বৃন্দাবনী চুটকি

বৃন্দাবনি চুটকি

বৃন্দাবনে এলেম এবার, মালাই খেলেম খুব দেদার,
হাঁসফাসিয়ে লম্বা হলেম দাদা, আমি আর কেদার৷
আচ্ছা করে জড়িয়ে ধরে আরাম ভরা গিদ্দেকে,
চক্ষু বুজে আমি যখন সাধছি শুয়ে নিদ্রেকে,
রাত্রি তখন অনেক হবে, শব্দ-টব্দ কিচ্ছু নেই!
হঠাৎ যেন-ও বাবা গো! কামড়াল কি বিচ্ছুতেই?
ধড়মড়িয়ে লাফিয়ে উঠি-নয়তো এটা গোখরো সাপ?
হাত বুলিয়ে পিঠের ওপর চেঁচিয়ে বলি, ‘বাপরে বাপ!’
দাদা-টাদা জেগে উঠে বলেন, ‘ওরে হল কী?’
হতাশভাবে বললুম, ‘দেখো, ভায়া তোমার মোলো কি!
‘পিঠের ওপর লতার ছোবল-জলদি জ্বালো পিদ্দিমে!’
‘বলিস কীরে!’-বলেই দাদা জ্বাললে আলো টিমটিমে৷

তারপরেতে দেখলুম, যাহা লাগল তাতে ধাঁধা হে!
ঘরের ভেতর উড়ছে যেন চামচিকেরই গাদা হে!
হো হো করে হেসে বললে দাদা ডেকে কেদার বসাকে,
‘বোঝা গেছে, সাপ ভেবেছে বৃন্দাবনি মশাকে!’
ওরে বাবা, মশা ওরা? শুনেই চক্ষু চড়কগাছ!
মশা হলেও নেইকো কোথাও মশার মতন ধরন-ধাঁচ!
বোঁ বোঁ করে আসছে তেড়ে শানিয়ে হুলের করাত যে,
শোঁ শোঁ করে রক্ত শোষে মন্দ ঠেকে বরাত যে!
একটা মারি দশটা আসে, তার পিছনে দুশোটা,
ঘাড়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, ঠিক যেন সে ঘুসোটা!
মারতে মশা নিজের গালে কষিয়ে দেদার চাপড়টা,
‘ধ্যাত’ বলে ফের কেতরে পড়ি, মাথায় দিয়ে কাপড়টা!

মুড়ি দিয়েও নেই বাঁচোয়া, উলটে বাড়ে পোঁ পোঁ বোল,
চাদর ফুঁড়ে আদর করে, নাকের ডগা হল ঢোল!
‘রোস তো’, বলে লাফিয়ে উঠি, ঘুরিয়ে ছুড়ি ছাতাটা,
মশার তাতে বয়েই গেল, ফাটল দাদার মাথাটা৷
দাদা এল পাকিয়ে ঘুসি, মশা এল শানিয়ে হুল,
চক্ষু চেয়ে পষ্ট দেখি, ফুটছে হাজার সরষে ফুল!
ভড়কে আমি, বিছনা ছেড়ে তড়াক করে পগার পার
ঘুসির ভাবনা গেল বটে, রইল কিন্তু মশার সার!
মানুষ দেখে যত মশা খালি করে নর্দমা,
বাজিয়ে ভেঁপু পালে পালে নিতে এল গর্দানা!
মেষের মতো মশার ঝাঁকে ছিষ্টি কালো কিষ্টি হে,
স্মরণ করি ইষ্টিদেবে, ঝাপসা হল দিষ্টি হে!
শিকার পালায় দেখে তারা দিচ্ছে রুখে বাগড়া রে,
গায়ে যেন বসায় দাড়া সুমুদ্দুরের কাঁকড়া রে!
যাচ্ছি কোথা জানিনেকো-দক্ষিণে না উত্তুরে?
ওগো বাবা, খেলে বুঝি আজকে তোমার পুত্তুরে!
বৃন্দাবনে কৃষ্ণে দেখে পেলুম বুঝি কৃষ্ণে গো!
ওরে মশক, দে রে ছেড়ে, প্রাণটা কেড়ে নিসনে গো!
রক্ত বুকে উছলে ওঠে-মশার বাঁশি শুনে আজ,
কাছা-কোঁচা খুলে চোঁচা ছুটছি সোজা নেইকো লাজ৷
মুখ খিঁচিয়ে চুলকে গা-টা, ফুলে হলুম হস্তীটি!
উধাও ছুটে পেরিয়ে এলাম শহরের শেষ বস্তিটি!
প্রাণটা তখন ওষ্ঠাগত পেয়ে হুলের নমুনা,
থমকে হঠাৎ চমকে দেখি, সামনে কালো যমুনা৷
একটুখানি ভাবনা হল-ফিরি কিংবা ঝম্ফ দি?
ক্যাঁক করে ফের মশার কামড়-অমনি দিলাম লম্ফটি!

নাক-বরাবর চোবাই জলে, এড়িয়ে মশার সীমানা,
যাচ্ছিল এক মালসা ভেসে মাথায় তুলি সেইখানা!
কালীয়-সাপের ছ্যানা আছে শুনেছিলুম জলেতে,
‘ল্যাজ দিয়ে পাক জড়িয়ে’ যদি দেয় সে আমার গলেতে?
তারপরেতে-কাছিম-চাচা? বলি, জেগে আছ কি?
ঠ্যাঙের ওপর দাঁত বসাতে তুমিও তেগে আছ কি?
নেক-নজরে চাইবে নাকি, নইলে আমি যাই মারা,
রাখতে পারো, মারতে পারো, করব কী আর নাই চারা!
একটা রাতের অতিথ আমি, গেছে সকল ভরসা-সুখ,
ভাগব আমি দেখতে পেলেই সূয্যিমামার ফরসা মুখ৷
গোপীনাথজি সুখে থাকুন, মালপো ভোগে হোন মোটা,
মশারা সব লুটুক মজা, নয় সে বড়ো মন্দটা;
চাইনে আমি মাখন-ননি, বাঁচে যদি আজ মাথা-
এক ছুটেতে টিকিট কেটে-এক দমেতে কলকাতা!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *