বুড়ি পৃথিবীর বয়েস কতো?
কিন্তু কথা হলো, পৃথিবীর বয়েস যে এতেখানি হয়েছে তা জানা গেল কেমন করে? নিশ্চয়ই হিসেব করে। কিন্তু সোঁ-হিসেবটা কেমনতরো? ওঃ,-সে-সব ভারি মজার মজার হিসেব। একটা নমুনা দিচ্ছি। শোনো।
ধরো, তুমি আর আমি রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়েছি। পথে এক বুড়ির সঙ্গে দেখা। তার মাথায় অনেক সাদা চুল। আর বুড়ি হয়তো আমাদের বললো, তার চুল পাকবার গল্পটা ভারি মজার। তার নাকি জন্ম হবার পর থেকেই প্রতি বছর হাজারে একটা করে চুল পেকেছে। তারপর, বুড়ি একগাল হেসে, আমাদের জিজ্ঞেস করলোঃ বলে দিখিনি আমার বয়েস কতো হয়েছে?
আমরা আর কী করি? দুজনে মিলে গুনতে শুরু করলামঃ বুড়ির মাথায় সবগুদ্ধ কতোগুলো চুল আছে আর তার মধ্যে কতোগুলোয় পাক ধরেছে, কতোগুলোয় পাক ধরে নি। আমরা হয়তো গুনতি করে দেখলাম, বুড়ির মাথায় সবশুদ্ধ এক লক্ষ চুল আর তার মধ্যে দশ হাজারটা হলো সাদা চুল। এর পর বুড়ির বয়েসটা হিসেব করে ফেলা কিছু কঠিন হবে না। এক বছরে এক হাজারটার মধ্যে একটা করে চুল সাদা হয়েছে, তার মানে এক লক্ষর মধ্যে একশো করে সাদা হয়েছে। সবগুদ্ধ দশহাজার সাদা চুল। তার মানে দশ হাজারকে আমরা একশো দিয়ে ভাগ করে দেবো, বেরিয়ে যাবে বুড়ির বয়েস। ভাগ করলে কতো হবে? একশো বছর নিশ্চয়ই।
এই রকমই একটা হিসেব করে একদল লোক বুড়ি পৃথিবীর আসল বয়স বের করে ফেলবার চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর অবশ্য মাথা নেই, মাথায় একমাথা সাদা চুলও নেই। কিন্তু পৃথিবীর বুকে আছে এক রকমের জিনিস, যার নাম ইউরেনিয়াম। এই ইউরেনিয়াম বলে জিনিসটা ভারি মজার। এর থেকে একটানা যেন এক রকম তেজ বেরিয়ে যাচ্ছে। আর ওই তেজ বেরিয়ে যাবার দরুন ইউরেনিয়াম ক্রমাগতই বদলে যাচ্ছে, বদলাতে বদলাতে একরকম সীসে হয়ে যাচ্ছে। ধরো, মাটি খুঁড়ে একতাল ইউরেনিয়াম পাওয়া গেল, তার ওজন এক কিলোগ্রাম। হিসেব করে দেখা যায়, এই এক কেজি ইউরেনিয়ামের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১ + ৭৪০০০০০০০০ কেজি করে ইউরেনিয়াম বদলে গিয়ে সীসে হয়ে যায়। এখন ব্যাপারটা হয় কি জানো? মাটি খুঁড়ে খানিকটা ইউরেনিয়াম তুললে দেখতে পাওয়া যায় ইতিমধ্যেই তার অনেকখানি সীসে হয়ে গিয়েছে। তাহলে ইউরেনিয়ামের ওই তালটার মোট ওজনের তুলনায় তার মধ্যেকারী সীসের ওজন কতোখানি এ থেকে নিশ্চয়ই হিসেব করে বলে দেওয়া যায়, ইউরেনিয়ামের ওই তালটার বয়েস কতো হলো। যেমন, যদি দেখি এক কেজির মধ্যে প্রায় ১ + ৭৪০০০০০০০০ কেজি সীসে তাহলে বলবো ইউরেনিয়ামটার বয়েস হলো এক বছর; যদি দেখি প্ৰায় ১ + ৭৪০০০০০০০০ কেজি তাহলে বলতে হবে। ওটার বয়েস একশো বছর। পণ্ডিতেরা বলছেন, পৃথিবী যখন সবে জন্মালো তখন তার বুকে যে-ইউরেনিয়াম ছিল সেটা খাঁটি ইউরেনিয়াম, তার মধ্যে কোনো সীসের ভেজাল ছিল না। কিন্তু আজকের দিনে যেখান থেকেই ইউরেনিয়াম জোগাড় করা যাক না কেন, দেখা যায় তার মধ্যে খানিকটা করে সীসের ভেজাল। আর তাই, মোট ইউরেনিয়ামটার তুলনায় সীসের যে-ভেজাল তা কতোখানি, এই দেখে হিসেব করে বলে দেওয়া যায় পৃথিবীর বয়েসটা কতো হলো! আমাদের ওই বুড়ির মাথার পাকা চুল গুনে তার বয়েসটা বের করবার মতোই হিসেব নয় কি? এই রকমের হিসেব করে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, বুড়ি পৃথিবীর বয়েসটা নেহাত কম নয়, নিদেন পক্ষে সাড়ে চারশো কোটি বছর তো হবেই।