উপন্যাস
গল্প

বিশ্বমামা ও গলদা চিংড়ি

বিশ্বমামা ও গলদা চিংড়ি

মা একদিন বিশ্বমামাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে চান। আমাকে বললেন, আহা ছেলেটা দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ায়, তখন হোটেলে খেতে হয়। রোজ রোজ কি আর হোটেলের খাবার ভালো লাগে। একদিন ওকে ভালো করে বাঙালি রান্না খাওয়াব। যা তো নীলু, জিগ্যেস করে আয়, ও কী কী মাছ খেতে ভালোবাসে? সাহেবদের দেশে গিয়ে তো শুধু মাংসই খায় শুনি।

বিশ্বমামা কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে থাকেন একলা। বিয়েটিয়ে তো আর করলেন না! এ ফ্ল্যাটে রান্নার পাটই রাখেননি। একজন কাজের লোক আছে, সে দোকান থেকে খাবার কিনে আনে।

বিশ্বমামার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি, কীসব যন্ত্রপাতি নিয়ে মেতে আছেন। লোডশেডিং! হাওয়া নেই, বিশ্বমামার লম্বা নাকটায় ঘাম জমে আছে। জামা খোলা, জিগ্যেস করলাম, কী করছ। বিশ্বমামা?

বিশ্বমামা মুখ তুলে বললেন, উঃ যা গরম! আমি গরম সহ্য করতে পারি না! তাই দেখছি, লোডশেডিং-এর সময়েও পাখা চালানো যায় কি না। সস্তায় বিদ্যুৎ তৈরি করার একটা কিছু উপায় আবিষ্কার করতেই হবে।

আমি বললাম, লোডশেডিং-এর সময়েও পাখা চলবে না কেন? একটা জেনারেটর কিনে নাও!

বিশ্বমামা নাক কুঁচকে বলল, বিচ্ছিরি শব্দ, তা ছাড়া ধোঁওয়া বেরোয়, খুব অস্বাস্থ্যকর। যাক হঠাৎ এসেছিস কী জন্য?

বিশ্বমামা তুমি মাছ বেশি ভালোবাসো, না মাংস?

কেন রে? খাওয়াবি নাকি? নিজের দেশে থাকলে মাছ ভালোবাসি আর বিদেশে গেলে মাংস। ওসব দেশে মাছ আমার ভালো লাগে না। আর আমাদের দেশে মাংস খুব ভালো নয়।

মাছের মধ্যে কী কী মাছ তুমি বেশি পছন্দ করো?

তুই কি আমার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিস? আগে বল, তুই কী মাছ ভালোবাসিস?

চিংড়ি!

দূর বোকা! চিংড়ি আবার মাছ হল কবে থেকে। ও তো এক ধরনের জলের পোকা। জলে এরকম অনেক পোকা থাকে। আমাদের দেশে তিমিকেও লোকে বলে তিমি মাছ। তিমি মোটেই মাছ নয়। মানুষের মতনই এক ধরনের প্রাণী।

কী বলছ বিশ্বমামা? তিমি আর মানুষ এক?

মোটেই তা বলিনি। মানুষ কি মাছের মতন ডিম পাড়ে? মায়ের পেট থেকে বাচ্চা হয়। তিমি মাছও ডিম পাড়ে না, তাদেরও বাচ্চা হয়। যাদের সরাসরি বাচ্চা হয় তাদের বলে ম্যামাল। সুতরাং মানুষ আর তিমি একই প্রজাতি।

ওসব জানি না। যারা জলে থাকে, তাদেরই আমরা মাছ বলি।

মানুষও এক সময়ে জলে থাকত। যাক গে ওসব কথা থাক। সত্যি কথাটা হচ্ছে, চিংড়ি মাছ পোকাই হোক আর মাছই হোক, আমারও চিংড়ি খেতেই সবচেয়ে ভালো লাগে। বড়-বড় গলদা চিংড়ি, মস্ত মোটা মাথা, তার মধ্যে ঘিলু, আরও চমৎকার।

ঠিক আছে বিশ্বমামা, এই রবিবার তুমি দুপুরে আমাদের বাড়িতে গলদা চিংড়ি খাবে। মা তোমাকে রান্না করে খাওয়াবে।

বিশ্বমামা সারা মুখে হাসি ভরিয়ে বললেন, তাই নাকি? গ্র্যান্ড ব্যাপার। নারকোল দিয়ে মালাইকারি করতে বলবি, আর একখানা, আস্ত ভাজা খাব!

এই সময় পাখাটা ঘুরতে শুরু করল। আমি বললাম, ওই তো লোডশেডিং শেষ হয়ে গেছে।

বিশ্বমামা উঠে সুইচ টিপে বললেন, কে বললে শেষ হয়েছে? আলো জ্বলছে না। শুধু পাখা ঘুরছে।

আমি বললাম, তাহলে ইনভার্টার লাগিয়েছ বুঝি?

বিশ্বমামা বললেন, খুব শিখেছিস! ইনভার্টারে ব্যাটারি লাগে, আমার যন্ত্রে কোনও ব্যাটারি দেখতে পাচ্ছিস? আমার আবিষ্কার সফল হলে, লোকে বাড়িতে বসেই নিজেদের দরকার মতো বিদ্যুৎ বানিয়ে নিতে পারবে। ওসব এখন বলা যাবে না। এখন কেটে পড়, রোববার দেখা হবে।

বড় গলদা চিংড়ির অনেক দাম। তাই বাজার থেকে আনা হয় না। আমরাও অনেকদিন খাইনি। বিশ্বমামার সঙ্গে আমাদেরও খাওয়া হয়ে যাবে।

এমনই মজার ব্যাপার, রবিবার বাজারে যেতেই হল না। বিলুদা বাজারের থলি টলি নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি, এই সময় ছোটকাকা এসে হাজির। ছোটকাকা থাকেন এখন সোনারপুরে, সেখানে কীসব ব্যবসা করেন। ছোটকাকা সঙ্গে এনেছেন ছ-খানা বিরাট সাইজের গলদা চিংড়ি। ওঁর বাড়ির পুকুরে হয়েছে। একেই বলে যোগাযোগ।

দুপুর বেলা খেতে বসে বিশ্বমামা মহা খুশি। মুড়ো থেকে ঘিলু টানতে টানতে মাকে বললেন, দিদি, এত টাটকা চমৎকার স্বাদের চিংড়ি বহুদিন খাইনি। আর, মনটা একেবারে জুড়িয়ে গেল!

ছোটকাকাও কাজটাজ সেরে এসে খেতে বসেছেন আমাদের সঙ্গে। মা বললেন, এ মাছ তো ঠাকুরপো এনেছে। ওর পুকুরের। টাটকা হবে না?

বিশ্বমামা অবাক হয়ে বললেন, তাই নাকি ছকুদা, পুকুরে এত বড় চিংড়ি হয়?

ছোটকাকা বললেন, যাকে বাগদা চিংড়ি বলে, সেগুলো হয় না। সেগুলো নোনা জলের মাছ। কিন্তু এই গলদা চিংড়ি পুকুরে বেশি ভালো হয়। আমার পুকুরের গলদা জাপানে চালান হয়!

বিশ্বমামা বললেন, এ মাছের তো অনেক দাম শুনেছি। আপনার খুব লাভ হচ্ছে নিশ্চয়ই।

ছোটকাকা বললেন, প্রথম-প্রথম খুবই লাভ ছিল। কিন্তু মুশকিল কী জানো, বড্ড চুরি হয়। এ মাছ ধরাও খুব সোজা। রাত্তিরবেলা হাত দিয়েও ধরা যায়।

মা বললেন, এরকম মাছের লোভে তো চোর আসতেই পারে। তুমি পাহারাদার রাখোনি?

ছোটকাকা বললেন, তা তো রাখতেই হয়েছে। আমার পাহারাদার চুনী সিং লম্বা চওড়া জোয়ান। চোরেরা তাকে দেখলেই ভয় পাবে। খুব বিশ্বাসী। সে রাতে টর্চ জ্বেলে ঘুরে-ঘুরে পাহারা দেয়, তবু চুরি হয়। আমার ধারণা, কোনও চেনাশুনো লোকই চুরি করছে। কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছি না।

বিশ্বমামা চোখ সরু করে জিগ্যেস করলেন, কী করে বুঝলেন, চেনা লোক?

ছোটকাকা বললেন, রাত্তিরে আমার পোষা কুকুরটা বাগানে ছাড়া থাকে। সব জায়গাটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে রাত্তিরে কেউ এলেই কুকুরটা ডেকে উঠবে। একমাত্র চেনা লোকদের দেখলেই কুকুর ঘেউ-ঘেউ করে না। তুমি একবার সোনারপুরে গিয়ে দু-এক রাত থাকবে বিশ্ব? দেখো, যদি চোর ধরার কোনও উপায় বার করতে পারো!

বিশ্বমামা একটুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, এক্ষুনি তো যাওয়ার উপায় নেই। একটা কনফারেন্সে যোগ দিতে আমাকে জার্মানিতে যেতে হবে, সেখান থেকে ইটালি। ফিরতে ফিরতে একমাস তো হবেই, তারপর সোনারপুর যাব। এর মধ্যে আপনি এক কাজ করুন। ওই পুকুরে কিছু কুচোমাছ ছেড়ে রাখুন

ছোটকাকা অবাক হয়ে বললেন, কুচো মাছ? তা দিয়ে কী হবে?

বিশ্বমামা জিগ্যেস করলেন, কুচোমাছ মানে, পুঁটি, মৌরলা এগুলো ভাজা খেতে ভালো লাগে না? সোনারপুরে গিয়ে যখন থাকব, তখন রোজ-রোজ তো গলদা চিংড়ি খাব না। ওই সব ছোট মাছও ভালো লাগবে।

বিশ্বমামা বিদেশে চলে গেলেন, তারপর কবে যে ফিরলেন, তা আমি জানতেও পারিনি।

একদিন ছোটকাকা গাড়ি পাঠালেন সোনারপুর থেকে। ড্রাইভারের হাতে একটা চিঠি। তাতে লিখেছেন, নীলু আর বিলু, তোরা এই গাড়িতে করে আজই সোনারপুরে চলে আয়। বিশ্ব দুদিন ধরে এখানে আছে। চোর ধরার ব্যাপারে ওর খুব উৎসাহ! কত সব কাণ্ড যে করছে তার ঠিক নেই। তোদের কথা খুব বলছে বিশ্ব।

আমরা সঙ্গে সঙ্গে রেডি। চেপে বসলাম গাড়িতে।

ছোটকাকার খামারবাড়িটা ঠিক সোনারপুরে নয়। সেখান থেকেও অনেকটা দূরে। মাঠের মধ্যে। সুন্দর নীল রঙের দোতলা বাড়ি। সামনের দিকে চওড়া বারান্দা। পুকুরটা খুব বড় নয়, চারপাশে অনেকখানি বাগান। শুধু মাছ নয়, ছোটকাকার খামারে আলু, পেঁয়াজ, পটল, এরকম অনেক কিছুই হয়। পুরো জায়গাটাই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।

পুকুরটায় মাছ চাষ হয় বলে কেউ সেখানে স্নান করে না। একটা লাল রঙের ঘাট আছে। পুকুরের ধারে-ধারে অনেক রকম ফুলের গাছ।

সবসুদ্ধ দশজন লোক এখানে কাজ করে। তাদের মধ্যে ছ-জন সন্ধের পর নিজেদের বাড়িতে চলে যায়। তিনজনের জন্য বাগানের একপাশে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পাহারাদার চুনী সিং তার বউ নিয়ে থাকে অন্য দিকের একটা ঘরে।

সন্ধের পর বারান্দায় বসে ছোটকাকা বললেন, দ্যাখো, দিনের বেলা এত লোক থাকে যে তার মধ্যে চোর ঢুকে পুকুরে মাছ ধরবে, এটা সম্ভবই নয়, সন্ধের পর গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাত্তিরবেলা চোরকে আসতে হলে পাঁচিল ডিঙিয়ে আসতে হবে। ওই দ্যাখো, আমার বাঘা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাইরের কোনও লোক দেখলে ও তো ছাড়বে না।

কুকুরটাকে আমরা আগেই দেখে নিয়েছি। ভয়ংকর চোখ দুটো। দেখলে নেকড়ে বাঘ বলে মনে হয়। দিনের বেলা বাঁধা থাকে, ছেড়ে দেওয়া হয় সন্ধের পর। আমাদেরও সাবধান করে দেওয়া হয়েছে, রাত্তিরে একা-একা বাগানে যাওয়া চলবে না। বাঘা কামড়ে দেবে।

বিশ্বমামা বললেন, ছকুদা, আপনার লোকদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, কারুকেই তো চোর বলে মনে হল না।

ছোটকাকা বললেন, চুরি করবে কেন, সেটাই আমি ভাবি। সবাইকেই ভালো মাইনে দিই, আমার লাভের কিছুটা অংশ দিই। খাওয়া-পরাও ভালো পায়। তবু চুরি করবে?

বিশ্বমামা বললেন, চুরি করা যাদের স্বভাব, তারা চুরি করেই। পৃথিবীর যারা বড়-বড় চোর, তাদের কিন্তু খাওয়া-পরার কোনও অভাব নেই।

বিলুদা বললেন, আজ চমৎকার জ্যোৎস্না হয়েছে। বিশ্বমামা, তোমার একটা গান হোক। এখন চুরি-টুরির কথা শুনতে ভালো লাগছে না।

বিশ্বমামা বললেন, আমরা চোর ধরতেই এসেছি। এখন গান-টান চলবে না। বরং আজ তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে।

তাই হল, দশটার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া শেষ। একখানা বড় ঘরে আমরা শুয়ে পড়লাম। তিনজনেই। বিশ্বমামা বললেন, ঘুমোনো চলবে না কিন্তু। আজ রাতেই কিন্তু একটা কিছু ঘটবে মনে হয়। ফিসফিস করে গল্প চলতে পারে।

জানলা দিয়ে দেখা গেল, কোথা থেকে কালো কালো মেঘ এসে জ্যোৎস্না মুছে দিয়েছে। বাইরে আর বাগান-টাগান কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু মিটিমিটি একটা টর্চ জ্বলছে, আর পাওয়া যাচ্ছে মাটিতে লাঠি ঠোকার শব্দ। পাহারা দিচ্ছে চুনী সিং। লোকটার কর্তব্যজ্ঞান আছে বটে।

ঘোটকাকা পাশের ঘরে শুয়ে পড়ে একটু পরেই এমন নাক ডাকতে লাগল যেন মনে হয় মেঘ গর্জন।

আমরা শুয়ে আছি তো শুয়েই আছি। কিছুই ঘটছে না। ঘুমও আসছে না উত্তেজনায়।

মাঝরাত পেরিয়ে গেল, তখন সবে একটু ঢুলুঢুলু ভাব এসেছে, এই সময় একটা চিৎকার শোনা গেল পুকুর পাড়ে। কে যেন দারুণ ভয় পেয়ে, ওগো মাগো, বাবাগো বলে ডাকছে। সঙ্গে সঙ্গে বাঘা ডেকে উঠল ঘেউ-ঘেউ করে।

বিশ্বমামা তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পাশের ঘরে গিয়ে ছোটকাকাকে ধাক্কা মেরে বললেন, উঠুন, উঠুন, আপনার কুকুর সামলান আমরা চোর ধরে ফেলছি!

সবাই মিলে দৌড়ে পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, নীল শাড়ি পরা একটি মেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর যথেষ্ট কাঁপছে। তাই দেখে ডেকে চলেছে বাঘা। চুনী সিং মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে আছে।

ছোটকাকা বললেন, এ কী, এ তো চুনী সিং-এর বউ আংটি।

বিশ্বমামা বললেন, চুনীর বউ আংটি, বাঃ, বেশ মিলেছে তো।

চুনী সিং বললেন, সাব, আমার বউকে নিশ্চয়ই সাপে কামড়েছে ওকে বাঁচান।

বিশ্বমামা বললেন, মোটেই সাপে কামড়ায়নি। ও জলে নেমেছিল। ওর কোঁচড়ে চিংড়ি মাছ আছে কি না দেখুন তো!

সত্যিই তাই। চুনী সিং-এর কোমরে একটা থলি বাঁধা। তার মধ্যে দুটো বড় বড় গলদা চিংড়ি।

বিশ্বমামা বললেন, বাঃ চমৎকার ব্যবস্থা। চুনী সিং পাহারা দেওয়ার নাম করে ঘুরে বেড়ায়। আর ওর বউ চুপি-চুপি জলে নেমে মাছ চুরি করে। বাঘা ওকে চেনে। তাই ঘেউ-ঘেউ করে না। রোজ এরকম দামি মাছ দু-তিনটে করে বিক্রি করলেই ভালো রোজগার হয়।

আমি জিগ্যেস করলাম, ওর শরীরটা থরথর করে কাঁপছে কেন? মরে যাবে নাকি?

বিশ্বমামা বলল, ও কিছু না। একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে, ইলেকট্রিক শক খেয়েছে। তাই ভয়ের চোটে ভাবছে, বুঝি সাপে কামড়েছে।

ছোটকাকা বললেন, জলে নেমে..শক খেল কী করে? বিশ্ব, তুমি কি সমস্ত পুকুরের জলটা ইলেকট্রিফাই করে দিয়েছ? সর্বনাশ!

বিশ্বমামা বললেন, আমি কি পাগল নাকি যে পুকুরের জলে কারেন্ট পাস করাব? তাহলে তো সব মাছও মরে যাবে। আমি শুধু দুটো মাছ ছেড়ে দিয়েছি!

আমরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলাম, মাছ।

বিশ্বমামা বললেন, কেন, তোমরা ইলেকট্রিক ফিসের কথা জানো না? এবার ইটালি থেকে একটা টর্পেডো মাছ, আর একটা ইল মাছ নিয়ে এসেছি। ওরা নিজেদের শরীরে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। ইল মাছের বিদ্যুৎ প্রায় তিনশো-চারশো ভোল্ট হয়।

ছোটকাকা বিড়বিড় করে বললেন, মাছের বিদ্যুৎ!

বিশ্বমামা বললেন, ওরা সমুদ্রের জল ছাড়া বাঁচে না। তাই এক মণ নুন মিশিয়ে দিয়েছি তোমার এই পুকুরের জলে। ইটালিতে আমি এই মাছের বিদ্যুৎ তৈরি কী করে হয়, সেই গবেষণা করতেই গিয়েছিলাম। দ্যাখো, মাছ দুটো কীরকম কাজে লেগে গেল। এই মাছ তোমার ওই গোসাপ আর বড়-বড় দাঁড়াওয়ালা গলদা চিংড়ি খেতে পারে না, তাই তাদের খাদ্য জোগাবার জন্য তোমাকে পুঁটি, মৌরলা ছেড়ে দিতে বলেছিলাম।

চুনী সিং-এর বউয়ের কাপুনি আস্তে-আস্তে থেমে গেল। সে উঠে বসে ছোটকাকার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে বলল, বাবু, এবারের মতন মাপ করে দিন, আর এমনটি করব না।

বিশ্বমামা বললেন, যেমন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কথা বলে, সেইরকম মাছ দিয়েই মাছচুরি ধরা হল, বল? এবার একটা গান ধরা যেতে পারে।

বিশ্বমামা হেঁড়ে গলায় পেঁচিয়ে গেয়ে উঠল:

চিংড়ি রানি, চাঁদবদনী, তোমার মতন কে?
পাবদা, ট্যাংরা, কাতলা, বোয়াল, হেরে গিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *