বিশ্বায়ন ও রাজনীতির চাপে পিষ্ট আসামের বাংলা ভাষা: অতীত ও বর্তমান – পীযূষ নন্দী
ভারতবর্ষের উত্তরপূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজ্য হল আসাম। ১৮২৬ সালের ইয়ান্ডাবু সন্ধির ফসল আসাম প্রদেশ। এই আসামে ২০১১ সালের আদমসুমারি মোতাবেক ৯০,২৪,৩২৪ জন১ বাঙালি বাস করেন। যা কিনা রাজ্যের মোট জন সংখ্যার ২৯ শতাংশ। তবে আসামে বাঙালিরা নতুন নয়। মহাভারতের সময়েও আসামের২ মাটিতে বাঙালির পদচিহ্ন দেখা যায়। গৌড় রাজত্বেও আসামে বাঙালির উজ্জ্বল উপস্থিতি ইতিহাসের পাতায় লক্ষ করা যায়। আহোম রাজত্বেও আহোম রাজাদের আমন্ত্রণে বহু বাঙালি আসামে বসতি স্থাপন করেন।
ব্রিটিশ রাজশাসন আরম্ভ হওয়ার পূর্বে যেসকল বাঙালি আসামে এসে স্থায়ীভাবে থেকে গিয়েছিলেন তারাও ক্রমে স্থানীয়দের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। এদিকে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম রাজধানী কলকাতায় স্থাপন হওয়ার সুবাদে ইংরেজ প্রশাসনে বাঙালির উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব ছিল। আসামও ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনস্থ ছিল। ইংরেজ প্রশাসক প্রতিনিধির মাধ্যমে আসামের শাসন পরিচালনা করতেন এবং অবধারিতভাবেই বাঙালি কর্মচারীরাই ছিলেন এই প্রশাসন যন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি। শাসনকার্যের সুবিধার্থে ও বিভিন্ন ভাষাভাষীদের বোধগম্যতার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার প্রচলন শুরু করার পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতেও বাংলা ভাষায় বিদ্যাচর্চা শুরু করে। শাসনকার্যে, আদালতে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার এই প্রচলন কিন্তু ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত নবীন অসমিয়া সমাজের বৃহৎ অংশ সহজে মেনে নিতে পারেনি। ফলে সৃষ্টি হয়েছিল প্রচণ্ড ক্ষোভের। এরই মধ্যে দেশবিভাজন ও স্বাধীনতা লাভের পর আসামে বাঙালির জনস্ফীতি দেখে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ আসামে সরকারি ভাষা হিসেবে অসমিয়া প্রবর্তনের কুচকাওয়াজ শুরু করেন, কেননা তিনি মনে করতেন আসাম কেবল অসমিয়াদেরই জন্য। সুতরাং আসামের সরকারি চাকরিও অসমিয়াদেরই জন্য। ১৯৪৭ সালের ৩রা অক্টোবর গুয়াহাটিতে প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ তাঁর সরকারের ভাষা নীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট মতামত তুলে ধরে সাংবাদিকদের জানান—
“…the language policy of government the premier said that Assamese would be the official and state language.”৩ লক্ষণীয় যে,আসামে ব্রহ্মপুত্র এবং বরাক উপত্যকা নামে দুটি উপত্যকা রয়েছে। আসামের দুটি উপত্যকায়ই বাংলাভাষীর বসবাস থাকলেও তুলনামুলকভাবে বরাক উপত্যকায় ৯০ শতাংশ বাংলাভাষীর বাসভূমি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে বরাক উপত্যকায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই চাঞ্চল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ ১৯৪৭ সালের ১৫ নভেম্বর শিলচরে উপস্থিত হয়ে ফের জানালেন অসমিয়াকে বাধ্যতামূলকভাবেই রাজ্যিক ভাষা করা হবে। তবে বাংলা স্কুলগুলিতে সরকারি অনুদান কোনোভাবেই বন্ধ করা হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বরদলৈর এই অঙ্গীকার যে কেবল মিথ্যার ফানুস ছাড়া আর কিছুই ছিল না— তা একের পর এক বাংলা স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন প্রমাণিত, তেমনি বেঁচে থাকা স্কুল গুলোর সরকারি অনুদানও লজ্জাজনকভাবে কমিয়ে দেওয়ার মধ্যে প্রতিফলিত। অপরদিকে অসমিয়া স্কুলগুলোতে সরকারি অনুদান বাড়ল, স্কুল সংখ্যাও বৃদ্ধি পেল ব্যাপক গতিতে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই অসমিয়াকরণের কাজ এগিয়ে চলল পরিকল্পনা মাফিকই।৪ উল্টোদিকে সরকারি ষড়যন্ত্রে বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয় একের পর এক বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। কেননা, গোপীনাথ বরদলৈ ১৯৪৮ সালেই আইন সভায় ঘোষণা করেছেন এই বলে যে, “It is not the intention of the government to make Assam a bi-lingual state and for the sake of homogeneity of the province…all non-Assamese to adopt Assamese language.”৫ এই ঘোষণার ফলে বাংলা শিক্ষায় আগ্রহীদের অনেকেই দমে গেলেন অনেকটা পারিপার্শ্বিক অবস্থার চাপে পড়েই। কেননা সামাজিক স্তরেও অসমিয়া জাতিয়তাবাদ ইতিমধ্যেই হিংস্ররূপ নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় স্থানে স্থানে বাঙালি নিধনও শুরু হয় কেবল ‘বাঙালি’ হওয়ার অপরাধেই। সরকার বাহাদুর তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ১৯৫০ সালে অসমিয়াদের এই জাতিবিদ্বেষ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। বাঙালি মুসলমানের অনেকেই ইতিমধ্যে ভাষিক পরিচয় পাল্টানোর চিন্তাচর্চা শুরু করে দিয়েছেন; এরই ফাঁকে রং পালটে নিয়েছেন অনেকেই।
১৯৫১ সালের লোকগণনায় এক সাংঘাতিক ‘ম্যাজিক’ হয়ে গেল আসামের অসমিয়া জনসংখ্যার বিস্ময়কর জনস্ফীতিতে। ১৯৩১ সালের লোকগণনায় আসামের অসমিয়া জনসংখ্যা ছিল ১৯,৯২,৮৪৬ জন। কিন্তু কুড়ি বৎসরের মাথায় সেই সংখ্যা দাঁড়াল ৫৯,৬৬,১৫৯ জন। সকলেই বিস্মিত, কেমনভাবে এটা সম্ভব? ভারতের সেন্সাস কমিশনের মতে, ১০ বৎসরে জনসংখ্যা সাধারণত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু অসমিয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ইঁদুরের জন্মহারকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। “আসলে অসমিয়াদের জন্মহার বাড়েনি,গণনায় কারচুপি করেই সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।”৬ এই কারচুপির উদ্দেশ্য অসমিয়াকে রাজ্যভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রভূমি প্রস্তুতকরণ। সুকুমার বিশ্বাস তাঁর ‘আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে দেখিয়েছেন, দেশ বিভাজনের পর আসামের মোট জনসংখ্যা ছিল ৯০,৪৩,৭০৭ জন। এর মধ্যে অসমিয়া ৩১%, বাঙালি ৩১% এবং পার্বত্য ও অন্যান্য জাতি ছিল ৩৮%। অসমিয়া এবং বাঙালি জনসংখ্যা সমান থাকলে আইনগত ভাবে অসমিয়াকে রাজ্যভাষা করা সম্ভব হবে না জেনে বা আশংকা করেই অসমিয়া ভাষা ব্যবহারকারীর কৃত্রিম সংখ্যাধিক্য ঘটিয়ে ম্যাচ জেতার গোপন ব্লুপ্রিন্ট প্রস্তুত করা হয়েছিল। ওদিকে বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ায় গোয়ালপাড়া জেলার ২৫০টি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে ১৯৫০-৫১ সালের মধ্যে অসমিয়া মাধ্যমের বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। কেবল নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, হাইস্কুল বা কলেজে ভরতি,বৃত্তি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও আসাম সরকার বাঙালি ছেলে-মেয়েদের বঞ্চিত করেছেন নানা আইন ও পদ্ধতির বেড়াজালে। ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক বাঙালি অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের অসমিয়া বিদ্যালয়ে পাঠাতে শুরু করেন। চাপের মুখে পড়ে তখন থেকেই বিদ্যালয় স্তরে বাংলা পঠন-পাঠন এর পরিসর সংকুচিত হতে শুরু করে।
