বিল্টুর বন্ধু

বিল্টুর বন্ধু

কাশী শহরে যদি কলা খেতে ইচ্ছে হয়, তাহলে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে খাওয়াই ভালো৷ বাইরে, খোলা জায়গায় কলা খাওয়া যায় না৷

বিল্টু তো তা জানে না৷ সে কাশীতে বেড়াতে এসেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে৷ পরিক্ষা হয়ে গেছে৷ সে এবার ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠবে৷ এখানে কয়েক সপ্তাহ থাকার পর তারা চলে যাবে এলাহাবাদ৷

কলকাতার বাইরে এলেই বেশি বেশি খিদে পায়৷ দুপুরবেলা সারনাথে বেড়াতে গিয়ে খাওয়া হয়েছে একটা হোটেলে৷ ফেরার পথে কচুরি-তরকারি আর রাবড়ি কিনে আনা হয়েছিল, সে সব খাওয়ার একটু পরেই আবার খিদে পেয়ে গেল বিল্টুর৷

এটা বিল্টুর মাসির বাড়ি৷ মাসতুতো ভাই-বোন দু’জনেই বিদেশে থাকে৷ এত বড় বাড়িতে শুধু মাসি, মেসো আর মেসোর মা৷ তাঁর বয়েস এখন নব্বই বছর, বিল্টু তাঁকে রাঙাদিদা বলে ডাকে৷ তিনি খুব সুন্দর গল্প বলেন৷ মা আর মাসি এখন সেই রাঙা- দিদার ঘরে আছেন৷ এখন সেখানে গিয়ে যদি বিল্টু খাই খাই করে, তাহলে নিশ্চয়ই বকুনি দেবেন মা৷

বিল্টু প্রথমে ফ্রিজ খুলে কিছু খাবার খুঁজল৷ বিভিন্ন পাত্রে রয়েছে শুধু রান্না করা খাবার৷ এসব তো খাওয়া যায় না৷ রান্না না করা মাছ রয়েছে, তা দিয়ে কী হবে! একটা বড় পাথরের বাটিতে সাদা সাদা কী যেন, বিল্টু ভাবল নিশ্চয়ই পায়েস৷ এমনিতে পায়েস খেতে তার ভালো লাগে না, কিন্তু খিদের সময় চলতে পারে৷ একটা কাপে খানিকটা ঢেলে নিতে গিয়ে সে বুঝল, পায়েস তো নয়, সাদা সাদা গোল গোল কী যেন! ওঃ হো, এ তো সাবু৷ রাঙাদিদিমা রাত্তিরে সাবু খান৷ এর মধ্যে একবার রাঙাদিদিমা বিল্টুকে সাবু খাওয়াবার চেষ্টা করেছিলেন, খুব বিচ্ছিরি খেতে!

যতই খিদে পাক, সাবু খাওয়া চলবে না৷

বিস্কুটের টিনগুলো কোথায় গেল? রান্নাঘরে খুঁজেও বিল্টু বিস্কুটের টিন খুঁজে পেল না৷

রান্নাঘরে রয়েছে একছড়া কলা৷ বেশ বড় বড়৷ অন্য সময় বিল্টুর কলা খেতেও ইচ্ছে করে না৷ এখন ভাবল, ঠিক আছে, একটা কলাই খাওয়া যাক৷

একটা কলা ছিঁড়ে নিয়ে বিল্টু চলে এল ছাদে৷

এই সময় অনেক ঘুড়ি ওড়ে৷ বিল্টু ঘুড়ি ওড়াতে জানে না, কিন্তু ঘুড়ির প্যাঁচ দেখতে তার ভালো লাগে৷ কাছে-দূরের অনেক ছাদেই ছেলেরা দল বেঁধে ঘুড়ি ওড়ায় আর প্যাঁচ খেলার পাল্লা দেয়৷ একটা ঘুড়ি কেটে গেলেই সবাই দারুণ জোরে চ্যাঁচায়৷ হিন্দিতে তারা কী যে বলে, বিল্টু ঠিক বুঝতে পারে না৷

ঘুড়ির প্যাঁচ খেলা দেখতে দেখতে বিল্টু কলাটা ছাড়াতে লাগল৷

খানিকটা ছাড়িয়েছে, মুখেও দেয়নি, হঠাৎ কে যেন এসে একটা চড় কষাল বিল্টুকে আর হাত থেকে কেড়ে নিল কলাটা৷

কী হল, কী হল, কে কলাটা কেড়ে নিল? কে চড় মারল?

বিল্টু শুনতে পেল একটা হি হি হাসির শব্দ!

গায়ে গায়ে লাগা ঠিক পাশের বাড়ির ছাদে বিল্টুরই বয়েসি একটা ছেলে হাসছে৷

তারপর ঘাড় ঘোরাতেই বিল্টু দেখল, তাদেরই ছাদের পাঁচিলের এক কোণে বসে আছে একটা গোদা বাঁদর, সেটা দিব্যি কলাটা খেতে শুরু করেছে৷ এমন রাগ হল বিল্টুর, সে তেড়ে গেল বাঁদরটার দিকে৷

পাশের ছাদের ছেলেটি হাসি থামিয়ে চেঁচিয়ে উঠল, এই এই এই, উধার যাও মাৎ, উধার যাও মাৎ, কাট দেগা!

বিল্টু থমকে গেল৷

বাঁদরটা একটুও ভয় পায়নি৷ সে একবার দাঁত খিঁচিয়ে তাকাল বিল্টুর দিকে৷ আবার নিশ্চিন্তভাবে কলাটা খেতে লাগল৷

রাগ হয়েছে বটে, বিল্টু কিছুটা ভয়ও পেয়েছে, অপমানও বোধ হচ্ছে৷ বাঁদরটা তাকে চড় মারল? কলাটা না হয় নিজে খাবার জন্য কেড়ে নিতে এসেছিল, কিন্তু চড় মারল কেন? বাঁ দিকের গালটা এখনও জ্বালা জ্বালা করছে৷

পাশের ছাদের ছেলেটা এবার বলল, কাল্লু বহুৎ বদমাস হ্যায়৷

বিল্টু একথার মানেই বুঝল না৷ কাল্লু আবার কে?

ছেলেটির সঙ্গে কোনো কথা না বলে বিল্টু ছাদ থেকে নীচে নেমে গেল৷ ঠিক সেই সময়েই একটা ঘুড়ি কেটে যাওয়ায় খুব হল্লা হল কয়েকটা ছাদে৷ বিল্টুর মনে হল, সে বাঁদরের চড় খেয়েছে বলে বুঝি ওরা সবাই তাকেই দুয়ো দিচ্ছে৷

খিদের কথাও সে ভুলে গেল!

বিল্টু ভেবেছিল, এই ঘটনাটা বাড়ির কেউ জানতে পারবে না, সে-ও কারুকে বলবে না৷ কিন্তু এসব কথা ঠিক ছড়িয়ে যায়, সবাই জেনে ফেলে৷ নিশ্চয়ই অনেককে বলে দিয়েছে পাশের ছাদের ছেলেটা!

পরদিন দুপুরে রাঙাদিদা পুজো করছেন ঠাকুরঘরে, বিল্টু এসে সেখানে দাঁড়াল৷ ঠিক বারোটা বেজে দশ মিনিটে রাঙাদিদার পুজো শেষ হয়, তখন প্রসাদ পাওয়া যায়৷ প্রসাদের মধ্যে চন্দ্রপুলি আর তিলকুটো বিল্টুর খুব প্রিয়৷

পুজো শেষ করে রাঙাদিদা বললেন, আয় তো সোনামণি, এখানে একটু বোস৷ কালু তোকে চড় মেরেছে? কোন গালে মেরেছে? আয়, আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ঠিক হয়ে যাবে৷

বিল্টু জিজ্ঞেস করল, কালু কে? ওই নামে কেউ তো আমায় কিছু বলেনি৷

রাঙাদিদা বললেন, কালু একটা হনুমানের নাম৷ সে ছাদে তোর কাছ থেকে কলা কেড়ে নেয়নি?

বিল্টু বলল, হনুমান তো নয়৷ বাঁদর৷

রাঙাদিদা বললেন, তুই বাঁদর আর হনুমানের তফাত জানিস? তুই ওর মুখটা দেখেছিলি? মুখটা কালো ছিল না? হনুমানের মুখটা কালো হয়, আর ল্যাজটা হয় বেশি লম্বা৷ সে ল্যাজের ডগাটাও কালো৷ কেন বল তো হনুমানের মুখ কালো হয়, বাঁদরদের হয় না?

বিল্টু দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল, জানি না তো!

একটা প্লেটে চন্দ্রপুলি, তিলকুটো আর রসকদম্ব সাজিয়ে দিয়ে বললেন, নে, খা৷ তুই রামায়ণের গল্প জানিস?

বিল্টু বলল, হ্যাঁ জানি৷ শ্রীরামচন্দ্র বাঁদরদের সঙ্গে নিয়ে রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন৷ একটা হনুমানও তাঁর দলে ছিল৷

রাঙাদিদা বললেন, রামচন্দ্র তাঁর বাঁদর সৈন্যদের নিয়ে সমুদ্রের ওপর একটা ব্রিজ বানিয়েছিলেন৷ সেই ব্রিজ পার হয়ে যুদ্ধ করেছেন রাবণের সঙ্গে৷ কিন্তু তার আগে ওই হনুমান একা এক লাফ দিয়ে সমুদ্র পার হয়েছিলেন৷

বিল্টু বলল, তাও জানি৷ সীতাকে খুঁজতে গিয়েছিল৷

রাঙাদিদা বললেন, বাঃ, তুই তো অনেকটাই জানিস৷ লঙ্কায় গিয়ে অশোক বনে সীতাকে খুঁজে পান হনুমান৷ সেখানে সব রাক্ষুসিরা তাঁকে পাহারা দিচ্ছিল৷ সীতাকে খুঁজে পেয়ে তো হনুমানের খুব আনন্দ হল৷ এবারে ফিরে যাবার আগে তিনি ভাবলেন, এদের একটু আমার শক্তির পরিচয় দিই৷ হনুমান তখন লাফিয়ে লাফিয়ে অনেক গাছপালা আর বাড়িঘর ভাঙতে লাগলেন৷ দারুণ গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল, দলে দলে সৈন্যরা এল হনুমানকে মারতে৷ কিন্তু হনুমান তো মহাবীর৷ অনেকক্ষণ ধরে কেউ তাঁকে জব্দ করতে পারল না৷ তারপর রাবণের এক ছেলে….

বিল্টু বলল, ইন্দ্রজিৎ!

রাঙাদিদা বললেন, ঠিক বলেছিস, সেও মহাবীর৷ সেই ইন্দ্রজিৎ এমন একটা বাণ ছুঁড়ল যে তাতে হনুমান মরল না, কিন্তু দড়িতে বাঁধা পড়ে গেল৷ সেই অবস্থায় রাক্ষসরা হনুমানকে টানতে টানতে নিয়ে এল রাবণের রাজসভায়৷ হনুমান কিন্তু একটুও ভয় পাননি৷ চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনিয়ে দিতে লাগলেন রাবণকে৷ রাবণ তখন রেগে গিয়ে হুকুম দিলেন, ওর ল্যাজে আগুন ধরিয়ে দাও! সৈন্যরা হনুমানের ল্যাজে অনেক ছেঁড়া কাপড়-টাপড় জড়িয়ে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দিল৷ হনুমান ইচ্ছে করলেই নিজের চেহারাটা খুব বড় আর চোখের নিমেষে আবার খুব ছোট করে ফেলতে পারতেন, জানিস তো?

বিল্টু বলল, জানি৷

রাঙাদিদা বললেন, বন্দি করার সময় হনুমানের চেহারাটা খুব বড় ছিল, হঠাৎ ছোট করে ফেললেন৷ ব্যাস, অমনি তাঁর শরীর থেকে সব দড়ির বাঁধন খসে গেল৷ আবার তিনি চেহারাটা বিশাল করে ফেলে এক লাফে চলে গেলেন অনেক দূরে৷ ল্যাজে কিন্তু তখনও আগুন জ্বলছে৷ প্রতিশোধ নেবার জন্য হনুমান একটার পর একটা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিতে লাগলেন৷ বলতে গেলে সারা লঙ্কাপুরীই দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগল আগুনে৷ এবারে হনুমানের ফিরে যাওয়া উচিত৷ রামকে গিয়ে সীতার খবর দেওয়াটাই আসল দরকার৷ কিন্তু ল্যাজের আগুনটা নেভানো যাচ্ছে না৷ লাফিয়ে আকাশে উঠলে বাতাস লেগে আগুন আরও বেড়ে যাবে, হনুমানের গা পুড়ে যাবে৷ তাহলে কী করা যায়?

বিল্টু জিজ্ঞেস করল, জলে ডোবালেই তো আগুন নিভে যায়৷

রাঙাদিদা বললেন, না রে৷ এ অন্যরকম আগুন৷ হনুমান একবার ল্যাজটা সমুদ্রে ডুবিয়েও দেখলেন, কোনো লাভ হচ্ছে না৷ তখন তিনি সীতার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মা, এই আগুন নিয়ে তো আমি ফিরতে পারব না৷ আমি না ফিরলে শ্রীরামচন্দ্র তোমার কথা জানতে পারবেন না৷

সীতা বললেন, বাছা, তুমি ওই আগুন খেয়ে নাও, তাহলেই রক্ষা পাবে৷ আমি বর দিচ্ছি, তুমি আগুন খেয়ে হজম করে ফেলতে পারবে৷

তখন হনুমান দু’হাতে ল্যাজটা ধরে তার ডগাটা মুখে পুরে দিলেন৷ ব্যাস, অমনি আগুন নিভে গেল৷ হনুমানের আর কোনো ক্ষতি হল না৷ শুধু আগুনের আঁচে মুখটা কালো হয়ে গেল৷ সেই থেকে সব হনুমানের মুখ কালো৷ এবার বুঝলি? আমাদের ছাদে একটা হনুমান প্রায়ই আসে, আমরা ওর নাম দিয়েছি কালু৷

বিল্টু বলল, ওটা খুব পাজি! আমি ওকে মারব!

রাঙাদিদিমা হেসে বললেন, না, না, ওর কাছে যাস না৷ তুই ওর সঙ্গে পারবি না৷ তাছাড়া হনুমান হচ্ছে রামের প্রিয় শিষ্য, তাকে মারতে নেই৷ কত লোক হনুমানেরও পুজো করে৷

বিল্টু বলল, কিন্তু ও আমাকে মারবে কেন? আমি কি রাবণের দলের লোক?

রাঙাদিদা আরও বেশি হেসে বললেন, কলাটা কেড়ে নেবার আগে ও তোকে চড় মেরেছে কেন জানিস? কলা জিনিসটা বাঁদর-হনুমানদের খুব প্রিয় খাদ্য৷ কোনো মানুষ যদি ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে কলা খায়, তাতে ওদের খুব রাগ হয়৷ তা ছাড়া, কালু ভেবেছিল, কলাটা ওকেই দেওয়ার কথা, না দিয়ে তুই নিজে খেয়ে নিচ্ছিস৷

বিল্টু জিজ্ঞেস করল, কেন, ওকে দেবার কথা কেন? আমি বুঝি কলা খেতে পারি না?

রাঙাদিদা বললেন, পারবি না কেন? কলা খাওয়া তো ভালো৷ আমি রোজ খাই৷ ঘরে বসে খাবি৷ আমাদের যে কাজের লোক আছে হরি, সে মাঝে মাঝে ছাদে গিয়ে বাঁদর-হনুমানদের কলা খাওয়ায়৷ হরি হাত বাড়িয়ে থাকে, ওর হাত থেকে ওরা কলা তুলে নেয়৷ তুই-ও কালুকে কলা খাওয়ালে পারিস!

বিল্টু বলল, না, মোটেই আমি ওকে খাওয়াব না৷ ও আমাকে মেরেছে৷

রাঙাদিদিমা বললেন, জন্তু-জানোয়ারের সঙ্গে ঝগড়া করতে নেই৷ বরং ভাব করে নেওয়াই তো ভালো৷

বিল্টুর এখনো রাগ আছে বাঁদরটার ওপর৷ বাঁদর না, হনুমান৷

কিন্তু এরপর দু’দিন আর তার দেখা পাওয়া গেল না ছাদে৷

পাশের বাড়ির ছেলেটার নাম মহাদেব৷ ও বলে মহাদেও৷ সে যেন সবসময় ছাদে বসেই থাকে৷ সে ঘুড়ি ওড়ায় না৷ সে গুলতি দিয়ে পাখি মারার চেষ্টা করে৷ এখানে অনেক পাখি, চিল আছে, টিয়া আর শালিক আছে, আর কাক তো সব দেশেই থাকে৷ মহাদেও’র হাতে একটুও টিপ নেই, সে এ পর্যন্ত একটাও পাখি মারতে পারেনি৷

বিল্টু কী করে গুলতি ছুড়তে হয় জানে না৷ পাখি মারার ব্যাপারটাও ভালো লাগে না তার৷

পরের দিনই বিল্টু দেখল, পাঁচিলের ওপর এসে বসে আছে কালু৷ কখন এল, বোঝাই গেল না৷ হ্যাঁ, হনুমান ঠিকই, ল্যাজটা অনেকখানি ঝোলা আর মুখটা কালো৷ দেখলে কেমন যেন হিংসুটে মনে হয়৷

বিল্টুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হনুমানটা৷

ও কি ভাবছে, বিল্টু ওকে কলা খাওয়াবে? ইশ, মোটেই না৷

এই হনুমান কি রামায়ণের হনুমানের মতন ইচ্ছে করলে খুব বড় আর আবার খুব ছোট হয়ে যেতে পারে? লাফিয়ে সমুদ্র পার হতে পারে? মোটেই বিশ্বাস হয় না৷

হনুমানটা বিল্টুর দিকে তাকিয়েই আছে, নড়েও না, চড়েও না৷

একটু বাদে বিল্টু নেমে গেল নীচে৷ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সে ভাবল, আজ যদি তার হাতে একটা কলা থাকত, তাহলে আজও কি হনুমানটা তাকে থাপ্পড় মেরে কলাটা কেড়ে নিত? আহা হা, মোটেই অত সোজা নয়৷ আজ বিল্টু আগে থেকেই রেডি, হনুমানটা কাছে এলেই সে মারত এক ঘুঁষি!

