দুই
মাস দেড়েক পরে, পাঁচ দিন জ্বরভোগের পর আজ সকাল হইতে নীলাম্বরের জ্বর ছিল না। বিরাজ বাসী কাপড় ছাড়াইয়া, স্বহস্তে কাচা কাপড় পরাইয়া দিয়া, মেঝেয় বিছানা পাতিয়া শোয়াইয়া দিয়া গিয়াছিল। নীলাম্বর জানালার বাহিরে একটা নারিকেল বৃক্ষের পানে চাহিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া ছিল। ছোট বোন হরিমতি কাছে বসিয়া ধীরে ধীরে পাখার বাতাস করিতেছিল। অনতিকাল পরেই স্নান করিয়া বিরাজ সিক্ত চুল পিঠের উপর ছড়াইয়া দিয়া পট্টবস্ত্র পরিয়া ঘরে ঢুকিল। সমস্ত ঘর যেন আলো হইয়া উঠিল। নীলাম্বর চাহিয়া দেখিয়া বলিল, ও কি?
বিরাজ বলিল, যাই, বাবা পঞ্চানন্দের পূজো পাঠিয়ে দিই গে, বলিয়া শিয়রের কাছে হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া হাত দিয়া স্বামীর কপালের উত্তাপ অনুভব করিয়া বলিল, না জ্বর নেই। জানিনে এ বছর মার মনে কি আছে। ঘরে ঘরে কি কান্ড যে শুরু হয়েছে—আজ সকালে শুনলাম, আমাদের মতি মোড়লের ছেলের সর্বাঙ্গে মার অনুগ্রহ হয়েচে—দেহে তিল রাখবার স্থান নেই।
নীলাম্বর ব্যস্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, মতির কোন্ ছেলের বসন্ত দেখা দিয়েচে?
বড়ছেলের। মা শীতলা, গাঁ ঠান্ডা কর মা! আহা ঐ ছেলেই ওর রোজগারী। গেল শনিবারের শেষ-রাত্তিরে ঘুম ভেঙ্গে হঠাৎ তোমার গায়ে হাত পড়ায় দেখি, গা যেন পুড়ে যাচ্চে। ভয়ে বুকের রক্ত কাঠ হয়ে গেল। উঠে বসে অনেকক্ষণ কাঁদলুম, তার পরে মানস করলুম, মা শীতলা, ভাল যদি কর মা, তবেই তো তোমার পূজো দিয়ে আবার খাব-দাব, না হলে অনাহারে প্রাণত্যাগ করব। বলিতে বলিতে তাহার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হইয়া দুফোঁটা জল পড়িল।
নীলাম্বর আশ্চর্য হইয়া বলিল, তুমি উপোস করে আছ নাকি?
হরিমতি কহিল, হাঁ দাদা, কিছু খায় না বৌদি—কেবল সন্ধ্যেবেলায় এক মুঠো কাঁচা চাল আর এক ঘটি জল খেয়ে আছে—কারও কথা শোনে না।
নীলাম্বর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয়া বলিল, এইগুলো তোমার পাগলামি নয়?
বিরাজ আঁচল দিয়া চোখ মুছিয়া ফেলিয়া বলিল, পাগলামি নয়? আসল পাগলামি! মেয়েমানুষ হয়ে জন্মাতে ত বুঝতে, স্বামী কি বস্তু!—তখন বুঝতে, এমন দিনে তার জ্বর হলে, বুকের ভিতরে কি করতে থাকে! বলিয়া উঠিয়া যাইতেছিল, দাঁড়াইয়া বলিল, পুঁটি, ঝি পূজো নিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে যাস ত যা, শিগগির করে নি গে।
পুঁটি আহ্লাদে দাঁড়াইয়া উঠিয়া বলিল, যাব বৌদি!
তবে দেরি করিস নে, যা। ঠাকুরের কাছে তোর দাদার জন্যে বেশ করে বর চেয়ে নিস।
পুঁটি ছুটিয়া চলিয়া গেল।
নীলাম্বর হাসিয়া বলিল, সে ও পারবে। বরং তোমার চেয়ে ওই ভাল পারবে।
বিরাজ হাসিমুখে ঘাড় নাড়িল। বলিল, তা মনে ক’রো না। ভাই বল আর বাপ-মাই বল, মেয়েমানুষের স্বামীর বড় আর কেউ নয়। ভাই বাপ-মা গেলে দুঃখ-কষ্ট খুবই হয়, কিন্তু স্বামী গেলে যে সর্বস্ব যায়! এই যে পাঁচদিন না খেয়ে আছি, তা, দুর্ভাবনার চাপে একবার মনে হয়নি যে উপোস করে আছি কিন্তু কৈ, ডাক ত তোমার কোন বোনকে দেখি কেমন—
নীলাম্বর তাড়াতাড়ি বাধা দিয়া বলিল, আবার!
বিরাজ ববিল, তবে বল কেন? পাগলামি করেচি সে আমি জানি, আর যে দেবতা আমার মুখ রেখেচেন, তিনিই জানেন। আমি ত তাহলে একটি দিনও বাঁচতুম না, সিঁথির এ সিঁদুর তোলবার আগে এ সিঁথে পাথর দিয়ে চেঁচে ফেলতুম। শুভযাত্রা করে লোকে মুখ দেখবে না, শুভকর্মে লোক ডেকে জিজ্ঞেস করবে না, এ দুটো শুধু-হাত লোকের কাছে বার করতে পারব না, লজ্জায় এ মাথার আঁচল সরাতে পারব না, ছি ছি, সে বাঁচা কি আবার একটা বাঁচা? সেকালে যে পুড়িয়ে মারা ছিল, সে ছিল ঠিক কাজ। পুরুষমানুষে তখন মেয়েমানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতো, এখন বোঝে না।
নীলাম্বর কহিল, না, তুই বুঝিয়ে দি গে।
বিরাজ বলিল, তা পারি। আর শুধু আমিই কেন, তোমাকে পেয়ে যে-কেউ তোমাকে হারাবে, সেই বুঝিয়ে দিতে পারবে—আমি একলা নয়। যাক, কি সব বকে যাচ্ছি, বলিয়া হাসিয়া উঠিল। তার পর ঝুঁকিয়া পড়িয়া আর একবার স্বামীর বুকের উত্তাপ হাত দিয়া অনুভব করিয়া বলিল, গায়ে কোথাও ব্যথা নেই ত?
নীলাম্বর ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না।
বিরাজ বলিল, তবে আর কোন ভয় নেই। আজ আমার ক্ষিদে পেয়েছে—যাই এইবার দুটো রাঁধবার যোগাড় করি গে—সত্যি বলচি তোমাকে, আজ কেউ যদি আমার একখানা হাত কেটে দেয়, তাহলেও বোধ করি রাগ হয় না।
যদু চাকর বাহির হইতে ডাকিয়া বলিল, মা, কবিরাজমশাইকে এখন ডেকে আনতে হবে কি?
নীলাম্বর কহিল, না না, আর আবশ্যক নেই।
যদু তথাপি গৃহিণীর অনুমতির জন্য দাঁড়াইয়া রহিল। বিরাজ তাহা দেখিতে পাইয়া বলিল, না? যা ডেকে নিয়ে আয়, একবার ভাল করে দেখে যান।
দিন-তিনেক পরে আরোগ্যলাভ করিয়া নীলাম্বর বাহিরে চণ্ডীমণ্ডপে বসিয়া ছিল, মতি মোড়ল আসিয়া কাঁদিয়া পড়িল—দাঠাকুর, তুমি একবার না দেখলে ত আমার ছিমন্ত আর বাঁচে না। একবার পায়ের ধূলো দাও দেব্তা, তাহলে যদি এ-যাত্রা সে বেঁচে—।আর সে বলিতে পারিল না—আকুলভাবে কাঁদিতে লাগিল।
নীলাম্বর জিজ্ঞাসা করিল, গায়ে কি খুব বেশী বেরিয়েচে মতি?
মতি চোখ মুছিতে মুছিতে বলিতে লাগিল, সে আর কি বলব! মা যেন একেবারে ঢেলে দিয়েচেন। ছোটজাত হয়ে জন্মেচি ঠাকুদ্দা, কিছুই ত জানি নে কি করতে হয়—একবার চল, বলিয়া সে দু’পা জড়াইয়া ধরিল।
নীলাম্বর ধীরে ধীরে পা ছাড়াইয়া লইয়া কোমলস্বরে বলিল, কিছু ভয় নেই মতি, তুই যা, আমি পরে যাব।
তাহার কান্নাকাটির কাছে সে নিজের অসুখের কথা বলিতে পারিল না। বিশেষ, সকল রকম রোগের সেবা করিয়া এ বিষয়ে তাহার এত অধিক দক্ষতা জন্মিয়াছিল যে, আশপাশের গ্রামের মধ্যে কাহারও শক্ত অসুখ-বিসুখে তাহাকে একবার না দেখাইয়া, তাহার মুখের আশ্বাস-বাক্য না শুনিয়া রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা কিছুতেই ভরসা পাইত না। নীলাম্বর এ কথা নিজেও জানিত। ডাক্তার কবিরাজের ঔষধের চেয়ে, দেশের অশিক্ষিত লোকের দল তাহার পায়ের ধূলা, তাহার হাতের জলপড়াকে যে অধিক শ্রদ্ধা করে, ইহা সে বুঝিত বলিয়াই কাহাকেও কোনদিন ফিরাইয়া দিতে পারিত না। মতি চাঁড়াল আর একবার কাঁদিয়া, আর একবার পায়ের ধূলার দাবী জানাইয়া, চোখ মুছিতে মুছিতে চলিয়া গেল। নীলাম্বর উদ্বিগ্ন হইয়া ভাবিতে লাগিল। তাহার দেহ তখনও ঈষৎ দুর্বল ছিল বটে কিন্তু সে কিছুই নয়। সে ভাবিতে লাগিল, বাড়ির বাহির হইবে কি করিয়া। সে বিরাজকে অত্যন্ত ভয় করিত, তাহার কাছে এ কথা সে মুখে আনিবে কি করিয়া?
ঠিক এই সময়ে ভিতরের উঠান হইতে হরিমতির সুতীক্ষ্ণ কন্ঠের ডাক আসিল, দাদা, —বৌদি ঘরে এসে শুতে বলচে।
নীলাম্বর জবাব দিল না।
মিনিট-খানেক পরেই হরিমতি নিজে আসিয়া হাজির হইল। বলিল, শুনতে পাওনি দাদা?
নীলাম্বর ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না।
হরিমতি কহিল, সেই চারটি খেয়ে বসে আছ,—বৌদি বলচে, আর বসে থাকতে হবে না, একটু শোও গে।
নীলাম্বর আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, সে কি করচে রে পুঁটি?
হরিমতি কহিল, এইবার ভাত খেতে বসেচে।
নীলাম্বর আদর করিয়া বলিল, লক্ষ্মী দিদি আমার, একটি কাজ করবি?
পুঁটি মাথা নাড়িয়া বলিল, করব।
নীলাম্বর কন্ঠস্বর আরও কোমল করিয়া কহিল, আস্তে আস্তে আমার চাদর আর ছাতিটা নিয়ে আয় দেখি!
চাদর আর ছাতি?
নীলাম্বর কহিল, হুঁ।
হরিমতি চোখ কপালে তুলিয়া বলিল, বাপ রে! বৌদি ঠিক এই দিকে মুখ করে খেতে বসেচে যে!
নীলাম্বর শেষ চেষ্টা করিয়া বলিল, পারবি নে আনতে?
হরিমতি অধর প্রসারিত করিয়া দুই-তিনবার মাথা নাড়িয়া বলিল, না দাদা, দেখে ফেলবে; তুমি শোবে চল।
বেলা তখন প্রায় দুইটা, বাহিরের প্রচণ্ড রৌদ্রের দিকে চাহিয়া সে শুধু-মাথায় পথে বাহির হইবার কথা ভাবিতেও পারিল না, হতাশ হইয়া ছোটবোনের হাত ধরিয়া ঘরে আসিয়া শুইয়া পড়িল। হরিমতি কিছুক্ষণ অনর্গল বকিতে বকিতে এক সময়ে ঘুমাইয়া পড়িল। নীলাম্বর চুপ করিয়া মনে মনে নানারূপে আবৃত্তি করিয়া দেখিতে লাগিল, কথাটা ঠিক কি রকম করিয়া পাড়িতে পারিলে খুব সম্ভব বিরাজের করুণা উদ্রেক করিবে।
বেলা প্রায় পড়িয়া আসিয়াছিল। বিরাজ ঘরের শীতল মসৃণ সিমেণ্টের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া বুকের তলায় একটা বালিশ দিয়া মগ্ন হইয়া মামা ও মামীকে চারপাতা-জোড়া পত্র লিখিতেছিল। কি করিয়া এ বাড়িতে শুদ্ধমাত্র মা শীতলার কৃপায় মরা বাঁচিয়াছে, কি করিয়া যে এ যাত্রা সিঁথার সিঁদুর ও হাতের নোয়া বজায় রহিয়া গিয়াছে, লিখিয়া লিখিয়া ক্রমাগত লিখিয়াও সে কাহিনী শেষ হইতেছিল না, এমন সময় খাটের উপর হইতে নীলাম্বর হঠাৎ ডাকিয়া বলিল, একটি কথা রাখবে বিরাজ?
বিরাজ দোয়াতের মধ্যে কলমটা ছাড়িয়া দিয়া মুখ তুলিয়া বলিল, কি কথা?
যদি রাখ ত বলি।
বিরাজ কহিল, রাখবার মত হলেই রাখবো—কি কথা?
নীলাম্বর মুহূর্তকাল চিন্তা করিয়া বলিল, বলে লাভ নেই বিরাজ, তুমি কথা আমার রাখতে পারবে না।
বিরাজ আর প্রশ্ন করিল না, কলমটা তুলিয়া লইয়া পত্রটা শেষ করিবার জন্য আর একবার ঝুঁকিয়া পড়িল। কিন্তু চিঠিতে মন দিতে পারিল না—ভিতরে ভিতরে কৌতূহলটা তাহার প্রবল হইয়া উঠিল। সে উঠিয়া বসিয়া বলিল, আচ্ছা বল, আমি কথা রাখব।
নীলাম্বর একটুখানি হাসিল, একটুখানি ইতস্ততঃ করিল, তাহার পরে বলিল, দুপুরবেলা মতি চাঁড়াল এসে আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরেছিল। তাদের বিশ্বাস, আমার পায়ের ধূলো না পড়লে তার ছিমন্ত বাঁচবে না—আমাকে একবার যেতে হবে।
তাহার মুখপানে চাহিয়া বিরাজ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। খানিক পরে বলিল, এই রোগা দেহ নিয়ে তুমি যাবে?
কি করব বিরাজ, কথা দিয়েচি—আমাকে একবার যেতেই হবে।
কথা দিলে কেন?
নীলাম্বর চুপ করিয়া বসিয়া রহিল।
বিরাজ কঠিনভাবে বলিল, তুমি কি মনে কর, তোমার প্রাণটা তোমার একলার, ওতে কারও কিছু বলবার নেই? তুমি যা ইচ্ছে তাই করতে পার?
নীলাম্বর কথাটা লঘু করিয়া ফেলিবার জন্য হাসিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু স্ত্রীর মুখের পানে চাহিয়া তাহার হাসি আসিল না। কোনমতে বলিয়া ফেলিল, কিন্তু তার কান্না দেখলে—
বিরাজ কথার মাঝখানেই বলিয়া উঠিল, ঠিক ত! তার কান্না দেখলে—কিন্তু আমার কান্না দেখবার লোক সংসারে আছে কি? বলিয়া চারপাতা-জোড়া চিঠিখানা তুলিয়া লইয়া কুচিকুচি করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলিতে ফেলিতে বলিল, উঃ! পুরুষমানুষেরা কি! চার দিন চার রাত না খেয়ে না ঘুমিয়ে কাটালুম—ও হাতে হাতে তার প্রতিফল দিতে চলল! ঘরে ঘরে জ্বর, ঘরে ঘরে বসন্ত—এই রোগা দেহ নিয়ে ও রোগী ঘাঁটতে চলল—আচ্ছা যাও; আমার ভগবান আছেন। বলিয়া আর একবার বালিশে বুক দিয়া উপুড় হইয়া পড়িল।
নীলাম্বরের ওষ্ঠাধরে অতি সূক্ষ্ম, অতি ক্ষীণ হাসি ফুঢিয়া উঠিল; ধীরে ধীরে বলিল, সে ভরসা কি তোদের আছে বিরাজ যে, কথায় কথায় ভগবানের দোহাই পাড়িস!
বিরাজ তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিয়া ক্রোধের স্বরে বলিল, না, ভগবানের উপর ভরসা শুধু তোমাদের একচেটে, আমাদের নয়। আমরা কীর্তন গাইনে, তুলসীর মালা পরিনে, মড়া পোড়াই নে, তাই আমাদের নয়,—একলা তোমাদের।
নীলাম্বর তাহার রাগ দেখিয়া হাসিয়া উঠিল, বলিল, রাগ করিস নে বিরাজ, সত্যিই তাই। তুই একা নয়—তোরা সবাই ওই! ভগবানের ওপর ভরসা করে থাকতে যতটা জোরের দরকার ততটা জোর মেয়েমানুষের দেহে থাকে না—তাতে তোর দোষ কি?
বিরাজ আরও রাগিয়া বলিল, না, দোষ কেন, ওটা মেয়েমানুষের গুণ। কিন্তু, গায়ের জোরেই যদি এত দরকার ত বাঘ-ভালুকের গায়েও ত আরও জোর আছে। আর জোর থাক্ ভাল, না থাক্ ভাল, এই রোগী দেহ নিয়ে তোমাকে আমি আর বার হতে দেব না—তা তুমি যত তর্কই কর না কেন।
নীলাম্বর আর কথা কহিল না, চুপ করিয়া শুইয়া রহিল। বিরাজও কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বসিয়া থাকিয়া, বেলা গেল—যাই বলিয়া উঠিয়া গেল। ঘন্টা-খানেক পরে দীপ জ্বালিয়া ঘরে সন্ধ্যা দিতে আসিয়া দেখিল, স্বামী শয্যায় নাই। তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া ডাকিয়া বলিল, পুঁটি, তোর দাদা কৈ রে? যা, বাইরে দেখে আয় ত!
পুঁটি ছুটিয়া চলিয়া গেল, মিনিট-পাঁচেক পরে হাঁপাইতে হাঁপাইতে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, কোথাও নেই—নদীর ধারেও না।
বিরাজ ঘাড় নাড়িয়া বলিল, হুঁ। তার পরে রান্নাঘরের দুয়ারে আসিয়া গুম হইয়া বসিয়া রহিল।