এদিকে ইতিহাসের চাকা আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আসাম গভর্নরের উপদেষ্টা এন,কে,রুস্তমজি ঘোষণা করেন যে, “…it has been finally decided to introduce Assamese as the medium of instructions in all schools in the agency with effect from the next school session.”৭ এই ঘোষণার কয়েক মাস বাদেই দেখা গেল কেবল শিক্ষার মাধ্যমই নয়, “জনমতের কোনো তোয়াক্কা না করেই ১৯৬০ সালে অসমিয়া ভাষা আসাম রাজ্যের সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করে একক ভাবে।”৮ ফলে বরাক উপত্যকায় এহেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষা রক্ষার্থে ১৯৬১ সালের ১৯শে মে ১১ জন বাংলা মায়ের সন্তান শহিদ হন। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলন তীব্র মাত্রা লাভ করে। আন্দোলনের পার্শ্ব ক্রিয়ার অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তখন অনেক হিন্দু বাঙালি পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি দেয়। বস্তুত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও উগ্র অসমিয়া জাতিয়তাবাদের দাপটে বাংলা ভাষা আসামে সাত দশক পূর্বে যে চাপের মুখে পড়েছিল তা থেকে এখনও মুক্ত নয়। মুক্ততো হয়ই নি, বরং ষড়যন্ত্রের নতুন নতুন ছদ্মবেশ বাংলা ভাষার প্রচলনে নিত্য নতুন বাধার সৃষ্টি করেই চলেছে।
সাম্প্রতিক কালে আসামের সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ, পূর্ত ইত্যাদি দপ্তরের মন্ত্রী) ডঃ হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করেছেন যে, এখন থেকে আসাম সরকারের অধীনে চাকরি পেতে হলে প্রার্থীকে অসমিয়া পড়ার শংসাপত্র আবশ্যিক হবে। এই ঘোষণার পর আবার দেখা গেল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার হাতে গোনা কয়েকটি বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর টান পড়তে শুরু করেছে। বাংলা মাধ্যমের নিম্ন প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত নিকটবর্তী উচ্চ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বাংলা স্কুলেই ভরতি হয়। কিন্তু মন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর দেখা গেছে এখন অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা স্কুলের পরিবর্তে অসমিয়া স্কুলে ভরতি হয়েছে। এভাবে স্থানে স্থানে বাংলা স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে রক্তশূন্যতায় ভুগছে। এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আসামের হোজাই এবং ঢেকিয়াঝুলি শহরের একাধিক স্কুল ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া অনেক ইংরেজি স্কুলে এতদিন বাংলা ভাষা-সাহিত্য একটা বিষয় হিসেবে পড়বার সুযোগ ছিল। বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীরা কিছুটা হলেও মাতৃভাষা শিক্ষা অর্জন করতে পারতো। সরকারের ওই ঘোষণার পর সকল ইংরেজি স্কুলেই এখন অসমিয়া বাধ্যতামুলক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আসামের বিদ্যালয়স্তরে বাংলা বিদ্যাচর্চার পরিসর এভাবেই একটু একটু করে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
শুধু রাজনৈতিক কারণেই যে আসামে বাংলা বিদ্যাচর্চার পরিসর দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ইংরেজির আগ্রাসনী ভুমিকাও এক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে এখন গ্রামগঞ্জও মুক্ত নয়। বিশ্বায়ন আমাদের অত্যধিক অর্থনৈতিক সচেতন করে তুলেছে। লাভ লোকসানের হিসেব আমরা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে শিখে গেছি। বিশ্বায়নের কল্যাণে আমরা এখন মাতৃভাষা প্রেমের সেকেলে আবেগ থেকে ক্রমশ মুক্ত হয়ে অর্থকড়ি ভাষা বিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছি। কারণ, “অধিকাংশ বাঙালি বাবুর কাছে এখন সুরম্য বাড়ি, গাড়ি, শেয়ার বাজার, ‘একা একা’ ভালো থাকার জন্য যাবতীয় ভোগ ও বিলাস উপকরণই অভীষ্ট হয়ে উঠেছে। এদের ছেলেমেয়েদের সামনে পাখির চোখ হয়ে উঠে আসছে ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেট সংস্কৃতি। ব্যক্তিগত উন্নতির সোপান হয়ে দেখা দিচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ ও গ্লোবালাইজেশানের রংমশাল। স্বাভাবিক ভাবেই তৃতীয় প্রজন্মের বিদ্যার্জন শুরু হয় কনভেন্টে, নয়তো যেকোনো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। অন্যদের মতো তারা রাইম বলতে পারে,ছড়া জানে না,হ্যারি পটার চেনে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ কিংবা ‘গুল বকাওলি’ দেখেনি। এদের জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লারা বৃথাই সারাজীবন কান্নাকাটি করে গেলেন।”৯ ফলে একসময় আসামের যে সকল ঐতিহ্যবাহী বাংলা স্কুলে পড়ে জীবন ধন্য করার জন্য অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রীরা স্বপ্ন দেখতো সেইসব স্কুল এখন অধিকাংশ সাধারণ মেধার ছাত্র-ছাত্রীই প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছে। গুয়াহাটি রেল স্ট্যাশনের কাছেই অবস্থিত পল্টন বাজার বেঙ্গলি হাইস্কুল, হোজাইয়ের দেশবন্ধু বিদ্যাপীঠ এর অন্যতম উদাহরণ। আসামের কলেজ স্তরেও এখন বাংলা এম,আই,এল, কিংবা বাংলা অনার্স ক্লাসে পনেরো/কুড়ি বছর আগের মতো হল/রুম ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী দেখা যায় না। কারণ স্কুল স্তরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমলে কলেজে তার প্রতিফলন অনস্বীকার্য। আবার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকার কোনো কোনো কলেজের অসমিয়া এম,আই,এল কিংবা অনার্স ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশই দেখা যায় বাঙালি মায়ের সন্তান। তাও কিন্তু জাতীয়তাবাদী সংগঠন গুলোর বহুদিনের অভিযোগ— “হিন্দু বাঙালিরা অসমিয়া পড়ে না” কোনোকালেই ঘোচে না। ওরা এই খবর রাখে না যে, হোজাই শঙ্করদেব বিদ্যানিকেতনের সিংহ ভাগ শিক্ষার্থীই হিন্দু বাঙালি ঘরের সন্তান।
বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে আকছার এই প্রশ্ন শোনা যায়, আসামে বাংলা পড়ে কী হবে? অর্থাৎ নিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রশ্নে দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো আসামের বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীরাও মাতৃভাষার পরিবর্তে অর্থকড়ি ভাষায় বিদ্যা অর্জন করতে চায়। ফলে শহর অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সমাজের ঝোঁক ইংরেজির দিকেই বেশি। নিদেন পক্ষে অসমিয়া; কিন্তু বাংলা কভু, কক্ষনও নয়! আসলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলা স্কুল গুলোর অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই আসে তুলনামূলকভাবে সীমিত আয়ের পরিবার ও গ্রামাঞ্চল থেকে। ধনী ও সামর্থ্যবান পরিবারের ছেলেমেয়েরা সিংহভাগই যাচ্ছে সাহেবি ভাষায় বিদ্যা অর্জন করতে। যদিও এই প্রবণতা নতুন নয় তবু এই শ্রেণির এহেন প্রবণতা ব্যাখ্যা করে একজন বাংলা ভাষা প্রেমিক মন্তব্য করেছেন এভাবে, “সুদীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনে আবদ্ধ আমরা আলো-অন্ধকার দুই-ই অর্জন করেছি। পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞান মুক্তচিন্তা ও সাংস্কৃতিক উপাদান যেমন ঋদ্ধ করেছে আমাদের তেমনি তার বাইরের চটকের প্রতি মোহগ্রস্ততা অন্ধকারে টেনে নামিয়েছে। আমরা ইংরেজি শিখেছি, প্রাগ্রসর হয়েছি, বিশ্বের সামনে প্রতিযোগী হয়ে উঠে এসেছি, আমাদের কল্যাণ হয়েছে। পাশাপাশি সাহেবদের দেখাদেখি আমাদের জাতীয় নেটিভতাকে ঘৃণা করতে শিখে নিজেদের অকল্যাণ ডেকে এনেছি। ভাষাও একটি অন্যতম নেটিভতা। একে তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা তাই নতুন নয়। সে রক্তের গভীরে বাসা বেঁধে আছে।”১০ সুতরাং বাংলা ভাষার প্রতি অধিকাংশ বিত্তবান ও মধ্যবিত্তের মনোভাব এই মন্তব্যের পর আর বুঝতে অসুবিধা হয় না। অথচ কে তাদেরকে বোঝাবে যে, বাঙালি সন্তান ইংরেজি বিদ্যায় যতই পটু হোক না কেন, মাতৃভাষা না শিখলে তার শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করে না। মাতৃভাষার মধুর মানবিক রস ভাণ্ডারের রহস্য উদ্ধার থেকে সে চিরকালই বঞ্চিত থেকে যায়। বিদেশি ভাষায় শিক্ষাদীক্ষার ফলে আজ অধিকাংশ শিক্ষার্থীই কর্মজীবনে রোবট সুলভ আচরণে দক্ষ হয়ে উঠছে। কেননা মানবিকতা বোধ,চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির যথোচিত সমাবেশ সকলের মধ্যে ওই ভাষার কারণেই ষোলো আনা পুষ্টি লাভ করে না। মাতৃভাষার সাহিত্যরস থেকে বঞ্চিত থাকার ফলে ভালো মানবিক বৃত্তিগুলোও মন থেকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্যই অনেকে অমানবিক ও স্বার্থান্বেষী আচরণে সিদ্ধ হয়ে উঠে; হারিয়ে যায় জাতীয় চেতনাবোধ। সে জন্যই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. শুভ্রা দাশগুপ্ত মনে করেন, “শিক্ষার সঙ্গে জীবনের সুসামঞ্জস্য তখনই হতে পারে যখন আমাদের শিক্ষা বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের মাধ্যমে হবে।”১১ আমাদের ভুললে চলবে না যে, রবীন্দ্রনাথ সহ অনেক মনীষীই মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের সঙ্গে তুলনা করে গেছেন। এই তুলনা পৃথিবীর তাবৎ মাতৃভাষা সম্পর্কেই প্রযোজ্য। তবে বাঙালির মাতৃভাষার ক্ষেত্রে যদি একালের শিক্ষিত বাঙালি, ছাত্র ও যুব সমাজ সে কথা ভুলে যায় তবে আত্মঘাতের হাত থেকে আমাদের কে রক্ষা করতে আসবে?
শিক্ষা অনুষ্ঠানে বিদ্যাচর্চা ছাড়া কোনো ভাষাই সমাজ জীবনে বিশেষ ব্যপ্তি লাভ করতে পারে না। আসামে স্কুল-কলেজের বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রেই যেহেতু বাংলা ভাষার পরিসর দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে তাই অবধারিত ভাবে সমাজ জীবনেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বাঙালি বাড়ির বিয়ে, অন্নপ্রাশন ইত্যাদির নিমন্ত্রণপত্র এখন ইংরেজিতে ছাপানো অনেকটাই ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরোটা না হলেও শিক্ষিত অফিসিয়ালদের ক্ষেত্রে তো ষোলো আনাই হচ্ছে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা খুবই সীমিত হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দরা জন্মদিনে বন্দিত হন ঠিকই কিন্তু আগের মতো আড়ম্বর পূর্ণ আয়োজন দেখা যায় কদাচিৎ। অধিকাংশ অনুষ্ঠানই অনুষ্ঠিত হয় নামকাওয়াস্তে। অবশ্য বৌদ্ধিক আলোচনা কিংবা উন্নত রুচির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দর্শক শ্রোতার নগণ্য তথা নিরুৎসাহ জনক উপস্থিতিও আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে আয়োজকদের উৎসাহ দমিয়ে দিয়েছে। দুর্গোৎসবের সঙ্গে সংগতি রেখে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যাত্রা পালার আয়োজন, লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশনা দুই দশক আগে পর্যন্ত ছিল আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। ছোট পত্রিকার যেমন বিজ্ঞাপন আর ক্রেতার অভাব তেমনি যাত্রাপালার ক্ষেত্রে অভাব দর্শক ও স্পন্সরের। কারণ এসব কাজে কোন লাভ নেই,বোকা বাক্সে প্রদর্শিত অনুষ্ঠানের মতো ‘মজা’ নেই এই ‘গেঁয়ো’ যাত্রাপালায়। বিশ্বায়নের মায়াজাল ইতিমধ্যে আমাদের চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান দেখিয়ে মজিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ বিশ্বায়নের করাল গ্রাসে এগুলো হারিয়ে গেছে বেনে পাড়ার মোড়ে। বরাক উপত্যকায় বেশ কয়টি বাংলা দৈনিক সংবাদ পত্র চললেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ‘দৈনিক যুগশঙ্খ’ই হল বাঙালির ক্ষোভ বেদনা বঞ্চনা ও আনন্দ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। অথচ এই দৈনিক পত্রিকাটিও চলছে ধুঁকে ধুঁকে, হাজারটা প্রত্যাহবানকে অতিক্রম করে। পারিপার্শ্বিক চাপে প্রাণ খুলে বাঙালির হাজারটা সমস্যা ও তার কারণ নির্দেশ সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ সবসময় সম্ভব হয় না বলে একাংশ পাঠক ওই পত্রিকা কেনেন না। আবার পুরোদস্তুর সংবাদ-ধর্ম পালন করতে গেলে পত্রিকা দপ্তরে রাতের অন্ধকারে জ্বলে উঠে বিদ্বেষী আগুনের লেলিহান শিখা। তাছাড়া সরকারি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণের প্রসঙ্গ তো আছেই। সুতরাং এসমস্ত প্রসঙ্গকে পাশ কাটিয়ে চলতে গেলে একটি পত্রিকার অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তাও যে পত্রিকাটি দীর্ঘ দিন যাবত এই উপত্যকায় বেঁচে রয়েছে তা একমাত্র পাঠক সাধারণের আশীর্বাদ ও বাংলা ভাষার প্রতি থাকা অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্যই। তা নইলে এই পত্রিকাও এক সময়ের বহুল প্রচারিত দৈনিক কাগজ ‘সময় প্রবাহ,’ ‘গণ পত্রিকা’, ‘সকাল বেলা’ ইত্যাদির মতো ইতিমধ্যে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিতো। অন্যদিকে বাঙালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী গুলোর কাজ কর্মও একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, উগ্র জাতীয়তাবাদীদের চাপ আর বিশ্বায়নের করাল গ্রাস আসামের বাঙালির হাল কেমন বেহাল করে ছেড়েছে। স্বস্তির কথা,বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় কেউ এখনও বাঙালির মুখের ভাষা কেড়ে নেয়নি। অসমিয়া প্রধান এলাকার বাঙালিরা ছেলেমেয়েদের অসমিয়া স্কুলে পাঠানোর পাশাপাশি সমাজ জীবনেও ত্রিশ/চল্লিশ শতাংশ অসমিয়া শব্দ মিশিয়ে মৌখিক বাংলাকে চালু রেখেছে।
আসামে বাংলা ভাষার অতীত ও বর্তমান রূপরেখা অঙ্কনের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিশ্বায়ন ও রাজনীতির চাপে পিষ্ট আসামের বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ এক কথায় অন্ধকার। কারণ, অনেক নির্যাতন, সামাজিক হেনস্থা ও রাজনৈতিক কারসাজির ফলে পদে পদে শিকার অনেক বাঙালি এখন পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে আপস করে নিতে চায়, নিজেকে পারিপার্শ্বিক আবহে মিলিয়ে নিতে চায়। আর চায় বলেই তারা লোকগণনায় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার পরিবর্তে অসমিয়া লেখাতে যেমন উৎসুক, তেমনি সন্তানদের অনা–বাংলা স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে আগ্রহী। এহেন চিন্তার নেপথ্যে অবশ্য এন আর সি, অসম চুক্তির ৬নং দফা রূপায়ন ভীতিও ক্রিয়াশীল রয়েছে। যাই হোক, সাধারণ বাঙালির উল্লিখিত প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আগামী দু/তিন দশকের মধ্যে অবশিষ্ট বাংলা স্কুল গুলি রূপান্তরিত হয়ে যাবে অসমিয়া কিংবা ইংরেজি মাধ্যমে। অভিভাবকদের সামনে বিকল্পহীন দু-চারটে স্কুল কালের বুকে বেঁচে থাকলে থাকতে পারে। বরাক উপত্যকায় অবশ্য বাংলা আরও কয়েক দশক নিশ্চিন্তে চলবে। তবে বিশ্বায়ন তথা ইংরেজির আগ্রাসন থেকে ওই উপত্যকাও মুক্ত নয়। তবে আসাম বলতে যে বৃহত্তর তথা প্রধান অঞ্চলকে বোঝায় সেই অঞ্চলের (ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা) বাংলা ভাষার হাল সত্যিই উদ্বেগজনক। মাতৃভাষাকে মায়ের মত ভালোবেসেও বলছি, এই দুরারোগ্য ব্যধি থেকে মাকে সারানোর কোনো সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। অদূর ভবিষ্যতে কোনো গতিপথের সন্ধান মিলবে বলেও মনে হয় না। বিশ্বায়ন ও রাজনীতি এভাবেই আমাদের মাতৃভাষাকে এরাজ্যে চেপে চেপে পিষ্ট করে ফেলেছে। একটু একটু করে গ্রাস করে নিচ্ছে বাঙালির জাতিসত্ত্বা। কেননা, জাতির অস্তিত্ব নির্ভর করে ভাষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর। যে রাজ্যে বাঙালির ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এহেন দৈন্য দশা চলছে সেরাজ্যে বাঙালির অস্তিত্ব কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সহজেই অনুমেয়।
তথ্যসূত্র ও মন্তব্য:
১। www.google.com/search Bengali people in assam/cencus2011. visited on 20th Oct’2020.
২। মহাভারতের যুগে আসামের নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষপুর বা কামরূপ। কালিকা পুরাণ মতে, গৌহাটির নিকটবর্তী মা কামাখ্যা মন্দির ছিল কামরূপ রাজ্যের মধ্যবর্তী স্থলে এবং বিষ্ণু পুরাণ মতে, কামাখ্যা চতুর্দিকে একশত যোজন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। একশত যোজন অর্থাৎ ৪৫০ মাইল। সেই হিসেবে সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রাচীন আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সূত্র: নীলাদ্রী রায়, আসামে অসমীয়া ও বাঙ্গালী জাতির ইতিবৃত্ত, শ্রী চৈতন্য প্রেস, প্রথম সংস্করণ, শিলচর-২০১৭, পৃষ্ঠা ২-৩।
৩। Amrit Bazar Patrika, Calcutta, October 5, 1947 (সুকুমার বিশ্বাস, আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা ২০১৭, পৃষ্ঠা-৬১ তে ব্যবহৃত উদ্ধৃতি থেকে উদ্ধৃত)।
৪। সুকুমার বিশ্বাস, আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা ২০১৭, পৃষ্ঠা-৬৩।
৫। Assam Assembly Proceeding, 1948, P.511, উদ্ধৃত Report of Non-Official Enquiry Commission on Cachar, A.K.Das Memorial Trust, (পুস্তিকা), P.5 এবং আসামের উপেক্ষিত, পৃষ্ঠা-৬ (সুকুমার বিশ্বাস, আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা ২০১৭, পৃষ্ঠা-৬৭ এ ব্যবহৃত উদ্ধৃতি থেকে উদ্ধৃত)।
৬। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৮৩।
৭। The Assam Tribune, Gauhati, April 21, 1959 (সুকুমার বিশ্বাস, আসামে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি প্রসঙ্গ ১৯৪৭-১৯৬১, পারুল প্রকাশনী প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা ২০১৭, পৃষ্ঠা-১২০ এ তে ব্যবহৃত উদ্ধৃতি থেকে উদ্ধৃত)।
৮। প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-১২০।
৯। সাগর বিশ্বাস, বাঙালির মাতৃভাষা, উনিশে মে, শান্তনু গঙ্গারিডি (সম্পাদনা) একাদশ বর্ষ, কলকাতা ২০১৮, পৃষ্ঠা-২১।
১০। তদেব, পৃষ্ঠা-২১।
১১। ড. শুভ্রা দাশগুপ্ত, মাতৃভাষা ও শিক্ষার সম্পূর্ণতা, সম্মেলনী, রামদুলাল বসু (সম্পাদনা), ৮৩ বর্ষ ২য় সংখ্যা, ডিসেম্বর, নতুন দিল্লী ২০১১।
লেখক পরিচিতি: সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, হোজাই গার্লস কলেজ, হোজাই, আসাম।