মানুষ আর হনুমানে লড়াই হলে কে জিতবে?

সেটা দেখা দরকার৷

নীচে এসে বিল্টু কলা খুঁজতে লাগল৷ আজ বাড়িতে কলা নেই৷ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া গেল না৷

কলা নেই, কিন্তু কেক আছে৷ বাবা এনেছেন, খুব ভালো ফ্রুট কেক৷

হনুমান কি কেক খায়? দেখতে হবে তো!

একটা বেশ বড় কেকের টুকরো নিয়ে বিল্টু আবার উঠে এল ছাদে৷ ছাদে একটা ছোট ঘর আছে, সেই ঘরের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বিল্টু কেকটা উঁচু করে ধরে রইল৷

হনুমানটা পেছন দিক দিয়ে আক্রমণ করতে পারবে না৷ সামনের দিক দিয়ে তেড়ে এলে বিল্টু এক ঘুঁষি কষাবে৷

হনুমানটা চোখ সরু করে তাকিয়ে রইল, এগোল না৷

বিল্টু বলল, আয় না, আয়৷ কেক খাবি?

হনুমানটা একই জায়গায় বসে রইল৷

বিল্টু হাতটা আর একটু বাড়িয়ে বলল, খাবি? খাবি? কেড়ে নে না, দেখি তোর কত সাহস!

হনুমানটা তবু এগোল না৷ আজ কেমন যেন তার মনমরা ভাব৷

দু’তিনবার এইরকম করার পর বিল্টু একটু এগিয়ে কেকটা রেখে দিল পাঁচিলের ওপর৷

সঙ্গে সঙ্গে একটা আশ্চর্য ব্যাপার হল৷ প্রায় চোখের নিমেষে হনুমানটা লাফিয়ে এসে কেকটা তুলে নিয়ে আবার ফিরে গেল আগের জায়গায়৷ এত তাড়াতাড়ি যে ওরা আসতে আর যেতে পারে, তা ধারণা করাই যায় না৷

কেকটা নিয়ে হনুমানটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল কয়েকবার৷ গন্ধ শুঁকল৷ তারপর একটুখানি দাঁত দিয়ে কাটল৷ তারপরই সে ঠিক স্বাদটা পেয়ে কপাকপ শেষ করে ফেলল সবটা৷

এরপর সে যা কাণ্ড শুরু করল, তা দেখে বিল্টু না হেসে পারল না৷

কেকটা ওর এত ভালো লেগেছে যে নাচতে শুরু করেছে! পাঁচিল থেকে নেমে পড়ে নাচছে, আবার তিড়িং করে ওপরে উঠে আসছে৷ বোঝাই যাচ্ছে, এত ভালো জিনিস সে জীবনে কখনো খায়নি৷

বিল্টু নীচে নেমে গিয়ে আরও দু’টুকরো কেক নিয়ে এল৷ পাঁচিলের ওপর রাখতেই সে দুটো এবার টপাটপ খেয়ে নিয়ে হুপ হুপ শব্দ করে লাফাতে লাগল হনুমানটা৷

মানুষ তো আর হনুমানের ভাষা বোঝে না, হনুমানও মানুষের কথা বোঝে না৷ কেন যে বোঝে না! তাহলে কালুর সঙ্গে বিল্টুর খুব ভাব হয়ে যেতে পারত৷

নীচ থেকে মা ডাকতেই বিল্টু নীচে নেমে গেল৷ যাবার আগে হাত নেড়ে বলল, গুড নাইট কালু৷ আবার কাল দেখা হবে৷

কিন্তু পরেরদিন আর দেখা হল না৷

দুপুরবেলা বিল্টু পড়তে বসে৷ ছুটিতে বেড়াতে গেলেও পড়ার বই সঙ্গে নিতে হয়৷ বিল্টু গল্পের বইও এনেছে৷ বিকেল চারটে পর্যন্ত বিল্টু পড়ে৷

তখনো বিল্টুর পড়া শেষ হয়নি, বাবা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে সিঁড়ি দিয়েই ডাকতে লাগলেন, বিল্টু বিল্টু, বিল্টু কোথায়?

মা ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে এসে বললেন, বিল্টু তো পড়ছে৷ কেন, কী হয়েছে?

বাবা বললেন, একটা সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড হয়েছে৷ বিল্টু কোনো বাঁদরকে মারেনি তো?

পড়া ছেড়ে উঠে এসে বিল্টু বলল, না, আমি তো কোনো বাঁদরকে মারিনি!

বাবা বললেন, তবে কে মারল? আমাদের এই পাড়াটা হাজার হাজার বাঁদর ঘিরে ফেলেছে৷ বাঁদরদের সাঙ্ঘাতিক ইউনিটি৷ একজনকে মারলে সবাই তাড়া করে আসে৷

বিল্টু বলল, বাবা, আমি সত্যিই মারিনি৷

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ছাদের দরজা বন্ধ আছে? বলা যায় না, নীচে নেমে আসতে পারে৷ জানলা-টানলা সব বন্ধ করে দাও৷

ছাদের দরজা এমনিতে বন্ধ থাকে না৷ রাত্তিরে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ তার মানে, এখন খোলা৷

এরই মধ্যে ছাদে ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছে৷ দরজাটা বন্ধ করা দরকার৷

কাজের লোক হরি একটা লাঠি আর ছাতা জোগাড় করে নিয়ে এল৷ হরির হাতে লাঠি, বাবার হাতে ছাতা৷ বাঁদররা তেড়ে এলে কি এই দিয়ে লড়াই করা যাবে? বাঁদররা মানুষের মতন লাঠি-ফাঠি কিছু ধরতে পারে না, এই যা সুবিধে৷ হরি বলল, ওরা ছাতা দেখলে ভয় পায়৷

বাবা আর হরি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন, বিল্টুও গেল পেছন পেছন৷ সত্যিই দরজাটা হাট করে খোলা৷ কয়েকটা বাঁদরকে দেখাও যাচ্ছে, তারা লাফাচ্ছে আর মুখ দিয়ে কী সব আওয়াজ করছে৷

দরজাটা বন্ধ করতে গিয়েও হরি বলল, এই রে, পাঁচিলে দিদিমণিদের দু’খানা শাড়ি শুকোচ্ছে, ওরা তো ছিঁড়ে-খুঁড়ে নষ্ট করে দেবে৷ এখনো কিছু করেনি এই ভাগ্যিস৷

হরি লাঠি উঁচিয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই বাবা বললেন, এই হরি, মারবি না কিন্তু৷ মারলে আরও কেলেঙ্কারি হবে৷ আমি দেখছি৷

বাবা দরজা পেরিয়ে ছাদে পা রেখে ছাতাটা একবার খুললেন, আর বন্ধ করলেন, আবার খুললেন৷ বাঁদরগুলো সত্যিই যেন ভয় পেয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেল৷

বিল্টু এর মধ্যে এক দৌড়ে গিয়ে শাড়ি দুটোর গিঁট খুলে ফেলল৷

একবার চারদিক তাকিয়ে দেখল, হাজার হাজার নয়, শত শতও নয়, তবে প্রায় পঞ্চাশ-ষাটটা বাঁদর কাছাকাছি কয়েকটা ছাদের পাঁচিলে বসে লাফাচ্ছে আর দাঁতখিঁচুনি দিচ্ছে৷ ঠিক যেন তারা মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়৷

শাড়ি দুটো নিয়ে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল৷

মা, মাসি, রাঙাদিদা সবাই দাঁড়িয়ে আছেন সিঁড়ির গোড়ায়৷ মাসিমণি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন, কী বাঁদরের সঙ্গে লড়াই করে জিতে এলেন নাকি?

বাবা বললেন, যুদ্ধ হল কোথায়? আমাদের হাতে আমব্রেলা অস্ত্র দেখেই ওরা ভয় পেয়ে গেছে৷

রাঙাদিদা বললেন, অত হালকা ভাবে নিও না৷ আজ আর কেউ রাস্তায় বেরিও না৷ কখন ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়বে তার ঠিক নেই৷ বাঁদরদের তো মারাও যাবে না৷ বেনারসে বাঁদরদের গায়ে হাত দেওয়া নিষেধ৷ বাঁদর মারলে পাপ হয়৷

মাসিমণি বললেন, বাঁদররা বাঁদরামি করলেও কিছু শাস্তি দেবার উপায় নেই এখানে৷ ছাদে ফুলগাছের টব রাখলেই ওরা নষ্ট করে দেয়৷

সব দরজা-জানলা বন্ধ, সারা বিকেল অনেক বাঁদরের গল্প হল৷ এর মধ্যে হরি খবর নিয়ে এল যে পাশের বাড়ির মহাদেও নামের ছেলেটা গুলতি দিয়ে পাখি মারে, তার একটা গুলি পাখির বদলে একটা বাঁদরের চোখে লেগেছে৷ সেই জন্যই বাঁদররা দল বেঁধে এসেছে প্রতিশোধ নিতে৷

রাত্তিরবেলা বাঁদরগুলো চলে গেলেও ফিরে এল আবার পরদিন সকালে৷ আবার ছাদে ছাদে তাদের লাফালাফি ও চিৎকার৷ একটু বেলা হতেই শোনা গেল, রাস্তায় এক ভদ্রলোককে ধরে কয়েকটা বাঁদর জামা-টামা ছিঁড়ে, কান কামড়ে দিয়েছে৷ ভদ্রলোক ভয়ের চোটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন রাস্তায়৷

সুতরাং বাড়ি থেকে বেরুনো একেবারে বন্ধ৷

সারাদিন চলল এইরকম৷ টি. ভি.-তেও বাঁদরদের ছবি দেখাচ্ছে৷ রেডিও-তেও বাঁদরদের খবর৷

বিকেলের দিকে হঠাৎ শোনা গেল পরপর কয়েকটা গুলির শব্দ৷ কাছাকাছি কোনো বাড়ি থেকে কেউ বন্দুক চালাচ্ছে৷ এই রে, কেউ বাঁদরদের গুলি করে মারছে নাকি? তাহলে তো আরও গন্ডগোল হবে৷ পুলিশ আসবে!

টি. ভি-র খবরে জানা গেল, পুলিশই এসে বাঁদরদের হঠাবার জন্য গুলি চালিয়েছে৷ তবে ওদের মারবার জন্য নয়৷ ভয় দেখাবার জন্য ফাঁকা আওয়াজ৷

তাতেই সরে গেল সব বাঁদর৷ অল ক্লিয়ার৷

পরদিন সকালে বিল্টু একবার ছাদে উঠে দেখল, কোথথাও আর একটাও বাঁদর নেই৷ দুপুর কিংবা বিকেলেও দেখা গেল না৷ বাঁদররা এ পাড়া ছেড়েই চলে গেছে৷

পাশের ছাদের মহাদেও নামে ছেলেটাও নেই, তাকে নাকি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এলাহাবাদে মামার বাড়িতে৷ তাকে দেখলেই বাঁদররা প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসবে৷

কালু নামের হনুমানটাকেও আর দেখা যায় না৷

বিল্টু এখন ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কলা খায়, কেক খায়৷ কেউ বিরক্ত করে না৷ তাতে তার একটু খারাপই লাগে৷ জীবনে প্রথম ফ্রুট কেক খেয়ে হনুমানটা আনন্দে কীরকম নাচছিল!

কালুর সঙ্গে প্রায় ভাব হয়ে যাচ্ছিল আর সে আসবে না?

কয়েকটা গুলির আওয়াজের পর বাঁদর-হনুমানরা এ পাড়া একেবারে ত্যাগ করেছে? কিংবা ওরা ওত পেতে আছে, কখন মহাদেও ফিরবে?

বিল্টু একা একা বেশি দূর যায় না, কিন্তু এ বাড়ি থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত যাবার অনুমতি সে পেয়েছে৷ বাঙালিটোলায় খুব সরু সরু গলি৷ সেইসব গলি দিয়ে দিয়ে সোজা দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছোনো যায়৷

গঙ্গার ঘাটে গেলে তার খুব ভালো লাগে৷ কতরকম মানুষ আসে এখানে৷ এই ঘাটে অনেক সিঁড়ি, অনেক লোক সিঁড়ির ওপর বসে থাকে, গল্প করে৷ গঙ্গা দিয়ে বড় বড় নৌকো যায়৷

এই ঘাটের কাছে কিছু কিছু বাঁদর আর হনুমান দেখা যায়৷ কিছু কিছু বুড়ো লোক ওদের কলা-আপেল-জিলিপি খেতে দেয়৷ ওতে নাকি পুণ্য হয়৷ অনেক সময় খাবার এত বেশি হয়, ওরা খেতে চায় না, ফেলে দেয়৷

কিন্তু কেক তো কেউ দেয় না৷

এদের মধ্যে কি সেই কালু আছে? বাঁদরদের সঙ্গে দু’তিনটে হনুমানকেও দেখেছে বিল্টু৷ কিন্তু কোনটা কালু, তা সে চিনবে কী করে? সব হনুমানই তো একরকম দেখতে৷ কালু কি বিল্টুকে দেখলে চিনতে পারবে? এক জায়গায় পাশাপাশি দুটো হনুমান বসে আছে৷ বিল্টু ওদের কাছাকাছি গিয়ে ঘোরাফেরা করল৷ একজন আর একজনের পিঠ চুলকে দিচ্ছে, বিল্টুর দিকে ফিরেও তাকাল না৷

একদিন দুপুরে বিল্টু পকেটে একটা কেক নিয়ে এল৷ একটু উঁচু সিঁড়িতে রেখে দিল সেটা৷

কয়েকটা বাঁদর কাছাকাছি এসে সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে৷ দু’একজন গন্ধ শুঁকে চলে যাচ্ছে৷ কেউ ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না৷ ওরা তো আগে কেক খায়নি৷

হঠাৎ দূর থেকে লাফাতে লাফাতে চলে এল একটা হনুমান৷ সে গন্ধও শুঁকল না৷ কেকটা তুলে নিয়েই কপাৎ করে মুখে পুরে দিল৷ তারপরই লাফ দিল তিনবার৷

এটা নিশ্চয়ই কালু৷ সে চিনতে পেরেছে বিল্টুকে৷ ঠিক যেন তার দিকে চেয়ে হাসছে৷

কিন্তু বেশিক্ষণ দেখা গেল না তাকে৷ একটা বড় সাধুদের মিছিল এসে গেল৷ এই সাধুরা দল বেঁধে একসঙ্গে স্নান করতে নামেন৷ পাশে থাকে অনেক ভক্ত৷ অন্য সবাইকে তখন সরে যেতে হয়৷

বিল্টু বাড়ি ফেরার পথ ধরল৷

এক জায়গায় পথটা খুবই সরু হয়ে গেছে, পাশাপাশি দু’জনের বেশি যাওয়া যায় না৷ একদিন একটা গাধা এই পথটায় শুয়ে ছিল, তার পাশ দিয়ে যাবার উপায় নেই৷ মা বলে দিয়েছিলেন, জন্তু-জানোয়ারদের ডিঙোতে নেই৷ না ডিঙিয়ে যাবে কী করে? গাধাটাকে তোলার জন্য বিল্টুকে দশ-পনেরো মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল৷

কখনো কখনো ষাঁড়ও শুয়ে থাকে৷ তখন আর যাওয়াই যায় না৷ ষাঁড়কে তোলা তো সোজা নয়৷ ভয়ও লাগে৷

আজ হল কি, বিল্টু একা একা ফিরছে৷ দুপুরবেলা, তাই আর কোনো লোক নেই৷ হঠাৎ সে পেছন দিকে একটা হল্লা শুনতে পেল৷

তাকিয়েই বিল্টুর বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠল৷ ছুটে আসছে একটা ষাঁড়৷ কাশীর ষাঁড়রা এমনিতে বেশ শান্ত, কিন্তু দুষ্টু ছেলেরা মাঝে মাঝে কোনো ষাঁড়ের ল্যাজ মুচড়ে খেপিয়ে দেয়৷

সেইরকমই কেউ একটা ষাঁড়কে খেপিয়েছে, সে ছুটে আসছে৷

ষাঁড়েরা এমনিতে কিছু করে না, কিন্তু এইরকম সময় সামনে যে পড়ে তাকেই গুঁতিয়ে দেয়৷ ষাঁড়ের গুঁতো খেলে মানুষের পেট ফুটো হয়ে যেতে পারে৷

বিল্টু দৌড়োতে শুরু করল৷ সামনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ কোনো বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়লে বাঁচা যায়৷ কিন্তু দুপুরবেলা সব বাড়ির সদর দরজা বন্ধ৷

বিল্টু দৌড়োচ্ছে আর ভাবছে, ষাঁড়টা ছুটছে অনেক জোরে৷ একেবারে কাছে এসে পড়েছে৷ এইবার ঢুঁসো মারবে, পায়ের খুর দিয়ে তার ওপর দিয়ে চলে যাবে!

এসে পড়ল, এসে পড়ল?

হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ করে থেমে গেল ষাঁড়টা৷

বিল্টু মুখ ফিরিয়ে দেখল একটা অদ্ভুত দৃশ্য৷ ষাঁড়ের পিঠে চেপে বসে আছে একটা হনুমান৷ সে ষাঁড়ের দুটো চোখে আঙুলের খোঁচা মারছে, আর ষাঁড়টা যন্ত্রণায় চিৎকার করছে৷

এই হনুমানটা কালু? সে কোথা থেকে এল? দু’দিকে উঁচু উঁচু বাড়ি৷ তবে কি সে আকাশ থেকে নেমে এসেছে? গঙ্গার ঘাট থেকে একলাফে এই গলিতে?

বিল্টুর মনে হল, হনুমানরা ইচ্ছে করলে এখনো বোধহয় সমুদ্র ডিঙিয়ে যেতে পারে৷

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *