বিলি সানডে : একজন জনপ্রিয় ধর্মপ্রচারক
ইতিহাসের সর্বাধিক জনপ্রিয় খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক ছিলেন একজন মদ্যপান প্রতিযোগী ও প্রাক্তন খেলোয়াড়, তার নাম বিলি সানডে। আমি তাকে অনেকবার অনেক কাছে থেকে দেখেছি। তিনি ছিলেন এক প্রচণ্ড ঝড়ের মতো দুরন্ত, তাঁর ধর্মোপদেশ ছিল সার্কাসের মতো উপভোগ্য। তাঁর কথা শুনে কেউ কখনো ঘুমিয়ে পড়ে নি। তার একটা গর্বের বিষয় ছিল যে, একটানা পঁয়ত্রিশ বছর ধরে শয়তানের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার কালে তিনি দশ লক্ষেরও বেশি মানুষকে কাঠগুঁড়োর পথ দিয়ে পরিচালিত করেছিলেন। সম্ভবত বিলি সানডেই ছিলেন মদ্য বিক্রয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী।
বিলি সানডে একবার সেন্টপিসবার্গে আট সপ্তাহ ধর্মপ্রচার করেছিলেন, খবরের কাগজের শিরোনামে তার ধর্মসভার খবর ছাপা হত। সমস্ত শহর তার ধর্মপ্রচারে ও উদাত্ত আহ্বানে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। দলে দলে লোক তার সভায় উপস্থিত হয়ে সুন্দর বাণীগুলো শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত।
বিলি সানডে বলতেন, আমি একটা নিকৃষ্ট গেঁয়ো ভূত, চুলে রাজহাঁসের চর্বি মেখেছি, উনুনের কালি দিয়ে জুতো রং করেছি। আমার বুড়ো নাকটা চটের তোয়ালে দিয়ে মুছেছি এবং আমার থালায় করে কপি পান করেছি। আমার যখন বলা উচিত ছিল এরকম করেছিলাম তখন এটা করে এবং যখন বলা উচিত ছিল ‘আমি দেখেছি তখন আমি আমি বলেছিলাম’ বলেছি। তবুও আমি স্বর্গে যাওয়ার আশা রাখি।
বিলি সানডে আইওয়া নামক স্থানে একটা ছোট কাঠের কেবিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এক এতিমখানায় বড় হয়েছিলেন। মাত্র পনের বছর বয়সে একটা স্কুলের তত্ত্বাবধায়কের চাকরি পান। তার বেতন ছিল মাসে পঁচিশ ডলার এবং এই দিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পান। মার্শাল টাউনে একজন ঠিকাদারের সহকারি রূপে কাজ করার সময় বিলি সানডে বাস্কেটবল খেলোয়ার হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড়। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর নামাজাদা বেসবল খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। তিনি বলেছেন, আমি বেসগুলি মাত্র চৌদ্দ সেকেন্ডে ঘুরে আসতে পারতাম এবং এ রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারে নি। এর পাঁচ বছর পর তিনি একজন মদ্যপায়ী বল খেলোয়াড় থেকে পরিণত হলেন শ্রেষ্ঠ সম্মোহনী ধর্মপ্রচারকে। তার ধর্ম প্রচারক হিসেবে সম্মোহিত হবার ঘটনাটি ঘটে আঠার শো সাতাশি সালের এক রোববার বিকেলে-বিলি সানডে কয়েকজন বিখ্যাত খোলোয়াড়ের সাথে শিকাগোর রাজপথ দিয়ে হেঁটে গিয়ে একটা সেলুনে ঢুকলেন। পাশের রাস্তা দিয়ে নারী পুরুষ বাঁশি ও ঢাক বাজাতে বাজাতে যাচ্ছিল আর যিশুর স্তবগান গাচ্ছিল। ওই স্তবগানটি তিনি আইওয়ার কাঠের কেবিনে তার মাকে গাইতে শুনেছেন। গানটা শুনে মায়ের কথা মনে পড়ে গেল, তিনি খুব কাঁদলেন। তখন মিছিল থেকে এক যুবক ছুটে এসে তাকে বলল, ‘আমরা প্যাসিফিক গার্ডেন মিশনে যাচ্ছি। তুমি আমাদের সাথে যাবে না। আমি নিশ্চিত যে সেখানে তোমার ভালো লাগবে।’ বিলি সানডের মনে হঠাৎ করে একটা পরিবর্তন এল। মনের অদৃশ্যকোণের কোথায় যেন যিশুর স্তবগানটি ঝাঁকি দিল, তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমার হয়ে গেছে। আমি আর তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারছি না। আমার পথ ভিন্ন হয়ে গেল। এই বলে তিনি তাদের দিকে পিঠ ফিরালেন। তারা কেউ কেউ হাসল, কোউ উপহাস করল। একজন তাকে উৎসাহও দিল। তারপর তিনি মানুষকে সৎপথে, যিশুর পথে এবং ঈশ্বর নির্দেশিত পথে আহ্বান .. করার ব্রত নিলেন।
১৯১৯ সালে বিলি সানডে যখন ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যান, তার আগে সেখানে কখনো তেমন ধর্মোন্মাদনা দেখা যায় নি। তিনমাস আগে থেকে তার আগমনে কথা প্রচার করা হয়েছিল এবং আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে কমপক্ষে কুড়ি হাজার প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৬৮ নং স্ট্রিটে এবং ব্রডওয়েতে চার’শ শ্রমিক কুড়ি হাজার লোকের বসার উপযোগী তাঁবু তৈরির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল এবং কাঠগুঁড়োর পথ তৈরি করার জন্য চারগাড়ি বোঝাই করাতের গুঁড়ো এনে মেঝেতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। মঞ্চের ওপরে ঐক্যতান গায়কদের জন্যেই দুই হাজার আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক অবস্থানকালে এই বিশ্ব বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ লোকের কাছে ধর্মপ্রচার করেছিলেন এবং প্রায় এক লক্ষ পাপী ব্যক্তিকে ধর্মোপদেশ দিয়ে সৎপথে এনেছিলেন।