিল না। কিন্তু এবার ওদের মন রক্ষা করতে গেলে চাকরির ক্ষেত্রে একটা ব্যাড রেপুটেশন হতে পারে ভেবে নিজের সিদ্ধান্তেই অটল রইল অভিজিৎ। বিভা পড়েছে ভীষণ এক দোলাচলে। বিয়েটা সে কোনোভাবেই মিস করতে চাইছে না, আবার অভিজিতকেও ছাড়তে মন চাইছে না। ঠিক হলো বিয়ের পরদিনই ভোরের ফ্লাইটে পাড়ি দেবে সে ইন্ডিয়া। 

বিয়ের তারিখ পড়ার সাথে সাথে বন্ধুদের দলটার মধ্যে একটা বাড়তি রকমের ফূর্তি ভাব এসে গেছে। ফুরফুরে তাজা আনন্দ বায়ুতে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রত্যেকে। প্রায় প্রতিদিনই সকলে অফিসের পর জড়ো হচ্ছে কারো না কারো বাসায়। জোর আলোচনা চলছে বিয়ের পরিকল্পনা নিয়ে আজকে ওরা এসেছে আকাশের বাসায়। তারার অনেকদিনের শখ ছিল আকাশের বন্ধুদের নিজের চোখে একবার অন্তত দেখার। আজ তার শখ পূরণ হলো। মোটা কাচের চশমা পরা, কোঁকড়ানো চুলের রোগা পাতলা চেহারার তারাকেও বন্ধুদের খুব পছন্দ হয়ে গেলো। তারার অনুপস্থিতিতে রুদ্র আকাশকে বলল, ‘মেয়েটা সুইট আছে। মামা তোমার আপন কাজিন না তো, তাই না?’ 

আকাশ ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘উঁহু, এর সাথে কোনো হাংকিপাংকি চলবে না।’

—‘কেন?’ রুদ্র প্রশ্ন করল কাতর কণ্ঠে 1 

আকাশ গম্ভীর গলায় বলল, ‘কারণ মেয়েটা এখন আমার কাস্টডিতে আছে। আমি ওর একরকম গার্ডিয়ান বলতে পারিস। সো এই মেয়ের সাথে কোনোরকম ফাইজলামি আমি এলাও করব না।’ 

রুদ্র টিটকিরি মেরে বলল, ‘এহ, আসছে আমার গার্ডিয়ান।’ 

আকাশের ঘরটা আয়তনে খুব একটা বড় নয়। চারকোণা ছোট্ট ঘরটায় একটা সেমিডাবল খাট আর পড়ার টেবিল চেয়ার ছাড়া অন্যকোনো আসবাব নেই। সামি এখনো এসে পৌঁছায়নি। হৃদি, বিভা আর অমৃতা বিছানার ওপর বসেছে গোল হয়ে। রুদ্র বসেছে পড়ার টেবিলের সামনে রাখা কাঠের চেয়ারে। আর আকাশ বসেছে টেবিলের ওপর, পা ঝুলিয়ে। 

হৃদি হঠাৎ একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে ভাষণ দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, –’শোন তোরা, আমার একটা জরুরি কথা আছে। তোরা কি জানিস সামি আমাকে সবসময় পেত্নী বলে ডাকে? এটার কারণ কী? তোদের কি মনে হয় যে আমার চেহারা আসলেই পেত্নীর মতো দেখতে? 

শুনে বন্ধুরা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। রুদ্র খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘পেত্নীকে পেত্নী ডাকবে না তো কী ডাকবে? পরী? 

হৃদি রুদ্রর কথা শুনে রাগল না, বরং একটু দুঃখ ভারাক্রান্ত গলা নিয়ে বলল, ‘সব সময় ফাইজলামি করিস না তো। আমার বয়ফ্রেন্ড কখনো আমার রূপের প্রশংসা করে না। এটা যে আমার জন্য কতবড় একটা দুঃখের ব্যাপার তা তোরা বুঝবি না।’ 

বিভা আগপিছ কিছু চিন্তা না করেই বলে ফেলল, ‘কী বলতেছিস? সামি প্রশংসা করে না? আমার সাথে যখন প্রেম করত তখন দিনের মধ্যে চোদ্দ বার বলত আমি কত সুন্দর এইসব হাবিজাবি। তোরে বলে না ক্যান?’ 

কথাটা শেষ হওয়া মাত্র বন্ধুরা সব তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো বিভার দিকে। চারজোড়া চোখের মণি যখন নিশ্চলভাবে তার মুখের ওপর ঠেসে রইল টানা কয়েকটা সেকেন্ড তখন সে বুঝতে পারল যে মাত্র বলা কথাগুলোয় কিছু একটা গোলমাল ছিল। হৃদি ফোঁস করে একটা ভারি নিশ্বাস ফেলল। বড়ই বিষণ্ন দেখালো সেই সময় তার মুখটা। অমৃতা একটু বিরক্তি নিয়ে হৃদিকে বলল, ‘তোর প্রব্লেম কী? খালি সারাক্ষণ টিপিক্যাল খ্যাৎ মাইয়াদের মতো ঘ্যানঘ্যান করিস কেন? তোর রূপের প্রশংসা করতে হবে কেন? সামি কি তোরে রূপের জন্য ভালোবাসছে? এইরকম মেন্টালিটি কেন তোদের? আচ্ছা বল, তুই কবে সামির রূপের প্রশংসা করেছিস?’ 

—‘আমি কেন ওর প্রশংসা করব?’ হৃদি অবাক। 

অমৃতার গলাটা বেশ চড়ে যাচ্ছিল, ‘কেন করবি না? আমাদের সামি কি দেখতে কম সুন্দর? মেয়েরা কেন সবসময় ছেলেদের কাছ থেকেই এই সব কমপ্লিমেন্ট আশা করে? যে জিনিসটা তুই অন্যের কাছ থেকে আশা করতেছিস ঠিক সেই একই জিনিস অন্যকে দেবার মতো মেন্টালিটি তো তোর থাকতে হবে নাকি? নারী পুরুষের সমান অধিকার বইলা চিল্লাইলে তো খালি হবে না ব্যাপারগুলা অ্যাপ্লাই করতে হবে লাইফের প্রত্যেকটা স্টেপে তাই না? প্রয়োজনের সময় শুধু লেডিস ফার্স্ট হবে আর অন্য সব ক্ষেত্রে লেডিস লাস্ট, এইটা তো ঠিক না। আমি যদি সমঅধিকার চাই তাহলে অবশ্যই সমানভাবে দায়িত্ব পালন করাটাও শিখতে হবে।’ 

এত শক্ত শক্ত কথা শুনে হৃদি একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। মিনমিন করে বলল, ‘এভাবে তো চিন্তা করি নাই।’ 

—‘চিন্তা কর। দয়া করে চিন্তা কর। ভালো তো সামি একা বাসে নাই। তুইও বাসছিস। নিজের ভালোলাগা নির্ভয়ে প্রকাশ করতে শেখ।’ 

এটুকু বলে সে বিভার দিকে ঘুরে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘তোর মাথার মধ্যে কি মগজ বলতে কিছু আছে? নাকি পুরাটাই গোবর?’ 

বিভা কাঁচুমাচু হয়ে বলল, ‘আমি আবার কী করলাম?’ 

—‘তোর সাথে প্রেম করার সময় সামি কী বলত, কী করত এইসব কাহিনি এই গাধা মাইয়াটার সামনে তুই কেন বলতেছিস?’ 

রুদ্র হঠাৎ ফোড়ন কেটে বলল, ‘আফসোসের বিষয় হইল যে উকিল আপা অন্যের ব্যাপারে সব বোঝে। শুধু নিজের ব্যাপারে কিছুই বোঝে না।’ 

অমৃতার ফর্সা মুখ আচমকা একটু লাল হয়ে গেলো এই কথা শুনে।’ এটার মানে কী?’ উত্তপ্ত গলায় প্রশ্ন করল সে। 

রুদ্র অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘অন্যের ভুল ধরতে পারিস ষোল আনা। কিন্তু নিজে যে ভুল কাজ করে যাচ্ছিস, সেদিকে কোনো খেয়াল নাই? তোকে ইদানিং আমার প্যারাডক্স মনে হয়।’ 

রুদ্রর ইঙ্গিতটা বন্ধুরা সকলেই বুঝল। কেউ কিছু বলল না তাৎক্ষণিকভাবে। অমৃতা কটমটে চোখে রুদ্রর দিকে কয়েকটা ক্ষণ চেয়ে থেকে ধারালোভাবে বলল, ‘কাউকে ভালোবাসাটা কোনো অপরাধ না।’ 

—‘ভুল মানুষকে ভালোবাসা হয়তো অপরাধ না, কিন্তু বোকামি তো বটেই।’

—‘তুই কী বলতে চাচ্ছিস? ক্লিয়ারকাট বলো।’ অমৃতার গলা উঠে গেছে সপ্তমে। 

রুদ্র অমৃতার চোখে চেয়ে বলল, ‘বলতে চাচ্ছি, মানুষকে অত নীতিজ্ঞান না শিখায়ে নিজের দিকে নজর দাও। ওরা সবাই যা করতেছে ঠিকই করতেছে। ভুল পথে আছিস তুই। এর চেয়ে বেশি ক্লিয়ারভাবে কী করে বলা যায় আমি জানি না।’ 

অমৃতা বেশ অবাক হলো রুদ্রর কথা শুনে। কিছু বলতে পারল না। স্থানু হয়ে তাকিয়ে রইল শুধু। এই একটা প্রসঙ্গ উঠলে আজকাল সে ভেতরে ভেতরে খুব দুর্বল বোধ করে। দমকা এক ঝড়ো বাতাস প্রবল 

গতিতে তেড়ে এসে শক্ত সবল মন কুঠুরীটা নড়বড়ে করে দেয়। যুক্তি তর্ক সব উড়িয়ে নিয়ে যায় নিমেষে। অমৃতা তখন সম্পূর্ণ অন্য এক অমৃতা হয়ে যায়। সেদিন মা তার গায়ে হাত তুলেছিলেন। জীবনে প্রথমবার! বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল সে। গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে ছিল মায়ের দিকে। মায়ের দুচোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। তার বুকের ধড়ফড়ানি শুনতে পাচ্ছে অমৃতা একহাত দূর থেকে। মায়ের যেন সর্বনাশ হয়ে গেছে। তিনি শঙ্কিত গলায় আদেশ দিলেন, ‘ডিলিট করো এই ছবি, এখুনি ডিলিট কর। 

অমৃতা নিজের গাল থেকে হাত না সরিয়েই বলল, ‘ল্যাপটপের ছবি তো ডিলিট করা যাবে। কিন্তু মনের ভেতরে যে ছবিটা গেঁথে গেছে সেটার কী হবে মা?’ 

—‘কী বলছিস তুই এসব? কী সম্পর্ক তোর ওই লোকের সাথে? বল আমাকে!’ 

—‘কোনো সম্পর্ক নেই মা।’ 

—‘সত্যি কথা বল। কতদূর এগিয়েছিস? ওই লোকটা কী করেছে তোর সাথে?’ 

—‘কিছুই করেন নি। উনি খারাপ মানুষ নন। 

মা পাগলের মতো চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘আমার মেয়ে হয়ে তুই অন্যের সংসার ভাঙতে চাস? এরকম মেয়ে পেটে ধরেছি আমি?’ 

—‘আমি কখনোই অন্যের সংসার ভাঙব না মা!’ 

—‘আজকের পর থেকে তুই ওই লোকের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবি না।’ 

—কোনো যোগাযোগ নেই।’ 

—‘কথা দে আমাকে, তুই এই সম্পর্ক এখানেই শেষ করবি। তোর বাবা জানতে পারলে কী হবে, চিন্তা করতে পারছিস?’ 

—‘কোনো সম্পর্কই নাই। শেষ করব কী? ‘ 

বলেছিল অমৃতা। কিন্তু সে জানে যে ওই মানুষটার সাথে যে সম্পর্কটা তার হয়ে গেছে মনে মনে, সকলের অগোচরে, সেই সম্পর্কের অদৃশ্য সুতোর বুনোট কোনোভাবেই আর ছিন্ন করা যাবে না। সেই সুতোটা আজীবনের জন্য নিগূঢ় এক গাঁটছড়া বেঁধে দিয়েছে বুকের অতলান্তে। হ্যাঁ জেনে বুঝেই ভুলটা হয়ে গেছে তার! যা হওয়ার, তা হবেই! নিয়তি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে, মানুষ নিয়তিকে নয়! 

মা গভীর রাতে তার ঘরে এসেছিলেন আরেকবার। দীপা তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। তার ভারি নিশ্বাসের শব্দে গমগম করছে পুরো ঘর। অমৃতার ঘুম আসছিল না। শুয়ে থেকে এপাশ ওপাশ করছিল সে। মা চোর পায়ে এসে বসলেন ওর মাথার কাছে। আলতো করে হাত রাখলেন কপালে। অমৃতা হাত বাড়িয়ে মায়ের হাতটা ধরল। মা চাপা গলায় বললেন, ‘তোর ওপরে আমাদের অনেক বিশ্বাস রে। অনেক আশা তোকে নিয়ে আমাদের। তুই আমাদের বিশ্বাস আর স্বপ্ন এভাবে ভেঙে দিস না মা।’ অমৃতা কোনো উত্তর দেয়নি। চুপচাপ শুয়ে থেকে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়েছিল শুধু। আজকে রুদ্রর দিকে চেয়ে থেকে মায়ের কথা মনে পড়ছিল। শেষমেশ তাকে বোঝার মতো করে কেউ বুঝল না। না বুঝল নিজের মা, না বুঝল বন্ধুরা। 

হঠাৎ সামির আগমন ঘরের ভেতর জমে ওঠা গুমোট ভাবটা কিয়দংশে লঘু করে তুলল। হৃদি সবাইকে অবাক করে দিয়ে একটা আজব কাণ্ড করে বসলো। সামি ঘরে ঢুকতেই সে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে ছুটে গেলো তার কাছে। গলা জড়িয়ে ধরে টুকুশ করে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে আহ্লাদি গলায় বলল, ‘সামি, তুই খুব সুন্দর!’ সামির হেম রঙের গাল দুখানা আরক্ত হয়ে উঠল এই অপ্রত্যাশিত প্রশংসায়। সে স্ফীত হেসে নিজের গালের যে অংশে হৃদি চুমু খেয়েছিল সেই অংশটায় হাত বুলিয়ে খুশিতে ডগমগ হয়ে কিছুটা অবিশ্বাসের গলায় বলল, ‘ওয়াও! দ্যাট ওয়াজ সুইট!’ 

দৃশ্যটা দেখে আকাশ সজোরে হাততালি দিয়ে উঠল। রুদ্র আফসোসের গলায় বলে উঠল, ‘ইশ আমারে যদি কেউ এরকম কমপ্লিমেন্ট দিত! আকাশ, দোস্ত তোর কাস্টডিতে থাকা মেয়েটার সাথে আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দে। আমি কিন্তু যাচ্ছি আমেরিকা। পিএইচডি মামা। দাম আছে কিন্তু। চিন্তা কইরা দেখ।’ 

.

আকাশ রুদ্রর কথা পাত্তা না দিয়ে সামিকে বলল, ‘আমাদের ব্যাচেলর পার্টির প্ল্যান হবে এখন। অন্য সব ফালতু প্যাঁচাল বন্ধ।’ 

—‘কীসের ব্যাচেলার পার্টি? এসব হবে না।’ হৃদি বলল জোরালো গলায়।

—‘হবে না মানে? আলবৎ হবে। হতেই হবে!’ 

—‘গ্রেট, তাহলে আমরাও করব ব্যাচেলর পার্টি।’ আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে ঘোষণা দিল বিভা। 

—‘কী করবি তোরা ব্যাচেলর পার্টিতে? মদ আর গঞ্জিকা সেবন হবে?’ রুদ্রর প্রশ্ন। 

বিভা রাজকীয় চালে বলল, ‘সবই হবে। সুরাপান থেকে শুরু করে সমস্ত বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে।’ 

—‘আমি তোদের বিনোদন দিতে পারি নেচে গেয়ে। কত টাকা দিবি বল।’ প্রস্তাব দিল রুদ্র গুরুগম্ভীর ভাবে। 

বিভা নাক কুঁচকে বলল –’ইশ, শুকনা বাঁশপাতার মতো দেহ, সে দিবে আমাদের নেচে গেয়ে বিনোদন! কৃমির ওষুধ খা আগে, তারপর আসিস বিনোদন দিতে।’ সামি বিছানার ওপর বসতে বসতে বলল, ‘আকাশ, তোর সাথে একটা ব্যাপারে আলাপ করতে চাচ্ছিলাম।’ 

আকাশ বলল, ‘কী ব্যাপারে? 

—‘তুই এখন যে চাকরিটা করতেছিস, বেতন কত পাস?’

—‘চল্লিশ হাজার। কেন?’ 

—‘বাড়িভাড়া কি তুই দিস?’ 

—‘হুম। লাস্ট কয়েকমাস যাবৎ আমাকেই দিতে হচ্ছে। বাবার তো কোন ইনকাম নাই। কিন্তু হঠাৎ এসব কেন জানতে চাচ্ছিস তুই?’ 

সামি গম্ভীরভাবে আকাশের মুখের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ভাবল কিছু একটা। নিচের ঠোঁটে দাঁত দিয়ে চিমটি কাটল দুবার। বলল, ‘আমি মনে হয় নেক্সট উইক থেকে বাবার অফিসে কাজ করা শুরু করব। তো বাবা জিজ্ঞাসা করতেছিল যে আমার কোনো ফ্রেন্ড আমার সাথে কাজ করতে চায় নাকি। তাই জানতে চাচ্ছি যে তোর কোনো ইন্টারেস্ট আছে কিনা।’ 

সামির কথাটা সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগেই আকাশের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছিল। চোখের তারায় ধক করে উঠেছিল তেজ। সে কঠিনভাবে বলল, ‘যে চাকরিটা এখন করতেছি এইটাও তো তোর বাবার রেফারেন্সেই করতেছি, মনে আছে?’ 

—‘হুম।’ 

—‘আমি আর কোনো ফেভার নিতে চাচ্ছি না উনার কাছ থেকে।’ 

সামি একটু অবাক গলায় বলল, ‘ফেভারের তো কিছু নাই। তোকে কেউ এমনি এমনি টাকা দিবে না। কাজের বিনিময়েই টাকা পাবি। তোর যোগ্যতা আছে বলেই তোকে অফার দেওয়া হচ্ছে।’ 

—‘না দোস্ত, স্যরি। প্রফেশনাল ডিলিংস আমাদের ফ্রেন্ডশিপের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কী দরকার?’ 

বিভা আর হৃদি চুপচাপ ওদের কথোপকথন শুনছিল। আকাশের পড়ার টেবিলের ওপর একটা কালো রঙের দুরবীন রাখা ছিল। রুদ্র বিরসমুখে সেই দুরবীনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল অনেকক্ষণ ধরে। একটু পর পর চোখের সামনে ধরে জানালার বাইরেটা দেখছিল। 

অমৃতা বলল, ‘আমার মনে হয় প্রস্তাবটা খারাপ না। আকাশ তুই আরেকটু চিন্তা করে দ্যাখ। সামিদের কোম্পানির পে স্কেল অনেক হাই।’

আকাশ একটু ঝাঁঝের সাথে বলল, ‘তোর এত শখ হইলে তুই কর না ওদের চাকরি। আমারে বলতেছিস ক্যান?’ 

অমৃতা একটু অপ্রতিভভাবে বলল, ‘আমার কথা কেন আসতেছে?’ 

—‘এই সামি! তোদের ল’ ইয়ার লাগলে ওরে নিয়া নে।’ আকাশ তাচ্ছিল্যের গলায় বলল। 

—‘আমি কোম্প্যানি ল এর কিছুই জানি না। তাছাড়া আমার আপাতত চাকরির প্রয়োজন নাই।’ 

—‘ও আচ্ছা, তোর প্রয়োজন নাই। আর আমারতো খুব প্রয়োজন তাই না? আমি তো রাস্তার ফকির!’ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে কথাগুলো বলল আকাশ। সামি খুব ব্যথিত স্বরে বলল, ‘দোস্ত এভাবে বলার কিছু নাই। আমি আসলে তোদের হেল্প চাচ্ছিলাম। তোরা আমার সাথে থাকলে আমার ভালো লাগত। দ্যাটস ইট।’ 

রুদ্র বলল, ‘তোর বৌরে নিয়া নে। এম ডি, টেম ডি কিছু একটা বানায় দে। সেইরকম হবে।’ 

সামি হৃদির দিকে চেয়ে একটু নরম গলায় বলল, ‘আমার বৌয়ের অত কাজ করা লাগবে না।’ 

অমৃতা ঝেঁঝে উঠল, ‘কাজ করা লাগবে না মানে? হৃদি কি ঘরে বসে থাকবে নাকি?’ 

সামি নির্বিকার গলায় বলল, ‘ওর তো চাকরি করার কোনো প্রয়োজন নাই!’ 

—‘সিরিয়াসলি? এটা তুই বলতেছিস সামি? আমার ফ্রেন্ড হয়ে তুই এভাবে চিন্তা করতে পারলি?’ অমৃতার গলা দিয়ে বিস্ময় ঝরে পড়ছিল। সামিও দমল না। জোর গলায় বলল, ‘এত ওভাররিয়েক্ট করার কিছু নাই। ও চাইলে অবশ্যই কাজ করতে পারে। সেটা নিতান্তই ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ 

হৃদি এবার একটু কেশে নিয়ে বলল, ‘সামি শোন, আমার বাবা চায় আমি যেন বাবার ব্যাংকেই জয়েন করি বুঝছিস? পরীক্ষা ছিল দুইদিন আগে তুই তো জানিসই। মনে হয় পাশ করব। রিটেনে পাশ করতে পারলে বাবা ভাইভার ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে পারবে। চাকরিটা হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।’ সামি একটু ঠেসমারা গলায় বলল, ‘ব্যাংকের চাকরি মানে বুঝিস? সকাল সন্ধ্যা টানা কাজ। অনেক খাটুনি। শুধু শুধু এত কষ্ট করার কী মানে আমি বুঝলাম না।’ 

হৃদি মুখ খোলার আগেই অমৃতা একদম ফোঁস করে উঠল, ‘হৃদি সকাল সন্ধ্যা কাজ করবে নাকি অল নাইট কাজ করবে সেটা তুই বলে দিতে পারিস না।’ সামি ভ্রুকুটি করে অমৃতার দিকে তাকালো, ‘এত ক্যাটক্যাট করিস কেন তুই সবকিছু নিয়া? একবারই তো বললাম যে ওর ইচ্ছা হইলে ও অবশ্যই চাকরি করবে।’ 

বিভা তরল গলায় হৃদিকে বলল, ‘চাকরি না করলেও পারিস। আমাকে দ্যাখ সারাদিন বাসায় থাকি। রান্নাবান্না, ঘরসংসার করি। সারাদিন একলা থাকার পর জামাই বাসায় ফিরলে বেশ একটা প্রেম প্রেম ভাব হয়। বিনদাস! আর কী লাগে?’ 

অমৃতা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘তোর লজ্জা করল না কথাটা বলতে? এবার ফিরে গিয়েই তুই চাকরি খুঁজবি। 

বিভা নির্বিকার গলায় বলল, ‘নাহ, আপাতত কোনো চাকরিবাকরি না। তাছাড়া ওই জঙ্গলের মধ্যে আমারে কে চাকরি দিবে? 

—‘তুই একটা নাচের স্কুল খোল।’ অমৃতা বলল। 

আইডিয়াটা বুঝি বিভার পছন্দ হলো। খুশিতে কলকল করে উঠে বলল, ‘এটা ভালো বলছিস!’ 

হঠাৎ রুদ্র ঝপ করে লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চোখের সামনে দুরবিনটা দুহাত দিয়ে ধরে রেখে বলল, ‘মাই গড! গাইজ, আই থিংক আই জাস্ট স আ নেকেড গার্ল!’ 

বন্ধুরা সব চোখ বড় বড় করে চাইলো তার দিকে। সামি জমানো গলায় বলল, ‘ওয়াও! কোথায়?’ 

—‘নেক্সট বিল্ডিং এ!’ 

আকাশ তড়াক করে নেমে গেলো টেবিল থেকে। রুদ্রর হাত থেকে দুরবিনটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল, ‘কই দেখি দেখি!’ রুদ্র কিছুইতেই জিনিসটা আকাশের হাতে দেবে না। দুই বন্ধুতে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো। সামি হাসতে হাসতে বাকি বন্ধুদের বলল, ‘কী? দেখবি নাকি নেকেড গার্ল?’ 

বিভা পানসে মুখে বলল, ‘নেকেড গার্ল দেইখা আমরা কী করুম? তোরাই দ্যাখ। নেকেড ম্যান পাইলে আমাদের ডাকিস। তাও শর্ত আছে, হট হইতে হবে।’ 

হৃদি সামির হাসি ঝলমলে মুখের দিকে চেয়ে বলল, ‘তুই এত হাসতেছিস কেন? এত কেন আনন্দ?’ 

সামি আগের চাইতে আরও বেশি দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘আনন্দ হবে না? ফ্রিতে মেয়ে দেখব। আনন্দই আনন্দ।’ 

—‘সেইসব দিন শ্যাষ। বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এখন আর এসব আনন্দ নাই।’ অমৃতা রায় দিল। 

বিভা বলল, ‘বেচারা দেখেনাই তার আগেই তোরা এত কথা বলতেছিস কেন? না দেখে একটু আনন্দ করতেছে। করতে দে না!’ 

হৃদি ধমকে উঠে বলল, ‘চুপ থাক। এত আনন্দের দরকার নাই!’

অমৃতা চিন্তাযুক্ত গলায় বলল, ‘কিন্তু মেয়েটা নেকেড কেন?’ 

—‘আজকে বেশ গরম পড়ছে। এইটা একটা কারণ হইতে পারে।’ বিভা বলল গম্ভীরভাবে। 

শুনে বন্ধুরা সবাই হো হো করে হেসে উঠল, সমস্বরে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *