বীরেনবাবুর প্রশ্ন

বীরেন বাবুর প্রশ্ন

লোকটাকে প্রথম দর্শনেই কেমন যেন অদ্ভুত মনে হয়েছিল বীরেনবাবুর। দেখলেই মনে হয়, ও হয়তো মানুষ নয়। কিংবা মানুষের খোলসে অন্য কিছু!

জামাকাপড় পরার মতো করেই একটি মানবদেহ পরে ঘুরছে! বয়স আন্দাজ সত্তরের ওপরে। গায়ের রঙ আলকাতরা কালো। হাসলে সাদা ঝকঝকে দাঁত দেখা যায়। কিন্তু দু’প্রান্তের দুটি শ্বদন্ত আশ্চর্য রকমের তীক্ষ্ণ। বীরেনবাবু সভয়ে লোকটির ধারালো দাঁতের দিকে তাকিয়েছিলেন। তাঁর মনোভাব বুঝতে পেরেই হয়তো লোকটা বলে উঠল, “আমার নিরামিষ খাওয়ার দাঁত নেই। আমি মাংসাশী কি না!”

তিনি রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছলেন। কী কুক্ষণে যে অতিপ্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়েছিলেন! এতদিন দিব্যি মনের সুখেই ছিলেন। হঠাৎ সুখে থাকতে ভূতের কিল পড়ল! মৃত্যুর পর ঠিক কী হয়, আত্মা আছে কি না, ইত্যাদি সব প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘনিয়ে আসতে শুরু করল। অনেকরকম বই পড়লেন, প্যারাসাইকোলজিস্টদের সঙ্গে আলোচনা করলেন, কিন্তু তবুও সব প্রশ্নের জবাব পেলেন না। মনে হল, অনেক কিছুই অধরা থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে একটা প্রশ্নের উত্তর বড় ভাসা-ভাসা পাচ্ছেন। সেই প্রশ্নটার উত্তর তাঁর চাই।

এই লোকটির নাম গণপতি হাজরা। একাধারে প্যারাসাইকোলজিস্ট। তার ওপরে আবার ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চাও করেন। এসব বিবরণ শুনেই যথেষ্ট আগ্রহ বোধ করেছিলেন তিনি। তিনদিনের মধ্যেই গণপতি হাজরার টেলিফোন নম্বরও খুঁজে বের করে যোগাযোগ করেছেন। গণপতি হাজরা তাঁকে নিজের ঠিকানাটা দিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন। সেই কথামতোই আজ রাত্রে এসে উপস্থিত হয়েছেন ভদ্রলোকের ডেরায়।

কিন্তু এ বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে বীরেনবাবুর। সবই ঠিক আছে, অথচ কিছুই যেন ঠিক নেই! বাড়ির দরজায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর শরীরটা ছ্যাৎ করে উঠেছিল। বাইরে প্রচণ্ড গরম। গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়ে যাওয়ার উপক্রম। অথচ এই বাড়ির ভিতরটা আশ্চৰ্য রকমের ঠান্ডা! এতটাই ঠান্ডা যে তাঁর মনে হচ্ছিল, তিনি কোনও মর্গের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন! কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার! কোথাও কোনও এসি বা নিদেনপক্ষে একটা কুলারও চোখে পড়ল না! তাহলে বাড়ির ভিতরটা এত ঠান্ডা কেন?

—“ঠান্ডা লাগছে?” গণপতি তাঁর ধবধবে সাদা তীক্ষ্ণ দাঁতগুলো বের করে হাসলেন, “তা একটু ঠান্ডা তো লাগবেই। জানেনই তো, মৃত মানুষেরা গরম পছন্দ করে না।”

বীরেনবাবু চমকে উঠলেন। বুকের মধ্যে একটা ভয়ও গুড়গুড় করে উঠল। লোকটা নিজে যেমন অদ্ভুত, তেমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, যখন থেকে এসেছেন, তখন থেকেই মনে হচ্ছে তাঁর আশপাশে বুঝি অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথা থেকে যেন একটা হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া থেকে থেকে স্পর্শ করে যাচ্ছে তাঁকে। হাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়! বীরেনবাবুর মনে হল, হাওয়ার ভেতর থেকেই কেউ ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে! কী বলছে তা বুঝতে পারছেন না। কিন্তু কিছু একটা বলছে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত!

—“আপনি বোধহয় বুঝতে পেরেছেন যে এ ঘরে আমরা ছাড়াও আরও অনেকেই আছেন।”

আশ্চর্য! গণপতি তাঁর মনের কথাটা অবিকল বুঝে নিয়েছেন। এ লোকটা কি অন্তর্যামী! বীরেনবাবুকে আরও ঘাবড়ে দিয়ে বললেন তিনি, “কান পাতলে অনেক কিছুই শুনতে পাবেন। ওরা প্রায়ই প্যারালাল ওয়ার্লডের বর্ডার ক্রস করে এদিকে চলে আসে। বুঝতে পারে না যে এদিকে আসতে নেই, এটা ওদের জায়গা নয়!”

বীরেনবাবু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “তার মানে সত্যিই একটা প্যারালাল ওয়ার্লড আছে?”

—“আছে,” বৃদ্ধ মানুষটি হাসলেন, “সেটা অবিকল আমাদের দুনিয়াটার মতোই। এবং এই দুনিয়ার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। মৃত্যুর পর আত্মারা সেখানেই বসবাস করে। দুটো ওয়ার্লডই একটা অদৃশ্য বর্ডারলাইনের মাধ্যমে বিভক্ত। ঠিক যেন দুটো দেশ। আমরা ওই বর্ডারলাইন ক্রস করে প্যারালাল ওয়ার্লডে ঢুকতে পারি না। কিন্তু ওরা প্রায়ই অনুপ্রবেশকারীদের মতো এখানে এসে পড়ে। দুটো বিশ্বের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পারে না।”

বীরেন দত্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। গণপতি হাজরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে যেন জরিপ করছেন মানুষটিকে। তারপর আস্তে আস্তে জানতে চাইলেন, “ওপারের জগতটা ঠিক কীরকম? যাকে বলছিলেন প্যারালাল ওয়ার্লড? আপনি দেখেছেন কখনও?”

গণপতি হাজরা তাঁর দিকে অদ্ভুতদৃষ্টিতে তাকালেন। হয়তো এ প্রশ্নটাই তিনি আশা করেছিলেন। এই বৃদ্ধ মানুষটিকে সচরাচর নানারকম আলোচনাসভায় এইরকম প্রশ্নেরই মুখোমুখি হতে হয়। তাঁর চোখে ঝিকমিক করে কৌতুক খেলা করে উঠল। প্রশ্নটার সরাসরি জবাব না দিয়ে হেসে বললেন, “আপনার বয়েস কত? চল্লিশ পেরিয়েছে?”

— “আজ্ঞে!” বীরেন সবিনয়ে জবাব দিলেন, “এই সদ্যই পেরিয়েছে।”

—“তবে এই প্রশ্ন আপনার করা উচিত নয়,” বৃদ্ধ মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললেন, “এই বয়সটা জীবনকে উপভোগ করার। মৃত্যু এবং তৎপরবর্তী বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার জন্য তো গোটা বার্ধক্যটাই পড়ে রয়েছে।”

—“তবু…” তিনি নাছোড়বান্দা, “বলুন না, আপনি জানেন যে ওপারের দুনিয়াটা ঠিক কেমন?”

—“আপনি সত্যিই জানতে চান?” গণপতির মুখের হাসি মুছে গিয়েছে। গম্ভীর স্বরে বললেন, “এই প্যারালাল ওয়ার্লডটাকে সত্যিই কি এক্সপেরিয়েন্স করতে চান?”

— “চাই।”

—“ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই ছেলেখেলা নয়। যথেষ্ট ঝুঁকি আছে।” বৃদ্ধ তাঁকে সতর্ক করলেন।

—“তবু আমি জানতে চাই,” বীরেনবাবু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, “সম্ভব?”

—“সম্ভব,” তিনি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালেন। ওঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনার কপাল ভালো। আজ অমাবস্যা। একটু অপেক্ষা করুন। আসছি।”

তারপর ধীর পায়ে ভেতরের ঘরের দিকে চলে গেলেন।

সামনে-রাখা অঙ্গার পাত্রে আগুন ধমকে ধমকে জ্বলে উঠছে। সেই লেলিহান শিখার মধ্যে মুঠো করে কিছু একটা ফেললেন গণপতি। জিনিসটা কী তা ঠিক বোঝা গেল না। তবে সেটা সুগন্ধী কিছু। পোড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুগন্ধে ঘর ভরে গেল। এখন ঘরে শুধু গমগম করছে তাঁর কণ্ঠস্বর। মৃদু অথচ সুরেলা গলায় মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে বৃদ্ধ মাটির ওপর রঙিন খড়ি দিয়ে কীসব চিহ্ন আঁকছেন। মন্ত্র পড়তে পড়তেই থেমে গিয়ে বললেন, “এই কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যা-ই ঘটুক না কেন, আপনি যে আসনে বসে আছেন সেখান থেকে একচুলও নড়বেন না। উঠে পড়ার চেষ্টা তো একেবারেই করবেন না। যে শক্তিগুলোকে নিয়ে আমি কাজ করছি তাদের সঠিকমতন চালনা না করতে পারলে বিপদ ঘটতে পারে। বুঝেছেন?”

—“আজ্ঞে, বুঝেছি।”

বীরেনবাবু মাথা নাড়লেন। যদিও এই মুহূর্তে তাঁর বেশ ভয় ভয় করছে। ঘরে এখন অঙ্গারপাত্রের জ্বলন্ত আগুন ছাড়া অন্য কোনও আলো নেই। মনে হচ্ছে, আশপাশের অন্ধকার বুঝি আরও জমাট হয়ে ঘিরে ধরছে তাঁকে। চতুর্দিকে ছায়া ছায়া কাদের যেন অবাঞ্ছিত অস্তিত্ব। তাঁর আচমকা মনে হল, ছায়াগুলো বোধহয় কিছু বলতে চাইছে। বারবার হাত নেড়ে নিষেধ করছে।

—“অন্যদিকে তাকাবেন না।” গণপতি গম্ভীর গলায় বললেন। তাঁর কণ্ঠস্বরে স্পষ্ট আদেশের সুর, “এদিকে মনোসংযোগ করুন।”

—“হ্যাঁ”

দেওয়ালের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আগুনের দিকে তাকালেন বীরেনবাবু এখনও বৃদ্ধ বিড়বিড় করে কীসব মন্ত্র পড়ে চলেছেন। আগুনটা ক্রমশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে! যত উজ্জ্বল হচ্ছে, তার গনগনে রক্তিম রঙটা মুছে গিয়ে নীলাভ আভা ফুটে উঠছে। প্রথমে মনে হয়েছিল, হয়তো তাঁরই চোখের ভুল! কিন্তু এখন ভালোভাবে দেখে নিশ্চিত হলেন। নাঃ, কোনও ভুল নয়। আগুনটা সত্যিই এখন নীলাভ শিখায় জ্বলছে। কী মোহনীয় সে নীল রঙ! গণপতি নিশ্চয়ই আগুনের ভেতরে এমন কিছু ফেলেছেন যার ফলে এমন নীলাভ আভা ঠিকরে পড়ছে।

—“আমার হাতে হাত রাখুন।” গম্ভীর স্বরে আদেশ করলেন গণপতি বীরেনবাবু যে ওঁর এসব যজ্ঞের ব্যাপারে সঠিক কিছু বুঝতে পারছিলেন, তা নয়। কিন্তু তিনি যা যা বলছিলেন নীরবে তা পালন করে চলেছেন। ওঁর কথামতই এবার বৃদ্ধের হাতে হাত রাখলেন। কিন্তু স্পর্শমাত্রেই চমকে উঠেছেন! একটা বিদ্যুত্তরঙ্গ বয়ে গেল তাঁর দেহে! কী ঠান্ডা হাত গণপতির! বীরেনের মনে হল, তিনি একটা কঙ্কালের হাতে হাত রেখেছেন। সে হাতে কোনও মাংস, পেশী, চামড়ার অস্তিত্ব নেই! শুধু যেন কয়েকটা হাড় অবশিষ্ট!

গণপতির কণ্ঠস্বর এবারে উচ্চগ্রামে পৌঁছেছে! বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল! এ তো উচ্চারণ নয়, আর্তনাদ! মানুষের আত্মা যখন বিনষ্ট হয়ে যেতে বসে তখনই বোধহয় কোনও মানুষ এইভাবে মন্ত্রোচ্চারণ করতে পারে। বীরেনবাবুর দেহ ক্রমশ শিথিল হয়ে পড়ছিল। তিনি টের পেলেন একটা প্রচণ্ড চৌম্বকশক্তি তাঁকে টেনে নিয়ে চলেছে অন্য কোথাও! তাঁর আত্মাকে দেহ থেকে টেনে বের করে নিচ্ছে কেউ! অঙ্গারপাত্রটা এখন ভলকে ভলকে উগরে দিচ্ছে ধোঁয়া। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে আসছিল বীরেনবাবুর। কোনওমতে বললেন, “এটা কী হচ্ছে! আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?”

গণপতি খলখল করে হেসে উঠলেন। এ হাসি শয়তানের হাসি! হাসতে হাসতেই বললেন, “আর কয়েক সেকেন্ড কষ্ট পাবেন! তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।”

—“কিন্তু …”

শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে। চোখে প্রায় অন্ধকার দেখছেন। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠেন তিনি, “আপনি আমার সঙ্গে এটা কী করলেন?”

গণপতির হিংস্র দাঁতগুলো ঝিকিয়ে উঠল, “কিছুই না। শুধু আত্মা বদল করছি মাত্র। আত্মা কী জানেন? পাখি! প্রাণপাখি বলে না? আর দেহ হল খাঁচা। আমার পাখিটা এই জরাজীর্ণ খাঁচায় আর থাকতে চাইছে না। দু’বার স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। তৃতীয়বার হলে বাঁচব কিনা সন্দেহ। অথচ বাঁচার প্রবল ইচ্ছে! আমার আত্মার একটা নতুন, তাজা, শক্তপোক্ত খাঁচা দরকার। তা-ই আমি আপনার দেহটা ধার নিচ্ছি। আপনার সদ্য চল্লিশ পার করা সুস্থ, সবল দেহে এখন আমি থাকব। আর আমার এই বৃদ্ধ, অশক্ত দেহে আপনি। এতবছর ধরে ব্ল্যাক ম্যাজিকের সাধনা করে আমি এই মন্ত্র পেয়েছি। আজ তার সদ্ব্যবহার করলাম।”

বীরেনবাবু ততক্ষণে মাটির ওপর লুটিয়ে পড়েছেন। তাঁর চতুর্দিকে ঝলমল করছে নীলাভ জ্যোতি! কোনওমতে বললেন, “বিশ্বাসঘাতক!”

গণপতি মৃদু হাসলেন। বীরেনবাবুর জন্য মায়াও হল তাঁর। লোকটা কী করে বুঝবে যে একটা নিরীহ প্রশ্নের জালে এমন করে ফেঁসে যাবে! একটা কৌতূহলের দাম এমন সাংঘাতিক হবে তা কে জানত! আস্তে আস্তে তিনি চোখ বুজলেন। শুয়ে পড়লেন মেঝেতে। এবার ওই দেহে যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে… অনেকদিন এই বুড়ো, ভারি এবং রোগগ্রস্ত দেহটাকে টেনে বেরিয়েছেন। এখন একটা সুস্থ দেহ তাঁর প্রতীক্ষারত। ওই দেহে এখনও অনেকদিন বাঁচবেন তিনি…! মুক্তি! আঃ…

কিন্তু এ কী! বীরেনবাবুর দেহটা কোথায় গেল! গণপতির নিজের দেহ থেকে বেরিয়ে এসেছে নীলাভ উজ্জ্বল জ্যোতির মতো তাঁর সূক্ষ্ম শরীর। বেরিয়ে আসার আগেও দেখেছেন বীরেন দত্তর দেহটা পড়ে আছে মাটির ওপরে। অথচ এখন সেখানে কিছুই নেই! তবে প্রবেশ করবেন কোথায়!

তিনি বিহ্বল হয়ে দেখলেন তাঁর নিজের দেহটা এবার আস্তে আস্তে উঠে বসেছে। গণপতির দেহ থেকে বীরেনবাবুর কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “বড়ই দুঃখের কথা গণপতিবাবু। আপনি আমাকে চিনতে পারলেন না! শেষপর্যন্ত দেহবিনিময় করার জন্য একজন অশরীরীকেই বেছে নিলেন, যার কিনা দেহই নেই! দুঃখজনক!”

গণপতির সূক্ষ্ম দেহ তখনও ছটফট করে চলেছে। এ হতে পারে না! কিছুতেই হতে পারে না! একটু আগেও তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন ওঁকে! এত বড় ভুল হল!

—“দুমাস আগেই আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে,” গণপতিবাবুর দেহে বীরেনবাবুর আত্মাটি বলে উঠল, “তখন থেকেই আমি মৃত্যু এবং তার পরবর্তী বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়ি। কিন্তু সে কৌতূহল আমার জীবদ্দশায় মিটল না। কাল রাতেই আমার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শেষ কৌতূহলটা মেটেনি বলে ওপারে যেতে পারিনি। এখানেই রয়ে গিয়েছি!”

গণপতির সূক্ষ্ম দেহ তখন একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছে! নিয়তির অলঙ্ঘ্য বিধানে আর তিনি এ পারের বাসিন্দা নন। তাঁকে ওপারে চলে যেতেই হবে। তবু তিনি প্রাণপণ চেঁচিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন, “না। আমি যাবো না…. কিছুতেই না…”

যেতে তো আপনাকে হবেই। এখন আপনার নিজের খাঁচায় ফেরার উপায় নেই। কারণ এখন আমি আরও কিছুদিন বাঁচব। আপনার দেহ অধিকার করে বেঁচে থাকব আমি। তবে কোনওদিন যদি বর্ডারলাইন ক্রস করে এপারে চলে আসেন, তবে আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাবেন।” বীরেনবাবু হাসলেন। তাঁর পরিবর্তিত দেহের শ্বদন্ত দুটি ফের ঝিলিক দিয়ে ওঠে। গমগমে স্বরে প্রশ্ন করেন,

—“ওপারের দুনিয়াটা ঠিক কেমন?”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *