বিভিন্ন নবীর কিতাবসমূহ

বিভিন্ন নবীর কিতাবসমূহ

বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বিভিন্ন নবীর শিক্ষার সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি পুস্তক স্থান লাভ করেছে এবং এসব পুস্তককে হযরত মুসা, শ্যামুয়েল, ইলিয়াস, এলিশা প্রমুখ প্রাথমিক যুগের বড় বড় নবীর বিবরণী থেকে আলাদাভাবে স্থান দেয়া হয়েছে। এসব পুস্তকে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের বিবরণী তুলে ধরা হয়েছে।

খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর বিবরণী পাওয়া যায় আমোষ, হোশেয়, যিমাইয় এবং মিখাই পুস্তকে। আমোষ নবী সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধাচরণের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। পক্ষান্তরে, হোশেয় নবীর সময় ধর্মের নামে দুর্নীতি চরমে পৌঁছেছিল। হোশেয় নবী নিজেও দুর্নীতিবাজদের কবলে নিপতিত হয়ে ব্যক্তিগত জীবনে চরম অশাস্তি ভোগ করেন (প্যাগানদের এক ধর্মীয়-বেশ্যাকে বিয়ে করতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন)। শত অত্যাচার সত্ত্বেও আল্লাহ্ যেমন তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, তেমনি অনুসারীরা অধঃপতনের নিমস্তরে নিপতিত হয়ে তাকে অশেষ দুঃখ দিলেও হোশেয় নবী তাদের ভালবাসা দিতে দ্বিধা করেননি। যিশাইয়া (ইশাইয়া) ছিলেন রাজনীতিবিদ এবং এক ঐতিহাসিক চরিত্র। রাজ রাজড়ারা তার থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতেন; এবং দেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর উপরও তার নিয়ন্ত্রণ ছিল। নবী হয়েও তিনি সবসময় জাঁকজমকের সাথে জীবনযাপন করতেন। তাঁর অনুসারিগণ খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত কার্যাবলীর বিবরণী এবং তাঁর প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত বাণীসমূহ সংকলনও প্রকাশ করে গেছেন। এসব বিবরণী ও বাণীর মধ্যে অসাম্যের বিরোধিতা, আল্লাহর বিচারকে ভয় করে চলা, নির্বাসন অবস্থায় প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পরবর্তী পর্যায়ে ইহুদীদের প্যালেস্টাইনে প্রত্যাবর্তন উল্লেখযোগ্য। এই ঘোষণাপত্র ও প্রত্যাবর্তন-সংক্রান্ত বিবরণী থেকে একটি বিষয় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, যিশাইয়া নবীর নবুয়তি-কার্যক্রম ছিল তখনকার ইহুদীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমান্তরাল। যিশাইয়া নবীর সমসাময়িক আরেকজন নবী ছিলেন মিখা; তারও কাজকর্ম ছিল একইধরনের।

খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে আবির্ভূত হন সফনিয়, জিরমিয়, নহুম ও হবককুম নবী। এঁরা প্রত্যেকে ধর্মবাণী প্রচারের ক্ষেত্রে বিশিষ্টতা অর্জন করেছিলেন। জিরমিয় নবী শহীদ হন। তাঁর প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত বাণীসমূহ বারুচ বা বারুখ কর্তৃক সংকলিত হয়। এই বারুখই ছিলেন সম্ভবত বাইবেলের বিলাপ পুস্তকের রচয়িতা।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুতেই ইহুদীরা ব্যাবিলনে নির্বাসিত হয়। তখন তাদের নবী ছিলেন এজেকেল (বাংলা বাইবেলে যিহিস্কেল)। নবী এজেকেল সেই দুর্দিনে ইহুদীদের সান্ত্বনা দান করতেন। তাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতেন। যেভাবে তিনি নবুয়ত লাভ করেছিলেন, সেই দৃশ্যের বর্ণনা বাইবেলে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, বাইবেলের ওবদিয় পুস্তকে অধিকত জেরুজালেমের বাসিন্দাদের দুর্দশার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।

খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৮ অব্দে ইহুদীদের নির্বাসনকাল শেষ হয়। তখনই শুরু হয় হগয় ও সখরিয়া নবীর (হযরত জাকারিয়া) নবুয়ত। তারা উভয়েই জেরুজালেমের উপাসনালয় পুনঃনির্মাণের জন্য ইহুদীদের প্রতি আবেদন জানান। এই উপাসনালয়ের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পরে ঘটনা মালাখি পুস্তকে রয়েছে। মালাখি রচিত এই পুস্তকে আরো লিপিবদ্ধ রয়েছে আধ্যাত্মিক ভাবধারার প্রত্যাদেশ বাণীসমূহ।

যোনা (হযরত ইউনুস) পুস্তক যে কিভাবে বাইবেলের পুরাতন নিয়মে স্থান পেল, তা অনেকের নিকট বিস্ময়ের ব্যাপার। কেননা, এই পুস্তকে অন্যান্য নবীর প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত পুস্তকের মতো বাণী বা বক্তব্য-সম্বলিত কোনো রচনা নেই। যোনা পুস্তক প্রকৃতপক্ষে একটি কাহিনী মাত্র : স্রষ্টার ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণের অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তার কথাই এই কাহিনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বাইবেলের পুরাতন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত দানিয়েল পুস্তকখানি হিব্রু, আরামীয় এবং গ্রীক এই তিনটি ভাষায় রচিত হয়। খ্রিস্টান ভাষ্যকারদের মতে, ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এ পুস্তকখানিকে ‘অসময়ের অসংলগ্ন প্রকাশ’ ছাড়া কিছুই বলা যায় না। সম্ভবত, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে ম্যাকাবিয়ান আমলে এটি রচিত হয়ে থাকবে। ইহুদীরা যখন ‘ন্যক্কারজনক’ অবস্থায় পড়ে হতাশার অতলে তলিয়ে যাচ্ছিল, তখন লেখক এই পুস্তকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে বিশ্বাস সুদৃঢ় রাখার প্রয়াস পেয়েছিলেন। তিনি ইহুদীদের এই আশ্বাসবাণী শুনিয়েছিলেন যে, মুক্তির মুহূর্ত সমাগত–(ই. জ্যাকোব)