বিরাট শোরগোল
আমি বসে আছি আমার ঘরে– পুরো অ্যাপার্টমেন্টের হইচইয়ের হেড কোয়ার্টারে। শুনছি সবগুলো দরজা দড়াম-দড়াম বন্ধ করা হচ্ছে, ঐ আওয়াজ আমাকে রেহাই দিচ্ছে এই ঘর থেকে ঐ ঘরে মানুষের ছুটোছুটির আওয়াজ শোনা থেকে; রান্নাঘরে ওভেনের দরজা ঠকাস করে বন্ধ করার শব্দও কানে এল। আমার বাবা ধুম করে হঠাৎ আমার ঘরে উদয় হলেন, আর তার দুলতে থাকা ড্রেসিং গাউনে খসখস শব্দ তুলে হাঁটতে লাগলেন, পাশের ঘরে উনান থকে ছাই চেঁছে তোলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, ভাল্লি চিৎকার করে জানতে চাইছে বাবার হ্যাটটাতে এখনো ব্রাশ মারা হয়েছে কি না– হলঘর থেকে কথাটা সে চেঁচিয়ে বলল প্রতিটা শব্দ আলাদা আলাদা করে, যেন পরে কেউ না-বলতে পারে যে শুনিনি –এর উত্তরে যে-চিৎকার শুনলাম তা সাপের হিস্ শব্দের আকার নিয়ে আমার মন ভজাতে চাইল। অ্যাপার্টমেন্টের সামনের দরজা খোলা হলো কাঁচর-ক্যাচর শব্দ তুলে, মনে হলো যেন কেউ সর্দি-শ্লেষ্মভরা গলা সাফ করল খাকারি দিয়ে দরজা আরও খুলল কোনো মেয়ের গানের গুনগুন আওয়াজের সঙ্গে, অবশেষে এমন একটা পুরুষালি ভোতা দুম শব্দ করে বন্ধ করা হলো যে, এটাই এতক্ষণের সবচেয়ে নির্মম শব্দ বলে মনে হলো আমার। বাবা চলে গেছেন; এবার শুরু হলো আরও পেলব, বিক্ষিপ্ত, হতভাগা সব বিচিত্র শব্দ, এদের নেতৃত্বে আছে দুটো পোষা ক্যানারি পাখির আওয়াজ। ক্যানারি দুটো আমাকে মনে করিয়ে দিল যে আজই প্রথম না, আমি আগেও ভেবেছি আমার ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে, সাপের মতো বুকে ভর দিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে, পেটের উপর উপুড় আর হেঁটমুখ হয়ে আমার বোন ও তার কাজের মেয়েটার কাছে ভিক্ষা চাইব যে তোমরা একটু চুপ করো।